#গল্প_পোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
#চিঠি_নং_০৪
কলমে:যারিন সুবাহ।
________________
প্রিয় ধর্ষক,
আপনাকে কেনো প্রিয় বলে সম্বোধন করলাম তা নাহয় একটু পরেই জানবেন।
শুরুতেই বলে রাখি আপনার কাছে আমি বড্ড ঋণী। আপনার কাছে তো কখনো কোনো ধর্ষিতা চিঠি লিখতে বসবে না বরং প্রচন্ড ঘৃণা করবে। অথচ দেখেন আজ আমি নামের এক ধর্ষিতা আপনার তরে চিঠি লিখতে বসেছি। আসলে আপনাকে চিঠি লিখার পিছনে আমার সব থেকে বড় কারন হচ্ছে, “আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য!”। অবাক লাগছে পড়ে তাইনা? কিন্তু আমার মোটেও ভিন্ন কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। বরং আমি আরো উৎসাহিত, আগ্রহী এবং প্রফুল্ল মন নিয়ে বসেছি চিঠি লিখতে।
আপনি কি জানেন, শুধু মাত্র আপনার জন্য একটা ১৭ বছরের মেয়ে এখনি বাস্তবতা শিখেছে? যে মেয়েটা কাঁধে স্কুল ব্যাগ উঠিয়ে রাস্তায় চলতো আজ তাকে ঘর থেকে বের হওয়া মানা।কেনো?আমার কী খুব দোষ ছিল? তবে যাই হোক। আপনাকে তো আমি ধন্যবাদ জানাবোই জানাবো! কেননা, আপনার জন্যে আজ আমি আমার বাবাকে চিনেছি। যে বাবা রোজ দোকান থেকে এসে আমাকে প্রথম খুঁজে বেড়াতো সে বাবা আজ চুপিসারে আমার মাকে বলে,” ও যেনো ঘর থেকে বের না হয়!” যে মায়ের কাছে তার সন্তান কিনা সবচেয়ে দামী থাকে সেই মা আজ আমাকে বলে, এখন বড় হয়েছিস! লোকে মন্দ বলে ঘরের বাইরে পা দিবিনা!” আপনি জানেন? মাকে একবার মুখ ফুটে বলেই দিয়েছিলাম, “দোষ তো আমার না!”
সেদিন মা শুধু আমার মুখ চেপে ধরে বলেছিলো,”সমাজে বাঁচতে চাইলে চুপ থাক!”। আমি সেদিন হাসি মুখে তা মেনে নিয়েছি!দেখলেন তো? আমি সমাজ মেনে নিয়েছি। এ সমাজে থাকলে নাকি চুপ থেকে সব সহ্য করতে হয়। আমিও করলাম নাহলে! তবে আজ আমি অনেক খুশি, অনেক। শুধু মাত্র আপনার জন্যে আমি বুঝতে পারলাম, আমার বাবা মায়ের কাছে আমি দামী না তাদের সম্মান! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। শুধুমাত্র আজ আপনার জন্যে আমি আমার কাছের মানুষগুলোকে চিনেছি।যারা এখন আমাকে উঠতে বসতে বুঝিয়ে দেয়, “তুমি ধর্ষিতা”।ক’দিন আগেও আমার যেসব ফ্রেন্ড আমাকে তাদের রুমডেটের কর্মকলাপ শুনাতে আসতো আজ তারা আমাকে দেখে বলে,”আসলে তোর সাথে চললে লোকে খারাপ বলবে, তুই যে ধর্ষিতা!” আচ্ছা,আপনার কি এসব শুনতে হয়?
তবে কি জানেন? আজ আমাকে আমার ভিতরের এক অন্য সত্তা খুব কাছে এসে বলে গিয়েছে, “তুমি চলে যাও।নিজের মতো করে বাঁচো!এখানে থাকলে দিনকে দিন পঁচে পঁচে মরবে। তুমি বড় হও, অনেক বড় হও! একদিন আসবে তোমার জয়ের দিন। যদি তোমার ভাগ্যে কেউ লিখা থাকে তুমি বড় ভাগ্যবতী! কারণ, সে সত্যিকারের মানুষ পরিচয়ে তোমার ভাগ্যে এসে ঘর বুনবে!”
আমার না কথাগুলো খুব ভালো লেগেছে।তাই তো! আজ যেসব নারীগণ নিজ ইচ্ছায় তাদের সতীত্বকে বিলীন করতে পারে তাদের জন্য সমাজের মাথা নিচু হয় না আর তাদেরকে জেনে শুনেই সবাই মেনে নিতে পারে আর যারা অনিচ্ছায় নিজেদের সম্ভ্রম হারিয়ে ফেলে তারাই হলো ফেলনা? আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আমি নিজের জন্য বাঁচবো শুধু। আমি দাঁড়িয়ে দেখাবো তাদেরকে। আমি তাদেরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিবো, তোমরা আজীবন শুধু মরীচিকার পেছনে ছুটে চললে!
আমি চলে গেলে ওদের ঘাড় থেকে বোঝা নেমে যাবে তা আমি খুব ভালো করে জানি।তাই আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো। তবে আমি সেদিনের অপেক্ষায় সবসময় থাকবো যেদিন সত্যিই কেউ এসে আমার জীবন রঙিন করবে।আমি সত্যিই সেদিন আমার জীবনের বড় পাওয়া পাবো! কেনো বলেন তো? কারণ, আমি একজন সত্যিকার অর্থের পরিচয়ের কোনো সত্তার অর্ধাঙ্গিনী হতে পারি!
ভালো থাকবেন আপনি। আবারো বলছি, আমাকে এই দিন দুনিয়া, বাস্তবতা, সমাজ, সমাজের এতো সম্মান সম্পর্কে জানান দেয়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
ইতি,
“আমি নামের কোনো এক ধর্ষিতা”