#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৪র্থ_পর্ব
অবন্তী নিজের হাতে আমায় খাইয়ে দিচ্ছে এটা দেখে ছোট মা’র চোখে যেন আগুন ঝড়ছে। অবন্তী এখনো খেয়াল করেনি যে দরজায় ছোট মা দাঁড়িয়ে আছে।
– অবন্তী, তুমি এখানে কি করছো!
ছোট মা’র কর্কশ কন্ঠ কানে আসতেই অবন্তী ভয়ে চমকে গেলো হাতে থাকা খাবার আবার প্লেটে পড়ে গেলো। – কিছু না আম্মু। তখন ভাইয়া খায়নি তো তাই খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
– কেন! খাবার রুমে নিয়ে এসে খাওয়াতে হবে কেন! সেখানে কি তাকে খাবার দেওয়া হয়নি?
অবন্তী নিথর হয়ে বসে রইলো।
– এখনো বসে আছো কেন! নিজের রুমে যাও।
– তুমি রুমে যাও আমি খেয়ে নিবো চিন্তা করতে হবে না।
– সত্যি তো!
– হ্যাঁ সত্যি।
খাবারের প্লেটটা আমার হাতে দিয়ে অবন্তী বেড়িয়ে গেলো। ছোট মা তখনও দাঁড়িয়ে ছিলো।
– আপনি কিছু বলবেন!
– তুমি অতিথি অতিথির মতো থাকো আমার মেয়ের মাথাটা খেতে এসো না।
আমায় কোনো উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই প্রস্থান করলেন।
রাত আনুমানিক বারোটা হবে। প্রচন্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেছে। কিন্তু রুমে যে পানি অবন্তী দিয়ে গিয়েছিল সেটা তখনই শেষ। পানির জন্য রুম থেকে বের হলাম। ড্রয়িংরুমে আব্বু দাদু মেজো চাচ্চু আর ছোট চাচ্চু বসে কথা বলছে। মনে হয় রাদিয়ার বিয়ে নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। হঠাৎই আব্বুর নজর আমার দিকে পড়লো- দূরে দাঁড়িয়ে আছো কেন! এদিকে আসো।
– আমি পানি নেওয়ার জন্য এসেছিলাম।
ছোট চাচ্চু বললো- আচ্ছা ঠিক আছে তুমি পানি খেয়ে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।
পানি খাওয়া শেষে রুমে চলে আসবো তখন আবার আব্বু পিছিয়ে থেকে ডাকলেন – এদিকে আসো।
– কিছু বলবেন?
– তুমি হয়তো এর মাঝে জেনেই গেছো বাসার সবার অবস্থা এখন খুব বেশি ভালো না। সবাই বিয়েটা নিয়ে খুবই চিন্তা করছে। কি করা যায় বলে তোমার মনে হয়!
– এটা তো খুবই সাধারণ একটা বিষয়। কেউ একজন মেয়ের বিষয়ে তাদের ভুল খবর দিয়েছে এটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন। আমার মনে হয় তারা বুঝতে পারবে আর যদি বুঝতে না পারে তবে সেখানে সম্পর্ক করার থেকে না করাই ভালো হবে। কার যে বাসার মানুষ সত্য মিথ্যা যাচাই না করে কাউকে অপবাদ দেয় তারা আর যাই হোক না কেন উত্তম মানসিকতার মানুষ হতে পারে না।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কাল তুমি আমাদের সাথে যাবে।
– কোথায়!
– ছেলের বাসায়।
– আমি কেন?
– তোমার ও তো বোন তোমার তো একটা দায়িত্ব আছে।
প্রসঙ্গ যখন দায়িত্বের আসলো তখন আর না করতে পারলাম না।
পরদিন সকাল বেলা নাস্তার বাটি হাতে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। চোখ খুলে সামনে ওকে দেখে ভয়ে ভিতরটা কেঁপে উঠলো।
– তুমি রুমে আসলে কিভাবে!
– দরজা তো খোলাই ছিলো।
– কখন আসছো রুমে!
– একটু আগেই।
– ডাকতে পারতে।
– আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই ডাকিনি। আপনার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছিলাম ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবেন। টেবিলে তো মামীর কথায় শান্তি করে খেতে পারবেন না। তবে মামী কিন্তু এমন না। খুব ভালো একজন মানুষ কিন্তু আপনার সাথে কেন যে এমন করছে সেটাই ঠিক বুঝতে পারছি না।
– সেইটা বোঝার মতো বয়স হয়নি তোমার এখনো।
“অধরা, তুমি এখানে কি করো!”- কথাটা বলতে বলতে মেজো চাচী রুমে ঢুকে পড়লো।
– উনার জন্য নাস্তা নিয়ে আসছিলাম।
– তুমি বাইরে যাও আর নাস্তার বাটিও নিয়ে যাও।
অধরা মুখটা অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার করে চলে গেলো।
– কিছু বলবেন!
– তোমার জন্য তোমার আব্বু চাচ্চু সবাই অপেক্ষা করছে খাবার নিয়ে।
– আমার জন্য কেন অপেক্ষা করবে উনারা!
– তুমি নাকি ছেলের বাসায় যাবে উনাদের সাথে সেই জন্য।
– আপনি যান আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
ছেলের বাসায় বসে আছি। আব্বু চাচ্চু দাদু সবাই মিলে ছেলের বাবার সাথে কথা বলছে। কিন্তু ছেলের বাবা কিছুতেই রাজি না। উনি তার ছেলের ভবিষ্যত এভাবে নষ্ট করতে চাচ্ছেন না। আমি চুপচাপ উনাদের মন বিনিময়ে দেখছিলাম। বিরক্ত হয়ে ছেলেকে নিয়ে আমি বাসা থেকে বাইরে আসলাম। বাসার বাইরে একটা টং দোকানে বসে দু’জনেই চা খাচ্ছি।
– বাসার থেকে টং দোকানের চা খুব বেশি টেষ্টি না!
ছেলেটা হয়তো ভেবেছিলাে আমি বিয়ের ব্যাপারে কিছু বলবো তাই আমার এমন অফটপিকে প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে গেলো।
– হ্যাঁ ভাইয়া।
– আচ্ছা তোমার নাম যেন কি?
– শুভ্র।
– আচ্ছা শুভ্র আমার বোনটাকে তোমার কেমন লাগে!
শুভ্র চা’য়ের কাপটা টংয়ের উপর রেখে আমার খুব কাছে এসে আমার হাতটা জড়িয়ে ধরলো। আমি শুভ্র’র থেকে এমনটা মোটেও আশা করিনি।
– ভাইয়া ওকে প্রথম দেখেই ভালো লেগে যায় আমার। এরপর আমরা কয়েকদিন একসাথে ঘুরেছি। আমি যে সময়টুকু ওর সাথে থাকি নিজের সমস্ত ক্লান্তি গ্লানি সব দূর হয়ে যায়। আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।
শুভ্র’র আচরণ দেখে মনে হচ্ছে আমি পাগলকে পাগলামি শেখাতে এসেছি। যেখানে ও রাদিয়ার জন্য আগে থেকেই পাগল সেখানে আমি ওর কাছে রাদিয়াকে হাইলাইটস করতে এসেছি।
– তাহলে বিয়ে নিয়ে এতো আকাশ পাতাল সমস্যা কেন!
– আমার তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু রাদিয়া বার বার শুধু এতটুকুই বলে ও আমার জীবন নষ্ট করতে চায় না। আমি ওকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না আমি ওর সাথে ওর শেষ পর্যন্ত থেকে যেতে চাই।
শুভ্র’কে নিয়ে বাসার ভিতরে আসলাম। ততক্ষণে আব্বু চাচ্চু বিদায় নেওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
– আপনাদের এখানে কি সিদ্ধান্ত হলো!
আব্বু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন – ওনারা কিছুতেই এই আত্মীয়তা করবে না।
আমি শুভ্র’কে নিয়ে ওর বাবার কাছে গেলাম।
কিছুক্ষণ ওনার সাথে কথা বলে আব্বু চাচ্চুর সাথে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে নিজের রুমে যাওয়ার আগে শুধু এতটুকুই বললাম – আপনারা বিয়ের প্রস্তুতি নিতে পারেন। বিয়েটা কিন্তু হচ্ছে।
দাদু আমায় তাচ্ছিল্যের স্বরে বললো- আমরা এতক্ষণ বোঝানোর পরেও রাজি হলো না। এখানে মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর প্রয়োজন নেই।
ছোট মা’র মতো এই লোকটারও যে আমি চোখের বালি সেটা উনার সামনে এলেই মুখের আকৃতিতে অনুমান করা যায়।
দাদুর শরীরে একটু আগুন জ্বলানোর জন্য মজা করে বললাম – আপনি বুঝিয়েছেন প্রাচীন নিয়মে তাই বোঝেনি। আমি আধুনিক নিয়মে অল্প সময়েই বুঝিয়ে দিয়েছি। সময় হতো হয়ে এলো রিটায়ার্ড করার। তাড়াতাড়ি রিটায়ার্ড করে নিন।
দাদু হয়তো প্রচুর রেগে গেছে তাই ওনার দিকে তাকালাম না। তাকালেই হয়তো হেঁসে দিবো যেটা পরিবেশের সাথে একদম ম্যাচ করবে না। সেখানে থেকে দ্রুত রুমে চলে আসলাম।
To be continue…..