প্রিয় অর্ধাঙ্গীনি পর্ব-২৩+২৪

0
592

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৩
,
উঠতে ইচ্ছে করছে নাহ? এভাবে থাকার ইচ্ছে আছে নাকি? যদি থাকে তাহলে থাকতে পারো আমার কোনো সমস্যা নেই।

কথাটা বলে সমুদ্র দুইহাতে শশীকে জড়িয়ে ধরতে গেলে শশী লাফ দিয়ে সমুদ্রের বুক থেকে উঠে পড়ে অতঃপর কোনো দিকে না তাকিয়ে ওখান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসে। রুমের বাইরে আসতেই বুকে হাত দিয়ে দেওয়াল ঘেঁষে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। যেনো এতোক্ষণ শ্বাস আটকে রেখেছিলো এখন ছাড়া পেতেই হা করে সব বাতাস নিজের মধ্যে টেনে নিচ্ছে। শশী চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে সেই দৃশ্য টা ভেসে উঠলো ওমনি চট করে চোখ খুলে ফেলল ওমা চোখ বন্ধ করলেও তো ওনাকে দেখতে পাচ্ছি। এখন তাহলে আমার কি হবে আমি রাতে ঘুমাবো কীভাবে? সব দোষ ওনার, রাতে আমার বইটা দিয়ে দিলেই তো হয়ে যেতো তাহলে এমনটা হতো নাহ, এখন আমার কী হবে? আচ্ছা কোনো ভাবে কি চোখ খুলে রেখে ঘুমানো যাই নাকি।

চেষ্টা করে দেখতে পারো কারণ মাছেরা নাকি চোখ খোলা রেখেই ঘুমায় তুমিও একবার চেষ্টা করতে পারো। তবে এটা করার জন্য অবশ্যই তোমাকে পানিতে নামতে হবে, এখন তুমি যদি আমার এতোবড় বাড়ি রেখে পানিতে গিয়ে ঘুমাও আর সেটা যদি তোমার আব্বা জানতে পারে তাহলে কী জামশেদ মাস্টার আমায় ছেড়ে কথা বলবে?

পাশ থেকে কথার আওয়াজ পেতেই শশী মাথা ঘুরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র দরজার সামনে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দুহাত বুকে গুঁজে রেখেছে৷ এতোক্ষণে সে তার উদম শরীলটা কালো টির্শাট দ্বারা ঢেকে ফেলেছে। সমুদ্র কে দেখতেই শশী দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে ইস কি লজ্জা কেউ আমারে বাঁচাও কথাটা বলেই পড়িমরি করে দৌড়ে ওখান থেকে নিজের রুমে চলে গেলো। শশীর এহেন কান্ডে সমুদ্র শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলল,

এতো লজ্জা হলে তো আমার বাসর করাই হবে নাহ৷ দেখা যাবে রাতে বাসর করলাম সকালে বউ লজ্জায় আর আমার সামনেই আসলো নাহ বাকি জীবনটা তার ঘোমটা দেওয়া মুখটাই দেখা লাগলো, এই জন্যই ছোটো মেয়ের প্রেমে পড়তে হয় নাহ কিন্তু কি আর করার যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। এই জন্যই বোধহয় গুরুজনেরা বলে গিয়েছেন, ভাবিয়া করিও কাজ করিয় ভাবিও নাহ।
,,,,,,,,,,

আজকে কেনো জানি ক্লাসেও মন বসতে নাহ সামনে স্যার দাঁড়িয়ে লেকচার দিচ্ছে এদিকে শশী গালে হাত দিয়ে সকালের ঘটে যাওয়া কাহিনীটা ভাবছে। পাশ থেকে মিলি কনুই দিয়ে শশীকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে তোর মন কোথায়? সেই কখন থেকে দেখছি গালে হাত দিয়ে কি একটা ভেবেই যাচ্ছিস। স্যার যদি একবার দেখে নাহ তাহলে এতোক্ষণ কি পড়ালো সবটা তোকে জিগাস করবে তখন বলতে পারবি?

মিলির কথাশুনে শশী গাল থেকে হাত সরিয়ে মিলির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখ আমার চোখের দিকে তাকা দেখেছিস কেমন লাজুক লাজুক ভাব, আর আমার গাল দুটো কেমন ফুলে ফুলকো লুচির মতো হয়ে গেছে, আর আমার ঠোঁট স্টোব্রেরির মতো কেমন লাল লাল হয়ে গেছে৷ এই মিলি আমি এই মুখ নিয়ে বাড়ি যাবো কীভাবে? আজকের দিনটা তোর বাড়িতে থাকতে দিবি আমায়? কাল হতে হতে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে।

শশীর এমন অদ্ভুত কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝতে পারলো নাহ মিলি উল্টো চোখ বড় বড় করে শশীর দিকে তাকালো যেনো সে শশীর কথা অনুযায়ী সবটা মিলাচ্ছে৷ সত্যি কি কারো গাল ফুলে ফুলকো লুচির মতো হয়? মিলি যখন এসব ভাবতে ব্যাস্ত শশী তখন আবারও নিজের ভাবনায় মত্ত। ও কীভাবে মিলিকে বোঝাবে সদ্য যৌবনে পা দেওয়া মেয়েটা যে খুব গভীরভাবে কোনো এক পুরুষের প্রেমে পড়েছে। হঠাৎ তার অতি অল্প ছোঁয়ায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, ভালোবাসার মানুষের একটু ছোঁয়ায় ও যে ভিতরটা এভাবে উল্টো পাল্টা করে দেওয়া যায় সেটাতো ভাবনারও বাইরে ছিলো। এই ছোঁয়ায় যেনো ভিতরে অগ্নি কান্ড ঘটিয়ে দিয়েছে কিন্তু কি আশ্চর্য ভিতরে আগুনে দগ্ধ হলেও বাইরের শরীলটা বরফের মতো ঠান্ডা। যেনো মনে হচ্ছে যেই পুরুষের এই সামান্য ছোঁয়ায় এমন হতে পারে তাহলে সে যদি আরো গভীর করে ছুঁয়ে দেয় তাহলে কি হবে? কথাটা মনে হতেই শশী দুহাতে মুখ ঢেকে বলল,

হায়হায় তাহলে তো আমি মরেই যাবো।

আচমকা শশীর এমন কথায় মিলি এবার বেশ জোরে সরে শশীকে ধাক্কা দিয়ে বলল, আর একটু পড়ে মরিস বোইন স্যার ক্লাস টা শেষ করে বের হোক তারপর আমি নিজ দায়িত্বে তোকে কলেজের বিল্ডিং এর ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবো তখন না হয় আরামসে মরিস। এখন অন্তত আমাকে ক্লাসটা করতে দে আর তুই নিজেও কর এভাবে নতুন বউ এর মতো লজ্জা পাওয়া বন্ধ কর।

মিলির কথা শুনে শশী নিজেকে ঠিক করে চুপচাপ ভালো হয়ে বসলো, নিজেকে মনে মনে বেশ কয়েকটা কঠিন কথা শুনালো যেনো পরবর্তী তে এমন ভুলভাল কাজ সে না করে। ক্লাস শেষ হতেই সবাই বেরিয়ে গেলো শশী বের হতেই মিলি ওর পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল, এখন বল কাহিনী কি তখন ওভাবে নতুন বউয়ের মতো লজ্জা পাচ্ছিলি কেনো? আর কি সব উল্টো পাল্টা কথা বলছিলি গাল ফুলে গেছ ঠোঁট স্টোব্রেরি হয়ে গেছে এসব কি?

মিলির কথাশুনে শশী কিছু বললো নাহ বা হাতে নিজের মুখটা ভালো করে মুছে নিয়ে বলল, সত্যিই কি এমন কিছু হয়েছে? আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে সত্যি করে বলতো।

তুই সত্যি পাগল হয়ে গেছিস এবার সত্যি সত্যিই কিন্তু তোকে এই দোতলার বারান্দা থেকে ফেলে দেবো। মিলির কথায় আর কোনো জবার দিলো নাহ শশী, দুজনে সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে মাঠ পেরিয়ে কলেজের গেটের সামনে এসে দাঁড়ালো। কলেজ ছুটি হয়ে গেছে বিধায় একে একে সবাই বেরিয়ে যাচ্ছে, শশী আর মিলি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, তখনি ওদের সামনে কালো জীপ এসে থামলো শশী মাথা উঠিয়ে দেখে সমুদ্র। সমুদ্র কে দেখতেই মিলির পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো কেননা এই মুখ সে সমুদ্র কে কীভাবে দেখাবে, সমুদ্র গাড়ি থেকে নেমে সানগ্লাস টা বুকের সাথে রেখে মিলির সামনে এসে দাঁড়ালো। মিলি হা করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে, একদম সামনে এসে দাঁড়ানোই মিলি সমুদ্রের টানটান বুকটাই দেখতে পাচ্ছে। গাড়িতে থাকাকালীন তো পুরোটাই দেখা যাচ্ছিলো এখন সামনে এসে দাঁড়ানোই মাথা উঁচু করে দেখা লাগছে। সমুদ্র শশীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

যেহেতু শশী মিলির পিছনে তাই সমুদ্রের কথাশুনে মিলি ভাবলো কথাটা ওকে বলেছে তাই থতমত খেয়ে বলল, হ্যাঁ যাবোতো কিন্তু কোথায়? আর আপনি কে?

মিলির কথাশুনে সমুদ্র এবার মিলির দিকে তাকালো পরক্ষণেই আবার শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, কি হলো শুনতে পাওনি? যলদি চলো আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।

মিলি এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারলো আসলে লোকটা কথাটা ওকে নয় বরং ওর পিছনে থাকা শশীকে বলেছে। কিন্তু লোকটা কে আর শশীকে কীভাবে চেনে? কথাগুলো ভেবে মিলি পাশে একটু সরে গিয়ে শশীর দিকে তাকালো দেখলো শশী ব্যাগ দিয়ে ওর মুখ ঢেকে রেখেছে। মিলি শশীর এহেন কাজে বড়ই বিরক্ত হলো ওর মুখের থেকে টান দিয়ে ব্যাগটা নিয়ে বলল, এখানে এভাবে লুকিয়ে আছিস কেনো ওনি তোকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছিস নাহ?

শশী দুহাতে নিজের মুখ ঢেকে ফিসফিস করে মিলিকে বলল, আমার সামনে থেকে সরিস নাহ মিলি ওনি আমার এই মুখ দেখে ফেলবে তো।

মিলি বোকার মতো একবার শশীর দিকে তো আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো, সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে শশীর দিকে তাকালো শশী তখনো মুখ ঢেকে আছে সমুদ্র মিলির দিকে তাকাতেই মিলি সরে গেলো। সমুদ্র শশীর কাছে গিয়ে বাম হাত ধরে মিলির থেকে ব্যাগটা নিয়ে গাড়ির দিকে গেলো। পাশের সিটে শশীকে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসলো, ওদিকে মিলি এখনো হা করে শশী আর সমুদ্রের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

কি ব্যাপার ওইদিকে মুখ করে আছো কেনো?

গাড়ি চালাতে চালাতে কথাটা বলল সমুদ্র, শশী বাইরের দিকে তাকিয়েই বলল, এমনি বাইরের দৃশ্য দেখছিলাম।

জীবনে কখনো দেখনি? আমার দিকে তাকাও।

সমুদ্রের গম্ভীরকন্ঠে কথাটা শুনতেই শশী আস্তে আস্তে সমুদ্রের দিকে তাকাতেই সমুদ্র মজার সূরে বলল, কি ব্যাপার তোমার গালগুলো ওমন ফুলে আছে কেনো যেনো লাল টমেটো।

ব্যাস সমুদ্রের কথা শুনতেই লজ্জায় আবার মুখ ফিরিয়ে নিলো, সমুদ্র হালকা হেসে গাড়ি চালানোই মন দিলো। মাঝে মধ্যে মেয়েটাকে লজ্জায় ফেললে মন্দ হবে নাহ এমন ফুলো ফুলো লাল লাল লজ্জায় রাঙা মুখ দেখা যাবে।
,,,,,,,,,,

বিছানায় আধসোয়া হয়ে একমনে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে শাহানারা, কালকে রোদ্র আসবে এতো চেষ্টা করেও ছেলেটাকে বলতে পারেনি। ভেবেছে ফোনে বলার থেকে কাছে বসায়ে বোঝালেই রোদ্র বুঝবে। তবে কিছুতেই ভাইয়ে ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ লাগতে দেবো নাহ অন্তত আমি বেঁচে থাকতে। শাহানারার এমন ভাবনার মাঝেই সমুদ্র দরজায় নক দিলো। অনুমতি পেয়ে সমুদ্র রুমে এসে মায়ের পায়ের কাছে বসে বলল,

কালকে রোদ্র আসবে আমার সাথে তুমিও যাবে তো এয়ারপোর্টে?

শাহানারা সমুদ্রের দিকে তাকালো ছেলেটা কার মতো হয়েছে সে এটা ভেবেই চিন্তিত, তবে কিছুটা বাবার ধাতও পেয়েছে। সেই ছোটো বেলা থেকেই নিজেকেই নিজের বন্ধু বানিয়েছে রোদ্রকে জয় কে শাসন করেছে ঠিকই তবে তার আড়ালে ভালোবাসা দিতে কার্পণ্য করেনি। সমুদ্র যদি কোনো ভাবে জানতেও পারে রোদ্র শশীকে চাই তাহলে বিনা প্রশ্নে নিজের ভাইয়ের হাতে ওর ভালোবাসাকে তুলে দেবে কিন্তু শশী? মেয়েটা যে সমুদ্রকে বড্ড চাই ও কখনোই রোদ্রের সাথে ভালো থাকবে নাহ। নাহ আমাকে শক্ত হতে হবে রোদ্রকে বোঝাতে হবে আমি জানি আমার রোদ্র বুঝবে।

কি হলো মা কোথায় হারিয়ে গেলে।

হ্যাঁ শুনেছি, তুই আর জয় যাস আমি আর যাবো নাহ শরীলটা ভালো লাগছে নাহ।

আরো কিছুক্ষণ মায়ের সাথে কথা বলে উঠে দাঁড়ালো, বেরিয়ে যাওয়ার আগে পিছন ফিরে শাহানারার দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে রোদ্র আসলেই কথাটা বলো আমি আর বেশি দেরি করতে চাই নাহ।

,,,,,,,,,,,,

কি হলো রোদ্র ভাইয়া আপনি আমাকে এখন ছাঁদে নিয়ে আসলেন কেনো? আপনার ভাই যদি জানতে পারে তাহলে আমাদের দুটোকেই এই ছাঁদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে।

শশীর কথাশুনে রোদ্র হাসলো তবে কিছু বলল নাহ,রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। শশী রোদ্রের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলল, আরে কোথায় হারিয়ে গেলেন আর আপনি এতোদূর থেকে জার্নি করে এসেছেন চলুন নিচে যায়।

একটু চুপ করে দাঁড়াও তো এতো ছটপফ করো কেনো? তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে। এতোদিন অপেক্ষা করেছি আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি নাহ, কথাটা তোমাকে না বলা অবধি মোটেও শান্তি পাচ্ছি নাহ। শেষের কথাটা আস্তে আস্তে বলল।

কি বলবেন বলেন তারপর আমিও তো বলবো।

রোদ্র শশীর সামনে এসে দাঁড়ালো হাতের মুঠোয় কিছু রাখা আছে। কেবলি রোদ্র কিছু বলবে তখনি শশী সামনে থেকে সরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশ উচ্ছাসিত গলায় বলল, রোদ্র ভাইয়া ওই দেখুন তারা ছুটছে শুনেছি এই সময় কিছু চাইলে নাকি তার সেই চাওয়া আল্লাহ পূরণ করে। আসুন আসুন আমার সাথে চোখ বন্ধ করে নিজের জন্য কিছু চেয়ে নিন।

চলবে?

#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২৪
,
তোরা দুজনে এই সময় ছাঁদে কি করছিস?

শশী আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের মনে বিরবির করছিলো। আর রোদ্র শশীর পিছনে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছিলো ভেবেছে শশী পিছনে ফিরলেই হাঁটু গেঁরে বসে ওকে মনের সব জমানো কথাগুলো বলবে। কিন্তু তার আগেই ছাঁদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সমুদ্র কথাটা বলল। সমুদ্রের গলা শুনে রোদ্র সোজা হয়ে দাঁড়ালো শশীও চমকে পিছনে ফিরে তাকিয়ে সমুদ্র কে দেখে ভয়ে গুটিশুটি হয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে দুজনকে দেখছে, তবে মনে মনে কি ভাবছে সেটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে নাহ। ওটা সমুদ্রই ভালো জানে, এই সময়ে সমুদ্র কে ছাঁদে দেখে রোদ্র বেশ বিরক্ত হলো বিরবির করে বলল, ধূর এই ভাইয়া টাও না আসার আর সময় পেলো নাহ। নিজে বিয়েতো দূর প্রেমতো করলোই নাহ এখন আমার প্রেমের মাঝে এসেও বাঁধা দিচ্ছে।

কি ব্যাপার কথা বলছিস না কেনো?

আসলে ভাইয়া হয়েছে কি এতোদিন পর বাড়িতে আসলাম শশীর সাথে দেখা হলো তাই এমনি কথা বলার জন্য এখানে আসা এই আর কি আমরা তো নিচেই নেমে যাচ্ছিলাম কিন্তু শশী আকাশে কি তারা নাকি দৌড়াতে মানে ছুটতে দেখেছে তাই কিসব করছে। আমরা এই নিচে নেমে যাবো, এই শশী যাও নিচে যাও এতো রাতে ছাঁদে কি হ্যাঁ? জানো নাহ ছাঁদে জ্বীন ভূত থাকে মেয়েদের দেখলে তুলে নিয়ে যায়। এইতো ভাইয়া আমি ওকে বকে দিয়েছি ও এখনি চলে যাবে।

রোদ্র এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে কেবলা হেসে সমুদ্রের দিকে তাকালো, ওদিকে শশী চোখ বড় বড় করে রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। একি মিথ্যাবাদী রে নিজেই আমাকে কি যেনো বলবে এটা বলে ছাঁদে নিয়ে এলো আর এখন নিজের ভাইয়ের সামনে পুরাই পাল্টি খেয়ে গেলো। মনে মনে কথাগুলো বলে রেগে রোদ্রের দিকে তাকালো, দেখলো রোদ্র করুন মুখ করে আগে থেকেই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

রোদ্র নিচে যা তুই মা ডাকছে।

আচ্ছা ঠিক আছে, শশী চলো।

না তুই যা আমার শশীর সাথে কথা আছে।

সমুদ্র কথাটা বলতেই শশী ভয়ে একবার রোদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার সমুদ্রের দিকে তাকালো। রোদ্রও শশীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো কিন্তু বড় ভাই এর কথার পিঠে আর কিছু বলতে পারলো নাহ। অগত্যা মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে নিচে চলে গেলো। রোদ্র যাওয়ার পর সমুদ্র হেঁটে রেলিং এর কাছে গেলো, অতঃপর আকাশের চাঁদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার শশীর দিকে তাকালো শশী এখনো সেই এক জায়গায় খাম্বার মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আমার কাছে এসো।

গম্ভীর স্বরে কথাটা বলে আবারও সামনের দিকে তাকালো, সমুদ্রের কথা শুনে কিছুটা সময় নিয়েই শশী এক পা দু পা করে আস্তে আস্তে সমুদ্রের পাশে গিয়ে দাড়ালো। তবে তাত্ক্ষণিক কেউ কোনো কথা বলল নাহ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সমুদ্র সামনের দিকে তাকিয়েই বলল, তা কি চাইলে?

খুব করে চাওয়া জিনিস কাউকে বলতে হয় নাহ তাহলে সেটা আর পাওয়া যায় নাহ।

তাই নাকি এসব উদ্ভট কথা কোথা থেকে শিখেছো? এসব সত্যি নাহ এখন বলো কি চাইলে।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী পাশ ফিরে সমুদ্রের দিকে তাকালো তারপর মুচকি হেসে হাঁটু মুড়ে বসে সমুদ্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আপনার ওই শক্তপোক্ত শুকনো খাঁ খাঁ করা মরুভূমির মতো বুকে এক পশলা শান্তির বৃষ্টি হতে চেয়েছি, আপনার মনের আকাশের চাঁদ হয়ে জ্বলজ্বল করতে চেয়েছি। সমুদ্রের মতো উত্তাল অশান্ত নিয়ন্ত্রণহীন আপনার একমাত্র শান্তির কারণ হতে চেয়েছি। আপনার বুকের বাঁ পাশের শক্ত চামড়া ভেদ করে ভিতরে যে এক টুকরো নরম হৃদপিণ্ড আছে সেখানের একমাত্র মালিক হতে চেয়েছি। অতঃপর সব শেষে সত্যিসত্যিই যদি পূর্ণজন্ম বলে কোনো কিছু থেকে থাকে তাহলে আমি সেই জন্মেও আপনার অর্ধাঙ্গীনি রূপে এই ধরনীতে আসতে চেয়েছি আপনি কি অনুমতি দিবেন?

শশীর কথাশুনে সমুদ্র অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর শশীর হাত ধরে ওকে তুলে দাঁড় করিয়ে সমুদ্র বুকে নিজের দু হাত গুঁজে বলল, কাল সকালে তৈরি থেকো রোদ্র তোমাকে হিজলতলী দিয়ে আসবে। আর এখন নিচে যাও রাত অনেক হয়েছে এতো রাত করে বাইরে থাকা ঠিক নয়।

সমুদ্রের কথা শুনে শশী পুরাই ভেবাচেকা খেয়ে গেলো ও বলল কি আর সমুদ্র করছে কি। তবে সমুদ্রের এহেন কাজে ভিতরে ভিতরে কষ্ট পেলো তাহলে কি সমুদ্র ওকে চাই নাহ? এই জন্যই কি সমুদ্র ওকে পাঠিয়ে দিতে চাইছে। শশী কিছু বলতে চাইছে কিন্তু সমুদ্র হাত দিয়ে বাঁধা দিয়ে বলল, আর কোনো কথা শুনতে চাইছি নাহ চুপচাপ নিচে যাও।

কাজল বিহীন টানা টানা দুটো আঁখি বেঁয়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল তবে সেটা সমুদ্রের চোখে পড়েছে কিনা জানা নেই শশীর কারণ সেতো মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। শশী বেশ কিছুক্ষণ সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে চলে গেলো। যাওয়ার আগে নিজে নিজেকে বলল আর কখনো ভালোবাসার দাবী নিয়ে এই পাষাণ লোকের সামনে আসবে নাহ। ওনি আসলে ভালোবাসা কি সেটা জানে নাহ কাউকে ভালোবাসতেও ওনি জানেনা শুধু কষ্ট দিতে জানে। ওনার থেকে কিছু আশা করাটাই বোকামী আসলে আমিই পাগল, সিঁড়িতে পা দেওয়ার আগে শশী শেষ বারের মতো ঘুরে পিছনে তাকালো কিন্তু না সেই হৃদয়হীন লোকটা আগের মতোই আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। এক বারের জন্যও পিছন ঘুরে তাকায়নি, অতঃপর সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে গেলো। শশী অদৃশ্য হতেই সমুদ্র ঘুরে তাকালো রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দু হাত বুকে গুঁজে শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

যতটা ভেবেছিলাম তুমিতো দেখি তার থেকেও এগিয়ে আমিই দেখছি ছোটো বলে পিছিয়ে যাচ্ছিলাম। তুমিতো দেখি বেশ বড় হয়ে গেছো একদম বাসর করার মতো।
,,,,,,,,,,,
ডয়িং রুমে ব্যাগ হাতে মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে আছে শশী, এখন শুধু রোদ্র রেডি হয়ে নামলেই ওরা হিজলতলীর উদ্দেশ্যে রওনা হবে৷ শশী একবার মাথা উঁচু করে উপরের দিকে তাকালো কিন্তু সমুদ্রের কোনো নামগন্ধ ও নেই পরে শাহানারার থেকে জানতে পারলো সমুদ্র সকাল সকাল কোথাও একটা গিয়েছে। অগত্যা একরাশ হতাশা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো, শাহানারা পাশ থেকে নানা রকম কথা বলছে কিন্তু শশীর সেদিকে কোনো মন নেই ও শুধু রাতের কথা ভাবছে তাহলে কি সমুদ্র ওকে চাই নাহ? ওকে পছন্দ করে নাহ এই জন্যই কি এভাবে ফিরিয়ে দিলো। শশীর ভাবনার মাঝেই রোদ্র নিচে নেমে এসে শশীর পাশে দাঁড়িয়ে বলল, তাহলে যাওয়া যাক?

রোদ্রের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো শশীর সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল। রোদ্র একমনে গাড়ি চালাচ্ছে ওর পাশে শশী চুপ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর কিছু একটা মনে হতেই রোদ্র আড়চোখে শশীর দিকে তাকায়ে বলল, তুমি না আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলে।

তাতো চেয়েছিলাম কিন্তু রাতে আপনার ভাই যেটা করলো এরপর তো তার থেকে কিছু আশা করাটাই বোকামী। কথাটা মনে মনে বলল শশী, এভাবে চুপ থাকায় রোদ্র আবারও শশীকে কথাটা বলল এবার শশী অন্যদিকে মুখ করেই বলল, নাহ কিছু নাহ এমনি।

শশীর মনের মধ্যে ঠিক কি চলছে সেটা জানার জন্য রোদ্র কথায় কথায় শশীকে বলল, আচ্ছা শশী তুমি কি কাউকে পছন্দ করো? না মানে আমি বলতে চাইছি যে তোমার কি কাউকে ভালো লাগে? যেহেতু আমরা বন্ধু সেহেতু আমাকে বলতেই পারো এইটুকু অধিকার অন্তত আমার আছে নাকি?

রোদ্রের কথায় শশী তাত্ক্ষণিকভাবে কিছু বলল না রাতের ঘটনায় এমনিতেই মনটা খারাপ তার উপর রোদ্র এভাবে প্রশ্ন করায় ভিতরে ভিতরে বেশ বিরক্ত হলো শশী। তবে মুখে সেটা প্রকাশ করলো নাহ, বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল, একজন কে অনেক ভালো লাগে কিন্তু আমার মনে হয় সে আমাকে পছন্দ করে নাহ। আমার এটা মনে হয় তবে তার মনে কি চলছে সেটা ওনিই জানেন। বিরবির করে কথাটা বলল শশী রোদ্র শশীর এমন কথা শুনতেই আচমকা গাড়ি ব্রেক করে অবাক হয়ে শশীর দিকে তাকালো, এভাবে ব্রেক করায় শশী সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকে গেলো আতংকিত চোখে রোদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, কি হয়েছে?

হুম, না মানে সামনে ভাইয়া।

কথাটা শুনতেই শশী সামনের দিকে তাকালো দেখলো সমুদ্র তার কালো জীপটার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেনো কোনো সিনেমার হিরো এদিকে আমার নরম মনটা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে ওনি সেজেগুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে নিষ্ঠুর লোক একটা। শশী মনে মনে কথাটা বলতেই রোদ্র সিট বেল খুলে শশীকে বসতে বলে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তবে রোদ্র আর সমুদ্রের মাঝে কি কথা হলো সেটা শশীর অজানা, খানিকক্ষণ পর রোদ্র সমুদ্রের জীপটাতে চড়ে বসল অতঃপর গাড়িটা নিয়ে বাড়ির দিকে চলে গেলো। রোদ্র চলে যেতেই সমুদ্র এসে শশীর পাশে বসে পড়লো, তবে শশীর মনে হাজার খানিক প্রশ্ন থাকলেও সেদিকে পাত্তা দিলো নাহ। সমুদ্র কে পুরোপুরি এড়িয়ে গেলো, সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে নিজের সিট বেল পড়ে নিলো কিন্তু তবুও শশী সমুদ্রের দিকে তাকালো নাহ মুখ ঘুরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র বেশকিছু সময় শশীর দিকে তাকিয়ে থেকে চটাস করে শশীর ডান গালে টাইট একটা চুমু বসায়ে দিলো। নরম গালে সমুদ্রের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই শশী তড়িৎ গতিতে সমুদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো, কিন্তু সমুদ্রের কোনো হেলেদুল নেই সে তারমতো গাড়ি স্টার্ট দিতে ব্যাস্ত। শশী রেগে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, এটা কি হলো?

গাড়ি চালানোর ফাঁকে সমুদ্র শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, কোনটা কি হলো?

একটু আগে আপনি ওটা কি করলেন?

একটু আগে আমিতো অনেক কিছুই করেছি তবে তুমি কোনটার কথা জিগাস করছো বুঝতে পারছি নাহ বোঝায় বলো।

কি ইতর লোক সব কিছু বোঝেও এখন না বোঝার ভান করে নাদান বাচ্চা সাজতেছে৷ মনে মনে কথাটা বলে শশী দাঁতে দাঁত চেপে বলল, আপনি আমার গালে ইয়ে খেলেন কেনো?

ইয়ে আবার কি? ওহ আচ্ছা তুমি চুমু খাওয়ার কথা বলছো? কিন্তু এখানে আমার দোষ কোথায় তুমিই তো চুমু খেতে বললে।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী অবাক হয়ে সমুদ্রের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল, আমি বলেছি? কি মিথ্যা কথা আমি আবার কখন আপনাকে এটা করতে বললাম। গাড়িতে উঠর পর থেকে তো আমি আপনার সাথে কথায় বলেনি তাহলে।

ওইতো কথা বলোনি কিন্তু ঠিকি আমাকে চুমু খাওয়ার ইশারা দিয়েছো। আমিতো গাড়িতে উঠে দেখলাম আমার দিকে তোমার ডান গাল বাড়িয়ে দিয়ে আছো, তো আমিও ভাবলাম ছোটো মানুষ হয়ত মুখে বলতে পারছো নাহ লজ্জা পাচ্ছো তাই ইশারা করছো এই জন্যই তো আমি চুমুটা খেলাম। আমি আবার বড্ড পরোপকারী, মায়ের থেকে শোনোনি? এই জন্য কেউ কিছু চাইলে তাকে ফেরাতে পারিনা।

সমুদ্রের কথাশুনে শশী আকাশ থেকে পড়ল এই লোকটাকে ও যতটা ভালো ভেবেছিলো এ তার এক কোণাও নাহ। উপরে ভদ্রলোক সেজে থাকে অথচ ভিতরে ভিতরে মহা খারাপ, আবার কিছু বললেও উল্টো পাল্টা যুক্তি দিয়ে বুঝায়ে দেয়। কথাগুলো ভেবে শশী রাগে রাগে আড়চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো তবে এবার আর জানালার দিকে মুখ দিয়ে রাখেনি একদম সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, আর বার বার শুধু সমুদ্রের দিকে তাকাচ্ছে লোকটাকে কোনো বিশ্বাস নেই একবার গালে চুমু খায়ে কিসব যুক্তি দেখালো। না জানি আবার খপ করে ঠোঁটে চুমু দিয়ে আবার কি যুক্তি দেখায় এই জন্য সাবধান থাকায় ভালো।
,,,,,,,,,,,,,,

আম্মা আমিতো আপনার কথামতোই কাজ করলাম তারপরেও ওই সমুদ্র আমারে লোক দিয়া এমনে পিটালো আর আপনি এখনো ওকে কিছু করলেন নাহ।

ও গ্রামে না গিয়েই তোমার হাত পা ভেঙ্গেছে আর আজকে তো ওনিজেই গ্রামেই যাচ্ছে তাহলে ভাবো তোমার কি হতে পারে। নিজের জীবন প্রিয় হলে যলদি লুকিয়ে পড়ো আমি না বলা পযন্ত ওর সামনে পড়ো নাহ।

কন কি আম্মা ওই সমুদ্র আজকে আমাদের গ্রামে আসতেছে? হায় হায় আমারে আগে বলবেন নাহ। কথাটা বলেই শাহিন ফোনটা কেটে দিয়ে বাঁ হাতে নিজের লুঙ্গিটা ধরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিজের বাড়ির দিকে চলে গেলো, আপাতত আজকে আর বাড়ি থেকে বেরোনো যাবে নাহ খবর নিয়ে দেখতে হবে সমুদ্র কতদিন হিজলতলী থাকে সেই কয়দিন মোটেও বাইরে বার হওয়া যাবে নাহ।

ফুপি তুমি এখনো চুপ করে থাকবে ওই সমুদ্র একের পর এক আমাদের ক্ষতি করেই চলছে আর তুমি চুপ করে বসে আছো। কিছু বললেই বলো সময় আসুক আরে আর কবে সময় আসবে তুমি কিসের জন্য অপেক্ষা করছো বলোত? খাগড়াছড়ি তে আমাদের লোকগুলো কে কুকুরের মতো মারলো সাথে ওতোটাকার মালগুলো সব আটক করলো আবার এখানে এসেও একের পর এক ক্ষতি করেই চলেছে এর পরেও তুমি এভাবে হাত পা গুঁটিয়ে বসে থাকবে?

সমুদ কে কতদিন ধরে চিনো তুমি? কতটুকু জানো ওকে? ছোটো বেলা থেকে চিনি আমি ওকে ও কোনো কাজ এমনি এমনি করে নাহ ওর প্রতিটা কাজের পিছনে কোনো না কোনো কারণ থাকে। তুমিতো নিজেই তার প্রমাণ পেলে আমাকে না জানিয়ে ওই মেয়েটার পিছনে লেগেছিলে, তোমার বাবাকে যেতে না দিয়ে নিজে গেটস হয়ে গেলে ওর কলেজে। কি ভেবেছো সমুদ্র এসব কিছুই জানে নাহ? আর আজকে বোকার মতো কি করতে যাচ্ছিলে রোদ্রকে আক্রমণ করে শশীর কাছে ভালো হতে চেয়েছিলে কিন্তু পেরেছো তা? ঠিকিতো মাঝ রাস্তায় সমুদ্র রোদ্রকে পাঠিয়ে নিজে গেলো, ও চুপ করে আছে বলে এটা ওর দুবর্লতা ভেবো নাহ। পনেরো বছরের একটা ছেলে নিজের জীবন বাজি রেখে যখন তার কাছের মানুষ কে বাঁচিয়েছিলো আমি তখনি জানি ওকে হালকা ভাবে নেওয়া মোটেও ভালো হবে নাহ। ও জানতো যে আমি অভীক এর ক্ষতি করবো সেই জন্য আমাকে পছন্দ করতো নাহ, মিশতে দিতো নাহ আমার সাথে অভীককে কিন্তু অভীক তো বোকা ছিলো সেই জন্যই বেঘোরে প্রাণটা হারালো। ভাবো ছোটো বেলাতেই যেই ছেলেটা এতোটা সাহসী ছিলো তাহলে এখন সে কি হয়েছে। তোমার বয়স অল্প রক্ত গরম অল্পতেই ধৈর্য হারা হয়ে পড়ো এই জন্য সামনে আগাতে পারো নাহ। বুদ্ধি খাটিয়ে ধৈর্য ধরে ছিলাম বলেই আজকে এই পযন্ত এসেও এখনো টিকে আছি। ধৈর্য ধরো সঠিক সময় সঠিক চালটা ঠিক দেবো বরাবরের মতো জিতটা আমারি হবে শুধু অপেক্ষা করো। আর হ্যাঁ আমাকে না জানিয়ে আর কিছুই করবে নাহ তুমি, এসব ভুলভাল কাজ না করে নিজের কাজে মনযোগী হও।

কথাগুলো বলে মালবিকা নিজের ফোনটা বের করে কাউকে কল দিতে দিতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। জোসেফ রেগে একটা লাত্থি দিয়ে পাশের চেয়ারটা ফেলে দিলো অতঃপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলল, জোসেফ মির্জা এতো অপেক্ষা করতে পারবে নাহ ওই সমুদ্র কে তো আমি দেখে নেবো ও আমার অনেক ক্ষতি করেছ এবার ওর পালা। সুস্থ শরীলে তো হিজলতলী গিয়েছে তবে সুস্থ ভাবেই ফিরে আসতে পারে কিনা এটাই দেখার বিষয়।

#চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে