#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২০
,
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে কিন্তু এখনো কারো বাড়ি যাওয়ার যেনো কোনো তাড়া নেই। কী সুন্দর মাঠের মাঝে গোল হয়ে বসে গল্প জুড়ে দিয়েছে, অথচ আর কিছুক্ষণ পরেই মাগরিবের আযান দিবে৷ মিলি বেশ করে ধরেছিলো ওদের সাথে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য তবে আমি না করে দিয়েছি। বর্তমানে কলেজের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, বাড়ির গাড়ি একটু পরেই চলে আসবে। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে কখন যে ডান হতের আঙুল গুলো মুখের ভিতর চলে গেছে বুঝতেই পারিনি।
আপনাকে না তখন বললাম নখ কাঁমড়ানো ব্যাড ম্যার্নাস তবুও আপনি এভাবে বাচ্চাদের মতো নখ কাঁমড়াচ্ছেন? শরীল খারাপ করবে কিন্তু।
পিছন থেকে কথাগুলো বলতে বলতে লোকটি শশীর সামনে এসে দাঁড়ালো। শশী মুখ থেকে হাত নামিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে যে লোকটি কথাটা বলেছে সে আর কেউ না তাদের কলেজে আসা স্পেশাল গেস্ট। কিন্তু এই লোকটার ওর সাথে কি কাজ? এসব ভাবনার মাঝেই লোকটা আবার বলে উঠল, অনেকক্ষণ থেকেই দেখছি আপনি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছেন কোনো সম্যসা? নাকি গাড়ি পাচ্ছেন নাহ। কিছু মনে না করলে আমি আপনাকে ড্রপ করে দিই?
লোকটার কথাশুনে শশী একটু হাসার চেষ্টা করে খুবি নম্র স্বরে বলল, না না তার কোনো প্রয়োজন নেই আমার গাড়ি এখনি চলে আসবে। আসলে আমিই আজকে একটু তাড়াতাড়ি কলেজ থেকে বের হয়ে গেছি এই জন্য। কথাগুলো বলে শশী পুনরায় তার বলা কথাগুলো মনে করল ও বোঝার চেষ্টা করছে লোকটির সাথে কোনো খারাপ ব্যাবহার সে করে ফেললো কি না। কারণ তিনি একজন মন্ত্রীর ছেলে তার সাথে কোনো রূপ খারাপ আচরণ করলে আমাকেই বিপদে পড়তে হবে। আর আমার বাবার এতো টাকা নেই যে এদের সাথে লড়বে আর তাছাড়া সমুদ্রের পরিবারের একটা সম্মান আছে আমি চাই নাহ আমার জন্য তাদের কোনো অসম্মান হয়। কথাগুলো ভেবে শশী আবার সামনের দিকে তাকালো নাহ তার গাড়ি এখনো আসছে নাহ, আজকে এতো দেরি কেনো হচ্ছে কে জানে। শশী কথা বলতে না চাইলেও তার পাশে দাঁড়ানো লোকটা বোধহয় ঠিক করেই নিয়েছে আজকে সে শশীর সাথে পরিচিত হয়েই ছাড়বে এই জন্য সে মিষ্টি হেসে বলল।
আচ্ছা আপনি যখন সাহায্য নিবেনই না তখন তো আর কিছু করার নেই। কি বলুন তো নেতা মানুষ তো এই জন্য সাধারণ জনগণ বিপদে পড়লে সেটা সবার আগে চোখে পড়ে৷ এই দেখুন এতোটা সময় ধরে আপনার সাথে কথা বলছি অথচ আপনাকে আমার পরিচয় টাই দিইনি, আমি জোসেফ মির্জা আপনি?
নামটা অচেনা লাগলেও শেষের পদবিটা ভীষণ রকম চেনা লাগল শশীর যেনো এই পদবী আরো একজনের সাথে মিলে যাচ্ছে। কিন্তু তার সাথে এর সম্পর্ক কি? আদেও কি তার সাথে এর কোনো সম্পর্ক আছে নাকি নিতান্তই মনের ভুল। হতে পারে তবে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সব কিছুই কি মনের ভুল? কথাগুলো বলে শশী নিজের নাম বলল।জোসেফ আরো কিছু জিগাস করার আগেই শশীর গাড়ি এসে গেলো তাই আর কিছু জিগাস করার সুযোগ পেলো নাহ। শশী গাড়িতে উঠতেই ড্রাইভার গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে চলে গেলো চলন্ত গাড়ির দিকে চেয়ে জোসেফ বাঁকা হেসে বলল,
তুমি ঠিকি বলেছিলে ফুপি শক্তি আর বুদ্ধির সাথে না পারলে দুর্বল জায়গায় আঘাত করতে আর আমি আপাতত সেটাই করছি। বাকিটা সময় হলেই বোঝা যাবে
কথাগুলো বলে হাতে থাকা সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিজের গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল জোসেফ।
,,,,,,,,,
খুবি চিন্তিত মুখে নিজের বিছানায় বসে আছে জামশেদ মাস্টার আজকে তার বাড়ির ইজ্জত তার মেয়েকে নিয়ে সালিশ বসেছে এটা একজন বাবার জন্য অনেকটা লজ্জা আর খুবি কষ্টকর। সময় নিয়েছেন ওনি যা বলার বিকেলে বলবে কিন্তু বিকেলে তিনি কি বলবেন? এর কোনো উত্তর তার কাছে নেই। আর তিনি বেঁচে থাকতে কোনোদিনই ওই শাহিন এর সাথে মেয়ে বিয়ে দিবেন নাহ প্রয়োজনে মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেবো তবুও নয়। এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হলো এতে যেনো তিনি খুবি বিরক্ত হলেন চোখ বন্ধ অবস্থায় বিরক্তিকর গলায় বললেন, তোমাকে বলেছি নাহ বড় বউ আমাকে একটু একা থাকতে দেও। যাও তুমি আমি ঠিক আছি প্রয়োজন হলে তোমাকে ডেকে নিবো।
নিজের মতো কথাটা বলেই ওনি খাটের সাথে মাথাটা এলিয়ে দিলেন। তবে তার পঞ্চইন্দ্রিয় বলছে ঘরে প্রবেশ করা মানুষ টা মোটেও বাইরে যায়নি বরং সে ধপাধপ পা ফেলে আরো ভিতরে এসে তার পাশে দাঁড়িয়েছে। এবার জামশেদ মাস্টার বরই বিরক্ত হলেন কপাল থেকে হাত সরিয়ে চোখটা খুলে কিছু বলতে যাবে তখনি সামনে তাকিয়ে দেখেন তার সম্মুখে আসলে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে।
তুমি?
আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো। খুবি শান্ত আর গম্ভীর স্বরে কথাটা বলল সমুদ্র। জামশেদ মাস্টার সমুদ্রের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচের দিকে তাকালো এই সময়ে ছেলেটা তাকে কি বলবে আজকে এই ছেলেটার জন্যই তো তার বাড়িতে প্রথম বারের মতো সালিশ বসেছে তাও আবার তারই মেয়েকে নিয়ে, এই কথাটা ভাবলেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার। একজন শিক্ষক এর জন্য এটা খুবি অপমান জনক,তবুও তিনি ভেঙে না পড়ে কন্ঠে কঠোরতা এনে বললেন, বলো?
আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।
সমুদ্রের কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে জামশেদ মাস্টার অবাক চোখে সমুদ্রের দিকে তাকালো। এবার তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো রাগী গলায় সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি কি আমার সাথে মশকরা করতে এসেছো? ভরা সালিশে আমার মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে আবার এখানে এসে বলছো বিয়ে করবে। খেলা পেয়েছো তুমি? আর একটা কথা শুনে রাখো আজকে এই সব যা হচ্ছে সবটা তোমার জন্য এবং আমি কখনোই তোমার সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেবো নাহ। যার নিজের জীবনের প্রতি কোনো মায়া নেই যে মরণ নিয়ে খেলা করে জেনেশুনে একজন পিতা হয়ে কীভাবে মেয়েকে তার হাতে তুলে দেবো, যার নিজের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই সে আমার মেয়েকে কীভাবে ভালো রাখবে।
সমুদ্র কোনো কথা বললো নাহ সবটা শোনার পর সোজা হেঁটে জামশেদ মাস্টার এর সামনে বুক টানটান করে দাঁড়িয়ে বলল, দেখুন এখন যেই পরিস্থিতি হয়েছে আপনার মেয়েকে যে কারো সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য আপনি বাধ্য আর আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন নাহ শাহিন এর সাথে ওর বিয়ে হোক তাই আমার কথা মেনে নেওয়া ছাড়া আপনার আর কোনো উপায় নেই।
সমুদ্রের কথা শুনে শশীর বাবা কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে তুমি কি চাইছো? বাইরে ভরা বৈঠকে বললে বিয়ে করবে নাহ আর এখন বলছো বিয়ে করবে আসলে তুমি করতে কি চাইছো?
আমাদের জীবনে আপনাদের অবদান অনেক, দাদুকে খুব বেশিদিন কাছে পাইনি তবে যে কটাদিন পেয়েছি তার মুখে আপনাদের কথায় বেশি শুনেছি। আপনারা বাবা দাদুর অনেক ভালো বন্ধু ছিলো এমনকি তিনি নিজের জীবন বাজি রেখে দাদুকে বাঁচিয়ে ছিলো। দাদু বলেছিলো জীবনে যদি একবার ও আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আসে আমি যেনো আমার সবটা দিয়ে আপনাদের পাশে থাকি। আমি শশী কে এই জন্য বিয়ে করবো কারণ ওকে আমার পছন্দ হয়ত কখনো ভালোও বেসে ফেলবো সেটা নিতান্তই সময়ের ব্যাপার, তবে আমি যদি ওকে এখন বিয়ে করি তখন আপনারসহ বাকিদের মনে হবে আমি আপনাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছি, করুণা করছি। এই জন্য আমি চাই শশীকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে ওর কোনো রকম অসুবিধা হবে হবে নাহ। কিন্তু যখন আমি ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখবো তখন আপনার হাজার নিষেধ থাকা সত্বেও ওকে আমি বিয়ে করবো।
সমুদ্রের কথা বলার এই পর্যায়ে জামশেদ মাস্টার উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের মুখোমুখি হয়ে বলল, তবে যদি কখনো কোনো সময় তোমার জন্য আমার মেয়ের চোখে এক ফোঁটাও পানি আসে আমি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসবো হোক সে তোমার বিয়ে করা স্ত্রী তবুও। একটা কথা মনে রেখো আমি কোনোভাবেই আমার মেয়ের কষ্ট মেনে নেবো নাহ।
ঠিক আছে আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আমার জীবন থাকা অবধি কোনো বিপদ শশী অবধি পৌঁছাতে পারবে নাহ তাকে আগে সমুদ্রের মুখোমুখি হতে হবে।
ঠিক আছে নিয়ে যাও শশীকে তবে মনে রেখো আমার মেয়ে যেনো ভালো থাকে।
আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আর একটা কথা আমি চাইনা আমাদের মাঝে এই কথাগুলো অন্যকেউ জানুক এমনকি আমার মাও নয়।
কেউ জানবে নাহ।
বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে অতীতের কথাগুলো ভাবছিলো সমুদ্র হঠাৎ কিছু মনে হতেই চোখ খুলে উঠে বসলো। পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে কাউকে কল দিলো, ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটা বোধহয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলো। কল দেওয়ার সাথে সাথে ফোনটা রিসিভ করলো, সমুদ্র গম্ভীর স্বরে ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিকে বলল, কালকে সকালে গাড়ি নিয়ে আমার কোয়াটারের সামনে থাকবে দরকার আছে।
#চলবে?
#প্রিয়_অর্ধাঙ্গীনি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী
#পর্ব_২১
,
কমরে উড়না পেঁচিয়ে হাতে ঝাড়ু নিয়ে খুবি মনযোগ দিয়ে ডয়িং রুম পরিষ্কার করতে ব্যাস্ত শশী। শাহানারার হাজার বারণ সত্বেও শশী কোনো কথা শুনেনি। শাহানারা আর না পেরে নিজের রুমে চলে গেছে, সে ভালোই বুঝে গেছে এই মেয়ে তার কথা শুনবে নাহ। আজকে শুক্রবার বিধায় শশী বাড়িতে কলেজ বন্ধ তাই সকাল সকাল কাজে লেগে গেছে, এর মধ্যে কলিং বেল বেজে উঠল যেহেতু ডয়িং রুমে শশী ছাড়া কেউ নেই তাই শশী দরজা খুলতে গেলো। জয় অনেক্ক্ষণ হলো বাইরে খেলতে গিয়েছে তো শশী ভেবেছে জয়ই এসেছে এই জন্য ঝাড়ু হাতে নিয়ে ওমনিই দরজা খুলতে গেলো।
এতোটা সময় কেউ বাইরে থাকে? আন্টি সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছে।
কথাগুলো বলতে বলতে দরজা খুলতেই শশী হা হয়ে গেলো কারণ তার সামনে জয় নয় সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। শশী হা করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে পরনে ডোরাকাটা আর্মি শার্টটা বেশ আঁটোসাঁটো হয়েই গায়ের সাথে সেঁটে আছে। সমুদ্র শশীকে এভাবে দেখে চোখ থেকে চশমা খুলে বুকের সাথে ঝুলিয়ে ফের একবার শশীর দিকে তাকালো। চিকন গড়নের ছোটখাটো মেয়েটা উড়না কমরে গুঁজে হাতে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার লম্বা চুলগুলো খোঁপায় মুড়িয়ে রাখা, সমুদ্র এবার একটু নিচু হয়ে শশীর মুখ বরাবর মুখ এনে আস্তে করে বলল,
ভিতরে যাবো?
সমুদ্রের এহেন কাজে শশী থতমত খেয়ে মাথা পিছনের দিকে নিয়ে পিছিয়ে গেলো। সমুদ্র বাঁকা হেসে ভিতরে চলে গেলো, শশী এখনো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে ভাবল ও বোধহয় সমুদ্র কে হাসতে দেখলো, শশী যখন ঝাড়ুর গোড়া গালে ঠেকিয়ে ভাবতে ব্যাস্ত তখনি একটা লোক ব্যাগ হাতে শশীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ঝাড়ুটা কোথায় রাখবো?
লোকটার কথাশুনে শশী তড়িঘড়ি করে গাল থেকে ঝাড়ু সরিয়ে বলল, কিহ?
না মানে স্যারের ব্যাগটা কোথায় রাখবো?
কোথায় আবার এই যে আমার এতোবড় মাথাটা আছে কি জন্য ওনার ব্যাগটা এখানেই রাখুন।
শশীর এমন কথাশুনে লোকটা থতমত খেয়ে গেলো, বোকার মতো শশীর দিতে তাকিয়ে আবার হাতের ব্যাগটার দিকে তাকালো, অতঃপর খুবি সরল চাহনি দিয়ে বলল, এতোবড় ব্যাগ আপনার ওই ছোট্ট মাথায় আঁটবে ম্যাডাম? আর আঁটটেও পারে যেহেতু আপনি বলেছেন সেহেতু এঁটে যাওয়ার তো কথা, আচ্ছা আপনি নিচু হোন আমি ব্যাগটা রাখছি।
শশীর যেনো রাগে মাথা ফেঁটে যাচ্ছে তবুও নিজেকে ঠিক রেখে দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করে বলল, বলি সামনে যে এতো জায়গা সেটা আপনার চোখে পড়ছে নাহ? দয়া করে আপনার বকবকানি টা থামিয়ে ব্যাগটা রেখে বিদায় হন, দাঁড়ান দাঁড়ান তার আগে এটা বলুন আপনি কে?
লোকটা ব্যাগটা শশীর পায়ের কাছে রেখে সোজা দাঁড়িয়ে সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বলল, জি এই অধম হলো সমুদ্র স্যারের একমাত্র কাছের গাড়ির একমাত্র ড্রাইভার। তবে এখানে এসে আমি মনে বড়ই দুঃখ পেয়েছি ভিতরে ভিতরে অভিমানের পাহাড় জমা হয়েছে।
লোকটার কথা বুঝতে না পেড়ে শশী বলল, মানে?
মানে আমার চিরকুমার থাকবে বলে পণ করা স্যারটা এভাবে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলবে আমি স্বপ্নে কেনো জেগে জেগেও ভাবিনি। অন্তত আমাকে বলতে পারতো, স্যার শুধু মুখেই বলে আমায় ভালোবাসে অথচ তার বিয়েতে আমাকে জানালোই নাহ, কেনো আমি একটু বেশি খাই এইজন্য?
লোকটির কথাশুনে শশী অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে আছে, ও আসলে বুঝতে চাইছে সমুদ্র বিয়ে করলো কবে আর কাকে? কিছুক্ষণ ভাবার পর ওর মাথায় এলো লোকটা আসলে ওকে সমুদ্রের বউ ভাবছে। কথাটা মাথায় আসতেই লজ্জায় নুইয়ে গেলো, শশী ফের কিছু বলতে যাবে তখনি পিছন থেকে সমুদ্র গম্ভীর স্বরে বলল, একি ইমরান তুমি এখনো যাওনি কেনো?
সমুদ্রের কথাশুনে শশী আর ইমরান দুজনেই সমুদ্রের দিকে তাকালো, শশী সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলেও ইমরান মাথা নিচু করে বলল, আপনিতো ম্যাডাম এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন নাহ তাই আমি নিজে নিজেই পরিচিত হচ্ছি। কিন্তু স্যার আপনি এটা আমার সাথে করতে পারলেন? আমাকে একটা বারও জানালেন নাহ?
সমুদ্র ইমরান এর কথাশুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল, বাজে কথা বন্ধ করে কি বলতে চাচ্ছো সেটা বলে নিজের কাজে যাও।
স্যার আপনি এখনো বুঝতে পারছেন না আমি কি বলছি! আচ্ছা আমিই বলে দিচ্ছি, আপনি যে এভাবে চুপিচুপি বিয়ে করে নিলেন সেটা এখানে এসে ম্যাডাম কে না দেখলে তো জানতেই পারতাম নাহ। তবে যাই হোক ম্যাডাম কিন্তু সুন্দরী আছে, অতঃপর ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে শশীর দিকে তাকিয়ে বলল, ম্যাডাম আপনি আমায় ইমরান বলে ডাকতে পারেন স্যারও এভাবেই ডাকে আচ্ছা তাহলে আমি যাই এখন।
কথাগুলো বলে ইমরান গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো, সমুদ্র তখনো ওখানে দাঁড়িয়ে শশী দৌড়ে ভিতরে যেতেই পিছন থেকে সমুদ্র ওকে ডেকে বলল, দাঁড়াও, তুমি ইমরান কে বলেছো তুমি আমার বউ?
শশী কি বলবে বুঝতে পারছে নাহ, ওই লোকটা এতো কথা বলে আর যা বলে সবি ভুলভাল কথা বলে। এখন ওনাকে কি বলবো? ছিঃ ওনার সামনেই এগুলো হতে হলো এতো লজ্জা লাগছে, আচ্ছা ওনি কি আমার দিকে তাকিয়ে আছে? মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভাবছিলো আর মেঝেতে নখ খুঁটছিলো কেননা পিছনে তাকিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকানোর মতো সাহস ওর নেই। সমুদ্র হেঁটে শশীর পিছনে এসে দাঁড়ালো, বুক সমান শশী ঠিকি তার খোলা কাঁধে সমুদ্রের নিঃশ্বাস টের পাচ্ছে আর এতেই ওর ভিতরে তোলপাড় চলছে। সমুদ্র বিষয় টা বুঝতে পেরে বাঁকা হেসে একটু নিচু হয়ে মুখটা শশীর কানের কাছে এনে ফিসফিস করে বলল,
আমার বউ হওয়ার এতো সখ?
ব্যাস সমুদ্রের এই কথাটা শশীর কানে যেতেই শশী চোখ বন্ধ করে ডানহাতে জামা চেপে ধরল, সমুদ্র কথাটা শেষ করে শশীর কানে ফুঁ দিতেই শশী দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেলো। শশীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সমুদ্র সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের মনে বলল, খুব শীঘ্রই তোমার এই ইচ্ছে টাও পূরণ হয়ে যাবে।
,,,,,,,,,,
খাটে বসে দেওয়ালে টাঙ্গানো ইকবাল এর ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলেন শাহানারা। কেবলি রোদ্রের সাথে কথা বলা শেষ করল ছেলেটা ভীষণ খুশি সামনের সপ্তাহে আসবে। আাসার কথা ছিলো আরো একমাস পর তবে কাজ আগে আগে শেষ হয়ে যাওয়াই চলে আসছে এখানে মাসখানিক থেকে আবার চলে যাবে। ফোন দিলেই আগে শশীর কথা বলে, এবার রোদ্র আসলে শশীর বাবার সাথে কথা বলবো সমুদ্র যখন বিয়ে করবে না বলে ঠিক করেই রেখেছে তখন রোদ্রের বিয়েটা আগে দিয়ে দেবো। বসে বসে এসবি ভাবছিলো শাহানারা তখনি বাইরে থেকে সমুদ্র দরজায় নক করে বলল, আসবো মা?
সমুদ্রের ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো শাহানারার নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, আয় ভিতরে আয়।
সমুদ্র ভিতরে এসে মায়ের পাশে বসল, শাহানারা সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, কতদিন পর আসলি এবার কিন্তু সহজে যেতে দেবো নাহ। সামনের সপ্তাহে রোদ্রও আসছে দুটোকে কতদিন একসাথে নিজের হাতে খাওয়াই নাহ। এবার তোকে যেতে দেবোই নাহ অনেকটা দিন আমার কাছে রেখে দেবো, রোদ্রটাকে যাওবা পাই তোকে তো পাওয়াই যায় নাহ। কথাগুলো বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন শাহানারা, সমুদ্র মায়ের কথাশুনে হালকা হেসে বলল, তোমার ছেলেকে এভাবে বাড়িতে বেঁধে রাখলে দেশকে রক্ষা করবে কে?
কেনো আর কেউ নাই বুঝি দেশ রক্ষা করার দায়িত্ব সবার, সব দায়িত্ব কি তুই একা নিয়ে বসে আছিস?
আচ্ছা ঠিক আছে তোমার যতদিন ইচ্ছে ছেলেকে কাছে রেখো।
সমুদ্রের কথাশুনে শাহানারা অভিমানী কন্ঠে বলল, হ্যাঁ সেই এটাতো শুধু কথার কথা আমার একটা কথাও তুই রেখেছিস যে এই কথাটা রাখবি। কত করে বললাম বিয়েটা কর এতোবড় একটা বাড়িতে একা একা থাকি ভালো লাগে বল? এখন শশী আছে তাও একটু ভালো লাগে জয় আর শশী মিলে বাড়িটাকে একদম মাতিয়ে রাখে এখন একটু বাড়িটাকে জীবন্ত মনে হয়।
তো শশীকে একদম পারমানেন্ট ভাবে বাড়িতে রাখার ব্যাবস্হা করো, তাহলে আর তোমার একা লাগবে নাহ আবার বাড়িটাকেও মৃত মনে হবে নাহ।
শাহানারা ভাবলো সমুদ্র হয়ত জানে রোদ্র শশীকে পছন্দ করে তাই এই কথা বলছে। হয়ত শশীকে রোদ্রের বউ করে আনার কথা বলছে, এটা মনে মনে ভেবে শাহানারা হাসি মুখে বলল, হ্যাঁ আমিও তো সেটা ভাবছি এবার তুই যাই বলিস না কেনো শশীকে এই বাড়ির বউ করেই আনবো, আমি রোদ্রর সাথে কথাও বলেছি ও
আমি শশীকে বিয়ে করতে রাজি মা তুমি শশীর বাবার সাথে কথা বলো, আমি আর দেরি করতে চাই নাহ।
শাহানার কথার মাঝেই সমুদ্র কথাটা বলল আচমকা বড়ছেলের মুখে এমন কথা শুনতেই মুহুর্তের মধ্যে শাহানারা হাসি মুখটা কালো হয়ে গেলো। ভিতরে ভিতরে আসন্ন সময়ের কথা ভেবে কেঁপে উঠল শেষে ভাই এ ভাই এ বিবাদ না বাঁধে। ছোটো বেলা থেকেই রোদ্রটা চুপচাপ হলেও যখন যা দরকার নিজে মুখে চেয়ে নিয়েছে যেমন শশীকেও ওর কাছে চেয়েছে আর আমিও হাসি মুখে ওকে দেবো বলে কথা দিয়েছি৷ কিন্তু সমুদ্র, বরাবরই জেদি একগুয়ে সব সময় কথা মুখের মধ্যে রেখেছে কখনো চায়নি তবে যেটা প্রয়োজন ঠিকি সেটা নিজে নিয়ে নিয়েছে আর পছন্দের জিনিস না পেলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছে তাহলে এখন কি হবে? শাহানারা যখন এসব ভাবছিলো তখন সমুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, অনেক রাত হয়েছে তুমি ঘুমিয়ে পড়ো সকালে কথা হবে।
কথাগুলো বলে সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো কিন্তু পিছনে রেখে গেলো আসন্ন বিশাল এক ঝড় যেটা কি আকার ধারণ করতে পারে এটা ভাবতেই কেঁপে উঠছে শাহানারা। সমুদ্র যে ওকে ঘুমাতে বলল কিন্তু আজকের পর থেকে ঘুম কি ওর চোখে আদেও ধরা দিবে?
#চলবে?