#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_৩২
—অন্তিম পর্ব
পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙলো নাহিয়ান এর। পাশে রাদিফকে দেখে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে নিলো নাহিয়ান। পরক্ষণেই মনে পড়লো কাল তার বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে শ্বশুরবাড়ি এসে এখানে জায়গা হয়েছে তার। উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। আজকে ছুটি নিয়েছে সে। নীতিকে নিয়ে বাড়ি ফিরবে সে। ফ্রেশ হয়ে একেবারে রেডি হয়ে নামলো সে। ওকে দেখা মাত্রই নীতির মা বলে উঠলেন, “এসেছো বাবা, নাশতা করে নেও!”
নাহিয়ান মুচকি হেসে বসলো। পরমুহূর্তেই বর্ষা এসে নীতির মাকে জিজ্ঞেস করলো, “নীতি কি বেরিয়ে গিয়েছে?”
“হ্যাঁ, সেই কখন!”
কথাটা শোনা মাত্রই নাহিয়ান খাওয়া থামিয়ে তাকালো।
“বেরিয়ে গিয়েছে মানে?”
বর্ষার খেয়াল হলো নাহিয়ান এখানে। আমতা আমতা করে বলল, “মানে হলো..”
“নীতি কোথায় গিয়েছে?”
বর্ষা মিন মিনে গলায় বললো, “আপনার বাড়ি!”
“আমাকে রেখেই?”
বর্ষা বলার কিছু পেলো না! নাহিয়ান চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলো। অতঃপর জোহরাকে বললো, “আমি আসি মা!”
তিনি যেনো চমকালেন।
“যাবে মানে কি? তোমার না আজকে ছুটি? থাকো, পরে যেও!”
“না আন্টি, অফিসে কাজ আছে। যেতে হবে!”
বলে তাকে সালাম দিয়ে বেরিয়ে গেলো সে। ওদের কিছু বলার সুযোগ দিলো না। বর্ষা চট জলদি নীতিকে ফোন করলো।
“নীতিরে, তোর জামাই বেরিয়ে গিয়েছে। বলে অফিসে কাজ আছে। আমাদের আটকানোর সুযোগও দেয় নি!”
“ইডিয়েট!”
বলেই কেটে দিল নীতি। রীতিকে উদ্দেশ্য করে বলল, “তোমার বন্ধু আসতেছে। সব লুকাও।”
কথাটা শোনা মাত্রই যেনো সবাই যতটা জলদি কাজ করছিলো, তার থেকেও বেশি জলদি করে সবটা লুকাতে লাগলো। শোন লুকানো শেষে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে লাগলো। বেশ অনেকক্ষন পর নাহিয়ান এলো। কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজে রুমে গেলো। নীতি ভরকে গেল। সে তো কারো দিকে তাকালো না!
“তোমার দেওর মেবি রেগে আছে আপু! দেখে আসি!”
“আচ্ছা যা!”
নীতি রুমে গেলো। নাহিয়ানকে পেলো না। হয়তো ওয়াশরুমে। নীতি কিছুক্ষণ পায়চারি করতেই নাহিয়ান বেরিয়ে এলো। তাকে ফরমাল লুকে দেখে নীতি ভ্রু কুঁচকে নিলো।
“কোথায় যাচ্ছেন?”
নাহিয়ান ওর দিকে তাকালো। তবে উত্তর না দিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ব্রাশ করতে লাগলো।
“আজকে তো ছুটি নিয়েছেন তাই না?”
নাহিয়ান এবারও উত্তর দিলো না। টাই বাঁধতে লাগলো। নীতি ওর টাইয়ে হাত দিতে গেলেই নাহিয়ান বাঁধা দিয়ে বললো, “প্রয়োজন নেই!”
“বউয়ের হাতে টাই না বেঁধে বউকে অপমান করছে।”
নাহিয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, “আর বউ তার বরকে তার বাড়ির লোকের সামনে যেই অপমান করেছে, সেটা?”
“আমি আপনাকে অপমান কখন করলাম?”
“আমি গিয়েছিলাম ওখানে তোমার জন্য। একসাথেই ফিরতে পারতাম আমরা। কিন্তু তোমার রাগ এত, যে তুমি না বলে কয়ে আমাকে ফেলেই চলে আসলে।”
টাই বাঁধা শেষে নাহিয়ান ওর দিকে তাকালো।
“ওটা আমার শ্বশুর বাড়ি! সেখানে এত মানুষ, সবাই কি ভেবেছে বলতে পারো? আমার নিজেকে কতটা ছোট লেগেছে, জানো? অথচ এরকম ভাবে চলে আসার কারণ কিন্তু অনেক সামান্য ছিল!”
“আপনি ভুল বুঝছেন!”
নাহিয়ান কিছু না বলে বেরিয়ে যেতে নিলেই নীতি ওর হাত ধরে আটকালো। নাহিয়ান তাকাতেই বললো, “আপনি ভুল বুঝছেন নাহিয়ান। একটু অপেক্ষা অন্তত করুন। ও বাড়ির কেউ আপনাকে নিয়ে কিছু ভাবেনি!”
নাহিয়ান মুখে হাসি ফুঁটিয়ে বললো, “কেউ কিছু ভাবেনি এটা হয়তো আমিও জানি। কারণ মানুষগুলো ভালো, তবে তুমি উপলব্ধিও করতে পারছো না আমাকে কতটা আঘাত করেছো!”
বলেই হাত ছাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো। নীতি ছলছল চোখে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। ও তো এতসব ভেবে কিছু করেনি!
__________________________________ বাজারের ব্যাগ হাতে ফিরছে তূর্ণা। এসব যদিও ওর কাজ না, তবুও বড় হয়েছে। এসব একটু শিখে রাখা দরকার। তাই মাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে এসেছে সে। আগের মতো আর নেই কিছুই তার মধ্যে। বোকাসোকা মেয়েটা এখন আর আগের মতো বোকামি করে না। বাস্তবতাকে ভীষণভাবে উপলব্ধি করে সে।
“তূর্ণা!”
সেই চেনা পরিচিত কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালো তূর্ণা। কতগুলো মাস কথা হয় নি এই মানুষটার সাথে, তবুও কন্ঠটা এখনও চিনতে পরে সে। আরহাম ওর পাশে এসে দাঁড়ালো।
“তুমি এখানে যে?”
“বাজারে এসেছিলাম। বাড়ি ফিরছি!”
“ওহ, রিকশায় যাবে?”
তূর্ণা মাথা নাড়লো। যদিও রিকশায় যেতো না সে। কিন্তু আরহামের কাছাকাছি থাকার ইচ্ছে নেই তার। দূরে যেতে পারলেই বাঁচে।
“আচ্ছা চলো, তাহলে একসাথে যাওয়া যাক!”
তূর্ণা চমকে উঠে বললো, “একসাথে মানে?”
“তোমাদের বাড়িতে আমার মা আছেন। তাই আমাকেও যেতে হবে তাকে আনতে! এখানে এসেছিলাম মিষ্টি কিনতে। আর তোমার দেখা পেয়ে গেলাম। দাঁড়াও, রিকশা ডাকি!”
“না, প্রয়োজন নেই! হেঁটেই চলুন!”
“কেনো?”
“এমনি!”
বিড়বিড় করে বললো, “রিকশায় জড়তা নিয়ে বসার চেয়ে হাঁটা ভালো!”
“ওকে, চলো!”
অতঃপর হাঁটতে শুরু করলো দুইজন।
“পড়াশোনা কেমন চলছে?”
“ভালোই!”
“আগের মতো ক্রাশের সাথে বিয়ের স্বপ্ন নিয়ে আছো নাকি? ক্রাশ কত হলো এবার?”
হাসলো তূর্ণা।
“শেষ বার যার হাসিতে মুগ্ধ হয়েছিলাম, তার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারি নি। তাই নতুন কেউ আসেওনি!”
আরহাম চুপ রইলো। তূর্ণা জানতো ওর প্রসঙ্গ উঠলেই ও চুপ করে যাবে। আর সেটাই চাইছিলো সে। অনেক কষ্টে সামলে উঠেছে সে। আবার দুর্বল হতে চায় না!
“ভালোবাসো তাকে এখনও?”
তূর্ণা চমকালো। তবুও স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, “এসব জিজ্ঞেস করে আদো কি লাভ আছে?”
“যদি বলি আছে!”
“কি লাভ?”
আরহাম চুপ রইলো।
“লাভ পাচ্ছেন না, তাই তো?”
আরহাম তবুও চুপ!
“আমি মেনে নিয়েছি সব ভাইয়া। ভালোবাসা একটা সুন্দর অনুভূতি। কাউকে জোর করে সেই অনুভূতি কারো প্রতি আনা যায় না! আমার মনে হয় আপনি গিলটি ফিল করছেন আজও। আপনি যে কথা দিয়েছিলেন। তবুও আমি বলছি এই নিয়ে কোনো কথা মনে রাখবেন না। আমার আপনার উপর কোনো ক্ষোভ নেই!”
আরহাম দাঁড়ালো। তূর্ণার হাত ধরে ওকেও থামিয়ে দিলো। তূর্ণা ওর দিকে তাকাতেই সে চোখে চোখ রেখে বললো, “ভালোবাসি!”
দ্বিগুণ চমকে উঠলো তূর্ণা। আরহাম আবারও বললো,
“শুরু থেকেই করতাম। কিন্তু তোমার লাইফে ছেলেরা ছিলো অন্যরকম। আজ এর পিছু তো কাল ওর পিছু ঘোরা মেয়েটিকে দেখে বুঝলাম সে আমায় কোনোদিনও বুঝবে না। আর না ভালোবাসবে, তাই তোমার সাথে কথা বলতাম না আমি। কিন্তু ভাগ্যের কারণে সেই তোমার কাছেই আসতে হয়েছে আমায়। তুমি যেদিন প্রথম বলেছিলে আমায় চাও, তখনও ভেবেছি আমাকেও অন্য ছেলেদের মতোই ট্রিট করতে চাচ্ছো। বলেও ছিলে আমি তোমার ক্রাশ! তাই…”
থামলো আরহাম। আবার বললো,
“এরপর শর্ত দিলাম। আমি ভাবতাম তুমি অতটাও সিরিয়াস হবে না। কিন্তু ধারণা ভুল। তোমার পরিবর্তন, আমাকে পাওয়ার আকুলতা সব বুঝেছি আমি। তবুও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়! তাই সেদিন তোমার বলা কঠিন কঠিন কথার প্রেক্ষিতে কিছুই বলিনি আমি। এই এতগুলো মাস আমি তোমায় পরখ করেছি তূর্ণা। ভালোবাসা খুব সেনসিটিভ জিনিস। সহজে এর থেকে মুক্তি মেলে না। সব শেষে বুঝলাম, তুমি সম্পূর্ন আমার মনের মতো! আমি চাই না তোমায় হারাতে!”
তূর্ণা বলার মতো অবস্থায় রইলো না। থমকে আছে সে! তার মনে প্রশ্ন জাগছে, আচ্ছা এটা সত্যি তো?
“তূর্ণা?”
“মজা করছেন?”
আরহাম হতাশ!
“এত কষ্ট করে এতগুলো কথা আমি মজা করে বলবো?”
“তাও ঠিক!”
অতঃপর ঠোঁট চেপে হেসে বললো, “তাহলে আমার ক্রাশের সাথে সংসারের ইচ্ছে পূরণ হতে যাচ্ছে?”
আরহাম চোখ বড় বড় করে তাকালো। তাই দেখে ফিক করে হেসে দিলো তূর্ণা!
__________________________________
রাত সাড়ে এগারোটা। নিজের ডেস্কে এখনও বসে আছে নাহিয়ান। বাড়ি যায়নি সে। মূলত নীতির উপর রাগ করেই যায়নি! অন্যদের সাথে ওভারটাইম করছে সে। যদিও ওভারটাইমের জন্য ওকে কেউ জোর করেনি, তবুও সে করছে। কিছুক্ষণ পর এক স্টাফ এসে খবর দিলো, “স্যার, ম্যাম এসেছেন!”
নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কোন ম্যাম?”
“আপনার ওয়াইফ!”
নাহিয়ান চমকালো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো এগারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট হচ্ছে। সে জলদি করে নীতির কাছে গেলো। বাইরে যেতেই দেখলো কালো রঙের সিল্কের শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে নীতি। এই ঠান্ডায়ও গায়ে কোনো গরম কাপড় নেই। নাহিয়ান বুঝে পেলো না হঠাৎ এত সাজগোজ কেনো?
“এখানে কি করছো?”
নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকাতেই নাহিয়ানের বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। নীতির চোখে পানি।
“বাড়ি ফিরছেন না কেনো?”
“আশ্চর্য, আমার কাজ শেষ না করে আমি বাড়ি ফিরবো কি করে?”
“আপনার কলিগ টুম্পাকে কল করেছিলাম। সে বলেছে আপনি নিজেই ওভারটাইম করছেন!”
“টুম্পার নাম্বার…”
“আমাদের বিয়েতে এসেছিলো, তখন ভাব জমেছিলো। আর নাম্বার নিয়েছিলাম!”
নাহিয়ান চুপ করে রইলো।
“বাড়ি চলুন!”
“আমার দেরি হবে, চলে যাও!”
“বেশ, তবে শেষ করুন। আমি রইলাম এখানে!”
নাহিয়ান ওর দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে ভিতরে চলে গেলো আবার। নীতি চোখের কোণে থাকা পানিটুকু মুছে নিলো। মিনিট খানেক বাদে নাহিয়ান আসলো। ওকে দেখে হাসলো নীতি। অতঃপর দুইজন বাড়ি ফিরলো।
__________________________________
বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট। নাহিয়ান বাড়িতে ঢোকা মাত্রই চমকে উঠলো। বসার ঘরে রীতি, প্রীতি, বর্ষা, রাদিফ, আনাফ, শাফিন, তূর্ণা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে বসে ঘুমাচ্ছে। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখলো খানিকটা সাজানো। নীতির দিকে তাকাতেই সে মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকলো। রীতির কাছে গিয়ে ওকে ডাকলো!
“আপু!”
বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পর উঠলো সে। কোনো মতে চোখ খুলে আদো আদো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “তোর বর এসেছে?”
নীতি ছোট্ট করে উত্তর দিলো, “হুমম!”
রীতি চিল্লিয়ে বললো, “আজকে কই ম’রছিলো ওই হারামী?”
ওর চিৎকারে সবার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। শাফিন ঘুম ঘুম কণ্ঠে বললো, “আজকে এত লেট কেন ভাই? কখন থেকে অপেক্ষা করেছি!”
নাহিয়ান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “হঠাৎ অপেক্ষা করতে গেলে কেনো?”
তূর্ণা মাঝে বলে উঠলো, “হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া। আমি ঘুমালাম!”
রীতি বিরক্ত হয়ে বলল, “বাসি বার্থডে হবে।”
নাহিয়ান হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রীতি ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “আর দিন তো টাইমেই চলে আসিস! আজকে কি হলো?”
“কেকটা কেটে ঘুমিয়ে পড়ো সবাই।”
“এ ছাড়া আর উপায় কি? আজকেই তোর এত কাজ থাকতে হলো? নীতি কত পরিকল্পনা করে তোর বার্থডে প্ল্যান করলো।”
“হুমম, নীতি বলেছিলো আপনাকে ও বাড়িতে আটকে রাখবো আমরা। আর সেই ফাঁকে ও এদিকে সব সাজিয়ে ফেলবে। তারপর টাইম মতো আপনাকে ছাড়া হবে। সাথে আমরাও আসবো! কিন্তু মাঝে আপনার কাজ পড়ে যাওয়ায় সব ঘেঁটে গেলো। আর শেষে সব বৃথা!”
বর্ষার কথার প্রেক্ষিতে তূর্ণা বললো, “তোমার বার্থডে তো কখনো সেলিব্রেট হয়নি। তাই আমরা সবাই কত এক্সসাইটেড ছিলাম। নীতি ভাবীর সব কষ্ট বৃথা!”
নীতি মুচকি হেসে বললো, “বৃথা কে বললো? ফ্রিজ থেকে কেক বের করো। তারপর খাওয়া দেওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়।”
কেউ আর কিছু বললো না। নাহিয়ান চুপচাপ নীতির দিকে তাকিয়ে আছে। ইশ, মেয়েটা কত আশা নিয়ে সবটা করেছিলো। আর ও? অতঃপর কেক কাটা শেষে সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে চলে গেলো। নাহিয়ান ফ্রেশ হয়ে নিলো। রুমে নীতিকে পেলো না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর বাইরে উকি দিয়ে দেখলো লাইট সব বন্ধ! নীতি কোথায়? বারান্দার কথা মাথায় আসতেই সেখানে গেলো। আর তাকে সেখানেই পেলো। উদাসমনে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। নাহিয়ান পিছ থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ওকে।
“সরি বউ!”
নীতি উত্তর দিল না।
“সরি, সরি, সরি! আর কখনো এমন হবে না বউ!”
নীতি তবুও চুপ।
“আচ্ছা, আমাকে শাস্তি দেও। কান ধরে উঠবস করবো? করছি দাঁড়াও!”
বলেই ওকে ছেড়ে এক, দুই, তিন বলে কান ধরে উঠবস করতে লাগলো। নীতি এবার ওর দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বলল, “দাঁড়ান।”
নাহিয়ান কান ধরেই দাঁড়ালো। নীতি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নাহিয়ান ওর মাথায় হাত রাখতেই ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো সে। নাহিয়ানের বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। অস্থির হয়ে বললো, “প্রিয়, প্লিজ সরি! তোমার যা শাস্তি দেয়ার দেও, তাও কেঁদো না। আমি খারাপ, খুব খারাপ! সরি বউ! প্লিজ!”
নীতি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নাভেজা কণ্ঠে বললো, “রাগ করে দরকার পড়লে অনেক বকবেন, কিন্তু কখনো এভাবে দূরে সরে যাবেন না প্লিজ! আমার কষ্ট হয়! আর কখনো এমন রাগ করবেন না। আমি সইতে পারবো না।”
বলেই নীরবে চোখের পানি ফেললো।
“আ’ম সরি প্রিয়! আর কখনো এমন হবে না। কখনো না, সরি!”
নীতি একটু স্বাভাবিক হলো। তবুও সেভাবেই থেকে বললো, “হ্যাপি বাসি বার্থডে!”
নাহিয়ান হাসলো। ওর মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে বললো, “ভালোবাসো খুব, তাই না প্রিয়?”
“হুমম, অনেক!”
“আমি কখনো ছেড়ে গেলে কি করবে প্রিয়?”
নীতি চুপ করে রইলো।
“প্রিয়!”
“ছেড়ে গেলে বেচেঁ হয়তো থাকবো, কিন্তু ভিতর থেকে ম’রে যাবো!”
“ভালোবাসি প্রিয়!”
“ভালোবাসি অনুভব!”
অতঃপর নীরবতা রইলো। বেশ কিছুক্ষণ পর নীতি সরে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে বললো, “নিন, এবার উঠবস শুরু করুন!”
নাহিয়ান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো, “কি?”
“শাস্তি দিতে বললেন না? শাস্তি! করেন করেন!”
নাহিয়ান অসহায় মুখ করে তাকালো। নীতি হাসলো!
“ওভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। শুরু করুন!”
নাহিয়ান উপায় না পেয়ে উঠবস করতে লাগলো। কোন দুঃখে যে শাস্তি, শাস্তি করছিলো। নীতি ওর আড়ালে হাসলো। বারান্দা দিকে বাইরে আকাশের দিকে তাকালো। বাতাস বইছে মিহি। নিরবতায় ঘিরে আছে চারপাশটা। এর মাঝে কেবল নাহিয়ানের কাউন্টিং শোনা যাচ্ছে। হাসলো নীতি। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো, “সবটা যেনো এমনই চলে। খুনসুটি, মান-অভিমান সব কিছুর পরেও যেনো এই ভালোবাসা না কমে। প্রিয় আর অনুভবের সম্পর্কটা যেমন এভাবেই রয়ে যায়!”
নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকালো। নাহিয়ান দাঁড়াতেই আবারও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বেশ জোড়েই বললো, “ভালোবাসি প্রিয়র অনুভব!”
নাহিয়ান প্রথমে ভরকে গেলেও পরক্ষণে হেসে বললো, “ভালোবাসি টু অনুভবের প্রিয়!”
অতঃপর আবারও নিরবতা। কেবল দুই মানব মানবীর নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মৃদু বাতাসও যেনো কানে এসে জপে চলেছে, ‘প্রিয় অনুভব!’
রইলো গেঁথে এক ভালোবাসার কথন। না দেখে, না ছুঁয়ে সেই ভালোবাসার নাম ছিল ‘প্রিয় অনুভব’। সবার ভাগ্যে এই ভালোবাসাটুকু থাকে না। অতঃপর এভাবেই চলতে থাকলো তাদের দুষ্টু মিষ্টি সম্পর্ক!
“মনকুঠিরে তুমি আছো,
আছো মনোভাবে..
অনভূতিগুলো সামলে রেখো,
তোমার প্রিয় অনুভবে!”
~সমাপ্ত