#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_২৮
আটপৌরে পড়া কাঁচা হলুদ রঙের শাড়িটা হালকা উচু করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে ঘরে আসলো নীতি। গালে হলুদ, মুছতে নিয়েও মুছলো না সে। নাহিয়ান ফোন দিবে বলেছে। হয়তো দেখবে ওকে। হাসলো নীতি। দরজা আটকে বিছানায় ফোন হাতে নিয়ে বসলো সে। অপেক্ষা করতে লাগলো তার ফোনের। সেই সাথে ভাবতে লাগলো পেরিয়ে যাওয়া সময়ের কথা। ইশ, দেখতে দেখতে কতটা সময় কেঁটে গিয়েছে। তার পড়াশোনা শেষ, নাহিয়ানও এখন সেটেল হয়ে গিয়েছে। ব্যস, সবশেষে শুরু তাদেরও বিবাহ অভিযান! ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠলো তার। নাহিয়ান কল দিয়েছে।
“নাম্বারে কল দিলেন যে? ভিডিও কল যখন দিবেন না আমাকে কেনো বললেন চেঞ্জ না করতে?”
“বারান্দায় আসো!”
নীতি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “বারান্দায় কেনো? আপনি কি বাই এনি চান্স নিচে?”
নাহিয়ান হাসলো। নীতি এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে দৌড়ে বারান্দায় গেলো। ওর রুমের বারান্দা থেকে বাড়ির পিছনের রাস্তাটা দেখা যায়। সেই রাস্তায় ফোন কানে নাহিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরিহিত সে।
“হলুদ কোথায় আপনার?”
“এতটা রাস্তা আসবো, হলুদ নিয়ে আসবো নাকি?”
“আমারটাও তাও ওঠানো উচিত!”
“একটু থাকুক। দেখি!”
“কি দেখবেন?”
“আমার হবু অর্ধাঙ্গিনীকে!”
নীতি হাসলো।
“কাল বিয়ে, আর আজ এখানে আপনি? কত বাজে স্যার?”
“বিয়ের আগে শেষ দেখা করতে আসলাম!”
“শেষ দেখা কেনো?”
“বারে, কাল নীতির বিয়ে না? বিয়ের পর বিবাহিত নারীকে দেখতে আসবো নাকি?”
“এমনভাবে বলছেন, বিয়ে যেনো অন্য পুরুষের সাথে!”
“হ্যাঁ, আপনার বিয়ে, আপনার অনুভবের সাথে। আমি বেচারা নাহিয়ান, এখন আপনার বিয়ে দেখবো!”
নীতি হেসে বললো,
“আপনারও তো বিয়ে, প্রিয়র সাথে!”
নাহিয়ানও হাসলো।
“এই একটু দাঁড়ান তো, আসছি!”
“কোথায় যাচ্ছো?”
“রাখুন, আসছি!”
“আসছো মানে? কোথায় আসছো! হ্যালো?”
নীতি ফোন কেটে দিয়েছে। নাহিয়ান অস্থিরভাবে পায়চারি করতে লাগলো। এই নীতি করবে টা কি? বেশ কিছুক্ষণ পর কিছু পরার শব্দে সেদিকে তাকালো সে। নীতি দেয়ালের উপরে। নিচেই তার জুতো পড়ে আছে, যেগুলো সে ফেলেছে। চোখ বড় বড় করে তাকালো ও। দ্রুত পায়ে সেখানে গেলো।
“কি করছো তুমি?”
নীতি শাড়ী সামলে কোনোমতে পা দেয়ালের এদিকে আনলো। নামার চেষ্টা করে বললো, “কথা না বলে সাহায্য করুন!”
বলেই নিজের সাইড ব্যাগ নাহিয়ানের হাতে ধরিয়ে দিলো।
“আরে আসছো কেনো? রাত হয়েছে!”
“সাহায্য করবেন? নাকি লাফ দিবো?”
“উঠেছো কি করে?”
“যেমনেই উঠি, আপনি নামান আমায়!”
“উফ! হাত দেও।”
নীতি নাহিয়ানের সাহায্য নিয়ে অবশেষে নিচে নামলো। অতঃপর ওর হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিলো। পায়ে জুতো জোড়া পড়ে নিলো। বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বললো!
“বাবা! কত কষ্ট!”
“করতে কে বলেছে?”
“আমি! চলুন..”
বলেই হাত ধরে টানতে শুরু করলো।
“কোথায়?”
“পালাবো!”
“পালাবো কেনো? বিয়ে তো হচ্ছেই!”
“উফ, এত প্রশ্ন করা শিখলেন কবে থেকে? চলুন!”
“কি শুরু করলে নীতি?”
নীতি নাহিয়ানের চোখে চোখ রেখে বললো, “বিয়ের আগে লাস্ট ডেটে যাচ্ছি। চলুন!”
বলেই নাহিয়ানকে নিয়ে এগিয়ে চললো সে। একটু দূরেই চায়ের টং ছিলো। রাত আনুমানিক একটা। দোকানদার সবেই দোকান বন্ধ করতে যাচ্ছিলো। নীতি এক প্রকার ছুটে গিয়েই বললো, “মামা, দুইটা চা দিন!”
দোকানদার বিস্মিত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো।
“দিন না! পাঁচ টাকা বাড়িয়ে দিবো!”
তিনি কিছু না বলে চা বানানো শুরু করলেন। নীতি আর নাহিয়ান বেঞ্চে বসলো।
“এটা তোমার ডেট?”
“হুমম! চায়ের ডেট।”
নাহিয়ান হাসলো।
“তো ম্যাম, ডেটে এখন কি নিয়ে গল্প করবেন?”
“কি নিয়ে গল্প করবো বলতে?”
“ডেটে আসে মানুষ একে অপরকে জানার জন্য, এখন বলো আমাকে কিভাবে জানবে? মানে জানার কি কিছু বাকি আছে?”
“ডেট যে সবসময় জানার জন্যই হতে হবে এমন কথা কোথাও লিখা আছে নাকি? চলুন আজ গল্প স্মৃতিচারণ করি!”
“স্মৃতিচারণ?”
“হুমম শুরু থেকে সবটা!”
নাহিয়ান নীতির মুখপানে তাকালো। নীতি হাসলো। সেই হাসি দেখে তার মুখেও হাসি ফুটলো। দুজনার দৃষ্টি বিনিময় হতে লাগলো। নীতি বলে উঠলো,
“অনলাইন প্লাটফরম!”
“প্রিয় আর অনুভব!”
“দুষ্টু মিষ্টি কথন!”
“হঠাৎ গড়লো প্রেম ভুবন!”
“চলছিলো অনুভূতিদের মেলা।”
“হুট করেই হারালো সে অবেলায়!”
“কেঁটে গেলো অনেকটা সময়!”
“অবশেষে আসলো নতুন এক দিন!”
“আলাপ হলো আমাদের!”
“শুরুটা ছিল আজব!”
“গিটার ভাঙ্গা!”
“চুল টানা!”
“কারণে অকারণে ঝগড়া করা!”
“হুট করেই বন্ধু হওয়া!”
“হঠাৎ করেই হলো ঝগড়া..”
“শুরু হলো অনুভূতি এড়িয়ে চলার চেষ্টা!”
“অবশেষে অনুভব আর প্রিয় পেলো একে অপরের খোঁজ।”
“ছন্দে সাজলো আবার সেই মিষ্টি তাদের কথন!”
“অতঃপর হলো তাদের আলাপ, প্রিয় অনুভব হিসেবে..”
“চমকিয়েছিলো তারা।”
“থমকে ছিলো প্রহর!”
“শহর ঘোরা হয়নি তাদের সেদিন,”
“কিন্তু সাময়িক বিচ্ছেদ চলেছিলো ক’ দিন!”
“একটা সময় সব ঠিক হলো, বুঝলো একে অপরকে!”
“সেই থেকে রয়েছে তারা এক অনুভূতির সম্পর্কে।”
“অতঃপর তাদের বিরহের সমাপ্তি..”
“পরিশেষে প্রিয় অনুভবের কথন অনুভূতি পেলো তাদের পূর্ণতার প্রাপ্তি!”
হাসলো দুজন!
“সত্যিই পূর্ণতা পেতে চলেছে আমাদের গল্প!”
“খুশি তুমি প্রিয়?”
“ভীষণ খুশি!”
কথার মাঝেই চা দিয়ে গেলো ওদের। চায়ে চুমুক দিতে দিতেই নীতি বললো, “একটা জিনিস দেখানোর ছিল!”
“কি?”
চায়ের কাপ সাইডে রেখে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ডায়েরী বের করলো। ডায়েরীর একটা নির্দিষ্ট পাতা খুলে নাহিয়ানের দিকে এগিয়ে দিলো। নাহিয়ান হাতে নিলো সেটা। চোখ বুলাতেই দেখলো সেখানে লিখা,
“আপনার সাথে আলাপ হওয়া ছিল আমার মস্ত বড় ভুল,
সেই ভুল কি কখনো ফুল হবে অনুভব?”
নাহিয়ান নীতির দিকে তাকালো। নীতি আবারও চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, “কথাগুলো যখন প্রিয় আর অনুভবের প্রথম দেখা হয়েছিলো, তখন লিখেছিলাম! ভেবেছিলাম ওখানেই আমাদের গল্পের সমাপ্তি রেখা। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম!”
“কলম আছে?”
“ডায়েরীর সাথেই লাগানো?”
“ওহ, খেয়াল করিনি!”
বলেই কলম নিয়ে কিছু লিখলো। নীতি দেখার চেষ্টা করলো। নাহিয়ান ডায়েরীটা বন্ধ করে নীতির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “বাসায় গিয়ে দেখো।”
নীতি বিনা বাক্যে ডায়েরীটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।
“অন্য পাতাগুলো পড়েননি কেনো?”
“তোমার সব আমার জানা। ওই ডায়েরী অন্তত আমার থেকে বেশি কিছু জানবে না!”
“তাও ঠিক!”
চা শেষ করে বাড়ির দিকে আসতে শুরু করলো তারা। বাড়ির সামনের সদর দরজার দিকে এসে বর্ষাকে দেখে চমকে উঠলো দু জন। সে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
“তুই এখানে?”
“তোকে বের হতে দেখলাম। কষ্ট করে আবার দেয়াল বেয়ে আসা লাগবে না। গেট খোলা রইলো। লাগিয়ে আসিস। টাটা!”
বলেই সে চলে গেলো।
“এবার যাও নীতি।”
“হুমম!”
বলেই এগিয়ে গেলো সে। ভিতরে ঢুকতে গিয়েও গেলো না। আবার ফিরে আসলো সে।
“কাল সত্যিই আমার বিয়ে, তাই না?”
নাহিয়ান মুচকি হেসে বলল, “হুমম!”
নীতি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। পা দুটো একটু উঁচু করে নাহিয়ানের কপালে তার অধর ছোঁয়ালো। ছল ছল চোখে নাহিয়ানের চোখ চোখ রাখলো। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো, “কাল আমার বিয়ে, আসবেন কিন্তু! অপেক্ষা করবো।”
“অবশ্যই আসবো! বিয়ে শুরুর আগেই আসবো। একদম তোমার পাশে দাঁড়াবো!”
নীতি হাসলো।
“এবার যাও!”
“আপনিও যান। কাল আপনারও বিয়ে। সকাল সকাল উঠতে হবে!”
“হুম, যাও!”
“আসি!”
বিদায় নিয়ে গেট আটকিয়ে জলদি উপরে নিজের ঘরে গেলো। বারান্দা দিয়ে উঁকি দিলো নাহিয়ানকে দেখা যায় নাকি, কিন্তু পেলো না। শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে। অতঃপর ডায়েরী আর ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় বসলো। ফোনের স্ক্রিনে দেখতে পেলো নাহিয়ানের মেসেজ।
“জানো প্রিয়? হলুদ আমার খুব অপছন্দের রং কিন্তু সেই অপছন্দের রঙে আমার প্রিয়কে এতটা দারুন লাগবে। আবার প্রেমে পড়েছি প্রিয়! ভালোবাসি। ঘুমিয়ে পড়! হলুদ কন্যাকে তো আজ দেখলাম। কাল কনেকে দেখতে আসবো, আর সাথে করে নিয়েও যাবো। তৈরি থেকো! শুভ রাত্রি!”
‘হলুদ কন্যা’ সম্বোধন দেখে হাসলো নীতি। ডায়েরী হাতে নিয়ে সেই পাতা বের করলো। লিখাটা পড়ে মুচকি হাসলো সে। আবার অস্পষ্ট স্বরে পড়লো,
“আমাদের আলাপ হওয়ার ভুলটা ফুল হয়ে গিয়েছে। তুমি আমার ভুল নামক মিষ্টি এক ফুল প্রিয়! সেই মিষ্টি ফুলকে আমি পেতে চলেছি নিজের করে। সম্পূর্ণ নিজের। ভুল নামক ফুলে, প্রিয় নামক একটা মিষ্টি ফুলকে স্বাগতম, আমার নতুন জীবনে!”
তারই নিচে লিখা, “প্রিয় ফুল, ভালোবাসি!”
হাসলো নীতি। ডায়েরীটা বুকে জড়িয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো সে। ইশ, সবটা এত সুন্দর কেনো?
__________________________________
ঘর ভর্তি মানুষ। নীতিকে ঘিরে বসে আছে বর্ষা, প্রীতি, রীতি। নানারকম গল্পের মাঝেই উপস্থিত হলো তূর্ণা।
“ভাইয়ারা এসে গিয়েছে। নিচে যাবে না?”
বর্ষা তড়িঘড়ি উঠে শাড়ির আঁচল সামলে নিয়ে বললো, “যাবো না মানে? প্রীতি চল, টাকা নিতে হবে!”
দুইজন একপ্রকার ছুটে গেলো। রীতি হেসে বললো, “আমিও যাই। দেখে আসি!”
“এই অবস্থায় এখন এত হাঁটাচলা করো না আপু! চার মাস চলছে, সাবধানে থাকো একটু!”
“নীতি ভাবী একদম ঠিক বলেছে রীতি ভাবী!”
রীতি হাসলো।
“কিছু হবে না। নিচে গিয়ে বসেই থাকবো!”
তুর্ণা মশকরার সুরে বললো, “ভাইয়াকে দেখার জন্য তাই না?”
রীতি লজ্জা পেলো। কিছু না বলে বেরিয়ে এলো। তুর্ণা নীতিকে পর্যবেক্ষণ করলো। হালকা গোলাপী রঙের লেহেঙ্গা সাথে ব্রাইডাল সাঁজ। অত গর্জিয়াস না, তবুও অসাধারণ! সে নীতির এক পাশে বসে বললো,
“তোমায় এত্ত সুন্দর লাগছে ভাবী!”
নীতি হাসলো।
“তোমাদের লাভ স্টোরির মতো, জুটিটাও কিউট!”
“তাই?”
“হুমম!”
তুর্ণা কিছুক্ষণ চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা ভালোবাসার অনুভূতি কি করে বুঝতে পারো তোমরা?”
“মানে?”
“এইযে তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো এটা বোঝো। কিন্তু কি করে বোঝো?”
“চোখ বন্ধ করো!”
“কেনো?”
“করো না!”
তুর্ণা চোখ বন্ধ করলো।
“এবার ফিল করো এমন একজন মানুষকে যার সাথে তোমার সম্পর্ক একটু ভিন্ন। মানে কোনরকম আত্মীয়তার সম্পর্ক নয়, একদম অন্যরকম মনে হয়!”
তুর্ণা আরহামকেই ফিল করলো।
“এখন ভাবো, মানুষটা তোমার সাথে নেই। তোমার জীবনে তার অস্তিত্ব নেই। সে অন্য কারো!”
ঝট করে চোখ খুললো তূর্ণা। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নীতির দিকে তাকালো। নীতি হাসলো। ওর দিকে তাকিয়ে বললো, “চঞ্চল মেয়ে হুট করে শান্ত হয়ে যাওয়ার সাথে আমি পরিচিত তূর্ণা। তাই ধরতে অসুবিধে হয় নি। মানুষটা যেই হোক, মনের মাঝে যা আছে সব বলে দিও। এতে মানুষটাকে পাও বা না পাও, কিন্তু এই ভেবে শান্তি পাবে নিজের মনের কথা বলতে পেরেছো তাকে। বুঝেছো?”
তুর্ণা মাথা ঝাঁকালো। অন্যমনস্ক ভাবতে লাগলো এই বিষয়ে। তখনই মেসেজ এলো নাহিয়ানের। নীতি উঠে বারান্দায় গেলো। কল দিলো তাকে।
“ম্যাম, আপনার বিয়ের দাওয়াত খেতে এসে গিয়েছি। আপনি কোথায়?”
“আমার রুমে!”
“নার্ভাস?”
“কিছুটা!”
“কারণ?”
“অদ্ভুত লাগছে। বিশ্বাস হচ্ছে না আমি অনুভবকে পেতে চলেছি!”
“গান শুনাবেন?”
“আমি?”
“কোনো সমস্যা?”
“এখন কি করে কি?”
“আরেকটা স্মৃতি সংগ্রহে রাখার চেষ্টা!”
নীতি আর বারণ করার কারণ পেলো না!
“সে-কি নিরবতায় আমার প্রেমে ডুবে রয়?
সে-কি মনে রাখে পথে হলো পরিচয়?”
“ও বাতাস তুমি বলে দিও তারে..
সে যেনো আমারই থাকে, ভোলে না আমারে!”
হাসলো নীতি!
“সবার সামনে গাইলেন?”
“সমস্যা নেই, কেও বোঝে নি!”
“নিচে আসুন! আপনাকে আনতে যাচ্ছে!”
“আসছি!”
এর মাঝেই রীতি, প্রীতি, বর্ষা এলো ওকে নিয়ে যেতে। অতঃপর একসাথে নিচে নামলো তারা।
__________________________________
স্টেজের উপর বসে আছে নাহিয়ান। একই জায়গায় কতবার এসেছে সে। অথচ আজকে অনুভূতিটা অন্যরকম। আগে ছিল দর্শক, আর এখন বর বেশে। এর মাঝেই শুনতে পেলো কেউ বলছে, “ওইতো কনে হাজির!”
সেদিকে তাকালো নাহিয়ান। বধূ বেশে নীতিকে দেখে মুগ্ধ হলো সে। অজান্তেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে। নীতিকে নিয়ে এগিয়ে আসছে বর্ষারা। যতই এগিয়ে আসছে তারা, ততই নাহিয়ানের হৃদস্পন্দন বাড়ছে। নীতি স্টেজে উঠবে তখনই নাহিয়ান এগিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। হাতে হাত রেখে নীতি মুচকি হাসলো। বরাবরের মতো এবারেও সেই হাসিতে নাহিয়ানের মুখে হাসি ফুঁটলো।
সবশেষে তিন কবুলে সম্পন্ন হলো তাদের বিয়ে। সকলের আড়ালে অত্যন্ত শপ্তপর্নে নিজের চোখের কোণের জলটুকু মুছে ফেললো নাহিয়ান। অবশেষে সে পেয়েছে তার প্রিয়কে। এই দৃশ্য চোখ এড়ালো না নীতির। তার চোখেও পানি!
“কাঁদছেন অনুভব?”
“না তো!”
“দেখছি তো!”
নাহিয়ান ছল ছল চোখে নীতির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
“কিছু খুশি হেসে বা শব্দে প্রকাশ করা যায় না প্রিয়! কখনো কখনো চোখের পানিও সেই খুশির সামিল হয়!”
নীতি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর পানে। তাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে কতটা খুশি সে। তবুও, প্রিয় মানুষকে নিজের করে পাওয়ার অনুভূতি কি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব? একদম সম্ভব না! হাসলো নীতি। নাহিয়ানের হাতে হাত রাখলো সে। সেও খুশি, ভীষণ খুশি!
#চলবে
#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_২৯
একবার হাতের দিকে, তো একবার সামনে থাকা পোলাও, রোস্টের দিকে তাকাচ্ছে নীতি। হাত ভর্তি চুড়ি, আংটি এসব পড়ে কি খাওয়া যায়? আশ্চর্য! কনে এখন খাবে কি করে? ভেবেই আশেপাশে তাকালো। সকাল থেকে তেমন কিছু খায়নি। এখন পেটে যেনো তার ইঁদুর দৌড়াচ্ছে। পাশেই নাহিয়ান আরমছে খেয়ে যাচ্ছে। রাদিফ, বর্ষা, প্রীতি, রীতি, আনাফ, তূর্ণা সব খাওয়ায় ব্যাস্ত। এক সাথেই বসেছে ওরা। নীতি একবার ভাবলো রীতিকে বলবে, পরক্ষনেই চুপ করে গেলো। কি করবে ভেবে পেলো না। ভাবনার মাঝেই কেউ ওর মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো। মানুষটির দিকে না তাকিয়েও হাসলো নীতি। অতঃপর খাবারটুকু মুখে নিলো।
“এত ভাবনা চিন্তা না করে বললেই তো পারতেন ম্যাম!”
নীতি নাহিয়ানের দিকে তাকালো। হেসে মৃদু স্বরে বললো, “বলার আগেই যেই মানুষ আমার সমস্যা বা আমি কি চাই বুঝে ফেলে, তাকে আমি বেশি ভালোবাসি!”
নাহিয়ান হাসলো। আবারও নীতিকে খাওয়াতে গেলে, টেবিলে বসা সকলে একত্রে বলে ওঠে, “ওহো!”
নীতি লজ্জা পেলো। রীতি গালে হাত দিয়ে বললো, “হাউ সুইট! ইশ, নাহি, আমি যদি আগে জানতাম তুই এত কেয়ারিং একজন হাসব্যান্ড হবি, সিরিয়াসলি আমি তোর এই কচুর ভাইকে জীবনেও বিয়ে করতাম না। তোকেই করতাম!”
শাফিন পোলাও সবে মুখে দিয়েছিল। রীতির কথা শুনে খাবার তার নাকে উঠে গেলো। কোনোমতে পানি খেয়ে নিজেকে শান্ত করে বললো, “আমি কচু?”
“অবশ্যই, কোনো সন্দেহ?”
“আমি কেয়ার করি না তোমার?”
“হ্যাঁ, অনেক করো! এতই করো যে আমি আমাদের বিয়ের সময়ও এভাবে বসে ছিলাম। তুমি দেখেও খাওয়ানোর দুঃসাহস করো নি!”
শাফিন ভ্রু কুঁচকে জবাব দিল, “পরে ঠিকই তো রাতে তোমার প্রিয় ফ্রাইড রাইস এনেছিলাম!”
রীতি সোজা হয়ে বসলো। আমতা আমতা করতে লাগলো সে। প্রীতি বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,“আপু তুমি ফ্রাইড রাইস খেয়েছিলে, আর আমাদের দিলে না!”
ওর কথা শুনে উপস্থিত সকলে হাসলো। তুর্ণা শশা মুখে নিয়ে বলতে লাগলো, “তবে যাই বলো, এদের জুটি লাখে একটা! নয়তো অনলাইনের প্রেম, বাস্তবে পূর্ণতা পাওয়া কি সম্ভব?”
তুর্ণার কথার সাথে সবাই একমত হলো। নাহিয়ান হেসে উত্তর দিলো, “যদি সত্যিই কাউকে ভালোবাসো তাহলে ভালোবাসা অনলাইনে হোক বা অফলাইনে! ভাগ্যে থাকলে পূর্ণতা পাবেই!”
“না দেখে, না শুনে ভালোবাসা হয় কি করে?”
তুর্ণার প্রশ্নে হাসলো নাহিয়ান।
“বাস্তব আর অনলাইন দুটোই ভিন্ন একটা জগৎ। বাস্তবে আমরা এমন অনেক কিছুই আছে যেগুলো সম্মুখে কারো সামনে করতে লজ্জা পাই। অথচ সেগুলোই অনেকসময় অনলাইনে নির্দ্বিধায় করতে পারি। আমাদের ক্ষেত্রেও সেম। জনসম্মুখে গান গাইতে আমার অস্বস্তি হতো। নিজের লিখা ছন্দগুলো শোনাতে গেলে অড লাগতো। তাই আমার সেগুলোই নীতির সাথে শেয়ার করতাম। নীতিও তেমন। দুইজন কখনো নিজেদের বাস্তব লাইফের গল্প নিয়ে আলোচনা করিনি। যা কথা ছিল কেবল নিজেদের এমন কিছু বিষয় নিয়ে যেগুলো আমরা বাস্তবে একদম বিনা দ্বিধায় করতে পারি না। একে অপরকে বুঝতাম। নীতি আসতো সময় কাটাতে। কারণ তখন বর্ষা আর ও আলাদা ছিলো। আড্ডা দেয়ার মত কাউকে পেতো না। তাই পেয়ে গেলো আমায়। শুরুর দিকে সব ঠিক থাকলেও হঠাৎ উপলব্ধি করলাম আমি ওর সাথে জড়িয়ে যাচ্ছি। যেহেতু সে একটা মেয়ে, আর তাকে কখনো, কোনোদিন দেখি নি। তার সাথে জড়িয়ে পড়াটা শোভনীয় নয়। তাই বাড়ালাম দূরত্ব। কিন্তু সর্বোপরি বুঝলাম বেশ গভীর টান সৃষ্টি হয়েছে আমাদের মাঝে। অতঃপর আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কথা চালাতে থাকবো। ভাগ্যে যা থাকে তাই ঘটবে! আমাদের কথোপকথন চলতে রইলো, একে অপরকে অনুভব করতে লাগলাম। কলে কথা হতে লাগলো। ব্যস !”
সবাই খেতে খেতে নাহিয়ানের কথা শুনছিলো। নাহিয়ানের কথা শেষ হতেই বর্ষা বললো, “আপনার কথা আমি জানতাম না আগে, তবে এই মেয়ের কথা জানি! হুট করে এর পরিবর্তন চোখে পড়েছে আমার। তারপর উনি বললেন, আর আমি জানলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম চেনা জানা কিছু নেই, মন দিয়ে বসে আছে। এ কোন বোকামি? আমি বললাম এসব কিছু নয়, ভুলে যা! কিন্তু ম্যাডাম আমায় বললেন..”
বর্ষাকে বলতে না দিয়ে নীতি বলে উঠলো,
“যাকে অনুভব করে ভালোবাসা হয়, তাকে ভোলা যায় না!”
“হুমম, এটাই বলেছেন! যদিও ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝেছিলাম অনুভব ওর কাছে কি, তবুও আপনাকে নিয়ে কনফিউসন ছিল। না জানি যদি আপনি আবার কোনো মেয়ে হন, আর ওর সাথে মজা করেছেন!”
নাহিয়ান হাসলো।
“অনলাইনে সব সত্য হয় না। মিথ্যেই বেশি। লাখে একজনের হয়তো ভাগ্য সাথে থাকে, তাই পায়! আর বেশিরভাগই টাইমপাস।”
“আর সেই লাখের একজন অর্থাৎ এক জুটি হচ্ছো তোমরা!”
তুর্ণার কথা শুনে হাসলো নীতি। নাহিয়ানের দিকে তাকাতেই দেখলো সে তারই পানে চেয়ে আছে। নাহিয়ান নীতির দিকে তাকিয়ে বললো, “হুমম, লাখ লাখ মানুষের মাঝে সেরা কাউকে পেয়েছি। যে অনন্য, প্রেমময়ী। আর আমার শুভ্রময়ী!”
“আর আপনি আমার শুভ্রপুরুষ!”
নীতির কথার প্রেক্ষিতে ওরা সমস্বরে বলে উঠলো, “হায়, ইতনা পেয়ার!”
নীতি মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।
__________________________________
বিদায়ের বেলা। কেঁদে কেটে ভাসিয়ে ফেলছে নীতি। জীবনের এতটা সময় একজায়গায় কাটিয়ে এখন নতুন জায়গায় নতুনভাবে তার নতুন জীবন শুরু করতে হবে। সবার চোখে পানি থাকলেও বর্ষা আনন্দে সেলফি তুলে যাচ্ছে। রাদিফ ওকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো, “তোমার মনে এত আনন্দ কেনো? নীতির বিদায়ে তোমার কষ্ট হচ্ছে না?”
“ওমা, কষ্ট হবে কেনো? আমি ওর শশুরবাড়ি গিয়ে ওকে দেখে আসবো! এইযে এখন যেমন আসি।”
রাদিফ কপাল চাপড়ালো।
“বিয়ের এক বছরের বেশি হতে চললো, তুমি এখনও নিজেকে সিঙ্গেল ভেবে বসে আছো! আরে তোমার বিয়ে হয়েছে। এই কয়টা মাস তুমি আর নীতি একই বাড়িতে ছিলে। তোমারও শ্বশুরবাড়ি আছে, ওরও হয়েছে! যখন তখন যাওয়া-আসা যাবে না, ব’ল’দ!”
বর্ষার যেনো এতক্ষণে খেয়াল হলো। বেস্টুর বিয়ের আনন্দে এতটাই মত্ত ছিলো যে ভুলেই গিয়েছে তারও বিয়ে হয়েছে। চোখ মুখে দুঃখের ছাপ এনে বলে, “তাই তো! বান্ধবী!”
বলেই ঝাঁপিয়ে নীতিকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁদো সুরে বললো, “তুই কেন বিয়ে করলি! ভালোই তো ছিলাম আমরা। এখন আমাদের দেখা কবে হবে আবার!”
নীতি কাঁদার মাঝেও হেসে ফেললো বর্ষার কাণ্ড দেখে। বর্ষা নাক টেনে বললো, “বিদায়ের সময় কনের হাসতে নেই!”
নীতি তবুও ফিক করে হেসে দিলো। অতঃপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো বর্ষাকে। রীতির সময় সে চলে যাচ্ছে বলে কষ্ট পেয়েছে, আর এখন? পরিবারকে ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট যে তার চেয়েও বেশি। কিন্তু কি করার? মেয়েতো! যেতে তো হবেই!
নাহিয়ান পাশেই দাঁড়িয়ে। রীতি ওর বাহুতে চ’ড় দিয়ে বললো, “কিরে হিরো! এখন বউয়ের কেয়ার নিচ্ছিস না কেনো? দেখিস না কাঁদছে?”
নাহিয়ান হেসে বললো, “এখন কেঁদে নিতে দে।”
অতঃপর নীতির দিকে তাকিয়ে বললো, “কথা দিচ্ছি, এখান থেকে যাওয়ার পর, সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ওর চোখে পানি না আনার!”
নীতি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নাহিয়ানের দিকে। নাহিয়ান নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, “যাওয়া যাক? আমাদের নতুন জীবনে, নতুন মুহূর্ত তৈরি করতে?”
নাহিয়ানের হাতে হাত রেখে মাথা উপর নিচ নাড়লো সে। কষ্টের মাঝেও এক ফালি সুখ খুঁজে পেলো সে। ইশ, মানুষটা যেনো সবসময় এভাবেই তাকে সামলে নেয়!
__________________________________
বিছানায় উদাস মনে বসে আছে বর্ষা। সারাদিনের হৈ হুল্লোরে সে ভুলেই গিয়েছে সে এই বাড়ির বউ। আর নীতি তাদের ছেড়ে শ্বশুর বাড়ি যাবে। কষ্ট হচ্ছে তার। দুইজনের এক সাথে, এক বাড়িতে থাকার শখ মিটলেও, শখটা স্থায়ী হলো না। রাদিফ বর্ষার দিকে রুমাল এগিয়ে দিল।
“কাঁদছো কেনো?”
“আপনার সাথে বিয়ে হওয়ার দুঃখে কাঁদছি!”
“কি?”
“কি আবার কি? আপনার সাথে বিয়ে না হলে ভালো হতো। আর নাহিয়ান ভাইয়ার আরেকটা ভাই থাকলে ভালো হতো। তাহলে আমিও তার ভাইকে বিয়ে করতাম!”
রাদিফ হতভম্ব! অতঃপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো, “ভাই তো নেই, তাহলে বিয়ে করতে কাকে?”
“তাও ঠিক!”
রাদিফ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এর মাঝেই বর্ষা ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলো। রাদিফ আলতোভাবে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলো।
“যখন খুশি ওকে গিয়ে দেখে এসো!”
“যেতে দিবেন?”
“দিবো, তবে সীমিত! বুঝতে হবে ওটা ওর শশুর বাড়ি!”
বর্ষা চুপ করে রইলো।
“বর্ষা!”
“হুমম!”
“আই লাভ ইউ!”
“হুমম!”
“শুধু হুমম?”
বর্ষা হাসলো। রাদিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, “আই লাভ ইউ টু!”
__________________________________
ফুল সজ্জিত বিছানায় বসে আছে নীতি। এ বাড়িতে আসলেও নাহিয়ানের ঘরে সেভাবে আসা হয় নি। দরজা চাপিয়ে গিয়েছে তূর্ণা। নাহিয়ানের আশায় বসে আছে সে। হুট করেই দরজার দিকে খেয়াল গেলো ওর। সেখানে ছোট একটা নেমপ্লেট আছে, যেখানে লিখা ‘প্রিয় অনুভব’। উঠে গিয়ে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলো সেই লেখাটুকু। দরজার বাইরে না দিয়ে, ভিতরে এটা দেয়ার মানে বুঝলো না নীতি। তবুও মন্দ না! বেশ লাগছে! সেই মুহূর্তে নাহিয়ান দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো। নীতি তৎক্ষণাৎ পিছিয়ে গেলো দুই পা।
“এখানে কি করছিলে?”
“ওটা দেখছিলাম!”
নাহিয়ান নিজেও তাকালো। অতঃপর হেসে দরজা আটকে দিলো।
“পছন্দ হয়েছে?”
“হুমম, তবে এটা ভিতরে কেনো?”
“এমনি! চাইনি এই নামটা কেউ বার বার পড়ুক!”
হাসলো নীতি। নাহিয়ান এগিয়ে আসলো ওর দিকে। নীতি নড়লো না। নাহিয়ান আলতো করে নীতির কপালে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো সরিয়ে দিলো।
“ফাইনালি!”
“কি?”
“সম্পূর্ণরূপে তোমার হয়ে গেলাম।”
নীতি মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো। নাহিয়ান ভ্রু নাচিয়ে বলল, “বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে, এখন কি করবে?”
“নাচবো!”
“ওকে নাচো, আমি দেখি!”
“নাহিয়ান!”
নাহিয়ান হেসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। ধীরে ধীরে বাঁধন শক্ত হলো।
“আমার এখনও সবটা কল্পনার মতো মনে হচ্ছে প্রিয়!”
বলেই কপালে গভীরভাবে চুমু এঁকে দিলো সে। অতঃপর নীতির গলায় তার অধর ছোঁয়ালো। কেঁপে উঠলো নীতি। লেহেঙ্গার ওড়না মুঠো করে ধরলো সে। জিভ দিয়ে ঠোঁট কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ডাকলো, “নাহি..”
কথা সম্পূর্ণ করার আগেই নাহিয়ান সোজা হয়ে দাঁড়ালো। নীতির কোমর জড়িয়ে ওকে নিজের কাছে টেনে নিলো। নীতির সাথে কপালে কপাল ঠেকিয়ে দাঁড়ালো সে। চোখ বন্ধ তাদের। নাহিয়ান মিহি কণ্ঠে বললো, “আমি উন্মাদ হয়েছি প্রিয়। তোমায় পেতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ, মে আই?”
নীতি উত্তর দিলো না। খামচে ধরলো নাহিয়ানের শেরওয়ানি। নাহিয়ানের উত্তরের প্রয়োজন আর হলো না। আলতো করে নীতির ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়ালো। ধীরে ধীরে স্পর্শ গভীর হতে লাগলো। অতঃপর ডুব দিলো ভালোবাসাময় এই রাতের আঁধারে!
#চলবে
(ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।)