#প্রিয়_অনুভব
#সাবরিন_জাহান_রোদেলা
#পর্ব_০২
“নীতি‚ এসব কি করছিস?”
“বরের বাড়ির লোকদের ওয়েলকাম করার জন্য ব্যাবস্থা করছি!”
“এই লাল রঙা পানি দিয়ে কেমন করে ওয়েলকাম করবি? আর পানি দিয়ে ওয়েলকাম হবেই বা কি করে? তুই কি তাদের মাথায় পানি ঢালার ফন্দি আটছিস নাকি?”
নীতি হেসে বললো‚ “একদম ঠিক ধরেছিস! কিন্তু তাদের না! শুধু বরের ভাইয়ের!”
প্রীতি চমকে তাকালো। এতক্ষণে নীতির পানিতে রঙ মেশানোর কারণ বুঝতে পারলো।
“নীতি না! একদম এসব করবি না! আজকে কিন্তু শাফিন ভাইয়ার ফুপিরাও আসবে রীতি আপুকে হলুদ দিতে। ঝামেলা করলে যদি বিয়েতে সমস্যা করে?”
“নীতি থাকতে ভয় কিসের? কিছু হবে না!”
প্রীতি বির বির করে বললো‚ “তুই আছিস দেখেই বড় ভয়! আল্লাহই জানে আবার কি ঝামেলা পাকাবি তুই!”
নীতি দাঁত কিড়মিড় করে বললো‚ “তোর বির বির করে কথা বলার লেভেল অত্যন্ত জিরো টাইপ! আমি কিন্তু স্পষ্ট শুনছি‚ কি কি বলছিস!”
প্রীতি মেকি হাসার চেষ্টা করলো! পরক্ষণেই বললো‚ “ তুই কি করবি এখন এগুলো? মানে প্ল্যানটা কি?”
নীতি মুচকি হেসে বললো‚ “আমাকে কি পাগলে ধরেছে? তোকে প্ল্যান বলি‚ আর তুই ওই টাকলা মুরাদকে গিয়ে বলে দিস। এমনেই তার জন্য তোর যত দরদ!”
“তুই উনাকে টাকলা মুরাদ বলিস কেনো? সে কি টাকলা নাকি?”
“না হোক‚ আমি তো করেই ছাড়বো।”
“কি করে ছাড়বি?”
“টাকলা।”
প্রীতি কপাল চাপড়ালো। আর কিছু হোক বা না হোক যুদ্ধ আজ লাগবেই। প্রীতি চলে যেতে নিলেই নীতি ওকে পিছু ডাকলো।
“প্রীতি শোন!”
“বল!”
“একটা হেল্প করবি?”
প্রীতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো‚ “কি হেল্প ?”
নীতি ইনোসেন্ট ফেস করে ওর দিকে তাকালো । প্রীতি ভরকে গিয়ে কিছু একটা ভাবলো। তৎক্ষণাৎ দুপাশে মাথা নেড়ে বললো‚ “না‚ না! তোর এই আউল-ফাউল প্ল্যানে আমি কোনো সাহায্য করবো না।”
“প্লিজ!”
“মোটেও না!”
“ওকে তাহলে আমি ফুঁপিকে বলে দিচ্ছি‚ তোর আর আনাফের মাঝে কিছু কিছু চলছে।”
প্রীতি চমকে উঠে বললো‚ “মানে?”
“খাই না তো সুজি‚ সবকিছুই বুঝি।”
প্রীতি বুঝতে পারলো নীতির কাছে কোনো কিছুই অজানা নয়। আনাফ রীতির ছোট ভাই। যদিও নীতি-প্রীতির থেকে বড়। । প্রীতি আর আনাফের মাঝে যে কিছু চলছে‚ তা নীতি বেশ জানতো। কিন্তু প্রয়োজন পড়েনি এতদিন এটা। আজ সুযোগ পেয়ে ছক্কা মেরে দিলো। নীতি প্রশস্ত হাসলো। আহা! যেনো যুদ্ধ জয় করেছে প্রীতিকে ভয় দেখাতে পেরে। ওর হাসি দেখে প্রীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে নিজেই স্বান্তনা দিয়ে বললো‚ “থাক প্রীতি‚ কাঁদিস না! ভালা মানুষদের সাথে এমনই হয়।”
নীতি আফসোস করার মতো করে বললো‚ “আহারে!” ‚বলেই গাল টেনে দিলো ওর। প্রীতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। এই মেয়েটা এমন কেন? সত্যি সত্যি কি মাথায় সমস্যা আছে নাকি? পরমুহুর্তে ঠোঁট চেপে হাসলো। মেয়েটা বড্ড পজিটিভ চিন্তাধারা করে! নেগেটিভ ওয়ার্ড যেনো ওর লাইফেই নেই!
__________________________________
“নাহিয়ান, ভাইয়া!”
প্রীতির কম্পিত কণ্ঠের ডাক শুনে ঘুরে তাকালো নাহিয়ান। মা‚ ফুপির সাথে এখানে এসেছে ও। যেহেতু ওর সুবাদে রীতিকে আগে থেকেই চেনে তারা‚ তাই তাদের ইচ্ছে তারাও মেয়েকে হলুদ দিবে। ওদের বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। তাই নাহিয়ানও এসেছে।
“কিছু বলবে?”
প্রীতি ইতস্তত করতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর বললো‚ “ইয়ে‚ মানে ভাইয়া। ছাদে না কিছু বক্স রাখা আছে। ওগুলো ডেকোরেশনের লোকদের সরাতে বলেছিলাম। ওরা সরায়নি। আবার ওগুলো অনেক ভারী। কাওকে পাচ্ছিও না যে বলবো সরাতে হেল্প করতে৷ তাই যদি কিছু মনে না করেন‚ একটু হেল্প করবেন প্লিজ?”
নাহিয়ান কিছু বলবে তার আগেই পাশ থেকে আনাফ বলে উঠলো‚ “ওকে কেনো বলছো? আমি আছি তো!”
আনাফের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো প্রীতি। বিরবির করে বললো‚
“এই নমুনা আবার কখন টপকালো এখানে ?”
আনাফ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
“কি বির বির করছো? চলো!”
প্রীতি চমকে ওঠা কন্ঠে বললো, “কোথায়?”
“কোথায় আবার? বললে না কিসব বক্স সরাতে হবে?”
“কিন্তু তুমি কেন? আমি তো নাহিয়ান…..”
বলতে বলতেই তার দিকে তাকালো প্রীতি। নাহিয়ান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওরই দিকে।
আনাফ আবার বললো‚ “থামলে কেনো ?”
প্রীতি কি করবে ভেবে পেলো না। এখন কিছু বললে নাহিয়ান সন্দেহ করবে, আবার না বললে আনাফ চলে যাবে। ভয়ে ঢোক গিললো ও। নীতির জন্য দারুনভাবে ফেঁসে গেছে ও। আর উপায় না পেয়ে বললো‚ “চলো!”
দুজন এগিয়ে গেলে নাহিয়ানও পিছু পিছু এলো। কেননা প্রীতির মুখ কেমন যেন দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো না কোনো ঘাপলা তো নিশ্চয়ই আছে।
__________________________________
লাল রঙে মিশ্রিত পানি ভরা বালতি নিয়ে প্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীতি! যুদ্ধ! হ্যাঁ, এটা ওর যুদ্ধ। জিততেই হবে ওকে! ওদিকে ছাদের দরজা খুলে ভিতরে আসার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে আনাফ। একটু দূরেই প্রীতি দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াচ্ছে। আর আল্লাহ আল্লাহ করছে। নাহিয়ান ওর সাথে থাকায় কোনো প্রকার সতর্কতার বাণীও দিতে পারছে না সে। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই আনাফের মনে হলো ওর উপর দিয়ে সুনামি বয়ে গেছে। মুখে রইলো তার এক বিরাট হা! সাদা পাঞ্জাবি লাল পাঞ্জাবিতে পরিণত হয়েছে। মনে হচ্ছে কেউ তার শরীরে র’ক্তের বৃষ্টি ঝরিয়েছে… আনাফ তৎক্ষণাৎ বিস্মিত দৃষ্টিতে সামনে তাকালো। ওর থেকেও দ্বিগুণ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছে নীতি। যেনো এই মুহুর্তে আনাফের এখানে থাকার কথা ছিলোই না!
“এটা কি করলে নীতি?”
পিছনেই প্রীতি দাড়িয়ে আছে। মুখে তার রাজ্যের ভয়। কেনো যে নীতির কথা মানতে গেলো ও। এদিকে নাহিয়ান ভিতরে কি হচ্ছে বুঝতে না পেরে প্রীতিকে পাশ কেটে ভিতরে ঢুকলো। আনাফের অবস্থা আর নীতিকে দেখে তার বোঝার বাকি নেই এই আয়োজনটা তার জন্যই ছিল। কিন্তু ভুলে সেটা আনাফের ভাগ্যে পড়েছে। তার হঠাৎ হাসি পেলো। সেটাকে আটকালো না। শব্দ করে হেসে ফেললো। হাসির শব্দে বিস্ময় কাটে নীতির। নাহিয়ানকে দেখতেই চোখে মুখে তীব্র ক্ষোভ উপচে পড়লো তার। পরক্ষণেই আনাফের কথা ভাবতেই মুখ মলিন হয়ে গেলো।
“তুমি এখানে কেনো ভাইয়া?”
“প্রীতি ই তো বললো এখানে কিসের বক্স আছে। ওগুলো নাকি ও সরাতে পারছে না। ”
প্রীতির নাম শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো নীতি। তাই দেখে প্রীতি নিজের পক্ষে সাফাই দিতে ঝট পট সামনে এসে বললো, “আমি উনাকে ডাকিনি। ডেকেছি তো নাহিয়া…”
বলতে বলতে নাহিয়ানের দিকে চোখ পড়াতে থেমে গেলো ও। নাহিয়ান মুখে হাত দিয়ে হাসছে। সব এখন পরিষ্কার তার কাছে। প্রীতির কথার প্রেক্ষিতে আনাফ বললো, “ও আমাদের বাড়ির মেহমান। কোন আক্কেলে তুমি ওকে ডাকো? তাই তো আমি এসেছি। আর নীতি তুমি এভাবে পানি ছুঁড়লে কেনো? আর করছিলেই বা কি?”
নীতি আমতা আমতা করে বললো, “এগুলো বাচ্চারা করেছে। কোথায় ফেলবো ভেবে ভাবছিলাম না। পরে দেখি ছাদের ফ্লোর গরম অনেক। ভাবলাম এখানেই ফেলে দেই। কেউ ছিলো না দেখে ওভাবে ফেলেছি। আমি কি জানতাম নাকি তুমি আসবে।”
“দেখে ফেলবে না! আমার পাঞ্জাবীটাই নষ্ট হলো।”
এমন হাজারো আফসোস করতে করতে নিচে গেলো আনাফ। নাহিয়ান এবার নীতির কাছে এলো।
“নিজেকে বাচ্চা বলতে লজ্জা করলো না তোমার?”
নীতি দাঁতে দাঁত চেপে তাকালো।
“তুমি দেখি দারুন অভিনয় করো। কোনো ফিল্মে চান্স পেয়েছো নাকি? কাজ করো কোথাও?”
“আপনার মুখ বন্ধ রাখবেন একটু?”
“নাহ, রাখতে পারলাম না। তুমি আমার জন্যে এত সুন্দর আয়োজন করলে, তোমার বোনকে দিয়ে ডেকেও আনলে। কিন্তু আফসোস আমি কিছুই পেলাম না!”
“খুব আফসোস হচ্ছে তাই না?”
নাহিয়ান মুচকি হাসলো। নীতি ঝট করে বালতির অবশিষ্ট পানি নাহিয়ানের পাঞ্জাবীতে ছুঁড়ে দিলো। তাই দেখে প্রীতির মুখে হাত। একবার নাহিয়ান তো একবার নীতির দিকে তাকালো। এদিকে নাহিয়ান ভাবেও নি এমন কিছু হতে যাচ্ছে। তখন আনাফের শরীরে পানিগুলো দেয়ার পরেও আরো পানি অবশিষ্ট ছিল। যদিও কম, কিন্তু যথেষ্ট! একটু হলেও তো পাঞ্জাবী নষ্ট করতে তো পেরেছে। প্রীতি জলদি করে নিচে নেমে গেলো। না জানি এই নীতির জন্য ওর উপর কোন শনি আসে।
“এটা কি করলে?”
“আপনি যা চাইলেন!”
“তোমাকে আমি…”
“ওমা, রাগছেন কেনো? এই না আফসোস করছিলেন?”
নাহিয়ান রাগে ফুসছে। এক মুহূর্ত আর দাড়িয়ে না থেকে নিচে চলে গেলো ও। নীতি বিশ্ব জয়ের হাসি দিলো। নাহিয়ানের চুপ করে থাকাকে নিজের জয় ভেবে নিলো অবুঝ নীতি! এটা বুঝলো না, ইট ছুঁড়লে পাটকেল যে খেতেই হয়!
__________________________________
“কি শুরু করেছিস নীতি?”
রীতির কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না নীতি। কেননা ও জানে, প্রীতিই ওকে বলেছে সব। রীতি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীতির পাশে বসলো।
“ওর সাথে এমন করার কি প্রয়োজন ছিল?”
“নীতি ধার বাকি রাখে না। আমার মাথায় উনি পানি ঢেলেছিলো। আমি উনার শরীরে। শুধু কালার ভিন্ন মাঝে। আর কিছুই নয়।”
রীতি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, “নাহিয়ানের বাবা নেই নীতি।”
নীতি ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সে এসব জেনে কি করবে? আবার খারাপও লাগলো। রীতি থেমে বললো, “আমরা আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে যখন হারিয়ে ফেলি না? তখন তাদের স্মৃতিগুলোই হয় আমাদের সম্বল, যা দ্বারা আমরা অনুভব করি তারা আমাদেরই সাথে আছে।”
নীতি মনোযোগ দিয়ে শুনলো। রীতি আবারও বললো, “নাহিয়ানের কাছে ওর বাবার অন্যসব স্মৃতি থাকলেও গিটারটা একটু বেশীই স্পেশাল ছিল।”
নীতি চমকে তাকালো। অস্পষ্ট স্বরে বলল, “গিটার?”
“হুমম, ওর বাবার গান অনেক প্রিয় ছিল। নাহিয়ান বা ওর ভাইয়ের এই গানের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে আঙ্কেল চাইতেন তার এক ছেলে অন্তত তার এই গানের ধারাটা রাখুক নিজের জীবনে। তার বড় ছেলে তো বিজনেস নিয়েই ব্যস্ত রইলো। কিন্তু নাহিয়ান আংকেলের জন্য গিটার শিখেছিলো। গানও টুকটাক জানে। তবে অত গায় না। তবে গিটার নিয়ে ঘুরে। মন খারাপ হলে বা ফ্রি থাকলেই গিটার নিয়ে বসে। এটা ওকে অনুভব করায় ওর বাবা আছে ওর সাথে। ও আবার ওর বাবাকে খুব ভালোবাসে। সব মিলিয়ে ওটা অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ওর জীবনে। তাই গিটারের ওই অবস্থা দেখে রাগ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। আর তুই ওকে টাকা অফার করেছিস। যদি কেবল সরি বলতি তাও হয়তো ও রিয়েক্ট করতো না। কিন্তু টাকা অফার করাতেই ও রেগে গিয়েছে। তাই বলে ওর সাথে এমন বিহেভ করা তোর শোভা পাচ্ছে না।”
নীতি চুপ করে রইলো।
“মানুষ যখন থাকে না তখন তার স্মৃতিগুলো বড় মূল্যবান হয়। যার হারায় সে বুঝে। তুই বা আমি বুঝবো না।”
নীতি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, ”হুমম, সেই বুঝে!”
রীতি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই কথা এড়িয়ে যেতে বললো, “বাই দ্যা ওয়ে! তুমি শাফিন ভাইয়াকে বার বার ওর ভাই, আংকেলের বড় ছেলে বলছো কেনো?”
ভরকে গেলো রীতি। নীতি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত হলো ও। এই মেয়েটা কি বুঝে না? ওর লজ্জা করে নাম ধরে ডাকতে? কিছু বলবে তার আগেই বিছানায় কেউ লাফিয়ে ওদের সামনে এসে বসলো।
“ধাপ্পা!”
দুইজনই চমকে উঠলো। নীতি বুকে ফু দিয়ে বললো , “হার্ট অ্যাটাক করাতে চাস নাকি?”
নীতির কথায় বর্ষা দাঁত বের করে হাসলো। রীতি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, “হুট করে আসলি যে? তুই না বলেছিলি বিয়ের আগের দিন আসবি?”
“সারপ্রাইজ চিনো? ওটাই দিতে আসলাম। আমি তো রাজশাহী থেকে এসেছি আরো দুই ঘণ্টা আগে।”
“এতক্ষণ কই ছিলি তাহলে?”
বর্ষা মাথা চুলকে বললো, “তোমাদের বাসায় এসেছি ছয় মাস আগে। রাস্তাঘাট চিনে, খুঁজে আসতে আসতে এতক্ষণ লাগলো।”
“ব’ল’দ নাকি? তুই নাহয় আপুকে সারপ্রাইজ দিতে আসছিলি। আমাকে তো ফোন করতেই পারতি?”
নীতির প্রশ্নে বর্ষা বুকে হাত গুঁজে বললো, “আমি তোর মতো না। ফোন দিয়েছি কয়েকবার। বাট বরাবরই এক কথা। ফোন বন্ধ আপনার। তো মিস, আপনার ফোন কোথায়?”
“আমার ফোন..”
বলেই আশেপাশে খুঁজলো নীতি। কিন্তু পেলো না। বর্ষা রীতির দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে আবার ব’ল’দ বলে?”
নীতি বিচলিত হয়ে পুরো ঘর খুঁজলো। কিন্তু পেলো না।
“ফোন কোথায় রেখেছিস? সামলে রাখবি না? দেখিস না এখন মানুষের ভিড় বেশি হয়! কোন ফাঁকে কেউ কিছু নিয়ে গেলে জানবি কেমন করে?”(রীতি)
নীতির মনে ভয় ঢুকে গেলো। ভালো করে পুরো রুম খুঁজলো। রীতি আর বর্ষাও দেখলো। সেই মুহুর্তে প্রীতি আসলো।
“তোমরা এমন করে কি খুঁজছো?”
“নীতির ফোন দেখেছিস কোথাও?”
রীতির কথা শুনে প্রীতি উত্তর দিলো, “হ্যাঁ, সিনথীর হাতে দেখে আসলাম কেবল।”
নীতি তড়িঘড়ি প্রীতির কাছে এসে বললো, “ও কোথায়?”
“বাগানে। অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছে।”
বলতে দেরী নীতির রুম থেকে বের হতে দেরী হয় নি। রীতি, প্রীতি আর বর্ষা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ফোন নিয়ে নীতিকে কখনো এত বিচলিত হতে দেখেনি ওরা।
__________________________________
বাগানে গিয়েই সিনথীর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলো নীতি। ফোন অন করার ট্রাই করতেই দেখলো অন হয়ে গেছে। সিনথীর বয়স বারো বছর। হয়তো কোনো ভাবে বন্ধ করে ফেলেছে ফোন। ফোন ঠিক আছে এটা দেখেই খুশি নীতি। পরক্ষণেই রাগ হলো ওর।
“না বলে আমার ফোন কেনো এনেছিস?”
নীতির ধমকে কেঁপে উঠলো সিনথী। কিছুটা বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আপুর সাথে ঝগড়া হলেও কখনো এভাবে ধমক দেয় নি।
“এমনি খেলতে..”
“ফোন কি খেলার জিনিস? না বলে ফোন কেনো আনবি? আর অফ করে রেখেছিস কেনো এমন? ইম্পর্ট্যান্ট কল আসে না আমার?”
সিনথী এবার কেঁদে দিলো।
“আমি তো জানি না অফ কি করে হলো। ভুলে হয়েছে হয়তো!”
নীতি আরও কিছু বলবে তখনই কেউ বলে উঠলো, “বাচ্চাদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তার সেন্স কি আদো আছে?”
পুরুষালি কণ্ঠ শুনে তার দিকে তাকালো নীতি। সামনে নাহিয়ান। চোয়াল শক্ত করে আবার বললো, “তুমি কি মেন্টালি সিক? অপরিচিত একজনের গিটার ভেঙ্গেছো। আবার তার উপর আমার সাথে দু দু বার অসভ্যতামি করেছো। এখন নিজেরই বোন জাস্ট ফোন নেয়াতে এমন বিহেভ করছো। এটা কোনো সুস্থ মানুষ তো আর করতে পারে না।”
নাহিয়ানের ”মেন্টালি সিক” কথাটা গায়ে লাগলো নীতির। পরক্ষণেই মন বলে উঠলো, “আসলেই তুই পা’গল হয়ে যাচ্ছিস নীতি!”
তবুও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিলো, “হারানো মানুষগুলোর স্মৃতি অনেক দামী এটা তো জানেন। আপনার কাছে সেই মানুষের গিটার ছাড়াও অন্য কিছু আছে। কিন্তু আমার কাছে এই ফোনটুকুতেই সব আছে। এটা হারালে সব শেষ!”
নাহিয়ান থমকালো। তাকিয়ে রইলো নীতির ছল ছল করতে থাকা চোখের দিকে। নীতিরও কি কেউ না ফেরার দেশে চলে গিয়েছে? নয়তো ওর হারানো মানুষ কে?
#চলবে