#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৭
প্রজ্জ্বলিনীর আ’ক্রো’শ পূর্ণ দৃষ্টি তাচ্ছিল্যতার সঙ্গে উপেক্ষা করে চলে যায় আবিদ শাহরিয়ার!
আবিদের এমন আচরণ প্রজ্জ্বলিনীর প্রচন্ড আত্মসম্মানে লাগে। রীতিমতো রাগে ফুসঁছে সে। এদিকে প্রজ্জ্বলিনী আসছে না দেখে উজান পিছনে তাকিয়ে দেখে, প্রজ্জ্বলিনী আবিদের নেভিব্লু গাড়ির পানে তাকিয়ে আছে। উজান মিষ্টি হেসে এগিয়ে যায়। হঠাৎ কাধে কারো হাতের উপস্থিতি পেয়ে প্রজ্জ্বলিনী চমকে উঠে আগ্রহের সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে দেখে উজান। প্রজ্জ্বলিনী নিশ্চিন্ত হয়ে সৌজন্যে হাসে। উজান হতভম্ব হয়ে যায় প্রজ্জ্বলিনীর হঠাৎ হকচকিয়ে যাওয়াতে।
‘এতো আগ্রহের সঙ্গে কি দেখছিলে, এইভাবে চমকে উঠলে যে?’
প্রজ্জ্বলিনী কি বলবে বুঝতে পারেনা, প্রচন্ড অসস্থিবোধ করে। নিজেকে সামলে মেকি হেঁসে বলে,
‘আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী ভিষণ ভালো তাইনা? প্রিয়দর্শিনীর জন্য কতোকিছু করল। এটাই ভাবছিলাম আবিদ চৌধুরী মানুষটা যেমন অমায়িক মনটাও ভালো।’
উজান হাসলো তার নিজেরও আবিদকে পছন্দ হয়েছে। সে ভাবল, স্নো হোয়াইটের সঙ্গে অনেক মানানসই লাগত আবিদ শাহরিয়ারকে। তবে আবিদ শাহরিয়ার একটু বেশিই লম্বা, কিন্তু মেয়ে হিসাবে স্নো হোয়াইটও লম্বা। পারফেক্ট ম্যাচ ফর ইচ আদার! আবিদের গমরঙা ত্বকে আলাদা মাধুর্য আছে। দুজনের জোড়া দারুণ হবে। প্রিয়দর্শিনীর অমত করা নিয়ে উজান অ’স’ন্তো’ষ। কিন্তু কিছু করার নেই ‘স্নো হোয়াইট’ নিজে বুঝতে না পারলে কি করার তবে একবার আবিদের জন্য সুপারিশ করাই যায়। হয়তো আবিদের অমায়িক ব্যাবহার আচরণ দেখে বিয়েতে ‘না’ ‘হ্যা’ হয়ে যেতে পারে। এদিকে প্রজ্জ্বলিনী নিজের উপর বিরক্ত সে কেনো প্রশ্ন এড়াতে আবিদের মিথ্যা প্রশংসা করতে গেলো। প্রজ্জ্বলিনী উজানের দিকে তাকাল। উজান আগ্রহের সঙ্গে বলে,
‘মন্দ বলোনি আসলেই লোকটি ভালো। স্নো হোয়াইটের জন্য একদম পারফেক্ট ছিল।’
অজান্তেই ক্রোধে ফেঁটে পড়ে প্রজ্জ্বলিনী। আবিদকে সহ্য করতে পারেনা সে। আর উজান কিনা আবিদের প্রশংসায় ভাসছে। অবশ্য শুরুটা ভুলবসত সে করেছে। কিন্তু প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আবিদকে ভাবতে পারবে না প্রজ্জ্বলিনী। প্রজ্জ্বলিনী প্রিয়কে প্রচন্ড ভালোবাসে অন্যদিকে আবিদকে সে পছন্দ করেনা। তাই বোনকে তার অপছন্দের লোকটির সঙ্গে সহ্য করতে পারবে না প্রয়োজনে যা করা লাগে করবে।
প্রজ্জ্বলিনী উজানের কথার প্রতিবাদে বলে,
‘আবিদ শাহরিয়ার ভালো হলেও প্রিয়র জন্য যোগ্য নয়।’
উজান প্রজ্জ্বলিনীর কথায় ভ্রুকুচকে জিগ্যেস করে,
‘কি বলছো এসব?কেনো মনে হলো এমনটা?’
‘আমার বোন অষ্টাদশী উজান। আবিদ শাহরিয়ারের থেকে গুনে গুনে চৌদ্দ- পনেরো বছরের ছোট। তুমি কিভাবে ভাবছো উনি আমার বোনের জন্য যোগ্য? মাথা ঠিক আছে তোমার?’
‘এতো হাইপার হচ্ছো কেনো? তুমি খুব দ্রুত সিরিয়াস হয়ে যাও। আমাদের মাঝেও দশ বছরের এজ গ্যাপ আছে প্রজ্জ্বলিনী! দেখো তারপরও আমরা কতোটা হ্যাপি। ম্যারেজ লাইফে বয়সের গ্যাপ থাকলে তাদের মাঝে বনিবনা খুব সহজে হয়। একে অন্যের প্রতি আন্ডার্সস্ট্যান্ডিং, শেয়ারিং, কেয়ারিং থাকে। প্রিয়দর্শিনীর নাইনটিন হতে দেরী নাই। অতটাও ছোট নয় সে। যথেষ্ট ম্যাচুয়ার্ড আমাদের স্নো হোয়াইট!’
প্রজ্জ্বলিনী উজানের যুক্তিতে বিরক্ত। কারণ সেও জানে উজান ঠিক বলছে কিন্তু প্রজ্জ্বলিনী মানতে চাইছে না। প্রজ্জ্বলিনী উজানকে সিরিয়াস হয়ে বলে,
‘হয়েছে!এখন চলো বাবা মা কখন চলে গেছে।’
উজান প্রজ্জ্বলিনীর কাধ ধরে ধীরে ধীরে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়। বাবা, মা, বন্ধু- বান্ধবদের একসঙ্গে দেখে প্রিয়দর্শিনী খুশি হয়। আবিদ চলে যাওয়ার পর একা একটা কেবিনে শুয়ে থেকে দম বন্ধ লাগছিল তার। যতক্ষণ আবিদ ছিল তার একাকিত্ব লাগেনি। এখানে সবাই আছে শুধু আবিদ বাদে। প্রিয়দর্শিনী আবিদকে সবার সঙ্গে মিস করছে। উজান প্রজ্জ্বলিনীকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করতে করতে বলে,
‘লিটল চেরি ব্লসম! এটা কি শুনছি তুমি কি ভুলে গেছিলে তোমার স্ট্রবেরিতে এলার্জি?এমন ভুল কিভাবে করলে বলতো?
উজানের কথায় প্রিয়দর্শিনী কি প্রতত্তর করবে জানে না। সে তো আবিদ শাহরিয়ারের পাঠানো মিল্কশেকটা উপেক্ষা করতে পারেনি। হাজার হোক মানুষটা তার স্বপ্ন পুরুষ। তার জন্য বারবার একই ভুল করতে প্রিয়দর্শিনী ভাববে না। মানুষটা যদি বিষাক্ত হয়, প্রিয়দর্শিনী নিজ ইচ্ছায় বিষাক্ত হতে রাজি। আচ্ছা? কথাটা তার স্বপ্ন পুরুষ জানলে কেমন ভাবে রিয়েক্ট করবে? প্রিয়দর্শিনী খুব সন্তপর্ণে আবিদের অনুভূতি পরোক্ষ করেছে। আবিদের আচরণ বলে দিয়েছে তার প্রতি অনুভূতির প্রগাঢ়তা, যত্ন, ভালোলাগা এটাইতো চাইছিল প্রিয়দর্শিনী। এবার তার বিয়েতে কোন আপত্তি থাকার কথা নয়। প্রিয়দর্শিনী অজান্তেই হেসে ফেলে। উজান প্রিয়দর্শিনীকে বলে উঠে,
‘হাসছো কেনো আমরা সবাই সিরিয়াস ল্যাভেন্ডার?’
উজানের একেকবার একেকটা নামে প্রিয়দর্শিনী অভ্যস্ত। প্রিয়দর্শিনী বলার মতো কিছু পেলনা আমতা আমতা করল। মিথ্যা কথা সে বলতে পারেনা কোনরকম মিনমিন করে বলল,
‘আমি ভুলে গেছিলাম ভাইয়া। আর স্ট্রবেরি মিল্কশেকটার পরিবেশন সত্যি সুন্দর লাগছিল। আমি একটু ট্রাই করেছিলাম শুধু।’
আশরাফ মুহতাসিম প্রিয়মা বেগমের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে ভাবেন এই মেয়েকে নিয়ে আর পারা গেলো না।
–
প্রিয়দর্শিনীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে কিছুক্ষণ হলো। প্রিয়মা বেগম মেয়ের দেখভালে ব্যাস্ত। প্রজ্জ্বলিনী বোনের পাশেই ছিল। প্রিয়দর্শিনীর দাদা ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিম নাতনিকে দেখে গেছেন। লোকটি যেন নাতনির কোন কষ্টই সহ্য করতে পারেননা। তিনি নাতনিকে তো কিছু বলেনি আবিদের উপর বেশ বিরক্ত। আবিদ কেনো প্রিয়দর্শিনীকে স্ট্রবেরি মিল্কশেক দিলো এইটা নিয়ে প্রচন্ড অসন্তুষ্ট। আশরাফ মুহতাসিম বাবাকে বোঝাতে গিয়ে ঝাড়ি খেয়েছে তাই আর কিছু বলতে যায়নি। অন্যদিকে প্রজ্জ্বলিনী দাদুর কাছে আবিদের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়েছে। প্রিয়দর্শিনী দাদু আর বোনকে বুঝিয়ে পারছে না সে ইচ্ছে করে খেয়েছে আবিদের দোষ নেই।
ঘটনা ক্রমে চৌধুরী বাড়িতে খবরটা পৌঁছে গেছে। আসফি বরাবরের মতো ভাইয়ের উপর ক্রু’দ্ধ। সে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে আবিদকে বলেছে,”পছন্দ বলে আরেকজনের থেকে কেড়ে নেয় অথচ তার ব্যাপারে নূন্যতম জ্ঞান নেই এটাই তো পছন্দ!”
আবিদ চোখমুখ বুজে সবটা সহ্য করে নেয়। রাগে তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়েছে। কারণ তার মনে হয় আসফি ভুল কিছু বলেনি। আবিদ সত্যি প্রিয়দর্শিনীর এর্লাজির ব্যাপারে জানতো না। আজ দর্শিনী তার জন্য বিপদে পড়েছে। আবিদ ঠিক করে প্রিয়দর্শিনীর ব্যাপারে খুটিনাটি সবকিছু জেনে নিবে। আর কোনদিন কষ্ট পেতে দিবে না। আদিবা আবিদকে জরিয়ে ধরে বলে,
‘ভাইয়া আমি প্রিয়কে দেখতে যাবো প্লীজ নিয়ে চলো না।’
আবিদ মিষ্টি হেসে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বিকালের দিকে প্রিয়দর্শিনীকে পরিবারের কাছে রেখে এসেছে। এতোক্ষণে হসপিটাল থেকেও মনে হয় রিলিজ হয়ে গেছে। মেয়েটা বিপদ থেকে রক্ষা পেলো। আজ যাওয়া ঠিক হবেনা। আবিদ বোনকে বুঝিয়ে বলে,
‘আজ নয় কাল সকালে নিয়ে যায়? মনে হয় ডিসচার্জ করে দিয়েছে, হয়তো এতক্ষণে বাসাতে পৌঁছেও গেছে। এমন সময় ওদের বাসায় যাওয়া ঠিক হবেনা। কাল নিয়ে যাবো!’
আদিবা ভাইকে জরিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
‘ঠিক আছে ভাইয়া। কাল কিন্তু কথার খেলাফ করবে না।’
আসফি ভাই বোনের খুনসুটি দেখে বিরক্ত হয়ে ঘরে চলে গেলো। আসফির নিজেরও প্রিয়দর্শিনীকে দেখার ইচ্ছে করছে। কিন্তু আবিদকে তো বলা যাবেনা। আবিদ জানতে পারলে ঝামেলা করবে। মাঝে মাঝে আসফির আবিদের উপর প্রচন্ড ক্ষো’ভ হয়। এই মানুষটা তার লাইফের অর্ধেক হ্যাপিনেস ছিনিয়ে নিয়েছে। কোনদিন ক্ষমা করবে সে আবিদকে। একবার যদি প্রিয়দর্শিনী তার হয়ে যায় আবিদকে সে হাড়ে হাড়ে মজা বুঝাবে।
–
রাত ১১:৩০। আহানাফ প্রিয়দর্শিনীর পার্সোনাল নাম্বার নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে। হৃদির থেকে অনেক রিকুয়েস্ট করে নিয়েছে। ফোন করার সাহস হচ্ছে না। আবার প্রিয়দর্শিনী কেমন আছে না জেনে শান্তি পাচ্ছে না। শেষে মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ফোনটা দিয়েই দেয়।
হঠাৎ ঘুমে ব্যা’ঘা’ত ঘটাই প্রিয়দর্শিনী বিরক্ত হয়। অন্ধকারে ল্যাম্পের কাছে ফোনটা হাতড়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে ফোন। প্রিয়দর্শিনী বিরক্তি নিয়ে রিসিভ করে,
‘আসসালামু আলাইকুম! কে বললছেন?’
প্রিয়দর্শিনীর ঘুম জরানো মাদকতাময় কন্ঠ শুনে আহানাফের মন অস্থির হয়ে যায়। নিজেকে সামলে গলা ঝেড়ে বলে,
‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। আমি আহানাফ।’
প্রিয়দর্শিনী হসপিটাল থেকে আসার পর ক্লান্ত ছিল। সারিদিনের ধকল তার শরীরে সহ্য হয়নি। সবাইকে রুম থেকে যেতে বলে ঘুমিয়েছিল। সেই ঘুমটা ভেঙে মাথায় পেইন হচ্ছে। প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে বলল,
‘এটা তোর নাম্বার? এখন ফোন দিয়েছিস কেনো?’
আহানাফ ইতস্তত বোধ করে ও বুঝতে পারেনি প্রিয়দর্শিনী ঘুমাচ্ছিল। নাহলে সকাল পযর্ন্ত অপেক্ষা করতো।
‘হ্যা আমার নাম্বার। এখন কেমন আছিস জানতে ফোন দিয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি তুই ঘুমোচ্ছিলিস।’
‘ও! এইতো ভালো আছি। আর কোন সমস্যা হয়নি রাখি এখন! প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে।’
আহানাফের মনটা ছোট হয়ে গেলো। তার ইচ্ছে করছে প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলতে। এইযে প্রিয়দর্শিনীর ঘুম কাতুরে স্বর তার হৃদয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া বয়ে যাচ্ছে এটা কি প্রিয় জানবে না?
কথা বলার মাঝেই আরেকটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসায় প্রিয়দর্শিনী আহানাফকে বাই বলে ফোনটা কেটে দেয়। আহানাফ হুট করে কেটে দেওয়ায় কষ্ট পায়। এদিকে প্রিয়দর্শিনী আরেকটি আননোন নাম্বার দেখে চোখমুখ কুচকে ফেলে। তার নাম্বারটা হাতে গোনা পরিচিত ছাড়া কেউ জানেনা অথচ আজ সব আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসছে। প্রিয়দর্শিনী রিসিভ করে কিছু বলবে তার আগে পুরুষালি গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে তার ঘুম একলাফে ছুটে যায়। আবিদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘বিরক্ত করলাম? আপনি মনে হয় ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত ছিলেন দর্শিনী।’
প্রিয়দর্শিনী ফোনের ওপাশ থেকে আবিদের কন্ঠ শুনে হতভম্ব হয়ে উঠে বসে। আবিদের উষ্ণ কন্ঠে দর্শিনী নামটা শুনে প্রচন্ড অস্থিরতায় তার হাত পা কেঁপে উঠে। আবিদ শাহরিয়ার ফোন দিয়েছে তাকে কথাটি ব্রেইন ক্যাচ করা মাত্র হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। সেইসঙ্গে আবিদ তাকে ভুল বুঝল ভেবে মিনমিন করে বলে,
‘একদমই না। আমি মোটেও বিরক্ত হইনি। আমি ঘুমোচ্ছিলাম আমার একজন ফেন্ড আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিল। প্রচন্ড বিরক্তি হয়ে রিসিভ করেছিলাম তখনই আপনার ফোন আসল। আমি বিজি ছিলাম না!’
আবিদ সৌজন্যে হেসে সৌন্দেহ বসত জিগ্যেস করে,
‘আপনা সেই ফেন্ড কি আহানাফ দর্শিনী?’
প্রিয়দর্শিনী কি বলবে বুঝতে পারছেনা। মিথ্যা বলাটা তার পক্ষে সহজ না। আবিদ তাকে ভুল বুঝবে এটা ভেবে তার মস্তিষ্ক কাজ করা অফ করে দিচ্ছে। আর যাইহোক মিথ্যা বলে সে আবিদের কাছে ভালো সাজতে চায়না। নিজেকে ধাতস্থ করে মিন মিন কন্ঠে বলে,
‘হ্যা। কিন্তু আমি জানতাম না। আমি তাকে ফোন রাখতে বলছিলাম ঘুমাবো বলে তখনই আপনার ফোন এলো।’
আবিদের আহানাফের কথা শুনে রাগ হয়। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেলে। সেই সঙ্গে অনুভব করে প্রিয়দর্শিনীকে নিয়ে অসম্ভব জেলাসি। সে জানে প্রিয়দর্শিনী যা বলছে সব সত্যি। প্রিয়দর্শিনী সমন্ধে সব জানে। তবুও প্রিয়দর্শিনীকে যাচাই করার জন্য কন্ঠে নমনীয়তা বজায় রেখে বলে,
‘ও!’
প্রিয়দর্শিনীর আবিদের স্বাভাবিক কন্ঠ পছন্দ হলোনা। সে ভেবেছিল আবিদ জেলাস হবে। সোজাসুজি নিষেধ করবে অন্য কারো ফোন রিসিভ করতে। কিন্তু আবিদ স্বাভাবিক। প্রিয়দর্শিনী ইনিয়ে বিনিয়ে জিগ্যেস করে ,
‘শুধু ও? আপনার কিছু বলার নেই এই ব্যাপারে?’
‘আমার কি বলার থাকবে দর্শিনী?আপনি কি আমাকে বলার মত অধিকার দিয়েছেন?এতোবছর পরে কাউকে মন থেকে চাইলাম সে আমাকে প্রত্যাখান করে দিলো। এতে তার সম্পর্কে আমার কি বলার থাকতে পারে দর্শিনী?
আবিদের কথায় প্রিয়দর্শিনীর প্রচন্ড মন খারাপ হলো।বেশ বুঝতে পারছে আবিদ জেলাস সঙ্গে অভিমান করে আছে। তার সবটা বলে দিতে ইচ্ছে করছে কিন্তু গলা কেঁপে উঠছে। প্রিয়দর্শিনী বলে,
‘আমি আহানাফের সঙ্গে প্রথম ফোনে কথা বললাম ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব। ওরা সবাই আমার বন্ধু ঠিকই,কিন্তু নাদিম, আহানাফের সঙ্গে ক্লোজ নই আমি। ‘দে আর যাস্ট ফেন্ড’! ছেলেদের থেকে সবসময় দুরে থেকেছি। দিয়া, হৃদি ছাড়া তেমন কারো সঙ্গে মিশি নাই। আমাকে ভুল বুঝবেন না প্লীজ্!’
আবিদ বুঝতে পারছে প্রিয়দর্শিনীর মনোভাব। প্রিয়দর্শিনী চায়না আবিদ তাকে ভুল বুঝুক। কিন্তু আবিদ তো প্রিয়দর্শিনীকে ভুল বুঝেনি। সে সব জানে প্রিয়দর্শিনীর ব্যাপারে। আবিদ শুধু প্রিয়দর্শিনীর মুখে বিয়েতে ‘হ্যা’ শুনতে চায়। আর যাইহোক এতটুকু সে বুঝেছে প্রিয়দর্শিনী তাকে অপছন্দ করেনা। এতেই চলবে ভালোবাসা নাহয় পরবর্তীতে তৈরি করে নিবে আবিদ। প্রিয়দর্শিনীর মুখে ম্যজিস্ট্রেট সাহেব কথাটি শুনে আবিদের প্রচন্ড হাসি পায়। আবিদ ঠোঁট চেপে হেসে ফেলে। দাত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসি দমন করে কন্ঠে গভীরতা রেখে বলে,
‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছিলেন বলে ছাড় পেয়েছেন দর্শিনী। উত্তরটা কিন্তু এখনো পায়নি। আমি আপনার ‘না’কে ‘হ্যা’তে কনভার্ট হওয়ার অপেক্ষায়।’
প্রিয়দর্শিনী আবিদের কথায় তৎক্ষণাৎ চোখ বন্ধ করে নেয়।
আবিদকে দেখার পর থেকে নিজের অনুভূতি লুকিয়ে রাখা দ্বায় হয়ে পড়েছে তার। আবিদকে সে ফেরাতে চায়না। যা জানতে চাইছিল সবটা ক্লিয়ার হয়ে গেছে তার। এখন সত্যিটা বলার সময় এসে গেছে।
#চলবে
#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৮
“আমার হৃদয় হরণকারী দর্শিনী! আমার জীবনে পর্দাপণ করার জন্য প্রস্তুতি নিন। খুব শিগ্রই আপনাকে আমার মাঝে আবদ্ধ করে নিবো। আপনি শুধু আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর একমাত্র ব্যাক্তিগত।”
আবিদের উষ্ণতায় ভরপুর গভীর কন্ঠে প্রিয়দর্শিনী কেঁপে উঠে। অনুভূতিরা সব প্রজাপ্রতির মতো ভালোলাগায় দিক বেদিক হারিয়ে বসেছে। প্রিয়দর্শিনী চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে আবিদের শ্বাস প্রশ্বাস। অন্যদিকে নিজের শ্বাসরোধ হয়ে আসছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর তার প্রতি এতো সম্মোহনী অনুভূতি রয়েছে জানা ছিল না প্রিয়দর্শিনীর। নিজেকে কেমন উ’ন্মা’দ মনে হচ্ছে। প্রিয়দর্শিনীর অবচেতন মন মানুষটাকে এই মুহুর্তে দেখবার প্রবল ইচ্ছে প্রোষণ করছে। কিন্তু নিজের অনুভূতিকে এখনই এতটা প্রশয় দেওয়া যাবে না। প্রিয়দর্শিনী নিজেকে সামলে কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে,
‘দেখা যাবে রাখছি।’
শুধু এতটুকু বলেই ফোন কেটে দিয়েছিল প্রিয়দর্শিনী। অপরপাশে আবিদের মুখে ছিল সু’ক্ষ্ম হাসির বিচরণ। প্রিয়দর্শিনী এতটা লজ্জা পাবে জানলে ফোনে নয় সরাসরি বলতো আবিদ। ইশশ! লজ্জা পেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে নিশ্চয় সবচেয়ে আকষর্ণীয় লাগছে। প্রিয়দর্শিনীর লজ্জা মাখাদৃষ্টি দেখার প্রবল ইচ্ছে হচ্ছে আবিদের।
–
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে যায় প্রিয়দর্শিনী। কাল সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়েছিল আবার আবিদের সঙ্গে কথা বলার পর কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই। মনটা ভিষণ ফুরফুরে। কালকে আবিদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রচন্ড লজ্জা পেয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেট মানুষ এতো রোমান্টিক হবে কল্পনা করেনি সে। প্রিয়দর্শিনী ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দেখে কেউ নেই।আজকে শুক্রবার অফডে সবাই ঘুমাচ্ছে। প্রিয়মা বেগম রান্নাঘরে নাস্তা তৈরি করছে। প্রিয়দর্শিনীদের কাজের মেয়ে মধ্যবয়স্ক শেফালী পুরো বাড়ি ঝাড়ুমোছা করে ঝকঝকে পরিস্কার করছে। মাঝে মাঝে প্রিয়মা বেগমকে সাহায্য করছে।
প্রিয়দর্শিনী আহমেদ মুহতাসিমের ঘরের দিকে উকি দিয়ে দেখে। আহমেদ মুহতাসিম এই সময়টাতে হাটতে গার্ডেনের এরিয়ায় যায়। প্রিয়দর্শিনী কাউকে কিছু না বলে গার্ডেন এরিয়ায় পা বাড়ায়। সকাল বেলার মৃদু শীতল বাতাস, সুন্দর আবহাওয়া প্রশান্তি এনে দেয়। প্রিয়দর্শিনীদের গার্ডেন এরিয়ায় লোহার একটা ছোট্ট বেঞ্চ আছে। প্রিয়দর্শিনী আহমেদ মুহতাসিমকে বেঞ্চে বসতে দেখে মিষ্টি হেসে এগিয়ে যায়। আহমেদ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনীকে খেয়াল করে মৃদু শব্দ করে হাসলেন। কম্পনরত ডান হাতটা নাড়িয়ে পাশে বসতে ইশারা করলেন। প্রিয়দর্শিনী দাদুর পাশে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘কেমন বোধ করছো? দিন দিন তুমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছো দাদু। নিজের খেয়াল একটুও রাখো না। কেনো বলতো?’
আহমেদ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনীর কথায় অভিমান লক্ষ্য করে হাসলেন। প্রিয়দর্শিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
‘বয়স হয়ে যাচ্ছে দাদুভাই। আজ আছি কাল নাও থাকতে পারি। তোমার দাদিমার কাছে যাওয়ার আগে নাত জামাইকে দেখে যেতে চাই। তবেই তো তোমার দাদিমার কাছে গিয়ে গল্প করতে পারবো।’
প্রিয়দর্শিনী দাদুর চলে যাওয়ার কথা শুনে ফুঁসে উঠে। আহমেদ মুহতাসিমের হাতটা ধরে ছলছলে চোখে আদুরে কন্ঠে বলে,
‘কেনো ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছো দাদুভাই। তুমি কোথাও যাবেনা। আরো দশ-বারো বছর বেশি বাচঁবে। খবরদার যদি দুরে যাওয়ার কথা বলেছো তোমার সঙ্গে কথা বলবোনা।’
আহমেদ মুহতাসিম নাতনিকে কান্না করতে দেখে কষ্ট পেলেন। ব্যাস্ত হয়ে প্রিয়দর্শিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে থামতে বললেন,
‘কান্না করোনা দাদুভাই। আচ্ছা আমি আরো অনেক বছর বাচবো ঠিক আছে? তুমি কান্না করলে আমার কষ্ট লাগে দাদুভাই।’
‘তাহলে বলো দাদিমার জন্য কষ্ট পাবেনা আর। হাসিখুশি প্রাণবন্ত থাকবে সবসময়। সারাজীবন!’
‘আচ্ছা ঠিক আছে দাদুভাই। চলো আমাকে ঐদিকটাই হাটতে সাহায্য করো।’
প্রিয়দর্শিনী চোখ মুছে আহমেদ মুহতাসিমের হাত ধরে উঠতে সাহায্য করল। তারপর দাদু নাতনি মিলে গল্প করতে করতে বেশ খানিকটা হাটলো। প্রিয়দর্শিনী কথার ফাঁকে আবিদের ব্যাপারে প্রসঙ্গ টেনে তুলল। আবিদকে অপছন্দ করার বিষয়টি সে জানতে চায়। যাতে আবিদকে জানালে সে সুধরে নিয়ে আহমেদ মুহতাসিমের মন জয় করতে পারে।
‘আচ্ছা দাদু ম্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে তোমার অপছন্দ কেনো?’
প্রিয়দর্শিনীর কথায় আহমেদ মুহতাসিম নিশব্দে হাসলেন। আহমেদ মুহতাসিম প্রিয়দর্শিনী আর আবিদকে লক্ষ্য করেছেন ভালোভাবে। দুজনের মধ্যে কিছু তো ব্যাপার আছে। অষ্টাদশী প্রিয় নাতনীর মন পড়া ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিমের জন্য কঠিন নয়। সে তো কথার ছলে আবিদ আর প্রিয়দর্শিনীকে পরীক্ষা করতে চায়। আবিদ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আহমেদ মুহতাসিম নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের বিয়ে দিবেন। আহমেদ মুহতাসিমের মন বলছে আবিদ প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আগে থেকে পরিচিত। আহমেদ মুহতাসিম নাতনীর হাত ধরে ধীরে ধীরে হাটতে লাগলেন,
‘আবিদ শাহরিয়ারকে আমার অপছন্দ কারণ ছেলেটি তোমার জন্য একটু বেশিই যোগ্য দাদুভাই। তবে ছেলেটির মাঝে সবাইকে ডমিনেট করার অদ্ভুত ক্ষমতা রয়েছে! তার সুশীল ব্যাবহার, অমায়িক আচার-আচরণ দিয়ে সবাইকে সম্মোহন করে ফেলার ব্যাপারটা দারুণ হলেও আমি কিন্তু জেলাস দাদুভাই। আমার যদি ভুল নাহয় তুমি আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে আগে থেকে পছন্দ করো ঠিক না?’
প্রিয়দর্শিনী স্তব্ধ হয়ে গেছে দাদুর কথাতে। বয়স্ক আহমেদ মুহতাসিম ভুল বলেনি সত্যি আবিদ শাহরিয়ারের ব্যাক্তিত্ব এমন যে কেউ অপছন্দ করে থাকতে পারেনা। প্রিয়দর্শিনী দাদুর কথার জবাব দেয়না। আহমেদ মুহতাসিম শব্দ করে হেসে বললেন,
‘বুঝেছি বলতে হবে না। বাসায় যাওয়া যাক? চলো!’
প্রিয়দর্শিনী নির্বাক নিশ্চুপ। আহমেদ মুহতাসিম যে এই বয়সে এসেও সবাইকে ঝটকা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন কল্পনাতীত ছিল। প্রিয়দর্শিনীর কি খুশি হওয়া উচিত? তার মন বলছে এই বিয়েতে আর সমস্যা থাকবে না আর কোনো। বেশকিছু ক্ষণ কথা বলার পর দাদু নাতনি বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাসায় চলে আসল।
–
চৌধুরী বাড়িতে সবাই বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছে। শুক্রবারের সকালটায় সবাই ভালো ভাবে ঘুমিয়ে নেয়। সবাই যখন ঘুমাচ্ছিলো আবিদ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামে। সাস্থ্য সচেতন আবিদ লেট করে ঘুম থেকে উঠা পছন্দ করেনা। বলিষ্ঠ সুন্দর ফিগারের আকষর্ণীয়তা মেনটেইন করতে দ্রুত ঘুম থেকে উঠতে হয়। এছাড়া সকালবেলার সুন্দর আবহাওয়ায় জগিং, পুশআপ, ভার উত্তলন তার নিত্যদিনের কাজ। সময় স্বল্পতা, ব্যাস্ততার মাঝে ঠিক মতো জিমে যেতে পারেনা। মাঝে মাঝে জিম মিস হয়ে যায় কিন্তু পুশআপ, জগিং না করলে চলেনা আবিদের। ঠিক এই কারণে বাড়িতে জিমের সামগ্রী দিয়ে ছোট খাটো ব্যায়ামাগার তৈরি করে ফেলেছে। এজন্যই বত্রিশ বছর বয়সী আবিদ সুপুরুষ হলেও তাকে সাতাশ আঠাশ বছর বয়সী মনে হয়। আবিদ ট্রি-শার্ট টাওজার পরে রেডি হয়ে বাড়ির গার্ডেন এরিয়ায় বেশ খানিকক্ষণ দৌঁড় দেয়। একটু জিরিয়ে একসঙ্গে চার পাচবার পুশআপ করে। আদিবা ঘুম থেকে উঠে নিজের রুমের বেলকুনিতে গিয়ে দাড়াঁয়। জায়গাটা ফাঁকা। আদিবা ভাইকে বেঞ্চে বসে পানি খেতে দেখে চিৎকার করে বলে,
‘ভাইয়া আজকে কোথাও যাওয়ার কথা। মনে আছে তো? প্রিয় আপুদের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল ভুলে যেয়ো না।’
আবিদ পিছনে তাকিয়ে দেখে আদিবা বেলকুনির রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আবিদ প্রিয়দর্শিনীর কথা ভেবে সুক্ষ্ম হেসে বলে,
‘মনে আছে। আশরাফ মুহতাসিম আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি। রেডি হয়ে থেকো।’
আদিবা খুশি হয়ে যায়। আবিদকে বাই বলে ড্রেস চুজ করতে শুরু করে। আবিদ বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসে। আবিদ গার্ডেন এরিয়া থেকে ভিতরে আসতে আসফির মুখোমুখি হয়। আসফি মুখে গম্ভীরতা বজায় রেখে সোফায় বসে পেপার পড়ছিল। আবিদ পাত্তা না দিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে। অনুসা বেগম পুস্পিতা, কাজের মেয়ে সুফিয়ার সাহায্যে পরোটা, ডিম,আলুর তরকারি, মাংস রান্না করছে। শুক্রবার মানেই খাবারের তালিকায় ডিম, মাংস থাকবেই। আবিদ গ্লাসে জুস নিয়ে খেতে থাকে। এদিকে আদিবা নাচতে নাচতে আবিদের পাশে বসে। আরহান সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে, ঘুমের রেস এখনো চোখেমুখে বোনের পাশে বসে বলে,
‘এতো আনন্দ কিসের তোর?’
আদিবা আবিদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসে। আবিদ চোখ সরু করে তাকালে আদিবা উল্টো মুখে ভেঙচি কাটে। আবিদ বোনের আচরণে প্রচন্ড বিষম খায়। আরহান ভয় পেয়ে ভাইয়ের পিঠে বারি দিতে থাকে। আবিদ ভ্রু কুচকে আরহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমাকে বাচ্চা পেয়েছো?এমন করা লাগবে?’
আরহান নির্বিকারভাবে আবিদের দিকে তাকাল। আদিবা হাসতে হাসতে বলে,
‘না ভাইয়া তোমাকে বুড়ো পেয়েছি। বিয়ে করছো না কেনো তুমি? বয়সের খেয়াল আছে তোমার?’
আরহান আদিবার মাথায় টোকা দিয়ে বলে,
‘বড়দের সঙ্গে এভাবে কথা বলে? ছাগল।’
আবিদ মুখটা গম্ভীর করে বলে,
‘আমার বয়স বত্রিশ হলেও সাতাশ-আঠাশ মনে হয়। তুমি বড় হয়ে যাচ্ছো। তোমার জন্য পাত্র দেখছি ওয়েট! দ্রুত বিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিবো তোমাকে।’
আবিদ মজা করে বললেও আদিবার চোখ ছলছল করে উঠে। মূলত সে বিয়ে করতে চায়না। বিয়ে করলে তাকে পরিবার ছেড়ে যেতে হবে এটা সে মানতেই পারবে না। পরিবার তার কাছে মূল্যবান রত্ন যা সে হারাতে চায়না, পরিবারের থেকে সে দুরে যেতে চায়না।
আবিদ বোনের ছলছলে চোখের দিকে তাকিয়ে দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ করে বলল,
‘এইযে শুরু হলো। নিজে মজা করবে কিন্তু তার সঙ্গে আমরা মজা করতে পারবো না। ভাই প্লীজ ওকে বলে দেও এমন ফ্যাচ ফ্যাচ করে কান্না করলে আমার সঙ্গে নিয়ে যাবোনা।’
আদিবা আবিদের নিয়ে যাবোনা কথা শোনা মাত্র চোখ মুছে জোর করে হেসে বলে,
‘আমি কান্না করিনি। আমাকে না নিয়ে গেলে তোমার সঙ্গে কথা বলবোনা ভাইয়া।’
–
সকাল ১১:০০টা। প্রিয়দর্শিনী, প্রজ্জ্বলিনী, উজান সবাই দাদুর পাশে বসে চায়ের আড্ডা দিচ্ছে। প্রিয়মা বেগম রান্নাবান্নার কাজে ব্যাস্ত। আশরাফ মুহতাসিম পেপার পড়ছিলেন। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠে। আশরাফ মুহতাসিমের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। প্রিয়মা বেগম রান্নাঘর থেকে উকি দিয়ে বলেন,
‘দেখো তো কে আসলো।’
উজান প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল,
‘কিওপেট্রা! দেখো গিয়ে কে আসলো।’
প্রিয়দর্শিনী উজানের একেকবার একেক রকম নামে অতিষ্ঠ।উজানের জন্য মাঝে মাঝে নিজের নামটাও ভুলে যায়। প্রিয়দর্শিনী নিজেকে ঠিক ঠাক করে শিফনের সাদা ওড়নাটা মাথায় দিয়ে পরিপাটি হয়ে এগিয়ে গেলো। প্রিয়দর্শিনী হঠাৎ দরজা খুলতে বড়সড় ঝটকা খেলো। সামনে থাকা পুরুষটিকে দেখে হ’ত’ভ’ম্ব সে।
#চলবে|