#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#পর্ব_৪
‘প্রিয়দর্শিনী বিয়ে নাকচ করে দিয়েছে।’
শাহরিয়ার সাহেবের এক কথায় ডাইনিং টেবিলে ভয়ংকর নিঃশব্দতা। সবাই থমথমে মুখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়।সবার মুখে অস’ন্তো’ষ বিরাজমান। আসফি খুশিতে পুলকিত, আলোকিত হয়ে উঠেছে। তাহলে আলাদা করে পরিশ্রম করতে হবে না তার। আবিদ কথাটা শোনা মাত্রই শব্দ করে প্লেটটা রেখে উঠে দাড়ায়। তার কপালের, হাতের নীল র’গ গমরঙা ত্বকে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ, চওয়াল শক্ত, আবিদের চেহারাতে চাপা ক্ষো’ভ, অস’ন্তু’ষ্টি। গমরঙা ত্বক মুহুর্তে রাগে লাল হয়ে গেছে। সবাই আবিদের অবস্থা বুঝতে পারলো,কিন্তু প্রিয়দর্শিনীর এমন সিদ্ধান্তের কারণ বুঝতে পারল না।আবিদ বেসিন থেকে হাত ধুয়ে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে আসে। শাহরিয়ার চৌধুরী অসহায় হয়ে জিগ্যেস করে,
‘কোথায় যাচ্ছো এইসময়?’
‘প্রিয়দর্শিনীকে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বাবা। বিয়েতে অমত করার কারণ শুনতে চাই। তাকে এতো সহজে আমি ছাড়ছি না।’
আবিদের নির্বিকার উত্তর। আসফি এতোক্ষণ খুশি হলেও আবিদের বাড়াবাড়ি দেখে বিরক্ত হয়। তার ভিতরের সত্তা বলে উঠে,
‘ভাইয়ের চেয়ে সবদিক দিয়ে আমি পারফেক্ট। ঠিক হয়েছে প্রত্যাখান করেছে ক্ষ’ম’তা দ’ম্ভের দাপট বেশি ছিল যে। ‘আসফি’ তোর কাছে প্লাস পয়েন্ট মেয়েটা মনে হয় তোকে পছন্দ করেছিল। সময় সুযোগ বুঝে বাবাকে বলে দেখ তোর জন্য বলতে। প্রিয়দর্শিনী রাজি হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।’
আসফি নিজের মনে হাসে।সবাই খাওয়া ছেড়ে উঠে গেছে। শুধু আসফি এখনো খেয়েই যাচ্ছে।শাহরিয়ার চৌধুরী আবিদকে উদ্দেশ্য করে বলে,
‘বাবা এখন অনেক রাত হয়ে গেছে।কারো বাসায় এতো রাতে কৈফিয়ত নিতে যাওয়া নিশ্চয় ভদ্রতার ল’ক্ষ’ণ নয়। কেউ ভালো চোখে দেখবে না। আজকে যেয়ো না। বরং কাল তুমি জিলাতে গিয়ে আশরাফ সাহেবের সঙ্গে কথা বলে এসো। উনার থেকে পারমিশন নিয়ে দেখা করিয়ো প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে। এভাবে হুটহাট রাগ মানায় না তোমাকে আবিদ।’
আবিদ মৃদু জি’দ দেখিয়ে তী’ক্ষ্ম কন্ঠে বলে,
‘বাবা ভদ্র থাকতে দিচ্ছে কোথায়? আমাদের ঐ বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বাগদান সম্পূর্ণ করতে।ওরা কিনা দু’চার ঘন্টায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। এখন বলে কিনা বিয়েতে মত নেই। প্রিয়দর্শিনীকে’ই বিয়ে করবো আমি। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে চেনে না। প্রিয়দর্শিনীকে আমি চাই, ভিষণ ভাবে চাই।’
আরহান ভাইয়ের অবস্থা বুঝলো। ভাইয়ের পাশে দাড়িয়ে কাধে হাত দিয়ে বলল,
‘ভাই আমার! তুই কাল গিয়ে কথা বলিস। রাগ করে কি হবে এখানে আমাদের কারো হাত নেই। কাল গিয়ে প্রিয়দর্শিনীর ‘না’ করার কারণ শুনে নিস। এখন এটাই ভালো নিজের রুমে গিয়ে রেস্ট নে। মাথা গরম হয়ে আছে তোর।’
‘কালকে’ই যাব আমি। প্রিয়দর্শিনীকে আমার মুখোমুখি হতে হবে।’
আবিদ কথাটা বলে গটগট পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো। আসফি ডাইনিং টেবিলে বসে সবটাই দেখেছে। তার ঠোঁটের কোণে সু’ক্ষ্ম হাসি ছড়িয়ে আছে। খেতে খেতে’ই সে বিরবির করে উঠে,
‘যতসব ন্যাকামি।’
–
বাইরে চাদঁনীরাত। চাদেঁর আলো প্রতিফলিত হয়ে বেলকুনিতে প্রবেশ করেছে। প্রিয়দর্শিনী মন খারাপ করে বসেছিল। প্রিয়দর্শিনীর রুমের বেলকুনিতে অনেকটা জাইগা ফাকা। এখানে একটা ট্রি-টেবিল দুটো চেয়ার রাখা। সঙ্গে বেশকিছু ইনডোর প্লান্ট’স। প্রিয়দর্শিনী মাঝেমধ্যে বাহিরে এসে বসে। প্রিয়দর্শিনী চাদঁটাকে দেখছে দুঃখ বিনিময় করছে একে অপরের সঙ্গে। এতোক্ষণে নিশ্চয় আবিদকে জানানো হয়েছে। অথচ কোন প্রতিক্রিয়া নেই তবে কি আবিদের অনুভূতি বাকিদের মতো শুধু সৌন্দর্যের মুগ্ধতা? প্রিয়দর্শিনী নিজেকে শাসাল, তার অবচেতন মন হয়তো আশা করেছিল আবিদ আজকে’ই প্রতিক্রিয়া দেখাবে। সে ভুলে’ই গেছে এটা রাত। প্রিয়দর্শিনীর ভয় হয় আবিদকে প্রত্যাখান করে ঠিক করলো তো? তার মনের সব অনুভূতিরা একসঙ্গে বি’দ্রো’হ শুরু করেছে। মনের উপর জোর দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে প্রিয়দর্শিনীকে সে তো চায়নি ‘না’ বলতে। তার একটা’ই চাওয়া আবিদের চোখে তার জন্য পবিত্র অনুভূতি, মুগ্ধতা পায়। আবিদ যেন প্রিয়দর্শিনীর মন জয় করে নিতে পারে। বাবার কাছে প্রিয়দর্শিনী সময় চেয়েছিল। সময় পেয়েছে কিন্তু আরেকটি সত্তা তাকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিতে চাইছে। মনে মনে সে আল্লাহ্কে ডাকল।
প্রজ্জ্বলিনী আজ প্রিয়দর্শিনীর উপর ভিষণ খুশি। প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে আড্ডা দিতে রুমে এসে দেখে প্রিয়দর্শিনী নেই। তার হাতে আচারের ছোট বয়ম। সে প্রিয়দর্শিনীকে ডাকতে শুরু করে। প্রিয়দর্শিনী বোনের আওয়াজ শুনে বেলকুনি থেকে বলল,
‘আমি বেলকুনিতে আপু।’
প্রজ্জ্বলিনী আচারের বয়ম নিয়ে প্রিয়দর্শিনীর পাশে বসে পরে।আচারের বয়ম থেকে এক টুকরো আচার তুলে প্রিয়দর্শিনীকে দেয়।
প্রিয়দর্শিনী মানা করলে নিজের মুখে পুরে নেয়। তৃপ্তিতে চোখ বন্ধ করে বলে,
‘মন খারাপ কেনো?’
‘কোথায়?’
‘আমিতো দেখতে পাচ্ছি। জানিস আমি না ভিষণ খুশি হয়েছি তোর সিদ্ধান্তে। আমি বলেছিলাম না বাবা তোর চোখের পানি সহ্য করতে পারেনা। ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও কিন্তু বিয়ে নাকচ করে দিলো। শুধু তোর জন্য। ইশশ! আমার বিয়ের সময় এমনটা কেনো করেনি জানতে ইচ্ছে করছে।’
প্রিয়দর্শিনী বোনের কথায় চমকে উঠে,ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল। কি বলছে তার বোন এসব। বিয়ের এতোদিন পর উজান ভাইয়ার মতো এতো ভালো হাজবেন্ট পেয়ে আপসোস করছে? প্রজ্জ্বলিনী বোনের দিকে তাকালে হুস ফিরে কি সব আবল তাবল বলে ফেলেছে। প্রজ্জ্বলিনী আচারের বয়মটা রেখে বলে,
‘ভুল ভাবিস না প্রিয়। আমি উজানকে ভিষণ ভালোবাসি। ওর মতো মানুষ হয়না। আপসোস করার নূন্যতম রিজন নেই হাহা। দেখ আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন।’
বলে পেটে হাত দিয়ে মিষ্টি হাসে প্রজ্জ্বলিনী। প্রজ্জ্বলিনী বোনের কাধে মাথা ঠেকিয়ে আবারো বলে,
‘আমি উজানকে নিয়ে কখনো আপসোস করিনি। এরেন্জম্যারেজ হলেও বিয়ের পরের দিন থেকেই ওর প্রতি এট্রা’ক’টেড হতে শুরু করি। আমার প্রতি ওর ভালোবাসা,আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতে বাধ্য করে। বিয়ের পর প্রতিটা বন্ধন মুজবুত হয় বুঝেছিস। আল্লাহর রহমত চলে আসে এমনিতেই। আমি শুধু বললাম সেদিন আমার কান্না দেখেও বাবা বিয়ে কেনো আটকায় নি? না আটকে ভিষণ ভালো ডিসিশন ছিল। বাবার জন্য আমি হীরা পেয়েছি যাকে আমি হারাতে চায়না।’
প্রিয়দর্শিনী সবটা শুনে চুপ হয়ে আছে। এখন তার সবকিছু স্বাভাবিক লাগছে। উজান,প্রজ্জ্বলিনীর ভালোবাসাটা শুরু হয়েছিল বিয়ের পর থেকে। তাদের দুজনের সম্পর্কে কতো পবিত্রতা। প্রিয়দর্শিনী বোনের জন্য দুয়া করে তারা যেন সারাজীবন এভাবে সুখী থাকে। প্রজ্জ্বলিনী বোনকে ঘুমাতে বলে নিজের রুমে চলে যায়।
–
রৌদ্রজ্জ্বল সুন্দর দিন। প্রিয়দর্শিনী বেশ ফুরফুরে মেজাজে ঘুম থেকে উঠে। বুঝতে’ই পারছে বলা হয়ে গেছে। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার জন্য নিচে নামে।প্রিয়মা বেগম নাস্তা সাজাচ্ছেন। ডাইনিং টেবিলে বসতে’ই উজানকে মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল,
‘কি খবর ভাইয়া? আপু কোথায়?’
প্রিয়দর্শিনীর উজানের সঙ্গে খুব মিল। উজানের বোন না থাকাই প্রিয়দর্শিনীকে প্রচণ্ড স্নেহ করে। প্রায় সবরকম আবদার রাখার চেষ্টা করে। প্রজ্জ্বলিনীর এগুলো দেখে মন ভরে উঠে!
উজান প্রিয়দর্শিনীকে মিষ্টি হাসি ফেরত দিয়ে বলে,
‘এইতো ভালো খবর। তোমার বোন তো কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমোচ্ছে তাই ডিস্টার্ব করিনি ঘুমিয়ে নিক একটু।’
প্রিয়দর্শিনী হেসে ফেলে। আশরাফ সাহেব পেপার পড়ছেন। তিনি কোট প্যান্ট পরে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি। উজান এখান থেকে’ই অফিসে যাবে। আহমেদ মুহতাসিম গার্ডেনের দিকে হাটতে বেরিয়েছেন। ডাক্তার তাকে প্রতিদিন নিয়ম করে হাটতে বলেছেন। এতে শরীর সুস্থ থাকে। এজন্য অভ্যাস বসত হাটতে হয় তাকে।
প্রিয়দর্শিনীর যেহেতু ফ্রী সময়। তাই এইসময়টাতে বেশ কিছু ভিন্ন ধরনের বই পড়ে সময় কাটায়। প্রিয়দর্শিনীর সবচেয়ে ক্লোজ বান্ধুবী হৃদি। মাঝে মাঝে’ই আবদার করে বসে ঘুরতে যেতে,ওকে সঙ্গ দিতে। প্রিয়দর্শিনী কাছে কোথাও হলে মাঝে মাঝে সঙ্গ দেয়। অবশ্য বাবার পারমিশন ছাড়া কখনো যায় না। হৃদি বেশ কয়কবার কল দিয়েছে। প্রিয়দর্শিনী রিসিভ করতে পারেনি। সে কল ব্যাক করতে’ই হৃদি ওপাশ থেকে বেশ আগ্রহের সঙ্গে বলে,
‘প্রিয়! জানিস জিলার পাশে নতুন একটা রেস্টুরেন্ট হয়েছে। ‘ক্যাস্টেলিনো’ নামটা সুন্দর না? ওখানে ফার্স্ট ফুড অনেক মজার চলনা আজকে যায়,না করবি না প্লীজ। কাদঁবো নাহলে।
প্রিয়দর্শিনীর মন আজকে ভালো। সে হৃদিকে পরে ফোন দিয়ে জানাচ্ছে বলে, কেটে দিলো। দ্রুত পায়ে ডাইনিং বাবার কাছে গিয়ে বলল,
‘বাবা হৃদি ফোন দিয়েছে। বলছে জিলার পাশে ‘ক্যাস্টেলিনোতে’ যাবে। নতুন রেস্টুরেন্ট,খাবার নাকি খুব মজার। আজকে আমার মন ভালো আছে। আমি কি যেতে পারি?’
আশরাফ মুহতাসিম মিষ্টি হাসলেন। প্রিয়দর্শিনী বরাবর’ই এমন মিষ্টি করে আবদার করে যেটা কেউ ফেলতে পারেনা। এজন্য’ই এতো আদুরে সে। উজান অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলে,
‘স্নো হোয়াইট! সবাই মিলে গেলে কেমন হয়?’
উজান মাঝে মধ্যেই অদ্ভুত নামে ডাকে প্রিয়দর্শিনীকে। প্রিয়দর্শিনী নাম পছন্দ হলে কিছু বলেনা কিন্তু অপছন্দ হলেই প্রজ্জ্বলিনীর কাছে বিচার। এদিকে প্রজ্জ্বলিনীর ভয়ে উজান আবারো ভালো ভালো সংক্ষিপ্ত নাম খুজে বের করে। প্রজ্জ্বলিনীর,উজান আর প্রিয়দর্শিনীকে দেখে মনে হয় দুই জমজ ভাইবোন খু’নসুটি করছে।
প্রিয়দর্শিনী আনন্দে বলে,
‘মন্দ হয়না! কিন্তু আজকে আমি হৃদির সঙ্গে ঘুরে আসি। ও বারবার অনুরোধ করেছে।’
উজান হেসে সায় দিলো। আশরাফ মুহতাসিম মেয়ের হাতে কিছু টাকা দিলেন। প্রিয়দর্শিনী খুশি হয়ে হৃদিকে জানালো রেডি হতে। সকাল ১১:০০ বের হবে দুজনে।
–
১১:৫৫! আবিদের নেভিব্লু গাড়িটা জিলার ক্যাম্পাসে ঢুকল প্রচন্ড স্পিডে। গার্ড সহ বের হয়ে আসল আবিদ শাহরিয়ার স্টুডেন্টরা আশেপাশে যারা ছিল সবাই চেনে ম্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে। সবাই উৎসুক হয়ে দেখতে থাকে। আবিদ কোনদিকে না তাকিয়ে প্রিন্সিপালের রুমে চলে যায়। আশরাফ মুহতাসিমের রুমে দুজন প্রভাষক উপস্থিত ছিলেন।গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করছিলো তারা। আবিদের আ’ক’স্মি’ক আগমনে সবাই উঠে দাড়ায়। আশরাফ মুহতাসিম আন্দাজ করতে পারছেন আবিদের আসার কারণ। সবাই বেরিয়ে গেলে আবিদ সালাম দিয়ে সামনের চেয়ারে বসে।
আশরাফ মুহতাসিমের উৎসুক চাহনী,
‘ বাসায় গেছিলাম। সেখানে জানতে পারলাম আপনি নেই। আন্দাজ করলাম কলেজে’ই থাকবেন সেইজন্য।’
আশরাফ মুহতাসিম মৃদু হাসলেন। আবিদের কন্ঠে ব্যাকুলতা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন। আশরাফ মুহতাসিম সিরিয়াস মুডে আসলেন,
‘হঠাৎ সাক্ষাৎ এর কারণ কি প্রিয়দর্শিনী, আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী?’
‘আঙ্কেল প্লীজ! আমাকে অপরিচিতদের মতো ভাববেন না। ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ার আগে আমি মানুষ। আপনার হবু জামাই হিসাবে দেখা করতে এসেছি। এবং আমি নার্ভাস। বাবা নিশ্চয় জানিয়েছিল আমি প্রিয়দর্শিনীকে বিয়ে করতে চাই। আপনি কি আমাকে মেয়ে জামাই হবার সুযোগ দিবেন?’
কোনরূপ ভনিতা ছাড়া’ই উক্ত কথাটি বলল আবিদ। আশরাফ সাহেব মৃদু হাসলেন।
‘আমার তো কোন আপত্তি ছিলনা। প্রিয়দর্শিনী চায়না কালকে আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করলো। প্রিয়দর্শিনী আমার খুব আদরের। মেয়ের মুখে তাকিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। আমার কিছু করার নেই বাবা।’
‘কিন্তু প্রিয়দর্শিনী কেনো রাজি নয়? কি সমস্যা আঙ্কেল? আমি প্রিয়দর্শিনীর মুখ থেকে সবটা শুনতে চাই। আমি কি তার জন্য অযোগ্য? এই মূহুর্তে আমি প্রিয়দর্শিনীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’
আশরাফ মুহতাসিম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সমস্যা তো তিনিও জানেন না। মেয়ে জীবনের প্রথম তার কথার অমত করলো। সঠিক কারণটাও বলেনি। তিনি কি জবাব দিবেন আবিদকে বুঝতে পারছেন না। তিনি কিছু বলবে তার আগেই আবিদ বলে উঠে,
‘যা বোঝার বুঝে গেছি,আর বলতে হবে না। প্রিয়দর্শিনী বিয়েতে রাজি হবে। আমি করাব রাজি। মেয়ের হবু জামাইকে দোয়া করবেন। আমি আসছি আঙ্কেল আপনার মেয়ের মন জয় করতে হবে তো।’
আবিদ উঠে আসার আগে রসগোল্লার প্যাকেটটা টেবিলে রেখে গেলো। আবিদের হন্তদন্ত হয়ে বের হওয়া দেখে আশরাফ মুহতাসিম শব্দ করে হেসে উঠলেন। আবিদকে তিনি ভালোমতোই চিনেছেন। প্রিয়দর্শিনীর প্রতি আবিদের দূর্বলতা বুঝতে পারছেন। আশরাফ মুহতাসিম ঠিক, জামাই হিসাবে সত্যি দারুণ হবে আবিদ শাহরিয়ার। এই ছেলে যখন প্রিয়দর্শিনীকে রাজি করাবে বলেছে তার মানে তিনি নিশ্চিত আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী তার কথার নড়চড় করবে না। প্রিয়দর্শিনীর জন্য সঠিক পাত্র নির্বাচন করছেন তিনি। এখন এটা দেখা বাকি আবিদ কিভাবে আহমেদ মুহতাসিম আর প্রিয়দর্শিনীকে রাজি করে।
#চলবে