#প্রিয়দর্শিনী🧡
#প্রজ্ঞা_জামান_তৃণ
#সূচনা_পর্ব
অষ্টাদশী প্রিয়দর্শিনী পাত্র হিসাবে এইচএসসি পরীক্ষার ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে বি’স্মি’ত হতভম্ব। তার সামনে মুখোমুখি বসে রয়েছে সুদর্শন পুরুষটি। প্রিয়দর্শিনীর অধর পল্লব মৃদু কেপেঁ উঠে,সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য চেষ্টা করে কিন্তু আ’ক’স্মি’ক কন্ঠরোধ হয়ে আসে। প্রিয়দর্শিনীর ফর্সা মুখে বি’স্মি’ত দৃষ্টি দেখে ঠোঁটের কোনে সু’ক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা যায় আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর।
সেই হাসিতে যেন কিছু আছে। যেন প্রিয়দর্শিনীর কানে কিছু বলে যায়।লোকটিকে ইংরেজি পরীক্ষার সময় একবারই দেখেছিল। অসাধারন ব্যক্তিত্ব দেখে ট্রিমেনডাউসলি ক্রাশ খেয়ে ফেলে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার সহ সব জাইগায় ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে উ’ন্মা’দের মতো খুজেছে কিন্তু ব্যা’র্থ হয়েছিল। সালমান শাহের মতো ‘স্বপ্নের নায়ক’ হয়ে যেভাবে এসেছিল তার জীবনে। ঠিক সেভাবে উধাও হয়ে গেছিলো আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী।
প্রিয়দর্শিনী জিলার স্টুডেন্ট হওয়ায় নিউ গোর্ভামেন্ট ড্রিগ্রী কলেজে কেন্দ্র পড়েছিল। আর্সের মেধাবী ছাত্রী প্রিয়দর্শিনী ইংরেজি পরীক্ষার দিন প্রথম দেখেছিল আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে। লোকটি গার্ডসহ পুরো রুমে চ’ক্ক’র কেটে তার পাশে এসে দাড়িঁয়েছিল। আ’ক’ষ’র্ণ নিজের দিকে করতে গলা ঝেড়ে মৃ’দু কেশে উঠেছিল। ব্যস থমকে যায় প্রিয়দর্শিনীর হাত। একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সব স্টুডেন্ট ভয় পাবে এটাই স্বাভাবিক। বুকের ভিতর ঢিপঢিপ করছিল সজোরে। প্রিয়দর্শিনী অস্থিরতা আড়াল করে চোখ তুলে তাকায়। তার সামনে এত সুদর্শন সুট বুট পরা লম্বাচড়া বলিষ্ঠ পুরুষকে দেখে দিক’বেদিক হারিয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। প্রিয়দর্শিনী জীবনের প্রথম কোন পুরুষকে এইভাবে লক্ষ্য করলো।আবিদ শাহরিয়ার মন ভোলানো সুন্দর একটা হাসি উপহার দেয়। প্রিয়দর্শিনীর চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে খাতাটা নিয়ে নেয়। প্রিয়দর্শিনী বুঝতেও পারেনা। তার ধ্যানজ্ঞান আবিদ শাহরিয়ারে মত্ত্ব তখন। আবিদ শাহরিয়ার খাতার পৃষ্ঠা উলটে পালটে দেখতে থাকে,
‘নাম কি?’
প্রিয়দর্শিনী যেন এই জগতে নেই এমন ভাবে পরক্ষ করছিল আবিদকে। সুঠাম লম্বাচড়া উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের বলিষ্ঠ সুপুরুষ। কালো সুট সাদা সার্টের উপর মারাত্মক সুন্দর দেখাচ্ছে। সপ্তাদশী প্রিয়দর্শিনী তার এই ক্ষু’দ্র জীবনে এত সুদর্শন হ্যান্ডসাম,ড্যাশিং সুপুরুষ কখনো দেখেনি। তার বয়স ৩০-৩২ হবে কি? নাকি এরচেয়ে কম আন্দাজ করতে পারছেনা।
আবিদ খাতার দিকে তাকিয়ে আবার প্রিয়দর্শিনীর শুভ্র মুখের দিকে তাকায়,
‘আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?কোথায় হারিয়ে গেছেন মিস? আপনার নামটা?’
প্রিয়দর্শিনী মুগ্ধতা কাটিয়ে উঠে নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দেয়,
‘নিবিদ্রিতা প্রিয়দর্শিনী।’
আবিদ প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকাতেই প্রিয়দর্শিনী অসস্থি, লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। আবিদের কাছে নামটা ভিষণ ইউনিক লাগল। সচারচর এমন নাম খুব একটা শোনা যায় না।
প্রিয়দর্শিনী উৎকণ্ঠায় ভাবে,
‘ছিহ্! এতক্ষণ নির্লজ্জের মতো কিভাবে তাকিয়ে থাকল স্যার কি ভাবল!’
‘লেখা সুন্দর,গো’ছানো,মার্জিত।’
‘হু?’
আবিদ অপ্রস্তুত হয়। মেয়েটা অদ্ভুত! তার মতো মানুষের স্পষ্ট কথা মেয়েটির কর্ণকুহুরে পৌঁছাতে দেরী হচ্ছে?মেয়েটা একদম আলাদা এজন্যই প্রথমবারে সমস্ত আ’র্ক’ষ’ণ কেড়ে নিয়েছে। আবিদ খাতা দেখার বাহানায় জিগ্যেস করে,
‘কোন কলেজ?’
প্রিয়দর্শিনী মাথা নিচু করেই ধীরে জবাব দেয়,
‘গোভার্মেন্ট জিলা স্কুল এন্ড কলেজ!’
‘স্পিক লাউডার প্রিয়দর্শিনী!’
প্রিয়দর্শিনী এমন ধমকে চমকে উঠে। এমন ধমক তাকে কেউ কখনো দেয়নি। বাবা,মা,বোন সবার কাছে ভিষণ আদুরে প্রিয়দর্শিনী।
সে ভয় পেয়ে গড়গড় করে বলে উঠে,
‘স্যার গোভার্মেন্ট জিলা স্কুল এন্ড কলেজ!’
আশেপাশে পিনপতন নিরাবতা। শুধু হলের ফ্যানগুলোর শাঁ’শা শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রিয়দর্শিনীর পাশেরজন অবাক চোখে প্রিয়দর্শিনী আবিদের কান্ড কলাপ দেখতে থাকে। আশেপাশের সবাই দেখছে। হল রুমের তিনজন টিচার বি’স্মি’ত বিনা কারণে ধমক দেওয়ার কারণ খুজেঁ পেলনা তারা। একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রশ্ন করার অদম্য ইচ্ছে চেপে রাখল বি’স্ম’য় নিয়ে। প্রিয়দর্শিনী ব্রাইট স্টুডেন্ট এমন না সে দেখে লিখেছে। বরং সে সবাইকে যথাসম্ভব হেল্প করে ফার্স্ট গার্ল বলে টিচারদের আড়ালে। হঠাৎ তার সঙ্গে এমন করার কারণ পেলোনা কলেজের ব্যাচমেটরা,
আবিদ খাতাটা প্রিয়দর্শিনীর পাশে রেখে দেয়। পরপর পাশের জনের খাতাটা সেম ভাবে দেখে। কেউ যেন উল্টাপাল্টা ভাবে বিষয়টি না দেখে, এজন্য পাশের জনকে সেম কয়েশচেন করে। পাশের জনের দিকে না তাকিয়ে জিগ্যেস করে,
‘নাম?’
‘সরণি আহমেদ! ‘
‘কলেজ?
‘মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।’
‘ওয়েল বসুন। নিজে থেকে আনসার করার চেষ্টা করবেন।’
সরণি বেশ বুঝতে পারলো কেনো তাকে কথাটি বলা হলো।
আবিদ সরণি আর প্রিয়দর্শিনীর উত্তরে কিছুটা মিল পায়।
সে ফার্স্টেই লক্ষ্য করেছিল সরণি প্রিয়দর্শিনীর কপি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেভাবে কিছু না বলে খাতা দিয়ে দেয়। যারা গার্ড দিচ্ছিলেন সেই তিনজন শিক্ষককে ডেকে হাত নেড়ে কিছু বললেন। তারপর একঝলক প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকিয়ে দেখে নেয়, পরপরই ঠোঁটের সু’ক্ষ্ম হাসির রেখা টেনে দুজন গার্ডকে নিয়ে চলে যায়। প্রিয়দর্শিনীর মনে হয় ওই হাসির মধ্যে কিছু ছিল। সেদিন প্রিয়দর্শিনী খুব দেরী করে ফেলেছিল সবটা কম্পিলট করতে। কিন্তু বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে খাতা নেওয়া হচ্ছিলো না দেখে তিনজন টিচার সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,
‘তোমরা ধীরে সুস্থে লিখ আবিদ শাহরিয়ার স্যার দশমিনিট নিয়েছিল বলে এক্সট্রা দশমিনিট সময় দিয়েছে। নিদ্বিধায় লিখতে থাকো কেউ কিছু ছাড়বে না।’
প্রিয়দর্শিনী আর সরণি যেন হাপঁ ছেড়ে বাচে। তাদের এখনো প্যারাগ্রাফ লেখা হয়নি। প্যারাগ্রাফ কমন পড়ায় প্রিয়দর্শিনী দ্রুত লিখতে শুরু করে। সরণি আড়াল থেকে প্রিয়দর্শিনীকে কপি করে। প্রিয়দর্শিনী সবটা বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলেনা। পরীক্ষার হলে কেউ না পারলে যথাসম্ভব সাহায্য করা উচিত।এইটা তাকে তার বাবা আশরাফ মুহতাসিম শিখিয়েছেন।
| আশরাফ মুহতাসিম হচ্ছে জিলার প্রিন্সিপাল। স’ম্মা’ন, আদর্শ,ন্যা’য়,নীতি তার কাছে ভিষণ প্রিয়। প্রিয়দর্শিনী বাবার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলেছে। প্রিয়দর্শিনীর মা প্রিয়তা বেগম একজন গৃহিনী। প্রিয়দর্শিনীর বড় বোন নিদ্রিতা প্রজ্জ্বলিনী। প্রজ্জ্বলিনীর বিয়ে হয়ে গেছে। বাবা-মা,বোন নিয়েই প্রিয়দর্শিনীর ছোট্ট পৃথিবী |
পরীক্ষা শেষে তিন’তলা থেকে নামতে মাঠে ম্যাজিস্ট্রেটের দু’তিনটা গাড়ি দেখতে পায়। গাড়ি গুলো কেমন ইউনিক দেখলেই বোঝা যায় এগুলো কোন শিক্ষা ক্যাডার ম্যাজিস্ট্রেটের। প্রিয়দর্শিনী বান্ধুবী সহ গেটের কাছে এগিয়ে যায়। সে’সময় গার্ডসহ আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী বেরিয়ে আসে। যাওয়ার আগে গাড়ির কাচ খুলে প্রিয়দর্শিনীর চোখের দিকে চাইতে ভুলল না।
সে’দিনের পর সপ্তাদশী কিশোরীর মনের এক অংশে দা’গ কে’টে যায় আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী। কয়েক সেকেন্ডের সেই দৃষ্টি আজও তাড়া করে বেড়ায় তাকে। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী নামটাকে সন্তপনে লুকিয়ে রেখেছিল মনের এক কোণে। তবে আরো একটা ব্লা’ন্ডা’র ঘটেছিল। পুরো কলেজে হ’ই’চ’ই ফেলে দিয়েছিল প্রিয়দর্শিনী শুধু শুধু ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে বকা খেয়েছে। কেউ কেউ এটা বলে মজা করতো ম্যাজিস্ট্রেট আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী প্রিয়দর্শিনীর প্রতি ইন্টারেস্টেড ছিল। সেই’সময় ব্রাইট স্টুডেন্ট হয়েও প্রিয়দর্শিনী ফেন্ড’স সার্কেলে মজার পাত্রি বনে গেছিলো। প্রিয়দর্শিনী মৃদু রাগ দেখিয়ে ফেন্ড’সদের মজা করতে নিষেধ করতো। এজন্য আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর উপর রাগ করেছিল একটু। কিন্তু মুগ্ধতায় সবটা ভুলে গেছে। প্রিয়দর্শিনীর কাছে আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে প্রহেলিকা মনে হয়। সেই ঘটনার পর একবছর কোন খোঁজ পায়নি আবিদ শাহরিয়ারের। একবছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। সেই সপ্তাদশী কিশোরী এখন অষ্টাদশী। অষ্টাদশী প্রিয়দর্শিনী এখন ঢাবিতে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। তার মনের অন্দরমহলে পৌঁছনো আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে সে প্রায় ভুলতে বসেছিল। আজ হঠাৎ হবু পাত্র হিসাবে আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীকে দেখবে ভাবতে পারেনি। তার মনের কোনে একটা প্রশ্ন জমাট বেধে রইল লোকটা কি মনে রেখেছিল তাকে?
প্রিয়দর্শিনীদের বংশে একটা রীতি আছে। মেয়ে সপ্তাদশী, অষ্টাদশী হলেই তোড়জোড় করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। যেহেতু প্রিয়দর্শিনী অষ্টাদশী তাই পাত্র দেখা হচ্ছে। তাদের বংশের প্রত্যেকটা মেয়ে সুন্দরী। আশরাফ সাহেবের দুই মেয়ে প্রজ্জ্বলিনী, প্রিয়দর্শিনী যেন সবাইকে ছাড়িয়ে। কিন্তু প্রিয়দর্শিনী আলাদা ছিল যাকে বলে চোখ ধাধাঁনো আ’গু’ন সুন্দরী। কম বিয়ের প্র’স্তা’ব আসেনি। আশরাফ সাহেব সবাইকে ছোট বলে না করতে হাপিয়ে উঠেছিল। রীতিনীতি হিসাবে তাদের বংশের বয়জেষ্ঠদের ধারণা সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে দিলে তাদের গায়ে বি’প’দের আচঁ আসতে পারে না। তাদেরকে সব রকম বিপদ থেকে রক্ষা করেন স্বয়ং স্বামী। সবার পরামর্শতেই প্রিয়দর্শিনীর জন্য পাত্র দেখা শুরু হয়। শুরুতেই এতো ভালো স’ম্ভ্রা’ন্ত পরিবার থেকে সমন্ধ আসে আশরাফ সাহেব চেয়েও না করতে পারেনি। অবশেষে দিন ক্ষণ ঠিক করে তারা মেয়ে দেখতে আসে। সেখানে পাত্রের জায়গায় সেই ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখে প্রচন্ড বি’স্মি’ত হয় প্রিয়দর্শিনী। একবছর পরেও লোকটির সৌন্দর্য একটুও কমেনি বরং আরো সুদর্শন লাগছে। সেদিন দশমিনিট এক্সট্রা সুযোগ করে দেওয়ায় একটা ধন্যবাদ প্রাপ্য ছিল আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর। কিন্তু কখনো দেওয়ার সুযোগ পায়নি প্রিয়দর্শিনী। সেদিনের পর তো কখনো দেখা হয়নি,
আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর সঙ্গে তার মা অনুসা বেগম, বাবা শাহরিয়ার চৌধুরী সঙ্গে আরো দু’জন ছেলে দু’জন মেয়ে এসেছে। যাদের চোখ প্রিয়দর্শিনীতেই আটকে। প্রজ্জ্বলিনী যখন দোতলা থেকে প্রিয়দর্শিনীকে নামাচ্ছিল দুজন পুরুষের চোখ ত’ব্দা খেয়ে গেছিলো। পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য যেন প্রিয়দর্শিনীর কাছে ধরা দিয়েছে। অন্যদিকে আবিদ প্রথম থেকে স্থির পল্লবে প্রিয়দর্শিনীকে দেখেছে। তার সু’ক্ষ্ম হাসিতে যেন রহস্যের গন্ধ পাওয়া যায়।
শাহরিয়ার চৌধুরী স্ত্রী অনুসা বেগম, বড় ছেলে আরহান শাহরিয়ার তার ওয়াইফ পুস্পিতা। মেজো ছেলে আবিদ শাহরিয়ার, আবিদের ছোট ভাই আসফি শাহরিয়ার এবং পরিবারের ছোট্ট সদস্য আদিবা জান্নাতের পরিচয় করিয়ে দিলেন। আদিবা হচ্ছে আবিদের ছোটবোন। আদিবা প্রিয়দর্শিনীর সমবয়সী।
আশরাফ সাহেব সহাস্যে দুই মেয়ে প্রজ্জ্বলিনী, প্রিয়দর্শিনী , স্ত্রী প্রিয়মা বেগম, বড় মেয়ের জামাই উজান মাহতাব চৌধুরী, প্রিয়দর্শিনীর দাদা ষার্টাধ্ব আহমেদ মুহতাসিমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। প্রজ্জ্বলিনী আর উজান মুলত আজকেই এসেছে। প্রিয়দর্শিনীর দাদা আহমেদ মুহতাসিনকে প্রিয় নাতনিকে দেখতে আসবে বলে আনা হয়েছে।
শহর থেকে একটু দুরে গ্রাম সাইডে প্রিয়দর্শিনীর দাদার বাড়ি। পুরোনো আমলের বিশাল জমিদার বাড়ি। কয়েকজন কাজের লোক, আর আহমেদ মুহতাসিম সেখানেই থাকে। প্রিয়দর্শিনীর দাদি মারা যাওয়া দু’বছর পার হবার পর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি। কিন্তু প্রিয় নাতনির টানে ঠিকই এসেছেন। প্রজ্জ্বলিনীর বিয়ের তিনবছর হয়েছে। প্রজ্জ্বলিনী দু’মাসের অন্তসত্ত্বা। প্রিয়দর্শিনীর দাদি উজানকে দেখে গেছেন। কিন্তু প্রিয়দর্শিনীর পাত্র দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাই আহমেদ মুহতাসিম দেরী না করে চলে এসেছেন। প্রিয় নাতনি প্রিয়দর্শিনীর পাত্রকে দেখে যেতে পারলেই মরেও শান্তি পাবেন। তারা কথা এগিয়ে নেবার আগে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করে নিলেন। এতে দুইপরিবারের উৎকণ্ঠা সহসা কমে যায়। তবেই তো সহজভাবে ছেলে মেয়েদের ব্যপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
–
–
ড্রয়িংরুমে পিনপতন নিরাবতা বিরাজমান। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর এক কথাতেই ড্রয়িং রুম নিঃশব্দতায় ছেয়ে গেছে। আশরাফ সাহেব স্বপরিবার সমেত নিঃশব্দ। প্রিয়দর্শিনীর বুকে আছড়ে পড়া হঠাৎ ভালো লাগা দু’ম’ড়ে মু’চ’ড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ‘বিয়ের পাত্র আবিদ শাহরিয়ার নয় তার ছোট ভাই আসফি শাহরিয়ার’ এই কথাটুকু তার ছোট খাটো হৃদয়ে তু’ফা’ন তুলে ছেড়েছে।
অষ্টাদশী প্রিয়দর্শিনী একবছর আগে যাকে হৃদয়ে জাইগা দিয়েছিল তাকে হুট করে খুজেঁ পাবে ভাবতেও পারেনি। সেখানে পাত্রের জাইগায় সেই মানুষটাকে দেখে অদ্ভুত অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা ভেঙে যেতে সময় নেয়নি। প্রিয়দর্শিনীর ভিতর ভিতর তীব্র ঝড়ের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। হৃদয়ে জায়গা তৈরি করে নেওয়া আবিদ শাহরিয়ার পাত্র হলে কি এমন ক্ষ’তি হতো। এভাবে অষ্টাদশীর আকাঙ্ক্ষাকে ভে’ঙে চুরমার করে কষ্ট দেওয়ার মানে কি। সে কি এতটাই অ’সুন্দর,এতটাই তুচ্ছ? আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরীর স্ত্রী হবার যো’গ্য না?
পাত্র পক্ষের এহেম কথায় আশরাফ সাহেব ভাবান্তর। আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী বি’স্ফো’র’ণ ঘটিয়ে মুখে কু’লু’প এটে রয়েছে। শাহরিয়ার চৌধুরী ত’ট’স্থ হয়ে বিষয়টিকে স্বাভাবিক করতে বললেন,
‘আমার ছোট ছেলে একটা আইটি কম্পানির ম্যানেজার। বড় ছেলের মতিগতি ঠিক নেই নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ফোকাস’ড। তাকে চেয়েও বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারিনি। তাই ছোট ছেলের জন্যই পাত্রি দেখছি। আসফি আবিদের চেয়ে দু’বছরের চেয়ে ছোট। আপনাদের কথা শুনে মনে হয়েছিল আপনারা সবটা জানেন পাত্রের সমন্ধে। তবে আ’ক’স্মি’ক অবাক হওয়ার কি কোন কারণ আছে?’
আশরাফ সাহেব প্রচন্ড অসস্থিতে পড়ে গেলেন। তাকে খবর দেওয়া হয়েছিল আবির শাহরিয়ার চৌধুরী সম্পর্কে। তার মেয়েকে ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে আসবেন পাত্রের পেশা ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়েছে। আবিদ শাহরিয়ার সম্পর্কে তিনি খুব ভালো করে জানেন। জিলাতে এসেছিল অনেকবার। ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে পারফেক্ট আবিদ শাহরিয়ার।মেয়ে জামাই হিসাবে দূর্দান্ত হবে ভেবে তিনি রাজি হয়েছিলেন মেয়েকে দেখাতে। এখন সবকিছু এইভাবে চেন্জ হয়ে যাবে ক’ষ্মি’নকালেও ভাবেননি। আসফিকে তাদের অপছন্দ হয়নি ছেলেটা ভদ্র,সভ্য,উজ্জ্বল ফর্সা, সুদশর্ন । আইটি কম্পানিতে ম্যানেজার জবটাও খারাপ না। কিন্তু তাকে বি’ভ্রা’ন্ত করা হয়েছে তিনি এখন কি করে সিদ্ধান্ত নিবেন। সম্পর্কের শুরুতেই বি’ভ্রা’ন্তিতে কোন বাবা মা পড়তে চায়? তার একমাত্র আদরের মেয়ের ক্ষেত্রে মুহুর্তে তিনি সিদ্ধান্ত কিভাবে নেবেন। তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন শাহরিয়ার চৌধুরীর উদ্দেশ্যে।
শাহরিয়ার সাহেব সবটা শুনে অবাক হয়ে বললেন,
‘আমরা ঘটককে ছোট ছেলে সম্পর্কেই বলেছি। আমার মনে হয় কোথাও কোন ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আমাদের মেজো ছেলে সম্পর্কে কেনো জানালো একটু খোঁজ নিতে চায়।আমাদের আজকে যাওয়ার অনুমতি দিন আমরা সবটা জেনে ক্লিয়ার করে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাবো এবং মতামত শুনে নিবো।’
আবিদ শাহরিয়ার চৌধুরী পরিবার সমেত চলে গেলেন। যাওয়ার আগে প্রিয়দর্শিনীর দিকে তাকাতে ভুলল না। প্রিয়দর্শিনী কি করবে বুঝতে পারছে না। পাত্রের জাইগায় আবিদকে দেখে তার বি’স্ম’য় ভাব থাকলেও সে রাজি ছিল। সম্পর্কের শুরুতেই গোলমাল বেধে সবকিছু উলোটপালোট হবে ক’স্মি’নকালে ভাবেনি। আবিদ শাহরিয়ারের চোখ যেনো কিছু না বলেও অনেক কিছু বলে গেলো। এ কেমন প্রহেলিকা?
তার ভয় হচ্ছে আসফি শাহরিয়ার যথেষ্ট সুদর্শন,ভালো জব করে। তার বাবা-মা রাজি হয়ে গেলে কিভাবে আবিদকে ছেড়ে বিয়ে করবে? একি বাড়িতে আবিদ শাহরিয়ার,প্রিয়দর্শিনী থাকবে অথচ সম্পর্ক আলাদা থাকবে। আবিদের চোখের সামনে অন্য কারো সঙ্গে সংসার কিভাবে করবে প্রিয়দর্শিনী? তার পক্ষে সম্ভব না। আবিদ শাহরিয়ার কি তাকে একটুও পছন্দ করে না? কেনো বললো না ‘আসফি নয় আমি প্রিয়দর্শিনীকে বিয়ে করতে চাই’। তবে কি অষ্টাদশী আবিদের সু’ক্ষ্ম হাসির ভুল মানে বের করেছে। আবিদ শাহরিয়ারের মতো ক’ঠি’ন ব্যক্তিত্বের মানুষ তাকে নয় অন্য কাউকে পছন্দ করে। এটা ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে। বাড়ির সকলে যেখানে আলোচনায় ব্য’স্ত। এদিকে প্রিয়দর্শিনীর চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোটা পানি গড়িয়ে পড়ল। নিজেকে সামলে ভ’গ্ন হৃদয় নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শব্দ করে কান্না করে দেয় প্রিয়দর্শিনী।
~ চলবে
|