প্রিয়তার প্রহর পর্ব-১৩

0
708

#প্রিয়তার_প্রহর
পর্ব সংখ্যা (১৩)
লেখনীতেঃ #বৃষ্টি_শেখ

বৃষ্টি কেটে গেছে। কিছুটা উজ্জলতার ভাব দেখা দিয়েছে আকাশে। পাখিদের গুঞ্জনে আচ্ছাদিত হয়েছে শহর। নিকষ কালো আঁধার কেটে গিয়ে দিনের উজ্জলতা ফুটে উঠেছে নিবিড়ভাবে। হু হু করে শীতল বাতাসে শিরশির করছে প্রিয়তার মোলায়েম দেহ। ছোট ছোট চুলগুলো বি রক্ত করছে বারংবার। খরস্রোতা নদীর মতো বয়ে যাচ্ছে শিহরণ। হলদে আভায় মুখের পাশ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে।

প্রিয়তা আরো নিবিড়ভাবে শালটা জড়িয়ে নিল। চুলগুলোকে কানের পেছনে গুঁজে নিল। জ্বরের কারণে ঠান্ডা একটু বেশিই লাগছে প্রিয়তার। উষ্ণতায় ছেয়ে আছে দেহ। অথচ প্রিয়তার মনে হচ্ছে তার শরীর বরফের ন্যায় জমে যাচ্ছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে মাঠের দিকে তাকাল প্রিয়তা। এখন এই বিকেলটাতে আরহাম থাকলে মাঠে গিয়ে খেলতো। গায়ে বড়সড় শার্ট পরে, মিষ্টি হেসে আরহামকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে কেমন লাগতো? কল্পনা করল প্রিয়তা। চোখ বুজে আরহামকে অনুভব করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাল। হঠাৎ এক মৃদু শব্দে চোখ মেলল প্রিয়তা। শব্দের উৎস খুঁজতে উপরে তাকাল। প্রহরকে দেখে খানিক ভড়কাল সে। প্রিয়তা সেইভাবে বেলকনিতে আসে না। সে জানতো না এই বেলকনির উপরেই প্রহরের বেলকনি। উপরের ভবনেও বেলকনি আছে এটাও খেয়াল করেনি। আশ্চর্যভাবে প্রহরের চোখে চোখ পরল প্রিয়তার। ছেলেটার হাতে একটি কাপ। বোধহয় কফি বা চা খাচ্ছে প্রহর। প্রিয়তাকে দেখে মোটেও অবাক হলো না প্রহর। স্লান হেসে শান্ত কণ্ঠে বললো,

” কেমন আছেন প্রিয়তা? ঔষধ খেয়েছিলেন তো?

” খেয়েছি।

” নিজের যত্ন নিবেন।

” হুহ।

” প্রিয়তা।

” হুহ্।

” এদিকে তাকান।

প্রিয়তা খানিক অপ্রস্তুত হলো। তাকাবে কি তাকাবে না ভাবতে লাগল। চুলগুলোকে শুধু শুধু কানে গুঁজে নিল। মাথা উঁচু করে উপরে তাকাল একটু সময় নিয়ে। বললো,

” বলুন শুনছি।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রহর বলতে আরম্ভ করলো,

” প্রিয়তা আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনি যেদিন আপনার বাড়ি থেকে চলে এলেন বাবা-মাকে ছেড়ে, সেদিনের মতো শক্ত হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না আপনি ছাড়া আরহামের আর কেউ নেই। আরহাম বাচ্চা ছেলে। একটু আদর পেয়েই বাবার কাছে চলে গিয়েছে। তাই বলে আপনি কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পরবেন? এতে কি কোন সমস্যার সমাধান হবে? আপনাকে শক্ত হতে হবে। নিজেকে নিয়ে ভাবতে হবে। তবেই আপনি আপনার ভাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন।

প্রিয়তার চোখে পানি জমল। ওষ্ঠদ্বয় দ্বারা ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল প্রিয়তা। বেলকনির রেলিং ধরে নিজেকে দমানোর চেষ্টা করল প্রিয়তা। সমস্ত ভর প্রয়োগ করলো রেলিংয়ে। প্রহরের ললাটে ভাঁজ পরল। প্রিয়তার অস্বাভাবিক আচরণে চিন্তিত হলো। চিন্তিত কণ্ঠে ততক্ষণাৎ জিজ্ঞেস করলো,

” আপনি ঠিক আছেন?

: উঁহু ।

” কষ্ট হচ্ছে?

” খুব।

” আমি আসবো প্রিয়তা? প্রয়োজন হবে?

প্রিয়তা অশ্রুসজল চোখে তাকাল প্রহরের দিকে। কথাটুকু বলে প্রহর বিব্রত হলো। ভড়কাল খানিক। নিজের কথার মানে বুঝতে পেরে নিজেই জিভ কাটল। আশপাশে তাকিয়ে কথা কাটাতে চাইল। প্রিয়তা অপলক চেয়ে রইল প্রহরের পানে। ঢোক গিলল সে। বিভ্রান্তিতে চোখ মুখ নত হলো। প্রহর হাসল নিঃশব্দে। মাথা চুলকে প্রস্থান করল। প্রিয়তার নত মুখের মায়ায় আটকে গেল বোধহয়।

__________________

সোফায় বসে ফোনে গেইম খেলছে আরহাম। রাত আটটা বেজে ঊনপঞ্চাশ মিনিট। আরিফ হোসাইন অফিস থেকে ফিরেনি। দীপা আর আরহাম ছাড়া বর্তমানে বাড়িতে কেউ নেই। গতকাল এখানে এসেছে আরহাম। এতক্ষণ অবধি সবকিছু ঠিকঠাক লাগছে তার কাছে। তবে প্রিয়তার নম্বর খুঁজে পাচ্ছে না আরিফ কিংবা দীপার ফোনে। এ বিষয়টা নিয়ে বেজায় রেগে আছে আরহাম। প্রিয়তার জন্য চিন্তা হচ্ছে আরহামের। কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে বোনের সাথে। কিন্তু প্রিয়তার নম্বর মুখস্থ নেই তার। কি করে কথা বলবে বোনের সাথে?

আরহাম ড্রয়িংরুমে এলো। গায়ে ছেলেটার ঢিলেঢালা গেঞ্জি। পরণে হাফ প্যান্ট। ঠান্ডায় নাকটুকু লাল হয়ে আছে আরহামের। আরহামের বড় বড় গোলাকার চোখ দুটোতে নিদারুন মায়া রয়েছে। ছোট ছোট পা ফেলে দীপার পাশের চেয়ারটায় বসল আরহাম। কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। অতঃপর আরিফের রেখে যাওয়া ফোনটা বাড়িয়ে দিল দীপার দিকে। দীপা ভ্রু কুঁচকে তাকাল ফোনটার দিকে। জিজ্ঞেস করলো,

” কি করবো ?

” আপুর নম্বর কই? খুঁজে দাও তো।

“তোমার বোনের নম্বর এ ফোনে নেই। বিরক্তির সাথে বেল উঠল দীপা।

” থাকবে না কেন? আপুর সাথে তো আব্বুর আগে কথা হতো। আব্বুর ফোনে মেয়ের নম্বর থাকবে না?

আরহামের পাকা পাকা কথায় বিরক্ত হলো দীপা। প্রিয়তার কান্নারত মুখ দেখার জন্যই ছেলেটাকে এখানে আনতে রাজি হয়েছে সে। আরিফের ছেলে সন্তানের প্রতি একটু আধটু মায়া আছে। প্রিয়তাকে বিয়ে দিয়ে অন্তত আরহামকে নিজের কাছে রাখতে চাইতো আরিফ। দীপা কখনোই স্বামীর সাথে সন্তানদের চাইতো না। পরের ছেলে-মেয়েকে পেলে বড় করার মতো ঝামেলা নিতে চায়নি দীপা। দীপার প্রেমে অন্ধ হয়ে আরিফ ও ছেলেমেয়েকে হারাতে দ্বিধা বোধ করেনি। একটু রেগেই দীপা বললো,

” তোর বোনের প্রতি এতই যদি মায়া থাকে তাহলে আসলি কেন এখানে? তোর বোনকে কোনোদিন এখানে আনা হবে না। কথাও হবে না।

” কি বলছো? এমন ভাবে কথা বলছো কেন?

দীপা আরো রাগল। এইভাবে গোটা দুদিন ধরে অভিনয় করছে আরিফের জন্য। ছেলেটা যথেষ্ট সুন্দর আর শান্ত। তবে পরের ছেলের জন্য তেমন টান নেই দীপার। সতীনের ছেলেকে দেখলেই গা জ্বলে উঠে আচমকা। একটু ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল আরহামকে। বললো,

” যা ঘরে যা। যত্তসব ন্যাকামি। বোনের জন্য দরদ উতলে পরছে। চলে যা না রে বাপ।

আরহামের ওষ্ঠদ্বয় ফুলে উঠল। কেঁদে উঠল ছেলেটা। দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
” আব্বু এলে আমি সব বলে দিবো তুমি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছো।

” যা বলিস গিয়ে।

আরহাম চলে এলো। দীপা টিভি দেখায় ব্যস্ত হলো। আরিফের সম্পত্তির অভাব নেই। এই দুটো ভাইবোন থাকলে দীপার ভবিষ্যতে জন্ম নেওয়া সন্তানরা সম্পতির ভাগ কম পাবে। দুজন ভাগ বসাবে আরিফের সম্পত্তিতে। আরহাম ছোট ছেলে। টাকা পয়সা কিংবা সম্পত্তি সম্পর্কে ধারণা নেই। কিন্তু প্রিয়তা মেয়েটা চালাক। যখন তখন বাবার সম্পত্তি দাবি করতে পারে। এটা কি হতে দেওয়া যায়। নিজের ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত তো ভাবতে হবে দীপাকে। নইলে অবিবাহিত হয়েও বিবাহিত, সেকেন্ড হ্যান্ড দামড়া লোককে বিয়ে করতো?

___

আরিফ বাড়ি ফিরল রাত দশটার পরে। আরহাম না ঘুমিয়ে বসে ছিল। আরিফ বাসায় আসার সাথে সাথে এগিয়ে গেল আরহাম। মলিন মুখে বিচার দিল। বললো,

” আব্বু আন্টি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। জানো আমাকে ধাক্কা দিয়েছে আন্টিটা। আমি ব্যথা পেয়েছি।

আরিফ হোসাইন প্রস্তুত ছিল এসবের জন্য। অনেক তোষামোদ করে দীপাকে রাজি করিয়ে আরহামকে এখানে এনেছে সে। আরিফ জানে দীপা কোনমতেই ছেলের মতো ট্রিট করবে না আরহামকে। তবুও রক্তের টানের কারণে ছেলেটাকে কাছে রাখতে চেয়েছে আরিফ।

অফিস ব্যাগটি পাশের টেবিলে রেখে টাই খুলতে খুলতে আরিফ বললো,

” তুমি হয়তো কোনো দুষ্টুমি করেছো। তাই তো বকেছে। বড় রা ওইভাবে বকেই।

” আমি কোন দুষ্টুমি করিনি আব্বু। আপুর নম্বরটা খুঁজে দিতে বলেছি শুধু। আপুকেও তো কত জ্বালাই আমি। কই আপু তো আমাকে বকে না।

আরিফ হোসাইন ভড়কে গেল। নিজের যুক্তিটাকে উপযুক্ত হয়নি বুঝে দমে গেল। বলল,

” আমি আন্টিকে বকে দিবো।

খাবার গরম করছিল দীপা। আরহামের বিচার দেওয়া দেখে চোখ গরম করে তাকাল। রাগী কণ্ঠে বললো,

” এই ছেলেটাকে সরাও সামনে থেকে। সারাদিন জ্বালায় আমায়। এটা ওটা ভেঙে ফেলে। আমি কিন্তু ওকে সামলাতে পারবো না বলে দিলাম।

আরহাম দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করলো। বললো,
” আমি কখন কি ভাঙলাম? মিথ্যে বলছো কেন?

দীপা রাগল। বল প্রয়োগ করে কষিয়ে চড় মারল আরহামের ফর্সা, নরম ডান গালে। আরহাম হতবাক হলো। ব্যথায় জ্বলে উঠল মশ্রীন গাল। কেঁদে উঠল ততক্ষণাৎ। ফুঁপিয়ে উঠল। পানিতে টইটম্বুর চোখ আর ভেজা গলায় আরিফের পা জড়িয়ে বললো,

” আব্বু। আমাকে মারল আন্টি। খুব পচা ও।

আরিফ হোসাইন চোখ গরম করে তাকাল দীপার দিকে। দীপা তা দেখেও না দেখার ভান করে নিজেও রেগে বললো,

” ছেলের হয়ে এত মায়া দেখাতে আসবে না খবরদার। একে তুমি দিয়ে আসবে। নইলে আমি রাগারাগি করলে, মারলে কিছু বলতে আসবে না।

আরিফ হোসাইন ছেলেকে কোলে নিল। গাল দুটো মুছে দিল। একটু মোলায়েম, শান্ত কণ্ঠে বললো,

” সবসময় শান্ত থাকবে তাহলে আর কিছু বলবে না আন্টি। দুষ্টুমি করবে না। বড়রা ভালোর জন্য বকে। আর আন্টি নয়, ও তোমার নতুন আম্মু। মনে থাকবে?

আরহাম অপলক চেয়ে রইল আরিফের দিকে। কান্না থেমে গেল তার। অবাক হয়ে বিড়বিড় করে অস্ফুট কণ্ঠে বললো,

” এটা আম্মু?

_________________

সকাল সকাল প্রিয়তার ঘুম ভাঙল ফোনের রিংটোনে। ভোরের দিকে চোখটা লেগে এসেছিল তার। জ্বর, ঠান্ডা আর মাথা ব্যথায় সারারাত হাঁসফাঁস করেছে সে। ঘুমোতে ইচ্ছে হলেও ঘুমোতে পারেনি। ফোনের কর্কশ রিংটোনে ধীরে ধীরে চোখ মেলল প্রিয়তা। গতকাল পুলিশম্যান তাকে জোর করে ফার্মেসিতে নিয়ে গিয়েছিল। ডাক্তার চেক করে দেখেছে প্রিয়তার জ্বর একশত তিন ডিগ্রি। শরীর দুর্বল। রক্তশূন্যতা জাপটে আছে প্রিয়তার শিরা উপশিরায়। ভিটামিন আর কিছু ঔষধ খেতে দিয়েছে ডাক্তার। সব কিছুর বিল মিটিয়েছে প্রহর। বাড়ি ফিরিয়ে এনেছে। আসার সময় একটা হোটেল খেতে কাচ্চি কিনে দিয়েছে। প্রিয়তা নিতে চায়নি। জোর করে ধমকে ধামকে প্রিয়তাকে গাড়িতেই খাইয়েছে খাবারটুকু। অতঃপর ঔষধ খাইয়ে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে।

প্রিয়তা ফোন তুললো কানে। ওপাশ থেকে বাচ্চা কণ্ঠের ডাক শুনলো,

“আপু। ও আপু।

প্রিয়তা হকচকিয়ে গেল। উঠে দাঁড়াল বিছানা থেকে। শীতল স্রোত বয়ে গেল প্রিয়তার শরীরে। কান্না পেল খুব। দু দিন পর ভাইয়ের এমন আদুরে ডাকে বাকরুদ্ধ হলো প্রিয়তা। ঢুকরে কেঁদে উঠল। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে উত্তর নিল,

‘ আরহাম। কেমন আছো ভাই?

আরহাম চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। প্রিয়তার চিন্তা বাড়ল। পুনরায় জিজ্ঞেস করায় আরহাম বললো,

” আমি এখানে থাকবো না আপু। আমাকে নিয়ে যাও। নতুন আম্মু ভালো না। আব্বু নতুন আম্মুকে বকে না।

” চুপ একদম চুপ। তোমার মা নেই। কাকে মা বলছো? ওই মহিলা তোমার মা না। আমি এক্ষুণি আসছি তোমাকে নিতে। রেগে বললো প্রিয়তা।

কল কাটল আরহাম। আরিফ হোসাইন অফিসে যাবে তখনই আরহামের আগমন ঘটে তার ঘরে। আবদার করে প্রিয়তার সাথে কথা বলার জন্য। প্রথমে আরিফ রাজি না হলেও বারবার আবদার করায় ফোন দিয়েছে প্রিয়তাকে। চলে যাওয়ার কথা বলায় আরিফ ধমক দিল একটু। বললো,

” যাবে কেন আরহাম? প্রিয়তাকে এসব বললে কেন? এখন তো তোমাকে নিয়ে যাবে ও।

” আপু আমার জন্য কষ্ট পায় আব্বু। আমাকে ছাড়া আপু ভালো নেই। আমি চলে যাবো। নতুন আম্মু তোমার সাথে আছে। আপুর তো কেউ নাই।

___

প্রিয়তা ঝটপট ব্রাশ করে প্রহরকে কল দিল।আরহামের বলা কথাগুলো বললো। দুজনে ও বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিল। প্রহর ভালো একটি শার্ট জড়িয়ে নিল গায়ে। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে হাঁক ছাড়ল। মিসেস নাবিলাকে ডেকে বললো,

” আমি একটু বের হবো মা।

মিসেস নাবিলা রান্না করছিলেন। প্রহরের থানায় যেতে হয় দশটায়। এখন বাজে মাত্র আটটা। এখন বের হওয়ার কারণ খুঁজলেন তিনি। জিজ্ঞেস করলেন,

” এত সকালে কেন? তোর না দশটায় যাওয়ার কথা? আমার রান্নাবান্না তো শেষই হয়নি।

প্রহর সবটা খুলে বললো মা কে। মিসেস নাবিলা সবটা শুনে একটু দুঃখ পেলেন। মেয়েটার এতসব স্যাক্রিফাইজের কথা ভেবে মায়া হলো উনার। প্রহর বের হবার পথে মিসেস নাবিলা প্রহরের সামনে এসে দাঁড়ালেন। গম্ভীর মুখে বললেন,

” প্রিয়তা মেয়েটাকে আমার ভালোই লাগে। মেয়েটার দুঃখ- কষ্ট অনেক। অনেক সংগ্রাম করে যাচ্ছে প্রিয়তা। মেয়েটার জন্য আমার খুব মায়া হয়। আমি সবসময় চাই প্রিয়তা আর ওর ভাই ভালো থাকুক। তবে কি জানিস? তোর কাণ্ড কারখানা আমার কাছে স্বাভাবিক ঠেকছে না প্রহর। আজকাল প্রিয়তার সাথে তুই একটু বেশিই যোগাযোগ রাখছিস। ওর সাথে তোর কোনো রকম সম্পর্ক হোক আমি চাই না। তুই বলতে পারিস প্রিয়তা তোর বন্ধু। কিন্তু বন্ধুত্ব থেকেই প্রেম-ভালোবাসা জন্মে। ভালোবাসা কখন কার জন্য জাগ্রত হয় তা কেউ বলতে পারে না। মনে রাখিস আমি এই সম্পর্ক কোনোদিন মানবো না। তোর বাবাও বাবা-মা ছাড়া এতিম একটা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে মানবে না। তাই বলবো ভেবেচিন্তে করিস সবকিছু। ও পথে পা বাড়াস না।

প্রহর কিছু বলতে চাইল। হাত দিয়ে আটকে দিলেন মিসেস নাবিলা। বললেন,

“যা আরহামকে নিয়ে আয়।

__

সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরহাম। প্রিয়তার আসার অপেক্ষা করছে। এখানে থাকার চেয়ে না থাকাই ভালো। আরিফ অনেক বদলে গেছে। নতুন আম্মুও ভালো নয়। প্রিয়তা আগেই বলেছিল এ বাড়িতে আসার কথা না ভাবতে। কিন্তু এতদিন পর আব্বুকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিল আরহাম। কোনো কিছু না ভেবেই চলে এসেছিল এখানে।

প্রহরের গাড়ি এসে থামল প্রিয়তার বাড়ির সামনে। আরহাম দুর থেকে অবলোকন করল। অবয়ব খানিক স্পষ্ট হতেই দরজা ঠেলে ছুটে এলো প্রিয়তার সামনে। প্রিয়তা আরহামকে দেখে জড়িয়ে ধরলো। দু হাতের ভড় দিয়ে ছেলেটাকে কোলে তুলে নিল। ভাইয়ের গালে অজস্র চুমু খেল প্রিয়তা। এ দুটো দিন প্রিয়তার কাছে দু বছরের মতো মনে হয়েছে। ভাইকে ছাড়া ঘরটা ফাঁকা ফাকা লেগেছে। ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে প্রিয়তা বললো,

” তুমি চলে এসেছিলে কেন ভাই? আমার কথা একবার ও ভাবোনি কেন?

” আব্বু আমাকে ভালো বাসে না আপু। আমার ভুল হয়েছে।

” এখানে আর থাকতে হবে না তোমাকে। চলো আমার সাথে।

ভাই বোনের এমন মুহুর্ত দেখে মুচকি হাসছিল প্রহর। প্রিয়তার এখান থেকে চলে যাওয়ার কথাটা শুনে গম্ভীর হলো সে।বললো,

” কিছু না বলেই চলে যাবেন? চলুন বাড়িতে ঢোকা যাক।

প্রিয়তা যেতে চাইল না। প্রহর খানিক জোর করেই প্রিয়তাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকল। দীপা খন্দকার অবাক হলো প্রিয়তাকে এ বাড়িতে দেখে। বললো,

” তুমি এখানে কি করতে এসেছো? তুমি নাকি বলেছিলে এ বাড়িতে আর ফিরবে না। তাচ্ছিল্যের স্বর প্রকাশ পেল।

প্রিয়তা রেগে গেল। উচ্চস্বরে বললো,
” আমি এ বাড়িতে এসেছি আমার ভাইকে নিতে। আরহামকে আপনি মেরেছেন তাইনা? কতটা পাষণ্ড আপনি বুঝতে পারছেন? একটা ছোট্ট বাচ্চার গায়ে হাত তুলতে আপনার বিবেকে বাঁধল না? আমার ভাইয়ের গায়ে হাত তোলার সাহস কি করে হলো আপনার?

প্রহর বলে উঠল,
” আন্টি, আমি কিন্তু পুলিশ। চাইলেই আপনাকে একটা বড়সড় কেসে ফাঁসিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আমি তা করবো না। আপনার কর্মের শাস্তি প্রকৃতিই আপনাকে দিবে। আজ এই নিষ্পাপ মানুষদের আপনি যেভাবে কষ্ট দিচ্ছেন ঠিক একইভাবে আপনিও কষ্ট পাবেন। উঁহু এটা আমাদের অভিশাপ নয়। এটা প্রকৃতির নিয়ম।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে