#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২০+২১
বুশরা শুয়ে শুয়ে হুমায়ুনের কথা ভাবছে। উনার কথা তখন সুবিধার মনে হলো না। উনি যদি এই ব্যাপারটা উনার পরিবারকে জানায় তাহলে তো কেলেঙ্কারি কান্ড হয়ে যাবে।
ওখানে জানলে সেটা লুবনা আপুর জন্য ও খারাপ প্রভাব পড়বে, আপুর ওপর খারাপ প্রভাব পড়লে সেটা এখানে ও চলে আসবে। সব মিলিয়ে একটা বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়ে যাবে।
নাহ বুশরা এতকিছু আর ভাবতে পারছে না। এত ভেবে কাজ ও নেই তার থেকে ভালো হুমায়ুন ভাইকে নিষেধ করে দেওয়া এসব নিয়ে আর না ভাবতে।
বুশরা পাশে থেকে ফোনটা নিয়ে হুমায়ুনকে কল দেয়, দুইবার রিং হতেই হুমায়ুন কল রিসিভ করে।
— হ্যাঁ বলো(হুমায়ুন)
— আপনি আমার সাথে আপনি করে কথা বলতেন।(বুশরা)
— এখন আর পারব না, তুমি করেই বলব। এতে তোমার সমস্যা হলে কথা বলতে হবে না তোমার।
— আপনি আমাদের বিষয়ে আপনার পরিবারকে কিছু জানাবেন না।
— আমাদের বিষয় মানে? আমাদের কোন বিষয় কি আদৌ তৈরি হয়েছে বুশরা?
— আমি আপনার সাথে যুক্তি তর্কে যেতে চাই না। আপনাকে শুধু এসব নিয়ে আলোচনা করতে নিষেধ করেছি। আমি চাই না এটার জন্য কোন খারাপ প্রভাব লুবনা আপুর ওপর পড়ুক। এতে আত্মীতার সম্পর্ক খারাপ হবে।
— হুম।
— আমার কথাটা মাথায় রাখবেন। রাখছি এখন…
— হ্যাঁ রাখুন।
হুমায়ুন নিজেই ফোন কেটে দেয়। টেবিলে রাখা চায়ের কাপে ঠোঁট ছুইয়ে আবার টেবিলে রেখে সামনে বসা মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলে-
— দেখেছিস যে মেয়ে তার বোনের সংস্যার আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা ভেবে নিজের পছন্দের মানুষকে বিসর্জন দিতে পারে তাকে আমি কিভাবে হারিয়ে যেতে দেই বল।(হুমায়ুন)
— তুই যেটা ভেবেছিস সেই কাজটা সামলে নে তোর মায়ের সাথে আমি কথা বলব। তোর আর বুশরার দিকটা আমি দেখে নেব। তুই শুধু যে মেয়েকে দেখে এসেছিস সেই মেয়ের বিষয়টা দেখ।(হিমেল)
— হ্যাঁ আমি শনিবারে দেখা করতে বলেছি। ফোনে তো সবকিছু বুঝিয়ে বলা যায় না।
— হ্যাঁ সেটাই দেখা কর। বুশরার বিষয়টা আমি দেখে নেব। তুই যদি ঠিকঠাকভাবে কাজটা করে নিতে পারিস তাহলে সামনে সপ্তাহের মধ্যেই বুশরার সাথে বিয়ে পাকা করে দেব নাকি প্রেম করবি?
— না বুশরা ওয়াইফ হিসেবেই পারফেক্ট।
— আচ্ছা, তাই নাকি।
— সব কয়েকটা বোনই কিন্তু ওয়াইফ হিসেবে পারফেক্ট এই যেমন আমার বউটা।
দুজন চা খেয়ে কথা বলতে বলতে বাসায় চলে যায়। হুমায়ুন হিমেলকে নিষেধ করে দেয় এই বিষয়ে যেন লুবনা না জানে।
__________________________________
“এই যে মহারানী আপনাকে দরজা আটকাতে বলেছে কে?”
মেসেজটা পাওয়া মাত্র প্রিয়তা ফোন রেখে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। ইয়াশ প্যান্টের পকেটে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
— কি হলো?(প্রিয়তা)
— আমার এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে কেন হলো?(ইয়াশ)
— এটা আমার অভ্যাস, আর অপরিচিত যে তাই এরকম করে ফেলেছি।
— আমাদের বাসায় কে থাকে যে এভাবে থাকতে হবে তোকে?
— আপনি থাকেন তো!
— কিহ! থাক তুই আমি চলে যাচ্ছি, কাল থাকে তো আর আসবই না।
— এহ বললেই হলো নাকি!
প্রিয়তা ইয়াশের হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে যেতে না পারলে বাহিরে এসে ইয়াশের পিছনে দাঁড়িয়ে পিঠে মাথা দিয়ে ঠেলে ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে এবার প্রিয়তার কান্ড দেখে ইয়াশ হেসে দেয়।
ভেতরে গিয়েও ইয়াশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
— কি হয়েছে?(প্রিয়তা)
— কিছু না।
— মেয়ে মানুষের মতো গাল ফুলিয়ে আছেন কেন?
— প্রিয়…..
— দেখুন আমি কিন্তু শাড়ি পড়েই আছি চেঞ্জ করি নি।
— তো?
— রাগ দেখানো যাবে না।
— কেন রাগ দেখানো যাবে না?
— অনেক কষ্ট করে শাড়ি পড়ে আছি তাই।
— শাড়ি পড়লে রাগ দেখানো যাবে না এটা কোন আইনে লেখা আছে?
— আমার আইনে লেখা আছে বড় বড় অক্ষরে।
— তাহলে শাড়ি পড়লে রাগ করা যাবে না বুঝলাম, শাড়ি পড়লে কি করতে হবে শুনি?
— শুধু প্রেমভর্তি চোখে দেখে যেতে হবে।
— আচ্ছা তাহলে আয় আমার সাথে।
ইয়াশ প্রিয়তার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে তাকে বিছানায় বসিয়ে দেয়। প্রিয়তা শুধু ইয়াশের কাজ দেখছে চুপচাপ।
ইয়াশ নিজের বুক পকেট থেকে বকুল ফুলের মালা বের করে খুব কাঁচা হাতে প্রিয়তার চুলে গুজে দেয়। তারপর টেবিলের পাশে থেকে চেয়ার টেনে নিয়ে প্রিয়তার সামনাসামনি বসে পড়ে। কি যেন মনে করে বসা থেকে উঠেও দাঁড়ায়। রুমের বাহিরে চলে যায়, প্রিয়তা বুঝতে পারে না কি করছে ইয়াশ!
কিছুক্ষণ পর ইয়াশ ফিরে এসে দরজা লক আটকে দিতেই প্রিয়তার বুকে ধুকপুক করা শুরু করে দেয়। কি করছে ইয়াশ! দরজা কেন আটকে দিল সে! ইয়াশ এগিয়ে এসে প্রিয়তার কপালে একটা টিপ যোগ করে দেয়।
— এবার পারফেক্ট! এখন নয়নে প্রেম প্রেম ভাব চলে এসেছে, দেখে শান্তি পাব।
—
— চুপ করে আছিস যে?
— ঘুমাবেন কখন ইয়াশ ভাই? ভোরবেলা তো আপনার আবার চলে যেতে হবে।( ভয়ে ভয়ে কথাটা বলল প্রিয়তা)
— একরাত না ঘুমালে কিছু হবে না, তোর সাথেই আজকের রাতটা কাটিয়ে দেব হবে না?(প্রিয়তার মুখের অবস্থা দেখে অনেক কষ্টে হাসি আটকে রেখেছে ইয়াশ। সে বুঝতে পেরেছে প্রিয়তা তাকে ভয় পাচ্ছে)
— ন না মানে দেখার সময় তো ফুরিয়ে যাচ্ছে না। আপনার ঘুমের প্রয়োজন কাল তো কাজ আছে আপনার।
— ওসব বিষয় রাখ। আমাকে দেখছিস না কেন বল তো!
— কি দেখব…..
বলতেই ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখে ইয়াশ কালো শার্ট চেঞ্জ করে নি আবার তাকেও শাড়ি চেঞ্জ করতে নিষেধ করেছে। কি চলছে তার মাথায়!
— শুনুন না.….
— হ্যাঁ বলো
— তুমি করে কেন বলছেন?(চোখ বড় বড় করে)
— বউয়ের সাথে কি তুই করে বলা উচিৎ?
— বউউউউ!
— কেন বউ হবি না?
— না মানে এখন এসব কথা কেন ইয়াশ ভাই!
— নেশায় আছি।
— মা মানে! কিসের নেশা?
— তোর নেশা।
— আমি ঘুমোবো ইয়াশ ভাই, অনেক ঘুম পাচ্ছে। আপনিও যান, গিয়ে ঘুমান প্লিজ অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।
— বলেছি তো আজকে ঘুমোবো না আর তুই ও ঘুমাবি না।
—
— কি হলো?
— কিছু না। পাঁচ মিনিট দেখে চলে যান।
— পাঁচ মিনিট দেখলে হবে না।
— কতক্ষণ দেখলে হবে?
— সারাজীবন পার হয়ে গেলেও হয়তো হবে না।
— ভালোবাসি বলেন।
— থাক আসছি।
— না প্লিজ ভালোবাসি বলেন।
— উহু
— একবার প্লিজ।
— অর্ধেকবার ও না।
— অর্ধেকবার বলা যায় নাকি! আপনি একবার বলুন প্লিজ, আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
— বললাম তো সময় আসতে দিতে হবে।
— কিসের সময়?
— ভালোবাসি বলার সময়।
— প্রেমিকরা যা করে সবই তো করছেন শুধু ভালোবাসি বললে কি হবে?
— তেমন তো কিছুই করি নি।
— এই যে বিকেল থেকে রাত অবধি ঘুরলেন আমাকে নিয়ে। আবার খোপায় ফুল গুজে দিলেন। আবদার পূরণ করলেন। একবার শুধু বলে দেন না প্লিজ আপনি আমাকে ভালোবাসেন।
ইয়াশ এবার বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। প্রিয়তাও এসে ইয়াশের সামনে দাঁড়িয়ে যায়।
— কি হলো চলে যাচ্ছেন কেন?
— ঘুম পাচ্ছে।
— ভালোবাসি বলে তারপর যাবেন।
ইয়াশ এবার প্রিয়তার চোখে চোখ রেখে বলে
— আর কিছুদিন অপেক্ষা কর প্রিয়, আমি আমার ভালোবাসার অনুভূতি শুধু আমার বউকে বলব৷ সেই দিনটা আসতে দে প্লিজ। তবে নিশ্চিত থাকতে পারিস আমার ব্যাপারে। আমি তোকে ঠকাবো না।
— হুম।
— আর এই যে দরজা লাগিয়ে দেওয়া দেখে ভয় পাচ্ছিলি না? এই ভয়টা তোর কখনো পেতে হবে না, আমি কাপুরষ নই। তুই আমার সাথে একদম নিরাপদ। হ্যাঁ হয়তো এতরাতে তোর রুমে আসা আমার ঠিক হয় নি, তবুও মন খুব টানছিল। তোকে মন ভরে অনেকক্ষণ দেখতে ইচ্ছে করছিল শুধু এতটুকুই।
— স্যরি।
— ধুর পাগলি স্যরি বলতে হবে না। তুই একটা মেয়ে, ভয় থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে বিয়ের আগে আমি কখনও তোকে ছুয়ে দেখব না। এত বছর আমি তোর বিষয় না জেনেই তোকে ভেবে এসেছি, এখন হয়তো তোর টাও আমি জানি আর আমার টাও তুই জানিস। এজন্য আমি আর দেরি করতে চাই না খুব তাড়াতাড়ি আমি তোকে সম্পূর্ণভাবে নিজের করে নেব।
— ভালোবাসি আপনাকে, খুব বেশি ভালোবাসি। আপনি আপনাকে যতটা ভালোবাসেন তার থেকেও বেশি ভালোবাসি।
— আমি জানি। আচ্ছা শোন এখন ঘুমিয়ে পড়। আমিও যাই সকাল সকাল বের হতে হবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে, সাবধানে যাবেন৷ মাঝে মাঝে প্লিজ ফোন দিবেন।
— সেটা তোকে বলে দিতে হবে না। এখন আসছি, শুভরাত্রি, শুভ্রপরী❤️
— শুভ রাত্রি।
চলবে…………
#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২১
শনিবার বিকেলবেলা-
“প্লিজ আপনি আপনার বাসায় বলবেন আমাকে আপনার পছন্দ হয় নি, আপনি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন না।”
কথাটি শুনে যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তামান্নার। আমতা আমতা করে বলে
— এরকম কেন বলব?
— কারণ আমি একজনকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসি। আমি কিছুতেই মা বাবাকে বলতে পারছি না কারণ তারা আপনাকে পছন্দ করে নিয়েছে। আমি বললে আমি তাদের কাছে খারাপ হয়ে যাব আর আমার কথা কিছুতেই মানবে না।
— এটা তো দেখতে আসার দিনই বলতে পারতেন।
— সবকিছু বলার একটা সময় প্রয়োজন। আপনি যদি আমাকে বিয়ে করেন তাহলে হয়তো আপনার একটা সংসার হবে কিন্তু সেটা আমার সাথে হবে না, বাড়ির বউ হিসেবে সংসারটা করতে হবে আপনার।
— না আমি এরকম সংসার চাই না। আর এমনিতেও আমি বিয়ে করতে চাচ্ছিলাম না। আমার বাবা মা জোর করে রাজি করিয়েছে।
— তাহলে তো হয়েই গেল। আপনি শুধু আপনার বাসায় বিষয়টা জানাবেন, তারা যেন আমার বাসায় না করে দেয় বিয়ের ব্যাপারে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
— আপনি এত সহজে মেনে যাবেন আমি ভাবতেই পারি নি।
— মানবো না কেন যেখানে আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন সেখানে আমি তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে কিভাবে আপনাকে বিয়ে করব বলেন। আমি কারও সম্পর্ক ভাঙতে চাই না, সম্পর্ক গড়তে অনেক কাঠখড় পো°’ড়াতে হয়।
— আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার বিষয়টা এত সুন্দর করে বোঝার জন্য।
— শুভ কামনা আপনাদের জন্য। আমার দায়িত্ব যেটা আমি সেটা পালন করব।
— আমি কৃতজ্ঞ থাকব তবে আপনার কাছে।
— চলুন তাহলে ওঠা যাক।
— হ্যাঁ চলুন।
__________________________________
“ইয়াশ তোর কেমন কাজিন রে?”
সিমির কথাটি শুনে পিছনে তাকায় প্রিয়তা।
— কেন?
— ভর্তির দিন তোর সাথে এসেছিল যে দেখলাম।
— আজকেও আসবে।
— তাই?
— হ্যাঁ
— আচ্ছা শোন না একটা কথা, আমার না ইয়াশকে প্রচন্ড ভালো লাগে বলতে পারিস প্রেমে পড়েছি। আচ্ছা ইয়াশের নম্বরটা কি দিতে পারবি তুই?
— ইয়াশ ভাইয়ার তো গার্লফ্রেন্ড আছে, জানলে খবর খারাপ আছে।
— কি! ইয়াশ সিঙ্গেল না?
— না আগে ছিল, এখন নেই। দেখিস নাই গার্লফ্রেন্ডের খারাপ লাগে বলে বেচারা ফেসবুকে কমেন্ট সেকশন বন্ধ রেখেছে।
— ওহ আচ্ছা তাই তো বলি এই ছেলে হঠাৎ কমেন্ট কেন বন্ধ করে রাখলো। তবে তোর কথা শুনে হৃদয় ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেল।
— আরে ব্যাপার না, কেউ এসে জোড়া লাগিয়ে দেবে। এখন ক্লাসে মনোযোগ দে।
— আর কথা কথা শোন।
— হ্যাঁ বল।
— আজকে আমরা ঘুরতে যাব, যাবি তুই?
— না রে ইয়াশ ভাই নিতে আসবে।
— উনার বাড়িতেই আছিস তুই?
— হ্যাঁ তবে উনি থাকেন না, উনি আলাদা বাসায় থাকেন। এই বাসায় বড় বাবা আর বড়মার সাথে আছি। দুই একেই হোস্টেলে উঠব।
— হোস্টেলে কেন রিলেটিভ থাকতে?
— আমার হোস্টেলে থাকার খুব ইচ্ছে। সেই ইচ্ছে পূরণ করতে।
— ওহ আচ্ছা, আমাদের রুমে একটা সিট খালি হবে। উঠবি নাকি তুই আমাদের এখানে?
— হ্যাঁ কথা বলে দেখিস তো কর্তৃপক্ষের সাথে।
— আচ্ছা ঠিক আছে। তুই আসলে অনেক মজা হবে।
— হুম। আচ্ছা এখন ক্লাস কর।
_____________________________
দুপুর দুটো-
ইয়াশ শ্যুটিং শেষ করে প্রিয়তাকে নিয়ে বাসায় ফিরবে বলে তাড়াতাড়ি করে বের হচ্ছে। এমন সময় আবিরা পিছন থেকে ডাক দেয়, ইয়াশ ও পিছনে ফিরে তাকায়।
— হ্যাঁ, বল কিছু বলবে?
— আমাকে বাসায় একটু নামিয়ে দিয়ে যাও তো।
— আমার বাহিরে একটু কাজ আছে।
— সমস্যা নেই, বের ও হওয়া হয় না আমার।
— তুমি বাহিরে থেকে একটা গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যাও।
— তোমার সাথে যেতে চেয়ে ভুল করলাম নাকি?
— না না তেমন কিছু না। আচ্ছা চলো।
প্রিয়তা এদিকে বাহিরে দাঁড়িয়ে ইয়াশের জন্য অপেক্ষা করছে। ইয়াশের তো এসে অপেক্ষা করার কথা, তা না এখন প্রিয়তার অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ইয়াশ এদিকে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর ভাবছে কয়েকদিন পর তাদের দেখা হচ্ছে, ভেবেছিল দুজন একটু বাহিরে ঘুরে তারপর বাসায় ফিরবে তা না মাঝখান থেকে আবিরা ঝামেলা পাকিয়ে দিলো। এতদিন পর দেখা তার ওপর সাথে একটা মেয়ে কিভাবে বিষয়টা নেবে প্রিয় কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পর দূর থেকে ইয়াশের গাড়ি আসতে দেখে খুশি হয়ে যায় প্রিয়তা।
গাড়ি এসে প্রিয়তার সামনে থেমে যায়। প্রিয়তা ঘুরে অপরপাশে গিয়ে দরজা খুলবে ঠিক তখনই কাচ নামিয়ে দেয় আবিরা।
— জ্বী বলুন?
প্রিয়তা আবিরাকে উপেক্ষা করে ইয়াশের দিকে তাকায়। প্রিয়তা কিছুই বুঝতে পারছে না।
— আবিরা, সে আমার কাজিন। ওকেই নিতে এসেছি। তুমি গিয়ে পিছনে বসো প্লিজ।
— আমি তো সামনেই নেমে যাব, ও পিছনে গিয়ে বসুক।
— আবিরা…….
— আপু সামনেই তো নেমে যাবেন, আমার আবার তখন গাড়ি থেকে নেমে সেই তো সামনে আসতে হবে। আমি বলছিলাম কি আপনি আর কিছুক্ষণই তো আছেন প্লিজ আপনি পিছনেই গিয়ে বসুন।
— পিছনেই বসে থাকলে সমস্যা কি?(আবিরা)
— এবার তো বাচ্চার মতো ব্যবহার করছেন।
— প্রিয়তা এদিকে আয়, তুই তো ড্রাইভ শিখেছিস তাই না?
— হ্যাঁ পারি, তবে মাঝে মাঝে এক্সিডেন্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে।
— আরে সমস্যা নেই, এক্সিডেন্টই তো হবে আর তো কিছু না। আমি পিছনে বসছি, তুই ড্রাইভ কর।
— আরে আরে কি করছো তুমি? দেখে তো মনে হয় মে°’রে ফেলবে। আমিই পিছনে গিয়ে বসছি।
— আচ্ছা ঠিক আছে, এটাই ভালো হবে সামনের সিটে বসতে না পারলে বাসায় গিয়ে আমার সাথে খুব ঝামেলা করবে।
আবিরা তাড়াতাড়ি করে সামনের সিট থেকে উঠে পিছনে গিয়ে বসে। প্রিয়তাও এবার সামনের সিটে গিয়ে বসে পড়ে। সে কোনভাবেই ইয়াশের পাশে কাউকে দেখতে পারবে না।
কিছুক্ষণ পর আবিরা তার বাড়ির সামনে নেমে যায়। আবিরা নেমে যাওয়ার সাথে সাথে প্রিয়তা ইয়াশের দিকে তাকায়। ইয়াশ বুঝতে পারে এবার বড় কিছু হতে চলেছে।
— আমিই একাই আসছিলাম, আবিরা আমার সাথে আসার জন্য জোর করছিল।
— ওহ হো তার নাম আবিরা। সে জোর করলো আর তাই আপনার পাশের সিটে তাকে বসিয়ে নিয়ে আসতে হলো তাই না?
— আর হবে না।
— বাড়ি চলুন আগে দেখাচ্ছি মজা।
ইয়াশ মনে মনে ভাবে এই মেয়েটা বাড়ি গিয়ে সবার সামনে ভুলভাল কাজ না করে বসে। এবারের মতো যেন কিছু না করে!
_______________________
রবিবার বিকেলবেলা-
“প্রিয় আসব?”
কথাটি শুনে বিছানা শুয়ে থাকা থেকে বসে পড়ে। মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে।
ইয়াশ রুমে এসে চেয়ার টেনে নিয়ে বসে।
— ঘুমাচ্ছিলি?
— না এমনি শুয়ে ছিলাম।
— শরীর খারাপ লাগছে?
— না এমনি শুয়ে ছিলাম। তোর হোস্টেলে যাওয়া হচ্ছে না জন্য কি মন খারাপ করেছিস?
— না, পরে আমিও ভেবে দেখলাম বিষয়টি খুব খারাপ দেখায়।
— হ্যাঁ, মা বাবা কিছু না বললেও মনে মনে খুব কষ্ট পেত। তাই…..
— যা হয়েছে ভালো হয়েছে।
— তুই এখানে থাকলে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারব।
— হ্যাঁ তা ঠিক। প্রেমিক হয়েছেন, ভয় তো লাগবেই আমাকে নিয়ে।
— শুধু ভয় না, তোকে নিয়ে আমি জন্মের ভয় পাই। অনেক কষ্ট করে তোকে পেয়েছি আমি। আমি আমার উপস্থিতিতে তোর কিছু হতে দেব না, আমার অনুপস্থিতেতে তোর কিছু হয়ে গেলে আমি বাঁচতে পারব না রে।
— এত ভালোবাসে কেউ আমাকে?
— অনেক বেশি।
— আমিও তাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
— একটা কথা বলতে এসেছি, হঠাৎ করেই খবরটা পেলাম।
— কিছু হয়েছে?
— তেমন কিছু না। আমাকে আগামীকাল রাতের ফ্লাইটে কাঠমুন্ডু যেতে হবে।
— কেন?
— শ্যুটিং আছে, সপ্তাহখানেক থাকতে হবে ওখানে। তোর পাসপোর্ট থাকলে তোকেও নিয়ে যেতাম।
— আপনি কি এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে ফেলছেন? আপনার তো কিছুদিনের মধ্যে পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা আর তারপর তো আপনি সার্টিফাইড ডাক্তার। ডাক্তার হওয়ার পর ও কি এগুলো করবেন?
— সুযোগ থাকলে করব সমস্যা কি?
— ডাক্তার হলে চিকিৎসা করবেন নাকি অভিনয়?
— দুটোই চলবে। তুই কি এটা পছন্দ করছিস না?
— সেরকম না আসলে পড়াশোনা করতে দেখি না এ জন্য বললাম।
— প্রতদিন রাতে আমার পড়াশোনা চলে প্রিয়। এসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না।
— আমি হিরো ইয়াশের চেয়ে কিন্তু সফল ডাক্তারকেই বেশি প্রাধান্য দেব।
— মনে থাকবে বেগম সাহেব।
— আমার কি ব্যাগ গুছিয়ে দিতে হবে কাল?
— দিলে তো ভালোই হতো, আমার চাপ নিতে হত না।
— আচ্ছা ঠিক আছে গুছিয়ে দেব।
— এমন ভালো মেয়ে হয়তো আর একটাও পাওয়া যাবে না।
— হয়েছে হয়েছে।
— আচ্ছা থাক আমি এখন একটু বের হব।
— বাড়ি ফেরার সময় ফুসকা নিয়ে আসবেন।
— সেদিন না খাওয়ালাম!
— আজকেও খেতে ইচ্ছে করছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে আসব।
“আমার না মাঝেমাঝে আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করে ইয়াশ ভাই”
ইয়াশ উঠে বাহিরের দিকে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় প্রিয়তার এমন আজগুবি কথা শুনে দাঁড়িয়ে যায়।
চলবে……..