প্রিয়তার প্রণয় পর্ব-১৬+১৭

0
1232

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৬

“আমি বুঝতে পারি আপনি আমাকে পছন্দ করেন ইয়াশ ভাই।” বাক্যটি শুনে থ’ মে°রে দাঁড়িয়ে যায় ইয়াশ।
দুজন অতিথিশালার এপাশ ওপাশের রাস্তা দিয়ে হাটছিল একসাথে। এমন সময় প্রিয়তার উক্ত কথায় চলা থামিয়ে দাঁড়িয়ে যায় সে। নিজের কাজকর্মের দিকে খেয়াল করে ভেবে বুঝতে পারে আসলেই বেশি বেশি করা হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু করা উচিৎ হবে না। আবার পরক্ষণেই ভাবে, নাহ প্রিয়তাও তো তাকে পছন্দ করে তাহলে ভালোবাসা প্রকাশে এত ভনিতা কিসের! তবুও তার কাছে পুরোটা ধরা দেওয়া ঠিক হবে না।

— মানে কি বলতে চাইছিস কি তুই?

— না মানে কিছু না।

— এসব কথা যেন মাথায় আর ঘুরপাক না খায়।

— হুম।

— কি হুম?

— এসব মাথায় রাখব না।

— মাথায় রাখতে নিষেধ করি নি।

— কি?( প্রিয়তা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ইয়াশের দিকে)

— চা খাবি? পাশে একটা স্টল দেখলাম।

— আপনি কি বললেন পরিষ্কার করে বলেন একবার।

— আমি যে তোকে পছন্দ করি সেটা মাথায় রাখতে বলেছি সেটা নিয়ে ঘাটাঘাটি বা লাফালাফি করতে নিষেধ করেছি।(ইয়াশ)

— মানে আপনি……..!!

— ভালোবাসি।

“ভালোবাসি” একটা শব্দ যেন প্রিয়তার কানে বাজছে। মনে হচ্ছে কেউ বারবার কানের কাছে বলছে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

— কি রে ডুবে গেলি?(ইয়াশ)

— একদম পুরোটাই, চায়ের কাপের বিস্কুটের মতো।

— তোর ভাবি আছে, এসব কথা যদি আর মাথায় নিয়ে আসতে দেখেছি তবে তোর অবস্থা খারাপ হবে বলে দিলাম। আমি তোর সিনিয়র কাজিন লাগি।

–……..

— কি হলো তাকিয়ে আছিস কেন?

–………..

— নেশায় আছিস নাকি?

— নেশাদ্রব্যে আর কি নেশা, সেটা সকাল হলেই কেটে যায়। আমি তো আপনার চোখের নেশায় পিপাসা মিটিয়েছি, সারাজীবন নেশায় কেটে যাবে।

— তোর মাথায় গন্ডগোল আছে। চল তো চা খেয়ে বাড়ি ফিরবো।

— আমি ফিরবো না, আপনি যান।

— মানে?

— চা খাব না, বাসায় ও যাব না।

— আজকে আপনাকে নিতে এসেছি, শহরে আজকেই যেতে হবে আপনার।

— বরযাত্রী নিয়ে আসবে নিতে এমন ছেলে খোঁজ করুন। বিয়ে করে জামাইয়ের সাথে চলে যাব।

— আপাতত আমার সাথে চল, পরে বরযাত্রী নিয়ে আসার কথা ভাববো।

ইয়াশের কথা শুনে আবার তার দিকে তাকিয়ে থাকে প্রিয়তা। কি হচ্ছে তার সাথে! ইয়াশ ভাই এত হেয়ালি কেন করছে! কই অন্য কাজিনদের সাথে এমন করে না তাহলে তার সাথেই কেন!

— কি হলো আবার? (ইয়াশ)

— কিছু না, আমি বাড়ি গেলাম।

— চা খেয়ে তারপর যাব।

— আপনি থাকেন, আমি যাব।

প্রিয়তা হাটা শুরু করলে ইয়াশ হাত ধরে টেনে নিয়ে উল্টো পথে হাটা শুরু করে।

— এতদিন চুপচাপ ছিলি, এখন বেশি বলা শুরু করেছিস। বেশি সাহস হয়ে গিয়েছে তোর। শুধু চল আজকে, আমার কথার অবাধ্য হলেই বুঝবি আমি কে!(ইয়াশ)

— আমি হোস্টেলে থাকব।

— কোন হোস্টেলে থাকা হবে না।

— তাহলে আমি যাব না।

— সেটা দেখা যাবে। যখন বলব বিয়ে দিয়ে দিতে তখন বুঝবি।

— আগে বলেন ভালোবাসেন আমাকে?

— এই তোর এত সাহস হলো কিভাবে বল তো?

— এইভাবে……( প্রিয়তা নিজের ফোন কভার থেকে একটা কাগজ বের করে ইয়াশের দিকে এগিয়ে দেয়। ইয়াশ ভ্রু কুচকে কাগজটা নিয়ে খুলে দেখে ইয়াশ চোখ বন্ধ করে এক হাত দিয়ে মুখ ঢাকে।)

— কেন এখন কেন?(প্রিয়তা)

— কি এখন কেন?

— ধরা পড়ে গেলেন তো, এখন কি হবে?

— চুপচাপ চল দেরি হয়ে যাচ্ছে।

— ভালোবাসি না বললে যাব না, এই চিরকুটের ছবি তুলে আপনার আইডি, পেইজে দিয়ে দেব বলে দিলাম।

— সেখানে কিভাবে দিবি?

— দেখবেন?

— হ্যাঁ

— দেখবেন?

— হ্যাঁ দেখব।

— দেখবেন তো?

— হ্যাঁ দেখা।

ইয়াশ কথা বলছেই এমন সময় প্রিয়তা ইয়াশের হাত থেকে ফোন নিয়ে দৌঁড় দেয়।
“এভাবে” বলে দৌঁড়াতে থাকে সে। ইয়াশ গিয়ে প্রিয়তার হাত ধরে আটকে ফেলে। একটু রাগ দেখিয়ে ফোনটা নিয়ে নেয় সে।

— চল, চা খাব না আজকে।

–…….

— কি হলো চল বাড়ি যাবি না?

— না।

— আমি এখন বাড়ি যাব চল।

— স্যরি।

— চল বাড়ি যাব, আর দেরি করতে ইচ্ছে করছে না।

— স্যরি বললাম তো।

— হুম হয়েছে চল এবার।

— না আমি চা খাব।

ইয়াশের হাতের মাঝে প্রিয়তার ছোট ছোট আঙুলগুলো চুপচাপ জায়গা করে নেয়। প্রিয়তা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করে ইয়াশ কখন তার হাতটা পরম যত্নে নিজের করে নেবে। ইয়াশ হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইলে প্রিয়তাও হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। সে বুঝতে পারে হয়তো ইয়াশ ভাইয়ের থেকে বেশি আশা করে ফেলেছে। একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ” চলুন”।

____________________________

সারাদিনে ইয়াশ আর প্রিয়তার কোন কথা হয় নি। সকালের ব্যবহারে প্রিয়তার কেমন যেন মন টানছে না তার সামনে যেতে। প্রিয়তার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছিলো তার মা। আর সে আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে এগিয়ে দিচ্ছিলো। এরমাঝে ইয়াশ এসে তাড়াতাড়ি রেডি হতে বলে গিয়েছে।

ব্যাগ গোছানো শেষ হলে প্রিয়তার মা ইয়াশকে ডাকে। ইয়াশ ও তৈরি হয়ে যায় বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
কিছুক্ষণ পর বাসার সবাইকে বলে বের হয় তারা। প্রিয়তা বের হলে বুশরা যেন কান্না করে দেয়। এতদিন দুজন একসাথে থেকেছে, ছোট থেকে বড় হয়েছে এই প্রথম দুইজন আলাদা হচ্ছে।

— এই তুই মন খারাপ কেন করছিস?(প্রিয়তা)

— এই প্রথম তুই আমার থেকে দূরে যাচ্ছিস।

— আমি কি একেবারে যাচ্ছি নাকি বল।

— তবুও।

— মন খারাপ করিস না, আমি প্রতিদিন তোর সাথে কথা বলব।

— আচ্ছা সাবধানে যাস।

— তুই ও সাবধানে থাকবি, কিছু ভেবে কষ্ট পাবি না।

— হুম। তুই দেরি করিস না প্রিয়, পরিষ্কারভাবে নিজের মনে কথাগুলো ইয়াশ ভাইকে বলে দিস। একদম দেরি করিস না, দেরি করলেই হারিয়ে যাবে।

— আচ্ছা দেখি। থাক তাহলে আমি আসছি।

— ঠিক আছে।

প্রিয়তা আর ইয়াশ সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যে দুজন ছুটে চলে নিজ গন্তব্যে।
________________________________

প্রিয়তার ঘুম ভাঙে ইয়াশের ডাকে। তাকিয়ে দেখে সে গাড়িতেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার ইচ্ছে ছিল বাড়ি থেকে আসার সময় সমস্ত রাস্তা দেখতে দেখতে আসার কিন্তু তা আর হলো না। সে কখন ঘুমিয়ে গিয়েছে কিছুই বুঝতে পারে নি।

— ঘুম হলো?(ইয়াশ)

— কখন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারি নি।

— ঠিক আছে। এখন বের হয়ে আয়।

— চলে এসেছি আমরা?

— হ্যাঁ।

ইয়াশ আর প্রিয়তা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির মধ্যে চলে যায়। রান্নাঘরেই ছিল মিসেস আঞ্জুয়ারা, প্রিয়তাকে দেখে তার কাছে চলে আসে।

— এতক্ষণে আসার সময় হলো বুঝি?(আঞ্জুয়ারা)

— অনেক তাড়াতাড়ি চলে এসেছি। কেমন আছো বড়মা?

— ভালো ছিলাম, তবে এখন আরও বেশি ভালো আছি। বাসায় সবাই কেমন আছে?

— তোমরা সবাই চলে আসার পর তো বাসা একদম ফাঁকা হয়ে গিয়েছে।

— আচ্ছা পরে গল্প করব অনেক দূর থেকে এসেছিস এখন একটু ফ্রেশ হয়ে নে আর হ্যাঁ বাসায় ফোন করে বলে দিস যে তুই চলে এসেছিস।

— ঠিক আছে।

— ইয়াশ, প্রিয়র রুমটা দেখিয়ে দে।

— আচ্ছা ঠিক আছে। প্রিয়তা আমার সাথে আয়।

প্রিয়তা ইয়াশের পিছু পিছু চলে যায়। ইয়াশ রুমের দরজা খুলে লাইন অন করে দেয়। প্রিয়তা রুমে ঢুকে চোখ বুলিয়ে নিতে থাকে। কি সুন্দর রুম, তার নিজের রুম ও এত সুন্দর করে সাজানো ছিল না। প্রিয়তা রুম দেখতে দেখতে বেলকনিতে চলে যায়। এপাশ থেকে বাসার পিছন সাইডের বাগানটা দেখা যায়। এখন তো রাত তাই বাগানেও লাইট জ্বলছে। এমন একটা পরিবেশে ধোয়া ওঠা এক কাপ চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বা চেয়ারে বসে বই পড়া খুব জমে যাবে।
ইয়াশ ও রুম থেকে বেলকনিতে প্রিয়তার পিছনে এসে দাঁড়ায়।

— এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবি?

— একটু থাকি, ভালো লাগছে খুব।

— যা ফ্রেশ হয়ে নে। আজকে থেকে রাতে ছাদে যাওয়া বন্ধ এখানে আসলে আসবি।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— আমি আসছি।

— হুম।

— কালকে আমার সাথে বের হবি, ভর্তির শেষ তারিখ আগামীকাল।

— হুম ঠিক আছে।

চলবে……..

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৭

সকাল নয়টা-

প্রিয়তা রেডি হয়ে টেবিল থেকে ব্যাগ আর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতেই মিসেস আঞ্জুয়ারা এসে প্রিয়তাকে ডেকে নিয়ে গেলেন খাওয়া দাওয়া করার জন্য। প্রিয়তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে মিসেস আঞ্জুয়ারা খাবার প্লেটে বেড়ে দেয়।

— সকাল সকাল এত খাবার কেন দিচ্ছো তুমি বড়মা?

— কোথায় এত খাবার?

— সামনে এত খাবার, আবার বলছো এত নয়?

— এখন অনেক পড়াশোনা, বেশি বেশি খেতে হবে।

— যতটুকু পারব, ততটুকুই….

— আচ্ছা খেতে থাক।

— ভাইয়া খাবে না?

— তুই রেডি হচ্ছিলি তখন ওর রুমে দিয়ে এসেছি খাবার।

— আচ্ছা।

প্রিয়তা খাওয়া শেষ করে ইয়াশের রুমে যায় ইয়াশকে ডাকতে কারণ এখানেই দশটা বেজে যাচ্ছে। রুমের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে অনুমতি আসে ভেতরে যাওয়ার। প্রিয়তাও ভেতরে ঢুকে যায়।

— আপনি আজকে কালো শার্ট কেন পড়েছেন?

— কেন কালো শার্ট পড়া নিষেধ নাকি?

— হ্যাঁ নিষেধ।

— কার নিষেধ?

— আমার।

— তুই কে? তোর কেন নিষেধাজ্ঞা থাকবে আমার ওপর?

— আচ্ছা আপনিও আমাকে ভালোবাসেন সেদিন কাগজে স্পষ্ট লেখা ছিল “ভালোবাসি প্রিয়তা” আর ওটা আপনার হাতের লেখা ছিল তাহলে কেন স্বীকার করেন না? আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন আমিও…….

— এত সাহস কোত্থেকে পেলি রে তুই? মানে কোনকিছুতেই আমি তোর ভয় দেখছি না।

— কারণ আমি বুঝে গিয়েছি চুপ থাকলে সব হারাতে হতে পারে। আমি বুশরার মতো চাই না, আর যেখানে আমি নিশ্চিত আপনি আমাকে ভালোবাসেন আর আমি তো সেই কবে থেকে…..

— বুশরার কি হয়েছে?

— সেটা সময় করে বলব। এখন তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে চলে আসুন আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।

— চেঞ্জ কেন করব?

— আপনি কালো শার্ট পড়ে বাহিরে যাবেন না।

— তোর জন্য কমেন্টবক্স অফ করে রেখেছি এখন কি কালো শার্ট ও পড়া বন্ধ করে দিতে হবে?

— কমেন্ট বন্ধ মানে?

— কিছু না।

— বলুন?

— বললাম তো কিছু না, কালো শার্ট কেন পড়ব না সেটা বল।

— কালো শার্ট পড়লে আপনাকে একটু বেশি সুন্দর লাগে তাই।

— কে চায় তাকে কম সুন্দর লাগুক?

— আমি চাই আপনাকে কম সুন্দর লাগুক।

— কেন?

— আপনার ওপর অন্য মেয়ের মোহিত নজর আমি বরদাস্ত করতে পারব না ইয়াশ ভাই।

কথাটি বলেই প্রিয়তা রুম থেকে বাহিরে চলে যায়। প্রিয়তার বলা কথা যেন বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে ইয়াশের কানে, ” আপনার ওপর অন্য মেয়ের মোহিত নজর আমি বরদাস্ত করতে পারব না ইয়াশ ভাই।”
মেয়েরা বুঝি ভালোবাসার মানুষের প্রতি এতটা হিংসুটে হয়! কই ইয়াশ তো চায় সবচেয়ে সুন্দর তার প্রিয়তাকে লাগুক, তার জন্যই তো নিজের পছন্দের জিনিসগুলো দিয়ে সে প্রিয়তাকে সাজাতে চায়। যেটায় তার প্রিয়তাকে ভালো লাগবে সেটাই তার জন্য বরাদ্দ থাকে তাহলে প্রিয়তা কেন চায় তাকে(ইয়াশকে)সুন্দর লাগুক। হয়তো মেয়েদের ভালোবাসা এমনই হয়।
ইয়াশ শার্ট চেঞ্জ করতে গিয়েও চেঞ্জ করে না সে দেখতে চায় প্রিয়তার ভালোবাসার পাগলামি।

ইয়াশ বিছানা থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। ইয়াশকে দেখে একদিকে প্রিয়তার ভালো লাগে আবার অন্যদিকে কালো শার্ট চেঞ্জ না করায় রাগ হয়। অন্তত আজকের দিনটায় কালো শার্ট না পড়লেও পারতো! আজকে ওখানে খুব ভীড় হতে পারে আর অনেকেই ইয়াশকে চেনে ওখানকার মধ্যে কোন মেয়ে যদি ইয়াশের জন্য পাগলামি করে তাহলে সে কি করবে!

ইয়াশ মাকে বলে বের হয়ে আসে, প্রিয়তা দাঁড়িয়েই থাকে। “কি রে যা দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!” কথা প্রিয়তাও বের হয়।

— আপনি আমার কথা রাখলেন না ইয়াশ ভাই।(প্রিয়তা)

— এসব একটু বেশি নয় কি?

— আমি বেশি বেশি করি না, আপনি ভুল ভেবেছেন।

— পছন্দ করলে তো সবচেয়ে সুন্দর ফুলটাই পছন্দ করবি, তাহলে আমার জন্য এরকম কেন?

— কারণ ফুল আর আপনি এক না।

— প্রিয়তা তুই অনেক ছোট……

— কি ছোট ছোট করেন আপনি? আমার বয়স আঠারো প্লাস, আমি ইমম্যাচিউর নই। আমি সবকিছু বুঝি, একটা মেয়ের যদি চৌদ্দতেও বিয়ে হয় তবুও সে সংসার করতে পারে আর সেখানে আমি প্রাপ্তবয়স্কা। আমাকে কেন সবসময় ছোট ছোট বলেন? এটা শুধু আপনার মনের কথা আপনি নিজেও জানেন এবং মানেন যে আমি ছোট নই।

— আচ্ছা শান্ত হ একটু।

— আমি আপনাকে ভালোবাসি ইয়াশ ভাই।

কথাটি ইয়াশের কানে যেতেই গাড়ি থামিয়ে দেয়। এতদিন সে আন্দাজ করেছে কিছুদিন আগে থেকে সে নিশ্চিত যে প্রিয়তা তাকে ভালোবাসে। আর আজকে সে নিজের মুখে বলল!

— কি?

ইয়াশের যেন কথাটা বারবার শুনতে ইচ্ছে করছে। কোন একটা কথা তো ইয়াশের একবারের বেশি শুনলে রাগ হয়ে যায় তাহলে এই কথাটা কেন বারবার শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে! এমন তো না যে এই ভালোবাসি শব্দটা ইয়াশ প্রথমবার শুনলো, তবে কেন এত নতুন নতুন লাগছে তার কাছে!

— কিছু না।

— বল!

— আপনি কি সত্যিই বুঝতে পারেন না ইয়াশ ভাই?

— কি বললি সেটা বল….

— কিছু বলি নি চলুন।

— বল না….

— আমি আপনাকে ভালোবাসি।

— আরেকবার বল।

— আমি আপনাকে ভালোবাসি।

— আরেকবার প্লিজ।

— আমি আপনাকে ভালোবাসি।

— কমে যাবে না তো?

ইয়াশের প্রশ্নটা শুনে প্রিয়তার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে ওঠে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, শরীরটা অসার হয়ে আসে। হয়তো র°ক্ত চলাচল ও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম।

— মানুষ সঠিক হলে ভালোবাসা কখনো কমে না উল্টো বেড়ে যায় ইয়াশ ভাই।

— চোখ বন্ধ কর।

— কেন?

— বন্ধ করতে বলেছি প্রিয়।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রিয়তা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। এদিকে ইয়াশ পিছনের সিটে রাখা ব্যাগ থেকে শার্ট বের করে চেঞ্জ করে ফেলে। হঠাৎ করেই যেন প্রিয়তার কথা রাখার ভূত তার মাথায় চেপে বসেছে।

— এবার চোখ খুলতে পারিস।

— চেঞ্জ করলেন কিভাবে?

— ওভাবেই, এখন তাড়াতাড়ি যাই আমরা? দেরি হয়ে যাচ্ছে অনেক।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— আমি ড্রাইভ করব আর তুই আমাকে ওই বাক্যটা বলবি ভার্সিটিতে না পৌঁছানো পর্যন্ত। বেশিক্ষণ না দুই মিনিট লাগবে আর।

— কোন বাক্য?

— এই যে একটু আগে বললি।

— পারব না আমি।

— তাহলে কিন্তু বাসায় ব্যাক করব।

— আরে না না বলছি বলছি।

— হুম তাড়াতাড়ি শুরু কর।

প্রিয়তা ও হাসিমুখে ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে থাকে। ইয়াশ ও কান ফেলে সেই মধুর ধ্বনি শুনতে থাকে।

________________________________

— আচ্ছা তোর কিছু হয়েছে বুশরা?( মা)

— না তো মা কি হবে?

— মন খারাপ করে থাকিস যে সবসময়। কাল থেকে লক্ষ্য করছি।

— তেমন কিছু না মা।

— কেমন কিছু?

— প্রিয়তা….

— প্রিয়তা গিয়েছে জন্য এরকম মন খারাপ করে থাকতে হবে? তুই ও তো ক’দিন পর হোস্টেলে চলে যাবি।

— তবুও একটু খারাপ লাগছে।

— মন খারাপ করতে হবে না, প্রিয়তার সাথে কথা হয় নি?

— হ্যাঁ রাতেও হয়েছে আর সকালেও।

— তাহলে! মন খারাপ করিস না, তুই বস আমি তোর জন্য নুডুলস নিয়ে আসছি।

— ঠিক আছে।

বুশরার মা চলে বুশরা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবে তোমার মেয়ে বিষাদে তলিয়ে যাচ্ছে গো মা। তুমি ঠিকই বুঝতে পেরেছো তোমার মেয়ের মন খারাপ, শুধু মন খারাপ নয় তীব্রভাবে এই মন খারাপ আমাকে শেষ করে দিচ্ছে মা। এই কয়েকটা দিনে যে আমার অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল সে আজ অন্যকারও হতে চলেছে মা।
প্রেমে এত বিরহ সইতে হয় এটা জানলে আমি কখনোই তার প্রেমে পড়তাম না, কখনও তাকে প্রতিদিনের অভ্যেসরূপে পাওয়ার কামনা করতাম না। চেয়েও দেখতাম না আমার প্রতি কার আগ্রহ আর কার অনাগ্রহ।
এত বিষাদ আমাকে আচ্ছাদিত করবে জানলে আমি বিষ পান করে নিতাম তবুও ওই আমার না হওয়া পুরুষের দিকে চোখ তুলে দেখতাম না।

মায়ের আগমন বুঝতে পেরে চোখের পানি মুছে নেয় বুশরা।

— এই নে গরম গরম নুডুলস। তুই তো খুব পছন্দ করিস।(মা)

— হ্যাঁ দাও ক্ষুধা ও পেয়েছে।(সব পছন্দের জিনিসগুলো যদি পাওয়া যেত নিজের করে)

বুশরা আপন মনে খাবার খেতে থাকে। তার বাহ্যিক আচরণ দেখা গেলেও মনের তোল°পাড় করা ঝড়ের আভাস কেউ পাচ্ছে না।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে