প্রিয়তার প্রণয় পর্ব-১৪+১৫

0
1310

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৪

কিছুক্ষণ পর ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আজকে শ্যুটিং আছে তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তার মা টেবিলে নাস্তা দিয়ে গিয়েছে। এতসকালে মা কেন যে এসব করতে যায়!

খেতে বসলেই তার মা আসে রুমে।

— ইয়াশ…

— হ্যাঁ মা। তুমি সকাল সকাল এসব কেন করতে যাও বলো তো ওখানেই সব ব্যবস্থা করা থাকে।

— সারাদিন বাহিরে থাকিস, কতরাতে বাড়ি ফিরিস একটু ঘরের খাবার খেতে হবে না?

— আচ্ছা ঠিক আছে খেয়ে নিচ্ছি।

— এই নে টাকা।

— কেন?

— তুই বিকেলে শ্যুটিং থেকে বের হয়ে প্রিয়তার জন্য কিছু জামাকাপড় কিনে নিয়ে আসবি।

— প্রিয়তা আসলেই ওকে নিয়ে গিয়ে কিনে নিয়ে এসো তুমি সাথে গিয়ে। আমার তো কেনাকাটা করার মতো বিরতি পাওয়া হবে না।

— আগে থেকে কিনে রাখলে ভালো হতো।

— মা, ওকে আনতে গেলে আমার জন্য একদিন কাজ বন্ধ থাকবে আবার ওকে ভর্তি করতে গেলে একদিন কাজ বন্ধ থাকবে। তার জন্য কাজটা আজকালের মধ্যেই শেষ করে ফেলতে চাইছি।

— আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে প্রিয়তা আসুক।

— ওকে।

— আনতে যাবি কবে প্রিয়কে?

— কাল তো হবে না, কালকে কাজ শেষ হতে হতে বারোটা বাজবে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে একটু ঘুমিয়ে দুইটার দিকে বের হব। চারটা সাড়ে চারটার মধ্যে পৌঁছে যাব। সারাদিন ওখানে থেকে সন্ধ্যা পর রওয়ানা দেব আটটা বা নয়টার দিকে চলে আসব।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— আচ্ছা মা যাও এখন একটু ঘুমোও। আমি বের হব।

— আচ্ছা সাবধানে যাস।

— ঠিক আছে।

_____________________________

দুপুরবেলা প্রিয়তা তৈরি হচ্ছে তামান্নার বাসায় যাওয়ার জন্য। এমন সময় বুশরা আসে রুমে।

— প্রিয়..

— হ্যাঁ বুশরা বল।

— আমার বোধ হয় কিছু হয়ে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে।(বুশরা)

— কেন?(অবাক চোখে বুশরার দিকে তাকায় প্রিয়তা)

— গতকাল থেকে উনার কথা বলার ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আমি আর আজকে নক দেই নি উনিও কোন মেসেজ বা কল দেন নি।

— মানে? কি বলছিস কি তুই!

— হ্যাঁ রে, আমার বোধ হয় আর উনাকে নিয়ে ভাবা উচিৎ হবে না রে।

— আরে এভাবে কেন বলছিস! হয়তো উনি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত, তোকে বলতে পারছে না।

— কি জানি!

— তুই আমার সামনে কল দিয়ে জিজ্ঞেস কর তো।

— না থাক।

— আরে কর না।

— ঠিক আছে।

বুশরা হুমায়ুনের নম্বর বের করে কল করলে প্রথম কল কেটে যায়। বুশরা আর কল দিতে না চাইলে প্রিয়তা বুশরার হাতে থেকে ফোনটা নিয়ে কল দিবে ঠিক তখনই ফোনস্ক্রিনে হুমায়ুন নামটা ভেসে ওঠে। প্রিয়তা সাথে সাথে কল রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করে বুশরার হাতে ধরিয়ে দেয়।

— হ্যালো।

— হ্যাঁ বুশরা বলেন।

— কেমন আছেন?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

— আপনি কি ব্যস্ত আছেন?

— একটু কেন কিছু বলবেন?

— না মানে কালকে থেকে আপনার কথা ঠিক লাগছে না। আপনার কি কিছু হয়েছে?

— কই না তো কিছু হয় নি। গতকাল থেকে একটু ব্যস্ত আছি তো তাই হয়তো অন্যরকম লাগছে।

— না তবুও আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। আপনি বলতে না চাইলে আমি জোর করব না।

— না বুশরা, কিছু হয়নি আমার।

— কিছু না হলেই ভালো।

— আজকে আমাদের দেখা করার কথা ছিল।

— আপনি দেখা করতে চেয়ে আপনিই না করে দিয়েছেন। আমরা আর দেখা করব না।

— দেখা তো করতেই হবে৷ আমার প্রয়োজন আছে।

— কি প্রয়োজন?

— দেখা হলেই বলব। এখন রাখছি পরে কথা হবে।

— হুম।

ফোন কেটে বুশরা প্রিয়তার দিকে উৎসুক চোখে তাকায়।

— আমি নিশ্চিত উনি কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত তাই এভাবে কথা বলেছে। তবে আমি এটাও নিশ্চিত উনি তোকে ভীষণ পছন্দ করে।

— জানি না রে।

— আরে তুই কেন মন খারাপ করে আছিস?

— এমনি ভালো লাগছে না।

— শুধু শুধু মন খারাপ করবি না তো। আমি এখন বের হব, তোর এই মন খারাপ দেখে বের হতে হবে?

— সাবধানে যাবি আর তাড়াতাড়ি চলে আসিস।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

___________________________________

ইয়াশ নিজের কাজ বুঝে মেকাপ রুমে এসে দেখে প্রিয়তার জন্য কেনা নতুন শাড়ি যেটা আজকে কিনে নিয়ে মেকাপ রুমে রেখেছিল সেটা আবিরা পড়ে আয়নার সামনে বসে মেকাপ করছে। প্রিয় মানুষের জন্য পছন্দ করে কেনা শাড়ি অন্য নারীর শরীরে দেখে উত্তেজিত(রাগান্বিত) হয়ে যায় ইয়াশ। হাতের ফোনটা টেবিলে রেখে আবিরার দিকে এগিয়ে যায়। হাতের কনুইয়ের জায়গাটা ধরে দাঁড় করায় আবিরাকে।

— এই শাড়ি কেন পড়েছো তুমি?

— এটা মেকাপ রুমেই রাখা ছিল।

— তুমি কি এই জগতে নতুন?

— কেন কি হয়েছে?

— তুমি জানো না, যার যার পোশাকের দায়িত্ব তার নিজের?

— হ্যাঁ জানি।

— তাহলে তুমি কি এই শাড়িটা এখানে রেখে গিয়েছিলে নাকি যে তুমি এসে এটা পড়ে নিয়েছো?

— এখানে রাখা ছিল ভেবেছি শ্যুটিংয়ের জন্য রাখা। আর মেকাপ রুমে কেন কেউ কিছু রাখবে?

— এটা একপাশে রাখা ছিল আর গিফট পেপার দিয়ে প্যাক মোড়ানোও ছিল। শ্যুটিংয়ের জন্য রাখা হলে নিশ্চয়ই এভাবে রাখবে না তাই না?

— আমি ভেবেছিলাম আমার জন্য কেউ রেখেছে, ভেবেছি তুমি আমার জন্য রেখেছো।

— তোমাকে দেওয়ার হলে তোমাকেই দেব আলাদা করে এখানে কেন রাখব?

— তাহলে কার জন্য?

— সেটা তোমার জানার বিষয় না।

— আচ্ছা আমি খুলে দিচ্ছি।

— থাক লাগবে না।

— কেন?

— তোমার কি মনে হয় তোমার ইউস করা জিনিস আমি কাউকে গিফট করব?

— ইউস আর কতক্ষণ করলাম? মিনিট পাঁচেক হবে হয়তো পড়েছি।

— পাঁচ মিনিট হোক বা এক মিনিট হোক।

— তাহলে শ্যুটিং শেষ করে চলো আমি নিজে গিয়ে পছন্দ করে কিনে দেব।

— সেটাও লাগবে না, তাড়াতাড়ি মেকাপ কমপ্লিট করে বাহিরে এসো।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

কথাটি বলেই ইয়াশ বাহিরে চলে যায়। এদিকে আবিরা শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে এদিক ওদিক ঘুরেঘুরে দেখতে থাকে আর মিটিমিটি হাসে। শাড়িটা আসলেই সুন্দর, ইয়াশের পছন্দ আছে বলতে হয়।

_________________________

ড্রয়িংরুমে প্রিয়তার গলা শুনে তামান্না বাহিরে চলে আসে নিজের রুম থেকে।
প্রিয়তা দাঁড়িয়ে তামান্নার মায়ের সাথে কথা বলছিল। তামান্না শরীরে শাড়ি জড়িয়ে বাহিরে এসে প্রিয়তাকে টেনে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে প্রিয়তার হাত ছেড়ে দেয়।

— কি হলো, এভাবে টেনে নিয়ে আসলি কেন?(প্রিয়তা)

— আমাকে শাড়ি পড়িয়ে দে তাড়াতাড়ি।

— তুই পারিস না? এতক্ষণ কি করেছিস তুই?

— আমি তো শাড়ি পড়ব না ভেবেছি, কিন্তু মা শাড়ি পড়তে বলল আর ছেলেও নাকি আসছে।

— বাহ তাহলে তো ভালোই, বিয়েটা যেন আজকেই হয়ে যায় আমার তো দুই একেই চলে যেতে হবে।

— গেলে যাবি, বিয়েটা যদি এখানেই ঠিক হয় তাহলে তোকে আসতে হবে। আমি তো এখনই বিয়ে করতাম না কিন্তু ছেলেকে ভালো লেগেছে।

— দেখি, ছবি দেখা তো আমিও দেখব।

— এই তো চলে আসবে এখনই তখন দেখে নিস।

— দেখাবি না?

— না একটু পরেই দেখ না প্লিজ।

— আয় রেডি করে দেই।

— হুম।

প্রিয়তা তামান্নাকে শাড়ি পড়িয়ে রেডি করে দেয়। শাড়ি পড়া শেষ করে তামান্নাকে তার মাকে দেখাতে যেতেই কলিংবেলের শব্দ হতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তামান্না দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে আসে।

— কি হলো?

— ওরা বোধ হয় চলে এসেছে।

— কারা? তোকে দেখতে?

— হ্যাঁ।

— থাক আমি দেখে আসি।

— না আমাকে ডাকলে তুই আমার সাথে যাবি। তার আগে একটুও না।

— তোর কথা কে শুনছে?

— তুই শুনবি।

— মোটেও না। আমি এখনই যাব, আর আন্টিকেও তো সাহায্য করতে হবে।

— না, সব রেডি আছে তোর কোন প্রয়োজন নেই ওখানে।

— আমারও প্রয়োজন নেই তোর সাথে রুমে বসে থাকার, তোকে দেখতে এসেছে আমাকে না।

— প্রিয়…..

— চুপ থাক আমি দেখেই চলে আসব।

— যেতেই হবে তোর?

— হ্যাঁ তুই এখানে থাক আমি দেখে আসি। তুই ছবিও দেখাস নি আমাকে।

— আচ্ছা যা।

— তুই না বললেও আমি যাব।

— যা…

প্রিয়তা তামান্নার মুখের অবস্থা দেখে হেসে বাহিরে চলে যায়। ড্রয়িংরুমের দিকে যাচ্ছে আর ভাবছে কেমন ছেলে দেখতে এসেছে যাকে দেখেই তামান্নার পছন্দ হয়ে গেল! তাকে তো অবশ্যই দেখতে হচ্ছে। প্রিয়তার ড্রয়িংরুমে গিয়ে সোফায় বসে থাকা তিনজনকে দেখে চোখ আটকে যায়। ছেলের ও চোখ পড়ে যায় প্রিয়তার চোখে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে, দুজনই অবাক। কেউ হয়তো কাউকে এক জায়গায় কল্পনাও করতে পারে নি। প্রিয়তার মুখ দিয়ে একটা শব্দ হুট করে বেড়িয়ে যায়, “আপনি!”

চলবে………..

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৫

প্রিয়তার বলা কথাটা তামান্নার মা শুনে তার দিকে তাকায়।

— তুমি চেনো নাকি প্রিয়তা?(তামান্নার মা)

— হ্যাঁ আন্টি।

— তোমাকে চেনা চেনা লাগছে, কোথায় যেন দেখেছি।( ছেলের মা)

— আমি লুবনার চাচাতো বোন আন্টি।

— ওহ আচ্ছা তুমি আমাদের বউয়ের বোন, তাই তো বলি চেনা চেনা কেন লাগছে। তা কেমন আছো মা? তুমি এখানে?

— আলহামদুলিল্লাহ আন্টি। আসলে আপনারা যাকে দেখতে এসেছেন হুমায়ুন ভাইয়ার জন্য সে আমার বান্ধবী। হুমায়ুন ভাইয়ার জন্যই তো দেখতে এসেছেন তাই না?

— হ্যাঁ হুমায়ুনের জন্যই দেখতে এসেছি।

— তোমার বাসায় সবাই কেমন আছে মা?(হুমায়ুনের বাবা)

— জ্বী আঙ্কেল সবাই আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে।

— আমাদের ওখানে গিয়ে ঘুরে এসো।(আঙ্কেল)

— যাব কখনও আঙ্কেল। আমি দুই একেই শহরে চলে যাব ওখানে ভর্তি হব।

— আচ্ছা সাবধানে থেকো, ভালো করে পড়াশোনা করবে।

— ঠিক আছে আঙ্কেল আপনারা কথা বলুন আমি ভেতরে যাই।

— ঠিক আছে যাও মা।

প্রিয়তা যাওয়ার সময় আরেকবার হুমায়ুনের দিকে তাকালো। প্রিয়তার তাকানো দেখে হুমায়ুন তার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
আজকের এই ঘটনায় প্রিয়তার চেয়ে অবাক হয়তো আর কেউ হয় নি। যে ছেলে কয়েকদিন আগে একজনকে পছন্দ করে তার নম্বর নিয়ে কথা বলছে হঠাৎ আজকে অন্য কোথাও মেয়ে দেখতে এসেছে বিয়ের জন্য। অন্যদিকে যার সাথে কথা বলে সেই মেয়েটা তার প্রেমে পড়ে সব হারাতে বসেছে কি আজব মানুষ আর কি আজব তাদের ভালোবাসা।

প্রিয়তাকে রুমে আসতে দেখে তামান্না এগিয়ে আসে। প্রিয়তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

— কেমন দেখলি?

— আমি চিনি ছেলেকে।(প্রিয়তা)

— কিভাবে?

— আমার লুবনা আপুর দেবর এটা। মানে আমার বিয়াই।

— আরে, তাই নাকি!

— হ্যাঁ

— ছেলে কেমন রে? দেখেছিস তো কেমন মনে হয় ছেলেকে?

— হুমায়ুন ভাইয়া ভালো একটা মানুষ।

— ওরা যদি আমাকে পছন্দ করে তাহলে আমি একদম বিয়ের সাজে রেডি হিহিহি।

— হুম।

তামান্না খুশিতে প্রিয়তাকে জড়িয়ে ধরে। প্রিয়তা দোটানায় পড়ে যায় একদিকে বোনের ভালোবাসা আবার অন্যদিকে সবচেয়ে কাছের বান্ধবী। দুজনই তো তার কাছের মানুষ। কিন্তু হুমায়ুন ভাইয়া এটা কিভাবে করতে পারলো! তার কি একবারও বুশরার কথা মনে পড়ছে না!

_______________________________

রাত নয়টা-

প্রিয়তা একা একা রুমে বসে আছে। তামান্নার বাসা থেকে নিজের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছে। ওখান থেকে আসার পর প্রিয়তা কোনভাবেই বুশরার সামনে যেতে পারছে না, কোনভাবে সাহস পাচ্ছে না সে।
কি বলবে সে বুশরাকে! সে যাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে সেই ছেলে কি না সবকিছুর অগোচরে অন্য মেয়েকে বউ বানাতে দেখতে গিয়েছে।
এই কথা বুশরা কিভাবে মেনে নেবে! প্রিয়তার মাথা শুধু বুশরার কথায় আচ্ছন্ন ছিল। হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে, ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে হুমায়ুন কল দিয়েছে। এই ছেলে আবার কি চায়, যা করার তো করেই ফেলেছে। প্রিয়তা এবার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে কল রিসিভ করে।

— হ্যালো।(প্রিয়তা)

— প্রিয়তা…..(হুমায়ুন)

— জ্বী বলুন।

— বিশ্বাস করুন আমি ওখানে যেতে চাই নি আমার মা জোর করে ওখানে নিয়ে গিয়েছে।

— হুম, বাবা মা যেহেতু চেয়েছে আপনার না করা উচিৎ হবে না।

— আমি তো বুশরাকে পছন্দ করি এটা আপনি জানেন।

— আপনার বাবা মা তামান্নাকে পছন্দ করেছে। আপনার ও উচিৎ তাকে মেনে নেওয়া কিন্তু আপনি যদি আপনার বাবা মায়ের কথার অবাধ্য হন তাহলে আপনার পছন্দের ব্যাপারে সবাই জানলে লুবনা আপুর সমস্যা হবে। আর একবার সমস্যা হলে কিছুতেই বুশরার কোন কিছু আপনার সাথে ভাববে না আমাদের বাসার কেউ।

— কিন্তু……

— কোন কিন্তু না হুমায়ুন ভাই, আপনি আর বুশরার দিকে ফিরে তাকাবেন না। আপনাদের শুধু কয়েকটা দিন ফোনালাপ হয়েছে আর কিছু না।

— আপনি বুঝতে পারছেন না প্রিয়তা…

— আপনি আমার সিনিয়র, নিশ্চয়ই আপনি আমার থেকে ভালো বুঝবেন কিন্তু এ ব্যাপারে আমি এটাই বলব আপনাকে। আপনি আর বুশরাকে কখনও কল দিবেন না। ওদিকে আপনার বাবা মা তামান্নাকে পছন্দ করেছে আর তামান্না আপনাকে ভীষণ পছন্দ করে।

— আর আমি?

— কিছুদিন গেলে আপনিও তামান্নাকে ভালোবেসে ফেলবেন। আপনি ফোন দিয়ে ব্যাপারটা বুশরাকে জানিয়ে দেন তারপর আমি সামলে নেব।

— শুরু হওয়ার আগে শেষটা না হলেও পারতো।

— কিছু করার নেই, সম্পর্ক শুরু হলে যদি কষ্ট পেতে হয় তাহলে সেই সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই শেষ হওয়াটা উত্তম।

— হয়তো…..

— রাখছি ভাইয়া আল্লাহ হাফেজ।
_________________________________

রাত দশটা-

খাওয়া দাওয়া শেষ করে প্রিয়তা অন্ধকার রাতকে সঙ্গ দিতে ছাদে একা দাঁড়িয়ে আছে। উত্তরের হাওয়া এসে মাঝে মাঝে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে তাকে।
আজকের বিষয়টি সে কোনভাবেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না।

ছাদে আর দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না দেখে নিচে চলে আসে প্রিয়তা। না জানি বুশরা কি করছে!

প্রিয়তা বুশরার রুমের দরজায় নক করতে বুশরা এসে দরজা খুলে দেয়। প্রিয়তা তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে বুশরার মুখ মলিন হয়ে আছে। হুমায়ুন ভাই এতক্ষণে নিশ্চিত সব বলে দিয়েছে।

— তুই এত রাতে?(বুশরা)

— ছাদে গিয়েছিলাম কিন্তু তবুও ভালো লাগছিল না তাই তোর কাছে এলাম। বুশরা একটা কথা ছিল……

— আমাকে হুমায়ুন ভাই সব বলেছে প্রিয়। একটু মন খারাপ হচ্ছে কিন্তু খুব একটা খারাপ লাগছে না।

— হ্যাঁ বুশরা নিজেকে শক্ত রাখা উচিৎ। আর এখনও তোর তেমন কোন অনুভূতি সৃষ্টি হয় নি তার জন্য।

— অনুভূতি তৈরি হতে সময় লাগে না প্রিয়, তবে আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি।

অনেকক্ষণ বসে বুশরার সাথে কথা বলে প্রিয়তা। প্রিয়তার সাথে কথা বলে বুশরা একটু স্বস্তি পায়।

প্রিয়তা বুশরার রুম থেকে নিজের রুমে চলে যায়। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে ঘুমোনো প্রয়োজন। অসুস্থতায় অনেকগুলো রাত নির্ঘুম কেটে গিয়েছে তার।

___________________________________

২ দিন পর ভোর সাড়ে চারটা-

বালিশের পাশে ফোনের আওয়াজ শুনে ঘুম ঘুম চোখে কোনমতে কল রিসিভ করে প্রিয়তা।

— হ্যাঁ হ্যালো….

— উঠে পড়।

— কে, কোথায় উঠব?

— ঘুম থেকে আর বিছানা ছেড়ে উঠে পড় আমি ইয়াশ।

প্রিয়তা সাথে সাথে উঠে বসে। এত ভোরবেলায় ইয়াশ ভাই কেন কল দিয়েছে ঘুম থেকেই বা কেন উঠতে বলল!

— আপনি এত সকালে!

— তোর হাতে পাঁচ মিনিট সময়।

— কেন?

— রেডি হবি তাড়াতাড়ি।

— তারপর?

— রেডি হয়ে সদর দরজা দিয়ে বাহিরে চলে আসবি।

— আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

— আমি স্টেশনে চলে এসেছি বাসার সামনে আসতে পাঁচ মিনিট লাগবে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হবি আর কোন কথা না।

— আপনি এখানে আসছেন! আগে বলেন নি কেন?

— প্রিয়…..

— আচ্ছা আচ্ছা আমি রেডি হচ্ছি। এখানে এসে কল দিবেন আমি বেড়িয়ে যাব।

— হুম তাড়াতাড়ি কর।

ইয়াশ কল কেটে দিলে প্রিয়তা তাড়াতাড়ি রেডি হতে চলে যায়। কিন্তু আলমারি খুলে বুঝে উঠতে পারে না কি পড়বে। হঠাৎ সাদা জামাটা নজরে পড়তেই সেটা বের করে নেয়।
সাদা জামা, চুলে নিচু করে খোপা সামনে ছোট কয়েকটা চুল বের করে রাখা মাথায় ওরনা দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কয়েকবার পর্যবেক্ষণ করে নিলো।
নাহ খুব একটা খারাপ লাগছে না। ফোন এবার বেজে উঠলে ফোন কেটে দিয়ে বাহিরের দিকে রওয়ানা দেয় প্রিয়তা।

প্রিয়তা বাহিরে এসে দেখে ইয়াশ গাড়িতেই বসে আছে। প্রিয়তা এগিয়ে গেলে ইয়াশ গাড়িতে বসতে বলে। প্রিয়তাও গিয়ে বসে পড়ে।

— সুন্দর লাগছে তোকে।(ইয়াশ)

ইয়াশের মুখে কথাটা শুনে প্রিয়তা লজ্জা পেয়ে যায়। ইয়াশের কথা শুনে মাথা নিচু করে নেয়। পরক্ষণেই আবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে

— আপনি হঠাৎ এভাবে এখানে কেন?

— তোকে নিতে এসেছি।

— আপনাদের ওখানে?

— হ্যাঁ

— কিন্তু এই সময়ে কেন?

— আমাদের বের হওয়ার কথা ছিল তাই ভাবলাম ইচ্ছেটাকে পূর্ণতা দেই। যদি আর এমন সুযোগ না আসে!

ইয়াশ গাড়ি চালাচ্ছে আর প্রিয়তা মনোযোগ দিয়ে ইয়াশকে দেখে যাচ্ছে। এই দেখা যদি কখনও শেষ না হয় তাহলে আজন্ম দেখে যেতে পারবে প্রিয়তা।

চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে