প্রিয়তার প্রণয় পর্ব-১০+১১

0
1380

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১০

রাত দশটা

প্রিয়তা প্রতিদিনের মতো আজকেও বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে বাড়ি পুরো ফাঁকা, সকালে ইয়াশ, আরশি ওরা চলে গিয়েছে আর বিকেলে হিমেল আর হুমায়ুন ও চলে গিয়েছে। বাসায় শুধু আগের মতো বড়রা আছেন আর তারা তিন বোন।
বাড়িটা প্রতিবার সবাই চলে যাওয়ার পর এরকম খাঁ খাঁ করে অথচ সবাই থাকতে কত হৈ হুল্লোড়!

খোলা আকাশ, অন্ধকার পরিবেশ আর গুমোট আবহাওয়া ছাড়া বাহিরে অনুভব করার মতো আর কিছুই নেই। ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না দেখে রুমে চলে আসে প্রিয়তা।

এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখে কোন কল মেসেজ নেই। অনলাইনে গেলে দেখে ইয়াশ অনলাইনেও নেই। ফোন দিতে চেয়েও মনের বিরুদ্ধে গিয়ে ফোনটা বিছানায় রেখে ঘুমোনোর চেষ্টা করে। অতঃপর একসময় ঘুমিয়েও যায় প্রিয়তা।

__________________________________

রাত বারোটা পয়তাল্লিশ –

কাজ সম্পর্কিত সব শেষ করে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় এসে ফোন নিয়ে শুয়ে পড়ে। গ্রাম থেকে আসার পর কাজে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার কারণে প্রিয়তাকে আর কল দেওয়া হয় নি। হয়তো এটাই ঠিক হয়েছে নাহলে সে বুঝে যাবে সবকিছু।
সবকিছু বুঝে গেলে আবার কি রেখে কি করবে তার কোন শেষ সীমানা থাকবে না।

ইয়াশের মা খাবার গরম করে ডাক দিলে ইয়াশ বাহিরে চলে যায় ফোন রেখে।

— তোমাকে বলেছি মা, এত রাতে তোমার এসব করতে হবে না আমি বাহিরে থেকে খেয়ে আসি।

— খাবারগুলো তোর পছন্দের তাই গরম করে দিলাম। খেয়ে ঘুমিয়ে পড় গিয়ে অনেক রাত হয়েছে।

— আমি খেয়ে নিচ্ছি, তুমি যাও ঘুমাও।

— খাওয়া শেষ কর তারপর যাই।

— না আমি খেয়ে নিচ্ছি, তুমি যাও ঘুমাও একটা বেজে গিয়েছে। আজকেই শেষ এরপর আর রাত জাগবে না আমার জন্য।

— তার জন্যই বলেছিলাম বিয়েটা করে নে। বিয়ে করে নিলে আমার আর এসব ভাবতে হত না প্রিয় সব দেখে রাখতো।

— আবার শুরু করলে! যাও যাও ঘুমাও, তাড়াতাড়ি যাও।

— হ্যাঁ যাচ্ছি।

ইয়াশ খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে চলে যায়। রুমে এসেই শুয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে যা ভেবেছিল তাই। প্রিয়তা এই সময়ে অনলাইনে চলে এসেছে। এবার আর কোন কিছু না ভেবে ইয়াশ মেসেজ করে বসলো।

— আজকেও ঘুম ভেঙে গিয়েছে?

— হ্যাঁ (সাথে সাথে রিপ্লাই আসে, হয়তো ইনবক্সেই ছিল প্রিয়তা)

— এভাবে আর কতদিন চলবে?

— কি চলবে?

— এই যে রাত একটায় ঘুম ভেঙে যাওয়া?

— জানি না।

— মন খারাপ?

— না।

— কথা কেমন যেন লাগছে।

— আমি তো এভাবেই কথা বলি।

— না, প্রিয়তা এখন ঠিক হয়ে গিয়েছে এখন আর এভাবে কথা বলে না।

— কেউ চায় না আমি ঠিক হই।

— কেউ বলতে কে শুনি?

— আপনি ছাড়া আর কে!

— তুই অনেক বেশি বেশি কথা বল এটা আমার চেয়ে বেশি আর কেউ চায় না।

— এটা সত্যি হলে বাসায় গিয়ে অবশ্যই কল দিতেন একটা।

— এখানে এসে সবাইকে বাসায় রেখে সাথে সাথে আমার বের হতে হয়েছিল সাড়ে বারোটার দিকে বাসায় এসেছি।

— হুম, খাওয়া দাওয়া করেছেন?

— হ্যাঁ করেছি।

— আচ্ছা তাহলে ঘুমান।

— কেন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?

— আর কি কথা বলব!

— তোর যা ইচ্ছে সব বল।

— কি হয়েছে আপনার? কেমন যেন লাগছে আপনাকে আমার।

— কেমন লাগছে?

— অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছেন। সুন্দর করে কথা বলছেন। ভাবির সাথে সব কি ভালো চলছে?

— হ্যাঁ।

— ওহ আচ্ছা।

— হুম। তুই এখানে আসছিস কবে?

— ভর্তির শেষ সময় তো খুব তাড়াতাড়ি। বাবা বলেছে খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবে।

— আচ্ছা। ঠিক করেছিস কি কোথায় থাকবি?

— আমি তো আগেই বলেছি আমি হোস্টেলে থাকব।

— ওখানে সমস্যা হবে থাকতে, খাওয়া দাওয়া ও ভালো না। আমাদের বাসায় থাকতে কি সমস্যা?

— আমার অনেক দিনের ইচ্ছে আমি বান্ধবীদের সাথে থাকব।

— শহরের মেয়েরা ভালো না। তুই ওদের সাথে মিশলে তুই ও ভালো থাকবি না।

— কে বলেছে আপনাকে?

— কাউকে বলতে হয় না, আমি এখানে থাকি তাই আমি জানি।

— আমি ঠিক এখনকার মতই থাকব।

— থাকতে পারলেই ভালো, শহুরে হয়ে গেলে ভালো জামাই পাবি না।

— আগে আপনি বিয়ে করবেন, আরশির বিয়ে হবে তারপর আমার পালা। ততদিনে ভালো ছেলে পেয়ে যাব, এখন খুঁজতে থাকি।

— ছেলে আপনাকে খুঁজতে হবে না, সে দায়িত্ব বড়রা পালন করবে। আপনি শুধু এখানে এসে ভালো মেয়ে হয়ে পড়ালেখা করবেন।

— হ্যাঁ পড়ালেখা করতেই যাব ওখানে।

— আচ্ছা এখন ঘুমান অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।

— আপনি ঘুমাবেন না?

— হ্যাঁ আমিও ঘুমোবো।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— শুভ রাত্রি।

— হুম।

প্রিয়তা অনলাইন থেকে বের হয়ে ফোনের গ্যালারিতে ইয়াশের ছবি বের করে দেখতে থাকে।
“আমার দুইটা জিনিস পছন্দ চাঁদ আর মেঘলা আকাশের উপস্থিতিতে বৃষ্টি। আপনার এই দাড়িসহ মুখটা দেখলে মনে হয়, আকাশের চাঁদটা যেন মেঘলা আকাশে দিয়ে ঘিরে আছে প্রিয়।”

____________________________________

পরদিন বিকেলবেলা-

বুশরা এদিক ওদিক ভালো করে দেখে নেয়। বাহিরে তেমন কাউকে দেখতে পারে না কারণ লুবনার নানু অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তার বাবা মা ওখানে গিয়েছে। কিছুদিন পর তারাও এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে যাবে, তার চাচা ইয়ালিদের বদলি হয়েছে তাই।
প্রিয়তার বাবা রেস্টুরেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত এগারোটা। বাসায় এখন শুধু প্রিয়তা, তার মা আছে সাথে বুশরা আর তার মা। বুশরার বাবাও কাজের সূত্রে বাহিরে আছে।

বুশরা চুপি চুপি ছাদে যাচ্ছে দেখে প্রিয়তা ও পিছু নেয়। চারপাশে এত পর্যবেক্ষণ করে ছাদে কেন যাওয়া হচ্ছে দেখতেই হচ্ছে।

বুশরা ছাদে গিয়ে ফোন বের করলেই কারও কল আসে। প্রিয়তা দূর থেকে দেখেই হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে যায়।
_____________________________

প্রিয়তা রুমে বসে মায়ের সাথে কথা বলছিল, এমন সময় তার মায়ের ফোন বেজে ওঠে। প্রিয়তাকে ফোন নিয়ে আসতে বললে প্রিয়তা ফোন নিতে গিয়ে দেখে ইয়াশের কল। ইয়াশ কেন এই ফোনে কল দিবে!

— কে কল দিয়েছে?

— ইয়াশ ভাই।

— ওহ আচ্ছা দে ফোনটা দে।

— হুম এই নাও।

প্রিয়তা ফোন হাতে ধরিয়ে দিয়ে বসে পড়ে। কি বলবে ইয়াশ ভাই তার মাকে!

— হ্যাঁ ইয়াশ বল।

— ছোটমা প্রিয়তা তো তার রেজাল্ট অনুযায়ী আমাদের বাসা থেকে আধাঘণ্টা দূরের কলেজটাতেই টিকে গিয়েছে।

— বাহ আলহামদুলিল্লাহ। আরশির যাওয়া কবে?

— এইতো আর চারদিন।

— সব ঠিকঠাক আছে তো?

— হ্যাঁ ওরা দুজন যাচ্ছে, মানে আরশি আর ওর এক বান্ধবী।

— তাহলে তো ভালোই, আরশির আর একা একা লাগবে না ওখানে।

— হ্যাঁ আর বাবার বন্ধু তো ওখানে থাকে কোন অসুবিধা ও হবে না আশা করি।

— আপনার পড়াশোনার কি খবর শুনি? শুধু এই অভিনয় নিয়ে থাকলে কিন্তু হবে না।

— শাশুড়িমা আপনার মেয়ের হবু জামাই পড়াশোনাতেও ভালো, আপনার মেয়ের মতো ডাব্বা মারি না।(ইয়াশ)

— সে ও ভালো রেজাল্ট করে এসেছে এ যাবৎ।

— শুধু নিজের মেয়ের গুণগান গাইলে কিন্তু হবে না।

— সামনে…..

— কি সামনে?(ইয়াশ)

— সামনে…..

— কি? ওহ আচ্ছা প্রিয়?

— হ্যাঁ।

— ওহ আচ্ছা আচ্ছা।

— হুম তোর মা বাবা কেমন আছে?

— সবাই ভালো। বাসায় সবাই ভালো আছে?

— হ্যাঁ এখানেও সবাই ভালো।

— আচ্ছা ঠিক আছে আমি আবার পরে কথা বলব কেমন? রাখছি……..

— আচ্ছা সাবধানে থাকিস।

ফোন রেখেই মিসেস রমেলা প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে দেখে প্রিয়তা একপলকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।

— কি রে কি হয়েছে?

— ইয়াশ ভাইয়া কেন কল দিয়েছিল?

— তোকে না জানিয়েই তো আমরা তোর কাগজপত্র ইয়াশকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। তাই ইয়াশ এখন কল দিয়ে জানালো তাদের বাসা থেকে একটু দূরের ভার্সিটিতে তুই টিকে গিয়েছিস।

— কি বলো!

— হ্যাঁ।

— আচ্ছা তোমরা আমাকে না জানিয়ে এত কিছু কবে করলে আর কেন?

— তোকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।।

— আর কোন সারপ্রাইজ বাকি আছে?

— হ্যাঁ অবশ্যই।

— এ্যা?

— হ্যাঁ। তোর হয়তো খুব তাড়াতাড়ি যেতে হবে ওখানে।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

— এখন যা অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।

— আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রিয়তা বের হয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আজকে আর ছাদে যেতে ইচ্ছে করছে না, শরীরটাও ভালো লাগছে না তার। হয়তো কোন অসুস্থতা খুব তাড়াতাড়ি ঘিরে ধরবে তাকে। রুমের লাইট বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে সে। চোখের পাতায় ও যেন ঘুম খুব তাড়াতাড়ি এসে জমা হয়।

চলবে……….

#প্রিয়তার_প্রণয়
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১১

রাত একটা….

প্রতিদিনের মতো এবার ও ঘুম ভেঙে যায় প্রিয়তার। ইদানীং বিষয়টি কেমন যেন কাকতালীয় কিন্তু অদ্ভুত লাগছে। প্রতিদিন একই সময়ে কিভাবে ঘুম ভেঙে যায় তার!

ঘুম ভেঙে যাওয়ার পরক্ষণেই প্রিয়তা বুঝতে পারলো তার শরীরটা যেন কেমন লাগছে। নিজেই নিজের কপালে হাত দিয়ে দেখে প্রচণ্ড জ্বর। খুব খারাপ লাগছে তার কিন্তু এতরাতে তো মাকে ডাক দেওয়াও ঠিক হবে না। বিছানা থেকে ধীরে ধীরে উঠে টেবিলের বক্সে রাখা ওষুধ বের করে খেয়ে নেয়। প্রিয়তা খুব সহজে অসুস্থ হয় না আবার অসুস্থ হলে তা থেকে রেহাই পাওয়া খুব মুশকিল। এত এত খারাপ লাগার মাঝেও প্রিয় মানুষটির মেসেজ পাওয়ার জন্য অনলাইনে যায়। মেসেজবক্সে গিয়ে দেখে ইয়াশ মেসেজ দিয়ে রেখেছে,”আজকে ঘুম ভাঙেনি তোর?”
প্রিয়তার যেন ফোন চাপতেও খারাপ লাগছিল এতটাই ঘিরে রেখেছে অসুস্থতা।

— হুম ভেঙেছে।

মেসেজের নোটিফিকেশন পেয়ে সাথে সাথে ফোন হাতে নেয় ইয়াশ। সে নিশ্চিত এই সময়ে প্রিয়তা ছাড়া কেউ মেসেজ করে নি সে। ইয়াশ তো এখন বুঝে গিয়েছে হয়তো তার জন্যই প্রিয়তার এই অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে। ইয়াশ যে বাড়ি ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় আর এই সময়টায় সে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ থাকে, হয়তো কথা বলার ইচ্ছে আর আগ্রহটাই আজ প্রিয়তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।

— রাত একটা বাজবে আর আপনার ঘুম ভাঙবে না এটা তো হতেই পারে না।( আজকাল প্রিয়তার সাথে তুই করে কথা বলতেও কেমন যেন লাগে ইয়াশের)

— অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।

— সে তো দেখছিই। খাওয়া দাওয়া করেছিলি রাতে?

— হ্যাঁ

— আচ্ছা শোন ভর্তি তো শুরু হয়ে যাবে আজকে থেকে হয়তো তুই কবে আসবি?

— জানি না।

— তোর কিছু হয়েছে?

— উহু।

— তাহলে এমন করে কথা বলছিস কেন?

— একটু খারাপ লাগছে।

মেসেজ সিন হওয়ার পর আর রিপ্লাই আসে না ওপাশ থেকে। এক মিনিট পর ফোন বেজে ওঠে প্রিয়তার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইয়াশ কল দিয়েছে। এত রাতে ফোন রিসিভ করা কি ঠিক হবে! কথা বললেই তো ইয়াশ বুঝে যাবে যে সে কঠিনভাবে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে দুই তিন ঘণ্টায়। তবুও ফোনটা রিসিভ করে সে।

— প্রিয়তা…..!!

— হ্যাঁ শুনছি।

— কি হয়েছে, খারাপ কেন লাগছে তোর?

— তেমন কিছু না, একটা জ্বর জ্বর লাগছে আর কিছু না।

— তোর তো অসুখ হলে খুব খারাপভাবে দূর্বল করে ফেলে।

— না ভাইয়া, তেমন কিছু হয় নি।

— তুই এক কাজ কর থার্মোমিটার আছে না রুমে? তাপমাত্রা মেপে দেখ তো।

— থাক না ভাইয়া এখন ওসব।

— না থাকবে না, তাড়াতাড়ি চেক কর একটু।

— উঠতে ইচ্ছে করছে না গো।

— উঠতে হবে, না উঠলে কিন্তু আবার আগের মতো ব°ক°ব।

— আচ্ছা উঠছি, তবুও আপনি এরকম থাকুন প্লিজ।

— তাড়াতাড়ি..

প্রিয়তা বিছানা থেকে উঠে টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। নাহ এই কয়েক ঘণ্টার জ্বর ভীষণ খারাপ অবস্থা করে ফেলেছে তার।
থার্মোমিটারটা নিয়ে তাপমাত্রা মেপে দেখে বেশ খানিকটা বেড়েছে তাপমাত্রা কিন্তু ইয়াশকে কি বলা ঠিক হবে!

প্রিয়তা বিছানায় এসে ফোন কানে নেয় আবার।

— আছেন?

— হ্যাঁ বল।

— ১০১°

— তবুও তুই বলছিলি একটু জ্বর জ্বর লাগছে!

— হ্যাঁ।

— ছোটমাকে ডাক দে একটু। আমি জানি তোর জ্বর হলে তোর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। কিভাবে কথা বলছিস আমি বুঝতে পারছি না।

— এতরাতে আম্মুকে আর ডাকবো না। সকাল বলব….

— না তুই এখনই ডাকবি।

— একটা কথা জিজ্ঞেস করি ভাইয়া?

— তোর জ্বর এখন প্রিয়। জানি এখন তোর মাথায় উল্টাপাল্টা কথা আর প্রশ্ন আসবে ওগুলো এখন রাখ আর ছোটমাকে ডাক দে প্লিজ।

— আপনি প্লিজ এতরাতে যে আম্মুকে কল দিবেন না। অনেক রাতে বাবা এসেছে একটু ঘুমাক।

— প্রিয়……….

— একটা প্রশ্ন করি না ইয়াশ ভাইয়া।

— তুই এখন চুপ করে ঘুমাবি প্রিয়।

— একটা প্রশ্ন করেই ঘুমাবো।

— আচ্ছা বল।

— আপনার একদম কাছের আত্মীয় বা বেস্টফ্রেন্ড আপনাকে যদি ভালোবাসে তাহলে আপনাকে যদি সে বলে দেয় তার মনের কথা, আপনি তাকে পছন্দ না করলে কি তার সাথে কথা বলা যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিবেন?

— না, তাকে যদি আমার ভালো লাগে তাহলে সবটা দিয়ে আমি তকে আমার করে রাখব। আর যদি তা না হয় তাহলে তাকে বুঝিয়ে বলে সব আগের মত করে নেব।

— ইয়াশ ভাই….

এবার প্রিয়তার কণ্ঠটা অন্যরকম লাগছে। হয়তো সে জ্বরের ঘোরে চলে গিয়েছে। কণ্ঠটা কেমন ধীর আর নে°’শাক্ত লাগছে। প্রিয়তার জন্য এবার এত খারাপ আর কষ্ট কেন লাগছে ইয়াশের! মনে হচ্ছে তার বুকে বা’পাশটাই যেন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। নিজেকে সামলে নিয়ে সে প্রিয়তার ডাকে সাড়া দেয়। সে জানে এই কথাগুলো হয়তো প্রিয়তার মনে বা মাথায় কোনটাতেই থাকবে না। এটা ভেবে ইয়াশেরও যেন লোভ লাগছে প্রিয়তার মনের কথা শুনতে। নিজের কথাগুলো বলে দিয়ে পারলেও তার নিজেকে হালকা লাগতো।

— হ্যাঁ বল।

— আপনি না, দূরে থাকলে আমার খুব অস্বস্তি হয় ইয়াশ ভাই। এই যে দেখুন আপনার অনুপস্থিতিতে অসুস্থতা কেমন আমায় ঘিরে ধরেছে!

–…………..

— আপনাকে দেখলে না আমার সেই ক্লাস নাইন থেকে কেমন একটা অনুভব হয়, তখন আপনি এসব অভিনয়ের জগতে ছিলেন না। কত ভালো ছিল বলুন তো শুধুমাত্র আমিই আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম। কিন্তু এখন কত মেয়ের নজর আপনার ওপর, আমার একদম ভালো লাগে না। আপনি তো আমার, তাহলে তারা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তির দিকে কেন নজর দেবে? আপনার ছবিতে ওদের কমেন্ট দেখলে আমার মন খারাপ হয়ে যায় বুক ভারী হয়ে ওঠে কোন বাধা না মেনে চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। কারও সামনে থাকলে সেই কান্না লুকাতে প্রস্থান করতে হয়। অভিমান জমে যায় অনেক। এরকম কেন হয় ইয়াশ ভাই?

–.. …….

— ইয়াশ ভাই, আপনি তো আমার তাই না বলেন?

— বলেন না একটু যে আপনি শুধু আমার।

— প্রিয়তা ঘুমিয়ে পড় এখন, জ্বরের জন্য উল্টাপাল্টা কথা বলছিস এখন তুই।

— বলেন না ইয়াশ ভাই আপনি শুধু আমার। একান্তই আমার, এখানে আর কারও এতটুকু ও ভাগ নেই। আমি জিতে গিয়েছেন ইয়াশ ভাই, আপনি আমাকে হারিয়ে দিয়ে খুব বাজেভাবে জিতে গিয়েছেন। আমি আপনাকে আপনার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি ইয়াস ভাই। খুব বেশি ভালোবাসি, পরিমাপ করে হয়তো বলতে পারব না কিন্তু আপনি আমার, আপনাকে অন্যকারো সাথে সহ্য করতে পারব না। সহ্য করতে পারব না..………

এরপর আর কোন কথা শোনা যায়নি প্রিয়তার। হয়তো সে ঘুমিয়ে গিয়েছে মনের সব কথা বলে দিয়ে।
কিন্তু ঘুমিয়ে যাওয়া মেয়েটি তো কখনো জানতে পারবে না তার জ্বর আর ঘুমের ঘোরে বলা কথা গুলো হয়তো ইয়াশকে আজরাতে ঘুমোতেই দেবে না। আজকে যে তার কথাগুলো ইয়াশের চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বুকের মধ্যে কেমন উথাল-পাতাল শুরু করে দিয়েছে। তার ভালোবাসা যেন সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ইয়াশের বুকে আঘা°’ত করছে।
এর আগেও তো ইয়াশ প্রিয়তার অসুস্থতার কথা শুনেছে, ভীষণ খারাপ ও লেগেছে কিন্তু এবার কে এত বেশি খারাপ লাগছে তার!
কেন ছুটে চলে যেতে মন চাইছে তার। সে তো প্রিয়তাকে পুরোটা ভালোবাসেনি, একটু ভালোবেসেছে আর অনেকটুকু ভালোবাসা বাকি।
তাহলে তার এই অল্প ভালোবাসাই কেন এত পো°’ড়াচ্ছে তাকে!

____________________________

সকাল দশটা-

রুমে ফোন বাজছে শুনে মিসেস রমেলা দৌঁড়ে রুমে চলে যায়। ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইয়াশ কল দিয়েছে।

— হ্যাঁ ইয়াশ বল, মেয়েকে রেখে মেয়ের মায়ের সাথে এত কিসের কথা? মেয়ের মা বাবা রাজি, আপনি এখন মেয়েকে রাজি করবেন, ওদিকে নজর দেন বাবা।(রমেলা)

— ছোটমা, প্রিয়তা উঠেছে?

— না তো, কথা বলবি?

— আমি তো ভোরের দিকে একটু ঘুমিয়েছি, হঠাৎ করে চোখ লেগে গিয়েছিল।

— হ্যাঁ কিছু হয়েছে? তোর বাবা মা ঠিক আছে? আর আরশি!

— হ্যাঁ ছোটমা এখানে সবাই ঠিক আছে।

— তাহলে তোর কথা এমন শোনা যাচ্ছে কেন?

— ছোটমা প্রিয়তা খুব অসুস্থ, অনেক জ্বর প্রিয়তার।

— কি বলছিস? আমি তো জানি না! রাতে রুমে যাওয়ার সময় ও তো ঠিক ছিল।

— রাতে জ্বর এসেছে। আমি বারবার বলেছিলাম তোমাদের জানাতে কিন্তু প্রিয়তা জানাতে দেয় নি আমাকে। একটু প্লিজ দেখো না ওর কি অবস্থা। আমার খুব খারাপ লাগছে, ওর অবস্থা যদি খারাপ হয় বেশি তাহলে আমাকে বলো আমি চলে আসব।

— না না আমরা আছি তো। আর তোর তো নতুন কাজ শুরু আজকে থেকে আর তিনদিন পর আরশিও চলে যাবে। তুই থাক আমি দেখছি।

— আচ্ছা ঠি আছে দেখো।

মিসেস রমেলা ফোন রেখে প্রিয়তার রুমে দৌঁড়ে যায়। রুমে গিয়ে দেখে প্রিয়তা কাঁপছে। কপালে হাত দিতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় প্রিয়তার মায়ের। প্রিয়তার এই অসুস্থতার সময়টা ভীষণ খারাপ যায় তাদের।
মেয়েটা এত অসুস্থ, অথচ একবারও ডাকে নি তাদের। মিসেস রমেলা প্রিয়তাকে ডাকতে থাকে কিন্তু প্রিয়তার কোন সাড়াশব্দ পায় না। বাড়ির সবাই প্রিয়তার রুমে দৌঁড়ে আসে। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না দেখে হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সবাই। প্রিয়তার বাবাকেও কল দিয়ে বাসায় আসতে বলা হয়।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে