প্রিতুর ঠিকানার চিঠি–Sanjana Islam

0
1068

#গল্পপোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০

প্রিতুর ঠিকানার চিঠি–

তোকে কি বলে সম্বোধন করবো সঠিক জানা নেই আমার। তাই সম্বোধন করলাম না। কেমন আছি?? ভালো আছিস তো?? অবশ্য ভালো না থাকার কারন নেই। উল্টো আমার সাথে থাকলেই বোধয় ভালোর থেকে খারাপটাই বেশি থাকতি। আমাকে জিজ্ঞেস করবি না আমি কেমন আছি?? নাকি সেইটুকু আশা করাটাও আমারই ভুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ! যাই হোক আমি ভালো নেই রে। আমি একদমই ভালো নেই। তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি বল?? সুখে নেই আমি। আমার সুখ যে তোর মধ্যে ছিলো। আর আমিও ভুলে গিয়েছিলাম অপেক্ষিক জিনিস গুলো যে চাইতে নেই। তাহলে বল আমি কি করে চাইতেই পেয়ে যাই?? তোর কি মনে আছে প্রিতু?? ছোটবেলা কিভাবে দৌড়ে এসে বলতি কোলে নাও না চাচ্চু। আর তোর এই চাচ্চু বলাতেই আটকে ছিলাম আমি। আবার আধ ভাঙ্গা কন্ঠে ব্যাথা পেলে কিভাবে আদর করতে বলতি। হয়ত মনে নেই কিন্তু বিশ্বাস কর আমি সব মনে রেখেছি। কিচ্ছুটিও ভুলিনি। তোর উপহার দেওয়া স্মৃতি গুলো নিয়েই তো বেঁচে আছি। সেগুলোকে বিহীন করে বাঁচি কি করে! আমি আমার প্রতিশ্রুতি রেখেছি কিন্তু প্রিতু। তোর জীবনের সব পরিস্থিতিতে তোর পাশে ছিলাম আমি। জানিস কি পরিমান কষ্ট হয়েছিলো তোকে তারিফের সাথে দেখে?? যখনই তুই প্রথম তাকে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিলি বুকের ভিতর সব কিছু দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাওয়া শর্তেও তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম হাসি মুখে। শুধু মাত্র কিছু করার ছিলো না বলে। কিন্তু পরিস্থিতি গভীরে যেতেই নিজেকে সামলাতে পারিনি। তোকে পাওয়ার লোভটা জেকে বসেছিলো তাই সহ্য করতে না পেরে তোর বাবাকে সবই বলেছিলাম। আগে জানতাম কাদতে না পেরে হাসি মুখে থাকাটা কষ্টের কিন্তু সেদিন জানলাম কান্না করাটা কতটা কষ্টের। আমাদের ছেলেদের কাদতে নেই কিন্তু সেদিন অনেক কেদেছিলাম তোর বাবার সামনে। কিন্তু এতিম ছিলাম বলে কিছুই করেনি তিনি। হয়ত বাকি সব বাবারা যা করতেন তিনিও ঠিক তাই ই করেছিলেন। শুধু মাত্র তোকে সুখি দেখবে বলে। যদি সে চাইতো তাহলে আমিও সুখি হতে পারতাম। কিন্তু ওই যে আগেই বললাম আপেক্ষিক জিনিস চাইতে নেই তবুও চেয়েছিলাম। জানিস বড় আফসোস হয় যে, তোর মায়াবি চোখে চোখ রেখে বলে উঠা হলো না “ভালোবাসি তোকে,,, তুই শুধুই আমার প্রিতু।” হ্যা সত্তিই তুই আমার মনের গহীন বসবাস করা প্রিতু। তোর আজ বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে। ভয় পাস না তোকেই ভালোবেসে যাবো আজীবন। তুই ই একমাত্র রয়ে যাবি বুকের বা পাশটায়। তুই আমার না ই বা হলি কিন্তু তোর নামে ফেলা প্রতিটা দীর্ঘশ্বাস গুলো কিন্তু একান্ত আমারই থাকবে। বলেছিলাম তোর বিয়েতে তোকে সবচেয়ে প্রিয় উপহারটা তোকে দেবো। তোর সেই প্রিয় পায়ের নুপুর আর সেই তোর সবচেয়ে পছন্দের জামার ফিতার হারিয়ে যাওয়া ঝুমকো টা তোকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম আমার চিঠির ভিতরে থাকা আবেগ গুলোর সাথে। জানি এই চিঠিটা পরে অত্যাধিক অবাক হবি হওয়ারই কথা। যাই হোক তোকে কখনো বিভ্রান্তে ফেলতে চাই না। তাই কখনোই তোর সম্মখিন হবো না। কতটা ভালোবাসি তোকে এই কথাটা না জানালে জীবনে একটা আক্ষেপ রয়েই যেত। কিন্তু এই শেষ ইচ্ছাটাকে আর অপূর্নতার রূপ দিতে চাইনি। ভালো থাকিস। অবশ্য তোকে ভালো থাকার কথাটা বলার প্রয়োজনটা দেখছি না। তারিফ ভালো ছেলে তোকে ভালো রাখবে হয়ত আমার থেকেও বেশি।

ইতি

তোর নামে একগুচ্ছো দীর্ঘশ্বাস ফেলার মালিক ভেবে নিতে পারিস।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে