#প্রাক্তন
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-২০
আমি তাকাতেই লক্ষ্য করলাম বাবা দাঁড়িয়ে আছে। আমি আধ শুয়া থেকে উঠে বাবাকে দেখে লাইট জ্বালিয়ে বললাম
– বাবা তুমি। কী হয়েছে? কিছু বলবে?
বাবার মুখ গম্ভীর। চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। বাবাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো ব্যপারে রেগে আছে। বাবা আমার কথার জবাব যখন দিচ্ছিল না তখন আবারও জিজ্ঞেস করলাম
– বাবা কিছু বলবে?
বাবা কন্ঠটা গম্ভীর করে জবাব দিল
– তোমার মায়ের মুখে যা শুনেছি সেটা কী ঠিক?
আমার হাত, পা কাঁপতে লাগল। বাবাকে অনেক ভয় পাই আমি। কী জবাব দিব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শরীরটা বেশ ঝিমুচ্ছে। স্তব্ধ অসাড় লাগছে। বাবা কন্ঠটাকে জোরালো করে পুনরায় বলল
– কী হলো জবাব নেই কেন? এত চুপ হয়েই বা আছো কেন? প্রশ্নের উত্তরটা দাও।
আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম
– মা তোমাকে কী বলেছে?
– এসব জিজ্ঞেস করতে তোমার লজ্জা হচ্ছে না? এগুলো তো মুখে আনতেও আমার বাঁধতেছে। তোমার এত অধঃপতন হয়েছে। স্বাধীনতা দিয়ে তোমাকে আমরা অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি। ঘটনা সত্যি কী না জানতে চাই।
আমি মাথা নীচু করে বললাম
– হ্যাঁ বাবা সত্যি।
বাবার মুখটা রাগে লাল হয়ে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে কন্ঠটা তীব্র করে বলল
– থানায় নাকি মামলা করে এসেছো?
– জ্বি বাবা।
– কালকে তোমার বড় ভাইকে সাথে নিয়ে গিয়ে মামলাটা তুলে আসবে। এসব নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করে সবার হাসির পাত্র হতে পারব না। তোমাকে নিয়ে এমনিতেই অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। তোমার জীবনে তুমি কষ্ট পেয়েছো সেটা আমরা বুঝি। সে জন্য যথেষ্ট স্বাধীনতা তোমাকে দিয়েছিলাম। তুমি সেটার মূল্য দিতে পারো নি। তোমার কী মনে হয় মামলা যে করেছো সেটা কী চাপা থাকবে? কেউ জানবে না? সবাই জানবে। সবাই বলবে মেয়ের বয়স হয়েছে ঠিক সময় বিয়ে দেয়নি তাই বেপরোয়া চলাফেরা করেছে বলেই আজকে মেয়েটার এ হাল। তুমি বাইরে বের হলে কেউ অরন্যকে খারাপ বলবে না। বরং তোমাকে দেখে মুখ টিপে টিপে হাসবে আর হাজারটা কথা বলবে। চায়ের দোকানের গল্পের মূখ্যম চরিত্র হয়ে উঠবে তুমি। আমি এমনিতেই অসুস্থ আমি এসব নিতে পারব না। আমি চাচ্ছি না বিষয়টা নিয়ে আর বাড়াবাড়ি হোক। বিষয়টা এখানেই শেষ করো। আমরা পাত্র দেখতেছি ১৫ দিনের মধ্যেই আমাদের পছন্দের পাত্রের সাথেই তোমার বিয়ে হবে৷ তুমি চাকুরী করো বলে আমাদের মাথা কিনে নাও নি। চাকুরীর থেকে মানসম্মান আগে। ভুলে যেও না তুমি সমাজে একা চলো না। তোমার সাথে আমরাও জড়িত। তোমাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে আমাদের তুলেও গালি দিবে।
আমি বাবার কথাগুলো শুধু মাথা নীচু করে শুনছিলাম। হালকা সুরে বাবাকে বললাম
– আমার কী দোষ বাবা। অপরাধীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরবে আর আমি গুটি মেরে বসে থাকব? বাবা মানুষ তো না জেনেই হাজার কথা বলবে তাই বলে তাদের ছেড়ে দিব। আমি তো জানি আমার সাথে যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে আমি কী তাদের শাস্তি দিব না? আজকে আমার সাথে যা হয়েছে কাল তো অন্য মেয়ের সাথে হবে। এভাবে সুযোগ দিতে থাকলে তো সবাই পেয়ে বসবে। তুমি কেন বাবা তোমার মেয়ের আর্তনাদ শুনতে পারছো না। আমাকে দয়াকরে সাপোর্ট দাও। তোমাদের সাপোর্ট আমার দরকার। আজকে ওদের ছেড়ে দিলে ওরা যে আমার ক্ষতি করবে না তার কী গ্যারান্টি আছে বলো তো। আমার বিয়ের পরও তো তারা আমার ক্ষতি করতে পারে। তাহলে কেন ওদের ছাড় দিব আমি। আমি তো দোষ করেনি।
বাবা আমার কথায় আরও চটে গেলেন
– তুমি একটু বেশিই কথা বলছো। দু কলম শিখেছো বলে বিদ্বান হয়ে যাও নি। বিয়ের পর কিছু করলে আমরা দেখে নিব। আপাতত যা করতে বলছি তাই করো। বিষয়টা চেপে যাও। সমাজে মুখ দেখানোর পরিস্থিতিতে রেখো। আর কথার নড়চড় যেন নাহয়। এ বাসায় থাকলে এসব করতে পারবে না। আর যদি কিছু করো তাহলে বাসা থেকে বের হয়ে যাও। তোমার মুখ ও যেন কোনোদিন দেখতে না হয়। আমি ধরে নিব আমাদের মেয়ে মারা গেছে। তোমার জন্য মানুষের কটু কথা আর শুনতে পারব না। তোমার বড় ভাইকে নিয়ে কেউ কোনো কথা আজও বলতে পারে নি অথচ তোমাকে নিয়ে আমি বহুবার ছোট হয়েছি। আর হতে পারব না। এমনিতেই শরীর ও এসব নিতে পারছে না।
– বাবা আমি জানি আমার জন্য তোমাদের অনেক সমস্যা হয়েছে তবে এখানে আমার দোষটা কতটুকু ছিল। আমি তো দোষ না করেও একটার পর একটা কষ্ট পাচ্ছি, যন্ত্রণা পাচ্ছি। আমার হাহাকার টা কেন বুঝতেছ না। আমার সাথে হয়েছে আমি বুঝতেছি আমার কেমন লাগছে৷ আর তুমি কী না বলছো সবাইকে ছেড়ে দিতে৷ বাবা তুমি যদি বলো বাসা ছেড়ে যেতে তবে তাই করব। তবুও আমি অরন্যকে ছাড়ব না। ওদের ছাড়লে আমি মরেও শান্তি পাব না।
কথা বলতেই বাবা কষিয়ে আমার গালে চড় দিল। আমি চড়টা খেয়ে অনুভূতি শূন্য হয়ে গেলাম। বাবা চড়টা দিয়ে চেঁচিয়ে বলল
– তুমি দিনকে দিন বেয়াদব বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছ।
বাবার চেঁচানো শুনে পাশের রুম থেকে বড় ভাই এসে কিছু না বুঝেই আমাকে আরও কয়েকটা চড় কষিয়ে দিল। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। বাবা, ভাইয়ের হাতে চড়গুলো দীর্ঘ চার বছর পর খাচ্ছি। এর আগে এরকম মেরেছিল অরন্যের জন্য, যাতে অরন্যকে ভুলে যাই অরন্যের আশা বাদ দিই। আর আজকে মার খাচ্ছি যাতে অরন্যকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দিই। কারণ তথাকথিত সমাজের লোক নানান কথা বলবে। বড় ভাই চড় গুলো দিয়েই বলে উঠল
– তোর জন্য বাবা এর আগে স্ট্রোক করেছে। আর তুই একটার পর একটা আকাম করে যাচ্ছিস। যা ইচ্ছা করে বেড়াচ্ছিস। সমাজে মুখ তো দেখাতে হবে। আর কত ছোট করবি। আর কত এভাবে সবার কথা শুনাবি। চাকুরী করছিস বলে কী মাথা কিনে নিয়েছিস। তোর এ বাসায় থাকা বন্ধ। সকালে দু চোখ যেদিকে যায় চলে যা। তোকে বোন বলে পরিচয় দিতেও আমার লজ্জা হয়।
বলেই বড় ভাই বাবাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি নীরব হয়ে খাটের কোণে বসেই আছি। এর মধ্যে ভাবী কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বলল
– তোমাকে আমি কত ভালো মনে করতাম। কত আদর করতাম। আর তুমিই কী না যা তা করে বেড়াচ্ছ। মেয়েদের এত জিদ ভালো না। আজকে যা হয়েছে তোমার জেদের জন্য। তোমার বয়সী মেয়েরা একটা সম্পর্ক থেকে বের হয়ে দিব্যি সংসার করছে। আর তুমি অতীত আঁকড়ে ধরে পড়াশোনা করেছো। একের পর এক বিয়ে ভেঙ্গেছো। তার ফলে অবশ্য বিসিএস ক্যাডার হয়েছো। তবে এতে কী তুমি পূর্ণাঙ্গ হতে পেরেছো। একটা মেয়ের পূর্ণতা তখনই আসে যখন মেয়েটার সংসার হয়। তোমার জেদ তোমাকে আজকে এত নীচে নামায়ছে। ছেলেদের ভোগের পন্য বানিয়ে ছাড়ছে।
ভাবীর শেষ কথাটা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম
– ভবী আজেবাজে কথা বলবে না একদম। এসবের পেছনে আমার হাত ছিল না। আর এসবের জন্য আমি দায়ী না। তাহলে এ দায় কেন আমাকে দিচ্ছেন। যারা করেছে তাদের দেন।
– তোমার মতো মেয়ের মুখে এসব মানায় না। অতি বিদ্যা যে মেয়েদের নষ্ট করে তোমাকে দেখে বুঝতেছি।
– আপনি একটা শিক্ষিত মেয়ে হয়ে এসব কী বলছেন ভবী। আপনি না ভলো ভর্সিটি থেকে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন। তবুও এসব বলতে কীভাবে পারছেন। অশিক্ষিত হলে বুঝতাম এসব বলতে পারবেন। তবে আপনার মুখে এসব কথা মানতে পারছি না।
– শুনো শিক্ষিত হই আর যাই হই সমাজ নিয়ে চলতে হবে। আল্লাহ না করুক আমার একটা মেয়ে হলে তাকে শুনতে হবে তার ফুফু ধর্ষিতা। তার ফুফুকে নিয়ে মানুষ মাতামাতি করেছিল। আমার মেয়ের ভবিষ্যত টা তখন কতটা অন্ধকারে চলে যাবে সেটা কী ভেবে দেখেছো? আমি বর্তমান নিয়ে চিন্তা করি না। আমি অন্তস্বত্ত্বা। তিন মাস চলতেছে। এখনও কাউকে বলে নি। তোমার জন্য আমার পেটের বাচ্চাও কথা থেকে রেহাই পাবে না। আমি মা হয়ে তো এটা করতে পারব না। অপ্সরা যা হয়েছে তো হয়েছেই আর এমন করে নিজেকে ছোট করো না সাথে আমাদেরকেও না। বাবা আর তোমার ভাই যেখানে বিয়ে ঠিক করে সেখানে বিয়ে করে সুখে থাকো।
– ভাবী কথাগুলো বলা অনেক সহজ। আজকে অরন্য আমার এত ক্ষতি করেছে। কাল তো বিয়ের পর আরও করবে। এমনও হতে পারে আবার বিয়ে ভাঙবে। সে তো বিয়ের দিন এসেও ঝামেলা করতে পারে। ঘুরে ফিরে তো সেই পুলিশ আদালতের কাছে যেতে হবে। একই কথা। তাহলে কেন বারবার আমাকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে। এর চেয়ে এটা ভালো হয় না, আমি সব শিকড় থেকে শেষ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাই। সমাজ কথা বলবে সেটা আমিও জানি। তবে সেটা সাময়িকের জন্য। পরবর্তী আমার ভালো হলে সে সমাজেই আমাকে নিয়ে প্রশংসা করবে। ভাবী আমি জানি আপনাদের সমস্যা হচ্ছে। চিন্তা করবেন না আমি বাসা ছেড়ে কালকেই চলে যাব। তবুও আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকব। আমাকে কেউ দমাতে বা নড়াতে পারবে না। আফসোস একটায় আমার পরিবার আমার সাথে নেই। আজ বুঝতে পারছি মানুষ কেন আত্মহত্যা করে। কারণ তার উপায় থাকে না।
ভাবী আমার কথা শুনে আর কোনো জবাব না দিয়েই চলে গেল। আমি বসেই রইলাম হাঁটু মুড়ি দিয়ে। কতটা অসহায় লাগছে আমি জানি। কতটা কষ্ট পেলে মনটা এমন অশান্ত হয় এখন বুঝতে পারতেছি। এ কষ্ট সহ্য করতেও পারতেছি না আবার সেখান থেকে বের হয়ে আসতেও পারতেছি না। কী করব আমি পরিবার দেখব নাকি নিজের শান্তি। অশান্ত লাগছে অনেক। মাথাটা হাঁটুর মাঝখানে দিয়ে এসবেই ভাবছিলাম। ফোনটা ভাইব্রেট শুরু করল। সোহান কল দিয়েছে। কলটা ধরে বললাম
– হ্যাঁ বল কী বলবি?
– খাওয়া দাওয়া করেছিস?
– হুম।
– কী করতেছিস মন খারাপ?
– নাহ।
– তাহলে এত চুপ কেন?
– তাহলে কী বকবক করা উচিত?
– তা না, তবে মনে হচ্ছে তুই কিছু নিয়ে ভবছিস।
– একদিকে পরিবার একদিকে আমি৷ জানি না কী করব।
– শুন আমি জানি তোর মধ্যে কী চলছে। তবে পরিবার এখন যতই বলুক তোর পাশে নাই। বিপদে পড়লে ঠিকেই তোর পাশে পাবি। পরিবার হয়তো সাময়িক চিন্তা করছে। তোর ভবিষ্যত ভাবছে। তোর মতো গভীর করে ভাবতে পারছে না। তবে মিলিয়ে নিস আজকে বিপদে পড়লে আমাকে নাও পেতে পারিস তবে তোর পরিবার ঠিকেই তোকে আগলে রাখবে। পরিবার নিয়ে চিন্তা করিস না। ওরা যা বলে তুই শুনে যা। আর এদিকে তুই তোর মতো এগিয়ে যা। অপ্সরা জীবনের জয় তো হুট করে আসে না। ছিনিয়ে আনতে হয়। নিজেকে সময় দে৷ অবশ্যই ভালো কিছু পারবি৷ বিয়ে আল্লাহর হাতে যেখানে হওয়ার হবে। তুই নিজেকে সামলা। বাবা,মা, যা বলুক বলতে দে। ওরা তোর ভালো চায়। তবে পরিবার মাঝে মাঝে ভালো চাইতে গিয়েও খারাপ করে ফেলে। তাই তুই একটু সাবধানে পা ফেল৷ আজকে পরিবার কথা বলছে কালকে বাইরের লোক বলবে। হজম করে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন কর। আর তুই কলেজে চাকুরি করিস। তোর স্টুডেন্টরা যখন এসব জানবে তখন তারাও দেখবি আড়ালে তোকে নিয়ে কথা বলছে৷ এসবকিছু তোকে মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে সামনের পথ গুলো আরও কঠিন। একবার এ পথ পার হয়ে আসতে পারলে তখন সবাই তোকেই ইন্সপিরেশন হিসেবে নিবে। তুই নিজেকে সামলা। সময় দে। আবির আর অরন্যকে তার যোগ্য শাস্তি দে। আমি জানি তুই পারবি।
সোহানের প্রতিটা কথায় বাস্তববাদী। সত্যিই তো এত অপ্লতে ভেঙ্গে গেলে তো হবে না৷ আমাকে অবশ্যই আরও শক্ত হতে হবে। আমি সোহানকে বললাম
– সকালে চলে আসিস। মেডিকেলে যাব।
– হুম,কয়টায় আসব?
– এগারটায় চলে আসিস।
– আচ্ছা ঘুমা।
ফোনটা রেখে দিলাম। তবে মনে হাজারটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনোভাবেই ঘুমাতে পারছিলাম না৷ চোখ বন্ধ করলেই যেন এগুলো চোখে ভাসছিল। মনটা কেমন জানি অস্থির লাগছিল। একটু শান্তি যে কত বড় নেয়ামত সেটা অশান্তিতে না থাকলে টের পাওয়া যায় না। টাকা আছে পয়সা আছে সমাজে পরিচিতি আছে তবে শান্তি নাই। এ থেকে কষ্ট আর কী হতে পারে। ভাত সামনে নিয়ে গিলতে না পারার কষ্ট কী হতে পারে আমি জানি। তুলতুলে বিছানা পেয়েও ঘুমাতে পারছি না। অথচ ফুটপাতে কত মানুষ শক্ত ইটে মাথা দিয়ে শান্তিতে ঘুমুচ্ছে। সারা রাত তেমন ঘুম হলো না। মাথাটা তো ঝিমঝিম করছিল। সকালে উঠে জানতে পারি আবির আর অরন্যকে চাকুরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে আর আমার বিষয়টা তদন্ত করছে৷ সকালে এমন একটা সংবাদ আমার মনটাকে একটু শীতল করল। নিজের মধ্যে শান্তি পাচ্ছিলাম। তবে বাসার কেউ স্বাভাবিক না। সবাই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে। বাবা মা কেউ কথা বলছে না। তবুও নিজেকে স্থির রাখলাম। এগারটায় সোহান আসলো। সোহান কে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা দিলাম। সোহান গাড়ি চালাতে চালাতে বলে উঠল
– আজকে মেডিকেলের কাজটা শেষ করে ডিভোর্সের কাজটাও শেষ করবি।
– কিন্তু সে টা তো বলেছিল সময় লাগবে দুই একদিন।
– আমি সেটা আজকে ব্যবস্থা করেছি। বন্ধু হয়ে এটুকু তো করতেই পারি৷ আর আবিরকে পুলিশ ধরেছে তবে অরন্য লাপাত্তা। এর কী হুট হাট লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কাজ করে নাকি
– কেন পুলিশ তাকে ঐ বাসায় পায়নি?
– নাহ৷ কোথায় জানি লুকিয়েছে।
অরন্যের এ লুকানোর বিষয়টা বরাবরেই একটা বিপদ ডেকে আনে। মনে হালকা ভয় লাগছিল তবুও সেটা প্রকাশ করলাম না।
– ওহ আচ্ছা বাদ দে। আজকে ডিভোর্সটা দিতে পারলে শান্তি।
তারপর মেডিকেলে গিয়ে সব কাজ শেষ করলাম। অরন্যকে ডিভোর্স দিলাম। ডিভোর্সের কাগজে যখন স্বাক্ষর করছিলাম মনে হচ্ছিল বন্দি একটা জীবন থেকে মুক্তি পাচ্ছি। ডিভোর্স দেওয়ার পর মনে হলো বুক থেকে শক্ত পাথর নেমে গেল। শান্তি আর প্রশান্তময় লাগছিল। সোহান ও আমার মুখের সজীবতা দেখে বুঝতে পারছিল আমি প্রশান্তি পাচ্ছি। সে হালকা হেসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বলল
– আস্তে আস্তে তোর সব কষ্টগুলো এভাবে মুছে যাবে। তুই মুক্ত হয়ে যাবি সকল শিকলে বাঁধা সম্পর্ক থেকে। জীবনটা সুন্দর হবে রঙিন হবে।
আমি হালকা গলায় বললাম
– রঙিন হওয়ার স্বপ্ন দেখি না তবে জীবনটা সুন্দর ভাবে এগিয়ে চলুক এটাই চাই। চল থানায় যেতে হবে।
– হুম চল।
তারপর থানায় গেলাম। থানায় যাওয়ার পর শুরু হলো নতুন নাটক।
(চলবে)