#প্রাক্তন
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ১৪
সকালটা হলো নতুন ঘটনার সূচনা দিয়ে। সে ঘটনার সাথে না চাইতেও জড়িয়ে গেলাম পুনরায়। সেই সাথে আরও কতগুলো প্রশ্নের উদ্ভব ঘটলো আরও রহস্য ঝেঁকে বসলো।
সকালে উঠতেই মা আমার রুমে আসলো। মায়ের মুখটা হাসি মাখা। মনে হচ্ছে হালকা রুদ্দুর এসে মায়ের মুখে লেপ্টে গিয়েছে। মায়ের মুখটা দেখেই কেন জানি না প্রশান্ত লাগছিল। আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
– কিছু বলবে? এত খুশি দেখাচ্ছে ব্যপার কী?
– খুশি হওয়ার তো কারণ আছেই। আর তুই কত বেলা করে উঠেছিস দেখেছিস? ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ কয়টা বাজে৷
মায়ের কথায় দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম। ১১ টা বাজে। এত বেলা করে উঠেছি কীভাবে বুঝতে পারছি না। সারা রাত ঘুম হয়নি তাই সকাল দিকে ঘুম ঝেঁকে বসেছিল। মা আমার পাশে বসে হাসতে হাসতে বলল
– আবিরের মা এসেছিল। উনি তো চাচ্ছে আবির সুস্থ হওয়ার আগেই তোর সাথে বিয়েটা সেড়ে ফেলতে পরে নাকি প্রোগ্রাম করবে। আমি আর অমত করেনি। তোকে ডাকতে নিছিলাম আবিরের মা বলল ঘুমুচ্ছিস তাই না ডাকতে। আমিও আর ডাকে নি। নাক ফুল দিয়ে গেল। আর একটু আগে বাসা থেকে গেল।
মায়ের কথাগুলো একটু অদ্ভুত লাগছিল। যেখানে গতকালকেও আবির এ বিয়ের বিপক্ষে ছিল আবিরের মা চাচ্ছিল না বিয়েটা হোক সেখানে আজকে কেনই মা এসব বলছে। কিছুটা অবাক হচ্ছিলাম। মনে প্রশ্ন জাগলেও দমিয়ে নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
– আর আবির কী বলেছে? তোমার সাথে কী আবিরের কথা হয়েছে?
– আমার সাথে তো কথা হয়নি। আবিরের মা বলল আবির রাজি। আর আবির অমত কেন করবে সে তো নিজে তোকে পছন্দ করেছে। যা হাত মুখ ধুয়ে খেতে বস। অনেক বেলা হয়ে গেছে। কয়েকদিন পর তোর বিয়ে এখন একটু নিজের যত্ন নিতে শিখ। নিজেকে একটু গুছিয়ে নে। চোখ মুখের অবস্থা তো পুরো শেষ। একটু রূপচর্চা তো করতে পারিস। এখন যদি নিজের প্রতি এত অবহেলা করিস পরে নিজের যত্ন নিবি কী করে। আগে নিজেকে সুন্দর কর। ভেতর বাহির সবকিছু সুন্দর লাগবে। নিজেকে পরিপাটি করার মধ্যেও দেখবি অদ্ভুত একটা শান্তি পাচ্ছিস। তোর হাসি মুখটা যে আমি সবসময় দেখতে চাই রে মা। তাড়াতাড়ি উঠে খেতে আয় এবার। তোর পছন্দের আলু পরোটা বানিয়েছি।
কথা বলতে বলতেই মা রুম থেকে বের হলো। মা বের হতেই আমি আবিরের মাকে কল দিলাম। ওপাশ থেকে উনি কলটা ধরে বললেন
– হ্যাঁ, মা ঘুম থেকে উঠেছ?
– হ্যাঁ উঠেছি। আচ্ছা মা আপনি কি আমাদের বাসায় এসেছিলেন? বিয়েটা নাকি হচ্ছে? আপনি নিজেই তো বিয়েটা ভেঙ্গে দিছিলেন তাহলে আবার কী এমন হলো নাক ফুল দিয়ে গেলেন। আমি তো বুঝতে পারছি না।
মা হাসতে হাসতে বলল
– আবির বিয়েতে রাজি হয়েছে। আর মা যা হয়েছে তো হয়েছেই আমাদের তাতে কোনো মাথা ব্যথা নেই। এখন যত তাড়াতাড়ি হোক বিয়েটা হয়ে যাক।
– মা অরন্যকে ডিভোর্স দেওয়ার আগে কোনো স্টেপ নিতে চাচ্ছি না। আর আবিরের সাথেও আমার কথা বলার আছে। আমি আপনাকে এ বিষয়ে মতামত পরে দিচ্ছি।
– নতুন করে মতামতের কী আছে? আবির প্রথম বুঝতে পারে নি তাই এমন বলেছিল আর এখন বুঝতে পেরেছে বিষয়টা তাই সব মেনে নিয়েছে। সমস্যা নেই তুমি আবিরের সাথে কথা বলো।
আমি কলটা কেটে আবিরকে কল দিলাম। আবির কলটা ধরেই বলল
– পূর্বের ব্যবহারের জন্য দুঃখিত। আমি তখন মানতে পারছিলাম না। সব দিক বিবেচনা করে মনে হলো আমার তোমার সাথে এমন করা উচিত হয়নি। কারণ তুমি সে অবস্থায় যা করেছো সেটা তোমার দিকে দিয়ে সঠিক। আমি সব কিছু চিন্তা করে মাকে সিদ্ধান্ত জানিয়েছি। মাও তোমাকে অত্যন্ত পছন্দ করে তাই বিষয়টা নিয়ে আর কোনো অমত করেনি। তোমার মতামত জানতে চাই। ভুল মানুষ করে আমিও করেছি সব ভুলে কী এক হতে পারি না আমরা?
আমি আবিরকে কী বলব বুঝতো পারছি না। আবিরকে হালকা সন্দেহ হচ্ছিল তবুও একটু বিশ্বাস করতে মন চাইল। আর আজকাল যা হচ্ছে তাতে সন্দেহ জিনিসটা হয়তো মনে আঁকড়ে ধরেছে। আমি কী উত্তর দিব বুঝতে পারছি না। চুপ হয়ে গেলাম। আবিরের হ্যালো, হ্যালো শব্দ কানে আসতেই আমি হালকা গলায় বললাম
– অরন্যকে আগে ডিভোর্স দিতে হবে তারপর এ বিয়ে করতে হবে। কিন্তু অরন্যকে তো পাচ্ছি না। ডিভোর্স কী করে দিব৷ আর কাগজ পত্রও পাচ্ছি না।
– অপ্সরা এত অস্থির হইয়ো না। অরন্যকে কবে বিয়ে করেছিলে সেটা মনে আছে তো? আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি কাগজ ছাড়াও ডিভোর্সের ব্যবস্থা করে নিব। যেদিন বিয়ে করব সেদিনেই ডিভোর্স আগে হবে তারপর বিয়ে। তুমি একদম চিন্তা করো না। আর আমি তো তোমার বাসায় যেতে পারব না। তোমাকে বিয়ের দিন আমার বাসায় আসতে হবে।
– সে নাহয় আসা যাবে। তবে বিষয়টা কেমন জানি গোলমেলে লাগছে।
– তোমার জীবনে অনেক নেতিবাচক বিষয় ঘটেছে তাই তুমি সব কিছু এখন সহজ ভাবে নিতে পারছো না। কালকে তোমার কথাগুলো শুনার পর আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গোলমেলে লাগার তো কিছু দেখছি না। খাওয়া দাওয়া কী করেছো?
– নাহ! মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম।
– খালি পেটে আছো তাই বিষয়গুলে গোলমেলে লাগছে৷ খাওয়া দাওয়া করো সব ঠিক হয়ে যাবে। আর আমাকে ক্ষমা করে দাও। বিষয় টা সাথে সাথে মানতে পারে নি আমি। তাই কী থেকে কী করেছি জানি না৷ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। সবমিলিয়ে আমি তোমাকে আর অসম্মান করব না। আমাকে কী ক্ষমা করে দেওয়া যায় না।
আবিরের কথাগুলো বেশ সাবলীল। মনে মনে ভাবলাম আবিরের জায়গা থেকে আবির এতটাও ভুল ছিল না। সে ভুল বুঝেছে তাকে তো একটা সুযোগ দিতেই পারি। আর এবার তো ও সবটা জেনে আমাকে মেনে নিয়েছে এখানে ও পরবর্তীতে কোনো কথাও শুনাতে পারবে না৷ আবিরের মা ও সবটা জানে। তারা যদি অতীত মেনে আমাকে মেনে নিতে পারে তাহলে অসুবিধা দেখছি না। হালকা গলায় বললাম
– আমার একটা ত্রুটি ছিল তোমাকে প্রথম বলিনি এজন্য দুঃখিত।
– চলো মান অভিমানের পালা মিটিয়ে নিই। আর নাকফুলটা দেখো পছন্দ হয়েছে কী না।
আমি মুখে হাই তুলতে তুলতে বললাম
– আচ্ছা রাখলাম। পরে কথা হবে।
মনটা বেশ প্রশান্ত লাগছে। সবকিছু আবার ঠিক হতে চলল। এত কাহিনি হওয়ার একটা ইতিবাচক দিক হলো এখন আবির আমার সব জেনে আমাকে মেনে নিয়েছে আর তার মাও। এখানে আমার আর কোনো ভুল বা মিথ্যা থাকবে না। হাত মুখটা ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলাম খেতে। মা পরোটা নিয়ে এসে বলল
– তোর পছন্দের আলু পরোটা করেছি।
আমি পরোটা খেতে খেতে বললাম
– আবিরের মা যে নাক ফুলটা দিয়ে গেছে দাও তো দেখি।
মা আমার কথায় নাকফুলটা নিয়ে আসলো। আমি নাক ফুলটা দেখার সাথে সাথে আঁৎকে উঠলাম। কারণ এটা তো সে নাকফুল যে টা অরন্য আমাকে দিয়েছিল। এ নাকফুলটা আবিরের মা কোথায় পেল? কারণ নাক ফুলটা আমি অরন্যকে ফেরত দিয়েছিলাম চার বছর আগে। আর এই নাকফুলেই বা কেন দিল।খাবারটা আটকে যেতে লাগল। খুব বেশি খেতে পারলাম না। নাকফুলটা নিয়ে ঘরে এসে আবিরকে কল দিয়ে বললাম
– আবির নাকফুলটা তো অরন্যের এটা মা পেলো কী করে?
– অপ্সরা কী বলছো? এটা মায়ের নাকফুল। অরন্যের হতে যাবে কেন?
– আমার স্পষ্ট মনে আছে এ নাকফুলটা আমি চার বছর আগে অরন্যকে ফেরত দিয়েছিলাম।
– অপ্সরা ডিজাইন হয়তো এক। কিন্তু অরন্যের নাক ফুল এটা না। আর তুমি নিজেই অরন্যের মধ্যে ডুবে আছো। নিজেকে সামলাও। নিজের প্রতি অস্থা রাখো। সব কিছুতে সন্দেহ আর কারণ খুজতে গেলে ভালো থাকবে না। আর আজকে কী ক্লাস আছে তোমার?
– আজকে ক্লাস নেই।
– তাহলে বিকেলে এসো।
– হুম আসবো।
কলটা কেটে দিলাম। সত্যিই তো এক ডিজাইনের নাক ফুল তো হতেই পারে। আমি সত্যিই একটু বেশি কারণ খুঁজে বেড়াচ্ছি সবকিছুতে। যা হবে ভালোর জন্য কথাটা মনে মনে বলেই দীর্ঘ শ্বাস নিলাম। তবে অরন্য কোথায় গায়েব হলো সেটাও ভাবার বিষয়। এমন সময় ফোনে অচেনা নম্বর থেকে কল আসলো আমি কলটা ধরতেই একটু বিস্মিত হলাম। কারণ
(চলবে)