প্রাক্তন🖤
লেখাঃ সাকিব সাদমান
পর্বঃ ০৪
সারাদিন জনমানবহীন একটা জায়গায় বসে কাটিয়ে দেই। বসে বসে আমি কি ভেবেছি সেটা আমার কাছেও অজানা।
তবে রাতে সেই বাড়িতে ফিরি। এত রাতে ফেরাট কারণে শুরু হয় তাদের বকাবকি। তবে সেসবে কান না দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যাই।
ফ্রেশ হয়ে সবাই একসাথে খেতে বসি।
খাওয়ার পর সবাই একসাথে বসে গল্প করতেছিল। তবে আমি শুধু নিপা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। জানি না কেন? কিন্তু অদ্ভুত এক মায়া রয়েছে মেয়েটির চেহারায়।
সবাই যার যার ঘরে ফিরবো তখনই কেউ একজন বাড়িতে আসলো। রাততো অনেক হয়েছে? এত রাতে আবার কে?
সেখানে উপস্থিত আমি বাদে সবাই এমন ভাবে বসে গল্প করছে যেন এটা রোজকার মতন। শুধু আমিই অবাক হয়ে চেয়ে আছি শুধু দেখার জন্য কে এসেছে?
দরজা দিয়ে যে মানুষটা ভেতরে প্রবেশ করলো তাকে দেখে বিস্ময় না হয়ে পারলাম না। সাথে সাথে দাঁড়িয়েও গেলাম।
ছায়ার বাবা!!! ভুল দেখছি না তো আমি? বার বার চোখ ডলে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করতে ছিলাম। কিন্তু পরিবেশটা এত শান্তই বা কি করে? কোন প্রকার ঝড় আসার কি পূর্ব লক্ষণ এটা?
আমি যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকেও বেশি ছায়ার বাবা অবাক হয়েছে। সেও বিশ্বাস করতে পারতেছে না। যে আসলে আমিই বা এখানে কেন?
আমাদের একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকার মাঝে নিপা মেয়েটা নানাভাই নানাভাই বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
বিষয়টা যেন আরো জটিল হয়ে পড়লো। আমার জানামতে ছায়ার তো আর বোন নেই তাহলে এ কে? এর সাথে তার কিসের সম্পর্ক? যেই না ঝটগুলো খুলতেছিল তখনি আরেকটা ঝড় এসে সেটাকে আরো জটিল করে দিল।
তাদের নানা নাতিনের কথোপকথন শুনার এখন বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হচ্ছিলো না। বরং রাগ হচ্ছিলো। তাই তো সেখান থেকে বেরিয়ে ছাদে চলে গেলাম।
এই সেই মানুষ যার জন্য ছায়া আমার সাথে নেই। বরং ছায়ার বর্তমান অবস্থার জন্য এই মানুষটাই দায়ী। তবে সে এখানে কেন? আর যদি সে এখানে তাহলে কেন সে ছায়া ঐ অবস্থায় ফেলে রেখেছে?
প্রশ্নগুলোর উত্তর যেন পেয়েও হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তখনই মনে পড়লো লিলুর বলা নিপার নানাভাইয়ের সম্পর্কের কথাটা। সে যদি ছায়াকে খুঁজছেই তাহলে পাচ্ছে না কেন?
আজ খুব করেই সিগারেট টানতে ইচ্ছে হচ্ছে। সে চলে যাওয়ার পরেও কখনো ছুঁয়ে দেখিনি। আগে থেকেই খেতাম না। কিন্তু সে সম্পর্কে থাকা অবস্থায় বার বার বলেছে সিগারেট যেন না ছুঁই। যত কিছু হয়ে যাক।
কিন্তু আজ তো না খেলে আমার শান্তি হবে না। এত টেনশন আর পেচ সব যেন মাথা গুলিয়ে দিচ্ছে। তাই ছাঁদ থেকে নেমে বাড়ির বাইরেই এক টং দোকানে চলে গেলাম।
জীবনের প্রথম সিগারেট খেয়ে দেখবো আসলেই কি মানসিক শান্তি আসে নাকি? আজ যে আমার মানসিক শান্তির খুব দরকার।
টং দোকানের চাচার কাছে যে না হাত বাড়িয়ে সিগারেট চেয়েছি তখন সাথে সাথে আরো একজন ব্যক্তি হাত বাড়িয়ে সিগারেট চায়।
অলৌকিক না লৌকিক জানা নেই তবে সেটা ছায়ার বাবাই ছিল। তবে আমার জানামতে ছায়ার বাবা কখনোই সিগারেট খায় না? আর যদিও খায় এত রাতে এভাবে বাইরে।
তাকে দেখেও কোন প্রকার কথা তার সাথে বলিনি। কেনি বা বলবো? কোন কারণ খুঁজে পাইনি!!!
সিগারেটে টান দেওয়ার সময় যখন কাশতে ছিলাম তখন ছায়ার বাবা নিজে থেকেই বলে,
আজ প্রথমবার তাই? আমিও বছরখানেক আগে এমন টেনশনে পড়ি তারপর থেকেই শুরি করি। (ছায়ার বাবা)
জবাবে কি বলবো? জানা নেই আমার। তাই তার দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে আবার সিগারেট টানতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
তুমি অনেক কিছু থেকে অজানা? তুমি যা ভাবছো তেমন কিছুই তোমার সাথে অলৌকিক ভাবে ঘটেনি। বরং সম্পূর্ণ লৌকিক ভাবে ঘটানো হয়েছে। (ছায়ার বাবা)
এইবার যেন আর চুপ করে থাকা হলো না। সবকিছুর উর্ধে বলেই দিলাম,
মানে? (আমি)
আমাকে দেখে তোমার সেদিনের কথা মনে পড়ে গেল তাই না? যেদিন তুমি ছায়ার হাত ধরে আমার সামনে এসে দুজনের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেছিলে। একদম কনফিডেন্সে,চোখে মুখে ভয়ের কোন চিহ্ন মাত্রও ছিল না। কিন্তু ভাগ্যক্রমে সেদিনই আমি তোমায় রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। মনে আছে? (ছায়ার বাবা)
লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
সেটা কি ভুলার মত? যে এত সহজে ভুলে যাব!!! সেদিন যদি আপনি হ্যা করতেন তাহলে আজ হয়তো এরকম কিছুই হতো না। (আমি)
ছায়ার বাবা একটু হাসে। তবে তার হাসির কারণ খুঁজে পেলাম না।
তোমার মনে আছে কিনা জানি না? তবে তোমাকে আমার সাথে কথা বলতে বলার আগে ছায়া একদিন তোমার সাথে যোগাযোগ করেনি।তুমি বারবার ফোন দিয়েছো সে রিজেক্ট করেছে। এক পর্যায়ে সে ফোন বন্ধ করে রাখে? মনে পড়ে? (ছায়ার বাবা)
অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি,
আপনি কি করে জানলেন? (আমি)
তুমি বোকা ছিলে জানতাম। তবে এতটা বোকা বুঝতে পারিনি। (ছায়ার বাবা)
একটু রেগে-
কি বলতে চাচ্ছেন? (আমি)
সেদিন ছায়া তার বর্তমান স্বামী কে দেখা করাতে নিয়ে এসেছিলো। আর তোমার ব্যাপারে সবটা বলেছিল। (ছায়ার বাবা)
কিহহহ!!!! ছায়ার স্বামীকে না আপনি পছন্দ করে বিয়ে ঠিক করেছেন? তাও আমাকে পছন্দ না বলে? (আমি)
এইসব তোমাকে কে বলেছে? (ছায়ার বাবা)
ছায়া ছাড়া বলার মতো কি কেউ আছে? ( আমি)
সবকিছু ছায়ারই পরিকল্পনা ছিল। ছায়ার সাথে তার পছন্দের ও ভালোবাসার মানুষটিকেই বিয়ে দিয়েছি। (ছায়ার বাবা)
আপনি মিথ্যে বলছেন? ছায়ার ভালোবাসা তো আমি!!! যদি দিতেনই তাহলে সেদিন তো আমাক রিজেক্ট করতেন না। (আমি)
ছায়ার বাবা এখন একটু জোরেই হাসতে থাকে। আর দোকান থেকে এক প্যাকেট সিগারেট নেয়। একটা সে ধরায় আরেকটা আমার দিকে এগিয়ে দেয়।
ধর!! এটাতে আগুন লাগিয়ে টান দেও। তোমার মাথা ক্লিয়ার হবে। (ছায়ার বাবা)
আমিও অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সেটা নিয়ে নেই। আর ছায়ার বাবার হাসির কারণ খুঁজতে থাকি সিগারেটের ধোঁয়ার মাঝে।
বিস্মিত হইও না। ছায়া বুঝতে পেরেছিল তুমি শুধু ওর আবেগ ছিলে। ভালোবাসাটা রাব্বি ছিল। আর এই রাব্বিই ওর স্বামী। তাইতো তোমার কাছে ভালো সেজে তোমাকেই ব্যবহার করেছে। (ছায়ার বাবা)
কিন্তু? (আমি)
শুন যেদিন তুমি ওকে ফোন এ পাও নি সেদিন ও ফোন বাড়িতে রেখে রাব্বির সাথে ছিল সারাদিন। আমার সাথে মাত্র মিনিট দশেকের মতো কথা বলে চলে গিয়েছিলো। তারপর তোমার ব্যাপারে সবটা বলে। আমি জানার পর তোমাকে সব সত্যিটা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ওর মনে কি চলতেছিলো আমার জানা ছিলো না। তাই আর বলা হয়ে উঠেনি। কিন্তু ও সেদিন বলেছিলো ২দিন পর ওকে বিয়ে করবে সেইটা বলতে তুমি আসবে। আর তোমাকে যাতে আমি রিজেক্ট করে দেই। আর আমিও তাই করি। (ছায়ার বাবা)
আমি যেন কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারতেছিলাম না। সবকিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। হাতের মাঝে সিগারেট টা কখন পুড়ে গেছে জানতেই পারিনি।
কিন্তু যখন বুঝতে পেরেছি ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। হাতের মাঝে আগুনের ফুলকির ছ্যাকা লেগে গিয়েছে।
কিন্তু ওর এত কিছু করার কি প্রয়োজন ছিল? একবার বলেই দেখতো!! থাকতে চায় না আমার কাছে। আমি কি ওকে কখনো জোর করে আটকে রাখতে চেয়েছি? (আমি)
সেটা ওর কাছ থেকেই জেনে নিও। তবে যেদিন তোমাদের পালানোর কথা সেদিন ও সেই একই ট্রেনে রাব্বির সাথে চলে আসে তোমার সামনে দিয়ে। তোমাকে স্টেশনে বসে থাকতেও দেখেছে। (ছায়ার বাবা)
আমি এতটুকু শুনে উঠে দাড়ালাম। কেন জানি আজ খুব কান্না পাচ্ছে। ও চলে যাওয়ার পরেও এত কান্না আসেনি। বরং আজ এগুলো শুনে বুকের ভেতরটা ফেটে চিৎকারের আওয়াজ বের হচ্ছে।
তবুও ছায়ার বাবার সামনে নিজেকে সামলে নিয়ে বলি,
আমি তো ওকে বার বার বলেছি কখনো চলে যেতে চাইলে ইশারা কইরো। আমিই তোমাকে তোমার গন্তব্য পর্যন্ত পৌঁছে দিব। তাহলে এত অভিনয় করার কি প্রয়োজন পড়েছিলো? (আমি)
ছায়ার বাবা কিছু বলবে তার আগেই অন্ধকার থেকে হাতে তালি দিতে দিতে কেউ একজন বের হচ্ছে। সে আর কেউ নয় বরং লিলু।
আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
বাহ্ বাহ্!! আমার জন্য এমন এক হাঁদারাম কে নিয়ে এসেছে যে কি না আগে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক করেছিলো? আগে জানলে কখনোই রাজি হতাম না। (লিলু)
কথাগুলো সে যে বিয়ে ভাঙার জন্যই বলেছে তা তার চেহারায় স্পষ্ট।
ছায়ার বাবা লিলুকে বুঝানোর চেষ্টা করছে। তবে সে উচ্চস্বরে সবাইকে ডাকাডাকি শুরু করে। আমিই ছায়ার বাবাকে ইশারা করে কিছু বলতে মানা করে দেই।
মধ্যরাতে সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে আছি। আগে কি হবে? বা পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা সবার অজানা।
চলবে………
বিদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।