প্রাক্তন পর্ব-০২

0
3900

প্রাক্তন 🖤

লেখাঃ সাকিব সাদমান

পর্বঃ ০২

ও কথা না বলে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আটকে নিয়েছি। তখনই আমার পরিবারের লোকেরা নাস্তা শেষ করে স্টেশনে ফিরে।

আমাকে প্রাক্তনের হাত ধরে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায়। দূর থেকে তারা চিনতে পারে না। তারা দূর থেকে অসহায় একজন মহিলাই ভাবে।

কিন্তু তারা যখন কাছে আসে, আসতে আসতে বিস্মিত হয়ে যায়। কারণ তারাও হয়তো ছায়াকে এভাবে এই জায়গায় আশা করেনি।

কে কি বলবে? তা খুঁজে পাচ্ছে না। এতবছর পর এই অবস্থায় দেখে তারা আমার থেকেও বেশি অবাক হয়েছে।

একটু ঝাঁঝাল কন্ঠেই কথাটা বললো আমাকে,

মাহিন ও এখানে কেন? আর তুই বা ওর হাত ধরে আছিস কেন? (মা)

হাতটা ছেড়ে দিন৷ নাহয় আপনারই সমস্যা হবে। আমি এখন শুধু রাস্তার মেয়ে। আমার কোন ঠিকানা নেই।আমি আর আগের ছায়া নেই। (ছায়া)

ওর এই কথায় ওর কষ্টটা স্পষ্ট ফুটে উঠছে তবে সবার এর অর্থটা বুঝার ক্ষমতা নেই।

আমি এখন কি করবো? কোনদিকে হাঁটবো!! বুঝে উঠতে পারতেছি না। কারণ একদিকে পরিবার আবার আরেকদিকে প্রাক্তন।

প্রশ্নগুলো ঝড় তুলে তুলপার করে ফেলতেছে। তবে কেন জানি আজ ছায়ার পাশে দাঁড়াতে খুব ইচ্ছে করছে।

তবে মায়েরও কড়া নির্দেশ যাতে করে হাতটা আমি ছেড়ে দেই। তবে যে মানুষটি সেদিন ওভাবে ছেড়ে গিয়েছিল সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। শুধু একটু সুখের জন্য? তাহলে আজ তার এ অবস্থা কি করে? বিষয়টা আমাকে খুব ভাবাচ্ছে।

ভাবনার জগতে ডুবে থাকার মাঝেই আবারও কানে ঝাঁঝালো কন্ঠে ভেসে আসলো,

তুই এখনো ওর হাত ধরে আছিস? তকে আমি কি বললাম? শুনতে পাসনি!!! (মা)

আমি এখন আর হাত ধরে রাখতে পারিনি। হাতটা ছেড়ে দিয়েছি। কেনই বা ছাড়লাম তাও অজানা আমার কাছে।

জীবনের মোড়গুলো বড়ই অদ্ভুত। যেখানে সবটা শেষ হয়েছিল আজ সেখান থেকেই আবার শুরু হতে যাচ্ছে। তবে সব যেন ঘুলিয়ে যাচ্ছে।

একটু রেগে বললো,

বেহায়া মেয়ের মতো এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা ভাগ এখান থেকে। (ভাইয়া)

আরেহ ওকে কি বলছিস? ওদের মতো মেয়েদের লজ্জা শরম আছে নাকি? যদি থাকতো তাহলে এভাবে অসহায় সেজেগুজে আবার আমার ছেলের কাছে আসতো না। (মা)

ছায়া চুপচাপ সব কথা শুনে যাচ্ছে। আমি যেন কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। জানি না কেন? আমি আজ থেমে গেলাম।

কিন্তু ছায়া ঠিকই আমাকে তার পাশে আশা করেছিল। তবে চুপ থাকতে দেখে সে নিরাশ হয়ে গেল।

মনে মনে কথাগুলো নিজেকেই বললো,

আর হয়তো তুমি আমাকে ভালোবাসো না। যদি বাসতে তাহলে অবশ্যই আমার অপমান গুলো এভাবে সহ্য করতে না। তুমি বদলে গেছো। হয়তো নিজের জীবনে এগিয়ে গেছো। বিশ্বাস কর, আমি পারিনি না বদলাতে না এগিয়ে যেতে। আজকে পরিস্থিতি আমাকে এ পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছে। তুমি যদি সবটা জানতে তাহলে হয়তো এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে না। (ছায়া)

তারপর চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল। তবে পরক্ষণেই এক ফোঁটা চোখের জল তার গাল বেয়ে নিচে পড়লো।

রাগে একটা ধাক্কা দিয়ে,

কান্নার অভিনয় করে আবার আমার ছেলের মন গলাতে এসেছিস কাল নাগিনী। দূর হ চোখের সামনে থেকে। (মা)

ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ছায়া পড়ে যেতে নিলে আমি তাকে ধরে ফেলি। তাকে ধরার ইচ্ছা ছিল না। তবে এ অবস্থায় দেখে অনিচ্ছা থাকা সত্যেও ধরে ফেলি।

আপনাকে আমাকে ধরতে হবে না। মানুষের লাথি ও ধাক্কা খেয়েই বেঁচে আছি। এগুলো এখন আর আমার কাছে নতুন নয়। আমি জানতাম আজ আপনারা এখানে আসবেন!! আর অন্ধকার থাকায় চিন্তেও পারিনি। যদি চিন্তাম তাহলে সামনে যেতাম না। আসলেই আমি অভাগী। ভালো থাকবেন আমি এখন আসি। (ছায়া)

একদমে কথাগুলো বলে সে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলো।

জানি না কেন? তার প্রত্যেকটা কথা আমার বুকে এসে গেঁথেছিল। পরিবারের সবাইও তার এমন কথা শুনে অবাক হয়েছে।

আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কেন জানি চাইতেও তাকে ফিরিয়ে আনতে পারতেছিলাম না। শুধু অবাক নয়নে তার বদলে যাওয়ার কারণ খুজতেছিলাম।

মনে মনে নিজেই তাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলাম,

জানো প্রিয়, আমি বদলে যাইনি। এখনো ভালোবাসি। আগের মতো নয় বরং তার থেকেও বেশি। তোমাকে হারানোর পর পাগল প্রায়ই ছিলাম। আজও তোমার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বেড়াই। আজকে সবাই যখন তোমাকে কথা শুনাতে ব্যস্ত তখন মনের মাঝে কিছু একটার সংশয়ের জন্যই তোমার পাশে দাড়াতে পারিনি। তবে আমি বদলে যাইনি। বরং এখনো আগের থেকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কেন সেদিন ওভাবে হারিয়েছিলে? (আমি)

কথাগুলো মনের গভীরেই রয়ে গেল। চোখ বন্ধ করতেই যেন চোখের পানি বাঁধ পেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেল। তবুও নিজেকে সামলে নিলাম।

অনেকটা সময়ই নিরবতা বজায় ছিল আমাদের সবার মাঝে। কেউ কারো সাথে তেমন কোন কথা বলতে ছিল না। এভাবেই রওনা দিলাম আত্মীয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

তবে স্টেশনেই যেন মনটা পড়ে রইলো। কেন জানি না ছায়ার পাশে থেকে সবটা জানতে ইচ্ছে করতেছে। কিন্তু অভিমানের পাল্লা এতই ভারী যে পারছি না তার পাশে দাঁড়াতে।

আধঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। তবে যাদের বাড়িতে মেয়ে দেখতে এসেছি সেই বাড়িটা সম্পূর্ণ পুরানো ডাকবাংলোর মতো। বিশাল সাইজ অদ্ভুত দেখতে।

বাড়ির দিকে তাকিয়ে ছায়ার কথাটা যেন কিছুক্ষণের জন্য মন থেকে সরে গেল। আর আমিও বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।

এখানে আমাদের দুই রাত তিন দিন থাকতে হবে। মেয়ে দেখার জন্য নয় বরং তাদের মেহমান হিসেবে। তাদের পরিবার উচ্চবিত্ত বলে মনে হয় না। তবে তাদের ভেতরটা আপনাদের সব ধারণা বদলে দেবে।

এখন আমাদের মেয়ে দেখার পালা। অপেক্ষার প্রহর কাটিয়ে যখন কনে কে লাল শাড়ি পড়িয়ে আমাদের সামনে এনে বসালো তখনও মেয়েটির চেহারা দেখতে পাইনি। কারণ ঘোমটাটা একটু বড়সড়ই ছিল।

যখন সবার সম্মতিতে ঘোমটা খুললো তখন সবাই তাকিয়ে ছিল। আমিও তার সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তবে হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য জগতে।

তার এমন সাজ দেখে মনে পড়ে যায় ছায়ার কথা। সম্পর্ক চলাকালীন একদিন আমার জন্মদিন সে এভাবেই সেজে আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছিল। একদম একইরকম সাজগোজ দেখে অনেকটাই অবাক হলাম।

কারণ এরকম সাজের বর্ণনা শুধু আমিই বলেছিলাম ছায়াকে। তাকে যখন জিজ্ঞেস করেছিলাম কে সাজিয়েছে? তখন সে উত্তর দিয়েছিল তার বান্ধবী।

কিন্তু কোনদিন তার এই বান্ধবীর সাথে আমার দেখা হয়নি। শুধু নামটা শুনেছিলাম, “মরিয়ম”। অদ্ভুত তাই না?

হঠাৎই একটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো আমায়। ভাবিনি সে করবে। হ্যা কনের ভেসে আসা মেয়েটিই বললো,

আপনার না এরকম সাজ পছন্দ? তাই তো এরকম সাজলাম? ভালো লাগেনি? (কনে)

আমার বিয়েতে তেমন কোন ইন্টারেস্টই নেই। তাইতো কনের নামটাও অজানা আমার কাছে। তার প্রশ্নের জবাবে আমি উল্টো প্রশ্ন করলাম। আমার প্রশ্নে পুরো পরিবেশ মহলই বদলে গেল।

শান্তভাবে তার দিকে তাকিয়ে,

আপনাকে কে সাজিয়েছে? সে কে? কি তার নাম ? (আমি)

আমার এমন প্রশ্ন যেন তাদের মাথার উপর দিয়ে গেল। আর কনে সাজে থাকা উনি তো একদম বোকা হয়ে গেল।

পিছন থেকে হাল্কা ধমক দিয়ে,

কে সাজিয়েছে সেটা বড় কথা? নাকি ওকে কেমন লাগছে সেটা বড়? (মা)

আমিও সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে দিলাম,

বর্তমানে আমার কাছে কে সাজিয়েছে সেটাই বড় কথা। আপনি বলেন কে সাজিয়েছে আপনায়? কি তার নাম? (আমি)

আমার এমন উদ্ভট কৌতুহলী আচরণে সবাই যেন বিরক্ত হয়ে গেল। বাড়ির লোক তো ভাবতেই আছে আজ মানসম্মান হয়তো সব শেষ।

তবে সবকিছুর উর্ধে সেই মেয়েটি আমাকে আমাকে তার খোঁজ দিল যে তাকে সাজিয়েছে। তার নাম তো বলতে পারেনি বরং মেয়েটি যে ঘরে আছে সে ঘর দেখিয়ে দিল।

আমিও উঠে সেদিকে যাত্রা শুরু করলাম। কারণ মনের মাঝে হাজারো প্রশ্নের তোলপাড় চলছে। লাগছে যেন সবকিছু একটি সূত্রে গাঁথা।

পিছন বাবা মা ভাই ভাবি সবাই ডেকেছে। কিন্তু আমার সেদিকে কোন খেয়ালই ছিল না। সবকিছু তোয়াক্কা না করে সেই ঘরে নক করে যখন ঘরে প্রবেশ করলাম। ভেতরে গিয়ে আমি অনেকটাই অবাক হয়ে গেলাম।

চলবে……….

বিদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে