#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৯
–তুই এমন করলি কেন ভাইয়ার সাথে?
–কেমন করলাম?
–ভাইয়া তকে ডাকলো আর তুই ভাইয়ার ডাকে সাড়া না দিয়ে হনহন করে চলে আসলি কেন?
–তর ভাইয়া কে এমন যে তর ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিতে হবে আমাকে।
–তীর আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তর হয়েছেটা কি? তুই এ কদিন যাবত এমন অদ্ভুদ আচরণ কেন করছিস?
তীর ততমত খেয়ে ব্রেঞ্চে ঠিকঠাক হয়ে বসে বলে।
–আমি আবার কেমন অদ্ভুদ আচরণ করলাম?
–এই যে তুই ভাইয়ার সামনে পড়তে চাইছিস না, ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চাইছিস না। হয়েছেটা কি তর বলবি একটু আমাকে?
–কিছু হয় নি আমার।
–জানিস ভাইয়া আজকে তকে দেখার জন্য এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছে শুধু তকে এক নজর দেখার জন্য।
–কেন তর ভাই আমাকে দেখার জন্য এত সকালে উঠতে যাবে কেন?
ইশা তীরের মাথায় থাপ্প’ড় দিয়ে বলে।
–তুই কি কিছু বুঝিস না তীর!
–কি বুঝবো?
–ভাইয়া যে তকে ভালোবাসে।
ইশার মুখে ভালোবাসার কথাটা শুনে তীরের বুকটা ধক করে উঠে। তারপরও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলে।
–তর ভাই কি একবার বলেছে সে আমাকে ভালোবাসে তাই শুধু শুধু না জেনে একদম এসব কথা বলবি না।
–মুখে বলেই কি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হবে। তুই কি বুঝে নিতে পারিস না।
–না বুঝে নিতে পারবো না আমাকে যদি ভালোবেসেও থাকে তাহলে সেটা মুখে এসে বলতে হবে আর তখনেই আমি বিশ্বাস করবো।
–তীর তুই এতটা…..
ইশা আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই ক্লাস রুমে টিচার এসে প্রবেশ করে।
_______
ইশান নিজের কেবিনে চেয়ারে মাথাটা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। মাএই ইশানের চোখের পাতা লেগে এসেছে এর মাঝেই দরজায় কেউ নক করে কেবিনে প্রবেশ করে। ইশান চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে রিফাত দু হাতে দুইটা কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে। ইশান রিফাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার চোখের পাতা এক করে নেয়। রিফাতও চুপচাপ টেবিলের উপর কফির মগ দুইটা রেখে চেয়ারে বসে বলে।
–কিরে শালা? এমন আশি বছরের বুড়ো বেডা মাইনষের মতো চিমুছিস কেন?
রিফাতের কথায় ইশান হেসে ওঠে। চোখ মেলে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলে।
–শালা তো ডাকচ্ছিস। আমি কিন্তু আমার আদরের বোনকে তর কাছে বিয়ে দিবো না যতই আমাকে শালা ডাকিস না কেন?
রিফাত নড়েচড়ে বসে একটু ভাব ধরে বলে।
–কেন আমার কাছে তর বোনকে বিয়ে দিবি না কেন? আমার মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে কোথাও খুজি পাবি না বুঝলি।
–হুম সেটাতে আমি জানি।
–কি জানিস?
–কিছু না। তা হঠাৎ আমার অফিসে আসলি।
–এমনি আসলাম। ভাবলাম দেখে আসি আমার বন্ধু প্লাস শালা কি করে?
–একদম শালা ডাকবি না আর আমার বোনের দিকে একদম কু নজর দিবি না।
রিফাত বিরবির করে উঠে।
–নজর তো লেগেছে তবে কু নজর না “ভালোবাসার” নজর।
–কিছু বললি!
–না কিছু না। আচ্ছা বাদ দে ওসব কথা এখন বল তর কি হয়েছে? দুই দিন যাবত কেমন যেন আপসেট হয়ে আছিস তুই।
ইশান কফিতে চুমুক দিতে দিতে বলে।
–কিছু হয় নি আমি ঠিক আছি।
–তীর খুব জ্বালাছে না।
ইশান বাঁকা হেসে বলে।
–তীর! ওর এই তীর নাম রাখাটা সার্থক হয়েছে কেমন ধনুকের তীরের মতো আমার বুকে গেঁথে আছে দেখ। যা ক্ষনে ক্ষনে আমাকে তার সেই বিষাক্ত ব্যাথা অনুভব করতে হয়।
–তুই ওকে বলে দে।
–কি বলবো?
–কি বলবি মানে তুই যে ওকে ভালোবাসিস তার কথা বলবি। আর তুই রিজেক্ট হওয়ার ভয় পাচ্ছিস কেন? তর মতো হ্যান্ডসাম একটা ছেলে প্রপোজ করেছে আর তীর তা ফিরিয়ে দিবে আমার বিশ্বাস হয় না। তাই তুই বলে তো দেখ কি হয়।
–ওর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটা শেষ হোক তারপর না হয়।
–হে তুই আরও সময় নে পরে দেখবি পাখী অন্য খাচাঁয় গিয়ে বন্দি হয়ে আছে।
ইশান কফিতে চুমুক দিয়ে বলে।
–ও যদি আমার ভাগ্যে লেখা থাকে তাহলে ও আমারেই হবে।
_______
দেখতে দেখতে তীর আর ইশার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলো। তীর মাথা থেকে ইশানের যত চিন্তা ভাবনা আছে তা ছুড়েঁ ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে না হলে বোর্ড পরীক্ষায় আটকে দিবে টিচারদের ভাষ্যমতে। তাই মাথা বেঁধে রাতে দিনে পড়াতে লেগে পড়েছে। ইশারও সেইম অবস্থা পরীক্ষার জন্য রিফাতকে ইগনোর করে আসছে। ইশার এই ইগনোর করার জন্য রিফাতের কি অভিমান। এই অভিমান ভাঙ্গতে ইশাকে কত কথাই না রিফাতকে বলতে হয়। ইশার মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো শুনে রিফাত হেসে সেই অভিমান উড়িয়ে দিয়ে ইশাকে পড়ার তাগিদ দেয়। রিফাতের মজাই লাগে ওর অভিমান ভাঙ্গাতে পুচকে মেয়েটা কত শত কথা বলে।
অন্য দিকে ইশান তীরকে দুর থেকে দেখেই নিজের চোখের তৃষ্ণা মিটায়। তীরের সামনে ইশান বেশি একটা পড়ে না বুঝতে পারছে মেয়েটাকে ওকে দেখলে কেমন একটা অস্তিত্বে পড়ে যায় তাই আর নিজ থেকে তীরের সামনে যায় না ইশান।
পরীক্ষাটা যেমন চোখের পলকে শুরু হয়েছিলো ঠিক চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেছে। লাস্ট পরীক্ষাটা দিয়ে তীর বাসায় এসে চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। পরীক্ষা মোটামুটি ওর ভালোই হয়েছে তাই আর পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তাই আজকে সারা দিন সারা রাত ঘুমিয়ে আর মুভি দেখে পার করবে প্লেন করে রেখেছে। কিন্তু তার আর হতে দিলো কই, ইশা সন্ধ্যার সময় এসে হাজির তীরদের বাড়িতে।
_____
সারা বিকাল কুম্ভকর্নের মতো ঘুমিয়ে সন্ধ্যার সময় তীর পপর্কন হাতে নিয়ে বসে পড়েছে মুভি দেখার জন্য। আয়েশ করে সোফায় পা তুলে বসে মনযোগ সহকারে Avatar মুভিটা দেখছে তীর। একটু আগেই আয়েশা সুলতানা এক বস্তা বকা দিয়ে গেছে তীরকে কিন্তু তাতে কোনো হেলদোল নেই ওর। বাবা অফিসে থাকায় সুবিধাটা একটু বেশি হয়েছে তীরের। বাবা থাকলে টিভির ধারে কাছেও যেতে পারে না। পাশে বসেই শাপলা বেগম পান চিবুতে চিবুতে বলে।
–এই তীর এসব কি সিনেমা দেখছিস? ভালো একটা বাংলা সিনেমা দে।
–উফ দাদু! ডির্স্টাব কর না তো। মুভিটা দেখো মজা আছে।
–এত মজা বুঝতে হবে না আমাকে তুই একটা শাবনার সিনেমা দে।
–পারবো না এসব শাবানা পাবানার সিনেমা দিতে। সেই তো এক কাহিনী সেলাই মেশিন নিয়ে গটরগটর।
–তাও তো ভালো আছে তর সিনেমার মতো তো আর না। কি জন্তু পন্তু দেখছিস কখন থেকে। কি এগুলা মানুষ নাকি অন্যকিছু কিছুই তো বুঝা যায় না।
–উফফ দাদু আর কথা বলো না তো এখন দেখো যুদ্ধ হবে।
–তুই তর যুদ্ধ দেখ আমি আর কিছুক্ষন এগুলা দেখলে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাবে।
কথাটা বলেই শাপলা বেগম নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। ঠিক এর কিছুক্ষন পরেই ইশা সেজেগুজে হাজির। ইশা ঘরের ভেতরে ডুকে সোজা টিভির সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে। তীর যেই সাইডেই গাড় ঘুরায় ইশাও সেই সাইডে গিয়ে দাড়ায়। এক পর্যায় তীর রেগে বলে উঠে।
–কি হচ্ছেটা কি এভাবে ব্যাঙের মতো লাফাছিস কেন? শান্তি মতো একটু মুভিটা দেখতে দে।
ইশা তীরের পাশে বসে বলে।
–পরে মুভি দেখবি এখন চল তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
তীর ভ্রু-কুচকে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে।
–রেডি হবো মানে! এখন কোথায় যাবো যে রেডি হতে হবে?
–শপিং করতে যাবো।
–এই সন্ধ্যার সময় কোন দুঃখে শপিং? আর আমি পারবো না যেতে তুই যায়।
ইশা ন্যাকা কান্না করে বলে।
–প্লিজ দোস্ত চল না ভাইয়াদের অনেক কষ্টে আমি রাজি করিয়েছি শপিং এ যাওয়ার জন্য। এখন তুই বেকেঁ যাস না প্লিজ।
–মুভি দেখছি ডির্স্টাব করিস না তো।
–এই মুভি আর কত দেখবি তুই? এখন নিয়ে হয়তো আট বার দেখে ফেলেছিস আর দেখতে হবে না এবার চল না প্লিজ আমার এই ইচ্ছেটা পূরন কর প্লিজজজজ।
–কিন্তু কি উপলক্ষে তুই শপিং করতে যাচ্ছিস বলবি একটু আমাকে?
–ইহান ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে। আর আমি আন্টির কাছ থেকে এসেই অনুমতি নিয়ে নিয়েছি তাই কোনো এক্সকিউজ দিবি না।
–মানে ভাইয়ার বিয়ে তো আরও পনেরো দিন পর আর তুই এখন থেকেই শপিং শুরু করে দিচ্ছিস তুই পারিসও বটে ইশু।
ইশা কিছুটা রাগ দেখিয়ে সিরিয়াস মুডে বলে।
–তুই যাবি কি না সেটা বল!
–আরে রেগে যাচ্ছিস কেন তুই?
–রাগ করছি কই তুই যাবি কিনা সেটা বল।
–আচ্ছা আচ্ছা বাবা রাগ করিস না আমি যাবো। তুই বস আমি পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
ইশা তীরকে জড়িয়ে ধরে বলে।
–উম্মাহহহ। আমার জানটুসটা।
–হয়েছে ছাড় এবার না হলে লেইট হয়ে যাবে।
–হুম তাড়াতাড়ি যা আর আমি নানুর সাথে গিয়ে দেখা করে আসি।
তীর উঠে সিড়ি বেয়ে উপরে নিজের ঘরে যেতে নিবে তখনেই কিছু একটা ভেবে ইশার কাছে এসে বলে।
–ওই ইশান ভাইয়াও কি যাবে আমাদের সাথে।
ইশা এক প্রকার টান দিয়েই কথাটা বলে।
–ইশান ভাইয়ায়য়য়া।
–হুম ইশান ভাইয়াও কি যাবে?
–না না ইশান ভাইয়া যাবে না তুই, আমি আর ইহান ভাইয়া যাবো শুধু।
–সত্যি বলছিস তো।
–হুম একদম সত্যি।
–ঠিক আছে আমি রেডি হয়ে আসছি।
তীর যেতেই ইশা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বলে।
–ঘসেটি বেগম একটা।
#চলবে_____
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১০
তীর রাগী চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এখনেই কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে নিবে ইশাকে। তীরের ইচ্ছে করছে ইশার মাথাটা ফাটিয়ে বলতে এত বড় মিথ্যা কথা বলার জন্য। ইশাও ভুলেও তাকচ্ছে না তীরের দিকে। যেভাবে তীর ওর দিকে তাকিয়ে আছে তাতে বেচারি ভীষন ভয় পেয়ে আছে। ইশা ঢোক গিলে তীরের দিকে মেকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন দোস্ত?
তীর চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলে।
–মিথ্যা বললি কেন তুই আমাকে?
–কি মিথ্যা বলেছি তকে আমি?
–তুই এটা বলিস নি যে ই…
তীর ইশানের নামটা নেওয়ার আগেই থেমে যায় কারন ইশান ওর সামনে বসে এক মনে মুখে গম্ভীর ভাব নিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আর তার পাশেই ইহান বসে আছে। আর তীর আর ইশা পিছনে। তীর নিজের রাগটা কন্ট্রোল করে ইশার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে।
–তুই কাজটা একদম ঠিক করিস নি।
ইশাও ফিসফিসিয়ে বলে।
–কোন কাজটা?
–ইশান ভাইয়া যাবে না তুই বলেছিস কিন্তু এখন তো ঠিকেই যাচ্ছে আমাদের সাথে।
–আরে আমি তো…
ইশার কথার মাঝেই ইহান বলে উঠে।
–কি রে তরা দুজন এমন ফিসফিসিয়ে কথা বলছিস কেন? কিছু কি হয়েছে?
ইশা ততমত খেয়ে বলে।
–কিছু হয় নি তো ভাইয়া?
–তাহলে এমন ফুসুর ফুসুর করছিস কেন?
–আমাদের পার্সোনাল কথা কি তোমাকে এখন শুনতে হবে ভাইয়া।
–না না তদের পার্সোনাল কথা শুনতে চাই না আমি।
ইহান কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে।
–তো তীর তর পরীক্ষা কেমন হলো?
–হে ভাইয়া ভালো।
–বোর্ড পরীক্ষা তো আর দেরি নেই তাই এই বিয়ে শাদী শেষ হয়ে যাওয়ার পর ধুমসে পড়ালেখা শুরু করে দিবি দুজনে।
ইশা ছটপট উত্তর দেয়।
–হে ভাইয়া তুমি একদম চিন্তা করো না তোমার বিয়েটা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেই আমরা দুজনে পড়তে বসবো।
–মানে। বিয়ে তো আরও পনেরো দিন বাকি তো এই পনেরো দিন কি পড়তে বসবি না।
–না পড়তে বসবো তো তবে কম পড়বো আর কি। তোমার বিয়ে নিয়ে কত প্লেন আছে সেই প্লেন গুলা সাকসেসফুল করতে হবে না।
–তা কি কি প্লেন করছিস আমার বিয়ে নিয়ে?
–তোমাকে বলবো কেন?
–আচ্ছা ঠিক আছে বলতে হবে না।
তীর আড় চোখে ইশানের দিকে তাকাছে লোকটা আসার পর থেকে একটা কথাও বলে নি চুপচাপ ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। এমন কি তীরের দিকেও ফিরেও তাকায় নি।
____
গাড়ি থামে শপিংমলের সামনে। একে একে সবাই বের হয় গাড়ি থেকে। ইশান গাড়ি পার্কিং লটে রেখে এসে ওদের সাথে যুক্ত হয়। ইশান তীরের পিছন পিছন হাটছে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে আর তীর মাথা নিচু করে চুপচাপ হাটছে আর ইশা ফটরফটর করেই যাচ্ছে কি কি কিনবে তা নিয়ে।
ওরা এসে পোছাঁয় একটা লেহেঙ্গার দোকানে। ইশান ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় ওদের সাথে দোকানে আসতে পারে নি। ইশা একে পর এক লেহেঙ্গা দেখেই যাচ্ছে কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না। ইহান এক প্রকার বিরক্ত হয়েই বলে।
–তুই কি শুরু করলি ইশু এত গুলা লেহেঙ্গা দিলো ওরা আর তর একটাও পছন্দ হয় নি।
ইশা মুখটা ভোঁতা করে বলে।
–আমি কি করবো পছন্দ না হলে।
–তরা মেয়েরা আসলেই…
বলতে গিয়েও থেমে যায় ইহান। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে।
–তাড়াতাড়ি পছন্দ কর লেহেঙ্গা টেহেঙ্গা।
ইশা তীরকে গুঁতো দিয়ে বলে।
–এই তীর দেখ না কোন লেহেঙ্গাটা বেশি সুন্দর। আসলে আমি দু টানায় পড়ে গেছি কোন লেহেঙ্গাটা কিনবো?
–সবগুলাই সুন্দর তুই যেটাই পড়বি সেটাতেই তকে ভালো লাগবে। তবে গোলাপি কালারটা পড়লে তকে ভালো লাগে।
–ঠিক আছে তাহলে গোলাপি কালারের মাঝে একটা লেহেঙ্গা নিবো।
তীরের একটা হালকা বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা পছন্দ হয়েছে। সেই লেহেঙ্গাটাই হাতে নিয়ে দেখছে। এমন সময় তীরের পাশে থেকে কেউ একজন শান্ত কন্ঠে বলে উঠে।
–এটা পছন্দ?
তীর চমকে উঠে পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশান দাঁড়িয়ে আছে। তীর সাথে সাথে নজর ফিরে নেয়। ইশান মুচঁকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–কি হলো কিছু জিঙ্গেস করছি তো এটা কি পছন্দ হয়েছে তর?
তীর একটা কথাও বলছে না দেখে ইশানের মেজাজটা গরম হয়ে যাচ্ছে। দাতে দাত চেপে বলে।
–কি সমস্যা কথা বলছিস না? আমি তকে কিছু জিঙ্গেস করছি তো এই লেহেঙ্গা কি তর পছন্দ হয়েছে?
তীর ছোট করে উত্তর দেয়।
–নাহ।
ইশান কিছু বলতে যাবে এর আগেই ইশা বলে উঠে।
–এই তীর তর কোনটা পছন্দ হয়েছে রে? আমি এটা নিবো এটা ফাইনাল।
–খুব সুন্দর হয়েছে তকে মানাবে খুব।
–আচ্ছা এবার বল তর কোনটা পছন্দ হয়েছে?
–আমি নিবো না। আমি তো টাকা আনি নাই।
–টাকা নিয়ে চিন্তা করছিস কেন? টাকা ভাইয়া দিবে তুই বল তর কোনটা পছন্দ হয়েছে?
–তা হয় না রে।
এর মাঝেই ইহান বলে উঠে।
–হয় না মানে কি তর কোনটা পছন্দ হয়েছে সেটা বল। আর আমি আমার এক বোনকে দিতে পারলে আরকে বোন দিতে পারবো না। তুই জাস্ট বল তর কোনটা পছন্দ।
–কিন্তু ইহান ভাইয়া।
এর মাঝেই ইশান দোকানদারের উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
–ভাই এই হালকা বেগুনি কালারের লেহেঙ্গা ওর জন্য প্যাক করে দেন।
–না না লাগবে না আ..
তীর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই ইশান রাগী চোখে তীরের দিকে তাকায় তাতে তীরের মুখ চুপসে যায়। ইশান রাগী কন্ঠে বলে।
–লাগবে কি লাগবে না সেটা আমরা বুঝে নিবো তকে দেওয়া হচ্ছে একটা জিনিস সেটা তুই সাদরে গ্রহণ করবি চুপচাপ।
ইশা মিটিমিটি হাসছে। ইহান আর ইশান দুজন মিলে ইশা আর তীরকে শপিং করে দিলো। বিল মিটিয়ে এবার গেল কসমেটিকের দোকানে। লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে বড় বড় কানের দুল, চুড়ি, লিপস্টিক আরও প্রয়োজনীয় সব কিনলো দুজনে। এর মাঝেই ইশানের নজর পড়ে এক জোড়া পাথরের কানের দুলের উপর। সিম্পলের মাঝে খুব সুন্দর ডিজাইন করা। ইশানের খুব ইচ্ছে করছে তীরকে নিজ হাতে এই কানের দুলগুলা পড়িয়ে দেখতে কেমন লাগে তার তীরকে। কিন্তু তা তো আর হওয়ার নয় তাই আর কানের দুল জোড়ার উপর বেশি আগ্রহ দেখালো না। সব কিছু কেনাকাটা করতে করতে বেজে গেল রাত সাড়ে নয়টা ইশান রাগ দেখাতে গিয়েও রাগ দেখাতে পারছে না। কারন আজকে ইশান বাড়ি থেকেই প্রমিজ করে এসেছে ইশা যা যা করবে সব কিছু দুই ভাইকে মুখ বুজে সহ্য করতে হবে। তাই কি আর করার ইশান আর ইহান দুজনে মুখ বুজে দু হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে বোনের পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
_____
ডিনার শেষ করেই বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ায় ওরা। ইশান ড্রাইভিং সিটে উঠতে যাবে তখনেই কিছু একটা মনে পড়তেই ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–ভাইয়া তোমরা একটু বসো আমি আসছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে।
ইহানকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ইশান দ্রুত পায়ে আবার শপিংমলে ডুকে পড়লো। তীর অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ইশানের যাওয়ার পথে। হঠাৎ লোকটার কি হলো তীর ভেবে পাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষন পর ফিরে এলো ইশান এসেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ইহান ইশান জিঙ্গেসা করে।
–এভাবে তাড়াহুড়ো করে কোথায় গিয়েছিলি?
–একটু দরকার ছিলো ভাইয়া।
–কি দরকার বলা যাবে কি?
ইশান প্রক্ষুত্তরে একটা মুচঁকি একটা হাসি দেয়। ইশানের হাসি দেখে ইহান বলে।
–বুঝেছি বলা যাবে না সমস্যা নাই সব মানুষেরই একটা নিজেস্ব কাজ থাকে।
_____
গাড়ি থামে ফরাজী ভিলার সামনে। দু ভাই পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে ইশা আর তীর দুজনেই বেঘোরে ঘুমোছে। ইহান ইশানকে বলে।
–এর মাঝেই দুজন ঘুমিয়ে পড়লো।
–ঘুমানোর তো কথাই দুজনে যেভাবে ছরকি কেটেছে আজকে।
–আমার পা গুলা ব্যাথা করছে জানিস। আমি আর জীবনে ইশার সাথে এই শপিং নিয়ে কোনো ডিল করবো না।
ইশান ভাইয়ের কথায় হেসে দেয় আর বলে।
–তুমি ইশা নিয়ে ভেতরে যাও আমি তীরকে দেখছি।
–আচ্ছা।
ইহান বোনকে না ডেকে কোলে করে নিয়েই বাড়ির ভেতরে চলে যায়। ইহান যেতেই ইশান গাড়ি থেকে নেমে তীরের কাছে এসে বসে এক ধ্যানে তার ঘুমন্ত পরীর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখের আশেপাশের চুল গুলা আলতো হাতে সরিয়ে দেয়। ইশানের স্পর্শ পেয়ে তীর ভ্রু-কুচ করে ফেলে। ইশান মৃদু হেসে উঠে তীরের এমন করাতে। অনেকটা সময় ইশান তীরকে দেখে নেয় মন ভরে এবার তীরকে ডাকতে হবে না হলে দেরি হয়ে যাবে।
ইশান তীরকে ডাক দেয় কিন্তু কোনো হেলদোলেই নেই তীরের। এবার ইশান তীরের গালে আলতো হাতে চড় দিয়ে বলে।
–তীর!
তীর ঘুম ঘুম চোখে তাকায় ইশানের দিকে ইশানকে নিজের দিকে ঝুুকে থাকতে দেখে ভ্রু-কুচকে নেয়। মুখটা অন্য সাইডে নিয়ে নেয় কিন্তু পরক্ষনে কিছু একটা ভেবে ইশানের কোর্টের কলার ধরে নিজের আরেকটু কাছে নিয়ে ভাঙ্গা কন্ঠে বলে।
–এভাবে ডাকেন কেন আমায়?
ইশান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে তীরের দিকে। এই মেয়ের হঠাৎ হলোটা কি এটা ভেবে। একে ওপরের নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে একে অন্যের মুখের উপর। তীর আবারও বলে।
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?
ইশান শুকনো একটা ঢোক গিলে ভরাট কন্ঠে বলে।
–কিভাবে ডাকি?
–জানেন আপনি যখন আমার নাম ধরে ডাকেন তখন আমার বুকের ভেতরটা কেমন যেন করে উঠে। কেন হয় এমনটা বলুন না? আপনার আশেপাশে থাকলেই কেমন কেমন জানি লাগে আমার ইদানিং কই আগে তো এমন হয় নি। আচ্ছা আপনি কি আমায় ভা…..
এমন সময় ইহান এসে ইশানকে ডাক দেয়।
–এই ইশান?
ইশান ততমত খেয়ে দ্রুত তীরের কাছ থেকে দুরে সরে এসে বলে।
–হে ভাইয়া।
–তীরকে দিয়ে এসেছিস?
–না ভাইয়া কখন থেকে ওকে ডাকছি ও তো উঠছেই না।
–ডাকার দরকার নাই কোলে তুলে বাড়িতে দিয়ে আয়।
–আচ্ছা।
ইহান যেতই ইশান তীরের দিকে তাকিয়ে দেখে তীর আবারও ঘুমিয়ে গেছে। ইশান ভ্রু-কুচকে বলে।
–মানেটা কি? এত ঘুম এই মেয়ের চোখে এত জোরে জোরে কথা বললাম তারপর উঠলো না।
ইশান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আবারও বলে।
–আমাদের বাসর রাতে যদি এভাবে বেঘোরে ঘুমিয়ে পরিস তাহলে কিভাবে হবে তীর? আমি কিন্তু তকে একদম ঘুমাতে দিবো না সারারাত জাগিয়ে রাখবো। ওই দিন রাতে তকে আমি আমার #প্রনয়ের_দহনে পোড়াবো আমি এত বছর যত পুড়েছি এর দ্বিগুন পোড়াবো তকে বুঝলি রেডি থাকিস।
#চলবে________
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১১
ইশান তীরকে ওর বাড়িতে রেখে নিজের ঘরে এসে গায়ের কোর্টটা খুলে সোফাতে রাখে। কোর্টটা সোফাতে রাখার সাথে সাথে পকেট থেকে হলুদ রং এর একটা পেকেট নিচে পড়ে। ইশান পেকেটটা তুলে নিয়ে বেডে বসে। ইশান পেকেট থেকে এক জোড়া পাথরের কানের দুল বের করে। যে কানের দুলটা শপিংমলে দেখেছিলো সেই কানের দুলটা কিনে এনেছে ওই সময়। ইশান কানের দুলটা হাতে নিয়ে মুচঁকি হেসে বলে।
–আচ্ছা এই কানের দুলটা পড়লে তকে কেমন লাগবে তীর? এই প্রথম কোনো মেয়ের জন্য এসব মেয়েলি জিনিস কিনেছি। আচ্ছা তর কি পছন্দ হবে দুলটা। অবশ্যই পছন্দ হবে তর কিন্তু দিবো কি করে তকে এটা। ভাইয়ার বিয়ের দিন কি এটা দিবো তকে। হুমমম ভাইয়ার বিয়ের দিনেই তকে এটা দিবো উপহার হিসেবে।
ইশান কিছুক্ষন কানের দুলগুলার দিকে তাকিয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে যায়।
_____
তীর আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম থেকে উঠে বসে। সকাল হয়ে গেছে চারিদিকে সূর্যের আলো চিকচিক করছে। ফেব্রুয়ারি মাস শীতের প্রোকোপ কমে এসেছে এখন। তীর বেড থেকে নেমে ড্রেসিং টেবিলের বড়ো আয়নার সামনে দাঁড়ায়। এখনো গতকাল শপিং এ যাওয়ার পোশাক গায়ে আছে। তীর ভ্রু-কুচকে বলে।
–এই পোশাকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু আমি তো গাড়িতে ছিলাম তাহলে এখানে আসলাম কি করে? তার মানে কি আমি আবারও ইশান ভাইয়ার কোলে চড়ে ঘরে এসেছি। হায় খোদা!
তীর ঠাস করে চেয়ারে বসে পড়ে বলে।
–ইদানিং এমনটা হচ্ছে কেন বার বার আমার সাথে? যতই লোকটার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি ততই কাছে চলে যাচ্ছি। ধ্যাত!
_____
আজ ইহানের গাঁয়ে হলুদ, মেহন্দি, সঙ্গীত এক সাথেই হবে। সকালে গাঁয়ে হলুদ আর সন্ধ্যায় মেহেন্দি আর রাতে সঙ্গিত। সকাল থেকেই আত্মীয় পরিজন আসা শুরু করছে “ফরাজি” ভিলাতে। সারা বাড়ি গমগম করছে মানুষে। সারা বাড়ি সুন্দর করে প্যান্ডেল করা হয়েছে, নানা রকম বাহারি রঙের প্লাস্টিকের ফুল আর ঝারবাতি দিয়ে ভরপুর চারিদিক। বিয়ে বাড়ি একে বারে জমে উঠছে।
আর এসবের মাঝে তীর পড়েপড়ে ঘুমাচ্ছে উঠার নামেই নেই। ইশা অভিকে অনেক বার পাঠিয়েছে তীরকে তাঁড়া দেওয়ার জন্য। কিন্তু তীরের কোনো পাত্তা নেই। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই ইশা তীরদের বাড়িতে আসে। রুমে এসে দেখে তীর কি সুন্দর হা করে ঘুমাচ্ছে। ইশার মেজাজটা পুরা খারাপ হয়ে যায়। ইহানের বিয়ে নিয়ে কতশত প্লেন করছে দুজনে আর এখন ও কিনা পরে পরে ঘুমোছে। ইশা এক গ্লাস পানি এনে ঢেলে দিলো তীরের মুখে। তীর থরফরিয়ে উঠে বলে।
–মা আমার রুমের ছাদ ভেঙ্গে গেছে গো দেখো কেমন করে বৃষ্টি পড়ছে আমার উপরে।
ইশা তীরের এমন আবাল মার্কা কথা শুনে ধমকে উঠে।
–এই চুপ! কি ছাদ ভেঙে গেছে বলে চিৎকার করছিস। আমি তর মুখের উপর পানি ঢেলেছি আমি।
তীর ইশার কথা শুনে রাগে বলে।
–কেন ঢেলেছিস পানি তুই আমার উপরে?
–যাতে তুই তোর মরার ঘুম থেকে উঠতে পারিস। কত বার পাঠিয়েছি অভিকে তকে ঘুম থেকে তুলার জন্য তার হিসাব আছে।
তীর ইশাকে ভালো করে দেখে বলে।
— আরে ব্যাস ইশু তকে তো সেই সুন্দর লাগছে হলুদের সাজে।
–তকেও সুন্দর লাগবে এমন করে সাজলে। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।
–তুই যা আমি দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসছি।
–শুন শাড়িটা কিন্তু গ্রামো স্টাইলে পড়বি। যেভাবে আমি পড়েছি।
তীর মুখটা কালো করে বলে।
–কিন্তু ওভাবে তো পড়তে পারি না।
ইশা তীরের মাথা ঘাট্টা মেরে বলে।
–মাথায় কি গোবর পোরা নাকি তর। না পারলে নানুর কাছে যাবি নানু পরিয়ে দিবে সুন্দর করে তাহলেই তো হয়।
–ঠিক আছে তুই যা আমি আসছি।
–হুম।
______
তীর গোসল সেরে শাড়ি, ব্লাউজ আর অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে শাপলা বেগমের রুমে জুটে যায় শাড়ি পড়ার জন্য। শাপলা বেগমও সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলে।
–মাশআল্লাহ আমার দাদুটা আজকে ভীষন মিষ্টি লাগছে কারোর যেন নজর না লাগে।
তীর দাদুর কথাতে একটা মুচঁকি হাসি দিয়ে নিজের করে চলে আসে সাঁজার জন্য। হালকা মেকাপ করে নেয়, চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়ে নেয়, হাতে হলুদ রঙের রেশমি চুড়ি, ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপস্টিক, কোমড়ে চিকন চেইনের একটা বিছে। সবশেষে চুল গুলা খেজুর বেনি করে তাতে কৃএিম কাঠগোলাপ গুজে নেয়। ব্যাস সাঁজ শেষ।
_____
ইশান সকাল থেকেই ভীষণ ব্যস্ত এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে করতে হাপিয়ে গেছে। তারপরও কি আর করার এক মাএ বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা এতটুকু কষ্ট তো সইতে হবেই।
ইশান এক গ্লাস পানি খেয়ে সোফাতে হেলান দিয়ে বসে সদর দরজার দিকে তাকিয়ে আছে তৃার্ষ্ণাত দুটো আঁখি নিয়ে। কখন থেকে ইশান ছটপট করছে তীরকে দেখার জন্য কিন্তু তীরের দেখা পাচ্ছেই না বেচারা। এমন সময় সোহেল ফরাজী ছেলের সামনে এসে বলে।
–ইশান বাবা একটু রান্নার সাইডটা দেখে আসবি সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা।
–যাচ্ছি বাবা।
ইশান উঠে দাড়িয়ে আরও এক বার সদর দরজায় দিকে দৃষ্টিপাত করে কিন্তু যাকে দেখার জন্য মন ছটপট করছে তার দেখা নেই। একরাশ ভীষণ্নতা নিয়ে ইশান ঘরের পিছনের দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
______
তীর সামনের গেইট দিয়ে “ফরাজি” ভিলাতে ডুকার চান্স পেলো না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই পিছনের গেইট দিয়েই আসতে হলো “ফরাজি” ভিলাতে। পেছনের দিকটা অনেকটাই ফাকা শুধু রান্না করার লোকরাই আছে তাই এতটা কষ্ট হয় নি আসতে।
তীর সামনের সদর দরজা দিয়ে না ডুকে তাড়াতাড়ি করার জন্য পেছনের দরজা দিয়ে ডুকতে যাবে আর তখনেই ঘটে এক অঘটন। কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলেই চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু শরীরে কোনো রকম ব্যাথা অনুভব না করে নিজের উনমুক্ত কোমড়ে কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে পিটপিট চোখে তাকাতেই ইশানকে নিজের এতটা কাছে দেখে ভরকে যায়।
ইশান ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে আছে তীরের মায়াবী মুখশ্রীর দিকে। ইশানের এতক্ষনের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হলো তীরের দেখা পেয়ে। ইশান তীরকে সোজা করে তো দাঁড় করায় কিন্তু তীরের কোমড়ে রাখা বা হাতটা সরায় না। কেমন নিষ্পলকভাবে তীরের দিকে তাকিয়ে আছে। তীরের চুড়ি পরিহিত হাত দুটো ইশানের বুকের উপর রাখা।
এবার তীরও চোখ তুলে ইশানের দিকে তাকায় বাসমতী কালারের পাঞ্জাবিতে আজকে একটু বেশি সুদর্শন লাগছে লোকটাকে তীরের কাছে। সবসময়েই লোকটাকে সুদর্শন লাগে তীরের কাছে কিন্তু আজকে একটু বেশিই নজরকাঁড়া সুদর্শন লাগছে। দুজনের চাওনি মিলিত হওয়াতে তীরের বুকটা ধক করে উঠে। মনে হচ্ছে কেউ যেন হাতুরি দিকে হৃদয়টা পিটাছে যার জন্য এতটা ফাস্ট হয়ে গেল হৃদস্পন্ধ। তীর সাথে সাথে নজর ফিরিয়ে নেয় ভীষণ লজ্জা লাগছে এখন ওর। এভাবে তাকানোর কি আছে বুঝতে পারছে না আগে কি কোনো দিন দেখে নি লোকটা ওকে। তীর কাপাকাপা গলায়।
–ছা.. ছাড়ুন।
তীরের গলার আওয়াজ শুনার সাথে সাথে তড়িৎ বেগে ছিটকে দুরে সরে যায় ইশান। তীর লজ্জায় তাকাতে পারছে না ইশানের দিকে। এত লজ্জায় পাওয়ার কি আছে তীর বুঝে উঠতে পারছে না। ইশান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তীর দিলো এক দৌড়। যতক্ষন পর্যন্ত তীর চোখের আড়াল না হয়েছে ততক্ষন পর্যন্ত তীরের দিকে তাকিয়ে ছিলো ইশান। তীর চোখের আড়াল হতেই ইশান ডান হাত দিয়ে বুকের বা’পাশটা চেপে ধরে জোরে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে।
–আর একটুর জন্য হার্ট অ্যাটাকটা হয় নি। কিন্তু আমি নিশ্চিত এই মেয়ের জন্য আমি এক দিন ঠিকেই হার্ট অ্যাটাক করবো। উুহু।
_____
তীর বুক চেপে ধরে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। একটু আগে ওর মনে হচ্ছিলো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে মরেই যাবে। জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে ঢোক গিলে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তীর চোখ মেলে তাকিয়ে বলে।
–রিলেক্স তীর রিলেক্স। কিচ্ছু হয় নি এটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট এর বেশি কিছুই না। হু,, কিন্তু আমি তো রিলেক্স হতে পারছি না বারবার ওনার গভীর চোখ দুটো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে এই লোকটা আমার সবকিছু।
তীর কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে উঠে।
–আমি কি লোকটার প্রেমে পড়ে গেলাম। না না এসব কি ভাবছি আমি। এমন কিছুতেই হতে পারে না কিছুতেই না। কিন্তু!
তীর বিরবির করেই যাচ্ছে আর অন্যদিকে ইশা রেগে সিড়ি দিয়ে তীরকে বকতে বকতে নামছে।
–মেয়েটা এখনও আসে নি ইচ্ছে করছে তো ওকে…
তখনেই নজর যায় তীরের দিকে কেমন অস্থির হয়ে যায়। ইশা তীরের কাছে গিয়ে বলে।
–কি রে তুই এখানে দাঁড়িয়ে থেকে পাগলের মতো কি বিরবির করছিস?
তীর ইশাকে দেখার সাথে সাথেই ঝাপ্টে ধরে।
–আরে কি করছিস এভাবে গলা জড়িয়ে ধরে মেরে ফেলবি নাকি।
তীর ইশাকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী নিয়ে বলে।
–ইশু রে!
ইশা তীরের এমন অবস্থা দেখে বিচলিত কন্ঠে বলে।
–কি হয়েছে তর! এমন দেখাচ্ছে কেন তকে?
–আই থিংক আই এম ইন লাভ।
–হোয়াট? সত্যি কার প্রেমে পড়েছিস তুই?
–বুঝতে পারছি না আমি কি আসলেই তার প্রেম পরেছি নাকি পরে নি।
–আচ্ছা ঠিক আছে দাড়া দাড়া আমি তর সংশয় দুর করে দিচ্ছি।
–কিভাবে দূর করবি?
–আচ্ছা তাকে দেখলে কি তর হার্টবিট বেড়ে যায়, তার সামনে গেলে কি লজ্জা লাগে, নিজের সব কিছু কি এলোমেলো লাগে।
–হুম হুম।
–সিরিয়াসলি তুই কারো প্রেমে পড়ে গেছিস? কিন্তু তাহলে আমার ইশান ভাইয়ার কি হবে? ভাইয়া তো তকে তকে মনে মনে ভালোবাসে।
–যার প্রেমে পরেছি সেট তর ইশান ভাইয়াই।
ইশা আবাক চোখে তীরের নিচ থেকে উপর পর্যন্ত চোখ বুলায়। তীর ইশার এমন করাতে বলে উঠে।
–কি হয়েছে?
–তুই ভাইয়ার প্রেমে পরেছিস কবে, কখন, কিভাব?
–সব বলবো আমি তকে পরে। এখন চল না হলে লেইট হয়ে যাবে।
–পরে বলবি কিন্তু।
–হে রে বাবা বলবো।
#চলবে______