#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৯
গাড়ি এসে থামে শপিংমলের সামনে। এক এক করে সবাই গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। ইশান পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে এসে সামনের দিকে তাকাতেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পরে তীরের পাশে শুভ্র রঙের শার্ট পরিহিত একটা ছেলেকে দেখে। ওই দিনের অনুমানটাই কি তাহলে ইশানের ঠিক ছিলো রেস্টুরেন্টের গৌরবর্ণের ছেলেটাই তীরের হবু বর। কিন্তু এই ছেলে এখানে কি করছে ওর তো এখানে আসার কথা নয়। ইশানের ভাবনার মাঝে ইশা ভাইয়া বলে চিৎকার করে। ইশার ডাক শুনে ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ওদের কাছে আসতেই ইশা হাসিহাসি মুখ নিয়ে বলে।
–ভাইয়া ওনি আকাশ ভাই। মানে তীরের হবু বর।
ইশা ইচ্ছে করে এমনটা বলে ভাইয়ের রিয়াকশন দেখার জন্য। কিন্তু ইশান মুচকি হেসে আকাশের দিকে তাকাতেই আকাশ হাত বাড়িয়ে দেয় ইশানের দিকে হ্যান্ড শেক করার জন্য। ইশানও হাত বাড়িয়ে আকাশের হাতে হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় করে। আকাশ বলে।
–হাই! আমি আকাশ শেখ।
–ইশান….. ইশান ফরাজী।
তীরের এসব একদম ভালো লাগছে না দম বন্ধ হয়ে আসছে ইশানের এই নিরবতা। কেন এভাবে সব মুখ বুজে সবটা সহ্য করছে ইশান? তার কি একটুও খারাপ লাগছে না তীরকে অন্য এক ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তীর গম্ভীর গলায় বলে।
–হয়েছে আপনাদের কুশল বিনিময়। যদি হয়ে থাকে তাহলে আমরা যা করতে এসেছি এখানে তা করি।
আকাশ মুচকি হেসে বলে।
–ম্যাডাম দেখা যায় রেগে যাচ্ছে শপিং করতে লেইট হচ্ছে বলে। মেয়েদের তো এই একটাই ইচ্ছে বেশি বেশি করে শপিং করা আর বরদের পকেটের টাকা খরচা করা। চলুন ম্যাডাম আজকে আপনার যা কিনতে মন চাইবে সব কিনে দিবো।
তীর নিজের রুপ পাল্টে ইশানের দিকে একবার আড় চোখে তাকিয়ে কুটিল হাসি দিয়ে বলে।
–আমি জানি তো আপনি আমায় কতোটা ভালোবাসেন তাই তো আমি যা চাইবো আপনি এক কথায় আমাকে কিনে দিবেন কোনো প্রকার দ্বিমত করবেন না।
আকাশ মুচকি হেসে তীরের ডান হাতটা ধরে বলে।
–সেটা আবার বলতে তুমি চাইবে আর আমি দিবো না তা কি করে হয়। চলো আন্টি হয়তো ভেতরে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তীর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে ইশানের দিকে তাকায়। ইশানের মুখে রাগের কোনো প্রকার অস্তিত্বও নেই। ইশানের এই শান্ত রুপটা যে তীরকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। যেটার জন্য তীর শর্ত রেখেছে তার বিয়ের সমস্ত কাজ ইশানকে করতে হবে তার কোনো বহিঃপ্রকাশেই পাচ্ছে না ইশানের মাঝে। ইশান যেন অনুভূতিহীন এক পাথরে পরিণত হয়েছে। আকাশ তীরকে নিয়ে চলে যায়। ইশা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মনমরা হয়ে বলে।
–চলো ভাইয়া।
ইশা চলে যেতেই ইশান হুস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। এতক্ষণ যেন দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম ছিলো। চোয়াল শক্ত করে দু হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে রা’গ’টা’কে নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা করছে। কিন্ত এই রা’গটা কতক্ষণ ধমন করে রাখতে পারবে সেটা ইশানের জানা নেই।
______
তীর একের পর এক বেনারসি শাড়ি আর লেহেঙ্গা রিজেক্ট করছে তার একটাও নাকি পছন্দ হচ্ছে না। মূলত পছন্দ হচ্ছে না বলে ভুল হবে তার এসব কিচ্ছু ভালো লাগছে না। আয়েশা সুলতানা মেয়ের উপর রেগে গিয়ে বলেন।
–এতো গুলা শাড়ি আর লেহেঙ্গা বের করা হয়েছে আর তার মাঝে তোর একটাও পছন্দ হচ্ছে না।
–নাহ পছন্দ হচ্ছে না।
আকাশ বলে।
–আন্টি রা’গ করবেন না। ওরা যতক্ষণ না পর্যন্ত শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা পছন্দ হচ্ছে না ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা দেখে যাবো।
এমন সময় ইশান এসে তীরের পাশে দাঁড়ায়। এতক্ষণ সময় ইশান বাইরেই ছিলো কিন্তু ইশার ফোনের উপর ফোন করার কারণে বাধ্য হয়ে আসতে হলো না হলে বলেন দম বন্ধ কর জায়গায় আসতো না। তীর চোখ বন্ধ করে ইশানের পারফিউমের গন্ধটা শুকে নেয়। এই গন্ধটা তীরকে অন্য এক জগতে যেন নিয়ে যায়। আয়েশা সুলতানা ইশানকে দেখে বলেন।
–ইশান বাবা তুমি বলতো কোন শাড়িটা তীরকে ভালো বানাবে।
আয়েশা সুলতানার কথা শুনে তীর চোখ মেলে ইশানের দিকে তাকায়। ইশানও তীরের দিকে কয়েক পল তাকিয়ে তীরের পাশ কাটিয়ে একটা লাল টকটকে লেহেঙ্গা নিয়ে বলে।
–শাড়ি থেকে লেহেঙ্গাতে ভালো লাগবে তীরকে।
আয়েশা সুলতানা বলেন।
–বাহ লেহেঙ্গাটা তো খুব সুন্দর। ইশানের চয়েজ খুব সুন্দর তো। তীর যা তো এটা ট্রাই করে আয় ট্রায়াল রুম থেকে।
মায়ের এই কথাটা বলতে দেরি হলো তীরের না করতে দেরি হলো।
–নাহ! এই লেহেঙ্গাটা একদম সুন্দর নয়। এই লেহেঙ্গাটা আমার একটুও পছন্দ হয় নি। যে চয়েজ করেছে তার চয়েজ খুব খারাপ খুব বাজে।
তীরের মুখে এমন কথা শুনে হেসে ফেলে ইশান। তবে এই হাসির পেছেনে লুকিয়ে আছে হাজারো যন্ত্রণা যে যন্ত্রণাটা কাউকে বুঝাতে চাইছে না ইশান এমন কি নিজেকেও না।
তীর আকাশকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–আকাশ আপনি একটা লেহেঙ্গা চয়েজ করে দিন তো। আমি আপনার পছন্দের লেহেঙ্গা পরেই বিয়ে করবো।
তীরের কথা শুনে আকাশ নিজের ভাবনা থেকে ফিরে আসে। আকাশের সন্দেহ হচ্ছে তীর আর ইশানকে নিয়ে। তীরের ইশানের দিকে তাকানো ইশানের তীরের তাকানো আকাশের ঠিক ভালো লাগছে না। কিছু তো একটা ব্যাপার আছে এই দুজনের মাঝে আকাশ সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছে। আকাশ মুচকি হেসে একটা খয়েরি রঙের লেহেঙ্গা হাতে নিয়ে বলে।
–এটা! এটা পড়লে তোমাকে সুন্দর লাগবে একদম আমার স্বপ্নের রাণীর মতো।
লাস্ট কথাটা আকাশ ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে এটা দেখার জন্য ইশানের কি প্রতিক্রিয়া হয়। কিন্তু না ইশানের কোনো প্রতিক্রিয়াই করলো না বরং সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে।
তীর লেহেঙ্গাটা নিয়ে ট্রায়াল রুমে যেতে নিলে ইশা বলে।
–আমি আসবো তোর সাথে।
–নাহ তার কোনো দরকার নেই আমি একাই পরবো।
–ওকে।
তীর চলে যেতেই আকাশ বলে।
–আন্টি আমি একটু আসছি।
______
তীর ট্রায়াল রুমে এসে হ্যাঙ্গারে লেহেঙ্গাটা ঝুলিয়ে দিয়ে দেয়াল পিট টেকিয়ে বসে পড়ে। এতো কষ্ট আর নিতে পারছে না। ইশানকে কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেই যেন ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইশান তো কষ্ট পাচ্ছেই না বরং হাসি মুখে সবটা মেনে নিছে। চোখ বন্ধ করে দেয়ালের সাথে মাথাটা হেলিয়ে দেয় তীর। এমন সময় দরজায় নক করে কেউ। তীর বসা থেকেই বলে।
–কে?
কোনো সাড়া শব্দ আসলো না বাইরে থেকে। তীর ভাবলো এটা হয়তো ইশা হতে পারে। কারণ ইশা মাঝে মাঝে এমনটা করে দরজায় শব্দ করে কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তাই তীরও না বুঝে দরজা খুলে দিতেই আকাশ দরজা ঠেলে ভেতরে ডুকে। আকাশকে এখানে এমন সময় দেখে তীর হতভম্ব হয়ে বলে।
–আপনি? আপনি এখানে কি করছেন?
–হে আমি অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি।
তীর ভ্রু-কুচকে বলে।
–মানে।
আকাশ বাঁকা হেসে বলে।
–মানেটা খুব সোজা এখানে নিশ্চয়ই ইশান ফরাজীকে আশা করেছিলে তুমি তাই না।
তীর রা’গী গলায় বলে।
–কি যা তা বলছেন আপনি এসব?
আকাশ তীরের দু বাহু ধরে নিজের কাছে এনে বলে।
–একদম আমার সাথে তেজ দেখিয়ে কথা বলবে না। কি ভেবেছো তুমি আমি কিচ্ছু বুঝতে পারবো না ওই দিনও রেস্টুরেন্টে আমি খেয়াল করেছি তোমার আর ওই ইশানের বিষয়টা। তখন বুঝতে পারি নাই কিন্তু আজ অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারছি তোমার আর ওই ইশান ফরাজীর মাঝে কিছু তো একটা আছে।
তীর ব্যাথায় আর্তনাদ করে বলে।
–কি করছেন কি হাতে লাগছে আমার। ছাড়ুন আমাকে।
–আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও তারপর ছাড়বো।
তীর এবার রা’গী চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে।
–হে আমার আর ইশান ভাইয়ের মাঝে সম্পর্ক আছে শুনেছেন আপনি আমার আর ইশান ভাইয়ের মাঝে সম্পর্ক আছে। এবার আপনি কি করবেন বিয়েটা ভেঙ্গে দিবেন, ভেঙ্গে দিন এই বিয়েটা আমি এই বিয়েটা করতে চাই না। শুধু মাত্র মায়ের কথায় এই বিয়েতে রাজি হয়েছি আমি, না হলে আপানাকে বিয়ে করার কোনো রকম ইন্টারেস্ট নেই আমার।
আকাশ তীরকে নিজের আরেকটু কাছে এনে বলে।
–কিন্তু আমার তো ইন্টারেস্ট আছে সোনা তোমাকে বিয়ে করার। তোমাকে ছবিতে দেখে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হয়ে এসেছি আর আমি বিয়ে করবো না তোমাকে তা কি করে হয়।
তীর দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
–ছাড়ুন আমাকে।
–অবশ্যই ছাড়বো কিন্তু ছাড়ার আগে কিছু তো আদায় করতেই পারি তোমার কাছ থেকে হবু বর হিসেবে তাই না।
চোখ টিপ মেরে বলে কথাটা আকাশ। তীর তা দেখে শুকনো ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলে।
–কি আদায় করার কথা বলছেন আপনি?
আকাশ তীরের ঘাড়ে হাত রেখে তীরের মুখটা নিজের মুখোমুখি এনে বলে।
–তোমার এই গোলাপি ঠোঁটে একটা নিষিদ্ধ চুমু তো খেতে পারি বিয়ের আগে তাই না।
আকাশের এমন লাগামহীন কথা শুনে তীরের শরীরের পশমগুলা কাটা দিয়ে উঠে। মুখটা অন্য দিকে ঘুরাতেও পারছে না আবার চিৎকারও করতে পারছে না বাইরের মানুষ জনের কথা ভেবে। আর এদিকে আকাশ তীরের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে। অন্য দিকে তীর নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে আকাশের পায়ে সজোরে লাথি মেরে বসে আর আকাশ ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে হাটু ভেঙ্গে নিচে বসে পড়ে। তীর ভেবেছিলো আকাশের মেইন পয়েন্টে লাথি দিবে কিন্তু পরে করুণা হলো এটা ভেবে আকাশের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে কোনো লাভ নেই। তাই পায়েই লাথি মারে। তীরও সুযোগে পেয়ে এখান থেকে চলে যায়।
_____
এদিকে তীরের লেইট হচ্ছে দেখে ইশান আর বসে থাকতে পারছে না। মনের ভেতরে অজানা ভ’য় কাজ করছে এটা ভেবে তীরের কোনো বি’প’দ হলো না তো। ইশান বসা থেকে উঠে সোজা ট্রায়াল রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। কিন্তু এর আগেই তীরকে দেখে হন্তদন্ত হয়ে আসছে। তীরের এমন অবস্থা দেখে ইশান ভ্রু-কুচকে নেয়। চোখে মুখের অবস্থা খুবেই শোচনীয় তীরের। চোখ মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার সাথে। তীর ইশানকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইশান তীরের পথ আটকে গলায় কঠিনত্ব রেখে বলে।
–কি হয়েছে?
তীর অনুভুতিহীন কন্ঠে বলে।
–কিচ্ছু হয় নি।
–তাহলে চোখ মুখের এই করুণ অবস্থা কেন?
–আমার বিষয়ে আপনাকে এতো না ভাবলেও চলবে।
বলেই ইশানের পাশ কেটে চলে যেতে নিলেই ইশান তীরের হাত ধরবে বা কিছু বলবে তার আগেই তীর কন্ঠ স্বরে ক্রোধ রেখে বলে।
–আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না আপনি। এক বার যখন নিজ থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছেন তাহলে আর আমার কাছে আসার চেষ্টা স্বপ্নেও আনবেন না। তাই আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন।
মুহূর্তের মাঝে ইশানকে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। কানের কাছে এখন বজ্রপাতের ধ্বনির মতো তীরের বলা প্রত্যেকটা কথা বাজছে। সে কি খুব আঘাত দিয়ে ফেলেছে তার তীরকে না হলে এতো শক্ত শক্ত কথা ইশানকে বলতে পারতো না কখনো। তারেই বা কি করার আছে তার হাত পা যে বেঁধে দিয়েছে আয়েশা সুলতানা স্বয়ং নিজেই। না হলে এই বিয়ে কিছুতেই হতে দিতো না ইশান। এখন শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষায় আছে ইশান যেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে এই বিয়েটা ভাঙ্গতে পারবে।
এমন সময় আকাশকে খুঁড়ে খুঁড়ে হেটে আসতে দেখে কিছুটা অবাক হয় ইশান। আকাশ ইশানের কাছাকাছি আসতেই বলে।
–পায়ে কি হয়েছে?
–ও…. কিছু হয় নি মচকে গেছে।
ইশানের ঠিক বিশ্বাস হলো না কেন জানি আকাশের বলা কথাটা। মন বলছে কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই এর মাঝে তবে সেটা কি বের করতে হবে।
#চলবে______
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৫০
ইশান হাসপাতালের করিডোরের বেঞ্চে চোয়াল শক্ত করে বসে আছে। আর বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে তীরের শুকনো মুখটা। ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় দেয়াল সাথে। আর চোখের সামনে ভেসে উঠে একটু আগের ঘটনা।
তীর জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে টুলে। মাথায় এখনো একটু আগে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে। ইশান তীরের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে ছোট ছোট চোখ করে তীরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা হঠাৎ করে কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। আকাশের ব্যাপারটাও ঠিক বুঝতে পারছে না। একটু আগে যে আকাশের মুখে খই ফুটছিলো সেই আকাশ কেমন যেন ভয়ে ভয়ে বসে আছে। দু হাত কাচলাছে আর তীরের দিকে বার বার আড় চোখে তাকাচ্ছে। কিছু একটা বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না।
এদিকে তীরের চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথা ঘুরছে। চোখে নেমে আসছে অন্ধকার। এতো স্ট্রেস তীর আর নিতে পারছে না এই ছোট্ট মাথায়। জীবনটা কেমন যেন ধীরে ধীরে অতল সাগরে ডুবে যাচ্ছে। কেন ইশান তার জীবনে এলো ইশান যদি তার এই ছোট্ট জীবনে না আসতো তাহলে হয়তো আজ এই দিনটা দেখতে হতো না। এসব ভাবতে ভাবতে তীর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ইশান তীরের জ্ঞান হারানোর ভাব বুঝে দৌঁড়ে আসার আগে তীরের মাথা গিয়ে পড়ে পাশে বসা ইশার কাঁধে। ইশা চমকে উঠে তীরকে ডাকতে শুরু করে। ইশান আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে তীরের কাছে এসে তীরকে ডাকতে থাকে কিন্তু না তীরের কোনো রেসপন্স নেই। আয়েশা সুলতানা মেয়ের হঠাৎ এমন অবস্থা দেখে টেনশনে পড়ে যান। মেয়ে যে তার ভেতরে ভেতরে গুমড়ে গেছে সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে। যতো উপরে উপরে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করুক না কেন ভেতরে থেকে যে তীর ভেঙ্গে পড়েছে। এখন নিজেকে নিজেই দোষ দিচ্ছে এই সব কিছু তার জন্যই হচ্ছে। কিন্তু এখন যে কিচ্ছু করার নেই। সব কিছু ঠিক করা হয়ে গেছে আর চার দিন পরেই যে তীরের বিয়ে। ছোট্ট অভি তো কান্না করার উপক্রম। তীরের জ্ঞান না আসাতে ইশানের ভ’য়ের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। বুকের বা পাশের চিনচিন ব্যাথাটা বেড়ে যাচ্ছে তীরের এমন অবস্থা দেখে। ইশান আর কোনো কিছু না ভেবে যখনেই তীরকে কোলে নিতে যাবে তখনেই আকাশ এসে বাধা দিয়ে বলে।
–আমি ওকে কোলে নিচ্ছে। আমি ওর হবু বর তাই আমি চাই না অন্য কেউ ওকে টাচ করুক।
ইশানের মন চাইছে এই আকাশকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে। তাহলে যদি মনের রা’গটা একটু হলে কমে। কিন্তু ইশান পাবলিক প্লেসে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে চায় না তাই নিজের রা’গটা সংবরন করে গম্ভীর গলায় বলে।
–আমার জানা মতে তুমি পায়ে ব্যাথা পেয়েছো। তাই এই ভাঙ্গা পা নিয়ে নিশ্চয়ই তীরকে কোলে নিয়ে হাটতে পারবে না।
আয়েশা সুলতানা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে।
–আকাশ তুমি আর কোনো জামেলা করো না বাবা আমার মেয়েটাকে এখন হাসপাতালে নেওয়া খুব দরকার।
–কিন্তু আন্টি ওনি তো একজন পর…
আকাশ আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই তীরকে ইশান পাঁজাকোলে নিয়ে বলে।
–আন্টি আমি তীরকে নিয়ে হাসপিটালে যাচ্ছি। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কারোর ফালতু কথা শোনার টাইম মনে হচ্ছে এখন নয়।
আকাশ বড্ড অপমানিতবোধ করলো। মন চাইছে ইশানকে খু’ন করে ফেলতে। কিন্তু না এখন মাথা ঠান্ডা রেখে আগে সবটা সামলাতে হবে। ফার্স্ট অফ অল তীরের সাথে একটু আগে করা ব্যবহারটার জন্য যতো দ্রুত সম্ভব ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে অঘটন ঘটে যেতে পারে। রা’গের বশে যে কেন তীরের সাথে এমনটা করতে গেলো। এখন মন চাইছে নিজেকে নিজেই চড়াতে।
ইশানের ধ্যান ভাঙ্গে আয়েশা সুলতানা কথা শুনে।
–ইশান তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
ইশান চোখ মেলে আয়েশা সুলতানার দিকে তাকায়। আয়েশা সুলতানার মুখে অনুতাপের চাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ইশান মুখ ফুটে বলে।
–জি আন্টি বলুন।
আয়েশা সুলতানা আমতা আমতা করে বলা শুরু করেন।
–আসলে ইশান আমি তোমার কাছে ক্ষ….
এর মাঝেই ডাক্তার বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে। ডাক্তারকে দেখে ইশান দ্রুত পায়ে ডাক্তারের কাছে এসে বলে।
–কি অবস্থা পেসেন্টের?
–পেসেন্ট ঠিক আছে। আসলে অতিরিক্ত টেনশনের জন্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আর শরীরও কিছুটা দুর্বল ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হয়ে যাবে। এখন আপতত ঘুমাচ্ছে।
আয়েশা সুলতানা ভেজা গলায় বলে।
–মেয়েটাকে এক নজর দেখা যাবে।
ডাক্তার বলেন।
–হে হে অবশ্যই।
আয়েশা সুলতানা কেবিনের ভেতরে চলে যান সাথে অভি আর ইশাও যায়। আকাশ দুর থেকে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের কথা শুনে চুপচাপ গিয়ে আগের জায়াগাতে বসে পড়ে। মনে মনে ঠিক করে রেখেছে তীরের জ্ঞান ফিরার সাথে সাথে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবে এমন দুর্ব্যবহার করা জন্য। কিন্তু ইশানের প্রতি আকাশের একটা ক্ষো’ভ রয়ে গেলো আর ইশানের তীরের প্রতি এই কেয়ারটা যেন শরীরের কাটার মতো বিধছে আকাশের গায়ে। তবে এই কেয়ার আর কয় দিনের এরপর থেকে তীর শুধু তার আর কারোর নয়। এসব ভাবার মাঝেই আকাশের ফোন বেজে উঠে। একটু দুরে গিয়ে ফোনে কিছুক্ষণ কথা বলে হন্তদন্ত হয়ে কেবিনে ডুকে আয়েশা সুলতানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যায়।
ইশান বড্ড অবাক হয় আকাশের এই ব্যবহার দেখে। কে ফোন করেছিলো যে এমন অস্থিরতা কাজ করছিলো আকাশের মাঝে। আর এমন তাড়াহুড়ো করে কোথায় বা চলে গেলো? কিছু তো একটা ঘপলা আছে এই ছেলের মাঝে। এসব ভাবনার মাঝে ইশা এসে ভাইয়ের পাশে বসে। ইশান বোনের দিকে এক পলক তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয়। ইশা বলতে শুরু করে।
–তীরের এমন অবস্থা দেখে কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে তোমার ভাইয়া। এসব কিন্তু তোমার জন্যেই হচ্ছে। আমি জানি না কেন তুমি এমন করচ্ছো তীরের সাথে। যদি তোমাকে জিঙ্গেসাও করি কেন এমন করছো তাহলে তুমি কিচ্ছু বলবে না জানি। তাই আমি শুধু তোমাকে এটাই বলবো, প্লিজ তীরকে এভাবে কষ্ট দিও না ও তোমাকে সত্যি ভালোবাসে।
ইশান চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে বোনের কথা গুলা শুনে গেলো। কিচ্ছু বলার মতো তার মুখ নেই তাই চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে করলো। ইশা ভাইয়ের মৌনতা দেখে আর কিছু না বলেই এখান চলে যায়। ইশা চলে যেতেই ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় মাথাটা ভীষণ ধরেছে আর কিছুক্ষণ এখানে এভাবে বসে থাকলে হয়তো পাগলেই হয়ে যাবে চিন্তায় চিন্তায়।
ইশান দ্রুত পায়ে গাড়ির লক খুলে গাড়িতে উঠে বসে গাড়ির বেকসাইডের পকেট থেকে সিগারেটের পেকেট আর দেশলাই বের করে দেশলাই দ্বারা সিগারেট জ্বালিয়ে সিগারেট টানতে শুরু করে। জ্বলন্ত সিগারেট দু তিন বার টান দিয়ে ইশান চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় সিটের উপরে। এবার মনে হচ্ছে মাথাটা কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। এরমাঝেই দু তিন বার মেসেজ আসার শব্দ কানে আসে ইশানের। নিজের ফোন চেক করে দেখে তার ফোনে কোনো মেসেজ আসে নি। ইশান আধ খাওয়া সিগারেটটা বাইরে ফেলে দিয়ে কিছুক্ষণ খুজাখুজির পরেই পেছনের সিটে নজর যায় তীরের ফোন পড়ে আছে। ইশান কোমড় বাঁকিয়ে পেছনের সিট থেকে ফোনটা এনে পাওয়ার অন করে নোটিফিকেশন টান দিতেই চমকে যায়। এক নাম্বার থেকে বার বার সরি বলে মেসেজ দিছে কিন্তু কিসের জন্য আর নাম্বারটাই বা কার?
তীরের ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া তাই চাইলেও ইশান মেইন মেসেজ অপশনে ডুকতে পারছে না। ইশান তিন তিন বার ট্রাই করে পাসওয়ার্ড খুলার জন্য কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হলো না প্রতি বারেই ভুল পাসওয়ার্ড। কি হতে পারে পাসওয়ার্ডটা তা নিয়ে ইশান গভীর ভাবনায় ডুব দেয়। কিছুক্ষণ ভাবার পর ইশান নিজের নামটা ইংলিশে টাইপ করার সাথে সাথেই ফোনের লক খুলে যায়। ইশানের মুখে ফুটে উঠে মৃদু হাসির রেখা এটা ভেবে তার নাম দিয়ে তীর ফোনের পাসওয়ার্ড দিয়েছে কি ভাগ্য তার। কিন্তু সেই হাসি বেশিক্ষণ আর স্থায়ী হলো না মেসেজ গুলা পড়ে। ইশানের আর বুঝতে বাকি নেই এই মেসেজগুলা কে করেছে তীরকে। রা’গে ইশানের চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। এখন যদি এই আকাশ নামক বেয়া’দবটা তার সামনে থাকতে তাহলে আজেই আকাশের ই’ন্তে’কা’ল হতো। ইশানের কাছে এখন সবটা জলের মতো পরিস্কার তীরের এমন আচরণ করার কারণ। প্রথম থেকেই এই আকাশের উপরে ইশানের সন্দেহ হচ্ছে ছিলো সেই সন্দেহটা এখন ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে। ইশান নিজের ফোনটা হাত নিয়ে কাউকে ফোন করে বলে।
–একজনের বিষয়ে আমার ইনফরমেশন চাই যতো সম্ভব তাড়াতাড়ি আমাকে জানানোর চেষ্টা করো।
বলেই ফোন কেটে দিয়ে নিজের ফোনের মেসেজ অপশনে ডুকে কিছুক্ষণ টাইপ করে সেন্ড অপশনে ক্লিক করে রাগন্বিত গলায় বলে।
–মিস্টার আকাশ শেখ তোমার চৌদ্দগুষ্টির সকল ইনফরমেশন যদি আমি না বের করতে পারি তাহলে আমার নামও ইশান ফরাজী না। আমার কলিজাতে হাত দিয়েছো বেওয়ারিশ ভাবে তার মাশুল তো তোমাকে খুব বাজে ভাবে পোহাতে হবে।
ইশান গাড়ি থেকে নেমে গাড়ি লক করে হাসপাতালে এসে দেখে তীরের মাত্রই জ্ঞান ফিরেছে। তীর বেডে আধ শোয়া হয়ে শুয়ে আছে। আয়েশা সুলতানা মেয়েকে পানি খাইয়ে দিয়ে বলে।
–এখন ঠিক লাগছে মা শরীরটা।
তীর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ইশা রাগী কন্ঠে বলে।
–তোর উপর ভীষণ রা’গ করেছি তীর, কেন নিজের প্রতি খেয়াল রাখচ্ছিস না তুই?
তীর মুচকি হেসে বলে।
–আমি ঠিক আছি।
–হুম তার নমুনা তো আজকেই দেখতে পেলাম।
তীর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
–মা আকাশ কোথায়?
–আকাশ চলে গেছে ওর নাকি কি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে গেছে।
–ওও।
ইশা গম্ভীর গলায় বলে।
–ওনাকে দিয়ে কি দরকার তোর?
–না এমনি।
ইশা বুঝতে পারছে না আকাশ যে তার সাথে এমনটা করছে সেটা কি মাকে বলবে নাকি বলবে না। শেষমেষ সব কিছু চিন্তা ভাবনা করে মাকে বলতে যাবে এমন সময় ইশান দরজা খুলে কেবিনে ডুকে। তীর ইশানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয়। ইশান তীরের ফোনটা ইশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে।
–ইশা তীরকে ফোনটা দিয়ে দে ও ফোনটা গাড়িতে ফেলে এসেছিলো।
ইশা ভাইয়ের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে তীরের কাছ দিতেই আবারও মেসেজ আসার শব্দ হয়। তীর ভ্রু-কুচকে মেসেজ অপশনে ডুকে দেখে আকাশের নাম্বার থেকর মেসেজ এসেছে। তীর মেসেজ পড়া শুরু করে….
“সরি তীর! আমি তোমার সাথে এমনটা করতে চাই নি। বিশ্বাস করো যখন জানতে পেরেছি ওই ঘটনাটা তখন রা’গে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। আর তোমাকে জো’র করে কি’স করতে যাওয়াটা এটা আমি ইচ্ছে করে করতে চাই নি। তোমাকে নিজের এতো কাছে আসতে দেখে নিজের মাঝে ছিলাম না আমি তাই এমনটা করে ফেলেছিলাম। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছি আর সারা জীবনও ভালোবাসতে চাই। প্লিজ তীর আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। একটা সুযোগ দাও নিজেকে সুধরানোর জন্য প্লিজ। কাজ পড়ে গেছে না হলে সামনাসামনিই তোমার কাছে ক্ষমা চাইতাম। প্লিজ তীর ফর গিভ মি”।
তীর প্রত্যকটা মেসেজ পড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ে। যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে সেই তাকে মাঝ পথে ছেড়ে দিয়ে চলে গেছে আর আকাশ তো কোন ছাড়। তারপরও তীর সিদ্ধান্ত নিলো আকাশকে ক্ষমা করে দেওয়ার। আয়েশা সুলতানা মেয়েকে বলেন।
–কি হয়েছে?
তীর ফোনটা অফ করে বলে।
–কিছু না।
ইশান এতক্ষণ অধীর আগ্রহে তীরের মুখ পানে চেয়ে ছিলো। ভেবেছিলো তীর হয়তো নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বলবে। কিন্তু তীর যে এভাবে ব্যাপার চেপে যাবে এটা ভাবতে পারি নি। তবে কি তীর আকাশকে ক্ষমা করে দিলো। ইশানের ভাবনার মাঝে অভি বলে উঠে।
–মা ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে চলো কিছু খেয়ে আসি। আপু তো এখন ঠিকেই আছে।
ইশান অভিকে কোলে নিয়ে বলে।
–অভি বাবুর খুব ক্ষুধা পেয়েছে বুঝি।
–হে তো খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
–ঠিক আছে চলো তোমার ক্ষুধা নিবারণ করে নিয়ে আসি।
–আমি একা যাবো না মাকেও আমার সাথে যেতে হবে না হলে আমি খাবো না।
অভির বায়নার কাছে হার মানতে হলো আয়েশা সুলতানাকে। মেয়েকে ছেড়ে আয়েশা সুলতানা যেতে চায় নি কিন্তু তীরের কথা শুনে যেতে রাজি হলো। এখন আপাতত তীরের কাছে ইশাই থাকবে।
ইশান অভিকে নিয়ে মাঝ পথে এসে থেমে গিয়ে আয়েশা সুলতানাকে বলে।
–আন্টি ইশা আর তীর কি খাবে সেটা তো জেনে আসা হলো না। ওরাও তো অনেকক্ষণ হলো কিছু খায় নি।
–তাই তো এটা তো ভুল হয়ে গেলো।
–আপনি অভিকে নিয়ে এগোন আমি জেনে আসি।
–আচ্ছা।
______
ইশান দরজার সামনে আসতে তীরের কথা শুনে থমকে যায়।
–ওনি আমাকে নিজের ইচ্ছেতে দুরে টেলে দিয়েছেন আমি না।
ইশা অনুনয় কন্ঠে বলে।
–চেষ্টা তো করে দেখতে পারি আমরা দুজনে কিছু পরিবর্তন করতে পারি কিনা।
তীর অভিমানি কন্ঠে বলে।
–একবার যদি ধনুক থেকে তীর ছুঁড়া হয় সেই তীর আর ধনুকের কাছে ফিরে আসে না। তাই এই তীরও আর সইচ্ছেতে ইশান ফরাজীর কাছে ফিরে যাবে না। আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।
–কিন্তু তীর তুই ওই আকাশের সাথে সুখী…
ইশা পুরো কথা শেষ করতে পারলো না তার আগেই তীর বলে।
–সুখ যদি আমার কপালে উপরওয়ালা লিখে থাকে তাহলে অবশ্যই আমি সুখী হবো।
–কিন্তু…
–প্লিজ ইশু আমি এই বিষয়ে আর একটা কথাও বলতে চাই না।
ইশান কেবিনের ভেতরে না ডুকেই উল্টে পথে হাটা শুরু করে। মন মেজাজ দুটো খারাপ হয়ে আছে। হাসপাতালের অন্য সাইডের করিডোরে এসে দেয়ালে থা’প্প’ড় মা’রে রা’গে। এমন সময় ইশানের ফোন ভেজে উঠে। ইশান কল পিক করে কান নিতে ওপাশ থেকে বলে উঠে।
–স্যার সব ইনফরমেশন পেয়ে গেছি আকাশ শেখের।
–ঠিক আছে ওর সকল বায়োডাটা আমার ফোনে পাঠাও।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেই ইশানের ফোনে আকাশের সকল ইনফরনেশন চলে আসে। ইশান বায়োডাটা চেক করে বাঁকা হাসা। ইশান যা ভেবেছিলো আকাশের ব্যাপার সেটাই সঠিক হলো। মনে মনে বলে।
–মা’রণ অ’স্ত্র পেয়ে গেছি আকাশ শেখ। এবার সেটার প্রয়োগ করার পালা।
তারপর ওয়ালপেপারে তীরের হাস্যজ্জ্বল চেহারাটা বুড়ো আঙ্গুল বুলিয়ে বলে।
–বিয়েও হবে তোর আমার সাথে আর আমার ভবিষৎ বাচ্চার মাও হবি তুই। শুধু কিছুদিন অপেক্ষা কর ছুঁড়া ধনুকের তীর কি করে ধনুকের কাছে ফিরিয়ে আনতে হয় সেটা আমি ইশান ফরাজী খুব ভালো করেই জানি।
#চলবে___