প্রনয়ের দহন পর্ব-৪৬+৪৭+৪৮

0
735

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৬

ইশান চোখে মুখে পানির ঝাপ্টা দিয়ে আরশির দিকে তাকায়। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে তীরের কান্নারত চেহারা। চোখের সামনে ডান হাতটা নিয়ে এসে রা’গে মুঠো বন্দী করে নেয়। আজকে নিজের হাতে অতি প্রিয় মানুষটার গায়ে হাত তুলেছে। যাকে নিজের সবটা উজার করে ভালোবাসতে চেয়েছিলো সারাটা জীবনভর ধরে তাকে আজকে আ’ঘা’ত করেছে ইশান এই হাত দিয়ে। রা’গে দাঁতের চোয়াল শক্ত করে নিয়ে ইশান সজোরে আরশিতে ঘুসি মারে। নিমিষেই আরশি ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নিচে পড়ে যায়। ইশানের হাত কেটে গেছে সাদা টাইলসে লাল র’ক্তে’র ফোঁটা দৃশ্যমানরুপে ফুঁটে উঠছে। তাতে ইশানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই সে তো আছে অন্য মগ্নে বার বার তীরের মায়ের কথা গুলা কানে বাজছে। তার সাথে এটা করার কি খুব দরকার ছিলো তীরের মায়ের এতোটা কষ্ট কি করে সইবে সে। ইশান ওয়াসরুম থেকে এলোমেলো পায়ে বের হয়ে এসে ফ্লোরে বিধ্বস্ত অবস্থা বসে মাথাটা হেলিয়ে দেয় দেয়ালের সাথে আর চোখ বন্ধ করে অতিতে ডুব দেয়।

অতিত……

তীর আর ইশার রেজাল্টের পরের দিন। বিকেল বেলা ইশান গার্ডেন বসে অফিসের কিছু কাগজ পত্র চেক করছে। এমন সময় নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ইশান চকিতে তাকাতেই তীরের মাকে এমন সময় দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলে।

–আন্টি আপনি এখানে? মার সাথে দেখা করতে এসেছেন মা ভেতরেই আছে আপনি যান।

আয়েশা সুলতানা কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে ভরাট কন্ঠে বলে।

–আমি তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে আসে নি।

–তাহলে!

–তোমার সাথে দেখা করতে এসেছি।

–আমার সাথে।

–হুম।

–ঠিক আছে তাহলে বসুন।

আয়েশা সুলতানা ইশানের মুখোমুখি হয়ে বসে। ইশানের চিন্তা হচ্ছে হঠাৎ করে এভাবে ওনি ওর সাথে কেন দেখা করতে এসেছেন বুঝতে পারছে না? ইশানের ভাবনার মাঝে আয়েশা সুলতানা বলে উঠেন।

–তুমি কি কিচ্ছু লুকাচ্ছো ইশান আমার কাছ থেকে। যদি কিছু লুকিয়ে থাকো তাহলে বলে দাও।

ইশান কিছুটা অবাক হয় হঠাৎ এই কথা শুনে। কি লুকানোর কথা বলছেন আয়েশা আন্টি? ইশান কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচ করে‌ বলে।

–ঠিক বুঝলাম না আন্টি আপনার কথাটা।

আয়েশা সুলতানা নিঃশব্দে হেসে বলে।

–আমি বোকা নই ইশান। আমি সবটাই বুঝতে পেরেছি। ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না আমি।

ইশান কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। তবে অজানা ভ’য় জেগে উঠছে বুকের মাঝে। ইশান ঢোক গিলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আয়েশা সুলতানা বলে উঠেন।

–তোমার আর তীরের মাঝে কি কোনো সম্পর্ক আদৌ আছে নাকি সবটাই মিথ্যা।

ইশান চমকে উঠে ঠোঁট ভিজিয়ে কিছু বলতে‌ যাবে তার‌ আগেই আয়েশা সুলতানা ইশানের মুখের কথা কেঁড়ে নিয়ে বলেন।

–আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবে না ইশান যা বলবে সবটা সত্যি বলবে। আমি জাস্ট তোমার মুখ থেকে সত্যিটা শুনতে যাই। আমি যা ভাবছি সেটা সত্যি নাকি আমার মনের ভুল।

ইশান তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ে আর কোনো লুকোচুরি নয়। এবার সত্যি বলার সময় হয়ে গেছে ভবিষ্যতে যা হওয়ার তাই হবে। ইশান আয়েশা সুলতানার চোখে চোখ রেখে বলে।

–হুম আমার আর তীরের মাঝে প্রনয়ের একটা সম্পর্ক আছে কিন্তু আন্টি বিশ্বাস করুন আমি আপনাদের বিশ্বাসের উপর আঘাত করতে চাই নি।

–কিন্তু আঘাত তো তুমি করে ফেলেছো‌ ইশান। তোমার উপর আমি ভরসা করতাম ইশান কিন্তু সেই ভরসাটা তুমি নিমিষেই ভেঙ্গে দিলেন। এটা তোমার কাছ থেকে আমি আশা করি না।

কি বলবে ইশান ভেবে পাচ্ছে না। সত্যি তো সে সেই ভরসা ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু সে তো যথাসম্ভব তীরের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে থাকতো। তীরেই তো তাকে বাধ্য করেছে তাকে নিজের ভালোবাসাটাকে প্রকাশ করার জন্য। ইশানের মৌনতা দেখে আয়েশা সুলতানা পুনরায় বলেন।

–তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমার আর তীরের সম্পর্কটা মেনে নিবো তাহলে তুমি ভাবছো।

ইশান চমকে তাকায় আয়েশা সুলতানার দিকে। সে তো আগে থেকেই জানতো এটা হবে কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে এমনটা হবে এটা বুঝতে পারে নি। আয়েশা সুলতানা আবারও বলেন।

–ওর বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা আছে ইশান। তাই আমি চাইলেও তোমার আর তীরের সম্পর্কটা মেনে নিতে পারবো না। আমি কারো কাছে অনেক আগে থেকেই ওয়াদাবদ্ধ হয়ে আছি সেই ওয়াদা আমি ভঙ্গ করতে পারবো না। তাই চাইবো সইচ্ছেতে তুমি তীরের জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য সরে যাও।

ইশান এবার মুখ খুলে বলে।

–কিন্তু আন্টি আমি তীরকে ভালো…

ইশানকে থামিয়ে দিয়ে বলে।

–প্লিজ ইশান তোমার মুখ থেকে এই‌ কথাটা আমি শুনতে চাই না। আর তুমি যদি তীরকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিয়ে করেও নাও তাহলে জেনে রেখো ওর সাথে আমাদের পরিবারের সকল সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে। তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না দু দিনের ভালোবাসার জন্য জন্মদাতা পিতা-মাতার ভালোবাসা থেকে কোনো সন্তান বঞ্চিত হোক। এবার তুমি ভেবে দেখো তুমি কি করবে? তুমি বুদ্ধিমান একটা ছেলে তোমার সামান্য একটা ভুলের জন্য একটা পরিবার ধ্বং’স হয়ে যাক এটা নিশ্চয়ই তুমি চাইবে না।

ইশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যিই তো তার জন্য একজন সন্তান বাবা মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। তার জন্য কারোর ওয়াদা ভঙ্গ হয়ে যাবে। একটা পরিবার ধ্বং’স হয়ে যাবে। এটাও তো সত্যি দু দিনের ভালোবাসা থেকে বাবা মায়ের ভালোবাসাটাই বড়ো। তীর যদি তার ভাগ্যে লিখা থেকে তো আল্লা চাইলে এমনেতেই তীর তার হবে। যদি লিখা না থাকে তো শত চেষ্টা করেও তীরকে নিজের করতে পারবে না। তবে কি ইশানকে তার ভালোবাসাই ব’লি দিতে হবে। ইশানকে চুপ‌ থাকতে দেখে আয়েশা সুলতানা বলে।

–ভাবো ইশান ভেবে দেখো তুমি কি করবে? তবে এটা মাথায় রেখো তুমি চাইলেই একটা পরিবার ধ্বং’স হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে আর নয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।

আয়েশা সুলতানা চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতে নিলেই‌ ইশান বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে।

–আপনি কি চান আন্টি?

–সারা জীবনের জন্য তীরের জীবন থেকে সরে যাও।

ইশান মুচকি হাসি দেয়। তবে এই হাসির মাঝে লুকিয়ে আছে শত বেদনা আর যন্ত্রণা।

–তাই হবে। সারা জীবনের জন্য সরে যাবো আমি তীরের জীবন থেকে তবে।

–তবে….

–তবেটা না হয় আমি কাজেকর্মে বুঝিয়ে দিবো।

আয়েশা সুলতানা আর কিছু না বলে চলে যান। ইশানের কাছ থেকে যা চেয়েছেন তা ওনি পেয়ে গেছেন। এখন আর এখানে থেকে কোনো লাভ নেই যতোই দেরি করবে ততোই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে। আয়েশা সুলতানা চাইলেও ইশান আর তীরের সম্পর্কটা মেনে নিতে পারবে না তার যে হাত পা বাঁধা। তবে‌ নিজের মেয়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তীর সবটা মেনে নিবে নাকি পরিস্থিতি আরো ভ’য়ংক’র হবে।

বর্তমান……

ফরাজী বাড়ির সকলে ইশানের হাতে সাদা রুমাল বাঁধা দেখে অবাক হয়। বিশেষ করে রক্তের ছোঁপছোঁপ চাপ দেখে আতংকে উঠে। নেহা বেগম উদ্যত হয়ে ছেলের হাত ধরে বলেন।

–হাতে কি হয়েছে ইশান?

ইশান মায়ের কাছ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে।

–কিছু হয় নি মা ওই একটু কে’টে গেছে। আমি ঠিক আছি।

–ঠিক আছিস মানে। তোকে দেখে আমার একদমেই ঠিক লাগছে না বাবা ক’দিন ধরেই দেখছি কেমন উদাস হয়ে আছিস তুই আর এখন…

ইশান মায়ের দু বাহু চেপে ধরে আশ্বাস দিয়ে বলে।

–মা আমি একদম ঠিক আছি আমার কিচ্ছু হয় নি। অফিসের কাজের চাপটা একটু বেশি তাই নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে পারছি না। তাই একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে আমাকে।

–তা না হয় বুঝলাম কিন্তু তোর হাতে.. হাতে কি হয়েছে? গতকালকে তো ঠিকেই ছিলো তাহলে এখন কি করে হাতটা কা’ট’লো।

এমন সময় ইহান হাতে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে ভাইয়ের বাহু টেনে ধরে সোফতে বসিয়ে দিয়ে বলে।

–একটা কথাও বলবি না তুই আর! কি পেয়েছিস তুই আমাদের বলতো। তুই জানিস এখন নিয়ে তুই কত বার র’ক্তা’ক্ত হয়েছিস। আজকাল নিজের উপর তুই কতটা জু’লু’ম করছিস তা কি তুই বুঝতে পারচ্ছিস। হাতটা কা’ট’লো কি করে?

–ভাইয়া আমি ঠিক আছি।

–একটা দিবো কানের নিচে বেয়াদব ছেলে।

ইহান ইশানের হাত থেকে রুমালটা সরাতেই আতকে উঠে। এতো বা’জে ভাবে হাতের উপরি ভাগের অংশটা কেটেছে যা বলার বাহিরে। ইহান হতভম্ব চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে।

–এভাবে হাতটা কা’ট’লো কি করে ইশান? কিসের দ্বারা কেটেছে হাতটা?

নেহা বেগম ছেলের হাতের এমন করুণ অবস্থা দেখে কেঁদেই ফেলেন। বড় ছেলেকে নিয়ে ওনার কোনো টে’ন’শ’ন নেই। যতো টে’ন’শ’ন এই ছোট ছেলেকে নিয়ে। সোহেল ফরাজী স্ত্রীর কান্না দেখে বলেন।

–শান্ত হও।

–কি করে শান্ত হবো তুমি বলো? এই ছেলেটা আমাকে শান্তিতে থাকতে দিছে না। আমার আগের ইশানের সাথে এই এখনের ইশানের আকাশ পাতাল তফাৎ। আগের ইশান এমন ছিলো না। এতোটা বেপরোয়া ছিলো না।

সোহেল ফরাজী শান্ত কন্ঠে ছোট ছেলের উদ্দেশ্যে বলে।

–হাতটা কে’টে’ছে কি করে ইশান?

ইশান কোনো কথা বলছে না কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার। ইহান ইশানের হাত ব্যান্ডেজ করতে করতে বলে।

–কি হলো? বাবা কিছু জিজ্ঞেস করছে তোকে।

চোখ বন্ধ করে নেয় ইশান। এতো প্রশ্ন ইশানের একদম সহ্য হচ্ছে না। মন বলছে কখন এই সব প্রশ্নের বেড়াজাল থেকে ইশান বের হতে পারবে। ইশান ঠান্ডা কন্ঠে বলে।

–এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না আমি। দেরি হচ্ছে আমার যদি পারো নাস্তা সার্ভ করো না হলে নাস্তা না করেই বের হতে হবে আমাকে।

ইশানের একটা কথা শুনেই সকলে স্তব্ধ হয়ে যায়। ইশান যখন একবার বলে দিয়েছে কোনো উত্তর দিতে পারবে না তার মানে কোনো রকম ভাবে ইশানের মুখ থেকে উত্তর বের করতে পারবে না।‌ তবে নেহা বেগমের সন্দেহ হচ্ছে ছেলের মুখ দেখে মায়ের মন তো তাই ছেলের মুখ দেখলেই বুঝতে পারে ছেলের মনে কি ধরনের ঝ’ড় বইছে।

ইশান কোনো রকম ভাবে নাস্তা করে। গলা দিয়ে‌ যেন কোনো মতেই খাবার নামছে না। কিন্তু তারপরও বেঁচে থাকার জন্য তো‌ কিছু খেতে হবে। তাই জোর করে হলেই কিছুটা খেয়েছে।

ইশান অফিসের ব্যাগ নিয়ে বের হতে নিলে ইশাকে ডাক দেয়। ইশা এতোক্ষণ দুর থেকে দাঁড়িয়ে ভাইয়ের সব কার্যকলাপ দেখছে। মনের মাঝে আজেবাজে সকল চিন্তা হানা দিছে। সামনের দিন গুলা হয়তো ভ’য়ংক’র হতে যাচ্ছে এটা বুঝতে পারছে।

ইশা গুটিগুটি পায়ে হেটে ভাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। ইশান ব্যাগের চেইন খুলে তীরের ফোনটা বের করে বোনের হাত দিয়ে বলে।

–তীরের ফোনটা ওকে দিয়ে দিস। আর আমার ওয়াশরুমের আয়না ভেঙ্গে গেছে ওটা পরিস্কার করার ব্যবস্থা করিস।

বলেই দ্রুত পায়ে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। ইশা অবাক চোখে ভাইয়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে। ইশান এটা কি বলে গেলো আয়না ভেঙ্গে গেছে মানে তবে কি ওই আয়না দ্বারাই ইশানের হাতটা কে’টে’ছ। ইশা দৌঁড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। পেছন থেকে নেহা বেগম ডাক দিলে ইশা তা উপেক্ষা করেই চলে যায়।

ইশা ইশানের ওয়াশরুমে ডুকে আতকে উঠে র’ক্তে’র দাগ আর কাচ ভাঙ্গা দেখে। র’ক্তে’র দাগ গুলা শুকিয়ে গেছে। তার মানে ইশার সন্দেহই ঠিক ইশানের হাত এই আয়না দ্বারাই কে’টে’ছে।

ইশা ইশানের ঘর থেকে বের হয়ে তীরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হয়। তীর আর ইশানের মাঝে আবারও কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে এটা বুঝতে পারছে। না হলে তীরের ফোন ইশানের কাছে আসে কি করে হঠাৎ করে।

________

আয়েশা সুলতানা মেয়ের ফোলোফোলো মুখ দেখে বলে।

–কিছু কি হয়েছে তীর?

তীর নাস্তা খাওয়া বন্ধ করে বলে।

–কি হবে?

–তাহলে মুখটা এমন দেখাচ্ছে কেন?

–রাতে ঘুম হয় নি তাই।

কিন্তু আয়েশা সুলতানার বুঝতে আর বাকি নেই মেয়েরে যে কি হয়েছে। তাই আর কথা বড়ায় না কারণ গতকাল রাতে আয়েশা সুলতানা মেয়েকে দেখতে মেয়েরে রুমে এসে যখন মেয়েকে দেখতে পেলো না তখন ছাদে এসে ইশান আর তীরের শেষের কিছু কথোপকথন শুনে নেয়। এমন সময় ইশাকে হন্তদন্ত হয়ে আসতে দেখে নেহা বেগম অবাক হয়ে বলেন।

–ইশা তুমি এখানে?

–তীরের সাথে আমার জরুরি কিছু কথা আছে।

তীর নাস্তা চিবুতে চিবুতে উদাস কন্ঠে বলে।

–তো বল শুনছি আমি।

তীরের এমন উদাসীনতা দেখে ইশা দাঁত দাঁত চেপে বলে।

–তোর রুমে গেলে ভালো হয়।

–ওকে চল তাহলে। শুনি তুই কি এমন জরুরি কথা বলবি যে সজাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছি।

ইশা যে কেন এতো সকালে এসেছে তীরের বুঝতে বাকি নেই। তবে তীর মনোস্থির করে ফেলেছে ইশানকে সে পৃথিবীর সকল কষ্ট উপরহার দিবে।

#চলবে______

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৭

–তোর ফোনটা।

তীর ইশার কাছ থেকে ফোন নিয়ে বলে।

–থ্যাঙ্ক ইউ রে আসলে ফোনটার প্রয়োজন ছিলো আমার হবু বরের সাথে কথা বলতে হবে।

তীরের কথা শুনে ইশা পিলে চমকে তাকায় তীরের মুখ পানে। তীরের কথার আগা মাথা কিচ্ছু বুঝতে পারছে না যে মেয়ে কয়েক মাস আগে ইশানের মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা শুনার জন্য এতো কিছু করলো আর আজকে কি না সেই মেয়টা এসব আজগুবি কথা বলছে। চলছে কি এই‌ মেয়েরে ছোট্ট মাথায় কি খিচুড়ি পাকাচ্ছে। ইশা তীরের বাহু ধরে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলে।

–কি বলচ্ছিস কি তুই এসব? মাথা টাথা কি পুরাটাই খারাপ হয়ে গেছে নাকি।

তীর ইশার হাত নিজের বাহু থেকে সরাতে সরাতে বলে।

–আমার মাথা পুরোটাই ঠিক আছে।

–তাহলে এসব কি উদ্ভট কথাবার্তা বলছিস!

–আসলে কি বলতো তোর ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছি আমি।

ইশা ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচ করে বলে।

–ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ করতে যাচ্ছিস মানে। হচ্ছেটা কি এসব আমাকে ক্লিয়ার করে বলবি একটু।

–তোর ভাই চায় আমি যেন বিয়ে করে নেই ওই ছেলেকে তাই আমিও তোর ভাইয়ের ইচ্ছে পূরণ করার দায়িত্ব নিলাম।

ইশা তীরের কথা শুনে বিস্মিতা নয়নে তীরের দিকে তাকায়। ইশান যে এই ধরণের কথা বলেছে ঠিক হজম হচ্ছে না তার। ইশা হতবাক হয়ে বলে।

–তুই কি আমার সাথে মজা করছিস তীর।

–মজা করতে যাবো কেন আমি তোর সাথে!

আলমারি থেকে জামা বের করতে করতে বলে। তীরের এমন ভাবলেশহীন কথাবার্তা শুনে ইশা রে’গে গিয়ে তীরকে ধমকের স্বরে বলে।

–যা বলবি স্পষ্ট ভাবে বল। এমন হেয়ালি মার্কা কথাবার্তা বলবি না একদম আমার সাথে।

তীরের হাত দুটো মুহূর্তে থেমে যায়। বুক চিরে কান্না আসছে। এতো কষ্ট হচ্ছে যে বলার বাহিরে। কেন ইশান তার সাথে এমনটা করলো? কি দোষ ছিলো তার? ইশানকে ভালোবেসে ছিলো এটা কি তার দোষ ছিলো। তবে তীর এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ইশান যে তাকে এখনও ভালোবাসে। তবে কিছু একটা কারণে ইশান তাকে দুরে সরিয়ে দিতে চাইছে। তীরকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে ইশা ত্রস্ত পায়ে তীরের কাছে এসে তীরের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরাতেই আতকে উঠে তীরকে দেখে। তীরের চো পানিতে টইটম্বুর করছে। একটু ছুয়ে দিলেই তা ঝর্ণার স্বচ্ছ পানির মতো গড়িয়ে পড়বে নিচে। ইশা গলার স্বর নিচু করে বলে।

–কি হয়েছে তীর?

ঠোঁটে ভেঙ্গে কান্না আসছে তীরের। নিজের কঠিন রুপটা আর ধরে রাখতে পারছে না শত চেষ্টা করেও। মুহূর্তের মাঝে হামলে পড়ে ইশার বুকে। ইশা হতভম্ব হয়ে যায় তীরের এহেন কাজে। হঠাৎ মেয়েটার হলো কি? একটু আগে ছিলো এক রুপে এখন চলে এসেছে অন্য এক রুপে। ইশা যেন একটা গোলকধাঁধার মাঝে পড়ে গেছে। ইশা মুখ ফুটে কিছু বলতে নিবে তার আগেই তীর ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বলে।

–ওনি কেন আমার সাথে এমন করছে ইশু? কি দোষ করেছি আমি যে এভাবে আমাকে শাস্তি দিছে। এতো নি’ষ্ঠু’র ওনি কি করে হতে পারে? ওনার কি একটুও কষ্ট হচ্ছে না আমার সাথে এমনটা করার জন্য।

ইশা নির্বোধের মতো তীরের কথা গুলা শুনে গেলো। এতোটা কষ্ট তীর নিজের মনের মধ্যে পুষে রেখেছে ইশা বুঝতে পারে নি। ইশা তীরকে শান্ত করে কোমল কন্ঠে বলে।

–কি হয়েছে? এভাবে কান্না করচ্ছিস কেন? সব তো ঠিকেই ছিলো, তাহলে হঠাৎ কি হলো?

তীর গতকাল রাত্রের সম্পূর্ণ ঘটনাটা খুলে বলে। তীরের প্রতিটা কথাই যেন ইশার বিশ্বাসযোগ্য মনে হলো না। তার ভাই যে এমন ব্যবহার করেছে ঠিক মানতে পারছে না। ইশা অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলে।

–কিন্তু ভাইয়া এমনটা করতে যাবেই বা কেন?

–জানি না আমি কিচ্ছু জানি না ওনি আমাকে হার্ট করেছেন। এর মূল্য ওনাকে দিতে হবে। কি পেয়েছেন ওনি আমাকে যা বলবে তাই করতে হবে আমাকে।

–কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই‌ এর ভেতরে না হলে ভাইয়া এমন অদ্ভুত আচরণ করতো না। তোকে ভাইয়া যে হাতে চ’ড় মেরেছে সে হাতকেই আবার নিজেই ক্ষতবিক্ষত করেছে।

তীর ইশার কথাটা শুনে ভ্রু কুচ করে বলে।

–মানে।

–ভাইয়া তোকে কষ্ট দিয়ে নিজেও যে কষ্ট পাচ্ছে।

–তো কে বলছে ওনাকে কষ্ট পেতে আমি বলেছি।

–ভাইয়ার সাথে আমাকে কথা বলতে হবে এই বিষয়ে।

তীর ইশার বা হাত ধরে বলে।

–একদম না ওনার সাথে এই বিষয়ে তুই কথা বলবি না। ওনার জালে যদি ওনাকে না ফাঁসিয়েছি আমি তাহলে আমার নামও তীর না। তুই শুধু দেখ আমি কি করি? খুব শখ না ওনার জীবন থেকে আমাকে সরিয়ে দেওয়ার। এতো‌ সহজে ওনাকে আমি ছাড়ছি না। ওনি নিজে এসে সব সত্যিটা বলবে কেন এমনটা করছেন?

ইশা তীরের মুখ পানে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে এই মেয়ের পেটে আর মন ঠিক কি চলছে। কি করতে চাইছে?

_____

বড় কাচের দরজা টেলে তীর রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। মাথার শুভ্র রঙের ওড়নাটা কিছুটা সরে যাওয়াতে বা হাত দিয়ে সামনের দিকে টেনে এনে চারদিকটা নজর বুলায়। কিন্তু তীর যার সাথে এই রেস্টুরেন্টে দেখা করতে এসেছে তাকে তীর চিনে না জাস্ট ফোনে এক বার কথা হয়েছে। তীর আসতে চায় নি কিন্তু মায়ের কথা রাখার জন্য বাধ্য হয়ে আসতে হলো। ইশাকে নিজের সাথে আনতে চেয়েছিলো কিন্তু ইশা শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারে নি। তীর কাঁধের ব্যাগের চেইনটা খুলে যখনেই ফোন বের করতে যাবে ওমনি হঠাৎ করেই অপরিচিত একজন মানব ঝড়ের বেগে এসে সামনে দাঁড়ায়। তীর ভ’য় পেয়ে দু কদম পিছিয়ে যায় হাত থেকে ফোনটা নিচ পড়তে পড়তে বেচে গেছে। তীর রা’গী কন্ঠে বলে।

–এসবের মানে কি? আপনি কি চোখে দেখতে পান না‌। নাকি পকেটের ভেতরে চোখ নিয়ে হাটেন।

তীরের সামনের দাঁড়ানো সুর্দশন ছেলেটা মুচকি হেসে বলে।

–রিলেক্স ম্যাডাম! আমি বুঝতে পারে নি আপনি যে এতোটা ভ’য় পেয়ে যাবেন। আর আপনি যদি আমার দ্বারা ভ’য় পেয়ে থাকেন তাহলে তার জন্য সরি।

–এভাবে কারো সামনে এসে দাঁড়ালে গণপিটুনি খেতে হবে তাই নেক্সট টাইম সাবধানে হাটাচলা করবেন হাত পা না ভাঙ্গতে চাইলে।

–এভাবে আর কারো সামনে যাবো না আপনিই লাস্ট আর আপনিই ফাস্ট।

–মানে।

–আমি আকাশ শেখ যার সাথে আপনি দেখা করতে এসেছেন সেই মানুষটা আমি।

ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে কথাটা বলে‌ আকাশ। তীর এবার বুঝতে‌ পারলো এই ছেলেটাই তার মায়ের পছন্দ করা ছেলেটা আর অভিলা আন্টির ছেলে। তীর আকাশকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত নজর বুলায়। ছেলেটা দেখতে মাশাল্লাহ অনেক হ্যান্ডসাম কিন্তু তার ইশানের মতো এতোটাই সুদর্শন পুরুষ নয়। ইশান কত্ত লম্বা আর সুঠাম দেহের অধিকারী এই ছেলে ইশানের ধারে কাছেও আসবে না কোনো দিন। তীরের এমন চাওনি দেখে‌ আকাশ বাঁকা হেসে বলে।

–আমাকে যদি আপনার দেখা হয়ে থাকে তাহলে আমরা কোথাও গিয়ে বসি।

তীর আকাশের কথা শুনে ইতস্তত বোধ করলো। এভাবে তাকিয়ে থাকাটা একদম উচিত হয় নি কিন্তু সে তো অন্য চিন্তায় মগ্ন ছিলো। দৃষ্টি যদিও আকাশের দিকে ছিলো কিন্তু মন ছিলো ইশানের কাছে। আকাশ নিচের ঠোঁট কামড়ে বলে।

–চলুন বসি গিয়ে।

তীর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। মধ্যম সারির একটা ফাঁকা টেবিলে এসে দাঁড়ায় তারা। তীর চেয়ার সারাতে নিলে‌ই আকাশ বলে।

–আমি সরিয়ে দিচ্ছি ওয়েট।

তীর মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–ধন্যবাদ।

আকাশ বসতে বসতে বলে।

–ধন্যবাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন এটা আমার দায়িত্বের মাঝেই পড়ে।

আকাশের কথা শুনে তীর মনে মনে ব্যঙ্গ করে বলে।

–হুমম। দায়িত্বের মাঝে পড়ে তোর দায়িত্ব তোর কাছে রাখ।

আকাশ মেনু কার্ড দেখতে দেখতে বলে।

–কি খাবেন বলুন?

–আপনার যা মন চায় তাই অর্ডার দেন।

–আমার যা মন চাইলে তো হবে না। আপনার কি পছন্দ অপছন্দ সেটা তো আমি জানি না এখন পর্যন্ত।

তীর ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে।

–আমার সব কিছুই পছন্দ কোনো অপছন্দ নেই আমার।

–ওও তাহলে তো ভালোই। আজকে অনেক গরম পড়েছে তাই দুটো কোল্ড কফিই অর্ডার করলাম।

আকাশ ওয়েটার ডেকে দুটো কোল্ড কফি অর্ডার দিয়ে তীরের মুখ পানে তাকিয়ে বলে।

–কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো।

–বলুন।

–আপনাকে তুমি করে বললে কি আপনি মাইন্ড করবেন।

–হ্যাঁ রে শালা মাইন্ড করবো।

মনে মনে কথাটা বলে আকাশকে বলে।

–না না মাইন্ড করবো কেন?

–ধন্যবাদ।

আকাশের মনে তো লাড্ডু ফুটছে। তীরকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে ছবির থেকেও বাস্তবে যেন তীর আরো বেশি সুদর্শনী। আকাশ মনে মনে ঠিক করে রেখেছে বাড়িতে গিয়ে মাকে বলবে যত সম্ভব তাড়াতাড়ি তীরকে তার বউ করে ঘরে নিয়ে যেতে চায়।

______

রিফাত আর ইশান রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে। রেস্টুরেন্টে আসার কারণ হলো একটা ডিল সাইন করার জন্য। রিফাত ইশানের এমন বিধ্বস্ত চেহারা দেখে বার বার জিঙ্গেসা করেছে কি হয়েছে কিন্তু প্রতি বারেই ইশানের কাছ থেকে আশানুরূপ কোনো উত্তর পেলো না। তাই রিফাতও আর জোর করে নি জানার জন্য। আবির ইশানকে দেখার সাথে সাথে হাত নাড়িয়ে ডাক দেয়। ইশানও আবিরের ডাক শুনে আবির যেথায় আছে সেথায় যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।

এদিকে তীরের একদম ভালো লাগছে না আকাশের সাথে থাকতে। আকাশ একাএকাই বকবক করে যাচ্ছে আর তীর তা অনিচ্ছা সত্ত্বেও গিলছে। কিন্তু হঠাৎ করে তার নাকে এসে মিষ্টি একটা সুঘ্রাণ বারি খায়। এই ঘ্রাণ যে তার বড্ড পরিচিত তবে কি সেই মানুষটা তার আশেপাশে কোথাও আছে। তীর আশেপাশে নজর বুলাতেই দেখতে পায় পাশের সারির দু টেবিল পড়েই ইশান বসে আছে তার মুখোমুখি হয়ে। তীরের নজর যায় ইশানের ব্যান্ডেজ করা হাতের দিকে যা দেখে তীরের বুকটা ধ্বক করে উঠে। লোকটা তাহলে সত্যি সত্যিই হাত কেটেছে। কেন নিজেকে এভাবে আঘাত করে কষ্ট দিছে আর তাকেও বা কেন কষ্ট দিছে। কি চাইছে ইশান? তীরের অস্থিরতা টের পেয়ে আকাশ বলে।

–এনি প্রবলেম?

তীর মেকি হাসি দিয়ে বলে।

–না না কোনো প্রবলেম নেই।

কিন্তু মনে মনে বলে।

–কিন্তু এবার প্রবলেম হবে।

তীর যে খুব তাড়াতাড়ি একটা সুযোগ পেয়ে যাবে ইশানকে জ্বালানোর জন্য তা কল্পনাও করতে পারে নি। তো সুযোগের সৎ ব্যবহার তো তাকে এক্ষুনি কাজে লাগাতে হবে।

______

ইশানের কোনো ধ্যান নেই এই ডিলটার উপরে। আবিরেই যা করার করছে। ইশান কোনো এক চিন্তায় মগ্ন হয়ে আছে। আবিরের ডাকে ইশানের ধ্যান ভাঙ্গে।

–স্যার আপনি এবার সাইনটা করে দেন।

–হুম দাও।

ইশান সাইন করে কলমটা টেবিলের উপর রাখতে নিলে কারোর নাম শুনে থমকে যায়। সামনে তাকাতেই চমকে যায় তীরের হাস্যজ্জ্বল চেহারা দেখে। তীরও যে এতক্ষণ ধরে এটা চাইছিলো ইশান যেন তাকে দেখতে পায়। তাই তো আকাশকে বাধ্য করেছে তার নাম উচ্চস্বরে ডাকার জন্য। যখন তীর বুঝতে পারলো ইশানের নজরে সে পড়ে গেছে তখনেই নিজের রুপ পাল্টে আকাশকে বলে।

–আপনার কি আমাকে পছন্দ হয়েছে?

তীরের মুখে এমন কথা শুনে আকাশ কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু পরক্ষণে নিজেকে সামলে বলে।

–খুব পছন্দ হয়েছে তোমাকে? তোমার পছন্দ হয়েছে তো আমাকে।

তীর লাজুক হেসে বলে।

–এতো জলদি বলাটা মনে হয় ঠিক হবে না আমার।

–কোনো সমস্যা নেই সময় নিয়ে আমাকে জানিও। তবে সেটা যেন হ্যাঁ হয়।

তীর মাঝে মাঝে আঁড় চোখে তাকাচ্ছে ইশানের দিকে। ইশান রা’গে বো’ম হয়ে আছে। কালো বলপেনটা ডান হাতে শক্ত করে মুঠো বন্দী করে রেখেছে। ইশানের রা’গে আরেকটু ঘি ঢালার জন্য তীর আকাশকে হেসে হেসে বলে।

–আপনি চাইলে আমার হাতটা ধরতে পারেন।

আকাশ যেন আকাশ থেকে পড়ে। তার মনের কথাটা জানলো কি করে তীর। এতক্ষণ ধরে তো সে চাইছিলো তীরের এই ছোট্ট হাতটা ধরতে কিন্তু সাহস পাচ্ছিলো না বলার। আকাশ তীরের হাত ধরতেই ইশান দাঁড়িয়ে পড়ে। ইশানকে এভাবে হঠাৎ করে দাঁড়িয়ে পড়তে দেখে রিফাতের সাথে অন্যরা যারা বসে ছিলো তারও অবাক হয়। রিফাতও দাঁড়িয়ে বলে।

–ইশান কি হয়েছে?

ইশান রা’গে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তীর যে এটা ইচ্ছে করে করছে তাকে রা’গা’নো’র জন্য এটা বুঝতে ইশানের বাকি নেই। ইশান তীরের এমন চোরা চেহারা দেখেই বুঝে ফেলেছে যে এটা অভিনয় কিন্তু ছেলেটা কে এটা বুঝতে পারছে না। তবে মন বলছে এই সেই ছেলে যার জন্য আজ তাদের দু’জনের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। রিফাত ইশানের স্থির দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলেই‌ সামনে তাকিয়ে তীরকে দেখে চমকে উঠে। রিফাত কিছু বলার আগেই ইশান এগিয়ে যায় তীরের টেবিলের কাছে। ইশানকে এগোতে দেখে তীর কিছুটা ভয় পায় কিন্তু ইশান যদি রা’গারা’গী করে তো তীর আজকে ইশানকে ছেড়ে কথা বলবে না। কিন্তু তীরকে অবাক করে ইশান কিচ্ছু না বলে রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে যায় দ্রুত পায়ে। ইশানের এমন আচরণে তীর ভীষণ ভাবে অবাক হয়। তীরের সাথে রিফাতও অবাক হয়। তীর তো ভেবেছিলো ইশান হয়তো খুব রাগারাগী করবে তাকে অন্য এক ছেলের সাথে এতো ক্লোজ দেখে কিন্তু কিচ্ছু করলো না। তীরের মনটা ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলো। তবে কি সত্যি ইশানের মন থেকে উঠে গেছে সে। কিন্তু কেন উঠে গেছে সে এটার কোনো উত্তরেই খুজে পাচ্ছে না।

আকাশকে অবাক করে তীর দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্ট থেকে। আকাশ অনেক বার পিছু ডেকেছে কিন্তু তীর ফিরেও তাকায় নি। শেষমেষ আকাশ জলদি বিল মিটিয়ে তীরের পিছনে যায়। কিন্তু গিয়েও লাভ হলো তার আগেই তীর মিলিয়ে গেছে।

_______

ইশান ক্ষ’ত হাতে দ্রুত ড্রাইভ করে নিস্তব্ধ এক জায়গাতে এসে গাড়ি থামায়। চোখের সামনে ভাসছে একটু আগের ঘটে যাওয়া দৃশ্যটা। অন্য কোনো পুরুষ ছুয়ে দিয়েছে আজ তার সুখ পাখিটাকে। তাও কিছু করতে পারলো না শুধু দেখা ছাড়া। আজ যদি এই পরিস্থিতি না হতো তো ওই ছেলের হাত ভেঙ্গে দিতো ইশান। কিন্তু এরপর যখন আরো গভীর ভাবে স্পর্শ করবে তার ছোট্ট সুখ পাখিকে তখন তা কি করে সইবে ইশান। ভাবতেই শরীরের কা’টা দিয়ে উঠে। তাড়াহুড়ো হাতে সিট বেল্ট খুলে গলায় ঝুলানো টাইটা এক টানে খুলে শার্টের দুটো বোতাম খুলে দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখ বন্ধ করে মাথাটা হেলিয়ে দেয় সিটে আর দুর্বল কন্ঠে বিড়বিড় করে উঠে।

–আমি সইতে পারবো না জান তোকে অন্য কেউ স্পর্শ করবে সেটা আমি সইতে পারবো না।

ইশানের ফোনে লাগাতার কল করে যাচ্ছে রিফাত। কিন্তু ইশানের কারো সাথে এখন কোনো ধরণের কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। ইশান কিছুক্ষণ নিরব থেকে আবারও বলে।

–উপসংহারে যদি বিচ্ছেদেই লেখা ছিলো, তাহলে সূচনা এতো রঙিন করে লেখা হলো কেন?

#চলবে________

#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৮

ইশান রাত সাড়ে এগারোটায় বাড়িতে আসে। সদর দরজা ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথেই খুলে যায়। এতো রাতে এভাবে দরজা খুলা পেয়ে ইশান কিছুটা অবাক হয়। কিন্তু তারপরও কিছু না বলে দরজা আটকিয়ে সিঁড়ির মাথায় আসতেই পা জোড়া থমকে যায়। পেছন ফিরে মাকে সোফায় বসে ঘুমাতে দেখে বড্ড অবাক হয়। ইশান সোফার উপরে ব্যাগটা রেখে মায়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে কোমল স্বরে ডাকে।

–মা…. ও মা।

কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরেই নেহা বেগম চোখ খুলে। মাকে সজাগ হতে দেখে ইশান বলে।

–ঘরে গিয়ে শোও এখানে এভাবে সোফায় বসে ঘুমাচ্ছো কেন?

নেহা বেগম ছেলের শুকনো মুখটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকেন। মাকে এভাবে ধ্যান মেরে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশান বলে।

–কি হয়েছে মা? এভাবে কি দেখছো?

নেহা বেগম দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে বলে।

–দেখছি আমার ছোট্ট ইশানটা কত্ত বড় হয়ে গেছে। ছোট বেলায় কত্ত বায়না করতো মায়ের কাছে আর সেই বায়নাটা মা যেকোনো মূল্যে পূরণ করতে চাইতো। কিন্তু এখন আমার ছোট্ট ইশান বুঝতে শিখে গেছে আগের মতো আর বায়না ধরে না মায়ের কাছে। নিজের ভেতরের কষ্টটা নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে শিখে গেছে।

ইশান মায়ের চোখের সামনে থেকে মুখ সরিয়ে নিয়ে বলে।

–হঠাৎ এসব কথা বলছো কেন মা?

–ইশান আমি তোর মা। আমি জানি তোর মনে এখন কি চলছে? তুই চাইলে আমি আয়েশা আপার সাথে কথা বলতে পারি তোর আর তীরের ব্যাপারে।

নেহা বেগমের কথাটা বলতেই ইশান মায়ের দিকে ফিরে অস্থির কন্ঠে বলে।

–নাহ মা! তুমি প্লিজ আয়েশা আন্টির কাছে এ বিষয়ে কোনো কথা বলবে না।

–কিন্তু আমি আমার ছেলের কষ্ট সারাটা জীবন দেখতে পারবো না।

ইশান মায়ের দু হাত আঁকড়ে ধরে বলে।

–প্লিজ মা তুমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলবে না। আমি যে আয়েশা আন্টিকে কথা দিয়েছি।

নেহা বেগম ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ কুচ করে বলে।

–কথা দিয়েছিস মানে কি কথা দিয়েছিস?

ইশান কিয়ৎকাল ঠোঁট চেপে রেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।

–তীরের জীবন থেকে সারা জীবনের জন্য সরে যাওয়ার।

–মানে।

ইশান ওই দিনের সবটা ঘটনা মাকে বলে। নেহা বেগম এসব শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন।

–তারপরও একটা চেষ্টা করে….

মায়ের কথার মাঝেই ইশান বলে উঠে।

–নাহ মা। আমি চাই না কেউ এই বিষয় নিয়ে আয়েশা আন্টি বা তীরের পরিবারের অন্য কারো সাথে কথা বলো। দোষটা সম্পূর্ণ আমার আমিই না জেনেই তীরের জীবনে ডুকে গেছি। যেখানে তীরের আগে থেকেই সব ঠিক করা ছিলো।

–কিন্ত ইশান তুই তো…

ইশান মুচকি হাসি দিয়ে বলে।

–আমি ঠিক আছি মা। তোমার ছেলে এতোটাও উইক নয় যে এই সামান্য কষ্টটুকু সহ্য করতে পারবে না।

–মায়ের চোখে সব ধরা পড়ে ইশান। তোকে দেখলে বুঝা যাচ্ছে‌ কি যন্ত্রণায় আছিস তুই।

ইশান কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সত্যি কি সে এই যন্ত্রণাটা সহ্য করতে পারবে নাকি সারা জীবনেই যন্ত্রণায় কাতড়াবে। ইশানকে মৌন থাকতে দেখে নেহা বেগম বলেন।

–ফ্রেশ হয়ে নে খাবার দিচ্ছি।

নেহা বেগম চলে যেতে নিলে ছেলের ডাকে থেমে যান। ইশান কোমল কন্ঠে মায়ের কাছে আবদার করে‌ বলে।

–মা এখানে একটু বসবে তোমার কোলে একটু মাথা রাখবো।

ছেলের আবদার শুনে নেহা বেগম মুচকি হেসে আগের জায়গাতে বসে। ইশান ছোট্ট বাচ্চাদের মতো জড়সড় হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস ছাড়ে। নেহা বেগম ছেলের মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেয়। চাইলেই আয়েশা সুলতানার সাথে কথা বলতে পারতেন কিন্তু ছেলে যেহেতু না করেছে তাই আর সাহস পাচ্ছে না কিছু বলতে পরে যদি আবার হিতে বিপরীত হয়। তবে ছেলের কষ্ট কি করে ভোলাবে সেটাই ভাবছেন, মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন তীরের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরপরেই ইশানের বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন একটা ভালো, মার্জিত মেয়ের সাথে যাতে তীরের স্মৃতি মুছে দিতে পারে।

_____

দেখতে দেখতে কেটে গেছে দু দুটো দিন। যতো দিন যাচ্ছে ততোই ইশান আর তীরের মাঝে দূরত্ব বাড়ছে। এই দূরত্ব যেন ইশানকে ভেতরে থেকে কুরে কুরে শেষ করে দিচ্ছে তবে পরিবারের সকলের সামনে নিজেকে যথেষ্ট স্ট্রং রাখছে। কিন্তু পরিবারের সকল সদস্যরাই বুঝতে পারছে ইশানের মনের কষ্ট কিন্তু মুখ ফুটে কিচ্ছু বলার সাহস পাছে না। এতো সব কষ্টের মাঝে ফরাজী ভিলাতে একটা সুসংবাদ এসে হাজির হয়েছে। ফরাজী ভিলাতে নতুন সদস্যের আগমনের বার্তা শুনে যেন সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছে। ইহান তো বাবা হওয়ার কথা শুনে খুশিতে কান্নাই করে দিয়েছে। নেহাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বার বার ধন্যবাদ জানাচ্ছে। কিন্তু এই খুশির মাঝে তীরের বিয়ের সময় এগিয়ে এসেছে। তীর শর্ত রেখে দিয়েছে মায়ের সামনে “নিজের তো কোনো বড় ভাই নেই তাই ইশান যেন তার বিয়েতে A to Z থাকে”। ইশানের বুঝতে আর বাকি নেই যে তীর এগুলা ইচ্ছে করে করছে তাকে আঘাত দেওয়ার জন্য। ইশানও হাসিমুখে রাজি হয়েছে সে তীরের বিয়ের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান নিজের হাতে করবে। তীরের ভালোবাসা তো আর এই জীবনে পাবে না তাই এই আঘাত গুলাই না হয় ভালোবাসা ভেবে হাসিমুখে সঁপে নিবে। এরপর তো এই আঘাত গুলা করার মানুষটাই আর তার আশেপাশে থাকবে না। তাই যতো দিন আছে সবটা মুখ বুজে সহ্য করে নিবে।

____

আজ তীরের বিয়ের শপিং করতে যাবে সবাই মিলে। সবাই মিলে বলতে ইশা, তীর, আয়েশা সুলতানা আর অভি। তাই ইশানও অফিসে যায় নি ওদেরকে শপিংয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ইশা যেতে চায় নি কিন্তু যখনেই শুনেছে আকাশও এসে তাদের সাথে যুক্ত হবে তখনেই শপিংয়ে যেতে রাজি হয়েছে। কারণ ইশা দেখতে চায় তীরের সাথে আকাশকে দেখে তার ভাইয়ের কি রকম রিয়াকশন হয়।

ইশান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে পকেটে হাত গুজে বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে। এই বাগানেই চার বছর আগে প্রথম দেখে তীরকে। সময়টা ছিলো তখন ফাল্গুন মাস চারিদিকে নানা রকমের বাহারি রঙের ফুল ফুটে আছে। গাছে গাছে রং বেরঙের প্রজাপতিরা ডানা জাপটে এসে বসছে আর উড়ছে।

ইশানের সকালের ঘুমটা আজকে একটু তাড়াতাড়ি ভেঙ্গে যায়। তাই ফজরের নামাজটা আদায় করে বেলকনিতে চলে যায় সকালের মিষ্টি রোদটা সারা গায়ে মাখানোর জন্য। ফাল্গুন মাসের শুরু তাই আবহাওয়া কিছুটা শীতল। ইশান শীতল আবহাওয়া পেয়ে বেলকনির দোলনাতেই ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম ভাঙ্গে ফোনের শব্দে। কিছুক্ষণ ফোনে কথা বলে যখনেই রুমে আসার জন্য পা বাড়াবে তখনেই গায়ে মাথায় ওড়না পেচানো একটা মেয়েকে দেখে পা জোড়া থেমে যায়। এতো সকালে একটা অচেনা মেয়েকে দেখে বড্ড অবাক হয় ইশা। চোখ দুটো ছোট ছোট করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আসলে মেয়ে করতে কি চাইছে? মেয়েটা চারিপাশটায় ভালোভাবে নজর বুলায়। উপরের দিকে তাকাতেই ইশান ঝট করে আড়াল হয়ে যায়। অচেনা মেয়েটা আস্তে আস্তে করে বাগানের দিকে এগিয়ে এসে গোলাপ ফুল ছিড়তে থাকে। মেয়েটার কান্ড দেখে আপানাআপনিই ইশানের ঠোঁটের কোণে হাসি রেখা ফুটে উঠে। কিন্তু গোলাপ ফুলগুলা তাড়াহুড়ো করে ছিড়ার সময় মেয়েটার হাতে কাটা ফুটে যায় তাতে যেন ইশানের বুকটা ধ্বক করে উঠে। ইশানের হৃদয় ব্যাকুল হয়ে উঠেছে মেয়েটার কাছে গিয়ে মেয়েটার কাটা স্থানটা দেখার জন্য কতটুকু কেটেছে। ইশান নিচে নামার জন্য উদ্যত হতে নিলেই মেয়েটা এক দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় ফরাজী ভিলা থেকে। ইশান চারপাশটাও নজর বুলায় মেয়েটা ঠিক কোন রাস্তা দিয়ে গেছে। তখনেই নজর পড়ে পাশের বাড়ির গেইটের দিকে মেয়েটা গেইটের সাথে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। ইশানের ঠোঁটের কোণে আবার হাসি ফুটে উঠে। চোখ মেলে তাকায় মেয়েটা হাত রাখা গোলাপ ফুল গুলা নাকের কাছে এনে চোখ বন্ধ করে তার ঘ্রাণ নেয়। ঘ্রাণ নিয়ে চোখ মেলে তাকিয়ে‌ মুচকি হেসে উপরের দিকে দৃষ্টি যেতেই ইশানকে দেখে ভ’য় পেয়ে যায় এটা ভেবে ওকে ফুল চুরি করতে দেখে নেয় নি তো। ভ’য়ে মেয়েটা আর কিচ্ছু না ভেবে দৌঁড়ে বাড়ির ভেতরে ডুকে যায়।

ইশানের মাথা কাজ করছে না যে বাড়িটা এতো দিন খালি ছিলো এই বাড়িতে হঠাৎ করে এই রুপসী একটা মেয়ে কোথা থেকে আসলো। তাকে কি পরী দেখা দিলো নাকি এই সাত সকালে। ইশানের এমন অদ্ভুত ভাবনাতে নিজেই অবাক হয়। পরী যদি দেখাও দেয় তাহলে পরী এভাবে মানুষকে দেখে ভ’য়ে এভাবে দৌঁড় দিবে নাকি। পরক্ষণে ইশানের মনে পড়লো মায়ের বলা কয়েকদিন আগের কথাটা যে এই বাড়িটা একজন কিনে নিয়েছে। তখন তো আর ইশান বুঝতে পারে নাই এই পরীটাই তার তীর।

এসব ভেবেই ইশানের ঠোঁটের কোণের হাসির রেখে ফুটে উঠে। কিন্তু ইশানের এই হাসি দেখে কারোর শরীরের জ্বালা ধরে গেছে। মন চাইছে ইশানের ঠোঁট দুটো সেলাই করে দিতে যাতে এই জীবনে আর হাসতে না পারে। সে ইশানকে কাঁদাতে চায় আর এই‌ ইশান কি না হাসছে। এতো রং বইছে শরীরের।

ইশানের ধ্যান ভাঙ্গে ইশার ডাকে। ইশানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তীর আর ইশা। তীরের মুখ জুড়ে রাজ্যের রা’গ প্রকাশ পাচ্ছে কিন্তু ইশান তীরের এই রা’গে’র কারণ বুঝতে পারছে না। তার কথা মতোই সব কাজ করছে তাহলে‌ এতো ক্ষো’ভ কেন? ইশান কয়েক পল তীরের দিকে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নিয়ে বলে।

–গাড়িতে উঠ লেইট হচ্ছে।

ইশা কর্কশ কন্ঠে বলে।

–ইচ্ছে করছে তোমাকে একদম খু…. !

বোনের কথায় ইশান ভ্রু-কুচকে নেয়। ইশা কিচ্ছু না বলেই রা’গ দেখিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। কিন্তু তীর উঠে বসে না ও এক ধ্যানে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান তীরকে গাড়িতে উঠার কথা বলতে যাবে এমন আয়েশা সুলতানা অভিকে নিয়ে হাজির হয়ে মেয়েকে বলেন।

–কিরে? তাড়াতাড়ি কর লেইট হচ্ছে তো।

তীর কর্কশ কন্ঠে বলে।

–উঠছি মা।

তীর উঠে যেতেই আয়েশা সুলতানা ইশানের কাছে এসে কিছু বলতে নিবে তখনেই ইশান বলে উঠে।

–আন্টি লেইট হচ্ছে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠুন।

আয়েশা সুলতানা ইশানের কষ্টটা বুঝতে পারছেন সাথেও মেয়েরও কিন্তু সে চাইলেও কিচ্ছু করতে পারবে না। ওনি অনেক চেষ্টা করেছেন বিয়েটা আটকানোর জন্য। কিন্তু ওনার বান্ধবী মানতে নারাজ। ওনি তীরকে তার পুত্রবধু করে নিবেন হয়তো আজ নয়তো কাল। বার বার ওয়াদা করার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তাই আয়েশা সুলতানাও বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছেন এই বিয়েতে। তবে মনেপ্রাণে সবসময় উপরওয়ালার কাছে দোয়া করে যাচ্ছেন এই বিয়েটা যেন না হয়। আয়েশা সুলতানা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে উঠে বসে।

#চলবে______

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে