#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৩
ইশান হন্তদন্ত হয়ে ইশার রুমে আসে ইশাকে ডাকতে ডাকতে। ইশা ভাইয়ের এমন ডাকাডাকি শুনে ঘুম থেকে উঠে তড়িৎ বেগে দরজা খুলে দেয়। ইশা সন্ধ্যার দিকেই বাড়িতে এসেছে নানা বাড়ি থেকে। এতোটা জার্নি করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাড়িতে এসেই ফ্রেশ হয়ে বিছানাতে গা হেলিয়ে দিতেই ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়। ইশা এখন পর্যন্ত আজকের ঘটনার কিচ্ছু জানে না কি কি হয়েছে? ইশা দরজা খুলার সাথে সাথে ইশান ঘরে প্রবেশ করে চোখে মুখে রা’গ নিয়ে বলে।
–এক্ষুনি তীরের কাছে যা।
ভাইয়ের এমন আবদার শুনে ইশা ভ্রু-কুচ করে বলে।
–কোন দুঃখে আমি এখন তীরের কাছে যাবো?
–আমি বলছি তাই যাবি।
ইশা চোখ বন্ধ করে অসন্তোষজনক ভাব করে বলে।
–ভাইয়া দেখো আমি একটু আগে এতোটা পথ জার্নি করে এসেছি। এখন আমি তীরের কাছে যেতে পারবো না। শরীর খুব ক্লান্ত লাগছে আমার।
ইশান বোনের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে দেখে বোন তার ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলছে আর আজকের বিষয়ে যে কিচ্ছু জানে না সেটাও ভালো করেই বুঝতে পারছে। যদি আজকের বিষয়ে সব জানতো তাহলে এভাবে চিন্তা মুক্ত হয়ে থাকতে পড়তো না।বোনের ঘুম উবে দেওয়ার জন্য ইশান বলে।
–তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ইশা। আর ও এখন আমার ফোনও ধরছে না দেখেই তোকে বলছি তীরের কাছে যাওয়ার জন্য।
ভাইয়ের মুখে এমন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে ইশার ঘুম সত্যি পালিয়ে গেছে। চোখে মুখে ভেসে উঠছে রাজ্যের সকল বিস্ময়কর চাপ। ইশানের কথাটা শুনে ইশা এতোটাই আশ্চর্য হয়েছে যে কথা বলার কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না। ইশার ঠিক হজম হচ্ছে না তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার কথাটা। ইশা তারপরও নিজেকে সামলে উত্তেজিত হয়ে বলে।
–কি বলছো কি তুমি এসব ভাইয়া?
–ঠিকেই বলছি আজকে তীরকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো। আর এখন তীরকে আমি ফোন দিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আমার ফোন তো ধরছেই না বরং ফোনটা সুইচড অফ করে দিয়েছে।
–কিন্তু ভাইয়া তীরের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কি করে?
–জানি না আমি কিচ্ছু। ওর নাকি আগে থেকেই বিয়ে ঠিক করা ছিলো আয়েশা আন্টির বান্ধবীর ছেলের সাথে। আর আজকে বিজি থাকার জন্য আমি ওর কলও ধরতে পারি নি তার জন্য হয়তো আমার উপরে রা’গ করেছে। তাই বলছি বোন প্লিজ তুই যা ওর কাছে আর গিয়ে বল আমি ছাদে ওর জন্য অপেক্ষা করছি। ওর সাথে আমার কথা বলা প্রয়োজন।
–এতো চিন্তা করো না ভাইয়া আমি যাচ্ছি এক্ষুনি তীরের কাছে।
ইশা চলে যায় নিচে আর ইশান চলে যায় ছাদে। ইশা নিচে নামতেই আয়েশা সুলতানার সাথে দেখা হয়। আয়েশা সুলতানাকে এমন সময় দেখে কিছুটা অবাক হয় ইশা। আয়েশা সুলতানা ইশাকে দেখে বলে।
–একি ইশা তুমি কখন আসলে?
–এইতো আন্টি সন্ধ্যার সময় এসেছি।
–ওও।
নেহা বেগম মেয়েকে বলেন।
–কিছু খাবি মা।
–না মা কিছু খাবো না এখন একে বারে ডিনার করবো। আমি বরং তীরের সাথে দেখা করে আসি আসার পর ওর সাথে দেখা করা হয় নি আর ওর ফোনটাও বন্ধ।
আয়েশা সুলতানা বলেন।
–হুম যাও তো মেয়েটা যে ঘরের দরজা লাগিয়েছে তো লাগিয়েছেই খুলার নামেই নেই। এতো করে বললাম দরজাটা খুলার জন্য কিন্তু দরজা খুললো না। উল্টে বলল তার নাকি ভালো লাগছে না। এখন তোমার ডাকে যদি দরজাটা খুলে।
ইশা মেকি একটা হাসি দিয়ে বলে।
–চিন্তা করবেন না আন্টি ওকে আমি বন্ধ ঘর থেকে বের করবোই।
বলেই ইশা চলে যায় তীরদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
______
বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইশা আর তীরকে ক্রমাগত ডেকে যাচ্ছে কিন্তু তীর সাড়া দিচ্ছে না ইশার ডাকে।
–তীর দরজাটা খুল এমন করিস না প্লিজ। তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে প্লিজ দরজাটা খুল।
কোনো লাভ হচ্ছে না ইশার কথায়। তীর যেন পণ নিয়ে রেখেছে আজকে আর এই বন্ধ দরজা খুলবেই না। তবে ইশাও ছাড়ার পাত্রী নয় এই বন্ধ দরজা সে তীরকে দিয়ে খুলিয়েই ছাড়বে। ইশা নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে কিছু একটা ভেবে গম্ভীর গলায় বলে।
–তীর তুই যদি এই মুহূর্তে দরজা না খুলিস তাহলে জেনে রাখিস তোর সাথে আমার পাঁচ বছরের যেই বন্ধুত্বের রিলেশন ছিলো সেটা আমি ভেঙে দিবো।
ইশার কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু তীরের দরজা খুলতে কোনো প্রকার বিলম্ব হলো না। তীর দরজা খুলার সাথে সাথে ইশা ঘরের ভেতরে ডুকে বলে।
–সমস্যাটা কি তোর তীর? এভাবে দরজা বন্ধ করার মানে কি? তুই জানিস কতোটা চিন্তায়…
থেমে যায় ইশা তীরের অসহায় মুখশ্রী দেখে। মেয়েটা এতক্ষণ ধরে এমন ভাবেই কেঁদেছে যে চোখের পানির দাগ পরে গেছে গালে। তীরের চোখের পানি ফুড়িয়ে গেছে কিন্তু ফুপানো থামছে না। ইশা তীরকে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে দেখে তীরের গায়ে এখনো খয়েরি রঙের কাতান শাড়িটা আছে। রেশমি কালো চুল গুলা এলোমেলো হয়ে আছে। দু চোখের কোণদ্বয় লাল হয়ে আছে অতিরিক্ত কান্না করার ফলে। ইশা প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর এমন অবস্থা দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে তীরের কাছে দু কদম এগিয়ে এসে বলে।
–সামান্য একটা বিষয়ের জন্য নিজেকে কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস তীর?
তীর ভাঙ্গা গলায় বলে।
–এটা তোর কাছে সামান্য মনে হচ্ছে। মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে ইশু। আর মা যা বলে তাই করে ছাড়ে সেটা তোর অজানা নয়।
–শিসসসস। এতো উত্তেজিত হওয়ার কিচ্ছু হয় নি। ভাইয়া আছে তো ভাইয়া সব কিছু ঠিক করে দিবো।
তীর তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে।
–ওনি নেই। ওনি যদি থাকতো তাহলে আমার ফোনটা আজকে ধরতো। এভাবে আমার ফোনটা ইগনোর করতে পারতো না। আমি আজকে ওনাকে কতো গুলা ফোন দিয়েছি জানিস তুই।
–তীর তুই ভুল বুঝছিস ভাইয়াকে। ভাইয়া তখন একটা মিটিংয়ে ছিলো তাই তোর কল ধরতে পারি নি। আর ভাইয়া তোর বিয়ের খবরটা জানার পর থেকেই তোকে কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তুই কল না ধরে উল্টে ফোনটা বন্ধ করে দিয়েছিস।
তীর অভিমানী কন্ঠে বলে।
–ওনার সাথে আমার আর কোনো কথা নেই।
–দেখ তীর ভাইয়া তোর জন্য ছাদে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে। এই কথাটা তোকে বলার জন্যই আমার এখানে আসে।
–ওনি কেন ছাদে আমার জন্য অপেক্ষা করে ওনি ওনার ইম্পর্টেন্ট মিটিং নিয়ে পড়ে থাকুক। আমি মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে নিবো। মায়ের ইচ্ছেটাই আমি পূরণ করবো।
–সেই ইচ্ছেটা তোর মায়ের কোনো দিন পূরণ হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি চাইবো।
পরিচিত গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ শুনে দুই মানবী হতবাক হয়ে দরজা দিকে তাকাতেই চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। ছাদে প্রায় ১৬ মিনিট যাবত ইশান তীরের জন্য অপেক্ষায় ছিলো কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া তীর ছাদে যাওয়ার কোনো নাম গন্ধই নেই। ইশানেরও সকল ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে যায় তীরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। এক পর্যায়ে রা’গের বশে কোনো দিক বেদিক না ভেবেই তীরদের ছাদের দরজা দিয়ে তীরের ঘরের সামনে এসে হাজির হয় ইশান। সশরীরের ইশানকে দেখে তীর আর ইশা চমকে উঠে। ইশা হতভম্ব হয়ে বলে।
–ভাইয়া তুমি এখানে কি করে?
–তুই ঘরের বাইরে যা ইশু। ওর সাথে আমার কথা আছে।
তীর ইশাকে উদ্দেশ্য করে বলে।
–ইশু বলে দে ওনাকে ওনার সাথে আমি কথা বলতে ইচ্ছুক নই। আর এটাও বলে দে ওনি যেন আমার ঘর থেকে এক্ষুনি চলে যান। ওনাকে আমার পরিবারের কেউ দেখলে সমস্যা হতে পারে।
ইশান দাঁতে দাঁত চেপে বোনকে বলে।
–ইশু কি বলছি তোকে শুনতে পাস নি বাইরে যা আর খেয়াল রাখ যেন কেউ এই ঘরের আশেপাশে না আসে।
–ভাইয়া তুমি আমার কথাটা….
–বাইরে যা।
ইশা মাথা নিচু করে ঘর থেকে চলে যায়। আর এদিকে তীর ক্ষো’ভে সাপের মতো ফুঁসছে। ইশা যেতেই ইশান ঘরের সিটকানি লাগাতেই তীর চেঁচিয়ে বলে।
–আপনি দরজা আটকাছেন কেন?
ইশান তীরের দিকে ফিরতেই দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিললো দুজনের। ইশান শীতল দৃষ্টি নিয়ে তীরের দিকে তাকিয়ে। তীর বেশিক্ষণ ইশানের দিকে তাকিয়ে তাকতে পারলো না অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বলে।
–কি সমস্যা আপনার? এভাবে একটা মেয়ের ঘরে চোরের মতো কেন এসেছেন? মিনিমাম আত্মসম্মানটুকু কি আপনার মাঝে নেই।
তীরের মুখে এমন কথা শুনে ইশানের দাঁতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে রা’গে। কয়েক কদম তীরের কাছে এগিয়ে এসে কিরিমিরি করে বলে।
–বুঝতে পারছিস না! কেন এভাবে চোরের মতো তোর ঘরে এসেছি। নাকি না বুঝার ভান করছিস।
–আমি কিচ্ছু বুঝতে চাই না আপনি এই ঘর থেকে এই মুহূর্তে বেরিয়ে যাবেন।
ইশানের রা’গের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। যতো চেষ্টা করছে তীরের সাথে রা’গ না দেখানোর জন্য ততোই যেন তীর ইশানকে রা’গিয়ে দিচ্ছে। মানুষ এর জন্যই বলে পুচকে মেয়েদের সাথে প্রেম করতে যেও না তারা অল্পতে একটু বেশি বুঝে ফেলে। ইশানকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তীর পুনরায় বলে।
–কি হলো এভাবে স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ঠিক আছে আপনি এই ঘরে থাকুন আমি বরং এই ঘর থেকে চলে যাই।
তীর দরজার কাছে গিয়ে সিটকানি খুলতে যাবে ওমনি ইশান তীরের দু হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দরজার সাথে চেপে ধরে গম্ভীর কন্ঠে বলে।
–আমার উপরে রা’গ করেচ্ছিস ভালো কথা। কিন্তু এই নয় যে আমাকে তুই ইগনোর করে এই ঘর থেকে চলে যাবি। আমি এতোটা রিস্ক নিয়ে তোর সাথে কথা বলতে এসেছি আর তুই আমাকে ইগনোর করে এই ঘর থেকে চলে যাবি সেটা তো হবে না।
ইশানের তপ্ত নিঃশ্বাস তীরের সারা মুখে আছড়ে পড়ছে তাতে যেন তীরের শরীর অসাড় হয়ে আসছে। তীর গলার স্বর নিচু করে বলে।
–ছাড়ুন।
–ছাড়বো না। আগে আমার কথা শেষ হোক তারপর ছাড়াছাড়ি।
–আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই।
–কিন্তু আমার তোর সাথে কথা আছে আর তুই শুনতে বাধ্য।
তীর কোনো কথা বলে না নজর অন্য দিকে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ইশান তীরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি ফেলে বলে।
–ফোন বন্ধ করেছিস কেন?
–আমার ইচ্ছে তাই ফোন বন্ধ করেছি।
–দেখ তীর তুই যদি আমার উপরে প্র’তি’শো’ধ নেওয়ার জন্য তোর ফোন অফ করে থাকিস তাহলে তুই একটা বোকা।
তীর অবাক চোখে ইশানের দিকে তাকায়। নিজে ফোন অফ করে রাখলে কিছু না তীর ফোন অফ করলেই যত বোকামি।
–দেখ তীর তুই যখন ফোন দিচ্ছিলি আমি তখন মিটিংয়ে ছিলাম তাই আমি তোর কল ধরতে পারি নাই। আর আমি যদি এটা জানতাম তুই কেন আমাকে কল দিচ্ছিস তাহলে আমি অবশ্যই কল পিক করতাম তোর।
তীর মৃদুস্বরে বলে।
–মা আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।
ইশান ছোট্ট করে উত্তর দেয়।
–জানি তো।
–আমি অন্য কোনো ছেলেকে বিয়ে করতে চাই না। আমি তো আপনাকে ভা…
থেমে যায় তীর ইশানের দিকে থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে মেঝেতে তাকায়। তীরকে থেমে যেতে দেখে ইশান বলে।
–আমাকে কি?
–আপনি জানেন সেটা।
ইশান তীরের দু হাত ছেড়ে বাম হাত তীরের কোমড়ে রেখে তীরের দিকে ঝুঁকে কানের কাছে নিজের মুখ নিতেই থরথর করে কেঁপে উঠে তীর। অন্য দিকে ইশান কন্ঠে মাদকতা মিশিয়ে বলে।
–জানি না আর জানলেও তাতে কি! সেটা তুই মুখে বল আমি শুনতে চাই।
তীরের গলা শুকিয়ে আসছে। দুরুদুরু করে কাঁপছে বুকের ভেতরটা। সেই কম্পনের আওয়াজ নিশ্চিত ইশানের কানে পৌঁছৈ গেছে। তার সামনের লোকটা যে অন্য রকম আচরণ করছে তার সাথে। মনে হচ্ছে যেন অন্য এক ইশান দাঁড়িয়ে আছে তার সম্মুখে। তীর ইশানকে নিজের সত্ত্বার মাঝে ফিরিয়ে আনার জন্য অস্পষ্ট স্বরে বলে।
–ইশান ভাই আপনি এখন যান কেউ যদি জানে আপনি এখানে তাহলে…
তীরের কথা আটকে যায় ইশানের এক অদ্ভুত কান্ড ঘটানোর জন্য। বড় বড় চোখ করে ইশানের ঘাড়ের দিকে তাকিয়ে আছে তীর। বা কানের লথিতে এখনো হালকা ব্যথা অনুভব করছে। একটু আগেই ইশান তীরের মুখে ভাই ডাকটা শুনে রে’গে তীরের কানের লথিতে কাঁ’ম’ড় বসিয়ে দেয়। ইশান তীরকে নিজের সান্নিধ্যে এনে গম্ভীর কন্ঠে সুধায়।
–আমি তোর কোন কালের ভাই লাগি যে তুই আমাকে ভাই বলে ডাকিস।
তীর কা’পা’কা’পা গলায় বলে।
–না মানে আমি আসলে।
–নেক্সট টাইম তোর এই শ্রুতি মধুর কন্ঠে যেন এই তিক্ততা ময় শব্দটা না শুনি মনে থাকবে।
তীর মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। ইশান সোজা হয়ে তীরের মুখোমুখি হয়ে দু হাত দ্বারা তীরের মুখটা আগলে ধরে উঁচু করে বলে।
–আর রইলো তোর বিয়ে। তোর বিয়ে এই ইশান ফরাজীর সাথে হবে। যতোই বাধা আসুক না কেন তোকে এই জীবনে আমি ছাড়ছি না। তাই এতো কান্নাকাটি করে নিজেকে আর কষ্ট দিবি না মনে থাকবে আমার কথা।
তীর মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বলে। কিন্তু আজকে যেন তীরের অবাক করার দিন হয়ে গেছে। সকলে আজকে তাকে একে একে চমকে দিচ্ছে। এবার হুট করেই ইশান তীরের গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় শব্দ করে চু’মু বসিয়ে দেয়। কাজটা এতোটাই দ্রুততার সাথে ঘটেছে যে তীর অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে আছে ইশানের মুখ পানে। ইশানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি। ইশান মাথাটা চারপাশে ঘুড়িয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে তীরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে পুনরায় বলে।
–কিহ? শকড হয়ে গেছিস নাকি! এখন থেকে মাঝে মাঝে এমন শক খাওয়াবো তোকে ভাবছি।
ইশানের কথা শুনে তীর লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয়। এখনো অপ্রত্যাশিত চু’মুর শব্দটা যেন তার কানে বারি খাচ্ছে বার বার। ইশান প্রিয়তমার লজ্জা রাঙ্গা মুখশ্রীতে কিছুক্ষণ নজর রেখে বলে।
–আমাকে এখন যেতে হবে তীর। না জানি তো হিটলার মা কখন চলে আসে আমাদের বাড়ি থেকে।
তীর ছোট্ট করে উত্তর দেয়।
–হুম।
–আসি তাহলে।
তীর দরজার সামন থেকে সড়ে দেয়। ইশান মুচকি হেসে দরজার সিটকানি খুলার জন্য উদ্যত হলেও কিছু একটা মনে পড়ে থেমে গিয়ে হঠাৎ করেই তীরের দিকে ঝুঁকে যায়। ইশানের এমন কান্ডে তীর দু কদম পিঁছিয়ে গিয়ে ইশানের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। ইশান তীরের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে বলে।
–শাড়িতে তোকে অনেক বড় বড় লাগে জান একে বারে….
থেমে যায় ইশান অন্য দিকে তীর ভ্রু কুচ করে ইশানের দিকে তাকিয়ে। ইশান বাঁকা হসে বলে।
–না থাক কথাটা না হয় বিয়ের পরেই তোকে বলবো।
বলেই ইশান দরজা খুলে দ্রুত চলে যায় আর বেশিক্ষণ এখানে থাকা যাবে না। আর কিছুক্ষণ থাকলে একটু আগে যা ঘটেছে এর থেকে বেশি কিছু ঘটে যেতে পারে। তীর চিন্তিত মুখে ইশানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। তাকে শাড়িতে কেমন লাগে সেই চিন্তাই করছে। ইশান চলে যেতেই ইশা ঘরে ডুকে বলে।
–কিরে সব ঠিকঠাক হলো তদের মাঝে। তদের নিয়ে পড়েছি আমি এক মহা জ্বালায়। দুজনেরেই রা’গে’র সীমা এক। কারো থেকে কারো কম নয় বাবাগো।
ইশা তীরকে চিন্তিত দেখে বলে।
–কিরে কি হয়েছে তোর এমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
–কিছু হয় নি তুই এখন তোর বাড়ি যা।
–হুম এখন তো বলবেই চলে যেতে সব ঠিক হয়ে গেছে না। ঠিক আছে আমিও বরং যাই এখন।
ইশা চলে যেতেই তীর নিজের ঠোঁটে হাত রাখে। ইশানের ঠোঁট তার ঠোঁট ছুঁয়েছে ভেবেই দু হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ডেকে নেয়। একি হয়ে গেলো আজকে তার সাথে। লজ্জায় তো মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
#চলবে_________
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৪
দিনটা ১২ জুন। তীর আর ইশার বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার দিন। রেজাল্ট দেওয়ার দুই দিন আগে থেকেই তীর চিন্তায় চিন্তায় মরে যাওয়ার মতো অবস্থা। প্লাস তো পাবে না তীর এটা নিশ্চিত সে জানে। এখন কি পয়েন্ট পেতে পারে তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে আছে মেয়েটা। তবে ইশার ক্ষেত্রে পুরোটাই উল্টো ও হাসিতে, খুশিতে, খাচ্ছে, ধাচ্ছে। মানে রেজাল্ট নিয়ে ওর মনে কোনো প্রকার ভ’য় ড’র বলতে কিচ্ছু নেই। এ নিয়ে ইশান যে কথা শুনিয়েছে ইশাকে তার কোনো হিসাব নেই। কিন্তু ইশার তো গন্ডারের চামড়া তাই ও ভাইয়ের ফা’ল’তু কথায় পাত্তা দেয় নি। এক কান দিয়ে ডুকায় তো আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। ইশার এক কথা “যা হওয়ার হবে এতো চিন্তা করে কোনো লাভ নেই শুধু শুধু মস্তিষ্কের উপরে প্রেসার পড়বে”।
ইশা তীরের এমন ছটপটানি দেখে ফোনের স্ক্রিন থেকে নজর সরিয়ে তীরের দিকে নজর দিয়ে চেহারায় বিরক্তিকর ভাব এনে বলে।
–এই তুই এমন ব্যাঙের মতো লাফা লাফি করচ্ছিস কেন? একটু শান্ত হয়ে বস তো।
তীর পায়চারী করতে করতে বলে।
–রেজাল্টের টেনশনে আমার মাথা কাজ করছে না। আর তুই বলচ্ছিস শান্ত হয়ে বসতে। তুই কি করে এমন চিন্তামুক্ত হয়ে বসে বসে এভাবে ড্রামা দেখতে পারিস আমার তা বুঝে আসছে না।
ইশা আধশোয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে বসে বলে।
–শোন যা হওয়ার হয়ে গেছে তাই এতো টেনশন করে কোনো লাভ নাই। আচ্ছা আগে এটা বল তুই তো পরীক্ষা দিয়েছিস তাহলে তোর কি মনে হয় তোর পয়েন্ট কত আসতে পারে।
–উমমম 4.50 এর উপরে আসতে পারে।
–তাহলে তো হলোই 4.50 এর উপরে পেলেই ভালো রেজাল্ট যা। এখন এতো টেনশন না করে তার চেয়ে ভালো তুই আর আমি মিলে ড্রামা দেখি তাহলে রেজাল্টের কথা মাথায় আর আসবে না।
–তুই তোর ড্রামা দেখ।
–আরে এমন করিস কেন? আয় ড্রামাটা দেখ আইসা সেই মজা।
–তুই দেখ তোর ড্রামা চামা।
বলেই সোফায় বসে মনে মনে দোয়া করা শুরু করে দেয় খোদার কাছে যেন পরীক্ষার রেজাল্টটা ভালো আসে। পরীক্ষার রেজাল্ট দুই বান্ধবী এক সাথে জানার জন্যই তীর ফরাজী ভিলাতে আসে। ভেবেছিলো ইশাও হয়তো তার মতো রেজাল্ট নিয়ে টেনশন করবে কিন্তু না তার ভাবনা এই মেয়েটা একদম মিথ্যে প্রমাণ করে দিলো এমন বিহেভ করে।
____
ঘড়ির কাটা বারোটায় ছুইছুই এমন সময় রেহেলা খালা এসে জানায় ইশান ইশা আর তীরকে নিচে যেতে বলে। ইশা মুখে যাই বলুক না কেন মন মনে ঠিকেই ভয় পাচ্ছে রেজাল্ট নিয়ে। যতো রেজাল্ট প্রকাশের সময় এগিয়ে আসছে ততোই টেনশন বাড়ছে। ইশা আর তীর নিচে নামাতেই ইশান ইশার উদ্দেশ্যে বলে।
–আসেন আসেন চিন্তাহীন মানবী একটু পরেই আপনার ঐতিহাসিক রেজাল্ট প্রকাশ পাবে। আপনার রেজাল্ট জানার জন্য দেখুন আজকে কেউ এই বাড়ি ছেড়ে এক পাও বাইরে এগোইনি।
ইশানের কথা শুনে ইহান বলে উঠে।
–উফফ! ইশান আমার বোনটাকে এভাবে বলবি না দেখবি ইনশাল্লাহ ওর রেজাল্ট ভালোই হবে।
সোহেল ফরাজী বলেন।
–হে ইশান তুমি একটু বেশি বলছো আমার মাটাকে। দেখবে ওর রেজাল্ট ভালো হবে তাই না মা।
ইশা বাবার কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়। এমন সময় ইশান আবার বোনকে খুচা দিয়ে বলে।
–উমম। দেখা যাবে কেমন রেজাল্ট করে না করে। একটু পরেই তো প্রকাশ হবে।
এদিকে তীরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে ভয়ে। বার বার নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরছে। ইশান এবার ল্যাপটপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তীরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত কন্ঠে বলে।
–তীর!
তীর অসহায় চোখে ইশানের দিকে তাকায়। ইশান তীরের অসহায় মুখটা দেখে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে।
–রেজাল্ট নিয়ে খুব টেনশন হচ্ছে।
তীর মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বুঝায়। ইশান হেসে বলে।
–এতো টেনশন করার কিচ্ছু হয় নি যা হবে ভালোই হবে। তোর পাশের জনের তো রেজাল্ট নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথাই নেই তাই তোরও উচিত এতো চিন্তা না করার বুঝলি।
ইশা এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না ভাইয়ের উদ্দেশ্য চিৎকার করে বলে।
–ভাইয়া তুমি এমন একটা ভাব ধরছো যেন নিজে একেবারে গোল্ডেন প্লাস পেয়ে এসেছো সব পরীক্ষায়। তুমি কি ভাবো আমি কিচ্ছু জানি না বুঝি তুমি যে টেনে থাকতে টেস্ট পরীক্ষায় দু সাবজেক্টে ডাব্বা মেরেছো সেটা কি।
ইশান চোখ বড় বড় করে বলে।
–এই তোকে এসব কথা কে বলেছে হুম?
–যেই বলুক তোমাকে বলতে হবে।
–শোন তখন আমি অসুস্থ ছিলাম তাই….
ইশানের কথার মাঝেই ইশা বলে।
–থাক তোমাকে আর এতো এক্সকিউজ দিতে হবে না আমি জানি সব।
–কি জানিস তুই?
–জানি জানি সব বলেছে একজন আমাকে।
ইশান ভ্রু কুচ করে বলে।
–এই একজনটা কে?
–তোমাকে কেন বলবো?
ইশান আর ইশার এমন কথা কাটাকাটি দেখে তীর মনে মনে হাসে। এই দু ভাই বোন এক সাথে হলেই সাপে নেউলের মতো লেগে থাকে সারাক্ষণ। নেহা বেগম রান্না ঘর থেকে ভাই বোনের চিল্লাচিল্লি শুনে ছুটে এসে বলে।
–এই তোরা দুই ভাই বোন ঝগড়া বন্ধ করবি। আর ইশান তুই এতো বড় হয়েছিস তারপরও তোর হাটুর বয়সি বোনের সাথে এভাবে লেগে থাকিস কেন আমি সেটা বুঝতে পারি না?
তারপর স্বামীর দিকে নজর দিয়ে বলে।
–আর তুমি ছেলে মেয়ে দুটো ঝগড়া করছে আর তুমি তা বসে বসে দেখছো মুখ ফুটে কিচ্ছু বলছো না কেন?
–আমি কি বলবো।
–থাক তোমাকে আর কিচ্ছু বলতে হবে না। আর ইশান তুই…
মায়ের কথার মাঝেই ইশান বলে।
–মা তোমার আদরের মেয়ের কার্যক্রম দেখলেই এসব কথা আমার মুখ দিয়ে অটোমেটিকলি বের হয়ে পড়ে।
–আর বের করতে হবে না কথা। এবার দেখ মেয়েটার রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছে কি না।
–রেজাল্ট প্রকাশ তো হয়েছে কিন্তু সার্ভার ডাউন হয়ে গেছে।
ইশানের কথা শুনে তীরের বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠে। অন্য দিকে ইশাও টেনশনে পড়ে যায়।
রেজাল্ট জানতে পেরেছে তীরের পয়েন্ট 4.78 আর ইশার পয়েন্ট 4.81। ইশা তো ভীষণ খুশি এই রেজাল্ট নিয়ে তীরও মোটামুটি খুশি হয়েছে। যেই রেজাল্ট আশা করেছিলো তার থেকে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে এতে আল্লাহ কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে। ইশান রেজাল্ট জানার পরেই অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পূর্বে তীরের কাছে গিয়ে বলে।
–ভালো করেছিস। তবে আরেকটু ভালো করে পড়লে আরেকটু ভালো হতে পারতো রেজাল্টটা।
তীর ইশানের কথায় মুচকি হাসি দেয়। ইশানও মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায় অফিসের উদ্দেশ্যে। ইশান চলে যেতেই ইশা তীরের কাছে এসে বলে।
–তোর কি মন খারাপ?
তীর অবাক হয়ে বলে।
–কেন?
–এই তোর থেকে আমার পয়েন্ট যে একটু বেশি।
ইশার কথা শুনে তীর ইশার মাথা টুকা মেরে বলে।
–তুই আমাকে এমন হিংসুটে ভাবিস নাকি রে। যেমন পরীক্ষা খাতায় লিখেছি তেমন রেজাল্ট হয়েছে তার জন্য তো রেজাল্ট দেখে মন খারাপ করবো কেন?
ইশা হেসে বলে।
–জানি তো আমার তীর সোনা এমন মেয়েই না। সে গুড গার্ল।
_____
তীর মা বলে চিৎকার করতে করতে বাড়িতে ডুকছে। আয়েশা সুলতানা এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলো মেয়ের রেজাল্ট কি এসে জানার জন্য। তীর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে।
–মা 4.78 পেয়েছি।
–ইশা কি পয়েন্ট পেয়েছে?
তীর মায়ের কাছ থেকে দুরে সরে এসে বলে।
–4.81।
–দুজনেই ভালো রেজাল্ট করেছিস।
তীর মন খারাপ করে বলে।
–তুমি কি আমার উপর অসন্তুষ্ট হয়েছো মা।
আয়েশা সুলতানা ভ্রু কুচ করে বলে।
–হঠাৎ এই কথাটা বললি কেন?
–আমার রেজাল্ট নিয়ে।
–আরে ধুর বোকা মেয়ে তোর প্রতি অসন্তুষ্ট হবো কেন? খুব ভালো রেজাল্ট করেছিস।
তীর হেসে বলে।
–তাহলে আমি বরং বাবাকে ফোন দিয়ে জানাই গিয়ে আমার রেজাল্টের কথা।
–যাহ। আর হে তোর দাদুকে বলিস।
তীর চলে যেতে নিলে মায়ের ডাক শুনে থেমে গিয়ে বলে।
–কি হয়েছে মা?
আয়েশা সুলতানা মেয়ের গলার লকেটটা হাতে নিয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে।
–এই লকেটটা তোর গলায় কোথা থেকে এসেছে তীর? কে দিয়েছে তোকে?
তীর এতোদিন লকেটটা ওড়না দিয়ে ডেকে রাখতো কিন্তু আজকে অসাবধানতার কারণে ওড়না সরে গেছে আর মাও দেখে ফেলেছে। তীর আমতা আমতা করে বলে।
–মা এটা আসলে..
–আসলে কি? কে দিয়েছে এটা তোকে এতো দামি একটা জিনিস।
তীর এবার কি বলবে সত্যিটা তো তাকেই বলতে হবে মিথ্যে বললে মার কাছে নিশ্চিত ধরা পড়ে যাবে। তাই ভ’য়ে ভ’য়ে বলে।
–মা আসলে এটা আমাকে ইশান ভাই দিয়েছে আমাকে।
আয়েশা সুলতানা চোখ ছোট ছোট করে বলে।
–ইশান তোকে এটা দিয়েছে।
–হুমমম।
–কেন দিয়েছে?
–মা আসলে….
এমন সময় শাপলা বেগম নাতনিকে ডেকে উঠেন নিজের ঘর থেকে। আয়েশা সুলতানা ভারী গলায় বলে।
–যাহ দাদু ডাকছে তোকে।
তীর হাফ ছেড়ে বাঁচলো এতোক্ষণ মনে হচ্ছিলো যেন কেউ গলা চেপে ধরেছে। আরেকটু সময় মায়ের সামনে থাকলেই শ্বাস আটকে মা’রা যেত। তীর গুটি গুটি পায়ে মায়ের সামনে থেকে চলে যায়। আয়েশা সুলতানা সোফাতে বসে মনে মনে বলে।
–ইশান তোমার কাছ থেকে এমনটা আশা করি নি আমি। তুমি যে এভাবে সুযোগটা নিবে আমি ভাবতেও পারি নি। তবে এর উত্তর তোমাকে দিতে হবে আমাকে আজ কালকের মধ্যেই কেন তুমি এটা করলে?
_____
চার চারটে দিন পেরিয়ে গেছে ইশান আবারো তীরকে ইগনোর করা শুরু করে দিয়েছে। কল দিলেই বলে ব্যস্ত আছি পরে কথা বলি। তীর ভেবে পাচ্ছেন না কেন ইশান কয়েকদিন পর পর তার সাথে এমন করে কেন? কি সমস্যা ইশানের কি চায় সে? এ সবকিছুর উত্তর জানতে চায় ইশানের কাছ থেকে। কিন্তু এতো সব কিছুর মাঝে আরেক ঝামেলা এসে হাজির হয়েছে। তীরের সাথে দেখা করতে চায় তার মায়ের পছন্দ করা ছেলে। গতকালকেই নাকি লন্ডন থেকে দেশে এসেছে আর এসেই ছেলে চাইছে তীরের সাথে দেখা করতে। এমন কথা শুনে যেন তীরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। অচেনা অজানা একটা ছেলের সাথে কি করে দেখা করবে ভাবতেই কেমন যেন লাগছে। মাকেও ভয়ে না করতে পারছে যে সে দেখা করবে না। তীরের কিচ্ছু ভালো লাগছে না মাথায় এতো চাপ নিতে পারছে না। এক দিকে ইশান তো অন্য দিকে মা। তারা তার সাথেই কেন বার বার এমন করছে? কি চায় তারা?
#চলবে_____
#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_৪৫ (বিচ্ছেদের শুরু)
রাত এগারোটা বাজে। তীর বাড়ির সকলের নজর এড়িয়ে ছাদে আসে। ইশানকে দু বার কল দিয়েছে দু বারেই কল ধরে জাস্ট ব্যস্ত আছি বলেই কল কেটে দিয়েছে। তীরকে কোনো কথা বলার সুযোগেই দেই নি। তাই তীরও রে’গে ডিসিশন নিয়েছে ইশানের সাথে আজকে রাতের মধ্যেই কথা বলেই ছাড়বে ভেবেছিলো ফোনে কথা বলে সব কিছু জানাবে কিন্তু না এখন মনে হচ্ছে সামনাসামনি কথা বলা দরকার। একমাত্র রাত্রেই কথা বলার সুযোগ আছে ইশানের সাথে। এ ছাড়া তো ইশান তীরকে দেখাই দেয় না সকাল হতে না হতেই বাড়ি থেকে চলে যায় আর বাড়ি ফিরে রাত সাড়ে দশটা কিংবা এগারোটায় যাতে তীরের মুখোমুখি না হতে হয়। সবসময় তীরের থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখছে ইশান। কি পেয়েছে ইশান তাকে হাতের পুতুল যেভাবে নাচাবে সে সেভাবে নাচবে। নাহ তা হবে না তাকে আজ সকল প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে কেন তার সাথে বারবার এমন আচরণ করছে?
তীর ধীর পায়ে ছাদে এসে ছাদের দরজাটা আস্তে করে খুলে ছাদে প্রবেশ করে দরজাটা ভিড়িয়ে দিয় ছাদের চারপাশটা ভালো করে নজর বুলিয়ে দেয়। চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে গোটা পৃথিবী। তীর চাঁদটার দিকে কয়েক পল তাকিয়ে রেলিং এর কাছে এগিয়ে গিয়ে ফোনটা রেলিং উপর রেখে ছাদের চারিপাশটা কিছু একটা খুজার চেষ্টা করে। কাঙ্ক্ষিত জিনিস পাওয়ার পরে তীর টুলটা এনে রেলিং এর পাশে রেখে তাতে উঠে নিজেদের ছাদের রেলিং পার হয়ে ইশানদের ছাদে চলে যায়। তীর এই সাহসিক কাজটা করে নিজেকে বাহবা দিছে। জীবনে যেই কাজটা করার চিন্তা মাথায় আনে নি কোনো দিন আজকে কিনা সেই অসাধ্য কাজটা করে ফেললো প্রেমের কি পাওয়ার। এর জন্যই মানুষ বলে “প্রেম পড়লে মানুষ কি না করে, অসাধ্য কেও সাধন করে ফেলে”।
তীর ইশানদের ছাদে পা ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। এবার ইশানকে ফোন দিয়ে এই খবরটা জানানোর পালা যে তীর তাদের ছাদে এসেছে। তীর ওদের ছাদে এসেছে এই খবরটা জানলে ইশান সুড়সুড় করে চলে আসবে এটা নিশ্চিত। তীর রেলিং থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে ইশানকে কল দিতেই গিয়ে থেমে যায়। কল দিলে তো কোনো লাভ নেই ইশান তো তীরের কথা শুনার আগেই কল কেটে দেয়। তাই ভেবে চিন্তে তীর ঠিক করলো ইশানকে এমন একটা মেসেজ দিবে ইশান যেখানে থাকুক না পাগলের মতো এখানে ছুটে আসবে।
_____
ইশান ফ্লোরে বসে মাথাটা বেডের উপরে রেখে এলোমেলো অবস্থা বসে আছে। চোখ দুটো বন্ধ করে রেখেছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে তীরের হাস্যজ্জল চেহারাটা। তবে ভ্রুদ্বয়ের মাঝ বরাবরা ভাঁজ পড়ে আছে। মাথার দুই সাইডের শিরাগুলা অদ্ভুত এক যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন। বুকের বা পাশের ব্যাথাটা ক্ষণে ক্ষণে তীব্র হয়ে আসছে। সারাটা জীবন এই ব্যাথা কি করে সইবে সে। এই তিনটে দিন যে তাকে একে বারে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে ভেতর থেকে না জানি আগামী দিন গুলা তার জন্য আর কি কি অপেক্ষা করছে। পাশেই পড়ে আছে ফোনটা। এমন সময় ফোনে মেসেজ আসার শব্দ হয়। মেসেজ আসার শব্দ শুনেও ইশানের কোনো হেলদোল নেই একই অবস্থায় বসে আছে। তবে কিছু একটা মনে পড়তেই ইশান ফোনের লক খুলে মেসেজ অপশনে ডুকতেই চক্ষু চড়কগাছ। তীর মেসেজ দিয়েছে এতো রাত্রে তাও আবার এমন একটা মেসেজ,
“জানি আপনি ফোন দিলেও ধরবেন না। তাই মেসেজ দিয়ে বলছি আমি আপনাদের ছাদে এসেছি। আর আমি চাই আপনি এই মুহূর্তে আমার সাথে দেখা করুন। তিন মিনিট সময় আছে আপনার হাতে এর মধ্যে যদি আপনি ছাদে না আসেন তো আমি ছাদ থেকে লাফ দিবো”।
ইশান মেসেজ পড়ার পর রা’গে দাঁতের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। মেয়েটার এতোটা সাহস বেড়েছে যে রাত বিরাতে ও রেলিং পার হয়ে তাদের ছাদে এসেছে। ইশান আর কোনো দিক বেদিক না ভেবে ছুটে চলে ছাদের উদ্দেশ্য।
অন্য দিকে ইশানের আসতে লেইট হচ্ছে দেখে তীর আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারছে না। মন চাইছে ইশানের মতো করে ও ইশানের ঘরে সোজা চলে যেতে। কিন্তু এতোটাও সাহস পাছে না এমনটা করতে। রা’গে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে।
–শা’লা তোর মতো প্রেমিক যেন কারো কপালে না জুটে। শ’য়’তা’ন বেডা আমি তোরে অ’ভি’শা’প দিলাম তোর কপালে বিয়া নাই।
তীর কিছুক্ষণ ইশানকে ব’কা’ব’কি করে এখন সত্যি সত্যি মন চাইছে এই ছাদ থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যেতে। যেই ভাবা সেই কাজ তীর এগিয়ে যায় রেলিং এর কাছে ফোনটা দোলনার উপরে রেখে। ইশানদের ছাদের রেলিং কিছুটা নিচু তাই রেলিং এর উপরে উঠতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি। তীর রেলিং এর উপরে উঠে নিচে তাকাতেই ভ’য়ে শিউরে উঠে বলে।
–ওরে বাবারে কি ভ’য়া’ন’ক দৃশ্য মানুষ কি করে এতো উচু জায়গা থেকে লাফ দেয়। না বাবা পা পিচলে নিচে পড়ার আগেই এখানে নেমে যাই। হাত পা ভাঙ্গার ইচ্ছে আমার নাই।
তীর নিচে নামার জন্য ঘুড়তে নিবে এমন সময় ইশান হন্তদন্ত হয়ে ছাদে আসে। তীরকে রেলিং এর উপরে দেখে ইশান দৌঁড়ে এসে তীরের হাত ধরে নিচে নামিয়ে দিয়ে রা’গী কন্ঠে বলে।
–পাগল হয়ে গেছিস তুই তীর? এসবের মানে কি? মাথাটা কি পুরো খা’রা’প হয়ে গেছে তোর।
তীর ইশানকে দেখে রা’গে ফুসছে। নাক ফুলে উঠছে বার বার। দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছে। তীরকে চুপ করে থাকতে দেখে ইশান তীরের দু বাহু ধরে বলে।
–কি হলো কথা বলছিস না কেন?
তীর ও নাক ফুলিয়ে ইশানের দু হাত নিজের বাহু থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে।
–হে আমি পাগল হয়ে গেছি হে আমার মাথা পুরো খা’রা’প হয়ে গেছে। কেন জানেন আপনার জন্য শুধু মাত্র আপনার জন্য। কি পেয়েছেন আপনি আমাকে আপনার হাতের পুতুল যখন যেভাবে নাচাবেন সেভাবে নাচবো আমি। আর আপনি আমাকে ই’উ’জ করে দুরে সরিয়ে দিবেন তা হবে না মিস্টার ইশান ফরাজী।
তীরের কথা শুনে যেন ইশানের রা’গ আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। তীরের কথা শেষ হওয়ার পরপরেই তীরের বা গালে চ’ড় মারে ইশান। আচমকা এমন হওয়াতে তীর হতবাক হয়ে যায়। গালে হাত রেখে হ’ত’ভ’ম্ব চোখে তাকাল ইশানের পানে। ইশান আরেকটা থা’প্প’ড় দিতে উদ্যত হতে নিলেও মাঝ পথে আটকে যায়। জোরে শ্বাস ফেলে অন্য দিকে ফিরে দু হাত কোমরে রাখে। অন্য দিকে তীরের চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে নোনা জল। থা’প্প’ড়’টা এতো’টাও জোরে দেয় নি ইশান কিন্তু তারপরও তীরের বুক ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে এমনটা কোনো দিন প্রত্যাশা করে নি তীর। ইশান কিছুক্ষণ নিরব থেকে তীরের দিকে ফিরে গম্ভীর গলায় বলে।
–ইচ্ছে করছে তোর ডান গালে আরেকটা থা’প্প’ড় মারতে। আর কি বললি তুই তোকে আমি ই’উ’জ করেছি। কবে কখন তোকে আমি বা’জে ভাবে স্পর্শ করেছি যে তুই এমন একটা অভিযোগ তুলেছিস আমার দিকে।
তীর গালে হাত রেখে ইশানের দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। তীরের দৃষ্টি ইশানের বড্ড অচেনা লাগছে। তীরের সাথে এমনটা করা ইশানের ঠিক হয় নি ও বুঝতে পারছে কিন্তু তীরেরও বুঝা উচিত ও ভুল করেছে। আবেগ দিয়ে জীবন চলে না বাস্তবতা যে বড়ই কঠিন তীরকে সেটা বুঝতে হবে। তীরের এমন মৌনতা দেখে ইশান পুনরায় বলে।
–কি হলো এবার মুখটা বন্ধ করে রেখেছিস কেন? একটু আগে তো খুব বড় বড় কথা বলছিলি তাহলে এখন চুপ করে আছিস কেন? উত্তর দে।
ইশানের কথা শুনে তীরের মস্তিষ্ক জ্বলে উঠে। রা’গে দুঃখে বলে উঠে।
–আপনার সাহস কি করে হলো আমার গায়ে হাত তুলার!
–সাহসের কি দেখেছিস তুই নেক্সট টাইম তোর মুখে এসব আজেবাজে কথা শুনলে আবারো তোর গালে একটা থা’প্প’ড় পড়বে।
তীর আর এই অভদ্র লোকটার সাথে এক মুহূর্তও থাকবে না। কত্ত বড় সাহস তাকে চ’ড় মারে ইচ্ছে করছে উল্টে ইশানের গালেও কষে একটা চ’ড় বসিয়ে দিতে তাহলে যদি গায়ের জ্বালাটা মিটে। তীর মুখ ফুলিয়ে ইশানের পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে ইশানের কথা শুনে থেমে যায়।
–বিয়েটা করে নে তীর।
তীর ভ্রু কুচকে নেয়। বিয়েটা করে নে মানে কি বলতে চাইছে ইশান। কাকে বিয়ে করে নেওয়ার কথা বলছে? তীর হতবাক হয়ে বলে।
–কাকে বিয়ে করবো?
ইশান তীরের দিকে ফিরে শীতল চোখে তাকিয়ে বলে।
–যাকে তোর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য তোর মা ঠিক করেছে তাকে।
তীরের মন চাইছে ইশানকে কি করতে সেটা নিজেও বুঝতে পারছে না। অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে তীর।
–হে বিয়ে করে নিবো ওই ছেলেকে। আপনার মতো অভদ্র একটা ছেলেকে আমি কোনো দিন বিয়ে করবো না।
ইশান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা এনে বলে।
–সত্যি আমি একটা অভদ্র ছেলে। যে ছেলেটার সাথে কোনো মেয়ে থাকতেই পারে না।
তীরের মনে হচ্ছে ইশানের সাথে বেকার কথা বলে কোনো লাভ নেই। তবে এটা বুঝতে পারছে ইশানের নিশ্চয়ই কিছু তো একটা হয়েছে না হলে এভাবে এমন একটা কথা কি করে বলে দেয়। তীর দুর্বল হয়ে এসে ইশানের দু হাত আঁকড়ে ধরে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে।
–কেন এমন করছেন আমার সাথে? কি হয়েছে আপনার? আমি একটু আগে যা বলেছি তার জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছে। ওই কথা গুলা আমি রা’গে’র মাথায় বলে ফেলছি বিশ্বাস করুন আমি এমনটা বলতে চাই নি।
ইশান শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তীরের কান্না ইশানের বুকে ধনুকের তীরের ন্যায় বিঁধছে কিন্তু সে নিরুপায় কিচ্ছু করার নেই তার হাত পা বাঁধা। সে যে অন্য কারোর কাছে ওয়াদা করে রেখেছে তীরের জীবন থেকে দুরে সরে যাবে সারা জীবনের জন্য। কিন্তু এই অবুঝ মেয়েটা কি সেটা বুঝতে চাইবে। তীরের কান্নার গতি বেড়ে আসছে ধীরে ধীরে। ইশান শুকনো ঢোক গিলে বলে।
–অবুঝ হোস না তীর। আমার সাথে তুই সুখী হবি না।
–কে বলেছে আমি আপনার সাথে সুখী হবো না আমি আপনার সাথেই সুখী হবো।
–তার নমুনা তুই দেখতে পারচ্ছিস তীর। যবে থেকে আমি তোর জীবনে এসেছি তবে থেকেই তোর কষ্ট পিছু ছাড়ছে না।
তীর ইশানের হাত ধরে নিচে বসে পড়ে বলে।
–কেন এমন করছেন আপনি আপনার সাথে? কি দোষ করেছি আমি?
ইশান ধরা গলায় বলে।
–তোর কোনো দোষ নিয়ে সব দোষ আমার। আমারেই উচিত হয় নি তোর জীবনে আসা।
–প্লিজ এমনটা করবেন না আমার সাথে আমার যে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
ইশান চোখের পাতা বন্ধ করে বলে।
–সয়ে যাবে সেই কষ্টটা ধীরে ধীরে। আর তোর ভালোর জন্যই বলছি।
তীর সটান দাঁড়িয়ে পড়ে চোখের জল মুছে কঠিন গলায় বলে।
–আমার ভালোটা আপনাকে বুঝতে হবে না মিস্টার ইশান ফরাজী। আমার ভালোটা আমার বাবা মাকেই বুঝতে দেন। আর আপনি চাইছেন তো আমি বিয়েটা করি ওকে ফাইন আপনার চোখের সামনে আমি ওই ছেলেকে বিয়ে করবো। খুব শখ না আমার বিয়ে খাওয়া, আপনার সেই শখ আমি মিটাবো।
বলেই ছাদের রেলিং তাড়াতাড়ি করে পার হতে নিলে ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে তীর। তীরের আর্তনাদ শুনে ইশান চমকে দু চোখের পাতা খুলে এগিয়ে গিয়ে রেলিং পার হতে নিয়ে অস্থির হয়ে বলে।
–কি হয়েছে তীর কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস?
তীর হাত বাড়িয়ে ইশানকে থামিয়ে দিয়ে বলে।
–থাক জু’তো মে’রে গরু দান করতে হবে না আপনাকে আমি একদম ঠিক আছি। এতো দিন ঠিক ছিলাম না তবে এখন ঠিক আছি।
বলেই বসা থেকে উঠে খুঁড়ে খুঁড়ে হেটে চলে যায়। তীর চলে যেতেই ইশান থপ করে মেঝেতে বসে পড়ে। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে দু তিন ফোঁটা জল। সব শেষ সব কিছু আজ ইশান নিজের হাতে শেষ করে দিয়েছে। তার জীবন থেকে তার সুখটা আজ সুখ পাখির মতো খাঁচা থেকে উঁড়ে গেলো। যে সুখটা পাওয়ার জন্য তাকে চার চারটে বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে সেই সুখ পাখি আজ থেকে তার জীবন থেকে চলে গেলো। আবারও কি ইশানকে সেই আগের মতো #প্রনয়ের_দহনে পোড়তে হবে। কিন্তু এবার হয়তো তাকে একা #প্রনয়ের_দহনে পোড়তে হবে না তার সাথে তার সুখ পাখিটাও সেই দহনে পোড়বে। ভাগ্য তাদের দু’জনের সাথে এভাবে কেন বারবার খেলা করছে?
#চলবে______