#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#পর্ব_১২
তীর চোখ ছোট ছোট করে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। তীরের এহেন চাওনি দেখে ইশা বলে।
–এভাব তাকাস না প্লিজ আমার ভয় লাগছে তর এই চোখের দৃষ্টি দেখে।
–এতক্ষন তো আমাকে তাঁড়া দিতে দিতে মেরে ফেলছিলি আর এখন এমন নেতিয়ে বসে আছিস কেন অনুষ্টান না শুরু করে।
–আরে খালামনিরা তো এখনো আসে নি ওরা আসলেই শুরু করে দিবো।
–ঠিক আছে ওরা আসলে আমাকে খবর দিস তখন না হয় আমি আসবো।
–আরে কি বলিস ওরা এখনেই এসে যাবে।
–সময় গেলে পরে আসবে।
–ওই তো এসে গেছে।
তীর সদর দরজার দিকে তাকাতেই চোখ দুটো আপনাআপনি বড় হয়ে যায়। একটা মেয়ে ওয়ের্স্টান ড্রেস পড়ে আছে, পায়ে পেনসিল হিল, ভারী মেকাপ, বেশিরভাগ চুল লাল রঙ করা। তীর ভেবে পাচ্ছে না এমন বাঙালি অনুষ্টানে এমন ড্রেস পড়ে আসার কারন কি? তীর ইশাকে বলে।
–ওই এই এলিয়েনটা আবার কে?
–এটা লিনা আপু। খালা মনির মেয়ে।
–তোর কাজিন! তাহলে তার এমন বেহাল অবস্থা কেন?
–আরে লন্ডনে থেকে পড়াশোনা করে তো তাই এই বেহাল অবস্থা।
–তা বলে বিডি তে এমন বেহায়া মার্কা ড্রেস পড়ে ঘুরবে। চারিদিকের ছেলে গুলা কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে। একটু লাজশরম বলতে নেই।
–আরে এসব বাদ দে তো।
লিনা ইশাকে দেখে ইশার কাছে এসে বলে।
–হাই! ইশু কেমন আছো তুমি?
ইশা মেকি হাসি দিয়ে বলে।
–আমি তো বিন্দাস আছি আপু! তুমি কেমন আছো?
–আর কেমন আছি! ঢাকা শহরের চারিদিকে এত ময়লা যা বলার বাহিরে। কিন্তু কি আর করার ইহান ভাইয়ার বিয়ে তার জন্য আসতেই হলো।
–হুম সেটাই তো।
কিন্তু মনে মনে বলে।
–হুম আগে তো এই ঢাকা শহরেই থাকতে আর এখন কয়েক বছর লন্ডনে থেকে ভাব বেড়ে গেছে। যত্তসব ডং।
লিনা তীরের দিকে তাকিয়ে বলে।
–এই মেয়েটা কে?
ইশা তীর জড়িয়ে ধরে বলে।
–ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
লিনা তীরের থুতনি ধরে বলে।
–ওয়াও! দেখতে একদম কিউটের ডিব্বা একদম পুতুলের মতো।
তীর মেকি হাসি দিয়ে বলে।
–তুমিও দেখতে অনেক সুন্দর।
ইশা বলে।
–তো আপু তুমি কি ড্রেস পড়েই থাকবে।
–কেন এই ড্রেসে কি প্রবলেম?
–না কোনো প্রবলেম নেই কিন্তু এখনাে সবাই শাড়ি পড়ে আছে তো তাই বলছিলাম আর কি। আমিও তো শাড়ি পড়েছি।
লিনা মুখ ছিটকে বলে।
–এসব শাড়ি টাড়ি আমার পক্ষে পড়া সম্ভব না।
–কিন্তু ইশান ভাইয়া না শাড়ি ভীষন পছন্দ করে।
লিনা উত্তেজিত গলায় শুধালো।
–সিরিয়াসলি ইশান ভাইয়া শাড়ি পছন্দ করে।
–হে তো। তুমি যদি একবার শাড়ি পড়ে ভাইয়ার সামনে যাও তাহলে ভাইয়া তোমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকবে মিলিয়ে নিও আমার কথাটা।
–সত্যি।
–হুম হান্ড্রেড পার্সেন্ট সত্যি।
–ঠিক আছে তাহলে আজকে আমি ইশান ভাইয়ার জন্য শাড়ি পড়বো। যদি একটু নজরে পড়ি তার।
–হে হে তুমি মায়ের কাছে যাও মা তোমাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিবে।
তীর ভ্রু-কুচকে ওদের কথা শুনছে কিন্তু আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। লিনা যেতেই তীর ইশাকে বলে।
–এটা কি হলো?
–কি আর হবে ভালোবাসার টানে সবকিছু হয়ে গেলো।
–ভালোবাসার টান মানে?
–আরে লিনা আপু ইশান ভাইয়াকে পছন্দ করে বুঝলি।
তীর চোখ বড় বড় করে বলে।
–কিহ?
–হুম! আপু বুঝবার বয়স থেকেই নাকি ভালোবাসে ভাইয়াকে কিন্তু ভাইয়া পাত্তা দেয় না। একবার লিনা আপু আবেগের ঠেলায় গোপনে ভাইয়াকে প্রপোজ করেছিলো জানিস আর তখন সেখানে আমি ছিলাম।
–প্রপোজ কি তর ভাই এক্সসেপ্ট করেছিলো?
–আরে ধুর ভাইয়া রিজেক্ট করে দিয়েছে আর সাথে এটাই বলেছিলো আবার যদি এসব আলতুফালতু কথা ভাইয়াকে এসে বলে তাহলে থাপ্পড় দিয়ে মুখ বাকিয়ে দিবে যাতে এমন কথা না বলতে পারে আর ভাইয়াকে। আর বেচারি লিনা আপু ভাইয়ার রিজেক্ট সহ্য না করতে পেরে রাগে দুঃখে আপু হুস করে লন্ডনে চলে যায়।
–তো তর ভাইয়া কেন রিজেক্ট করেছে এত সুন্দরী একজন মেয়েকে?
–জানিস না বুঝি ভাইয়া তো তর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
তীরের কাধে ধাক্কা দিয়ে কথাটা বলে ইশা।
তীর মুখ ফুলিয়ে বলে।
–কচু হাবুডুবু খাচ্ছে।
–আরে সত্যি বলছি বিশ্বাস কর আমার কথা।
–যত দিন না তর হিটলার ভাই মুখে ভালোবাসার কথা স্বীকার করবে না। তত দিন আমি বিশ্বাস করবো না তর এই কথাটা।
–আচ্ছা বাবা এত আভিমান করতে হবে না। ভাইয়া ঠিক একদিন স্বাকীর করবে যে তকে ভালোবাসে। এখন চল ইহান ভাইয়া আর কত অপেক্ষা করবে এই হলুদ ছোয়াঁর জন্য বেচারা রাগে বোম হয়ে আছে হয়তো আমাদের সকলের উপর।
_______
হলুদ ছোঁয়া শেষ হলো বরের গায়ে। এবার ইশানের সব কাজিনরা মিলে নাচানাচিতে মেতে আছে। আর ইশান দুর থেকে তার হলুদ পরীকে প্রান ভড়ে দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। এমন সময় শাড়ি পরিহিত লিনা ওর পাশে এসে লাজুক মুখশ্রী নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে।
–আমাকে কেমন লাগছে ইশান ভাইয়া?
ইশান আনমনে মৃদু স্বরে বলে।
–ভয়ংকর সুন্দর! যে সৌন্দর্যের বর্ণনা আমি কোনো দিন করতে পারবো না।
লিনা ভ্রু-কুচকে বলে।
–কি হলো বলো?
ইশানের এবার নিজের ধ্যান থেকে বেরিয়ে এসে লিনার দিকে তাকায়। কেমন বেহায়ার মতো ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ইশান রেগে বলে উঠে।
–কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন তুই? আমার কি রুপ বেরিয়েছে নাকি।
লিনা বিরবির করে।
–রুপেই তো বেরিয়েছে।
–কি বললি?
–না মানে আসলে আমাকে কেমন লাগছে দেখে একটু বলো না এই প্রথম শাড়ি পড়েছি তো।
–তর মায়ের কাছে যা তর মা তকে ভালো করে দেখে বলে দিবে তকে আসলে কেমন লাগছে। যত্তসব!
বলেই হনহন করে চলে যায়। লিনা নাক ফুলিয়ে বলে।
–ইগনোর করা হচ্ছে না আমাকে আগেও করেছো আর এখনও করছো ঠিক আছে! আমার নামও লিনা তালুকদার তোমাকে আমার প্রেমে পরিয়েই ছারবো। হু।
তীর নাচানাচি করে ক্লান্ত হয়ে ইশার হাত ধরে বলে।
–ইশু রে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না আমি বাড়ি গেলাম ভীষণ ক্লান্ত লাগছে।
–ঠিক আছে তুই এখন বাড়ি গিয়ে রেস্ট নে আর সন্ধ্যার সময় চলে আসবি।
–আচ্ছা আমি এখনন আসি।
______
তীর যাওয়ার কিছুক্ষনে পরেই ইশা নিজের ঘরে যাওয়ার
উদ্দেশ্য পা বাড়ায়। যেই স্টোর রুমের দরজাটা পার হতে নিবে ওমনি কেউ একজন ওর হাত চেপে ধরে স্টোর রুমের ভেতরে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। ইশাও ভয়ে চোখ মুখ খিচে যখনেই চিৎকার করতে নিচ্ছিলো তখনেই ওর মুখটা চেপে ধরে শক্তপোক্ত একটা পুরুষালী হাত আর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে।
–কি করতে যাচ্ছিলে? আমি আমি রিফাত।
ইশা পিটপিট চোখে তাকিয়ে দেখে আসলেই এটা রিফাত। পাঞ্জাবী পরিহিত লোকটাকে আজকে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে। ইশাকে ড্যাবড্যাব করর তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃদু হাসে রিফাত। পরক্ষনেই ইশা ভ্রু-কুচকে নেয় এভাবে এখানে টেনে আনার মানে কি? ইশা নাক ফুলিয়ে রিফাতের হাতটা নিজের মুখ থেকে সরিয়ে নিয়ে রাগি কন্ঠে বলে।
–এটা কি ধরনের ফাজলামো হুম আর একটু হলে তো আমি হার্ট অ্যাটাক করে মরে যেতাম।
রিফাত মুচঁকি হেসে ইশার মুখের উপর পড়ে থাকা বেবি চুল গুলা সরাতে সরাতে বলে।
–আমি থাকতে এত সহজে মরবে না। আর এতটুকু শকে কেউ হার্ট অ্যাটাক করে না বুঝলে ইশা রাণী।
লাস্ট কথাটা ইশার কাঁড়া নাকটা টেনে বলে।
–তো আমাকে এভাবে টেনে আনার মানে কি?
–এমনেই আনলাম।
–এমনেই মানে এমনেই কে….
ইশার কথা মাঝেই রিফাত ইশার গোলাপি রাঙা ঠোঁটের উপর নিজের আঙুল রেখে নেশালো কণ্ঠে বলে।
–শিসসসসসস! এতো কথা বলো কেন তুমি?
ইশা মিহি কন্ঠে বলে।
–কোথায় এত কথা বললাম।
রিফাত ইশার গালে নিজের হাত রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করে তাতে যেন ইশার ছোট দেহটা কেপে উঠে। রিফাত ইশার এমন কেঁপে উঠা দেখে ইশার কপালে নিজের অধর জোড়া লাগিয়ে দিয়ে বলে।
–খুব সুন্দর লাগছে আজকে তোমাকে একে বারে আমার স্বপ্নের প্রেয়সীর মতো। না না স্বপ্নের প্রেয়সীর থেকে বেশি সুন্দর লাগছে আমার ইশা রাণীটাকে।
ইশা নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে। লজ্জায় লাল হয়ে গেছে গাল দুটো। রিফাতের দিকে তাকাতে পারছে না লজ্জার কারনে। ইশার এমন লজ্জা রাঙা মুখ দেখে মৃদু হাসে আর মনে মনে ভাবে তার ইশা রাণীকে আর একটু লজ্জা দিতে ক্ষতি কি? রিফাত আফসোসের কন্ঠে বলে।
–ইচ্ছে তো করছে আজকেই তোমাকে আমার রাজ্যের রানী বানিয়ে নিয়ে চলে যাই। কিন্তু আফসোস এখন তো আমার রাণীটাকে নিয়ে যেতে পারবো না। তাকে নিয়ে যেতে হলে আমাকে অনেক যুদ্ধ করতে হবে আর সেই যুদ্ধে জয়ী হয়ে তাকে নিয়ে যেতে হবে আমার রাজ্যে।
রিফাতের কথাটা শুনা নাএই ইশার মুখে অন্ধকার নেমে এসে এটা ভেবে যদি ওদের সম্পর্কটা কেউ মেনে না নেয়। বিশেষ করে ইশান ইশানকে নিয়ে বেশি ভয়টা হচ্ছে ইশার। ইশার অন্ধকার মুখশ্রী দেখে রিফাত বলে।
–এখনেই এত চিন্তা করার দরকার নেই আমি আছি তো।
ইশার গালে উপর রিফাতের যে হাতটা রাখা আছে ইশা সেই হাতের কব্জি ধরে আহত গলায় বলে।
–ইশান ভাইয়া যদি আমাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয় তাহলে।
–বলছি তো আমি আছি। আমি সব কিছু ঠিক করে দিবো। তকে নিয়ে এসব ভাবতে হবে না।
রিফাতের শেষ কথাটা শুনে ইশা ফিক করে হেসে দেয়। রিফাত ইশার এমন করে হেসে উঠতে দেখে আবাক চোখে বলে।
–কি হলো?
–আমাকে আপনি সবার সামনে তুই করে বলেন আর সবার আড়ালে তুমি করে বলেন কেন?
–অভ্যাস করছি যাতে বিয়ের পর ওলওয়েজ তুমি করে ডাকতে পারি বুঝলে। আর সবার সামনে তুমি করে ডাকলে সন্দেহ করবে আমাদের উপরে। তাই আড়ালে তুমি ডেকে অভ্যাস করে নিচ্ছি।
–তাই! তাহলে তো আমারও উচিত আপনাকে তুমি করে ডাকা।
–একদম না। আমাকে তুমি করে ডাকবে না।
–কেন কেন?
–আরে বোকা মেয়ে আপনি ডাকটাতে একটু সম্মানীয় সম্মানীয় বাইপ কাজ করে। তাই তুমি যখন আমাকে আপনি করে ডাকো তখন নিজেকে অনেক সম্মানীয় ব্যক্তি মনে হয় বুঝলে। তাই তুমি ডাকা চলবে না।
ইশা মুচকি হেসে বলে।
–আচ্ছা ঠিক আছে আপনি করেই ডাকবো আপনাকে।
#চলবে______