#প্রনয়ের_দহন
#Nusrat_Jahan_Bristy
#সূচনা_পর্ব
–দোস্ত তুই কি সত্যি বুঝতে পারিস না ইশান ভাইয়া যে তর দিকে অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে থাকে।
ইশার কথাটা শুনা মাএই খাতার পাতায় লিখিত হাতটা থেমে যায় তীরর। গোল গোল চোখে ইশার দিকে তাকায় তীর। ইশা আবারও বলে উঠে
–সত্যি বলছি আমি দোস্ত বিশ্বাস কর ভাইয়ার হাবভাব আমার কাছে ইদানিং সুবিধার লাগে না।
–নিজের ভাইয়ের নামে বদনাম করতে লজ্জা করে না তর।
–আমি সত্যি বলছি ভাইয়া তর দিকে অদ্ভুদ ভাবে তাকিয়ে থাকে। কিছু একটা বলতে চায় তকে ভাইয়া কিন্তু বলতে পারে না কোনো এক জড়তার কারনে।
তীরর ভ্রুদ্বয়ের মাঝে ভাজ পড়ে
–কি বলতে চাইছিস স্পষ্ট করে বল।
ইশা গলা পরিস্কার করে দরজার বাইরের দিকটা চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় কেউ আছে কি না। ভালো করে দেখে এবার তীরর দিকে হালকা ঝুকে বলে
–ভাইয়া মনে হয় তকে পছন্দ করে।
তীর চোখ বড় বড় করে চিৎকার দিয়ে উঠে
–কিহ???
ইশা দু কান চেপে ধরে
–আস্তে আস্তে এভাবে চিৎকার করিস কেন? আমার কান ফাটিয়ে ফেলবি তো।
–তর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ইশা তর ভাই আমাকে পছন্দ করে। অসম্ভব! তর দাজ্জাল ভাই তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না,, মনে হয় আমি যেন তার দু চোখের বালি। দেখিস কফি নিয়ে এসেই বলবে “অংক করা রেখে তরা দুইডা ফুসুরফসুর খুজুরখুজুর করছিস কেন? এর জন্যই তো পরীক্ষা লাড্ডু পাস”।
ঠিক তাই হলো তীর কথাটা বলার সাথে সাথে পিছন থেকে গম্ভীর কন্ঠে ইশান বলে উঠে
–তরা অংক করা রেখে ফুসুরফসুর করছিস কেন?
তীর দাতেদাত চেপে ফিসফিসিয়ে বলে
–দেখিস বলে ছিলাম না তর মহান ভাই এই কথাটা এসেই বলবে ঠিক তাই হলো। তর ভাইকে আমি হারেহারে চিনি।
ইশা পিছন দিকে ফিরে ইশানের দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে বলে
–কই ভাইয়া আমরা তো অংক ওই করছিলাম।
ইশান কফির মগটা এনে টেবিলের এক সাইডে রেখে চেয়ারে বসে বলে
–আমাকে কি তর কানা মনে হয়।
–না ভাইয়া।
–দেখি কয়টা অংক করেছিস?
ইশা শুকনো একটা ঢোক গিলে বলে
–ভাইয়া এই অংকটার অর্ধেকটা শেষ করেই তোমাকে দিছি।
–দরকার নেই দে।
ইশান এক প্রকার জোর করেই ইশার কছ থেকে খাতাটা নিয়ে দেখতে থাকে। কিন্তু ইশা অংক করেছে মাএ একটা আর একটা অংকের অর্ধেকটা করেছে তাও আবার সূএ উল্টাপাল্টা করে। ইশান রাগি চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে বলে
–কি করেছিস এতক্ষন? আমি চারটা অংক দিয়ে গিয়েছিলাম করার জন্য প্রায় পনেরো মিনিট আগে আর তুই মাএ একটা অংক করেছিস আরেকটা যাও করেছিস তাও সূএের অবস্থা খারাপ,, নিজেই অংকের সূএ অবিষ্কার করে দিলে তুই। ইশা এবার যদি টেস্ট পরীক্ষায় প্রি-টেস্টের মতো হায়ার ম্যাথে ফেইল করিস তাহলে তর কি অবস্থা করবো তা তর কল্পনার বাহিরে। কর ঠিক করে সব গুলা অংক।
ইশানের ধমকে ইশার পরান পাখি যায় যায় অবস্থা। অন্য দিকে তীর চোখ মুখ বন্ধ করে রেখেছে ভয়ে। ওরও তো সেইম অবস্থা বলতে গেলে ইশার থেকে খারাপ অবস্থা! হায়ার ম্যাথে ও একে বারে ডাবোও। কোনে মতে টেনেটুনে পাস করে হায়ার ম্যাথে আর অন্যান্য সাবজেক্ট তো আছেই।
ইশান তীরর দিকে না তাকিয়ে বলে
–দেখি তর খাতাটা।
তীর ইশানের দিকে খাতা এগিয়ে দেয়। ইশান তীরর খাতাটা নিতে নিতে বলে
–তুই তো হলি আরেক গাদী।
ইশানের কথা শুনে তীরর খুব খারাপ লাগল। ও না হয় পড়ালেখা একটু খারাপ তাই বলে এভাবে বলবে তাকে। ইশান তীরর খাতাটা চেক করতে করতে বলে
–এসব কি অংক করেছিস হুম? আধ ঘন্টা যাবত অংকগুলা বুঝিয়েছি তকে আমি আর তার ফলাফল কি এসব। তুই এতটা গাদী কি করে হ…..
ইশান চোখ তুলে তীরর দিকে তাকাতেই কথাটা আটকে যায় ওর। বুকটা ধক করে উঠলো কেমন জানি অদ্ভুদ শিহরন বয়ে যাচ্ছে ইশানের মনে। সেই শিহরনে নামটা কি দিবে ইশান ভেবে পাচ্ছে না। হার্টবিট এত ফাস্ট চলছে কেন? ইশান তীরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ভয়ে, লজ্জায় কেমন মিইয়ে আছে মেয়েটা। লম্বা রেশমি ভেজা চুল গুলার মাঝে যে চুল গুলা শুকিয়ে গেছে সেই চুল গুলা বাতাসে খেলা করছে। ইচ্ছে করছে হাত বাড়িয়ে এলোমেলো চুল গুলা কানে গুজে দিতে। তীর ভয়ে বার বার নিচের ঠোট কামড়ে ধরছে। কতটা আবেদনময়ী লাগছে এই মেয়েকে এখন ধরনা আছে ওর। যদি ধরনা থাকত তাহলে এমনটা কখনেই করতো না। ইশান সাথে সাথে নিজের বেহায়া দৃষ্টি সরিয়ে অন্য দিকে ঘুরে তাকিয়ে ঢোক গিলে। গলাটা শুকিয়ে গেছে এক গ্লাস পানি দরকার এই মুর্হূতে ওর কিন্তু পানি নেই তাই কফির মগটা হাত নিয়ে কফি দিয়েই আপতত গলা ভিজাগ।
মাঝ পথে ইশানের কথা থেমে যাওয়াতে ইশা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় কপালে কেমন বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে, দু চোখের সাইডটা লাল হয়ে আছে। অস্থির কন্ঠে ইশা বলে
–কি হয়েছে ভাইয়া এমন অস্থির লাগছে কেন তোমায়?
ইশান চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে গম্ভীর কন্ঠে বলে
–কিছু হয় নি আমার! অংকগুলা কর তাড়াতাড়ি।
ইশা আর কোনো কথা বলে না এ বিষয়ে তার ভাই যে কিছু একটা লুকাচ্ছে ওর থেকে তা বুঝতে আর ওর বাকি নেই। ইশা এক বার আড় চোখে তীরর দিকে তাকায় খোলা চুলে মেয়েটাকে অপূর্ব লাগছে পরক্ষনেই ভ্রু কুচকে নেয় ইশা মনে মনে বলে উঠে
–এই মেয়ে চুল ছাড়লো কখন? আগে তো খোপা করা ছিলো।
ইশার ভাবনার মাঝেই ইশানের বিরক্তিকর কন্ঠ ভেসে আসে ওর কানে।
–তুই এভাবে খোলা চুলে বসে আছিস কেন? চুল বাধ চটপট তর ওই খড়ের মতো চুল যদি আমার রুমে পড়ে আমার রুম যদি নোংরা হয় তাহলে তর খবর আছে।
তীর ইশানের কথাটা শুনা মাএই বড় বড় চোখ করে তাকায় ইশানের দিকে। কি বললো লোকটা ওর চুল খড়ের মতো এমন রেশমি সিল্কি চুল গুলা ইশানের কাছে খড়ের মতো লাগল। সবাই তীরর চুল দেখে কত প্রশংসা করে আর এই লোক বলে কি না খড়ের মতো চুল। কিন্তু তীর তো আর ইচ্ছে করে চুল ছেড়ে দেয় নি চুল ভেজা ছিলো তাই টিলা করে খোপা করে রেখেছিলো কিন্তু খোপা যে খোলে যাবে কে জানত। তীর রাগে দুঃখে ওর কোমড় সমান লম্বা চুলগুলা হাত খোপা করে আবার বেধে নেয়। ইশান খাতায় ওপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে
বলে তর চুল ভেজা কেন এই ভর সন্ধ্যা দুপুরে?
তীর ইশানের দিকে পিটপিট চোখে তাকায়। লোকটা এটাও বুঝে ফেলেছে যে ওর চুল ভেজা। তীর কোনো উত্তর দিছে না দেখে ইশান ওর দিকে তাকিয়ে বলে
–কি এমন বোবার মতো বসে আছিস কেন? প্রশ্ন করেছি তো আমি একটা।
তীর ঢোক গিলে ইশানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। ইশানের এই চোখের দিকে তীর বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারে না। এই চোখের দিকে তাকালেই মনে এই চোখ কিছু বলতে যায় ওকে। কিন্তু কি বলতে চায় সেটা বুঝতে পারে না! বুঝতে হলে যে এই চোখের গভীরে যেতে হবে আর গভীরে যেতে হলে যে চোখের দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকতে হবে যেটা আপতত তীরর দ্বারা সম্ভব না। তাই বইয়ের পাতার উপর চেয়ে থেকে বলে
–আসলে গোসল করতে লেইট হয়ে গেছে আজকে?
ইশানের একটু রাগ হয়। মেয়েটা এত অবাধ্য কেন এটা ভেবে। এই অসময়ে গোসল করার জন্য যদি জ্বর আসে তাহলে। একবার তীরের প্রচন্ড জ্বর হয়েছি। সেই জ্বর সবাইকে একপ্রকার কাদিয়ে ছেড়েছিলো এখন যদি এটার আবার পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে ভাবতেই ইশানের হৃদয়টা মুছরে উঠলো। ইশান হাত দুটো টেবিলের উপর রেখে আঙ্গুলের ফাকে কলম ঘুরাতে ঘুরাতে বলে
–সারাদিন কি করেছিলি যে গোসল করার সময় পাস নি।
তীরর খুব ইচ্ছে করছে সামনে বসা লোকটাকে এই কথাটা বলতে যে আমি যখনেই গোসল করি তাতে তর কি রে শয়তান ব্যাটা। আমার মন চাইলে আমি রাত বারটায় গোসল করবো তাতে তর কোনো প্রবলেম। কিন্তু তীর এই কথাটা বলতে পারবে না কারন এই কথাটা বললে ওর গর্দানটা আর গর্দানের জায়গাতে থাকবে না। তাই নিজের ইচ্ছটাকে ধামাচাপা দিয়ে মুখে ফুটে বলে
–আসলে কলেজ থেকে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম পরে ঘুম থেকে উঠে দেখি চারটা বাজে। তাই খেয়ে দেয়ে গোসল করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
ইশান কি বলবে এই মেয়েকে সত্যি বুঝতে পারছে না। কিভাবে এই অবুঝ মেয়ের মায়ায় পড়লো ইশান তা ভাবলে আনমনেই হেসে উঠে। মাঝে মাঝে তো নিজেকে পাগল বলেই সম্বোদন করে শেষ কিনা একটা পিচ্চি, নাদান, অবুঝ মেয়ের প্রেমে পড়লো।
চলবে।