#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৭(স্পেশাল)
লেখিকা-#খেয়া
সময় চলেছে তার আপন গতিতে।দিনও কারো জন্য থেমে থাকেনা।সেও তার আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে।
আমার পায়ের ক্ষত অনেকটাই সেরে গিয়েছে।সেদিন অতিরিক্ত ব্লিডিং হওয়ার কারনেই এতটা সময় লাগল।
সেদিন আমি অযথাই এত ভয় পেয়েছিলাম।আমার মাথায় সেদিন এটা আসেইনি যে ওটা নিহান না হয়ে রুহানও হতে পারে।রুহান হলো নিহানের ছোট ভাই।রুহান ছোটো হলেও ওর চেহারা একদম নিহানের মতো।খুব কাছে থেকে কেউ না দেখলে ওদের পার্থক্য করতে পারত না।
ওনাকি নিহানের ঘরে আমার কিছু জিনিস পেয়েছিল তাই দিতে এসেছিল।তবে সেগুলো এতদিন পরে দিতে আসার কারণটা ধরতে পারিনি।
মাঝে কেটেছে তিনদিন।একদিন আমার প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।ফোনটাও বন্ধ।মামির থেকে জেনেছি সে নাকি দেশের বাইরে গেছে।
মামির কথা শুনে একটু খারাপ লেগেছিল, সে আমায় বলে তো যেতে পারতো।
—————
সামনেই ফাইনাল পরীক্ষা তাই মনপ্রাণ দিয়ে পড়ছি।আপাতত দুনিয়ার সবকিছু মাথা থেকে বের করে দিছি।
পরীক্ষা শেষ হতে প্রায় দুইসপ্তাহ লেগে গেলো।একদিন প্রহরের সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি।উনিও কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেননি।
পরীক্ষা শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে একটা লম্বা ঘুম দিলাম।একদিন টেনশনে একদম ঘুম হয়নি।
এখন একটা লম্বা ঘুম দরকার।
ঘুমের মাঝেও আজ বারবার প্রহরকে দেখতে পারছি।এই লোকটা এখন স্বপ্নেও এসে জ্বালায় আমায়।অসহ্য লোক একটা।
ঘুম থেকে উঠে কিচেনে যাচ্ছিলাম কফি বানাতে।ড্রয়িংরুমে এসে দোখি এখানেও প্রহর বসে আছে।এখন তো জেগে জেগে ও উনাকে দেখতে পাচ্ছি।
—-কী ম্যাডাম, এত কী ভাবেন।
—-আপনি কি এখানে সত্যি আছেন।
—-বাহ,মাথার সাথে কী এখন চোখটাও খারাপ হয়ে গেছে।
” উনার এই রসকসহীন কথা শুনে বুঝলাম যে উনি সত্যি আছেন।তবে উনি এখানে কেন?”
—- আপনি কখন এসেছেন?
—- তিনঘন্টা আগে।
—- তো এতক্ষন কী করলেন আর আমায় ডাকেননি কেন?
—- তোমায় ডাকতে ডাকতে গলা ব্যাথা হয়ে গেছে আমার অথচ তোমার ঘুম ভাঙার নামই নেই।
শেষে বিরক্ত হয়ে নিচে নেমে এলাম।কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে খেলাম।তারপর টিভি দেখলাম।তারপর ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম খেলাম। আর এখন অবশেষে তোমার ঘুম ভাঙল।
—- কীহহ! আপনি আইসক্রিম কেন খেয়েছেন হ্যা,ওগুলো তো ভাইয়া আমার জন্য এনেছিল।
—- এই মেয়ে এত ছোটোলোকি করো কেন তুমি।তোমাকে আমি পুরো আইসক্রিমের দোকান কিনে দিবো।
—-আপনি কেন এসেছেন? আর একদিন কই ছিলেন? আমার সাথে যোগাযোগ কেন করেননি?
—- তোমার এক্সাম কেমন হয়েছে?
—- খুব ভালো।
—- আমি তোমার কাছাকাছি থাকলে তুমি কখনো এতটা ভালোমতো পরীক্ষা দিতে পারতে না।আর আমি এখানে থাকলে তোমার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারতাম না।তাই চলে গিয়েছিলাম।
—ওহ। তাহলে আজ কেন এলেন?
—- তোমাকে দেখার তীব্র আকাঙ্খাটা আর দমিয়ে রাখতে পারিনি।
যাইহোক তুমি রেডি হয়ে নাও।
—- কোথায় যাবো?
—- সেটা সারপ্রাইজ।
—- আমি যাবনা।যদি আমায় নিয়ে গিয়ে আপনি আমায় মেরে ফেলে।
—- আমি পাপ করিনা।জানোতো আত্মহত্যা মহাপাপ।আর তোমাকে মেরে ফেলা মানে নিজেকে নিজে মেরে ফেলা।আর এই কাজ আমি কখনো করতে পারব না।আর তুমি স্টুপিটের মতো সারাদিন এসব উল্টোপাল্টা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘোরো কেন?
—- আচ্ছা বাবা,আপনি দাঁড়ান আমি তৈরি হয়ে আসছি।
_________
অন্যদিকে ”
—- নিবির ভাইয়া, আমার কথাটা একটু শোনেন না।
—- রাহা প্লিজ,তোমাকে না নিষেধ করেছি আমার পিছনে আসবেনা।তোমার কী সেলফ রেসপেক্ট বলতে কিছু নেই।তোমার এই ধরনের কাজে আমি প্রচন্ড বিরক্ত, রাহা।দয়াকরে আর আমার পেছনে এসোনা।আমাকে একটু শান্তিতে বাঁচতো দাও, প্লিজ।
” কথাগুলো বলেই চলে যায় নিবির।নিবিরের এহেন কথায় খুব কষ্ট পেলো রাহা।ও তো ওর ভালোবাসা গোপনই রাখতে চেয়েছিল।শুধু মাত্র আফরার কথায় ও নিবিরকে ওর মনের কথাটা বলেছিল, বাকিটা তো জানেনই।”
রাহাও বাড়ি চলে যায়।ও ঠিক করেছে আর কখনো ও নিবিরের সামনে যাবেনা।
_________
—-আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
—- ভয় পাচ্ছো নাকি,আফরা।
—- মোটেও না। আমি তো এমনি বললাম রাত হয়ে যাচ্ছে তাই। আর ভাইয়াও তো টেনশন,,,
—- করবে না।তোমার ভাইয়াকে বলেই এসেছি।
—- ওহ।
প্রহর আমাকে একটা ফাঁকা মাঠে নিয়ে এলো। চারিদিকে অন্ধকার।আমি একটু সামনে এগিয়ে গেলাম।একটু পরে পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর নেই।
খানিকক্ষণ পরেই আকাশে অনেক গুলো ফানুস দেখতে পেলাম।চারিদিকে আলো ছড়িয়ে গেলো।অনেকগুলো আতসবাজি একসাথে ফুটে উঠল।আমার চারপাশে অনেক বেলুন উড়ে উঠল।কিন্তু এগুলো কীভাবে হচ্ছে।আর কে করছে?
পিছনে তাকিয়ে দেখি প্রহর আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে আছে।উনি আমার হাতটা ধরে বললেন
—- আর পাঁচজনের মতো কথার মায়ায় জড়িয়ে তোমাকে প্রপোজ করার সাধ্য আমার নেই।তবু শুধু তোমাকে নিজের বলে দাবি করার অধিকারটা চাইব তোমার থেকে।মানুষের জন্য নিঃশ্বাস যতটা জরুরী আমার কাছে তুমিও ঠিক তেমনই অপরিহার্য।তোমাকে ছাড়া নিজেরে অস্তিত্ব কল্পনা করতে গেলেও আমি ভয় পায়।
জানি না আমি মানুষটা কেমন তবুও তোমাকে ভালোরাখতে বিন্দুমাত্র কার্পন্য করব না।আমি তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ করব,আমার ভালোবাসাটাকে একটু অনুভব করো, আফরা।ভালোবাসা বোঝাবুঝির ব্যাপার না।এটা অনুভবের ব্যাপার।
“উনার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে রইলাম।খানিক থেমে উনি আবারও বলতে লাগলেন”
—- আমি জানি তোমার বয়সটা কম।তবুও তোমাকে ছাড়া আর একটা দিনও কাটানো আমার পক্ষে সম্ভবনা।তোমার একটু ইগনোরেন্স যে আমাকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে, আফরা।তোমাকে একদিন সামনাসামনি না দেখলে যে দম বন্ধ হয়ে আসে।তোমার মাঝে আমি আমার নিজের অস্তিত্বটা অনুভব করতে চাই,আফরা।আমাকে বুঝি আজ তুমি ফিরিয়ে দিবে।
তোমার কাছে আমি কী সেটা আমি জানিনা। কিন্তু আমার কাছে তুমি এমনকিছু যা আমি বলে বোঝাতে পারব না।জানি প্রথমপ্রেম স্পেশাল হয়।প্রথম প্রেম ভুলেও কিন্তু ভালো থাকা যায়।তুমিও তো আমার প্রথম প্রেম।তোমার প্রেমটা পূর্ণতা পায়নি বলে কী তুমি আমার প্রেমটাকেও পূর্ণতা দিবেনা,আফরা।
” উনার প্রতিটি কথা যেন আমার শিঁরা- উপসিরায় প্রবেশ করছে।শরীর- মনে এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভূত হচ্ছে।সত্যি কী প্রথম প্রেমকে এত সহজে ভুলে যাওয়া যায়।
আমার প্রথম প্রেম পূর্ণতা পায়নি।তাই বলে কী প্রহরের প্রথম প্রেমকে তার থেকে কেড়ে নেওয়ার কোনো অধিকার আছে আমার?”
—- তোমার মৌনতায় কী তোমার সম্মতির লক্ষণ?
—- হয়ত বা।আপনার ভালোবাসটাকে আমিও অনুভব করতে চাই, প্রহর।প্রথম প্রেম নয়, সত্যিকার ভালোবাসা চায় আমার।
” আমার উত্তরে প্রহর যে কী পরিমান খুশি হয়েছে তা বলে বোঝানোর মতো না।কোনো মানুষ বুঝি কাউকে সত্যি এতটা ভালোবাসতে পারে।”
প্রহর আমার হাতে একটা আংটি পড়িয়ে দিলেন।আর বললেন
—- তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখার তীব্র আকাঙ্খা জাগে আমার মনে।কিন্তু এখননা।খুব শীঘ্রই তা হবে।সেদিন তুমি সম্পূর্ণরূপে আমার হবে।একদম হালাল ভাবে।
” এই মানুষটাকে যে এখন আমার বড্ড প্রয়োজন।বড্ড বেশি প্রয়োজন।সবাই তো আমায় ছেড়ে চলে যায়।কিন্তু এই মানুষটা নাহয় একান্তই আমার থাকল।তাতে ক্ষতি কী?
—-চলো তোমাকে বাসায় রেখে আসি।অনেক রাত হয়ে গেছে।
—- হুম চলেন।
—————-
বাসায় এসে দেখি ন’টা বাজে।কিন্তু ভাইয়া এখনো আসেনি।
অনেকবার কল করলাম কিন্তু ধরল না।হয়ত বিজি আছে।
মাঝে কেটে গেছে চারদিন।এই চারদিন আমার কাছে খুব দীর্ঘ একটা সময় লেগেছে।ইদানিং সবকিছুই খুব ভালোলাগে।রংহীন জিনিসগুলো রঙিন লাগে।মনে ভালোবাসার রং লেগেছে যে।
বসে বসে কার্টুন দেখছিলাম তখনই নিবির ভাইয়ার ফোন এলো।দেরি না করে ফোনটা ধরলাম।
—- কেমন আছিস,আফরা।
—- ভালোই আছি।
—- ওহহ।তোর বান্ধবী রাহার কী খবর।
—- আপনি আবার ওর খবর কেন নিচ্ছেনন।
—- না মানে ওর ফোনটা বন্ধ তো, তাই।
—- আপনি আবার ওকে ফোনও করেন। কী কেস বলেনতো।
—- তুই তো সবই জানিস, আফরা।চারদিন ধরে ফোন বন্ধ করে রেখেছে।
—- টেনশনে ছিলেন বুঝি।যাইহোক, আমি ওর খবর নিয়ে তোমাকে জানাচ্ছি।
—- আচ্ছা।
নিবির ভাইয়া ফোন রাখতেই দরজার বেল বেজে উঠল।আমি দরজা খুলে যা দেখলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
দেখলাম ভাইয়া,,,,
( চলবে)