প্রথম প্রেম ২ পর্ব-০৫

0
1307

#প্রথম_প্রেম_2
পর্ব-০৫
লেখিকা-#খেয়া

ট্রাকটা আমার কাছে আসতেই কেউ আমায় টেনে সরিয়ে নিলো।
আমিও টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে গেলাম।
মাথা তুলে সামনের দিকে তাকানো মাত্রই একটা থাপ্পর পড়ল আমার গালে।

অশ্রুশিক্ত নয়নে তাকাতেই সামনে প্রহরকে দেখলাম।আমি কিছু বার আগেই সে বলা শুরু করল

—- তোমার কী কোনো সেন্স নেই।এভাবে কেউ রাস্তায় হাঁটে। মন কোথায় থাকে তোমার।

—- আমি,,,,,

—- জাস্ট সাটআপ।আর কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি।চলো আমার সাথে চলো, হসপিটালে যেতে হবে।

—- হহহ,,,হসপিটালে কেন যাবো।

—- সাধে কী তোমাকে ইডিয়েট বলি।হাতটা যে কতটা কেটে গেছে দেখেছো।

” আসলেই হাতটা অনেকটা কেটে গেছে।খুব যন্ত্রনাও হচ্ছিল।আমার প্রতি উনার এত কেয়ার ভালোলাগলেও আজ উনার ওপর খুব অভিমান হলো।এমন অবস্থায় উনি আমায় থাপ্পর মারতে পারল।”

————–

প্রহর আমাকে একটা হসপিটালে নিয়ে গেল।

—- এত হাসপাতাল থাকতে এখানেই নিয়ে আসা লাগল আপনার।

—- এখানে কী প্রবলেম?

—-ভাইয়া আমায় এ অবস্থায় দেখলে খুব রেগে যাবে।

—- তাহলে তো ঠিকই আছে।তোমার ভাইয়ারও জানা উচিত যে তুমি রাস্তায় কেমনে হাঁটো।

—- ধুর।

ভেতরে গিয়ে একটা নার্স আমার ড্রেসিং করতে নিলেই প্রহর বললেন

—- গিয়ে ভালো কোনো ডাক্তারকে ডেকে আনুন।

—- এইটুকু তো উনি করে নিতে পারবেন।

—- স্টপ,আফরা আমি তোমার ব্যাপারে কোনো রিস্ক নিতে চায় না।

“নার্স গিয়ে একটা ডাক্তারকে নিয়ে এলো।ওটা অনন্যা আপু ছিল।”
অনন্যা আপু খুব সুন্দর করে আমার ড্রেসিং করে দিলো।এখানে কম-বেশি সবাই আমাকে চিনে।
আমিও অনন্যা আপুকে বলে দিয়েছি যেন ভাইয়াকে কিছু না বলে।

কিন্তু ঐ নার্সটা গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে এসেছে।আমার তো নার্সটাকে কাচা চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে।

—- কী হয়েছে, বনু।

—-কিছু হয়নি ভাইয়া, হাটতে গিয়ে পা স্লিপ করে পড়ে গেছিলাম।

আমার কথা শুনে প্রহর আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর বলল

—- একদম মিথ্যে বলছে, ভাইয়া।আজ রাস্তায় এক্সিডেন্ট করতে মরতে বসেছিল।আমি না থাকলে এতক্ষণ স্বর্গে চলে যেতো।

—- এসব কী, আফরা। তুই এতটা বেখেয়ালি হয়ে রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করিস।

—- ভাইয়া আমি আসলে,,,

—- তুই রাস্তায় কী করছিলি?

—- আরে ভাইয়া আপনার বোনের মনে হয় বাসায় থাকতে ভালোলাগেনা।তাই এইভাবে রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়।বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেন।

প্রহরের কথায় ভাইয়া সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাট দিকে তাকালো।এতক্ষন অনন্যা আপু শুধু নিরব দর্শক থাকলেও এবার বলল

—- একদম না।ও শ্বশুরবাড়ি চলে গেলে আমি গিয়ে কার সাথে থাকবো।

” অনন্যা আপুর কথায় ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু একদম মুখে আঙ্গুল দিয়ে দাড়িয়ে গেলো।”
ভাইয়া প্রহরকে বলল

—- প্রহর, আমার না এখন একটা ওটি আছে।তুমি কী একটু আফরাকে বাসায় পৌছে দিবে।

—- অবশ্যই।

————–

প্রহর আমাকে বাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেলো।

বাসায় এসেই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।এত টেনশন আর নিতে পারছিনা।

বিকেলে ঘুম ভাঙল রাহার ডাকে।ওকে এখানে দেখে বেশ অবাক হলাম।

—- তুই এখানে।

—- কেন আসতে পারি না?

—- সেটা কখন বললাম।

—- তোকে খুব ভালো একটা খবর দিতে এলাম।

—- কী খবর?

—- তুই জানিস কথা আপুর হাজবেন্ডকে আজ পুলিশ এরেস্ট করেছে। তাও মাদকের মামলায়।

—- তো! দেখবি পুলিশকে টাকা খায়িয়ে যে কোনো সময় বেড়িয়ে আসবে।

—- তো কী?জানিস আজ কথা আপুর মুখটা দেখার মতো ছিল।

—- তুই আবার উনাকে দেখতে গিয়েছিলি।

—- হুম।তুই তো জানিস আপুর শ্বশুরবাড়ি আমাদের বাড়ির কাছে।

—- হুম।

—- তুই নাকি আজ মরতে মরতে বেঁচে গেছিস।

—- তোকে কে বললো এসব।

—- কেন প্রহর ভাইয়া। আর প্রহর ভাইয়া এলাকার সবাইকে ও বলেছে যেন তোকে একটু দেখে রাখে।আর তোকে দেখলেই যেন সাবধানে চলাফেরা করতে বলে।

—- কীহহহহ।

—- হুম।কত ভালোবাসে তোকে দেখেছিস।

—- এই লোকটা আমায় নির্ঘাত পাগল বানিয়ে ফেলবে।

—————

কেটে গেছে সপ্তাহখানেক।এর মাঝে প্রহরের সাথে বেশ ভালো সম্পর্ক হয়েছে আমার।নিবির ভাইয়াও এখন নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে।
কথা আপুর হাজবেন্টের দশ বছরের জেল হয়েছে।কথা আপু আবার নিবির ভাইয়ার কাছে ব্যাক করতে চাইলেও নিবির ভাইয়া না করে দিয়েছে।

ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে দেখলাম বাইরে গাড়ি নিয়ে নিবির ভাইয়া দাড়িয়ে আছে।আমাকে দেখেই বললো

—- আমি ড্রপ করে দিয়ে আসি, আফরা।

আমি বেশি কিছু না বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম।

—- সরি, আফরা।এতদিন তোর সাথে এমন বিভেব করার জন্য।

—- ঠিক আছে, ভাইয়া।একটা কথা বলব আপনাকে?

—-বল।

—- আপনার কাছে পাত্তা পায়নি বলেই তো আমি প্রহরকে সুযোগ দিয়েছি।তেমনি আপনারও উচিৎ নিজের জন্য পারফেক্ট কাউকে খুঁজে নেওয়া।
আমার কথাটা একটু ভেবে দেখবেন, ভাইয়া।

—- হুম।

—————-

নিবির ভাইয়া বাসায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।বাড়িত গেলোনা।

বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে প্রহরকে ফোন দিলাম।আজ সকাল থেকে উনি একবারও ফোন দেয়নি।তাই আমি দিলাম।আজকাল উনার সাথে কথা না বললে ভালোই লাগেনা।

—- কী ব্যাপার! আজ তুমি নিজে থেকে ফোন করলে।

—- হুম।আপনি দিলেন না তাই আমি দিলাম।

—- তুমি কতদিন গোসল করোনা বলোতো,আফরা।

—- এসব কী প্রশ্ন?

—- না তোমার শরীর থেকে অনেক গন্ধ আসছে।

—- কী! আপনি মোবাইলে গন্ধ পাচ্ছেন।

—- হুম।

—- তা কেমন গন্ধ পাচ্ছেন।

—- প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি।

—- আপনি তো প্রচন্ড অসভ্য লোক।

—-সেটা তো তুমি জানোই।

—- ধুরর।আপনাকে আর জীবনেও ফোন দিবোনা।

প্রহরকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোনটা কেটে দিলাম।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।

এখন আবার কে এলো?

নিচে গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম খালামণি আর আংকেল।ওরা আবার এখন কেন এলো।

আমি উনাদেরকে ভিতরে আসতে বললাম। কিছুক্ষণ পর মামা – মামিও চলে এলো।তারপর ভাইয়া আর নিবির ভাইয়াও চলে এলো।

মামি বলল,” আংকেল নাকি সবাইকে এখানে ডেকেছে,আংকেলের নাকি আমার ব্যাপারে সবার সাথে কোনো কথা আছে।”

উনি আবার আমার ব্যাপারে কী বলবে?

(চলবে)

( রিচেক করিনি)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে