#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০৩
লেখিকা- #খেয়া
সামনে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার হাতেও রক্ত লেগে আছে।
আমাকে দেখে ভাইয়া বলল
—- ভয় পাসনা, বনু।এগুলো এমনি রক্ত।
—- মানে?
—- ব্লাডগুলো একটা টেস্টের জন্য হসপিটালে এসেছিল।আমি একটা দরকারে বাসায় নিয়ে আসছিলাম।কিন্তু কীভাবে যেন পড়ে গেল।
—- টেস্টর জন্য এত ব্লাড?
—- হুম।
— আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
—- তুই যা। আমি এগুলো পরিষ্কার করে দিচ্ছি।
—- আচ্ছা।
—————–
ভার্সিটি যাওয়ার সময় রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম।একটাও রিক্সা পাচ্ছি না।তখন ই একটা গাড়ি এসে থামল আমার সামনে।গাড়িটা প্রহরের ছিল।
—- আমি নামিয়ে দিয়ে আসি।
—- আপনি?
—- হুম।আসতে পারো, খেয়ে ফেলবোনা তোমায়।
—- আচ্ছা।
—- আচ্ছা তুমি কী সত্যি আফরা না তার জমজ বোন।
—- মানে?
—- আমি তো জানতাম আফরা অনেক বাঁচাল আর চঞ্চল ছিল।
—- আফরা চঞ্চল ছিল।কিন্তু এখন নেই।
—- ভালো।আমার কিন্তু শান্ত বাচ্চা পছন্দ।তুমি শান্ত হলেই তো আমার বাচ্চা শান্ত হবে।
—- আমার সাথে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক কী?
—- মা যেমন বাচ্চা তো তেমনই হবে।
—- আপনার কী এসব কথা বলতে বাধে না।
—- অবিয়েসলি না।বাধঁলে তো আর বোলতাম না।
যাইহোক আপনার ভার্সিটি এসে গেছে।
—- হুম।বাই।
—————-
ভার্সিটিতে এসেই দেখি সবার মুখে একই কথা ” কথা আপুর বিয়ে”।ইতিমধ্যে পুরো ভার্সিটি জানাজানি হয়ে গেছে।
রাহা এসে বলল
—- আমি অনেক খুশি হয়েছি জানিস।বেশ হয়েছে, এবার নিবির ভাইয়া বুঝবে মজা।
—- এভাবে বলিস না, রাহা।
—- রাখ তো তোর আবেগ।এখন বুঝবে ভালোবাসা না পাওয়ার কী কষ্ট।
—- আচ্ছা রাখ এসব। চল ক্লাসে যায়।
—- চল।
ভার্সিটি শেষে আমি রাহাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম।আজ নাকি ভাইয়া আমাদের ট্রিট দিবে।খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে আছি।দেখলাম পাশের একটা টেবিলে অনন্যা আপু ও আরো অনেকে বসে আছে।আমাদেরকে ভাইয়ার সাথে ওরা বারবার কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকাচ্ছিল।
তখন ভাইয়ার একটা ফোন আসায় ভাইয়া বাইরে চলে গেলো।
তখনই অনন্যা আপুর কিছু ফ্রেন্ড আমাদের কাছে এসে বলল
—- এইযে পিচ্চি বাবুরা একদম আবির ভাইয়ার থেকে দূরে থাকবে।এইযে এই মেয়েটাকে দেখছো না ও অনন্যা।আবিরের ওয়াইফ।
কথাটা শোনা মাত্র আমার আর রাহার রিয়েকশনটা যাদুঘরে তুলে রাখার মতো।
“অনন্যা আপু যেহেতু আমায় আগে থেকে চিনতো তাই ও বারবার সবাইকে নিষেধ করছে এসব বলতে কিন্তু ওরা তো বলেই যাচ্ছে।”
তখন ভাইয়াও এসে গেছে।আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম
—- দ্যাট’স নট ফেয়ার, ভাইয়া। তুই বিয়ে করে ফেললি একবার বললিও না।কেন রে তোর বউকে কী আমি খেয়ে ফেলতাম।
—- আমার বউ! তোর কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে,আফরা।
—- আরে না,দেখো ওরাই তো বলল যে এই অনন্যা আপু তোমার বউ।
রাহার কথায় ভাইয়া অনন্যা আপুর দিকে তাকাতেই তার সব ফ্রেন্ডরা হাওয়া হয়ে গেলো।
অনন্যা আপু তো রীতিমতো ঘামতে শুরু করছে।অনেক সাহস সঞ্চার করে ভাইয়াকে প্রশ্ন করল
—- আফরা আপনার কেমন বোন লাগে?
—- নিজের বোন লাগে, তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে?
—- না,না।আমার তো ভালোই লেগেছে। বিয়ের পর তো আপনার বাড়িতে একা থাকা লাগবেনা।
আপুর কথার বিপরীতে ভাইয়া আপুর দিকে তাকাতেই আপু দৌড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে গেলো।
—————
বিকেলে বাসায় বাসে বোর হচ্ছিলাম তাই রাহাকে নিয়ে ফুচকা খেতে বেড়োলাম।
রাহাকে প্রহরের ব্যাপারে অল্প কিছু বলছি আজ ভাবলাম ওকে সবকিছুই বলব।ওর থেকেই জানতে চাইব যে আমার কী প্রহরের ব্যাপারে ভাবা উচিৎ।
ফুসকার দোকানে ফুসকা খেয়ে রাহাকে নিয়ে একটা মলে গেলাম।টুকটাক কিছু কেনার জন্য।
মলে একটা চুড়ির দোকানে প্রহরকে দেখলাম।ওকে ওখানে দেখে খুশি হয়েও যেন হতে পারলামনা। কারন ওর সাথে একটা মেয়েও ছিলো।দুজন পছন্দ করে চুড়ি কিনছিল।
এতদিনে প্রহরের প্রতি যে বিশ্বাস জন্মেছিল তা যেন নিমিষেই ভেঙে গেল।সব ছেলেরা বুঝি একই রকম হয়?
ওখান থেকে সরে আসছিলাম তখনই প্রহর আমাদের দেখে নেয়।ও আমাকে বলে
—- আফরা তুমি ভুল বুঝছো।আমি তোমাকে সবটা,,,,
ওর কোনো কথা না শুনেই বাইরে চলে এলাম।প্রহর ও আমার পিছন পিছন বাইরে চলে এলো।
বাইরে ভাইয়া আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।আমি কোনো কথা না বলেই গাড়িতে উঠে গেলাম।
ভাইয়া রাহাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি আমাদের বাড়ির রাস্তায় ঘুরিয়ে নিলো।কিছুক্ষন পর আমায় বলল
—- ছেলেটা কে ছিল, আফরা।
—- আমি ভাইয়াকে প্রহরের ব্যাপারে সবটা খুলে বললাম একদম শুরু থেকে।
ভাইয়া আমায় শুধু বলল
—- তোর মনে হয় ওকে একটা চান্স দেওয়া উচিত।আর নিবিরকে মনে রাখাটা তোর বোকামি হবে।
—————
পরেরদিন ভার্সিটি তে ঢোকা মাত্র নিবির ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে বলল
—-আফরা, প্লিজ আমার তোর সাথে কিছু কথা আছে।
—- হাতটা ছাড়ুন , নিবির ভাইয়া।
ইতি মধ্যে মাঠে প্রচুর লোক জমা হয়েছে। সবাই তামাশা দেখতে ব্যস্ত।আমি অনেক চেষ্টা করেও যখন হাত ছাড়াতে পারলাম না তখন নিবির ভাইয়াকে একটা চড় মেরে ওখান থেকে চলে এলাম।
নিবির ভাইয়া যেন এটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন।
প্রচন্ড খারাপ লাগছিল কাজটা করে।মনটাই খারাপ হয়েগেছিল। তাই ক্লাস না করেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলাম।রিক্সা না পাওয়ায় হেঁটেই যাচ্ছিলাম।তখনই আমায় পেছন থেকে কেউ ডাকল।
লোকটাকে চিনতে আমার বেশ সময় লাগলেও ঠিকই চিনলাম।ও রাফাত, আমার ক্লাসমেট ছিল একসময়।নিহানের বেস্টফ্রেন্ডও ছিল।
—- আমাকে চিনতে পেরেছিস, আফরা।
—- রাফাত, তুই এখানে।
—- আমি তো ভেবেছিলাম তুই আমায় চিনবিনা।
—- না তা কেন।
কথা বলতে বলতে দুজন রাস্তা ধরে এগোচ্ছিলাম তখনই একটা গাড়ি আমাদের সামনে দিয়ে গিয়ে াা জোরে ব্রেক কসল। গাড়িরা প্রহরের।কিন্তু উনি এখানে কেন?
উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সামনে এসে বললেন
—এই ছেলেটা কে?
—- আমার ফেন্ড রাফাত।
উনি রাফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন
—- হ্যালো।আমি প্রহর,,আফরার উডবি।আমার একটু কাজ আছে ওর সাথে তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
বলেই উনি হাত টেনে আমায় গাড়িতে বসালেন।
—- আপনি আমার কোন জন্মের উডবি হন।
—- স্টপ।
—- স্টপ কী হ্যা।আপনি আমার নামে এগুলা কী বলে বেড়ান হ্যা।
—- আর একটাও বাজে কথা বললে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলব।বুঝলে।
—- আপনি তো খুব ডেঞ্জারাস।
—- সেটা আজ বুঝলে।আমি কিন্তু খুব রোমান্টিকও।ডেমো দেখাবো নাকি।
—- একদম না।আমরা কোথায় যাচ্ছি?
—- আমার শ্বশুরবাড়ি।
—- মানে?
—- তোমাকে বাসায় রাখতে যাচ্ছি, ইডিয়েট।আর তুমি ঐ ছেলেটার সাথে কী করছিলে?ও নিহানের ফ্রেন্ড ছিল না, যদি তোমার কোনো ক্ষতি করে দিত।
—- ও এমন ছেলেনা।
—- তবুও তোমার ব্যাপারে আমি কোনো রিস্ক নিতে চাই, না আফরা।
উনার এই একটা কথায় আমার সারা শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো।এ যে এক নাম না জানা অদ্ভুত অনুভূতুি।
(চলবে)