#প্রথম_প্রেম_২
পর্ব-০২
লেখিকা-#খেয়া
তখনই মামি আবারও বলল
—- আমি জানি আফরা তুই নিবিরকে ভালোবাসিস। কিন্তু আমি চায়না তুই ওকে বিয়ে কর।ওর সাথে তুই কখনো ভালো থাকবিনা আফরা।
—- তুমি কী করে জানলে,মামি।
—- আমি সব বুঝিরে,মা।কথা যে খারাপ মেয়ে না সেটা আমি জানি কিন্তু ইদানিং ও যেটা করছে সেটা ও ঠিক করছেনা।
—- কথা আপু কী করেছে, মামি।
—- আমার ছেলেটার মাথাটা খারাপ করে দিয়েছে ও। দেখলিনা আমার এমন সময় ও ছেলেটা কেমন কথার সাথে চলে গেলো।
মামির সাথে কিছুক্ষন কথা বললাম।
—- আফরা,দুপুর তো হয়ে গেলো তুই বরং বাড়ি চলে যা। দাঁড়া আমি প্রহরকে বলি ও তোকে দিয়ে আসবে।
—- উনি এখানে আছে।
—- হুম।
————
প্রহরের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছি।
যেহেতু এসেছি তাই ভাবলাম কথা বলেই যাই।
—- কী খাবে বল, শুভ্রপরী।
—- আমাকে আফরা বলে ডাকলে ভালো হতো।
—- আচ্ছা।কী খাবে বল।
—- কফি।
—- এখন তো দুপুর।দুপুরবেলা কে কফি খায়।
—- আমি।কোল্ড কফি ওর্ডার করেন।
—- আচ্ছা।
তুমি কাল কিছু বলতে চেয়েছিলে তাইনা।
—- হুম,সরি।
—- সরি কেন?
—- আপনাকে এতদিন ধরে এত বাজে ভাবে ইগনোর করার জন্য।আর মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে খারাপ বিহেব করার জন্য।
উনি খানিকক্ষন চুপ থেকে বললেন
—- নিবিরকে তুমি খুব ভালোবাসো, তাইনা।
—- হয়তো বা। কিন্তু আমি খুব চেষ্টা করছি তাকে ভুলে যাওয়ার।
—- লিসেন আফরা, সব মানুষের লাইফেই প্রথম ভালোবাসাটা স্পেশাল হয়।কিন্তু তাই বলে যে মানুষ দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারেনা, সেটা নয়।আমি তোমাকে বলছিনা যে তুমি আমাকে একটা চান্স দাও।আমি বলছি তুমি নিজেকে একটা চান্স দাও।
তোমার লাইফে সত্যি এমন একজনের দরকার যে তোমাকে অন্তত মেন্টাল সাপোর্ট দিবে।
—-আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি,কিন্তু আমি সত্যি নিজের মনকে বোঝাতে পারিনা।
—- তুৃমি টাইম নাও।নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলে দেন বিয়ে নিয়ে ভেবো।বাট এখন তোমার সত্যি একজনকে দরকার।
—- আমরা কী বন্ধু হতে পারি।
—- সিরিয়াসলি?
—- হুম।
—- আমাকে তুমি বন্ধু হিসেবে সবসময় নিজের পাশে পাবে।আমি নিবিরের মতো তোমার ফিলিংস নিয়ে কখনো অবহেলা করব না।
তার কথার উত্তরে আমি শুধু মুচকি হাসলাম।তারপর বললাম
—-আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
—- বলো না।
—- আপনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?
—- নিবিরদের বাসায়।
—- কিন্তু আপনার সাথে যেদিন আমার দেখা হয়েছিল তারও অনেক আগে থেকেই তো আপনি আমায় মেসেজ পাঠাতেন।
—- আমি সেদিনের কথা বলিনি।তোমার মনে আছে নিবিরের বার্থডের কথা।যেদিন তোমার থেকে কথার গায়ে পানি পড়েছিল।ঐদিন দেখেছিলাম।
—- আপনি তখন ওখানে ছিলেন।
—- হুম। আমি তখন এখানেই ছিলাম।বাবা- মা পরে এসেছিল।
—- ওহ্।আমার মনেহয় এখন বাড়ি ফেরা উচিত।
—- হুম,চলো তোমাকে রেখে আসি।
প্রহর আমাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে গেলেন।কেন জানি এই মানুষটার সাথে কথা বললেই আমার মনটা ভালো হয়ে যায়।বারবার এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে মন চায়।এটা কী নতুন কোনো অনুভূতির সূচনা?
—————-
বাসায় এসেছি দীর্ঘক্ষন। দুপুরে ভাইয়া বাসায় আসেনি।রাতেও ফিরতে দেরি হবে।
বিকেলে এককাপ কফি নিয়ে সোফায় বসে মাত্র টিভিটা অন করেছি।তখনই দরজায় বেল বেজে উঠল।
দরজা খুলে দেখি নিবির ভাইয়া।প্রচন্ড বিধ্বস্ত চেহারা উনার।চোখ মুখ ফুলে একদম লাল হয়ে আছে।
ভেতরে ঢুকেই উনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।
—- নিবির ভাইয়া,কী হয়েছে আপনার।
—- আফরা,কথা আমাকে ঠকিয়েছে।
—- মানে?
—- কথা অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়েছে।
—-কিন্তু কথা আপু এটা কেন করল।
—- কারন ই ছেলের প্রচুর টাকা।তুই তো জানিস কথা একটা মিডিলক্লাস ফ্যামিলি থেকে আসে।ওর বাবা,মা ওর পড়ার খরচ দেয় না।এতদিন আমি ওর সব খরচ দিতাম।এখন ওর পড়া শেষ তাই নাকি আমাকে আর লাগবেনা ওর।
কথাটা বলেই নিবির ভাইয়া ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।ঠিক কতটা কষ্ট পেলে একটা ছেলে এভাবে কাঁদে তা আমার জানা নেই।
—- আমায় বিয়ে করবি, আফরা।
—- এসব আপনি কী বলছেন?
—- আমিও কথাকে দেখাতে চাই যে আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচতে পারি।
—- বেশ সুন্দর একটা কারণ দেখালেন।আপনি আমাকে কী মনে করেন বলুনতো যখন আপনার প্রয়োজন হয় তখন আমাকে কাছে টেনে নেন।আর যখন মনে হয় ছুড়ে ফেলে দেন।
যখন আপনার কাছে কথা আপু ছিল তখন আমাকে আপনার প্রয়োজন হয়নি।আজ কথা আপু নেই বলেই আপনি এমন করছেন।
—- আফরা!
—- একদম আমাকে দুর্বল করার চেষ্টা করবেন না, নিবির ভাই।
—- আফরা তুই,,,
—- আপনি খুব ভালো করেই জানেন নিবির ভাইয়া যে আপনার সামনে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনা।গত তিন বছর তো কম কষ্ট, অবহেলা দেননি আমায়।আজ যখন আপনার ভালোবাসা আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তখন আপনার আমার কথা মনে পড়ছে।
আপনি হয়ত ভাববেন যে আমি স্বার্থপর।তবে তাই।একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আপনার পেছনে কীভাবে ঘুরেছি আমি।আর আপনি কী করেছেন আমার সাথে।
—- আমাকে কী একটা সুযোগ দেওয়া যায়না?
—- না।আপনি এখন থেকে চলে যান।কেউ দেখলে ভুল ভাববে।
,,,,,,,,,,,,
মনটা আজ বড্ড পুড়ছে।যত যাই হোক নিবির ভাইয়ার কষ্ট যে আমি সহ্য করতে পারিনা।প্রথম ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়।আমি কী কখনো নিবির ভাইয়াকে ভুলতে পারব।
রাত হয়ে গেছে।খুব জানতে ইচ্ছে করছে নিবির ভাইয়া এখন কী করছে।
একাএকা থাকতে ভালোলাগছিল না।তাই আরশিকে ডেকে পাঠালাম।
আরশির সাথে অনেকক্ষন গল্প করলাম।কেন জানি এখন আরশির এখানে আসাটা ওর মা পছন্দ করেনা।তবুও ও আসে।
রাতে আমি আর ভাইয়া একসাথে খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম।
একদম ঘুম আসছেনা।যত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যেতে পারি ততই ভালো।ঘুম না আসলে বারবার বাবা- মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে।বড্ড কষ্ট হয় তখন।আচ্ছা কেমন হতো যদি সন্তানের আগে বাবা মা মারা না যেতো।
তখনই প্রহরেরর ফোন এলো।না চাইতেও মুখে একচিলতে হাসি ফুটে উঠল।এখন আমার মন ভালো করতে এটাই দরকার।
—- কী ব্যাপার ম্যাডাম,মন খারাপ নাকি?
—- নাতো।
—- তাহলে যে অন্য দিনের মতো বকা দিলেন না।
—- এমনি।আপনাকে একটা প্রশ্ন করব?
—- বলো।
—- আপনার কাছে ভালোবাসা মানে কী?
—- ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যেটা মুখে বলে বোঝানো যায় না।ভালোবাসা ফিল করে নিতে হয়।
—- আপনি কী আমাকে ভালোবাসেন নাকি আপনার আমাকে ভালোলাগে।
—- আমার তোমাকে ভালোলাগে এটা ঠিক তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি কিনা জানিনা।কিন্তু তোমার প্রতি আমার ফিলিংটা ভালোবাসার থেকেও অনেক বেশি কিছু।
—- আপনি কী কোনো জন্মে সাহিত্যিক ছিলেন।
—- সাহিত্যিক হতে যাবো কেন আমি তো ডাক্তার।
—- আপনিও ডাক্তার!
—- হুম।
—- আচ্ছা আমার ঘুম পাচ্ছে রাখি।
—- গুড নাইট।
—————
সকালে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাইরে এসে দেখি চারিদিকে রক্ত ছিটিয়ে আছে।সামনে তাকিয়ে দেখি,,,,
( চলবে)