প্রথম প্রেম পর্ব-০১

0
2638

#প্রথম_প্রেম
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া

আমি যে প্রচন্ড খারাপ, নিলজ্জ বেহায়া একটা মেয়ে সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন,নিবির ভাই।
—- এই তোর লজ্জা করেনা বড়দের মুখে মুখে এভাবে তর্ক করতে। আর তোকে না বলেছিলাম এই বাড়িতে না আসতে, তাহলে কেন এসেছিস।

—- আমার মামার বাড়ি তাই এসেছি।

—- মামার বাড়িতে এসেছিস ভালো কথা। আমার রুমে কী করছিলি তুই।

—- মামি আপনাকে ডাকছিল।আমি আসতে চাইনি তাও আমায় পাঠিয়েছে।

—- তুই আমার ঘরে আসতে চাসনি।সিরিয়াসলি?তুই তো শুধুই আমার আশেপাশে আসার বাহানা খুজিস তাইনা, আফরা।

—- আপনার এত অপমানের পরও বারবার কেন আপনার কাছে আসি সেটা জানতে চাইবেন না?

—- একদম না।তোর এসব আজাইরা কথা শোনোর ইচ্ছা বা টাইম কোনোটাই আমার নেই। তোকে যেন আর আমার ঘরে না দেখি।

“আমিও আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসি। এই লোক একটুও ভালোমতো কথা বলতে পারেনা।আমি আফরা আর নিবির ভাইয়া আমার মামাতো ভাই।ভাইয়াকে আমি অনেক ভালোবাসি কিন্তু ভাইয়া সেটা বুঝতেই চাই না।সবসময় বাজে ব্যবহার করে আমার সাথে।নিষ্ঠুর একটা।”
আমি সোজা মামির কাছে চলে গেলাম।

————————

আচ্ছা মামি নিবির ভাইয়ার জন্মের সময় কী মামা খুব অর্থসংকটে ভুগছিল।

—- এসব কী কথা, আফরা।

—- তাহলে একটু মধু কিনে নিজের ছেলের মুখে দেয়নি কেন?

—- বুঝেছি,আবার কিছু বলেছে ও তোকে।

—- কিছু মানে, অনেক কিছু বলছে। কথা শুনে তো মনে হচ্ছিল যেন উনার ঘরে ডাকাতি করতে গেছি আমি।

—- রাগ করিস না, মামনি। জানিস তো ওর ঘরে ও কাউকে এলাউ করেনা না।

—- সেই তো।একটু খেয়াল রেখো ঘরে আবার বউ -টও লুকিয়ে রাখতে পারে।আচ্ছা, আমি বাসায় যাচ্ছি।

—- সে কী এখনই চলে যাবি।বিকেলে গেলে হয় না।

—- না গো।এখানে থাকার মুডটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

—- আচ্ছা সাবধানে যাস।

————–

নিবির ভাইয়াদের বাসা থেকে এসে মন খারাপ করে বসে ছিলাম।ভাইয়াযে কেন এমন করে আমার সাথে।

মুড ঠিক করারর জন্য বিকেলে রাহা আর আরশি কে নিয়ে বাইরে বের হলাম।রাহা হলো আমার প্রাণপ্রিয় বান্ধবী আর আরশি আমার কাজিন।সবাই মিলে ফুচকা খেতে যাবো বলে ঠিক করলাম।সাথে টুকটাক কিছু শপিং করব।

———

শপিং শেষ করে তিনজন এসেছি ফুচকা খেতে।ভেবেছিলাম হয়ত ফুচকা খেলে মনটা ভালো হয়ে যাবে।কিন্তু এখানে এসে মনটা আরো খারাপ হয়ে গেলো।
দেখলাম নিবির ভাইয়া কথা আপুকে ফুচকা খায়িয়ে দিচ্ছে।নিবির ভাইয়া সবার সামনে কথা আপুকে নিজের বেস্টফ্রন্ড বলে দাবি করলেও যে ওদের ভেতরে অন্য কিছু আছে সেটা আমি ভালো করেই জানি।বেস্টফ্রেন্ডকে বুঝি কেউ এখাবে ট্রিট করে।

মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।চোখে পানি টলমল করছে।ওদেরকে নিয়ে ফুচকা না খেয়েই ওখান থেকে চলে এলাম।রাহা নিবির ভাইয়ার ব্যাপারে সব জানে বলে কোনো প্রশ্ন করল না আমায়।কিন্তু আরশি একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।শরীর খারাপ লাগছে বলে চলে এলাম।

————–
বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে সোজা রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম।কেন জানিনা আজ খুব কান্না পাচ্ছে।
নিবির ভাইয়া আর কথা আপুকে আমি আগেও অনেক বারর একসাথে দেখেছি। তখনও খারাপ লেগেছে।কিন্তু কেন জানিনা আজ কষ্টটা খুব বেশি হচ্ছে।

এসে থেকে ঘরেই বসে আছি।রাতে খাবারের জন্য আম্মু – আব্বু ডাকতে এলেও শরীর খারাপ বলে কাটিয়ে দিয়েছি।প্রচুর কেদেছি এতক্ষণ।চোখমুখ একদম ফুলে গেছে, মাথাটাও খুব ধরেছে।

মাথা ব্যাথা কমাতে এই রাতেই একবার গোসল করলাম।রাত প্রায় তিনটা বাজে। এত রাতে ঘোসল করেছি তাহলে নির্ঘাত ঠান্ডা লাগবে।তাই ভালোমতো চুল মুছেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

———–

রাতে শরীর কাপিয়ে জ্বর এসেছে। ভালোমতো চুল শুকিয়ে ঘুমানোর পরও কীভাবে জ্বর এলো সেটায় মাথায় ঢুকছেনা।
মা আমার মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে।বাবা ডাক্তার আনতে গেছে।সকাল মাত্র ছয়টার কাছাকাছি,ইতিমধ্যে আমার চৌদ্দগুষ্টি হাজির হয়েছে আমার সামনে।খবর পেয়েই সবাই চলে এসেছে।সামান্য একটু জ্বর হওয়ায় এভাবে সবাইকে ডেকে আনার কী মানে বুঝিনা।
আমার জ্বরকে অবশ্য সামান্য বলা চলে না।আমার খুব একটা জ্বর হয়না কিন্তু যখন হয় তখন একদম হসপিটালে এডমিট হওয়া লাগে।

এত মানুষের মধ্যেও আমার চোখ শুধু নিবির ভাইয়াকেই খুজছে।আমার এত জ্বর জেনেও কী উনি আসবেন না।

দুপুরের দিকে জ্বর একটু কমেছে।সবাই চলে গেলও মামি থেকে গেছে। নিবির ভাইয়া নাকি মামিকে নিতে আসবে।এই সুযোগে নিবির ভাইয়াকে একটু দেখব বলে ড্রয়য়িংরুমে এসে বসে আছি।
কালকের ব্যাপারটা নিয়ে উনার ওপর অভিমান হয়েছিল তবুও এই বেহায়া মনটা যে উনাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে।

একটু পরে মামি আমার জন্য কীসের যেন রস নিয়ে আসলো।জ্বরের সময় নাকি এগুলো খেলে ভালো লাগে। আমি খাবোনা খাবোনা করেও খেয়েই ফেললাম।
প্রচন্ড তিতা ছিল এটা।

—- কেমন খেতে এটা।

—- নিবির ভাইয়ার মতো।মানে খুব তিতা একদম রসকসহীন।

আমার কথ শুনে মামিও হেসে দিলো।সাথে সাথে আমিও হেসে উঠলাম। আম্মুর পর মামি আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।মামির একটা মেয়ের খুব শখ ছিল কিন্তু নিবির ভাইয়া হওয়ার পর মামি আর কনসিভ করতে পারেনি তাই আমাকে নিজের মেয়ের মতো দেখে।
মামা বাড়ির সবাই আমাকপ খুব ভালোবাসে।শুধু নিবির ভাইয়াই আমাকে সহ্য করতে পারেনা।
একদিন বশত আমার হাত থেকে একটু পানি কথা আপুর গায়ে পড়ে গেছিল বলে খুব বকেছিল আমায়। একটা থাপ্পর ও মেরেছিল।সেদিন বাড়ি এসে খুব কেদেছিলাম,সেদিনও অবশ্য এমন জ্বর এসেছিল।তারপর তিনমাস মামা বাড়ি যায়নি।
অবশেষে নিবির ভাইয়া এসে আমার কাছে মাফ চেয়েছিল।

বসে বসে এসব স্মৃতিচারণ করছিলাম তখনই নিবির ভাইয়া চলে এলো।কিন্ত উনার সাথে আবির ভাইয়াও ছিল।আবির ভাইয়া আমার নিজের ভাই।ভাইয়া একজন ডাক্তার।কিছুদিন আগে কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিল।কিন্তু ভাইয়া যে আজ আসবে সেটা আমাকে বলনি তাই রাগ করে ওখানেই বসে রইলাম।
ঠিক করছি আজ ভাইয়ার সাথে কথা বলব না।

ভাইয়া আমার কাছে এসে বলল
—- কী হয়েছে,বনু।ভাবলাম আজ এসে তোকে চমকে দিবো কিন্তু তুই তো জ্বর বাধিয়েই বসে আছিস।

” ভাইয়ার এই মিষ্টি কথায় আমি একদম গলে গেলাম।এই মানুষটার ওপর তো আমি রাগ কর থাকতেই পারিনা।”

—- আমি কী ইচ্ছে করে জ্বর বাধিয়েছি, বল।

—- হ্যা,সেই তো। তুই তো কিছুই করিসনা বরং সমস্যারা তোকে খুজে তোর ঘাড়ে এসে ঝুলে যায়,তাইনা।

নিবির ভাইয়ার এই কথাটা শুনেই মেজাজ গরম হয়ে গেলো।কোথায় আমি অসুস্থ আমাকে শান্তনা দিবে তা করে আমায় জালাচ্ছে।
এই মানুষটা কী কখনো আমায় একটু বুঝবেনা।কেন আমাকে উনি এত কষ্ট দেন।
রাগ কর ওখান থেকে উঠে চলে যাচ্ছিলাম তখন উনি বললেন

—- দাড়া,আফরা। তোর সাথে আমার কথা আছে।

“উনি আবার কী বলবেন। কাল যে আমি উনাকে দেখেছি সেটা জেনে গেলো নাতো।”
—-উপরে তোর রুমে আয়, কথা আছে।

আমাকে রুমে যেতে বলেই উনি সিড়ি দিয়ে উঠে আমার ঘরে চলে গেলেন।

আমারও কী যাওয়া উচিত।না আমি যাবোনা।এমনিতে তো আমাকে উনার আশেপাশে যেতেও মানা করেছে, এখন উনার প্রয়োজন বলে ডাকছে।আমি যাবোনা।

এসব ভাবসিলাম তখনই কেউ,,

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে