প্রতীক্ষিত প্রতীক্ষা – Author: Salma Sima ( ছদ্মনাম)

0
949

#গল্পপোকা_ছোট_গল্প_প্রতি্যোগিতা
name: প্রতীক্ষিত প্রতীক্ষা
Author: Salma Sima ( ছদ্মনাম)
সেই তখন থেকে পিছু নিয়েছে ছায়াটা্র । আজকে যে ওটার আর নিস্তার নেই । কোন এক অজানা মোহ কাজ করছে সেটার উপর | স্কুলের ১০০ মিটার শর্ট রানেও এত জোরে দৌড়ায়নি অ্যাথলেট অমিত।
– এই দাড়াও বলছি (ঘুমের ঘোরে অমিত)।
– কোথায় দাঁড়াবো ( বাস্তব জগৎ)।
– ওখানে স্থির হয়ে দাঁড়াও আমি আসছি
-কোথাও যেতে হবে না তোর ওঠ তো এখন। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে এলো তারপরও ছেলে এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে ।
ঘুম আর বাস্তবতাকে একসাথে মিশিয়ে মজাদার মসলা বানানোর কাজটি ইতিমধ্যে শেষের পথে। সেই মসলাতে চিকেন কারি রান্নাটা ভালোই জমবে।
-ধুর আপি ! তুমিও না ! একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দেবে না । এত সকালে কেউ ঘুম ভাঙ্গায় বলো !
– সকাল ! ঘুম এর মধ্যে তুই কোন গ্রহে ছিলিস বলতো ? ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, পৃথিবীর এই প্রান্তে এখন দুপুর হতে যাচ্ছে বুঝলি ? ইটস ফাইভ মিনিটস টু টুয়েলভ ডিয়ার!
– বারোটা! সিরিয়াসলি!!
– না বাবা আনসিরিয়াসলি | যা তো এখন দ্রুত ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিয়ে আমাকে উদ্ধার কর।
এভাবে ওকে আগলে রেখে কোলে পিঠে করে বড় করেছে অদিতি। ওর কাছে অমিতি ই যেন পুরো দুনিয়া। জন্মের কিছুদিন পর চিরতরে পরপারে চলে যাওয়ায় বাবার মুখটা মনে নেই অমিতের। সেটাই স্বাভাবিক কিনা। তবে মায়ের মুখটা খুবই মনে পড়ে অমিতের। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মমতাময়ী মা ই তাদের দুই ভাই-বোনকে আগলে রেখেছিলেন। কয়েক বছর হলো তিনি অমিত – অদিতিকে ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন ওদের বাবার কাছে না ফেরার দেশে। আর তখন থেকেই অমিতের প্রধান অভিভাবক অদিতি। ব্রাশ করতে করতে অমিতের হঠাৎ মনে পড়ল আজ তো তার ম্যাজিক মামার আসার কথা তাদের বাসায়। সুদূর আফ্রিকা থেকে কিছুদিন আগে দেশে ফিরেছেন তিনি। মামার নামছে ম্যাজিক কিংবা তিনি হে ম্যাজিক জানেন এমন কিছু কিন্তু নয়। এখানে যে কারো মনে প্রশ্ন আসবে এই যে এই নামটা রহস্য কি তাহলে? আর সেটাই তো স্বাভাবিক। মামারা আসল নাম হাবিবুর রহমান। সবাই হাবিব বলেই ডাকে মামাকে। এখন কাজের চাপের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাতে বছরের বেশিরভাগ সময় থাকেন তিনি। সেই অমিতের ছোটবেলায় যে এবার তিনি ওদের বাসায় এসেছিলেন তখনকার ঘটনা। অমিতের মা তখন বেঁচে আছেন। ঘটনার সময় বোধহয় তিনি রান্নাঘরেই ছিলেন।

– জানিস পুচকু আমি দিনকে রাত বানিয়ে দিতে পারি নিমিষেই।
– ( অমিতার অদিতি অবাক হয়ে) সত্যি মামা !! কী যে বলো ! তাই আবার হয় নাকি ?
– আরে দেখবি তো আগে পারে কিনা তারপরে না বলবি।

মামা তাদের খুবই রসিক প্রিয়। সুযোগ পেলেই মজা নেন ভাগ্নেদের সাথে। সেদিনের ঘটনাটাও ব্যতিক্রম কিছু নয়।
– ম্যাজিক দেখতে হলে তো প্রথমে চোখ বন্ধ করতে হবে । নে, অমিত , এখন চোখ বন্ধ করতো । তারপর দেখ কি হয় ম্যাজিক তো শুরু হবে তখন।
এদিকে অমিতের চালাক বোন বয়সের অভিজ্ঞতার কারণে হালকা আন্দাজ করতে পেরেছিল। কৌতুহলী অমিত চোখ একদম টাইট করে বন্ধ করে অপেক্ষা করছে ম্যাজিকের জন্য। ওদিকে তার বোন অদিতি তো সবই দেখছিল। বুঝতে পারছিল কিছু একটা হবে। এজন্য চুপিচুপি হাসছিল। এই ফাঁকে নিজের মাথার পেছনে লাগানো সানগ্লাসটা খুলে মামা অমিতের চোখে লাগিয়ে দিয়ে অমিতকে চোখ খুলতে বললেন। এদিকে সানগ্লাস সম্পর্কে অজ্ঞাত অমিত তো তখন ছোট্ট নাবালক বাচ্চা। সানগ্লাস জিনিসটা কখনো চোখেও পড়ে নি ওর। হত এটাও জানত না যে দিনকে রাত বানানোর ক্ষমতা শুধুমাত্র সৃষ্টিকর্তার ই আছে। মামা প্রথমে বুঝতে পেরেছিলেন ছোট বাচ্চা অমিতের কান্নাকাটির একটা ঘটনা ঘটলেও ঘটতে পারে। এজন্য পরে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। আসল রহস্যটা তারপর বুঝতে পেরেছিল অমিত। ম্যাজিক মামা নামকরণের ইতিহাস এখান থেকেই শুরু। মামার মত অদীতিও হালকা রসিক প্রিয় স্বভাবের। আর বেচারা অমিত বরাবরের মতোই সবকিছুর ভোক্তা। আর তখন থেকেই সবকিছু সিরিয়াসলি নেয় না অমিত। যদিও সেই মজা করাটা অদীতি হালকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখত কারণ সে জানত যে তার ছোট্ট ভাইটা হালকা আবেগি। তবে ইতিবাচক বিষয় হল এটা পরিণত হওয়ার পাশাপাশি অমিত এখন আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী হতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু একটা জায়গায় তার দুর্বলতা থেকেই গেছে। সেটা হলো তার মমতাময়ী মা। মায়ের মমতাময়ী মুখটাতে মাঝেমধ্যেই সেজে হারিয়ে যায়। কল্পনায় তখন সে তার মাকে খুঁজে বেড়ায়। কখনো কখনো মিছিমিছি তার মাকে পেয়েও যায়। মূলত মায়ের বেদনা কমাতে অদিতির অমিতের সাথে হালকা রসিকতা করে থাকে। তো একদিন স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দুইটা পুরস্কার পেয়ে অনেক আনন্দের সাথে খুশিমনে বাড়িতে ফিরে তার আপুকে জানালো। মনে মনে অনেক খুশি হলো বাইরে থেকে একটা সিরিয়াস ভাব নিয়ে আছে অদীতি। পড়াশোনায় ভালো করার পাশাপাশি অদিতি বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। মুখ অভিনয় একক অভিনয় কিংবা নাটক সবকিছুতেই পারদর্শী আছে ওর।

– আপু ,জানো জানো আমি আজকে দুইটা পুরস্কার পেয়েছি।
– হেহ ! তাতে কি হয়েছে? কেউ বুঝি পুরষ্কার পায়না ? তাছাড়া আমি তো আগেই জানতাম যে তুই দুইটা পুরষ্কার পাবি ।
– অ্যা… মোটেও না । তুমি কিভাবে জানলা ? বললেই হলো নাকি তুমি কি লুকিয়ে লুকিয়ে আমার স্কুলে গিয়েছিলে নাকি? বাতাও বাতাও সাচ বাতাও !
– দেখো দেখি ছেলের কান্ড । তোর বিশ্বাস হয় না.. যা দেখতো আমার টেবিলের উপর কয়টা রুবিক্স কিউব আছে। যে কয়টা থাকবে সে কথা মিলিয়ে নিবি আমি সেটাই জানতাম । আমিতো জানতামই যে আমার ভাইটু পুরস্কার পাবেই। হা হা। যা গিয়ে দেখ আগে।

অমিতের মনে হচ্ছিল এটা সম্ভব নয় । তবুও আপুর রুমের দিকে আস্তে আস্তে এগোতে লাগলো। দরজা খুলে যা দেখতে পেল তা দেখে অমিত নিতান্তই হতভম্ব হয়ে পড়লো। টেবিলের উপরের দৃশ্য দেখে অমিত অবাকই হল। আসলেই তো ওখানে দুইটা রুবিক্স কিউব রাখা। এটা কি আসলেই সম্ভব! নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না অমিত। গণিতের পাশাপাশি রুবিস্কিউবেও প্রচন্ড অনুরাগ আছে অদিতির। গণিত অলিম্পিয়াডে দারুন সফলতার গল্প রয়েছে তার। আর রুবিকস কিউবের কথা বলতে গেলে উল্লেখযোগ্য পরিবহন রুবিক্স কিউব তার সংগ্রহে রয়েছে। কিন্তু এখনো আসল জিনিসটাই বুঝতে পারছনা অমিত। অদিতি কিভাবে বুঝবো যে সে দুইটা পুরস্কার পেয়েছে। অদিতি তো বললও আজ নাকি ওর স্কুলে যায়নি। টেবিলের ওপর থেকে রুবিক্স কিউব দুটো নিয়ে দ্রুত ছুটল তার আপুর কাছে।

– বলো না আপু কিভাবে বুঝলা যে , আমি দুইটা পুরস্কার পেয়েছি এটা কিভাবে সম্ভব হলো।
-ম্যাজিক ম্যাজিক। হা হা।
-আহা বলো না! তুমিও না ! শুধু মামার মত রসিকতা।
-আরে তেমন কিছু না। তুই বোধ হয় খেয়ালই করিস নি দরজা দিয়ে ঢুকে ছটি সমতল জায়গা আছে টেবিলটা ছিল দুই নাম্বারে। সমতল জায়গা এর নম্বর অনুযায়ী একটা দুইটা তিনটা চারটা পাঁচটা ছয়টা করে কিউব রাখা ছিল বাকিটা তো তোর নিজেরই বুঝে যাওয়ার কথা। হা হা।
-ধুর আপু তুমিও না ! খালি মজা নাও মামার মত। নতুন ম্যাজিশিয়ানের আবির্ভাব হলো আমাদের বাসায়।
-হাহা , যাইহোক । কনগ্রাচুলেশন ব্রাদার।
-ধন্যবাদ , ধন্যবাদ, ট্রিট তো দেয়াই উচিত।
– হ্যাঁ ,হ্যাঁ । অবশ্যই অবশ্যই দে দে, ট্রিট দে।
-ধুর , তুমিও না! ফের রসিকতা… ছোটদের কে ট্রিট দিতে হয় নিতে হয় না।
-আচ্ছা, আচ্ছা । বাবা দেখা যাবে।

এভাবেই খুনসুটি চলতে থাকে। ওদের দুজনের মধ্যে বেড়ে ওঠে সখ্যতা।মামার এয়ারপোর্ট চেকিং শেষ করে ওদের বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা লেগে গেল ।মামার জন্য তার প্রিয় মুরগির মাংস রান্না করা হয়েছে আজ। রাত্রে বেলা খাওয়ার সাথে সাথে মামা-ভাগ্নে দের আড্ডা ও জমে উঠেছে ডাইনিং টেবিলে।।খাওয়া দাওয়া থেকে গল্প আর খুনসুটিই হচ্ছিলো বেশি । ঘন্টা খানেক লেগে গিয়েছিলো ওদের ডিনার করতে। বিদেশের লোকজন অনেকক্ষ্ণ ধরে খাওয়াদাওয়ার পর্বে অংশ নিয়ে থাকে । তবে এদের মত এতটা গল্প আর হয়না হয়তো বিদেশিদের । তবে আপাতত মূল কথা হচ্ছে ওদের খাওয়া শেষ। অদীতি আর মামা আগেই উঠে পড়েছেন। অমিত এখনো টেবিলেই বসে আছে। মানু বুয়া টেবিলটা গুছিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ মানু খেয়াল করলো কি যেন ভাবছে অমিত। কক্সবাজারের কথা শুনে ওর হয়ত ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গিয়েছে। সেইবার মায়ের সাথে গিয়েছিল ওরা দুইজন । কত্ত মজা হয়েছিল সেবার। মায়ের বড্ড আদরের ছিল অমিত। শাসন যেমন ছিল না , তেমনিভাবে ছোট্ট অমিতের কোনো আবদার ই যে তার মা অপূর্ণ রাখতেন না । এ যেন পুরো সোনায় সোহাগা। বাবার অভাবটা বুঝতেই দেননি ওদের মা। অবশ্য মায়ের আদরের সাথে যে কোনো কিছুরই তুলনা হয়না ।
– অমিত বাবু । উঠে পড়ো , হাত ধুয়ে নাও । সকালে কলেজ আছে না তোমার ? ঘুমাইতে যাবা না তুমি রাত্রে?
মানু বুয়ার ডাকে হকচকিয়ে উঠে অমিত। এতক্ষ্ণ পরে ফিরে আসে বাস্তব জগতে। ওর তো কলেজে যেতে হবে কাল। নাহ! এটা অস্বীকার করা যাবেনা যে সে তার গর্ভধারিনী মা কে প্রচন্ড মিস করতেছিল তখন । সেটাই তো স্বাভাবিক । মায়ের কারণেই তো আজ ও এই সুন্দর পৃথিবীর আলো দেখতে পারছে । কত কষ্টই না দিয়েছে তার মাকে। কত কষ্টই না দিয়েছে মা কে। টানা দশ মাস মায়ের ভালোবাসার চাদরেই গর্ভে মোড়ানো ছিলো । মানু বুয়া ওদের বাসায় সবসময় থাকে না । অদীতির পরীক্ষার সময় টুকুনই আর কি। বাকি সময়ে দুই ভাই বোনের দিনকাল ভালোই কাটে । রান্নাঘর অদীতি সামলায়। বাকি ঘর গোছানোতে অমিত যথেষ্ট সাহায্য করে থাকে। চেয়ারটা হালকা পিছিয়ে হাত ধোয়ার জন্য উঠে পড়লো অমিত। বেসিনের আয়নাতে ডোরেমনের স্টিকারগুলো অমিতেরই লাগানো । সারাদিন টিভি সেটের সামনে পড়ে থাকত অমিত। তার বোন অদীতিও তার সঙ্গ দিতে ভুলত না। অনেকটা নেশা হয়ে গিয়েছিল ওদের । ডোরেমন কার্টুন দেখতে দেখতে হিন্দি ভাষাটাও অনেকটা রপ্ত করে নিয়েছে দুই ভাই বোন। তারপর থেকে তো ওদের হিন্দি ভাষার উপর আলাদা টান কাজ করে । মাঝেমধ্যে এজন্য হিন্দি বলেও ফেলে কথা বলতে বলতে। এর ফাঁকে বাল্লেবাজ, কাপ্তান, খিলারি সহ আরও কতকগুলো ক্রিকেটের শব্দ শিখে নিয়েছে অমিত। ক্রিকেট যে ওর অনেক পছন্দের খেলা। ছেলে বেলায় মায়ের চোখ কে ফাঁকি দিয়ে কতবার যে লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতে চলে গিয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। ক্রিকেটের সাথে যে ওর অনেক মধুর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। গত বছরও জেলা পর্যায়ে সেরা ক্রিকেটারের ক্রেস্টটি অমিতের ঝুলিতেই এসেছিল।
বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ছাড়বে ওদের ট্রেন। লাগেজ ব্যাগ নিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছে ওরা দশটা বাজার কিছুক্ষণ আগেই । ঢাকা শহর বলে কথা। একবার ট্রাফিক জ্যাম নামক অভিশাপে পড়লে হয় । ব্যস ! ট্রেন বাস থেকে চাকরি , কারো বিয়ে কিংবা ভবিষ্যতও মিস হয়ে যেতে পারে এই ট্রাফিক জ্যামের পাল্লায় পড়ে। এরমধ্যে নাকি আবার মেট্রোরেলের কাজ শুরু হয়েছে ,তখন যে কি একটা অবস্থা হয়ে পড়বে চিন্তাই করা যায় না। কল্পনা করতেও চায়না ওরা । ছোটখাটো জ্যাম ই মানুষজনের জন্য যা বিরক্তিকর ! আধা ঘণ্টা রাস্তায় অনেক সময় ৩ঘণ্টা তো শেষ হয় না । সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হয় রোজার সময় । অনেকেরই প্ল্যানিং থাকে পরিবারের সাথে ইফতার করার। কিন্তু এই অভিশাপে পড়ে বাজে বিরক্তিকর জ্যামের পাল্লায় পড়ে রাস্তায় যাত্রাবিরতি অথবা বাসের মধ্যে একমাত্র সম্বল পানি দিয়ে ইফতারী করতে হয় । সারাদিন রোজা রেখে পরিবারের সাথে ইফতারি করতে না পেরে তখন বিরক্ত বিরক্তি লাগাটাই রীতিমতো অভ্যাস হয়ে যায়। যাই হোক ওদের ভাগ্য ভালোই বলতে হবে আজ ।তেমন জ্যামের সম্মুখীন হয়নি। এর মধ্যে অমিত ও একদম চাঙ্গা হয়ে উঠেছে প্রায় । জ্যাম ঢাকা শহরের নিত্যসঙ্গী হলেও ঈদের দিন আর তার রূপ থাকে না। ঢাকা যেন তার প্রাণ হারিয়ে বসে ক্ষণিকের জন্য। নাড়ির টানে যে সবাই গ্রামের দিকে ছুটে যায়। ঢাকাবাসী আর তখন ঢাকার বাসিন্দা থাকেনা। এমনও হয় যেন যানবাহন ছাড়াই অদল বদল হয় ট্রাফিকের আলো লাল থেকে নীল , নীল থেকে সবুজ। ওহো ! নীল আলো তো ট্রাফিকে নেই। লাল হলুদ, হলুদ সবুজ এভাবেই চলতে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব কমে আসে । তবুও ঢাকা শহর তো থেমে থাকার নয়। কমের ভাগ মানুষ যারা ঢাকায় থেকে যায় বিভিন্ন কারণে তারাই মাতিয়ে রাখেন এই ঢাকা শহরকে। জ্যাম কম থাকায় অনেকটা আগেই পৌঁছে গিয়েছে ওরা । সবে মাত্র ১১ টা বেজেছে অফিস টাইম এখন । প্রায় অর্ধেক ঢাকাবাসীই এখন অফিসে। আর ওরা এখন বেরিয়েছে ফ্যামিলি ট্যুরে। ভাবতেই অন্যরকম লাগে ওদের । তার উপর আবার অমিতের জন্য একদম নতুন এক্সপেরিয়েন্স হতে যাচ্ছে। এখন আরও একটা ঘন্টা । অমিতের তো আর তর সইছেনা ।
ট্যুরটা ওদের ভালোই কেটেছিল। আপাতত ওরা ব্যস্ত মামার বিয়ে নিয়ে কয়েকদিন পরেই বিয়ে। দেখতে দেখতে মা বিয়ের দিনও চলে এল অমিত খুবই এক্সাইটেড। যেন আজ ওরই বিয়ে। সেজেগুজে বসেছে ড্রাইভারের পাশেই। আর শেরওয়ানী পড়া বরের পাশে বসেছে অদীতি। মাঝ রাস্তায় হঠাৎ ওদের গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। কাহিনি সেখানে না। কাহিনি হচ্ছে যেখানে গাড়িটা নষ্ট হয়েছিল তার কিছুদূর সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছিল তার কিছুক্ষণ পরে। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে আবার ছায়ার দেখা পেয়েছিল অমিত। সেটাও ঠিক গাড়ি নষ্ট হওয়ার আগেই।
মাঝে অনেকদিন কেটে গিয়েছে। ও এখন সবসময় সেই ছায়ার রহস্য ই খুঁজে বেড়ায়। মানতেই চায় না যে ওটা ওর কল্পনা ছিল। সারাদিন আনমনে থাকে। কলেজ ফাইনাল শেষে ছুটিও শেষ হয়ে এলো। মামার চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু অমিতের চিন্তা শেষ হয় না। অপেক্ষায় থাকে প্রতীক্ষীত প্রতীক্ষার। আবার সেটার দেখা পাবে। ক্ষণিকের জন্য হলেও যে ওর মনে হয় ও ওর মায়ের সাথে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে