প্রতিশোধ পর্ব-৬

0
1500

গল্পের নামঃ প্রতিশোধ (বাস্তব এবং রোমান্টিক মিশ্রিত)
লেখায়ঃ রুম্মান
পর্বঃ ছয় এবং ( শেষ পর্ব )

এভাবে চলতে চলতে রাফাতের ভালো লাগা কাজ করে।

রাফাতের মনে হতে থাকে রিমি তার ভালোবাসা দিয়ে রাফাতের মন জয় করে নিচ্ছে। হঠাৎ একদিন রিমির একটা নৈতিক কাজ দেখে রাফাতের আরও ভালো লাগলো। একদিন রাফাত আর রিমি রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল। হেটে যাবার সময় রিমি লক্ষ্য করলো পাশে একটা ফুটফুটে বাচ্চা দাঁড়িয়ে কান্না করছে। বাচ্চাটির কান্না দেখে রিমি জিজ্ঞাসা করলো কি বাবু কাদছো কেন? বাচ্চাটি বললো আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে।

“আমি কিছু খাব৷ সকাল থেকে কিছু খাইনি”। বাচ্চাটির মুখে এমন কথা শুনে রিমি আর এক মুহূর্ত দেরি করেনি। পাশের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে তারা বসলো। রাফাত এদিকে কিছু বলছে না। শুধু অবাক হয়ে রিমির কর্মকাণ্ড গুলো দেখছে৷ রাফাত যতই দেখছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে।

এবার রিমি ওয়েটারকে ডেকে পাঠালেন এবং বাচ্চাটিকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি খাবা বাবু। “বাচ্চাটি সরল মনে বললো আমি ভাত খাব আপু”। বাচ্চাটির অসহায়ত্ব মুখ দেখে রিমির খুব খারাপ লাগছে। রিমি ওয়েটারকে ডেকে বললো আপনাদের এখানে ভালোমানের যা খাবার আছে সেটা দিন।

ওয়েটার বললো “রাইসের মধ্যে কাচ্চিবিরিয়ানি হবে এবং মরোগ পোলাও আছে”। রিমি বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আপনি কাচ্চিবিরিয়ানি দিন। এবার অনেক সময় পর রাফাতের দিকে লক্ষ্য করলো রিমি। রিমি দেখলো রাফাত চুপচাপ বসে তাদের কর্মকাণ্ড দেখছে। “রিমি বললো কি ব্যাপার তুমি এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো?” রিমির কথার কোন জবাব দেয়না রাফাত।

“রিমি আবার উচ্চ শব্দ করে রাফতকে ডেকে বলে ওই কি হয়েছে তোমার? শুনতে পাচ্ছ আমার কথা”? রাফাতের এবার ধ্যান ভাংলো। “রাফাত বললো কিছু বললে আমাকে”?

“রিমি আবার বললো কি দেখছিলে এভাবে?” রাফাত বললো তোমাদের খুনসুটি আলাপ আলোচনা দেখছিলাম আর শুনছিলাম”।

রিমি বললো বিরক্ত হচ্ছো না তো? “রাফাত বললো আরে না। আমার ভালই লাগছে। রিমি বললো তুমি কিছু খাবা?” রাফাত এবার ঠাট্টা করে বললো। আমাকে কে খাওয়াবে। আমি কি মানুষ নাকি। রিমি এবার বললো মাইর দেব কিন্তু। রিমি বললো আচ্ছা বলো কি খাবে তুমি”। “রাফাত বললো আমিও কাচ্চিবিরিয়ানি খাব। রিমি ওয়েটারকে ডেকে বললো আরও দুই প্লেট কাচ্চিবিরিয়ানি দিবেন”।

কিছুসময় পর ওয়েটার তিন প্লেট কাচ্চিবিরিয়ানি দিয়ে যায় তাদের। বাচ্চা ছেলেটি খাবার পেয়ে অনেক খুশি। এমন ভাবে খাচ্ছে যেন অনেক দিন হলো কিছু খায়নি। রিমি নিজের খাওয়া বন্ধ করে বাচ্চাটির খাওয়া দেখছে। এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে রেস্টুরেন্টের বিল পরিশোধ করে বাইরে বের হলো। তারপর বাচ্চাটিকে কিছু টাকা দিয়ে বললো তুমি আবার কিছু খেয়ে নিও পড়ে।

তার কিছুদিন পর আবার সেরকম একটা ঘটনা ঘটলো। একটা বৃদ্ধা মহিলা রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছিল। রিমির ভিষণ মায়া হয় মহিলাটিকে দেখে। কাছে গিয়ে দেখে মহিলাটির শাড়ি অনেক জায়গায় ছিরে যাওয়া। রিমি কাছে গিয়ে মহিলাটিকে আন্টি বলে সম্মোধন করলো। এরপর বললো, “আপনার কাপরের অবস্থাতো ভালো না”। “বৃদ্ধা মহিলাটি বললো কি করবো মা। আমরা গরীব মানুষ। কাপড় কেনার টাকা নাই”।

বৃদ্ধার মুখে এমন কথা শুনে রিমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ওই মুহুর্তে রিমি বৃদ্ধাকে নিয়ে একটা শপিংমলে গিয়ে দুইটা শাড়ী কিনে দেয়। শাড়ি কিনে দেওয়ার পর বৃদ্ধাকে খাবার কিনে দেয় সাথে কিছু টাকাও দেয়। বৃদ্ধা শাড়ি এবং টাকা পেয়ে অনেক খুশি হয়। রিমির মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দেয়। “রিমি বললো আন্টি ওকেও একটু দোয়া করে দিন”। পরে রাফাতের মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দেয়।

এইসব সেবামূলক কাজ দেখে রাফাত প্রতিবারের মত এবারও মুগ্ধ হয় এবং রিমির প্রতি ভালোবাসার পরিমাণ অনেকাংশ বেড়ে যায়। হঠাৎ একদিন রাফাতের মনে হয় সে রিমিকে সত্যি সত্যি মন থেকে ভালোবেসে ফেলেছে। রাফাত নিজের মনটাকে যেন স্থির রাখতে পারছিল না। এরপর রাফাত সত্যি সত্যি রিমিকে ভালোবেসে ফেলেন। তাই রাফাত এবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে যা করার বিয়ের পর করবে।

কিছুদিন পর,

রাফাতঃ রিমি তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
রিমিঃ হ্যা অবশ্যই আমি তোমাকে বিয়ে করবো। ভালো কি আর এমনি এমনি বেসেছি নাকি। বিয়ে করে সংসার করার জন্যই আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।

“রিমির মুখে এমন কথা শুনে আমার ভালো লাগা শুরু করলো। তাই দেরি না করে রিমিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেললাম”।

রিমিঃ আচ্ছা কিভাবে বিয়ে করবো আমরা?
রাফাতঃ প্রথমে কাজি অফিসে যাব তারপর বিয়ের কাজটা সেরে ফেলবো। পরে বাবা মাকে সারপ্রাইজ দেব।

“রিমি একটু বোকা স্বভাবের ছিল তাই খুব সহজেই আমার কথা মেনে নিল”। এরপর রাফাত ভাবে এখন যদি আমরা শারিরীক সম্পর্কেও লিপ্ত হই সেটা হবে বৈধ। তাই রাফাত পরিকল্পনা করে ওর এক ফ্রেন্ডের বাসায় রাতে থাকার সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। এতে মিলি অনিচ্ছা প্রকাশ করলেও রাফাত রিমিকে মানিয়ে নেয়। তার আগে রাফাত নিজের পরিচয় গোপন করে রিমির বাবাকে ফোন দিয়ে সব বলে দেন।

ঘন্টা দুয়েক পর,
রাত তখন 11 টা বাজে।
হঠাৎ দরজায় নক। আর কেউ বুঝতে না পারলেও রাফাত ঠিকই বুঝতে পারে কে এসেছেন। তাই সুন্দর করে রাফাত দরজা খুলে দেয়, আর দেখতে পায় তার মেয়ের এমন অবস্থা।

রিমি এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়ে নিজেকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। এরপর রিমির বাবার সামনেই রিমিকে পুরো ঘটনা খুলে বলে রাফাত। “শেষে রিমি তার বাবাকে ধীক্ষার জানিয়ে বলে আমি তোমার মত বাবার কাছে ফিরে যেতে চাই না। আজ থেকে মনে করবা তোমার মেয়ে মরে গেছে”।

রাফাত এবার মনে করেন তার মায়ের প্রতিশোধ নেওয়া শেষ। এরপর রিমির সাথে সুখে সংসার করা শুরু করে দেন।

নোটঃ কারর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কাউকে মানুষিক ভাবে হেনস্তা করা কিংবা তাকে বাজে প্রস্তাব দেওয়া উচিত নয়। কারন জীবনে চলার পথে কে কখন কোন পরিস্থিতির স্বীকার হবে আমরা কেউ তা বলতে পারি না।

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে