#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৮(অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)
“স. সরো!”
জড়তা নিয়ে বলে উঠল বহ্নি।বহ্নি ভেবেছিল হয়তো আরাব সরবে না।কি’ন্তু বীনা বাক্যে সে সরে গেল।সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আরাব।বহ্নি এর বেশ অ’স্ব’স্তি হচ্ছে।এই ছেলের কা’জ’ক’র্ম কোনো কিছুই তার বোধগম্য হয় না।এই শান্ত তো এই অশান্ত।
“আমরা এখানে কেন এসেছি?”
ডিনার করতে।আরাবের শা’ন্ত ক’ন্ঠ।বহ্নি কোনো প্রতিউত্তর করলো না।চুপচাপ নেমে দাঁ’ড়া’লো। আরাব ও ব্য’তি’ক্র’ম নয়।
নি’র্জ’ন পরিবেশে এমন একটা ধাবা বেশ আ’ক’র্ষ’নী’য়।আরাব আর বহ্নি গিয়ে বসল একটি কোনায় তারপর দুজনেই নিজেদের ডিনার শেষ করে নিলো।ডিনার শেষে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে বিল মিট করছে আরাব আর বহ্নি বাইরে এসে দাড়িয়ে আছে। আরাব বহ্নি এর কাছে এসে দাড়ালো।নি’স্ত’ব্ধ’তা থাকলে ও বাতাসের কমতি নেই জায়গাটাতে।মৃ’দু’ম’ন্দ বাতাস বেশ ভালোই বইছে।
“লং ড্রাইভে যাবে?”
আরাব হঠাৎই জি’জ্ঞে’স করে উঠল। কয়েক মিনিটের জন্য ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল বহ্নি। এতো রাতে লং ড্রাইভ? প্র’শ্ন’টা গুটি কয়েকবার নিজের মাথায় ঘুরলো।
“আমি খুব টা’য়া’র্ড।বাড়িতে যেতে পারলে বেশি ভালো লাগতো!কি’ন্তু যখন তোমার যেতে ই’চ্ছে হয়েছে তখন কি আর আমার ই’চ্ছে’র দাম থাকবে?”
বহ্নি এর কন্ঠে অভিমান এর রেশ স্প’ষ্ট।সেই সাথে প্রকাশ পাচ্ছে ক্ষো’ভ। কিন্তু এই ক্ষোভ কিসের?কার ওপর এই ক্ষো’ভ? আরাবের ওপর! কেন? কারণ সে বহ্নি এর সাথে থাকতে চেয়েছে!
এক এক করে কথাগুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকলো আরাবের।আরাব আর কিছু বলল না।চুপচাপ বহ্নি কে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল।
_____________
নি’স্ত’ব্ধ রজনীতে সকলে ঘুমে বিভোর। আরাব ও এপাশ ওপাশ করতে করতে একটু আগে পাড়ি জমিয়েছে ঘুমের দেশে।শুধু নিদ্রাহীন বহ্নি। তার মাথায় যে বিশাল প’রি’ক’ল্প’না। আজকে আর বহ্নিকে জড়িয়ে রাখেনি আরাব।তাই বিনা বাধায় খাট থেকে নেমে গেল বহ্নি।টেবিল ল্যা’ম্প জ্বা’লি’য়ে শুভ্র কাগজে ফেলতে লাগলো কালির আচড়।
গতকালের মতো আজ ও আরাব দেরিতে জাগলো।অ’র্থ্যা’ৎ বহ্নি এর পরে।কাল রাতে অনেক কিছু ভেবেছে সে।সাথে সি’দ্ধা’ন্ত ও নিয়েছে।বহ্নি কে আর কোনো কিছুতে জোর করবে না ধীরে ধীরে উ’প’ল’ব্ধি করাবে সবটা।সাথে সে নিজে ও করবে।
একটা ছেলে মানসিক ভাবে যতটা স্ট্রং হয় একটা মেয়ে ততটা হয় না।সবটা স্বা’ভা’বি’ক ভাবে আরাব মানতে পারলে ও বহ্নি পারেনি।আর তার জন্য মেয়েটাকে সত্যি একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন।
______________
ফ্রে’শ হয়ে বের হওয়ার পর ও বহ্নি এর দেখা মিলল না।আরাব ভাবলো হয়তো নিচে আছে সেজন্য সে ও নিচে নেমে গেল।কি’ন্তু নিচে মনিমা একটা কাগজ হাতে নিয়ে বসে আছে। পেছন থেকে মনিমার অ’ভি’ব্যা’ক্তি ঠিক বুঝলো না আরাব। কিন্তু সামনে গিয়ে দেখলো মনিমার মুখ বেশ থমথমে। আরাব এর দিকে এক নজর তাকালেন তিনি। তারপর কাগজ টা আরাবের হাতে দিয়ে চলে গেলেন নিজের ঘরে। আরাব এমন ব্যবহারে বেশ অবাক হলো তারপর কাগজ টি নিয়ে পড়তে গিয়েই থমকে গেল সে।কারণ কাগজটিতে লেখা আছে,
“মনিমা,
চিঠিটা পেয়ে আপনি কি ভাববেন জানি না। তবে কথাগুলো চিঠির মাধ্যমেই আপনাকে জানাতে হ’চ্ছে। যেদিন প্রথম আপনি আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন সেদিন আমি ভেবেছিলাম এবার হয়তো একটা মায়ের অভাব আমার ঘুচবে! কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখুন,একটা মা পেতে গিয়ে আমাকে নিজের অনুভুতি গুলো গলা টিপে মেরে ফেলতে হলো।একটা ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে তার ভাইকে নিয়ে সংসার করা আপনাদের দৃ’ষ্টি’তে স্বাভাবিক।কিন্তু আমার পক্ষে সেটা মানা স’ম্ভ’ব নয় মনিমা।আপনার ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই শুধু এটুকু বলবো,এনগেজমেন্ট এর দিন একজন ক’ন্যা’দা’য়’গ্র’স্থ পিতার কাছে তার দুই মেয়ের বিয়ের কথা জানানোর আগে একটা বার আমার কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতেন দীঃর্ঘ একমাস যাবত যে বাড়ির বড় ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে সেই বাড়ির ছোট ছেলেকে নিজের স্বা’মী হিসাবে মানতে পারবো কি না!
ইতি বহ্নি। ”
চিঠিটা পড়েই এক মু’হূ’র্ত দেরি করলো না আরাব ছুটে গেল নিজের ঘরে। আরাবের বি’শ্বা’স বহ্নি তার জন্য ও একটা চিঠি রেখে গেছে।
____________________
সকাল বেলা বাড়ির দরজা খুলেই যে একটা খাম পাবে তোহান আজাদ সেটা তিনি ভাবেননি।খামের ওপর বেশ বড় করে লেখা বহ্নি। তোহান আজাদ অবাক হলেন।কি আছে খামের মধ্যে! সেটা দেখার জন্য খামটি খুলে বের করলেন একটা চিঠি।যেখানে লেখা আছে,
নামটা দেখেই বুঝে গেছ হয়তো এটা আমি।হ্যাঁ বাবা। আমি বহ্নি। তোমার সেই মেয়ে যার অনুভূতির দাম দিতে তুমি ব্যার্থ।সেই ছোট থেকেই আমি একা ছিলাম। স’ঙ্গী বলতে শুধু তানভি।তুমি কখনোই আমাকে বোঝার চে’ষ্টা করোনি।এন”গে’জ’মে’ন্ট এর আগে যদি একটা বার আমাকে জি’জ্ঞে’স করতে আমি আরাব কে চায় কি না! কিন্তু তুমি সেটা করোনি।আর আজ সে কারণেই আমাকে এত বড় একটা সি’দ্ধা’ন্ত নিতে হলো।আমি তোমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে যা’চ্ছি বাবা।হয়তো আর দেখা হবে না।শুধু একটা কথাই বলবো,তোমাদের ওপর আমার কোনো অভিযোগ নেই।
বহ্নি। ”
চিঠিটা পড়েই চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এলো তোহান আজাদ এর। মেয়েদের সুখী করতে গিয়ে যে এত বড় একটা অন্যায় তিনি করে ফেলেছেন সেটা বহ্নি চোখে আঙুল দিয়ে না দেখিয়ে দিলে তিনি বুঝতেই পারতেন না।কি’ন্তু আফসোস এখন আর তিনি তার ভুল শুধরাতে পারবেনা।সারাটা জীবণ আ’ত্ম’গ্লা’নি তে ভুগতে হবে তাকে।
_____________________
সকাল সকাল ও’য়া’র্ড’ব’য় এর হাত দিয়ে চিঠি এলো ইয়ারাব আর তানভি এর জন্য ব’রা’দ্দ কেবিনে। বাকিদের মতো এরা ও বেশ অবাক হলো এমন কাজে তবে চিঠির ওপর বহ্নি এর নাম লেখা। তানভি চিঠিটা খুলে পড়তে শুরু করলো সেখানে লেখা ছিল,
“তানভি চিঠিটা পড়ে একটু ও কাঁদবি না বলে দিলাম।আমি চলে যাচ্ছি। তবে যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম তোকে একটা সরি বলবো।কারণ আরাবকে বিয়ে করার একমাত্র কারণ ছিল ইয়ারাব। ইয়ারাব এর ক্ষ’তি। কিন্তু যে মানুষটা আমার ছোট বোনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে তার ক্ষতি করার ক্ষমতা এখনো হয়নি আমার।তানভি, তিন দিনে তোর ইয়ারাব এর প্রতি যে ভালোবাসা আমি দেখেছি আমি স’ত্যি খুশি।তুই সারাটা জীবন সুখে থাক সেটাই চায় আমি।হোকনা সেটা আমার প্রথম অনুভূতির সাথে। ”
প্রথম অনুভূতি। কথাটা বারবার মাথায় বাড়ি খাচ্ছে তানভি এর।এই সহজ বিষয়টা কি এতদিন চোখে পড়েনি তানভি এর।নাকি ই’চ্ছে করে দেখতে চায়নি সে।সত্যি তো বহ্নি এর তো ইয়ারাব এর সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু তানভি কি সুন্দর, একটা ভুল বোঝাবুঝি কে সামনে দাঁড় করিয়ে সেই মানুষটার সাথেই ঘর বেঁধেছে তাও আরাব বহ্নিরই সামনে।বহ্নি তাকে বলেছিল সে চাইলে এ বিয়ে করতে পারে এতে বহ্নি এর কোনো আপত্তি নেই। কি’ন্তু সে কথার পেছনে লুকিয়ে থাকা অভিমান টা একটাবার বুঝতে পারলো না তানভি।নিজেকে অনেক বেশি ছোট লাগছে তানভি এর।যে বোন মায়ের থেকে কোনো অংশে কম ছিল না সেই বোনের স্ব’প্ন কে মাটি চাপা কি করে দিতে পারল তানভি।বুকের ভেতর টা জ্ব’লে যা’চ্ছে তানভি এর।তার বোন যে কতটা ক’ষ্ট বুকে নিয়ে চলে গেছে সেটা হয়তো আচ করতে পারছে তানভি।জ্ব’লে ট’ই’ট’ম্বু’র চোখ দুটি মুছে নিয়ে আবার ও পড়তে লাগলো তানভি,
ইয়ারাব,
স’ম্প’র্কে এখন তুমি আমার বড় ভাসুর।আবার ছোট বোনের স্বামী ও।কি’ন্তু কি অ’দ্ভু’ত তাই না।কয়েকদিন আগে ও আমাদের সম্পর্কটা অন্য কিছু হওয়ার কথা ছিল। আমি বলছি না তুমি নিজের ভালোবাসাকে চুজ করে ভুল করেছো।শুধু এটুকু বলবো,
যে মানুষটাকে দিনের পর দিন স্ব’প্ন দেখালো একটা বার জেনে নেওয়া উচিত ছিল সে মানুষটা তোমার কাঙ্ক্ষিত মানুষ কিনা!”
পরের লেখাটা জোরেই পড়ল তানভি।ইয়ারাব চুপচাপ শুনলো।কোনো প্রতিউত্তর করলো না।কিন্তু চোখের কা’র্ণি’স বেয়ে গড়িয়ে পড়ল কয়েকফোটা জল।এতটা নিচ কাজ করেছে সে। ভাবতেই নিজের প্রতি কেমন জানি বিতৃষ্ণা চলে এলো যেন
_____________
কেটে গেছে দু দুটো বছর।ইয়ারাব এবোর্ড থেকে অপরেশন করিয়ে এসে এখন সে সু’স্থ।বিজনেসে আবার ও জয়েন করেছে সে।সকলে সকলের মতো ভালো আছে।তবে সেই ভালে থাকার মধ্যে ও কোথাও একটা ক’ষ্ট বিরাজ করে।মনিমা এখন বাড়ির স’ম’স্ত সি’দ্ধা’ন্ত সকলেকে সাথে নিয়ে নেই।তোহান আজাদ মাঝে মাঝে তানভি এর সাথে যোগাযোগ করেন কিন্তু যতবারই যোগাযোগ করেন বাবা মেয়ে দুজনেই বহ্নি এর জন্য চোখের জল ফেলে।
ইয়ারাব এর মধ্যে আজ ও অপরাধ বোধ কাজ করে। বারবার একটা কথাই মনে হয় বহ্নি এর সাথে এতবড় অন্যায় করার পর ও একটা বার ক্ষ’মা চাইতে পারেনি সে।আর তানভি এর প্রতিদিনের সাধারণ কাজের মধ্যে একটি হলো নিজের মায়ের সমান বোনের জন্য চোখের জল ফেলা।
______________________
কানাডা এর একটি ছোট্ট শহর টরন্টো।সেখানের একটি ছোট্টবাড়ি ড্রিম হাউজ।সেখানে,
প্রা’ণ’চ্ছ’ল বহ্নি চারিদিকে ছুটে বে’রা’চ্ছে প্র’তি’প’ক্ষে’র হাত থেকে ধরা না পড়ার জন্য।বারবার তার হাত থেকে পা’লা’চ্ছে।সেই সাথে পুরো বাড়ি তার হাসির শব্দে রিনরিন করে উঠছে।দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎই দুটো হাত পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে নিলো বহ্নি এর কোমর।প্রত্যেক বারের ন্যায় এবার ও শীড়দাড়া বেয়ে নেমে গেল শীতল স্রোত।বরফের ন্যায় জমে গিয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো ‘বলি’ষ্ঠ এক বুকে।দুজনেরই বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দ।
বেশ কিছুক্ষণ পর পেছন থেকে সেই শিরশিরানি শব্দ কানে এলো বহ্নির।
“এতো ছোটাছুটি করছো কেন?আমি কি তোমায় খেয়ে ফেলব নাকি?”
ই’ঙ্গি’ত’পূ’র্ণ কথায় বহ্নি এর মুখে দেখা দিল রক্তিম আভা। নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুট লাগালো কিছুদূর তারপর বলে উঠল,
“রোজ, রোজ তোমার এক কথা ভালো লাগে না আমার!বলছি তো আমার এখন খেতে ই’চ্ছা করছে না।তাও তুমি জোর করছো!”
“এখনো তো কিছুই করিনি।যদি আজ রি’পো’র্ট পজিটিভ আসে।আর আমি স’ত্যি বাবা হয় তাহলে এরপর থেকে তুমি দেখতে পাবে এই আরাব কি জিনিস!”
আবার ও রিনরিনে শব্দে হেসে ফেলে বহ্নি। কি’ন্তু হাসি থামার আগেই বেজে ওঠে আরাবের ফোন।ফোনটা পকেট থেকে বের করে একবার নম্বর টার দিকে চোখ বুলায় আরাব। তারপর সেটা নিয়ে চলে যায় বেশ খানিকটা দূ’র’ত্বে। যেখান থেকে বহ্নি এর অ’স্বি’ত্ব বোঝা যাবে না।আরাব দূরে যেতেই হাসি থামিয়ে দেয় বহ্নি। সিঁড়ি বেয়ে সোজা চলে আসে নিজের ঘরে।উহু তার আর আরাবের ঘরে। সে জানে এখন বাংলাদেশ থেকেই ফোন এসেছে।বেলকনিতে রাখা দোলনাটাতে বসে পড়ে বহ্নি। আর হিসাব মেলাতে থাকে গত দু বছর এর ঘটনার।
নিজের পক্ষে যতটা স’ম্ভ’ব সকলের দোষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চলে আসে বহ্নি।সকলের জন্য তাদের দোষের চিঠি ব’রা’দ্দ থাকলে ও আরবের জন্য ছিল অন্য কিছু। সেদিন,
🍁🍁🍁🍁
একছুটে নিজের ঘরে চলে আসে আরাব।সারা ঘর তন্ন তন্ন করে খোঁ’জে কিন্তু কোনো চিঠি পায়না।সারাদিন বহ্নি এর চিন্তায় কেটে যায় আরাবের। তবে গভীর রাতে ফোন আসে তার ফোনে।ন’ম্ব’র দেখেই আরাব বুুঝতে পারে এটা বাইরের ন’ম্ব’র। সেজন্য সাথে সাথে রিসিভ করে সে।তবে বহ্নি এর কথাগুলোর পিঠে আর কিছু বলে উঠতে পারে না সেদিন। শুধু এটুকু বলেছিল,
“ভাই যেদিন এর্বোড থেকে ফিরতে তার পরের সপ্তাহে আমি কানাডাতে যাবো!”
🍁🍁🍁
“আঙ্কেল (বহ্নির বাবা) এখন সুস্থ আছে। ডোন্ট ওয়ারি!”
বহ্নি এর ভাবনার মাঝে বহ্নি এর পাশে বসে বলে ওঠে আরাব।
“তোমাকে ফেরার কথা বলেনি?”
“সে আর বলতে! তারা তো আর জানে না আমি আমার পুরানে বউ নিয়ে এখানে নতুন করে সংসার পেতেছি তাই যতবার ফোন করে সকলেই বলে দেশে ফিরে তোমাকে খুঁ’জে বের করতে।কিন্তু যে পাখি আমার কাছেই আছে তাকে কেন খুজতে আবার ও বাংলাদেশ যাবো বলোতে!”
কথাগুলো বলেই বহ্নি এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে আরাব।পেটে আলতো করে মুখ গুজে জি’জ্ঞে’স করে ওঠে,
“তোমার টেনশন হচ্ছে না?”
“একটু!”
“ডোন্ট ওয়ারি।আজকেই রি’পো’র্ট পেয়ে যাবো!”
“হুম!”
আরাবের সিল্কি চুলের মাঝে হাত বোলাতে বোলাতে জবাব দেয় বহ্নি।
বহ্নি যে কানাডাতে আরাবের সাথে আছে সেটা কেউ জানে না।সেই শ’র্তে’ই আরাবকে নিজের ঠিকানা দিয়েছিল বহ্নি। সেই সাথে বলেছিল তার খবর যদি পরিবারের কেউ জানে তাহলে এবার হারালে আর কখনো ফিরে আসবে না সে।আরাব ও মেনে নিয়েছিল বহ্নি এর কথা।ইয়ারাব সু’স্থ হওয়ার মাঝে কানাডাটে বিজনেস এর একটা নতুন অংশ খোলে এবং এখান থেকেই সেটা দেখাশোনা করে।
বহ্নি চাইলেই পারতো আরাব এর থেকে দূরে সরে আসতে। কিন্তু কেন? সে কেন এ’কা’কি’ত্ব বেছে নেবে জীবনে।যে মানুষগুলো তাকে কষ্ট দিয়েছে সে মানুষ গুলোর ক্ষ’তি বহ্নি করতে পারবে না। কি’ন্তু নিজে কেন কষ্টে থাকবে! একটা মেয়ের একাকি জীবন অনেক কষ্টের। আর সেই ক’ষ্টে’র জীবন বেছে নেয়নি বহ্নি। প্রত্যকে নিজেদের ভালো থাকা টাই দেখেছে।তাই বহ্নি ও নিজের মতো করে ভালো থাকার চে’ষ্টা করল।বহ্নি জানে শুধু একটুখানি ক্ষ’মা চাওয়ার জন্য ওই মানুষ গুলো প্রতিনিয়ত ছটফট করে। কি’ন্তু ব’হ্নি সে সুযোগ দেবে না।সারাটা জীবন আ’ত্ম’গ্লা’নি’তে ভোগাটাই তাদের শা’স্তি।
আরাব বহ্নি এর কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেছে। ঘু’ম’ন্ত আরাবের মাথায় আলতো করে ঠোঁ’ট স্পঃর্শ করল বহ্নি। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
“আমি তোমার #প্রয়ণ_স্রোতে নিজেকে ভাসিয়েছি আরাব।সাথে সুখী ও আছি।শুরুর দিকটা ক’ষ্ট’ক’র ছিল তবে এখন এই পৃথিবীতে সুখী মানুষ গুলোর মধ্যে আমি ও একজন।”
একথাগুলো কানে যাওয়ার পরেই ঘুমের ভান করে থাকা আরাবের ঠোঁ’টের কোনায় ফুটে উঠল চমৎকার হাসি।
সমাপ্ত।