#প্রণয় স্রোতে
#পর্বঃ৩
#লেখিকা আরোহি জান্নাত (ছদ্মনাম)
বিশ্রাম এর জন্য নিজের ঘরে এসে বসেছে তানভি।একটু পরেই পা’র্লা’র এর লোকেরা আসবে।তখনই ঘরে ঢুকলো ইয়ারাব।চোখ মুখ এখনো বাকিয়ে রেখেছে সে।তানভি খেয়াল করল বিষয়টি।
“আপনার কি কিছু হয়েছে?”
জি’জ্ঞে’স করে উঠল তানভি। ইয়ারাব উত্তর দিল না। ধীর পায়ে এগিয়ে এলো তানভি এর দিকে। হঠাৎ ইয়ারাবকে এগিয়ে আসতে দেখে ভড়কে গেল তানভি।এমন কাজের কারণ খুঁ’জে পেল না সে।তবে ইয়ারাব এর চাহনি যেন সুবিধার ঠেকছে না তার কাছে। ইয়ারাব তানভি এর অনেক কাছে এগিয়ে আসতেই আটকে দিল তানভি। ভয়ে ভয়ে বলে উঠল,
”আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন!”
তানভি এর কথা শুনে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে ইয়ারাব। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে যায় বেলকনিতে। বেলকনিতে কালকে যেখানে দাড়িয়ে ছিল ইয়ারাব এখনও সেখানেই দাঁ’ড়ি’য়ে আছে সে।কালকে ঠিক তার পাশেই দাঁ’ড়ি’য়ে ছিল তানভি।এখানে দাঁ’ড়ি’য়ে’ই তানভি আদায় করে নিয়েছিল এক কঠিন শর্ত।
গতকাল রাতে,
“আপনাকে কিছু বলার ছিল আমার!”
মিনমিনে ক’ন্ঠে বলে উঠল তানভি।
“হুম বলো!”(ইয়ারাব)
“আপনার কি মনে হয় না যেটা হয়েছে ভুল বোঝাবুঝি হলে ও সেটা আপুনি এর সাথে অন্যায় হয়েছে।”
তানভি এর কথায় চুপ করে রইল ইয়ারাব।কোনো জবাব দিল না। ইয়ারাবকে চুপ থাকতে দেখে তানভি বেশ সাহস নিয়ে বলে উঠল,
“আপুনি এই বিয়েটাতে খুশি নয়!প’রি’স্থি’তি’তে পরে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছে ঠিকই তবে সবটা সহজে মেনে নিতে সময় লাগবে আপুনির!”
“আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি তানভি।কিন্তু আমি কি করব ভেবে পাচ্ছি না!”
“আমি চিনি আপুনিকে।আপুনি একটু চাপা স্ব’ভা’বের। তবে তার থেকে বেশি অভিমানি। তবে একবার যদি ছোট ভাইয়াকে ভালোবাসতে শুরু করে তাহলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে!”
“আমি ও সেটাই চায় তানভি। একজনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করা স’ম্ভ’ব ছিল না আমার প’ক্ষে।সেজন্য তোমার বোনকে ক’ষ্ট দিয়ে বসলাম।বড়রা একটা সলুশান বের করল ঠিকই তবে সেটা ও পা’র’ফে’ক্ট না।কিন্তু এখন আমার কি করা উচিত ভেবে পাচ্ছি না আমি।”
“আমার মনে হয় আপুনি ছোট ভাইয়ার সাথে থাকতে থাকতে সবটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে!”
“তবে?”
ভ্রু কুচকে জি’জ্ঞে’স করে উঠল ইয়ারাব।
“তবে যতদিন না ওদের সবটা ঠিক হবে ততদিনে আমরা ও দূ’র’ত্ব বজায় রাখবো!”
তানভি এর কথা শুনে চোখ বড়বড় করে তাকায় ইয়ারাব মূ’হু’র্তে’ই উ’ত্তে’জি’ত হয়ে বলে ওঠে,
“এই মেয়ে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও থাকার প্লান করছো নাকি?”
“না।আমি সেটা বলিনি।তবে আমি চা’চ্ছি যে,”
ইতস্তত করে উঠল তানভি।কথাটা ঠিক বলে উঠতে পারছে না। ইয়ারাব নিশ্বব্দে হাসল তারপর তানভি এর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,
“শা”(স্তি টা কঠিন। তবে মেনে নিলাম।আগে ভাই এর সংসার ঠিক করব তারপর নিজের!”
ইয়ারাব এর কথায় স্ব’স্তি’র হাসি ফুটে উঠল তানভি এর মুখে।
_____________________
ঘরে ঢুকতেই একের পর এক বালিশের ব’র্ষ’ণ শুরু হলো আরাব এর ওপর।হ্যাঁ! বহ্নি ই এক এর পর এক বালিশ ছুড়ে দিচ্ছে আরাব এর গায়ে।আরাব প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেলে ও বিষয়টি বুঝতে সময় নিলো না।বালিশ সব ছোড়া শেষ হলে বেডসাইড থেকে ফুলদানি টা ছুড়ে দিল আরাবের পায়ের কাছে।একটুর জন্য পায়ে লাগেনি আরাবের।রাগে হিসহিস করছে বহ্নি।বহ্নি কে এত রেগে যেতে দেখে আরাব ভেবে পেল না কি করবে! বহ্নি আবার ও একটা সোপিছ তুলে ছুড়ে দেওয়ার আগেই আরাব ছুটে এলো বহ্নি এর কাছে। বেশ ধমক দিয়ে বলে উঠল,
“কি করছ তুমি?পাগল হয়ে গেছ?এভাবে জিনিস কেন ছুড়ছ?”
“তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে কোলে নেওয়ার। আমার অনুমতি না নিয়ে আমাকে বেলকনি থেকে নিয়ে আসার।”
রাগে ফোসফাস করতে করতে বলে উঠল বহ্নি। বিষয়টা এবার বোধগম্য হলো আরাবের।বহ্নি এর আর একটু কাছে এগিয়ে এসে বলে উঠল,
“সারারাত বেলকনিতে তোমাকে রাখব তুমি ভাবলে কি করে?”
“মানে?”(বহ্নি)
“মানে তখন তোমার মাথা গরম ছিল তাই কিছু বলিনি।কিন্তু তাই বলে তোমায় একা একা বেলকনিতে ফেলে রাখতাম আমি? যদি তুমি বধু নির্যাতনের মামলা করো আমার নামে?”
আরাবের এমন রসিকতায় গা যেন জ্ব’লে উঠল বহ্নির।আরাবের দিকে তেড়ে গিয়ে ওর কলার চেপে ধারার আগেই অ’স্ফু’ট’স্ব’রে আর্তনাথ করে বসে পড়ল মাটিতে।আরাবের পায়ে জুতা থাকায় রুমের মধ্যে পড়ে থাকা ভাঙা ফুলদানির অংশ পায়ে লাগিনি তার।কি’ন্তু বহ্নি খালি পায়ে থাকায় তা বিধে গেছে তার পায়ে।বহ্নি এভাবে বসে যাওয়ায় আরাব ও ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বসে পড়ল বহ্নি এর পায়ের কাছে।লালচে রক্তে তখন ফ্লো’র মাখামাখি। কোনো কথা না বলে বহ্নি কে দ্বিতীয় বারের মতো কোলে তুলে নিলো আরাব।বহ্নি বাঁ’ধা দেওয়ার চেষ্টা করল তবে আরাব এর চোখ রাঙানি দেখে আর কিছু বলার সাহস হলো না।এই ছেলেটা কেমন যেন! নিজের অধিকার ঠিক আদায় করে নেয়। সারাদিন এর সাথে ঝগড়া করা হলে ও দিন শেষে নিজের কাজ ঠিক হাসিল করে নিবে সেটাই বহ্নি এর বিশ্বাস।
বহ্নি কে খাটে বসিয়ে পায়ে এ’ন্টি’সে’প্টি’ক লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল আরাব।তারপর ফ্লো’র থেকে বালিশ গুলো তুলে এনে হাতে ধরিয়ে দেয় বহ্নি এর।নিজে ও বসে পড়ে বহ্নি এর পাশে। ভাবেলাশহীন হয়ে বলে ওঠে,
“নাও এবার মারো!তবে পায়ে ব্যা’থা নিয়ে ছোটাছুটি করো না!”
আরাবের কথায় হ’ত’ভ’ম্ব হয়ে গেছে বহ্নি। এই ছেলেটা কি তার সাথে মজা করছে।বহ্নি নি’শ্চু”প হয়ে বসে থাকায় এবার বহ্নি এর দিকে ভালো করে তাকায় আরাব।তারপর খুব শা’ন্ত ক’ন্ঠে’ই বলে ওঠে,
“তিতু খাওয়িয়ে কখনো কারো ওপর থেকে প্র”তি’শো’ধ নেওয়া যায় না।আমায় বলতে পারতে আমি তেমাকে হে’ল্প করতাম!”
আরাব যে বহ্নি এর কারসাজি ধরে ফেলেছে সেটা বুঝতে বেগ পেতে হলো না বহ্নি এর।সাথে সাথে চোখ টা নামিয়ে নিলে বহ্নি। যতই হোক ধরা পড়ার পরে চোখে চোখ রেখে কথা বলা যায় না নিশ্চয়।
“মেরে ফেলি ইয়ারাব কে? কি বলো?”
আরাবের এমন শা’ন্ত ক’ন্ঠে এমন কথা শুনে বি’স্ফো’রিত চোখে তাকিয়ে থাকে বহ্নি। তবে আরাব নি’র্বি’কা’র! যেন খুব স্বা’ভা’বিক কোনো কথা বলছে সে।
“তু.তুমি এসব কি বলছো? তোমার ভাই হয় ইয়ারাব!”
কাঁ’পা কাঁ’পা ক’ন্ঠে বলে উঠল বহ্নি।
“দেখ বহ্নি, আমার ভাই তোমাকে রি’জে’ক্ট করে তোমার বোনকে বিয়ে করেছে! এখানে আমার ভাই আর তোমার বোন দুজনেই দোষি।একজন তোমাকে ঠকালো,অন্য জন তাকেই বিয়ে করল! এখন যদি ইয়ারাব কে মেরে ফেলি তাহলে আমার ভাই শা’স্তি পাবে সেই সাথে তোমার বোন ও বিধবা হয়ে শা’স্তি পাবে।আর তোমার প্রতিশোধ ও পূরণ হবে।আমি কি’ন্তু সবটা ভেবেই বলছি! তুমি ভেবে দেখ একবার!”
আরাবের কথা শুনে মাথা ভো ভো করে ঘুরছে বহ্নি এর।ইয়ারাব আর তানভি তার সাথে অন্যায় করেছে তবে তাই বলে তাদেরকে এত বড় শা’স্তি কখনোই দিতে পারবে না বহ্নি! এখন ও এতটা ও পাষান হয়ে যায় নি সে!
“তুমি এসব কি উ’ল্টো পা’ল্টা বকছো?”(বহ্নি)
“এই আইডিয়া টা ভালো লাগলো না! উমমমম. তাহলে তানভি ভাবি এর সাথে ভাই এর ডি’ভো’র্স করিয়ে দেয়।আমরা ও ডি’ভো’র্স নিয়ে নেয় তারপর তোমার সাথে ভাই এর বিয়ে দিয়ে দেয়!এটা ঠিক আছে? ”
“নাআআআআ!”
বেশ জোরে বলে উঠল বহ্নি।
“তোমার ভাই কে আমি কখনো বিয়ে করবো না।আই জাস্ট হেট হিম।একটা মাসে তোমার ভাই এর প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল কি’ন্তু তোমার ভাই আমার সাথে যে কাজ করেছে তারপর আমার মনে তার জন্য শু’ধু’ই ঘৃ’ণা আছে। ডিড ইউ আ’ন্ড্রা’স’ট্যা’ন্ট দেট!”
আঙুল উঁচিয়ে কথাটা বলে উঠল বহ্নি।
এতক্ষণ নিজের মুখের আদল স্বাভাবিক রাখলে ও এবার র’হ’স্য’ময় হাসি হেসে উঠল আরাব।
“তুমি যে ভাই বা ভাবির কোনো ক্ষতি করতে পারবে না সেটা আমার থেকে ভালো কেউ জানে না বহ্নি। তাহলে শুধু শুধু কেন রাগ পুশে রাখছো।ক্ষ’মা করে দাওনা ওদের।প্লি’জ!”
এতক্ষণে আরাবের কথার আসল মানে বুঝতে স’ক্ষ’ম হলো সে।সত্যি তো সে চাইলে ও ইয়ারাব আর তানভি এর কোনো বড় ধরণের ক্ষ’তি করতে পারবে না। তবে কি এমন ছোট খাটে কিছু শা’স্তি’র জন্য সে আরাবকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলে!
নিজেই নিজেকে প্র’শ্ন করে উঠল বহ্নি।
চলবে,