প্রণয় প্রহেলিকা পর্ব-১৪

0
1200

#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#১৪তম_পর্ব

ধারা কিছু বলার পূর্বেই মাহি বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করে বসলো,
“অনল ভাই এর রুমে ধারা থাকে?”
“ওমা, স্বামীর ঘরে স্ত্রী থাকবে এটাই তো স্বাভাবিক। স্বামী স্ত্রী কি আলাদা রুমে থাকে?”

সুভাসিনীর হাস্যোজ্জ্বল মুখে বলা কথাটা মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে পৌছাতে সময় নিলো মাহির। সে উদ্ভ্রান্তের মতো কিছুসময় তাকিয়ে রইলো। নিউরণ গুলো রেষারেষি করছে একটা শব্দে “স্বামী-স্ত্রী”। তার বিস্মিত নজর পড়লো ধারার উপর। ধারা ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। কপালে তার ঘাম জমছে। মুখশ্রীতে ক্ষীন আতঙ্ক হাটে হাড়ি ভাঙ্গার। অস্পষ্ট দলা পাকানো স্বরে বললো,
“স্বামী স্ত্রী! মানে?”

ধারা উত্তর খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না। মস্তিষ্কটা হুট করেই উইন্ডোজ কম্পিউটারের মতো শাট ডাউন দিয়েছে। মিথ্যের জটলার মাঝে যেনো নিজেই আটকে গেছে। পরমূহুর্তেই নিজের অপারগতার উপর ধিক্কার জানালো সে। সাথেই মাহির সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার পূর্বাভাস পেলো। কিছু বলার আগেই সুভাসিনী অতি উৎসাহের সাথে বলে উঠলো,
“হ্যা, অনল এবং ধারার তো বিয়ে হয়েছে। কি রে ধারা? মাহিকে জানাস নি?”

ধারার উত্তর এলো না। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এক এক করে সব মিথ্যে ফাঁস হচ্ছে এবং সে নির্বাক দর্শকের মতো দেখছে। কারণ করার কিছুই নেই। এদিকে মাহির ভেতরটা চুরমার হচ্ছে। সে যেনো বারংবার সপ্তম আসমান থেকে পড়ছে, আবার কেউ তাকে তুলে ধরছে এবং সে আবার পড়ছে। মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যাচ্ছে। খুব কষ্টে বললো,
“কবে বিয়ে হয়েছে ওদের!”
“আফিয়ার বিয়ের দিন ই”

মাহি মাথা ঘুরে উঠলো। প্রায় এক মাস পূর্বের ঘটনা অথচ তার প্রাণের বান্ধবী নিপুন ভাবে তার থেকে চেপে গেছে। অথচ এই বান্ধবীকেই নিজের প্রেম কবুতর বানাতে বসেছিলো মাহি। স্ত্রীকে দিয়ে স্বামীর কাছে প্রেমপত্র পাঠাচ্ছিলো অজ্ঞাত মানবী। নিজের বোকামীর উপর নিজেই লজ্জিত হলো সে। মাহি দাঁড়িয়ে রইলো ভুতের মতো। তার মুখে কোনো শব্দ নেই। শুধু স্থির শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের বান্ধবীর দিকে। সুভাসিনী বেগম আজ অতি উৎসাহী। সে প্রফুল্ল কন্ঠে বললো,
“তুমি জানো না, এটা তো জানতাম না। দাঁড়কো তুমি বসো আমি কালোজাম বানিয়ে আনছি। বিয়ের খবর মিষ্টিমুখ করে খেতে হয়”

প্রচন্ড লজ্জা, ক্রোধ, অপমানে বিব্রত মাহি আজ দাঁড়াতে পারছে না। ভেতরটা যেনো চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কোনো মতে বললো,
“আন্টি লাগবে না, বিয়ের খবরে মিষ্টিমুখ হয়ে গেছে। আর মিষ্টি খাবো না। আর এমনেও আমি মিষ্টি তেমন খাই না। আজ চলি, আমার একটু কাজ আছে। ধারাকে দেখতে এসেছিলাম, দেখা হয়ে গেছে”

বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলো মাহি। সুভাসিনী বুঝলেন না ঠিক, মেয়েটার আচারণ বেশ বিচিত্র ঠেকলো তার কাছে। অবাক কন্ঠে বললেন,
“কি হলো! মেয়েটা চলে গেলো কেনো?”

ধারা উত্তর দিলো না, বরং ক্রুদ্ধ বান্ধবীর পেছনে ছুটলো। আকুল গলায় নাম ধরে বেশ কবার ডাকলো কিন্তু মাহি তা উপেক্ষা করলো। একটা রিক্সায় চেপে নিজ গন্তব্যে চলে গেলো। ধারা দাঁড়িয়ে রইলো লোহার কেঁচিগেটে। অসহায়ের ন্যায় মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো। বান্ধবী হারানীর যন্ত্রণা অনুভূত হলো কিশোরীর মনে।

ঘরে ফিরলে সুভাসিনীকে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো ধারা। তার লম্বাটে মুখখানা দেখে সুভাসিনী চিন্তিত গলায় বললেন,
“কি হলো! তোর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো লাগছে কেনো?”

ধারা হতাশ কন্ঠে বললো,
“আসলে কেউ জানতো বিয়ের খবর টা। আমি কাউকে বলি নি”
“ওওওওও”

ধারার কথায় সুভাসিনী ঠিক কি বুঝলেন জানা নেই। তবে তিনি মুখে হাত দিয়ে কিছুসময় ভাবলেন। তারপর ঠোঁটে হাসি একে বললেন,
“আরে, বান্ধবীরা এমন ই হয়। কিছু লুকালেই রেগে যায়। তুই মন খারাপ করিস না। কালকে ভার্সিটি গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরিস। দেখবি ওর মন ভালো হয়ে যাবে, ওর রাগ পড়ে যাবে। তুই বরং রুমে যা আমি কালোজাম বানিয়ে নিয়ে আসছি”

সুভাসিনী রান্নাঘরে চলে গেলেন। ধারা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। বড়মা তো আর জানে না, মাহির এই রাগ যে সে রাগ নয়। ভঙ্গুর হৃদয়ের সুপ্ত রাগ, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিলে যে রাগের উৎপত্তি হয় মাহির রাগটি সেই রাগ। শুধু জড়িয়ে ধরলে যদি কমে তবে তো ভালোই। কিন্তু মাহির সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার সাথে সাথে আরোও একটা সূক্ষ্ম ভয় মনে জন্মালো। বন্ধুমহল যদি জেনে যায় তবে কি হবে! বন্ধুমহল জানা মানে দিগন্ত জানা, দিগন্ত জানা মানে ভার্সিটি জানা। আর ভার্সিটি যদি জেনে যায় তবে কি হবে! নানাবিধ কুচিন্তা ক্ষুদ্র মস্তিষ্ককে ঘিরে ধরলো। ধারা আর চিন্তা করতে পারলো না। নিজ ঘরে যেয়ে ফোন হাতে নিলো। ডায়াল করলো মাহির নাম্বারে। কিন্তু ফোনটা কেউ ধরলো না। অবহেলায় বাজতে থাকলো মাহির মোবাইল_______

*****

অনল ফিরলো সন্ধ্যার অনেক পরে। জ্যামের মাঝে বসে থেকে থেকে নাজেহাল অবস্থা তার। ঘামে ভিজে গেছে নীল শার্টটা। কপালের সিল্কি চুলগুলোও লেপ্টে আছে ভেজার কারণে। আজ দেরী হবার কারণ প্লাবণ। বিয়েতে কলেজের তেমন কাউকে দাওয়াত দেয় নি সে। তাই আজ পরিচিত শিক্ষকদের বাহিরে খাওয়িয়েছে। অনলের যাবার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু প্লাবণ নাছোড়বান্দা, তাই বাধ্য হয়ে যেতেই হলো। বাসায় এসেই দেখলো ডাইনিং টেবিলে বেশ জটলা। কালোজাম বানানোর জন্য মাছির মতো সবাই আক্রমণ করেছে। জামাল সাহেবের দাঁতের অবস্থা খুব খারাপ। সর্বোচ্চ দশ দাঁত গুনে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ৷ তবুও সে কালোজাম খাচ্ছেন। রাজ্জাক একেবারে ছোট ছোট করে কেটে দিয়েছেন, যেনো বাবা তার খেতে পারে। ইলিয়াস তো হাটছে আর টুপ করে একটা কালোজাম মুখে পুড়ে নিচ্ছে। অনল মাকে দেখে বললো,
“আজ এতো আনন্দের কারণ?”

সুভাসিনী ছেলের মুখখানা ধরে আদর করলেন, তারপর একটা কালোজাম মুখে পুড়ে দিয়ে বললেন,
“কারণ ছাড়া আনন্দিত হওয়া যায় না নাকি!”

অনল উত্তর দিতে পারলো না কারণ মুখ ভর্তি মিষ্টি। এতো আনন্দের মাঝেও এশা আশাকে দেখা গেলো ফ্রিজের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মুখ কুচকুচে কালো হয়ে আছে। অনল মিষ্টি খেয়ে রুবিকে জিজ্ঞেস করলো,
“এদুটো কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেন?”
“শাস্তি দিয়েছি, সাইন্স প্রজেক্টের নামে আকাম করছিলো। দেখো না কালোবাদরের মতো মুখ করে রেখেছে। এজন্য শাস্তি সারাদিন এই ঘরে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে। মানুষ হাটবে, চলবে আর এদুটোকে দেখবে। দেখে দেখে হাসবে। এরপরও যদি না শুধরায় একদম বাহিরের দরজার সামনে দাঁড় করাবো কান ধরিয়ে”

রুবির কথার প্রতিবাদ করলো এশা। বিনয়ী স্বরে বললো,
“সাইন্স প্রজেক্ট ই করছিলাম। ফর্মুলায় হালকা ঝামেলা হয়ে গেছে। সব পরীক্ষা যে সফল হয় তা তো না। কিছু কিছু পরীক্ষা বিফলেও যায়। তবেই তো তাদের বিজ্ঞানী বলে”
“মারবো টেনে এক চ’ড়, বিজ্ঞানী হয়েছেন মহারাণীরা”

রুবির রাম ধমকে দমে গেলো এশা। আশা ও মাথা নামিয়ে নিলো। তারা এখনো কান ধরেই দাঁড়িয়ে আছে। অনল মাথা ঘামালো না বেশি। এই দুটো কখনোই শুধরাবে না। সে ক্লান্ত স্বরে বললো,
“আমার বউ কোথায়?”
“ঘরেই আছে। কত বললাম, আসলো না। মন খারাপ হয়তো”

সুভাসিনী রান্নাঘর থেকে বলে উঠলেন। অনল কিছু একটা ভাবলো তারপর পা বাড়ালো নিজ ঘরের দিকে।

ঘরে ঢুকে ব্যাগখানা রাখলো অনল। তার জিজ্ঞাসু চোখ পুরো ঘরটি একবার দেখলো। ধারাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। টাওয়ালটা ঘাড়ে নিয়ে সে পা বাড়ালো বারান্দার দিকে। তার আন্দাজ সঠিক। মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে আছেন মহারাণী। তার চোখ মোবাইলে আটকে আছে। গোল মুখখানা লম্বাটে দেখাচ্ছে। অনল হাত ভাজ করে হেলান দিলো দরজায়। ঠেস মারা কন্ঠে বললো,
“কি রে ফেলুরানী, এখানে পা ছড়িয়ে কি করছিস”

কন্ঠ কর্ণপাত হতেই ভ্রু কুচকে এলো ধারার। তীর্যক দৃষ্টিতে তাকালো অনলের দিকে। ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো,
“ফেলুরানী বলছো কেনো?”
“৩০ এ ৩ পেয়েছিস, আর কি বলবো? ১০০ মার্কে তো পাবি ১০। ফেল করারো পর্যায় থাকে, তোর সেটাও নেই”

অন্যসময় ধারা তেড়ে আসতো। কিন্তু আজ তা হলো না উলটো ঠোঁট উলটে বললো,
“মহাকান্ড হয়ে গেছে?”
“কি?”

ভ্রু কুচকে অনল শুধালো। ধারা উঠে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললো,
“মাহি না জেনে গেছে আমাদের বিয়ের কথা, রেগে ঘর ছেড়ে চলে গেছে”
“আমাদের বিয়ের কথা জেনে ও ওর বাড়ি ছাড়বে কেনো?”
“ধুর, না। আমাদের বাসায় আসছিলো। বড় মা হাটে হাড়ি ভাঙ্গতেই সে রেগে বেড়িয়ে গেলো। আমি ফোন করছি, ধরছে না”

অনল বেশ উদাসীনতার সাথে বললো, “ও”। তারপর সে ওয়াশরুমে চলে গেলো। ধারা অপেক্ষা করছিলো অনল হয়তো কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কিন্তু শুধু হতাশাই হাতে পেলো। লোকটা একেবারেই নির্বিকার। মিনিট দশেক বাদে, ওয়াশরুম থেকে বের হল অনল। পরণে একটা ট্রাওজার আর কালো পোলো শার্ট। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে তাকালো ধারার দিকে। ধারার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। সে এখনো চিন্তিত চিত্তে মাহিকেই ফোন দিচ্ছে৷ অনল মুখ গোল করে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর টেবিলে বসতে বসতে বললো,
“পড়তে বয়, ফেলুরানী। আর এক মাস আছে। আমি চাই না, মানু্ষ আমাকে ফেলুর বর বলুক”

ধারা তার কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বললো,
“আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় মাহি কি আমার উপরে খুব রাগ করেছে?”
“ওর ইচ্ছে হয়েছে রাগ করেছে। তুই এখন যেটা করতে পারিস, সেটা হলো ক্যালকুলাস বইটা নিয়ে চ্যাপ্টার ১ থেকে শুরু করে ৩ পর্যন্ত ম্যাথ গুলোর সমাধান”

ধারা অনলের মুখোমুখি বসলো, চিন্তিত, ব্যগ্র কন্ঠে বললো,
“অনল ভাই, আমার চিন্তা হচ্ছে”
“কেনো বলতো! কিসের এতো চিন্তা?”
“আজিব, ও আমার ফোন ধরছে না। সেই কখন থেকে আমি ওকেই ফোন করছি। সতেরোবার ফোন করেছি, ধরে নি। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ও যদি বন্ধুত্ব ভেঙ্গে দেয় তখন!”
“ও”

অনলের উদাসীনতায় কিঞ্চিত বিরক্ত হলো। কিছুসময় তীর্যক জ্বালাময়ী দৃষ্টি প্রয়োগ করলো কিন্তু অনলের বিকার হলো না। বিরক্তিভরা কন্ঠে বললো,
“ও, ও ছাড়া তোমার কি কিছু বলার নেই! না থাকলে থাকো, আমার মাথা খেয়ো না”

বলেই উঠতে গেলে হাতখানা টেনে ধরলো অনল। হ্যাচকা টানে তাকে আগের জায়গায় বসালো। কিছুসময় শান্ত দৃষ্টি বিনিময় হলো তাদের মাঝে। তারপর অনল তার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিলো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“তুই একটু বেশি চিন্তা করছিস না?”
“করা উচিত নয়?”
“একেবারেই না। হ্যা, মাহি তোর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। এমন তার আমার প্রতি একটা আবেগ ছিলো। কিন্তু আমি তো আমার উত্তর দিয়েছি। আমার মনের উপর কর্তৃত্ব আমার একান্ত নিজস্বের। আমার ওকে প্রত্যাখান করায় তো তোর কোনো দোষ নেই। আমাদের বিয়ের আগেও আমি তার প্রেমপত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। সুতরাং এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে চাপ দিস না। বরং এটা ভাব ফেলুরানী থেকে কিভাবে ধারারানীতে ফেরা যায়! আমি তো ভেবেছি, তুই ৩ পাওয়ার লজ্জায় গা ঢাকা দিয়েছিস। আমাকে হতাশ করলি রে ধারা। শেষমেশ আমার বউ ফেল্টু?”

অনলের কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো ধারা। এতোসময় খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। কুচিন্তারা মস্তিষ্ক দখলে নিয়ে ছিলো। কিন্তু এখন যেনো সেই চিন্তার ঘন কালো মেঘগুলো সরে গিয়েছে। মনমন্দিরে কুসুমপ্রভা উঁকি দিয়েছে। কোনোমতে হাসি থামিয়ে বললো,
“তাহলে আমার কি করা উচিত?”
“ওই যে বললাম, ক্যালকুলাস”
“যথাআজ্ঞা মাষ্টারমশাই”

অনল নিঃশব্দে হাসলো। বা হাতটা অজান্তেই চলে গেলো ধারার গালের কাছে। আলতো হাতে হালকা টেনে দিলো সে। সাথে সাথেই জমে গেলো ধারা৷ হৃদপিন্ডের রক্তস্রোত যেনো বাড়লো। ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে রইলো। সামনে থাকা মানুষটির দিকে। এই অনুভূতিটির নাম কি! ভালোলাগা! আবেগ নাকি প্রণয়!

******

ক্লাসরুমে ঢুকতেই মাহির দেখা পেলো ধারা। আজ একটু তাড়াতাড়ি ই এসেছে। অনলের ক্লাস না থাকা সত্ত্বেও মানুষটিকে ঠেলে উঠিয়ে সকাল সাতটায়। তারপর টেনে হিচড়ে তাকে নিয়ে এসেছে কলেজে। অবশ্য এতে ধারার দোষ নেই, কারণ নানাভাই এর হুকুম ধারা একা কোথাও যাবে না। গেটের থেকে একটু দূরে বাইক থামতেই বিনাবাক্যে ধারা ছুটলো ভার্সিটির দিকে। কারণ এখন মুখ্যম হলো মাহির মুখোমুখি হওয়া। অনল পিছন থেকে ডাকলো,
“আস্তে যা”

কিন্তু ধারা তা কানে তুললো না। সে যা ভেবেছে তাই হয়েছে, মাহি আজ তার জন্য কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে অপেক্ষা করে নি। সোজা ক্লাসে এসে পড়েছে। মেয়েটা বড্ড অভিমানী, ধারার ভাষায় প্রচুর সেন্টি খায়। তিল থেকে তাল খসলেই তার মুখ ভার হয়ে যায়। তবে ধারার জানা আছে অভিমান কিভাবে ভাঙ্গানো যায়। সে সোজা যেয়ে মাহির পাশে বসে পড়লো। ব্যাগ থেকে একটা ক্যাডবেরির বড় চকলেট বের করলো। চকলেটটি অবশ্য জোর পূর্বক অনলকে দিয়েই কেনানো হয়েছে। কারণ সেটা মাহির পছন্দ। সকাল সকাল এই চকলেটের জন্য বেঁচারাকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কিন্তু বিবাহিত মানুষের গণতন্ত্র একটাই, বউ এর দাবি। বাঁচো, ম’রো মানতেই হবে। অনলের ও সেটাই করতে হয়েছে। সেই কথা না হয় তোলা থাক। চকলেটটি এগিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো,
“দোস্তো, সরি। আসলে সব কিছু এমন ভাবে হয়েছে আমি বুঝতে পারছিলাম না। রাগ করিস না”

ধারা ভেবেছিলো কাজ হবে। কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে মাহি উঠে দাঁড়ালো। বিনাবাক্যে নিজের ব্যাগ কাঁধে নিলো। গিয়ে বসলো ধারার অতীব অপছন্দের ক্লাসমেট মাধবীর পাশে……….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে