#প্রণয়_প্রহেলিকা (কপি করা নিষিদ্ধ)
#১২তম_পর্ব
একটা সময় ফোনটা রিসিভ হলো। ধারা আতঙ্কিত কন্ঠে বললো,
“অনল ভাই, আমি ধারা। আমরা মার্কেটে আটকা পড়েছি। প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো। বাসা থেকে দু রোড সামনে সে কাপড়ের মার্কেট সেটা”
ধারার কথা শেষ হবার আগেই ফোন কেটে গেলো। ধারা আবারো ফোন দিলো কিন্তু ফোন ধরলো না কেউ। চিন্তায় পড়ে গেলো ধারা, অনল কি আসবে না। বাহিরে তীব্র শব্দ শোনা যাচ্ছে, ভাঙ্গচুর হচ্ছে, লাঠালাঠি হচ্ছে। শব্দগুলো কর্ণকুহরে আসতেই বুকে জমা ত্রাশ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারা জমজদ্বয়ের হাত শক্ত করে ধরে বয়ে রইলো। এশা এবং আশার মুখ থমথমে, সারাক্ষণ দুষ্টবুদ্ধি মাথায় নিয়ে ঘোরা মানুষও যখন শান্ত হয়ে যায় বুঝতে হবে পরিস্থিতি কত ভয়ানক। দোকানী পুলিশকে ফোন দিলো। আতঙ্কিত কন্ঠে বললো,
“স্যার, আমি সমবায় মার্কেটের একজন দোকানদার। এখানে কিছু ছেলেপেলে মারপিট করছে, দোকান ভাঙ্গচুর করছে। আমি শাটার দিয়ে দোকানেই বসে রয়েছি। স্যার, একটু জলদি আসুন। আমার এবং কাস্টোমারের জীবন ঝুকিপূর্ণ”
ওপাশ থেকে ইন্সপেক্টর কি বললো বোঝা গেলো না। ধারা চুপ করে বসে আসে। মনে মনে সকল দোয়া দুরুদ পড়ছে। সে নিজের জন্য আতঙ্কিত সেটা কিন্তু নয়। সে আতঙ্কিত ছোট বোনগুলোর জন্য। নিজ দায়িত্বে বেশ চড়াও হয়ে তাদের মার্কেটে নিয়ে এসেছে। বড় মা কে বলেছে,
“আরে আমি ওদের খেয়াল রাখতে পারবো। আমার বয়সে তুমি তো মা হয়ে গিয়েছিলে আর আমি এই দুটো সামলাতে পারবো না। আর মার্কেট তো কাছেই। যাবো আর আসবো”
সেই বড়াই সব ধুলোয় মিশে গেছে। এই বিপদে পড়বে জানলে কখনোই এমন বড়াই করে আসতো না। ভয়, আতঙ্ক, ত্রাশে তার কপালে ঘাম জমছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। বিনয়ী স্বরে দোকানীকে বললো,
“আংকেল, একটু পানি হবে?”
দোকানী স্মিত হেসে পানির বোতল এগিয়ে দিলেন। কিন্তু পানিটা খাওয়া হলো। শাটারের উপর তীব্র আঘাতের শব্দ এলো। দা”ঙ্গা”কারীরা দোকান অবধি চলে এসেছে। হয়তো শাটার ভেঙ্গে দোকানে হামলা করার ধান্দা। ধারা কেঁপে উঠলো। দোকানী বললো,
“ভয় পেও না, আমার শাটার মজবুত আছে। ঢুকতে পারবে না। আর আমি ভেতর থেকে তিনটা তালা দিছি”
ধারা দোকানীর কথায় আশ্বস্ত হতে পারলো না। বুকে জমা ভয়টা তীব্র আকার নিলো। তারা কি সত্যি ঢুকে পড়বে! তারপর কি হবে! আচ্ছা অনল কি সত্যি আসবে না! অনলের কথা মনে পড়তেই পুনরায় ফোন করলো তাকে। কিন্তু এবারো হতাশাই জুটলো। এই আতঙ্কের মধ্যেও আশা এশাকে খোঁচালো। ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভয় পাইছিস?”
“না! নিরস্ত্র বিধায় চুপ করে আছি। সাহসী আমি বটেই তবে নির্বুদ্ধি নই। খালি হাতে বাঘের ডেরায় যাই না”
“কত গোপ মারবি, ফেকুচন্দ্র! স্বীকার কর ভয় পাইছিস”
“আমি কি তোর মতো ভীতু?”
দুজনের মধ্যে বেশ রেষারেষি লাগলো। একেই বিপদ, কিভাবে বাসায় যাবে মাথায় আসছে না। উপরন্তু জমজদ্বয়ের কিচিরমিচির শুনে ক্রোধ সামলাতে পারলো না ধারা। ঝাঁঝালো স্বরে বললো,
“চুপ, একদম প্যাপু করবি না। ঝিম ধরে বসে থাক। আরেকবার যদি টু শব্দ করেছিস তো শাটার খুলে দুটোকে বাহিরে দিয়ে আসবো”
ধারার রামধমক কাজে দিলো। দুজনে সাময়িক কালের জন্য চুপ করে গেলো ঠিকই কিন্তু এশা ফাকতালে ফিসফিসিয়ে বললো,
“ভয়ে মহিলার মাথা আওলায়ে গেছে। চুপ থাকাই শ্রেয়”
সময় অতিবাহিত হলো। শাটারের উপর আঘাতের মাত্রা কমলো। ধারা পা এলিয়ে বসে আছে। তার কোলে জমজদ্বয় মাথা দিয়ে অর্ধশোয়া। দোকানী তার কাজ করছে। যেনো কিছুই হয় নি। হঠাৎ সাইরেনের আওয়াজ কানে এলো। মানুষের ছোটাছুটির শব্দ ও কানে এলো। কিছুমানুষের আর্তনাদ ও শোনা গেলো। ধারার সোজা হয়ে বসলো। বেশ কৌতুহল তার মুখে। দোকানী বললো,
“পুলিশ চলে এসেছে, এখন ভয় নেই। এগুলোকে পি’টা’য়ে সোজা করে দিবে। এখন নিশ্চিন্ত হয়ে যাও”
ধারা মৃদু হাসলো। কিন্তু বুকে একটা চাপা কষ্ট জমা হলো। অভিমান হলো অনলের উপর, সে ধারার বিপদ জেনেও এলো না। চোর ধরার ঐ দিন লোকটার বেশ ভয়ার্ত চেহারা দেখেছিলো ধারা। ভেবেছিলো হয়তো কঠিন মানুষটির হৃদয়ে তার প্রতি টান রয়েছে। তাই তো তাকে হারাবার ভয় ছিলো। কিন্তু সবকিছু মিথ্যে লাগছে। এই অভিমানের কারণটি জানা নেই ধারার। তবে চিনচিনে তীক্ষ্ণ ব্যাথা হৃদয়ের অন্তস্থল ছেয়ে গেলো। এশা বলল,
“ধারাপু, এবার বাড়ি যেতে পারবো মনে হয়”
ধারা উত্তর দেবার আগেই শাটারে তীব্র আঘাত কর্ণপাত হলো। আঘাতটি লাঠির নয়, হাতের। দোকানী চিন্তিত হয়ে পড়লো। গ্যাঞ্জাম থেমে গেলে শাটারে কে আঘাত করবে। তখন ই গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠ শোনা গেলো,
“ধারা, এশা, আশা। তোরা কি এখানে? ধারা? এখানে থাকলে উত্তর দে”
কন্ঠটি চিনতে সময় লাগলো না। মূহুর্তেই বুকের মধ্যস্থলে জমা মেঘমেদুর কেটে গেলো ধারার। অভিমান জল রুপে নয়নে জমলো। ভেজা কন্ঠে বললো,
“অনল ভাই, আমরা এই দোকানে”
দোকানী কিছু বোঝার আগে তাকে বললো,
“আংকেল প্লিজ শাটার খুলে দেন, আমার বর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে”
দোকানী সময় নষ্ট করলো না। তাড়াতাড়ি খুলে দিলেন দোকানের শাটার। শাটার খুলতেই অনলকে দেখা গেলো। ভয়ার্ত, আতঙ্কিত মুখশ্রী, সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো, উশকোখুশকো, ঘর্মাক্ত শার্টটি গায়ে লেপ্টে আছে। হাতের তালু লাল হয়ে আছে। হয়তো প্রতিটি বদ্ধ দোকানের শাটারে আঘাত করেছে সে। ডানহাত দিয়ে ঠোঁটের উপর জমা ঘাম মুছে নিলো। রীতিমতো হাপাচ্ছে সে। ধারা তার মুখের দিকে টলমলে চোখে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। তারপর কি যেনো হলো তার। ছুটে গেলো অনলের কাছে। জড়িয়ে ধরে মুখ লুকালো তার বলিষ্ঠ বুকে। ধারার এমন কার্যে কিছুটা অবাক হলো অনল। অপ্রস্তুত হলো বটে, তবে ধারাকে বুক থেকে সরালো না। বরং নিবিড় ভাবে দু হাতের বেষ্টিনীবদ্ধ করলো। এশা আশাও ছুটে অনলের কাছে এলো। অনলকে দেখে তারা ভয় পায় ঠিক ই তবে ভয়টি স্বস্তির। তাদের বিশ্বাস অনল ভাই থাকলে কিছু হবার জো নেই। অনল খেয়াল করলো ধারা ঈষৎ কাঁপছে। তার বুকে উষ্ণ জলধারা বইছে। ধারা কি কাঁদছে! আসলে তখন ধারার আতঙ্কিত কন্ঠ শুনে ঘাবড়ে গিয়েছিলো। মূহুর্তে বুকটা ধক করে উঠেছিলো। তাই ফোন কেটে, হাতের কাজ ছেড়ে ছুটে চলে এসেছে সে। বাইকের গতি কতটা ছিলো নিজেও জানে না। ধারা এরপর ফোন করেছিলো ঠিক কিন্তু ধরতে পারে নি। মার্কেটের কাছে আসতেই দেখলো দা’ঙ্গা আগুনের ফুলকির ন্যায় উত্তপ্ত। এই দা”ঙ্গার মধ্যে প্রবেশ করলে ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না। বিপদ আরোও বাড়বে ধারার। যতই হোক অনল তো সুপার হিরো নয়। পচিশ ত্রিশ জনকে মেরে মাটিয়ে লুটিয়ে দিবে। তাই বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে। ফলে অনল ছুটলো নিকটবর্তী থানায়। সেখানে ইন্সপেক্টর একটু ব্যাস্ত থাকায় তাদের আসতে এতো দেরি হয়েছে। যতই হোক দল বল নিয়ে আসতে হবে বলে কথা! অবশেষে পুলিশের সাথেই এসেছে অনল। একের পর এক প্রতিটি দোকানের শাটারে কড়া নেড়েছে। কিন্তু ধারার শব্দ পায় নি। ধারার মোবাইলেও ফোন করেছিলো ফোন বন্ধ পেয়েছে। অবশেষে বাধা পেড়িয়ে ধারাকে পেয়েছে সে। ধারাকে পাওয়া মাত্র হৃদয়ের কোঠরের ঝড় থেমে গেছে। এক মৃদু শীতল হাওয়া বয়ে গেছে হৃদয় জুড়ে৷ তাই লোকের সামনে জড়িয়ে ধরাতে খানিকটা অপ্রস্তুত হলেও বাধা দেয় নি অনল।
ধারা কান্না থামিয়েছে কিন্তু এখনো কিছুক্ষণ বাদে বাদে ডুকরে উঠছে। কাঁপছে ঈষৎ। অনল তার মুখটা আলতো হাতে তুললো। ভেজা চোখজোড়া মুছে নরম গলায় বললো,
“ভয় পেয়েছিলি?”
ধারা কেবল মাথা নাড়ালো যার অর্থ সে ভয় পেয়েছে। অনল ঠোঁট চওড়া করে হাসলো। তারপর ধারাকে দাঁড় করিয়ে দোকানীকে ধন্যবাদ জানালো। তিনটে মেয়েকে সে আশ্রয় দিয়েছে, বিপদ থেকে রক্ষা করেছে এটা কম কিসের। আজকালের ব্যাস্ত ইট পাথরের শহরে আপন মানুষের বিপদে কেউ এগিয়ে আসে না। সেখানে একজন অচেনা মানুষ তাদের এই দা’ঙ্গা তে সহায়তা করবে ব্যাপারটা অকল্পনীয়। দা’ঙ্গাকারীরা অনেকেই পালিয়েছে। দশ বারো জনকে পুলিশ ধরেছে, মা’র’তে মা’র’তে তাদের জিপে পুরেছেন। অনল জমজদ্বয়কে রিক্সশায় তুলে দিলো। ধারাকে বললো,
“বাইকে উঠ”
ধারা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। অবশেষে মিনিট দশেক বাদে বাড়িতে পৌছালো তারা। বাড়িতে ঢোকার পূর্বে জমজদ্বয় ধারার ওড়না টেনে ধরলো৷ গলার স্বর খাঁদে নামিয়ে বললো,
“আমরা যে ভয় পেয়েছি এটা কাউকে বলো না, প্রেস্টিজের বারোটা বেজে যাবে”
ধারা নিঃশব্দে হাসলো শুধু। বাসায় আসতেই অনলকে দেখে বড়মা হাজারো প্রশ্ন করলেন। অনল বললো,
“পানি দাও, গলা টা ভিজাই। তোমার ভাগ্নি যা দৌড় করালো। গলা কাঠ হয়ে গেছে”
রুবি পানি এগিয়ে দিলো। এক নিঃশ্বাসে পানি খেয়ে সকল ঘটনা খুলে বললো অনল। সুভাসিনী এবং রুবির আতঙ্ক দেখে কে! জারি করা হলো আজ থেকে এই তিনজন একা কোথাও যাবে না। অনল, অথবা রাজ্জাক অথবা ইলিয়াস থাকবে তাদের সাথে। এরা ব্যস্ত থাকলে এরা বের হবে না। এশা আশা কিছু বললো না, কারণ ধারা কোনো প্রতিবাদ করে নি। বেচারি বেশ ভয় পেয়েছে। যে কান্ড ঘটেছে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সুভাসিনী তার কপালে চুমো খেয়ে বললো,
“যদি তোর কিছু হয়ে যেতো, কি করতাম বলতো! এর চেয়ে তুই আমার সামনে থাক, ভালো থাক। আমাকে না বলে একা একা বের হবি না”
“যাহা আজ্ঞা বড় মা”
সুভাসিনী বেগম স্মিত হাসলেন। অনল ভেতরে চলে গেলো। এখানে দাঁড়িয়ে কাজ নেই। মা, মেয়ে বুঝুক নিজেদেরটা। ভার্সিটিতে ফোন করে জানিয়ে দিলো আজ ল্যাব স্যাশন নিতে পারবে না সে। অন্য কেউ যেনো নিয়ে নেয়। অন্যদের সাথে কথা বললেও ধারার চোখ অনলকেই দেখে যাচ্ছে। এক স্বস্তি কাজ করে মানুষটা থাকলে। এই অনুভূতিটা বেশ বিচিত্র। এতোকাল অনল ভাই ছিলো কেবলই দাম্ভিক প্রিন্স উইলিয়াম, এখনও সে প্রিন্স উইলিয়ামই আছে। তবে এই প্রিন্স উইলিয়ামটিকে চোখ বুঝে বিশ্বাস করা যায়_________
******
রাতের খাবার পর ধারা ঘরে প্রবেশ করলো। বিছানা করে যেই ঘুমাতে যাবে তখনই গম্ভীর কন্ঠ কানে এলো,
“এই ফাকিবাজ, এদিক শোন”
শখের নরম বালিশটা রেখে পেছনে তাকালো ধারা। অনল তখন ল্যাপটপে কাজ করছে। হয়তো আগামীদিনের লেকচার গোছাচ্ছে। সে ল্যাপটপ থেকে চোখ তুললো না। ওখানে বসেই কথাটা বললো৷ ধারা কিঞ্চিত বিরক্ত হলো। যা একটু ঘুমোবে সেটার জোগাড় নেই। মুখ বিকৃত করে বললো,
“কি হয়েছে?”
“অ’ভ’দ্র মেয়েছেলে, এখানে আসতে বললাম তো। বড়দের সম্মান করতে শেখ”
“বাহ বা, তা আজ সূর্য্যি কোন দিকে উঠলো। আমি তো ভাবলাম আমার সাথে কথা বলাই ছেড়ে দিয়েছো”
“এটা মনে হবার কারণ?”
“প্লাবণ ভাই এর বিয়ের পর থেকে তো এড়িয়েই চলছো। আজ নিজ থেকে কথা বলছো তো হজম হচ্ছে না”
ধারা এগিয়ে আসতে আসতে ঠেস মেরে কথাটা বললো। অনল উত্তর দিলো না। হ্যা, প্লাবণের বিয়ের পর সে ধারার সাথে দরকার ব্যাতীত কথা বলে নি। স্মৃতির কথাগুলো তাকে প্রচন্ড ভাবাচ্ছিলো। নানাবিধ চিন্তা মস্তিষ্ক ঘিরে রেখেছিলো। সত্যি বলতে তাদের বিয়ে একমাস হতে চলেছে অথচ সম্পর্কটা কোনদিক যাচ্ছে নিজেও জানে। ধারাকে বিয়ের রাতেই বলেছে কোনো প্রকার জোর সে করবে না, কিন্তু ধারা যদি তার থেকে মুক্তি চায় তখন কি করবে সে! প্রহেলিকার পেছনে ছুটছে না তো সে! উপরন্তু ফুপা অর্থাৎ সেলিম সাহেব আসলে কি ঘাপলা বাধায় কে জানে! সব কিছু মিলায়ে প্রচন্ড ঘেটে ছিলো অনল। কিন্তু আজকের ঘটনা তাকে সম্পূর্ণ নাড়িয়ে দিয়েছে। তাই গভীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অনল। ভবিষ্যতের কথা ভেবে বর্তমানকে নষ্ট করবে না।
“কি হলো, ডাকলে কেনো”
ধারার প্রশ্নে চিন্তার ঘোরে ছেদ পড়লো অনলের। ধারার দিকে মোটা ক্যালকুলাসের বইটা এগিয়ে বললো,
“পড়তে বয়”
“অনল ভাই! এখন কে পড়ে?”
“আমার বউ, বেশি বকিস না। সিটি, টেস্ট এ যা পেয়েছো তাতে তোমার অবস্থা বোঝা যাচ্ছে, ইহজীবনে আমার কোর্সে পাস করে লাগবে না। তাই পড়তে বয়। এখন থেকে প্রতিদিন ৩ ঘণ্টা আমার কাছে পড়বি। প্যা পু করিস না। পড়তে বয়”
ধারা আর তর্ক করলো না। গোমড়া মুখে পড়তে বসলো। কড়া বর তার না পড়ে উপায় নেই। অনল বই এর গোটা গোটা অংক দাগিয়ে বললো,
“কর”
বাধ্য হয়ে গণিতের সূত্রের মাঝে মন ডুবাতে হলো ধারার। মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছিলো কঠিন মুখশ্রীকে। আচ্ছা একটা মানুষ এতো সিরিয়াস হয়! একটু তো স্বাভাবিক কথাও বলা যায়। না শুধু পড়, পড়, পড়।
বহুদিন বাদে গণিতের চাপে ঘুম জড়ো হলো ধারার নেত্রে। বই এর উপর ই উপুড় হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো ধারা। ল্যাপটপের কাজ শেষে পাশে তাকাতেই দেখলো মহারাণী ঘুমে কাঁদা। গণিতের খাতা কাটাকুটিতে ভরপুর। এর মাঝে ছোট্ট করে লেখা,
“নিরস, কঠিন, খ’চ্চ’র মানব”
অনল লেখাটি দেখে হাসলো। তারপর সব বন্ধ করে ধারাকে তুলে নিলো কোলে। তখনই চোখ মেলে তাকালো ধারা……….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি