#প্রণয়_প্রহেলিকা
#৪র্থ_পর্ব
কিন্তু এই খুশি টেকসই হলো না। যখন একটা মৃদু স্বর কানে এলো,
“উপস, ভুল সময়ে চলে এলাম নাকি?”
ধারার প্রশান্তির ঢেউ তিক্ত বিষাদে পরিণত হলো। যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেইটাই হলো, অবশেষে মানুষটির মুখোমুখি হতেই হলো। অনল দরজার দিকে তাকাতে দেখলো তার প্রিয় বন্ধু প্লাবণ দাঁড়িয়ে আছে। প্লাবণকে দেখামাত্র নিজের পরিস্থিতির জ্ঞান হলো তার। সাথে সাথে ধারার হাত থেকে নিজের কলার ছাড়িয়ে নিলো। নিজের শার্ট ঠিক করতে করতে বললো বিব্রত কন্ঠে বললো,
“আরে আয় আয়, আসলে…”
অনলের কিছু বলার পূর্বেই প্লাবণ তার ভুবন ভোলানো হাসি হাসলো৷ তারপর ধারাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন আছো, জলধারা?”
ধারা এক কোনায় শিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনুভূতি গুলো বেসামাল হয়ে উঠেছে৷ হৃদমাঝারে কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছে। ধারা এই আশঙ্কাটাই করছিলো। এই কিশোরী আবেগের মুখোমুখি হবার ভয়। প্রচন্ড বিষাদের অনুভূতি হচ্ছে। অনুভূতিগুলো অব্যক্ত। সব যেনো তিক্ত দুঃস্বপ্নের ন্যায় লাগছে। হয়তো ঘুম ভাঙ্গলেই দেখবে, সব আগের মতো নির্মল, প্রশান্ত। কিন্তু সে তো হবার ছিলো না। ধারার মুখে কথা নেই সে শুধু নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্লাবণের হাস্যজ্জ্বল মুখের পানে। প্রচন্ড আবেগ তার ভেতরটাকে তছনছ করে দিচ্ছে। সে জানতো মানুষটির মুখোমুখি হলে প্রচন্ড কষ্ট হবে। কিন্তু কষ্টের মাত্রাটা জানা ছিলো না। বর্তমানে এই মাত্রার খোঁজ মিললো তার। ধারাকে চুপ করে থাকতে দেখে প্লাবণ পুনরায় প্রশ্ন করলো, তখন কোনো মনে নিজেকে সামলে জড়ানো গলায় উত্তর দিলো,
“ভালো”
ধারার আর দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে হলো না। সে পালাতে পারলে যেনো বাঁচে। কোনো মতে বললো,
“তোমরা কথা বলো আমি আসছি”
কোনো মতে যেনো ছুটে পালালো সে। ধারার এরুপ জড়তা নজর এড়ালো না অনলের। আড়চোখে নিপুনভাবে লক্ষ্য করলো সে ধারাকে। ধারা চলে গেছে প্লাবণ অনলের মুখোমুখি বসলো। সেও এই ভার্সিটির ই শিক্ষক৷ তবে তার স্থায়ীকাল অনলের থেকে বেশি। অনল বললো,
“ট্যাং খাবি?”
“খাওয়াই যায়, যা গরম”
“আচ্ছা”
মিনিট দশেকের মাঝে হাসেম মামা দুগ্লাস বরফ দেওয়া ট্যাং দিয়ে এলেন। একটা অনল নিজে নিলো, অন্যটি প্লাবণ। গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে প্লাবণ জিজ্ঞেস করলো,
“তোকে ফোন করেছিলাম, দুদিন মোটে ফোন ধরলি না। আফিয়া আপুর বিয়েতে এতো ব্যস্ত হয়ে পরেছিলি নাকি?”
“আসলে, বিয়ের কাজে ব্যাস্ত ছিলাম”
“তাই বলে এতো, ভাবটা এমন যেনো নিজের বিয়ে ছিলো”
“হ্যা নিজের ই বিয়ের কাজে ব্যস্ত ছিলাম”
কথাটা শোনামাত্র বিষম খায় প্লাবণ। কাশতে কাশতে নাকে মুখে উঠে যায় তার ট্যাং। অনল একটা টিস্যু এগিয়ে দেয়। নিজেকে সামলে হতবাক কন্ঠে অনলকে জিজ্ঞেস করে,
“সত্যি?”
অনল দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এক চুমুকে ট্যাংটুকু শেষ করে। তারপর বিবাহবিভ্রাটের সম্পূর্ণ কাহিনী খুলে বলে প্লাবণকে। প্লাবণের মুখ স্তম্ভিত। অবশেষে কি না অনল বিয়ে করলো!
ভার্সিটির পিচঢালা রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে ধারা। বড্ড এলোমেলো পায়ে হাটছে। মৃদুমন্দা বাতাসে তার এলোকেশ অবাধ্য হয়ে উড়ছে। দক্ষিণ আকাশে মেঘের আনাগোনা। স্বর্ণালী তেজী সূর্যটাও মেঘের আড়ালে গা ঢাকা দিয়েছে। কৃষ্ণাচূড়া গাছটির নিচে দাঁড়াতে থেমে গেলো ধারা। উদাস নয়নে তাকালো নীলাম্বরের পানে। তার মনমন্দিরেও আজ মেঘমেদুর জমেছে। এখনি হয়তো ঝুমঝুম করে বৃষ্টি হবে। ভেসে যাবে সব তিক্ততা, ভেসে যাবে সব আবেগ। মাঝে জড় বস্তুর ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকবে ধারা। অতীতের পৃষ্ঠা উল্টাতে ইচ্ছে করলো তার। সেই সুখমিশ্রিত অতীত। যেখানে তার প্রথম সাক্ষাত হয়েছিলো প্লাবণের সাথে। প্লাবণ যখন প্রথম তাদের বাড়ি অনলের সাথে এসেছিলো তখন ধারা মাত্র ক্লাস সেভেন এ পড়ে। লম্বা অনলের সমান, ফর্সা মুখশ্রী, খাড়া নাক, সুগভীর উদাসীন নয়ন আর মাথাভর্তি কোকড়ানো চুল। বেশ নায়ক নায়ক দেখতে পুরুষটি মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করেছিলো,
“নাম কি তোমার?”
“ধারা”
“জলধারা?”
সেখান থেকে ধারার নাম হলো জলধারা। কি চমৎকার আচারণ। ধারা মুগ্ধ হয়ে দেখলো মানুষটিকে। প্রতিদিন একটা দুটাকা দামের ইকলিয়ারস নিতে আসতো। ধারাকে দেখলেই চুলগুলো এলোমেলো করে হাতে ধরিয়ে দিতো। এই স্নিগ্ধ স্মৃতিগুলো কিশোরী আবেগ হয়ে কখন যে মনের জমিনে বীজ রুপে রোপিত হবে, কে জানতো! এই ভার্সিটির লেকচারার প্লাবণ কথাটি জানার সাথে সাথেই ধারার জিদ হলো এই ভার্সিটির ছাত্রী হবে। তারপর সিনেমার মতো একটা সময় প্রেমপত্র পাঠাবে প্লাবণকে। কিন্তু সবই এখন স্বপ্ন। নানাভাই এর জিদের কাছে কিশোরী আবেগ ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেলো৷ আবেগের সেই রঙ্গিন ফুলটাও আজ ঝড়তে বসেছে। ধারা ছোট একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো সন্তপর্ণে। এই কিশোরী আবেগখানা তুলে রাখবে সে সংগোপনে। ধারা খেয়াল করলো বৃষ্টি নামছে, দুয়েক ফোটা করে করে অঝর ধারায় নামলো বৃষ্টি। ভালোই হলো, চোখের জোয়ারটা বৃষ্টির দাপটে ঢাকা পড়ে গেলো অবশেষে_________
অনলের বর্ণনা শোনার পর নিজের হাসি আর থামাতে পারলো না প্লাবণ। অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সে। অনল ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো। প্লাবণের হাসি তাকে বিরক্ত করছে। বন্ধুর দূর্দিনে কেউ এভাবে হাসে? এজন্য ই হয়তো বলে “কারোর পৌষমাস, কারোর স’র্ব’না’শ”। বিরক্তির স্বরে বললো,
“হাসি থামা, হলুদ দাঁত দেখতে ভালো লাগছে না”
প্লাবণ কোনো মতে হাসি থামিয়ে বললো,
“চটিস না, তবে বলতেই হবে দাদাকে হ্যাটস অফ। নয়তো আমাদের নারী বি’দ্বে’ষী অনল কি না বিয়ে করে। তাও জলধারাকে? ভাবা যায়”
“আমি মোটেই নারী বি’দ্বে’ষী নই। এগুলো তোদের বিকৃত মস্তিষ্কের রটনা”
“ও তাই না! তাহলে অনল সাহেব বলুন তো, এতো সুন্দর সুন্দর নারীদের কোমল প্রেমপত্রগুলো আপনার ডাইরিতে স্থান না পেয়ে কেনো ডাস্টবিনে স্থান পায়?”
“এই ঘটনাকে নারী বি’দ্বে’ষী রুপে ব্যাখা না করে অন্য ভাবেও তো ব্যাখ্যা করা যায়। এই ধর, যে নারীদের প্রেমপত্র আমি পাই তাদের আমার মনে ধরে না; আর যাকে মনে ধরেছে তার প্রেমপত্র এখনো পাই নি”
প্লাবণ কিছুসময় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অনলের মুখপানে। অনলের বিরক্ত বাড়ে। কাছের বন্ধুটি অতি বিরক্তিকর। প্লাবণ আবারো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। হাসতে হাসতে বলে,
“আর কত শক দিবি ভাই। এক দিনে দুইটা ব্রেকিং নিউজ। অনলের বিয়ে আবার অনলের কোনো নারীকে মনে ধরেছে। তা বলি রোমিও তোর বিয়ে হয়ে গেছে। এখন মনে ধরেও লাভ নেই”
“ধ্যাত, অফ যা তো। তোদের মতো মানুষের জন্যই রোম পুড়েছিলো বুঝলি!”
“নাহ! আমাদের জন্য না, তোমার মতো এক রোমিও এর জন্য পুড়েছিলো। আমরা তো শুধু দর্শক। আচ্ছা মজা বাদ দে! এই বিয়েটাকে নিয়ে কিছু ভেবেছিস? কিভাবে কি করবি?”
এবার চুপ করে গেলো অনল। থমথমে হয়ে গেলো মুখ। গাম্ভীর্য ছেয়ে এলো মুখে। রাশভারি কন্ঠে বললো,
“এটা তো আমারো চিন্তা। আসলে ধারাটা যে বড্ড ছেলেমানুষ, শুধু তাই নয় বড্ড জেদি, সেন্সিটিভ। ওর স্বভাবটা খুব ভাবাচ্ছে বুঝলি। আমাদের মধ্যে কোনো কালেই সখ্যতা ছিলো না। আমি বাম বললে তাকে ডান বলতেই হবে। আর ফুপি মারা যাবার পর থেকে মা-বাবা, দাদাজান তাকে মহারাণী ভিক্টোরিয়ার মতো রেখেছে। ও কি মানিয়ে নিতে পারবে আমার সাথে! আমি কি পারবো ওর মনের মতো হতে। প্রচন্ড ভাবাচ্ছে। আর গরম তেলে পানি ঢালার মানুষ আমার শ্বশুর তথা ফুপা তো আসেন নি। উনি দেশে আসলে তৃতীয় মহাযু’দ্ধ বাধবে। ভালো লাগে না।”
প্লাবণ ম্লান হাসলো। অনলের মাঝে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করলো সে। নিপুনভাবে দেখে নিলো বন্ধুর মনটি। কিছুসময় চুপ করে থেকে বললো,
“এতো ভাবিস না, সম্পর্কগুলো গণিতের কোনো ইকুয়েশন নয়। এতো ভেবে চিন্তে কিছুই হয় না। সময়ের উপর ছেড়ে দে। সময় ঠিক বলে দেবে কি করা উচিত। আর অন্য নারীতে মনোনিবেশ না করে বউ এর উপর নজর দাও। আসলাম”
অনল হেসে দিলো। বউ, হ্যা বউ ই তো। রাগী, জিদি, এক ঘুয়ে রনচন্ডী বউ, তার ধারা________
ধারা বাসায় পৌছালো একেবারে কাকভেজা রুপে। ছাতার অভাবে ভিজতে হলো বিনা নোটিশের বর্ষায়। বাসায় ঢুকতেই বড় মার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হলো তাকে,
“ভিজলি কিভাবে? ছাতা নিস নি? আর সকালে খেয়ে যাস নি কেনো? হুড়মুড়িয়ে চলে গেলি? খেয়েছিস কিছু?”
“না”
“যা, কাপড় বদলে আয়। খাবার দিচ্ছি খেয়ে নে”
বিষন্ন মনটার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। তাই মাথা দুলিয়ে রওনা দিলো নিজ ঘরের পানে। ঘরের দরজা খুলতেই মাথার উপর আরো এক দফা বাজ পড়লো। তার ঘর তো ঘর নয় আস্তো গোয়াল ঘর। সব জিনিস এদিক অদিক অবহেলায় পড়ে রয়েছে। আর খাটের উপর ছোটমামার জমজ দু কন্যে এশা এবং আশা একে অপরের চুল টানছে। ঠিক কি কারণে তাদের ঝগড়া চলছে জানা নেই। একেই মন খারাপের স্তুপ, উপরে এমন অসহনীয় অবস্থা ঘরের। ধারার মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। তেড়ে যেয়ে দুটোকে দুটো গাট্টা মেরে দিলো। কড়া কন্ঠে বললো,
“এটা কি মাছের বাজার? তোরা কি মানুষ হবি না?”
“ধারাপু আমার দোষ নেই। এই আশাটাই আমার ক্লিপ নিয়েছে”
“এটা তোর না, ধারাপুর ক্লিপ। আর খাটের এপাশ আমার”
ধারা মেজাজ আরোও তিরিক্ষি হলো৷ তীব্র স্বরে বললো,
“এই চুপ, বের হ আমার ঘর থেকে। এখন ই বের হবি”
জমজ বি’চ্ছু দুটো তাদের আঠাশটি দাঁত বের করে বললো,
“তা হচ্ছে না, দাদাজান এই ঘর আমাদের দিয়েছেন। বলেছেন এই ঘরে এখন আমরা থাকবো”
ধারার বুঝতে বাকি রইলো না এই বিনা নোটিশে ছোটমামার আগমণের কারণ। হয়তো সকালে নিজ ঘর থেকে বের হতে দেখে ফেলেছিলেন নানাভাই। তাই দাবার ঘোড়ার চাল চেলেছেন। ছোটমামা এবং পরিবারকে নিয়ে এসেছেন। আর ধারার ঘর সপে দিয়েছেন নিজের একান্ত সেনাপতি জমজদের হাতে। উফ! দাদা, নাতি দুটোই একই রকম। হাড় জ্বা’লি’য়ে দিলো একেবারে। নানাভাইকে ভালোবাসে বলে এই অত্যাচারগুলো মুখ বুজে মেনে নিতে হচ্ছে ধারা। আর নয়, এর বিহিত চাই ই চাই। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ছুটলো সে নানাভাই এর ঘরে
বিছানায় হেলান দিয়ে জামাল সাহেব আপন মনে শ্রীকান্ত বই টি পড়ছেন। বয়স হলেও বই তার খুব ই ভালো লাগে। শরৎচন্দ্রের এক একটা লেখা তার খুব ই পছন্দ। অসুস্থতা তো আছেই, কিন্তু মনকে সতেজ রাখাটা জরুরি। জীবন তো ক্ষণস্থায়ী। আজ নয়তো কাল, পরকালে তো যেতেই হবে। তাই নিজেকে আটকে রাখেন না তিনি। বই পড়েন, কবিতা লিখেন। ব্যস্ত যুবক বয়সে যা করেন নি, সেগুলোই করেন। এমন সময় আগমণ ঘটলো তার ছোট ছেলে ইলিয়াসের। তার কপালে চিন্তার সূক্ষ্ণ রেখা। মোটা ফ্রেমের চশমা নামিয়ে সেলিম সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,
“কিছু কইবা আব্বা?”
“আব্বা, বিপদ হয়ে গেছে”
“কি হইছে?”
“সেলিম ভাই ধারা আর অনলের বিয়ে সম্পর্কে জেনে গেছে। আমাকে ফোন করেছিলো। খুব চেতে আছেন উনি। বিশ্রী গা’লি’গা’লা’জ ও করেছেন”
শান্ত মুখটা চট করেই শক্ত হয়ে উঠলো জামাল সাহেবের। বুকের মধ্যখানে একটা তীব্র ব্যাথা অনুভূত হলো। কিন্তু ইলিয়াসকে বুঝতে দিলেন না। তীব্র স্বরে বললো,
“ওই খা***** পুতের সাহস কি করে হয় ফোন দেওয়ার। ওর লজ্জা করে না”
“আব্বা, উত্তেজিত হবেন না। সেলিম ভাই চাইলেই তো হবে না। আমরা তো আছি”
“ও আসুক, আমিও দেখাম ওই বে’য়া’দ’ব কি করে? আমার মাইয়াডারে মাই’রে শান্ত হয় নাই! এখন নাতীনডারে মা’র’তে চায়। ফাজিল পোলা”
“আব্বা, শান্ত হন। উনি এই মাসের শেষে আসবে। চিন্তা করবেন না, অনল ধারাকে সামলে নিবে। আপনি অসুস্থ। আপনি উত্তেজিত হবেন না”
জামাল সাহেব আরোও তীব্র হুংকার ছাড়লেন। ইচ্ছে মতো গালমন্দ করলেন সেলিম সাহবকে। কিন্তু কথাগুলো ধারার কানঅবধি পৌছালো না। বাবা আসবে কথাটাই তার জন্য যথেষ্ট ছিলো। এলোমেলো পায়ে রওনা দিলো অনলের রুমে। বা’ঘে’র ডে’রাতেই প্রবেশ করলো সে। গা এলিয়ে দিলো বিছানায়। অনুভূতিগুলো মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। প্রচন্ড কান্না। ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলো টের টিও পেলো না। এই ঘুমটি দীর্ঘকালের হলে হয়তো ভালো হয়তো, চিরকালের হলে হয়তো ধারা মুক্তি পেতো________
অনল বাড়ি ফিরলো সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে। কাজ শেষ করে, আড্ডা দিতে দিতে কখন বিকেল ফুরিয়ে গেছে টেরটি পায় নি। জ্যামও ছিলো হালকা, ব্যস্ত দিনের নিস্পত্তির পর সবাই বাড়ি ফিরতে ব্যাস্ত। তাই যানজট তো হবেই। অনল বাড়িতে ঢুকতেই ছোট মামার দেখা পেলো। নিস্প্রভ কন্ঠে সালাম দিয়েই রুমে গেলো সে। বড্ড ক্লান্ত শরীর। এতো দিন পর টানা কথা বলেছে সে। গলাও ব্যাথা করছে। নীরব, নিস্তব্ধ আঁধারে নিমজ্জিত ঘরে প্রবেশ করতেই প্রশান্তির স্নিগ্ধ ঢেউ বয়ে এলো অনলের হৃদয়ে। কি শান্ত, পরিবেশ! অনল লাইট না জ্বালিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। ঘড়ি, মানিব্যাগ সব রাখলো সেখানে। তারপর আয়নার দিকে তাকাতেই দেখলো একটা কালো অবয়বের প্রতিবিম্ব। প্রতিবিম্ব টি ঠিক তার পেছনে। অগোছালো চুল মুখের সামনে লেপ্টে আছে, উদ্ভ্রান্ত শান্ত দৃষ্টি। জামাকাপড় এলোমেলো। ক্লান্ত মস্তিষ্ক মূহুর্তেই জমে গেলো। বুকটা কেঁপে উঠলো অনলের। তার ঘরে কারোর উপস্থিতি হতে পারে কথাটা যেনো মাথায় ই ছিলো না। প্রচন্ড ভয় তাকে ঘিরে ধরলো। কপালে ঘাম জমতে লাগলো। ভয়মিশ্রিত চোখে পেছনে ফিরতেই মনে হলো অবয়বটি তার কাছে আসছে। টাল সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়লো সে। জোড়ানো স্বরে চেঁচালো,
“ভু…..ত, ভু…ত”
সাথে সাথেই অবয়বটি লাইট জ্বালাতো। এলোমেলো চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরাতে সরাতে নিদারুণ অসহায় কন্ঠে বললো,
“অনল ভাই, ভুত না। আমি ধারা”…….
চলবে
মুশফিকা রহমান মৈথি