প্রণয় পর্ব-১৩

0
1183

#প্রণয়
#১৩তম পর্ব
#Abir Hasan Niloy

অবনি অর্নের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম বিয়ের পর অবনির জন্য হয়ত অর্ন কিছু করতে যাচ্ছে। অর্ন তুর্জের সামনে এসে দাঁড়ায়। তুর্জের দিকে তাকিয়ে বলে..

– অবনি আমার বউ। আমার সামনে তার গায়ে টাচ করাটা তোর অনেক বড় ভুল হবে। আরেকটা কথা, অনেক পরে অনুধাবন করেছি, সাদা চাঁমড়া হলেই যে ভালোবাসা তৈরী হবে, ভালো মনের মানুষ হবে এমনটা না। ভালো মানুষ হতে হলে, বাহিরের সৌন্দর্য কোনো ফ্যাক্ট না। তার জন্য প্রয়োজন ভালো ব্যবহার। একটা কথা কি জানিস.. উচ্চ সিজিপিএ ওয়ালা বন্ধুকে পরীক্ষার ৩ দিন আগে লয়্যাল বন্ধু, একটা চ্যাপ্টার বুঝার জন্য কল দিয়ে তার বাসায় যেতে চেয়েছিলো। সে জবাবে বলছিলো ‘তুই এখন আসিস না, তুই আসলে আমার পড়ালেখার ক্ষতি হবে। ‘সেদিন এক কম সিজিপিএ ওয়ালা বন্ধুর বাসায় গিয়ে তার অতিথেয়তায় সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলো লয়্যল বন্ধু।

বাসার গলিতে ঢুকবার পথে গেইটের সামনে থাকা গার্ড মামাকে প্রথমদিন একটা সালাম দিয়েছিলো একটা ছেলে, আর তাকে জিজ্ঞাসা করছিলো “মামা ভাল আছেন?” যাস্ট এতুটুকুই…….
এরপর থেকে দারোয়ান, ঐ ছেলেটাকে যতবার দেখে ততবারই দাঁড়িয়ে সামনে এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করে “ভাইয়া ভাল আছেন?”

ভার্সিটিতে পা রেখে প্রথম যেদিন একটা ছেলে বন্ধুদের নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায়, সেদিন এক ওয়েটারের সাথে পরিচয়। এরপর থেকে সেখানে গেলেই তার টেবিলে বসে ওরা, সুখ দুঃখের গল্প করতো ওয়েটারের সাথে। পরের ঈদে বন্ধুরা কয়েকজন মিলে, ওয়েটারকে ভাল অংকের একটা বকশিশ দিয়েছিল।
সেই ছেলে পরে ওমানে যায়। প্রায়ই ওখান থেকে ফোন দিয়ে, তাদের বলে ‘আপনাদের কিছু লাগলে বলেন পাঠাইয়া দেই।’ কিছুই না, ঈদের আগে অল্প কয়টা টাকা যাস্ট সবাই মিলে দিয়ে বলছিল “বাড়ি যা, ভাল করে ঈদ করিস।”

টং দোকানে একটা কালো কুচকুচে কুকুর সব সময় বসে থাকতো। একদিন চা খাওয়ার সময়, একজন ছেলের সামনে এসে লেজ নাড়ায় আর ঘুর ঘুর করতে থাকে। শুধু পাঁচ টাকার একটা পাউরুটি কিনে খেতে দেয়। এখন প্রায়ই মাঝ রাতে চা রুটি খেতে বের হওয়া ছেলেটা, আগে ওই সময়টাতে চা খেয়ে সামনের গলি দিকে ফিরতে ভয় পেত। যদি ছিনতাই হয়। এখন মাঝরাতেও কানে হেড ফোন লাগিয়ে হাঁটে ছেলেটা। ভয় হয় না তার। কারন ওই কালো কুকুরটা ছেলেটার সাথেই থাকে। অন্য কাউকে দেখলেই তেড়ে যায়। সাথে পা মিলিয়ে হাটে। দুইটা হাত থাকলে হয়তো জড়িয়েও ধরত। তার চোখের ভাষা বলে দেয় ” কেউ এই ছেলেটাকে ধরতে আসলে কইলজা খুইল্লা ফালামু ”

উচু শ্রেনীর মানুষদের ডিকশনারিতে কৃতজ্ঞতা শব্দটা প্রায়ই নাই বললেই চলে। অনেক রুই কাতলার জন্য জীবনে অনেক কিছু করে মানুষ। নেগেটিভ গ্রুপের এক ব্যাগ ব্লাড ম্যানেজ করতে সারারাত দৌড়াতে হয়। কিন্তু পরদিন ভোরে জানতেও চায়না ব্লাডটি কার, কোথা থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। কিন্তু সামান্য একটা গার্ড, রাস্তার মুচি, ক্যান্টিনের মামা এমনকি টং দোকানের কুকুরটাকেও যদি একটু এহসান করা হয় তখন পারলে পুরা হার্টটা খুলে দিবে। মানুষ হতে টাকা লাগে না, মানুষ হতে সুন্দর চেহারা লাগে না। বিশাল আকাশের মত বড় একটা মন লাগে। যেটা তোর বউয়ের মধ্যে, তোদের কারো মধ্যে নেই। অবনির মধ্যেই আছে।
.
অর্ন কথাগুলো বলে সেখান থেকে চলে যায়। তুর্জদের বাড়ির সামনে এসে বাইকে বসলো। অবনি দৌড়ে আসে অর্নের সামনে। অর্নের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছু সময়। অর্ন কোনো কথা বলেনা। সে বাইক স্টার্ট করলো। অবনি বলে..

– তুই, আমার জন্য ফাইট করলি?
– আমি তোকে আসতে বলেছিলাম। আমাকে না বলেই চলে এসেছিস যে। (অর্ন)
– সিফাত জোর করলো, তাই ওর সাথে চলে এলাম। সিফাত জানে তুই বিয়েতে আসবি। আর খালামনির সাথে কেমন করে কথা বলে এসেছিস। চিন্তা করছে। (অবনি)
– ওহ.. সিফাত বললো বলেই চলে এসেছিস। (অর্ন)
– আরে না.. শোন..(অবনি)
– হয়ত কিছু সময় পর তুই ডিভোর্স লেটার পাবি। ভালো থাকিস।

অর্ন আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ালো না। বাইক স্টার্ট দিয়ে অবনির সামনে থেকে চলে আসে। অবনি স্থির দৃষ্টিতে অর্নের চলে যাওয়া দেখতে থাকে।
.
অর্ন ঢাকা শহর ছেঁড়ে বেশ অনেকটাই দুরে চলে এসেছে। বাইকের স্পিড ৭০+। এক হাত দিয়ে মাথা থেকে হেলমেট খুলে নিল। তারপর ছু্ড়ে ফেলে দিল রাস্তার পাশে। বাইকের স্পিড আরো তোলা শুরু করে। ৭৫, ৭৬, ৮০, ৮৫, ৯০, ৯৫। ঝড়ের বেগে গাড়ি চলা শুরু করেছে। হাত ঘড়ির দিকে একটু তাকালো। রাত ১০ টার বেশি বেজে গেছে। অবনির কথা খুব মনে পড়ছে ওর। অবনি এখন সিফাতের। অর্ন সেটা ভাবতে ভাবতেই মনে মনে বলে “ভালোবাসা চাইলেই ধরে রাখা যাইনা। ভালোবাসা ধরে রাখতে হলে মেহনত করতে হয়। কষ্ট পেয়ে ভালোবাসা চাইতে হয়, কষ্ট দিয়ে ভালোবাসা খুজতে নেই। পৃথিবীর সবাই ভালোবাসা চায়। আমি না হয় না পাওয়া ভালোবাসা নিয়েই হারিয়ে যাবো।” কথাগুলো ভাবতে ভাবতে স্পিড আরেকটু তুললো। সামনে একটা পিকআপ যাচ্ছে। অর্ন স্পিড একটু একটু করে তোলা শুরু করলো আবার। পিকআপটাকে ক্রস করার জন্য ডানে বাইক ঘোরাতেই সামনে থেকে, অনেকটা গতিতে ঢাকা পরিবহন আসে।

অর্ন পরিবহনটাকে দেখে বামে বাইক ঘোরাতেই, পিকআপের সামনে বাইকের পিছনের অংশ বাড়ি খায়। সাথে সাথেই অর্নের বাইক স্পিডের কারনে রাস্তার উপর পড়েই, গড়াতে শুরু করলো। অর্ন সিটকে পড়ে রাস্তার উপর। মাথাটা রাস্তার উপরে যেয়েই পড়ে। পিছনে থেঁতলে যায় ওর। রাস্তার উপর পড়তেই অর্ন গড়াতে গড়াতে আরো অনেকটা দূরে সরে যায়। পিকআপ যেয়ে রাস্তার পাশের পিলারের সাথে ধাক্কা দিল। পরিবহনটাও রাস্তার পাশের গাছে যেয়ে ধাক্কা খায়। বেশ বড় রকমের একটা এক্সিডেন্ট হয় সেখানে। অর্নের মাথা একদমই থেঁতলে গিয়েছে।
.
অবনি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। সিফাত এসে পিছনে দাঁড়ালো। অবনি সিফাতকে ডেকেছিল। তাই সিফাত এসেছে। অবনির পিছনে এসে সিফাত দাঁড়িয়ে বললো..

– কিছু বলবা তুমি? (সিফাত)
– হুম, অনেক কিছুই বলার আছে। (অবনি)
– আমি তো শুনতে প্রস্তুত। কিন্তু আমারও কিছু কথা আছে। তুমি বলো, তারপর আমি বলবো। (সিফাত)

অবনি সিফাতের মুখের দিকে তাকালো। সিফাতের মুখে এক আকর্ষনীয় আশাময় মুখের আলোড়ন। সিফাত খুশি হওয়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অবনি জোরে একটা শ্বাস নিল। তারপর বলল..

– আমি অর্নের বউ। আর আমি অর্নকে ভালোবাসি খুব। সত্য বলতে, অর্নকে ছেড়ে তোমাকে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম। মনের বিরুদ্ধে যেয়েও চেষ্টা করেছিলাম অনেকবার। কিন্তু এতটা সহজ নয়, ভালোবাসা পরিবর্তন করতে। ঘুরে ফিরে বারবার আমি অর্নের কাছে নিজের অনুভুতি খুজে পেয়েছি। অর্ন খারাপ, আমাকে ভালোবাসে না। তাতে কি? এখন কোনো আফসোস নেই। আমি তবুও অর্নকে ভালোবাসি খুব। অর্ন ছাড়া আমি কোনো কিছুই কল্পনা করতে পারিনি, পারবোও না। অর্নই আমার সবকিছু।

তোমার সাথে ক্লোজলি মিশেছিলাম অর্নকে একটু বোঝাবো, যে ভালোবাসায় অবহেলা রাখতে নেই। আজ ওর চোখে মুখে আমার জন্য অনেক কিছুই দেখেছি। আমি সাকসেস। আমি ব্যস এতটুকুই বোঝাতে চেয়েছিলাম অর্নকে। আমি পেরেছি। আমি অর্নকে ভালোবাসি। অর্নও আমাকে ভালোবাসে। আমি এখন অর্নকে চাই। সরি সিফাত, তোমার থেকে অনেক কিছুই লুকিয়েছি। তোমাকে অনেক কিছুই বলিনি। হয়ত তুমি আমাকে নিয়ে বেশি কিছু ভেবেছিলে। সরি সিফাত।
.
সিফাত অবনির দিকে অপলক হয়ে তাকিয়ে আছে। অবনি মাথা নিচু করে নিল। অবনির দিকে তাকিয়ে হঠাৎ সিফাত হেসে দেয়। অবনি সিফাতের হাসি দেখে বোকার মত তাকিয়ে থাকে। যেখানে সিফাত অবাক হওয়ার কথা, সেখানে অবনি অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে। সিফাত হাসতে হাসতে বলে..

– আরে গাধি নাকি তুমি? শোনো তাহলে তোমাকে বলি সবটা। আমি যেদিন ফোন করেছিলাম বড়মাকে। সেদিন জানতে পারি তুমি অর্নের বউ। বড়মা নিজেই আমাকে বলে অবনি আর অর্নকে দেখে যেতে। এখন অবনিকে দেখিনি আমি। তাই দেখতে এসেছিলাম। যেদিন আসি সেদিন বড়মা আমাকে অনেক কিছুই বলে। আর তোমার এবং অর্নের মধ্যে মনের যে অমিলটা ছিল, তা বড়মা আগে থেকেই জানতো। আমাকে যেভাবে তিনি করতে বলেছে, সেভাবেই করেছি। বড় মায়ের প্ল্যান ছিল, যেন আমি তোমার সাথে মিশি। এর পিছনে দুটো কারন ছিল। প্রথমটা হল, তুমি অর্নকে আসলেই কতটুকু ভালোবাসো, বা বিয়ে নিয়ে তুমি কতটুকু খুশি কিংবা অর্নকে পেয়ে তোমার ভিতরে কি চলছে না চলছে সবটা জানা ছিল প্রথম কারণ। আর বড় মা যেটা জানতো মানে তোমার আর অর্নের মিল নেই। সেই মিলটা যেন আমি করিয়ে দিই। এটাই আরেকটা কারণ।

আচ্ছা একটা বলো তো। তোমার কি মনে হয়, আমি এতদিনে কি একবারো জিজ্ঞাসা করবো না অর্নের বউ কে? কারণ আমি তো অর্নের বউকেই দেখতে এসেছিলাম। যাইহোক, সবাই ভালো অভিনয় করেছে। শেফাও ভালো অভিনয় করেছে। সেদিন তোমাকে রুমে জড়িয়ে ধরেছিলাম। শেফা ওটা দেখেছিল। তাকে বলেছিলাম আড়ালে থাকতে। যেন আমি যা করি, তা অর্নকে বলতে। আমরা কেবল রাস্তাটা তৈরী করেছে। হেঁটেছে অর্ন। অর্ন তোমাকে এখন অনুভব করে। কিন্তু তোমার মনে অর্নকে নিয়ে কি আছে, সেটা তুমিই জানো। আমি আসলে আজকে এটাই বলতে চাইছিলাম।

দুজনে ছাঁদে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। দুজনেই দুজনার কথা শুনে অবাক। কি বলবে আর কেউ খুজে পাচ্ছে না। ভালোবাসা এত সহজে কারো উপর তৈরী হয়না। ভালোবাসার জন্য অন্তত ভালোলাগাটা থাকা দরকার। আর আমরা মানুষেরা সামান্য ভালো লাগাটাকেই অনেক সময় ভালোবাসা ধরে নিই। ইরা হয়ত সামান্য ভালোলাগা থেকে অর্নকে ভালোবাসছিল। সে জন্য এত তাড়াতাড়ি বিশ্বাসটা হারিয়েছে। অর্নকে বোঝেনি। আর অর্ন…
.
“তোরা এখানে? নিচে আয় তো.. উকিল এসেছে। অবনিকে খুজছে।”

আরিনা বেগম ছাঁদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। সিফাত আর অবনিকে সে দিকে তাকায়। তাড়াতাড়ি দুজন ছাঁদ থেকে নিচে নেমে এলো। উঁকিল সাহেব বসে আছে সোফায়। অবনি সামনে যেতেই, তিনি ব্রিটকেস হাতে নিয়ে দাঁড়ালো। তারপর সেখান থেকে কয়েকটা পেপারস বের করে। প্রথম পেপারটা উকিল সাহেব হাতে নিয়ে বললো…

– আপনি অবনি আমি জানি। এখানে সাঈন করুন। আপনার জন্য কয়েকটা পেপারস আছে। আর ছোটনকে চিনেন আপনারা? (উকিল সাহেব)
– ছোটনকে আমি চিনি। কিন্তু অবনিকে কেনো সাঈন করতে হবে? (আরিনা বেগম)
– এটা হল, ডিভোর্স লেটার। অর্ন সাহেব রাতের এই সময়ে এসে দিতে বলেছিল। (উকিল সাহেব)
– ডিভোর্স লেটার? মানে? অর্ন কোথায়? আর সে কেনো অবনিকে ডিভোর্স লেটার দিয়েছে? মানেটা কি উকিল? (দাদু)
– আমি তো জানিনা। আমার যতটুকু দরকার, আর কাজ ছিল সবটাই করেছি। বাকিটা তো অর্ন সাহেব বলতে পারবে। (উকিল)

অবনি অনিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পেপারটার দিকে। চোখের কোণে পানি জমা শুরু করেছে। পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেছে। কেমন যেন অসার অনুৃভব হচ্ছে তার কাছে। একটা মেয়ের ডিভোর্স হওয়া মানে দ্বিতীয় মৃত্যু। অবনির যেন এটাই হচ্ছে। করুণ দৃষ্টিতে পেপারটার দিকে তাকিয়ে আছে। উকিল সাহেব বলে..

– দেখুন আমি এতকিছু তো জানিনা। তবে আরো কয়েকটা পেপারস আছে। অর্ন সাহেবের নামে যতটুকু সম্পত্তি ছিল, টাকা ছিল। তা দুজনের জন্য লিথে গেছে। (উকিল)
– লিখে গেছে মানে? কি বলছেন আপনি? (সিফাত)
– হুমম, ঠিক বলছি। একজন হল অবনি। আরেকজন হল ছোটন। ছোটনে মা যেদিন মারা যায়, সেদিন রাতে কথা হয়েছিল ফোনে অর্ন সাহেবের সাথে। জলদি সাঈন করুন বাকি পেপারসগুলোতে। ডিভোর্স লেটারে কবে করবেন, আপনার ব্যাপার। রেখে যাচ্ছি। (উকিল)
– সব পেপার রেথে যান উকিল সাহেব। (দাদু)
– ওকে। (উকিল)
– ছোটনের মা কবে মারা গিয়েছিল? (আনাফ)
– এই তো কয়েকদিন আগে। সেদিন উনি হয়ত রাতে বের হয়েছিল। আমি জানিনা। ছোটনকে জিজ্ঞাসা করবেন। আসি। (উকিল)
– অর্ন কোথায়? ফোন করো তাকে। (আরিনা বেগম)
– ওহ,সরি আরেকচা পেপার আছে। এটা অবনিকেই দিতে হবে। চিঠি আছে।

উকিল সাহেব কথাটা বলে পকেট থেকে একটা চিঠি বের করলেন। অবনির দিকে বাড়িয়ে, তিনি সেখান থেকে প্রস্থান করল। অবনি চিঠিটা বের করে। অর্নের দেওয়া চিঠি। সেখানে যা লেখা আছে.. “ভালোবাসি অবনি। অবাক হচ্ছো? অবাক হওয়ারই কথা। প্রথম আমার থেকে কথাটা শুনলে তো অবাক হওয়ার কথা। যাইহোক.. যখন চিঠিটা পাবে তুমি। তখন আর আমি দুনিয়াতে নেই। মানে চলে যাবো ওপারে। আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী। ইরাকে ভালোবেসেছিলাম। ইরাকে পেয়ে বুঝেছিলাম হয়ত জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই। কিন্তু কি হল.. ইরা আমাকে ভূল বুঝলো। লজিক আর অনুভুতি দিয়ে যদি ভাবা হয়, তাহলে আমার জীবনের সাথে তুমি জড়িয়ে ছিলে। আমি যখন একটু একটু করে তোমাকে ফিল করা শুরু করেছি। তখনি আরো একটা ঝড় শুরু। ঝড়ের নাম সিফাত।

আমি জেলাস হতাম, কষ্ট পেতাম। সেদিন রাতে ছোটনের মায়ের লাশ দাফন করছিলাম। ইরার সাথে না। সেদিন তোমার ফোন কলের আগে ইরা ফোন করেছিল। তাকে তুমি ভেবে বলেছিলাম ভালোবাসি অবনি। কিন্তু সে ছিল ইরা। ইরার পর তুমি ফোন করেছিলে। ভেবেছিলাম ইরা করেছে। তাই ইরার নামটা বলেছিলাম। বাকি কথা না শুনেই কেঁটে দিয়েছিলে। বোঝাতে চেয়েছিলাম অনেক কিছু। কিন্তু আমাকে তুমি অনেকটাই অপমান করেছিলে। এতটা অপমান আমি কখনো শুনিনি, সহ্যও করিনি। কেনো তুমি আমার সাথে এমন করছো, তার কারণ খুজতে যেয়ে বুঝলাম, আমি তোমার ভালোবাসার মূল্য দিইনি। আর আসল কথা, সিফাত এসেছে তোমার জীবনে। যাইহোক… ভালো থেকো সবাই। তোমাদের জন্য সব রেখে গেলাম। মাফ করে দিও।
.
অবনি চিঠি পড়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়া শুরু করেছে। আরিনা বেগস এগিয়ে এলেন। অবনিকে দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে.. “কি হয়েছে অবনি? এভাবে বসলি যে?” অবনি হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে..

– অর্ন আর নেই। সে সুসাইড করেছে। সে আমার আর সিফাতের মধ্যে অনেক কিছু ভেবে, আমাদের ভালোর জন্য নিজেকে মেরে ফেলেছে। আমিও মরে যাবো। অর্নকে এনে দাও তোমরা। (অবনি)
– কিহ? অর্ন সুসাইড করেছে মানে? (আনাফ)

চিঠিটা আনাফ পড়ে। তারপর সেও একি কথা জানায়। আরিনা বেগমও পড়েন। উনিও অবনির মত করে কাঁন্না শুরু করে দিয়েছে। তারপর.
.
অর্ন রাস্তার পাশে পড়ে আছে। সে সুসাইড করতেই যাচ্ছিল। কিন্তু তার আগেই বড় রকমের একটা এক্সিডেন্ট ঘটে গেছে। এক্সিডেন্টে অনেক মানুৃষ নিহতও হয়েছে। পুৃলিশ এসেছে সেখানে। আশেপাশে সবকিছু চেক করতে থাকে। একটা পিকআপ, একটা বাস পড়ে আছে। পুলিশেরা রাস্তা ব্লক করে চেক করতে থাকে সবকিছু। একজন পুলিশ টর্চ হাতে নিয়ে এগিয়ে আসে দূরে। একটা বাইক পড়ে থাকতে দেখে তিনি। দৌড়ে সেদিকে যায়। বাইকের অবস্থা অনেক খারাপ। বাইকের কাছে দাঁড়িয়ে আশেপাশে টর্চ মারে। অনেক রক্ত পড়ে আছে রাস্তার উপর। রক্ত অনুসরণ করে টর্চ মারতেই বাইক থেকে আরো বেশ খানিকটা দূরে মেইন রাস্তার পাশে, ঝোপের দিকে সাদা শার্ট পরা একজন পড়ে আছে। পুলিশটা জোরে বড় পুলিশদের ডাক দেয়। সবাই এসে দেখে একজন পড়ে আছে। আর সে হল অর্ন।

অর্নের কাছে আসে তারা। রক্ত একজায়গায় হয়ে আছে। অনেক বেশিই রক্ত বের হয়েছে। পুৃলিশ একজন, অর্নের প্যান্টের পকেটে হাত দিল। মোবাইল, মানিব্যাগ বের করলেন। মানিব্যাগে আইডি কার্ড। নাম্বার বুক রাখা আছে। অর্নের ফোন ভেঙে গেছে একদমই। আইডি কার্ডে নাম দেখলো তারা “আবিদ হাসান অর্ন।” নাম্বার বুকটা বের করলো। প্রথমেই আরিনা বেগম নামে একটি নাম্বার লেখা। তারপর…

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে