প্রণয় পর্ব-১২

0
1157

#প্রণয়
#১২তম পর্ব
#Abir Hasan Niloy

অর্ন শেফার দিকে তাকিয়ে আছে। শেফা অর্নের সামনে এসে দাঁড়ালো। গম্ভীর হয়ে বললো..

– অবনি তোমার বউ তাইনা? আমি এখন সব জানি। (শেফা)
– হুমম।
– আমি দেখেছি সিফাত ভাইয়া অবনিকে ধাক্কা দিয়ে নিজের বিছানায় ফেলে দিতে। তারপর ভাইয়া অবনিকে তার খোলা পেট ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়। তারপর.. (শেফা)
– থাক। কিছু বলতে হবেনা। আমি বুঝতে পেরেছি। কাউকে কিছু বলো না। (অর্ন)
– শোনো আগে। (শেফা)
– আর কিছু শোনারর প্রয়োজন নেই।

অর্ন তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হল। আজকে অর্নের অনেকটা কান্না পাচ্ছে। অর্ন এবার ইরার জন্য কাঁদছে না। অর্ন কাঁদছে অবনির জন্য। বিয়ের কয়েকদিনে অনেক কিছুই ঘটে গেছে। বিয়েটা কাঁকতালীয়ভাবে হয়েছে। প্রথমে অর্ন ভেবেছিল, অবনিকে ছেঁড়ে সে ইরার সাথে থাকবে। আর অবনি ভেবেছিল, ভালোবাসা দিয়ে অর্নকে ভরিয়ে দেবে। কিন্তু অর্ন না পেয়েছে ইরাকে, আবার অবনি না পেয়েছে অর্নকে। বরং তার বদলে একজন ভালোবাসা হারিয়েছে। আরেকজন পেয়েছে অনেক অবহেলা। আর এই অবহেলা অপমান তীলে তীলে মানূষকে পরিবর্তন বা শেষ করে দেয়। অর্ন অবনিকে স্পর্শ না করলেও অর্নের দেওয়া প্রতিদিনের অবহেলা, কষ্টগুলো অবনির মনের অর্নের প্রতি আলাদা ভাব সৃষ্টি হয়েছে। অবনি অর্নের কথা মনে করলেই, অর্নের দেওয়া অপমান, অবহেলাগুলো বেশি মনে করে।

আর অবনির মনের অবস্থা তখন শোচনীয় হয়ে যায়। ঠিক এমন সময় অবনির মনে নতুনকরে ভালোবাসা জন্ম নেওয়ার মত অনুভুতি সৃষ্টিকারী একজন মানুষ এসেছে। যে কিনা অবনিকে বুঝতে পারে। অবনি কালো বলে তার জন্য কোনো অবহেলা নয়, বরং ভালোবাসা দেখিয়েছে। আর অবনি এতদিন এই ভালোবাসাটাই অর্নের কাছে চেয়েছে। অর্ন তা দেয়নি। অবনি কারো ভালোবাসা তো কখনো আশা করেনি। আসলে মেয়েরা সবার ভালোবাসা আশাও করেনা। বিশেষ একজনের ভালোবাসা সবার থেকে বেশি করে আশা করে। সে হল তার প্রিয় মানুষ। অবনির প্রিয় মানুষ অর্ণ। অর্নের থেকে সামান্য ভালোবাসা চেয়েছিল অবনি। কিন্তু অর্ন তা কখনো দেয়নি। অবনি এই ভালোবাসাটা সিফাতের থেকেই পাচ্ছে। মানুষ অপমান অবহেলার দাস নয়। মানুষ ভালোবাসার দাস। ভালোবাসা পেলেই মানুষ নতুন করে বাঁচার আশা খুজে পায়।

সেখানে অবনি তো ছোট বেলা থেকেই ভালোবাসাহীন জীবন কাঁটিয়েছে। তাই সিফাতের থেকে এতটা ইম্পরটেন্স, একটা আগ্রহ, এতটা ভালোবাসা পাচ্ছে। তখন তারই বা কি দোষ। ভালোবাসার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে। অবনি কি অর্নকে ছাঁড়তে পারবে না? ও দিকে ইরার প্রতি ছিল অর্নের অগাধ বিশ্বাস। অর্নকে কখনো ভূল বুঝবে না ইরা। অথচ ইরা অর্নের থেকে কিছুই শুনলো না। ইরা ঠিকিই অর্নের বিরুদ্ধে বন্ধুদের কাছে কতকিছু শুনে অর্নকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। আর অর্ন যতবার ভালোবাসার দাবি নিয়ে ইরাকে বোঝাতে গিয়েছে। ততবারই ইরা অপমান করে অর্নকে ফিরিয়েছে। কি অদ্ভুত পৃথিবীর নিয়ম। কেউ অন্যকাউকে অবহেলা করলে, সেই আবার আরেকজনের কাছে অবহেলিত হয়। যাকে ভালোবাসা হয়, সে বাসে অন্যকে। আবার তাকেও অন্য একজন ভালোবাসে। অথচ আমরা বুৃঝিনা। আমরা সবসময় আমাদের নিজেদের ভালোবাসাটাকে প্রাধান্য দিই বেশি। অথচ অন্যকেউ যে আমাকে ভালোবাসছে, সেটা বুঝিইনা।

অর্ন ঠিক এটাই অনুভব করেছে। অর্নও ভালোবাসার দাস। ইরার থেকে অপমান পেয়ে, সে যখন বুঝলো তার জন্য অবনিই পারফেক্ট। অর্ন যেন দেরি করে ফেলেছে। অবনির ভালোবাসাগুলো অনুধাবন করেছে অর্ন। অবনির প্রতি টান সৃষ্টি হয়েছে। ভালোবাসা সহজে তৈরী না হলেও অবনিকে সে আর কষ্ট দেবে না ভেবেই কাছে আসার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কিছু মানুষ থাকে, অনেক অনেক বেশি ভালোবাসার পরও স্বীকার করতে পারেনা। অর্নও যেন ঠিক এমন। অবনিকে এখন যে সে চায়, এটাই প্রকাশ করার সাহস নেই অর্নের। করলেও অবনি সেটা হাস্যকর ভাবেই নেবে। এটাই একটা বিভৎস নিয়ম। যখন অগাধ ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়, তখন সেটা তেতো না হয় হাস্যকর হয়ে যায়। অর্ন এখন অবনিকে চায়। আর অবনি ভালোবাসা চায়। যা সিফাতের কাছেই সে পেয়ে এসেছে এ কয়েকদিন।

অর্ন পকেটে হাত গুজে ক্যান্টিনে আসলো। শেফার কথাগুলো মাথা থেকেই ফেলতে পারছে না অর্ন। একটা টেবিলে এসে বসলো সে। ছোটন এসে পাশে দাঁড়ায়। ছোটনের দিকে খেয়াল নেই অর্নের। ছোটন বলে..

– ভাইয়া.. মন খারাপ কইরা আছো কেন?
– ভালো লাগছে না। এমনি, কোনো কারণও খুজে পাচ্ছিনা। (অর্ন)
– মন খারাপের পিছনে থাকা একটা ছোট বা বড় কারণ, কেউ প্রকাশ করতে লজ্জা বা ভয় পায়, কেউ অনায়াসে মন খারাপের কারণ বলে দেয়। তবে বেশিরভাগ মন খারাপের কারণ আমরা ‘কিছুনা, এমনি’ বলে চালিয়ে দিই। (ছোটন)
– তুই অনেক গুছিয়ে কথা বলা শিখেছিস। (অর্ন)
– পড়াশোনা করছি তো। তোমার দেখা আমাকে নিয়ে স্বপ্ন পূরণ তো করতেই হবে। (ছোটন)
– ভালো চিন্তা করেছিস তুই। এ জন্য তোকে ভালো লাগে অনেক। ওহ, একটা কথা। একটা না, দুটো কথা আছে। (অর্ন)
– বলো।
– প্রথমটা হল, আমার বন্ধু তুর্জ আছে না? ওর বিয়ের অনুষ্ঠান আজ। তুই আর আমি যাবো। সন্ধ্যায় রেডি থাকিস। (অর্ন)
– কিন্ত সেখানে তো ভাবি আর তুমি যাবে। (ছোটন)
– নাহ, তোর ভাবি কেউ নেই। (অর্ন)
– হুম, বুঝছি এবার মন খারাপের কারণ। যাইহোক, আরেকটা কি কথা বলো। (ছোটন)
– দাঁড়া..

অর্ন দোকানী মামার দিকে তাকিয়ে একটা কাগজ আনতে বললো। সাদা পৃষ্টা আনে সে। অর্ন কলম দিয়ে সাদা পৃষ্টায় কিছু লিখলো। তারপর সেটা ভাঁজ করে ছোটনের শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। ছোটন প্রশ্ন করে..

– কি এটা?
– এই কাগজটা আমার বাবার কাছে নিয়ে যাবি। তোকে উনি চেনে। আমার মায়ের কাছে নিয়ে গেলেও হবে। আমার যা কিছু আছে তা প্রায় সবটা তোকে দিয়ে দিলাম। মানে প্রায় এক কোটি টাকার মত হবে। এটা তোর জন্য দিয়ে যাচ্ছি। আর কখনো তোর সাথে দেখা হবেনা। (অর্ন)
– মানে? (ছোটন)
– কোনো মানে নেই। হারিয়ে যেতে চাই বহুদুর। হয়ত দুনিয়া ছেঁড়ে নয়ত দেশ ছেঁড়ে। আমি চাইনা, আমার জন্য ইরার সমস্যা হোক, আমি চাইনা আমার জন্য শিহাবের সমস্যা হোক। আমি এটাও চাইনা, আমার জন্য সিফাতের কোনো সমস্যা হোক। আমি চাইনা আমার কারণে সবার সমস্যা সৃষ্টি হোক। বিশেষ করে… বিশেষ করে অবনির যেন সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা না হয়। আমি এ জন্য সবার থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। ভালো থাকিস ছোটন। সরি, সন্ধ্যায় দেখা হবে। কথা দিয়েছিলাম তুর্জকে, তার বিয়েতে আমি যাবো। কিছু সময় থাকবো। তারপর চলে আসবো। রেডি থাকিস।

অর্ন ক্যান্টিন থেকে বের হলো। কিছু ভালো লাগছে না ওর। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। সে আলাদা একা কোথাও দাঁড়িয়ে খুব করে কাঁদবে।
.
বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল। আরিনা বেগম এসে দরজা খুলতেই, দুজন মানুষ আরিনা বেগমের পা জড়িয়ে ধরে। আরিনা বেগম নিচের দিকে তাকায়। পা জড়িয়ে ধরা ব্যক্তিকে আরিনা বেগমর চিনতে অসুবিধা হয়নি। আনাফ এসেছে। আর সাথে ওর স্ত্রী। সেদিন বিয়ের আসর থেতে পালিয়ে যায় আনাফ। অবনিকে বিয়ে না করে, সেদিন রাতেই আনাফ তার প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিয়ে করে দুজন আবার ফিরে এসেছে। আনাফ পা জড়িয়ে ধরে আরিনা বেগমকে বলে..

– মা, আমি অবনিকে বিয়ে করতে চাইনি। আমার পছন্দ না। তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেও পারিনি। এ জন্য পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমি এই মেয়েটাকে ভালোবাসি ভীষণ। আমাকে মাফ করে দাও। আমি চলে এসেছি তোমার কাছে থাকবো বলে।

আনাফের কথা শুনে বাড়ির অনেকে দৌড়ে এসেছে। অবনি, সিফাতসহ সবাই এসেছে। আনাফ আরিনা বেগমের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। মা যতই সন্তানের জন্য অপমানিত হোক না কেনো। একটা মা নিজেই জানে সন্তান মায়ের কাছে কতটা প্রিয়। তাই সন্তান যতই ভূল করুক না কেনো, মায়ের কাছে যেন সে নির্দোষ থাকবেই। আনাফ পা জড়িয়ে ধরতেই আরিনা বেগমের মনে আনাফের প্রতি জমা রাগ নিমিষেই চলে গেছে। আনাফকে টেনে তুললো। আনাফ তার মাকে জড়িয়ে ধরে।

– মা, আমাকে মাফ করে দাও। আমি আর কখনো ভূল করবো না। (আনাফ)
– আচ্ছা হয়েছে। তোর দাদুর সাথে কথা বলে নিস। (আরিনা বেগম)
– দাদু কোথায়? (আনাফ)
– ওনার রুমে আছে।

আনাফ দৌড়ে তার দাদুর রুমে চলে যায়। তারপর অনেকটা সময় পর বের হয়। দাদুর সাথেই আনাফ বের হয়। সবাই বুঝতে পারে আনাফ দাদুকে মানিয়ে নিয়েছে। সবার সাথে আনাফ কথা বলে। আবারো মায়ের কাছে আসে। আস্তে গলায় বলে..

– অবনির বিয়ে হয়নি আমার জন্য। খুব খারাপ লাগছে। (আনাফ)
– কে বললো বিয়ে হয়নি? (আরিনা বেগম)
– হয়েছে? কে বিয়ে করেছে অবনিকে? (আনাফ)
– অর্ন। অবনি এখন অর্নের বউ। (আরিনা বেগম)
– অর্নের বউ সে? অর্ন তাকে বিয়ে করেছে? তাহলে ইরা? (আনাফ)
– ইরা? ইরাটা আবার কে? (আরিনা বেগম)
– ইরাকে চেনো না? তোমাকে বলেনি অর্ন? ইরাকে তো অর্ন নিজের চাইতে বেশি ভালোবাসতো। ওদের রিলেশনশীপ প্রায় তিন বছরের। জানো না তুমি? (আনাফ)
– কিহ? আমাকে কেনো বলেনি সে? আর ওর ভালোবাসা সেক্রিফাইস করে অবনিকে বিয়ে করেছে? (আরিনা বেগম)
– সব দোষ আমার। হয়ত তোমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে, তোমাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে অর্ন তার ভালোবাসার কথা ভাবেনি। সে অবনিকে বিয়ে করেছে। (আনাফ)
– কি বলছিস তুই? অর্নের সাথে তাহলে আমরাও অন্যায় করেছি। ওর কথাটা শোনা দরকার ছিল। (আরিনা বেগম)
– বাদ দাও। ওরা হ্যাপি থাকলেই হবে। অর্ন কোথায়? (আনাফ)
– তুর্জের আজ বিয়ে হয়ত, এ জন্য বাইরে গেছে কিছু কেনাকাটা করতে। বিকেল হয়েছে। আসবে হয়ত এখনি। (আরিনা বেগম)

বাড়ির সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে। সিফাত আর অবনি সামনা সামনি বসা। সিফাত একটু একটু করে অবনির দিকে তাকাচ্ছে। অবনি মনে মনে অনেক কিছুই ভাবছে। সেই ভাবনাতে কখনো সিফাত, আবার কখনো অর্ন আসছে। তবে ভাবনাতে অর্নই বেশি ঘুরছে। অবনির কাছে যেন এখন অপশন ভালোবাসার কথাটি এসে গেছে। বারবার নিজেকে প্রশ্ন করছে, কোন ভালোবাসাটা তার গ্রহন করা উচিৎ। যে, সে যাকে ভালোবাসে তাকে গ্রহন করা নাকি তাকে যে ভালোবাসে, তাকে গ্রহন করা উচিৎ?
.
সন্ধ্যার কিছু সময় আগে অর্ন এসেছে। আনাফ এসেছে সে জানেনা। দেখা হয়নি এখনো। আনাফ ওর দাদুর রুমে বসে গল্প করছে। অর্ন সোজা নিজের রুমে প্রবেশ করে। ওয়াশ রুমে যেয়ে টিশার্ট খুলে ফ্লোরে ছু্ঁড়ে দেয়। তারপর মুখে পানির ছিঁটা, আর ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিল। মুখ মুছে বাইরে বের হল অর্ন। প্যান্ট চেন্জ করে কি পরবে তা খোজার জন্য কাপড়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। এ সময় অবনি রুমে আসলো। বিছানায় এসে বসলো। আড়চোখে তাকালো অর্নের দিকে। খালি গায়ে দাঁড়ানো অর্ন। কোনো জায়গাতে একটুও লোম নেই। অবনি অর্নের খোলা পিঠের দিকে তাকিয়ে থাকে। অর্ন সাদা শার্ট বের করলো। কোনোদিক না তাকিয়ে গায়ের উপর পরে নিল ও। শার্টের বোতাম লাগিয়ে প্যান্টের সাথে ইন করে, সামনে ঘুরলো। অবনি তাকিয়ে ছিল সেদিকে। অর্ন ফিরতেই চোখ সরিয়ে নেয়।

টেবিলের কাছে এসে, বডি স্প্রে হাতে নিয়ে দুই হাতের নিচে লাগাতে লাগাতে অবনিকে বলে.. “আপনার জন্য গুড নিউজ আছে। অনেক খরচ হয়েছে, তবে আপনার জন্য এতটুকু করার দরকার ছিল। আমি প্রেমিক হতে না পারলেও দুশমনও হতে পারবো না। এটার কোনো রাইট আমার নেই। কারো অসুবিধা যেন আমার কারণে না হয়। তার জন্য অর্ন সবকিছু করতে প্রস্তুত। যাইহোক.. বিয়েতে আপনি যাবেন না। রাতের মধ্যে ডিভোর্স লেটার চলে আসবে। ধন্যবাদ আপনাকে, অনেক কিছু শেখানোর, বোঝানোর আর জানানোর জন্য।”

অর্নের কথা শুনে অবনি অবাক হয়। এত তাড়াতাড়ি ডিভোর্স? মানে টা কি? কি পেয়েছে অর্ন অবনিকে? যা খুশি তাই করবে? অবনির খুব রাগ হতে থাকে। সত্যিই ভিডোর্সের কথা শুনে ওর বুকটা কেঁপে উঠল। কিন্তু মনে মনে বলে “স্বার্থপর মানুষের থেকে দূরে থাকা ভালো।” অর্ন কালো কোর্ট পরে নিল। তারপর লোফার পরে বের হতে যাচ্ছিল, দরজার কাছে থেমে যেয়ে বলে..

– আমি ইরাকে চাইনা। ইরাকে চাইতাম। কিন্তু আমি জড়িয়ে গিয়েছিলাম কারো লাইফে। সেটা এক্সিডেন্টলি হয়েছিল। ইরাকে তা বোঝাতে পারিনি বিষয়টা। সে ঠিকিই দুদিন পর শিহাবের সাথে জড়িয়ে গেছে। হাস্যকর। যাইহোক, সে পারলে আমিও পারবো না কেনো? জড়াতে চেয়েছিলাম কোনো এক ধোয়াশার সাথে। কিন্তু সে আসলেই ধোয়াশা। আর ধোয়াশা ছোঁয়া যায়না, কাছে টেনে নেওয়া যায়না। কেবল দূর থেকে ধোয়াশাকে অবলকন করতে হয়। তাতেই সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। তবে এবার দূর থেকেও দেখা হবেনা। আমি… থাক। বাদ দিই এসব কথা। টেক কেয়ার।

অর্ন কথাগুলো বলে আর দাঁড়ায়নি। সে নিচে নেমে আসে। আরিনা বেগম দাঁড়িয়ে ছিল। অর্ন এসে মায়ের সামনে দাঁড়ায়। আরিনা বেগম বলে

– বাব্বাহ.. আমার ছেলেকে তো রাজকুমারের মত লাগছে।

অর্ন মুচকি হাসলো। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে, নিচু হল। পায়ে সালাম করে, অর্ন ওঠে দাঁড়ায়। মায়ের দিকে না তাকিয়ে বলে “নিজের যত্ন নিও।” অর্ন ঘুরে চলে আসার জন্য পা বাড়ায়। আরিনা বেগমের বুকের ভিতর কেমন যেন চিনচিন অনুভব হয়। মায়ের মন অনেক কিছুই অনুভব করতে পারে। তিনি বলেন..

– কি হয়েছে অর্ন। হঠাৎ এভাবে কথা বলছিস কেনো?
– এমনিতে। যাচ্ছি। (অর্ন)
– যাচ্ছি মানে? বল আসছি। কি হয়েছে তোর? (আরিনা বেগম)

অর্ন মুচকি হাসলো। সে আর ফিরবে না। নিজেকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে অর্ন। তাই এমন করেই কথা বলছে। অর্ন আর দাঁড়ালো না। তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হল। বাইকের উপর বসে, মাথায় হেলমেট পরে নেয়। বাইক স্টার্ট দিয়ে বের হল ও। উদ্দেশ্য আপাতত তুর্জদের সাথে দেখা করা।
.
অর্ন বিয়ের আসরে উপস্থিত হল। তুর্জদের সামনে এসে দাঁড়ালো। তুর্জের পাশে ওর বউ দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা আসলেই সুন্দর। অপরুপ দেখতে। সত্যিই তুর্জের চয়েজ আছে। তুর্জ এগিয়ে আসলো। অর্নের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় স্টেজের উপর। মাইক হাতে নিয়ে তুর্জ বলে..

– হ্যালো এভরিয়ান। আমার বন্ধু অর্ন। তার পরিচয় এতটুকুই থাকুক। সে এসেছে আমার বউ দেখতে। কেনো জানেন? অর্নের বউ একটা ক্ষ্যাত আর কালো। বিচ্ছিরি দেখতে সে। জঘন্য দেখতে। ভয়ে আমার বন্ধু তার বউকে সাথেই আনেনি। (তুর্জ)
– কিরে, এসব কি হচ্ছে? অবনিকে নিয়ে কেনো কথা বলছিস? (আস্তে গলায় অর্ন বলে)
– কালো মেয়ে অর্নের বউ। আর আমার বউ দেখুন সবাই। হাসি লাগে অর্নের বউকে দেখলে। (তুর্জ)
– তুর্জ.. অবনিকে নিয়ে আর একবার বাজে কথা বললে, আমি কিন্তু তোকে মেরে ফেলবো। (অর্ন)
– কি করবি রে? (তুর্জ)

ঠিক তখনি ঠাস করে একটা চড়ের শব্দ শুনতে পায় সবাই। ঘুরে তাকিয়ে দেখে তুর্জের বউ, একটা ওয়েটারের গালে কষে চড় বসিয়ে দিয়েছে। ওয়েটার ছেলেটা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। তুর্জের বউ বলে..

– কুত্তার বাচ্চা, চোখে দেখিস না? তুই জানিস, আমার ড্রেসের দাম কত? তোর পাঁচ মাসের বেতনের থেকেও বেশি। কি সাহসে আমার ড্রেসে তুই পানি ফেলেছিস?
– ম্যাম, আমি দেখতে পাইনি। আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি। আর অতি সামান্যই ম্যাম। (ওয়েটার)
– কিহ? আমার মুখের উপর কথা বলিস? বেয়াদব কোথাকার। তোর যোগ্যতাও নেই আমার ড্রেসে হাত লাগানোর।

তুর্জের বউ কথাটা বলেই ছেলেটাকে ধাক্কা দেয়। কিন্তু কে যেন এসে ছেলেটার হাত ধরে টেনে তুললো। সবাই ও দিকেই তাকিয়ে আছে। অর্নও তাকিয়ে আছে। অবনি এসেছে। কিন্তু পিছনে কে? সিফাত? সিফাত কেনো এসেছে অবনির সাথে? অবনি ছেলেটার হাত ধরে টেনে তুলে বলে..

– কিছু মানুষ আছে, যারা জানোয়ার হয়। মানুষ হতে পারেনা তারা। তুমি এমন কাজ ছেঁড়ে দাও ভাই। এসব অহংকারী জানোয়ার সেন্চ মানুষদের থেকে দূরে থাকবে। (অবনি)
– ঐ, জানোয়ার বললি আমাকে? নিজের দিকে তাকিয়েছিস কোনোদিন? কালো দেখতে, আমার সামনে দাঁড়িয়ে তোর কথা বলার যোগ্যতা নেই বুঝেছিস? (তুর্জের বউ)
– দেখুন ম্যাম.. সৌন্দর্য দিয়ে আপনি পানি খাবেন বুঝলেন? আপনার মত মেয়ে বাইরের দেশে ফকিরের মতই আছে। সৌন্দর্য কেবল কালোদের সামনেই দেখাতে পারেন। হাস্যকর। (সিফাত)
– তোরা এখানে কেনো? (অর্ন)
– দেখতে এসেছিলাম, সুন্দর ছেলের বউটা কেমন সুন্দর। হা সুন্দর তিনি। তবে গায়ের রঙে। ভিতরে একটা জানোয়ার আছে। (অবনি)

অবনি কথাটা বলে দাঁড়াতেই তুর্জ এসে অবনির গালে চড় দিতে যায়। আর তখনি…..

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে