#প্রণয়
#১০ম পর্ব
#Abir Hasan Niloy
…
অর্নের ঘুম ভাঙতেই জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। স্বপ্নটা যেন ওর মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে এখনো। অবনিকে পাওয়ার ব্যাকুলতা ওর স্বপ্নের মধ্যে এতটা উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করবে, অর্ন কখনো অনুভব করেনি। অর্ন চারপাশে তাকায়। পানি পিপাসা পায় ওর। টেবিলে থাকা পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিল অর্ন। বিছানার পাশে অবনি নেই। সোফার দিকেও তাকালো অর্ন। সেখানেও অবনি নেই। গা কেমন ভার হয়ে এসেছে। নিজেই নিজের কপালে হাত দিয়ে অনুভব করে জ্বর এসেছে। কিন্তু জ্বরটা যেন গতানুগতিক সময়ের তাড়ম্বে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে না। সে অবনিকে খুজছে। অর্নের মন অবনির খোজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে বিছানা ছেঁড়ে উঠল। বাইরে এসে এদিকে সেদিক তাকালো।
ছাদের দরজা খোলা দেখে সে। অর্ন এগিয়ে যায়। ছাঁদের দরজা পা হয়ে ছাঁদের উপরে চলে আসে। ডান পাশে তাকায়, তারপর বাম পাশে চোখ পড়তেই অর্ন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। অবনি আর সিফাত একসাথে, খুব কাছে গা ঘেসে দাঁড়িয়ে আছে। অবনি শব্দ করে করে হাসছে। সিফাত হাত ধরে আরে অবনির। অবনির কোনো তাড়া নেই, হাত সরানোর। অর্ন একবার চোখ বন্ধ করলো। মনে মনে বললো “এটা আমার চোখের ভূল। হয়ত এটাই সেই স্বপ্ন। চোখ খুললে আমি দেখবো আর কিছু নেই। আমি বিছানায় শুয়ে আছি।” অর্ন চোখ খোলে। এটা স্বপ্ন নয়। এটা সত্য। এটা কল্পনা নয়, এটা বাস্তব। অর্ণ কোনো শব্দ না করে সেখান থেকে চলে আসে। রুমে এসে বসতেই ওর ফোন বেঁজে ওঠে। অচেনা একটি নাম্বার। অর্ন রিসিভ করে।
– আপনি অর্ন বলছেন? (ফোনের ওপাশ থেকে)
– জ্বি… (অর্ন)
– আমি নার্স বলছি। আপনার রিলেটিভ জাহিনারা বেগম কোনো রোগী আছে কি? (নার্স)
– হুম, আছে। কেনো? (অর্ন)
– দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, উনি মারা গিয়েছে একটু আগে। আপনার কথা বলছিল তিনি। নাম্বারটা রিসিপশন থেকে নেওয়া হয়েছে। (নার্স)
– কিহ? উনি মারা গেছে মানে? (অর্ন)
– জ্বি, ওনার হার্টের সমস্যা সহ কিডনির সমস্যা ছিল। আর ওনার কিডনি ড্যামেজ হয়েছে দুটোই। কন্ডিশন ভালোছিল না। আসলে কিভাবে বলি, উনি এতদিন বেঁচে ছিলেন কিভাবে এটা আমরা কল্পনাও করতে পারছিনা। ডোন্ট মাইন্ড, ওনার যেমন কন্ডিশন ছিল তাতে করে দুইমাস আগে থেকে ওনার মারা যাওয়ার কথা। অসম্ভব ব্যাপার ঘটেছে। (নার্স)
– আচ্ছা আমি আসছি।
অর্ন কয়েক মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিল। ছোটনের মা মারা গেলো। ভাবতেই পারছেনা ছোটনের মা এভাবে মারা যাবে। চোখে পানি জমা হচ্ছে। অর্ন বাইক নিয়ে বের হয়। ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে অবনি। এত রাতে অর্নকে বের হতে দেখে অবাক হয়েছে। তবে সে মনে মনে বলে “অর্ন এত রাতে কোথায় যাচ্ছে? কি জানি? হয়ত ইরার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। আমাকে অর্ন কখনো ভালোবাসবে না। আমি তার কাছে কালো, জঘন্য দেখতে। ইরা তার সব কিছু। আমি না খেয়ে থাকলেও সে কোনোদিন খোজ নেবে না।” অবনির মনে অর্নকে নিয়ে এখন ভূল ধারণা জন্ম নিচ্ছে। অবনির ভালো লাগছে না এখানে। সে সিফাতকে কিছু না বলেই রুমে চলে আসে। নিজের ফোন হাতে নিল ও। অর্নের কথা ভাবতে ভাবতে কল দেয় একবার। অর্ন রিসিভ করে না। সে খুব জোরে বাইক চালাচ্ছে। ছোটনের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। ছোটনকে ডেকে নিয়ে বাইকে বসে অর্ন। আবারো ফোন বেজে ওঠে অর্নের। স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখে অবনির নাম ভেসে আছে।
রিসিভ করতেই যাচ্ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে অবনি আর সিফাতের একসাথে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্যটা অর্নের চোখের সামনে ভেসে ওঠে। অর্ন ফোন রিসিভ করে না। সে ছোটনকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে যেতে থাকে। অবনি বিছানায় বসে থাকে। ফোন দিতে থাকে অর্নকে। কিন্তু অর্ন রিসিভ করেনা। অবনি ভাবে অর্ন ইরার জন্যই বের হয়েছে। অর্ন কখনো এত রাতে বের হয়নি আগে। ইরা ছাড়া অর্ন কারো কথায় এখন বের হবেনা।
.
ভোর পাঁচটা বাজে। পাঁচিলের উপর বসে আছে ছোটন আর অর্ন। অর্নের ফোন আবার বাজা শুরু করেছে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অবনির কল। অর্ন চুপচাপ বসে থাকে। পাশে বসা ছোটন বললো..
– কলটা রিসিভ করো ভাইয়া। যে মাইয়া মাঝ রাইতে কল দিয়া বিরক্ত করে, যে মেয়ে ফজরের নামাজ পইড়া কল দিয়া বিরক্ত করে, সেই মাইয়া অনেক ভালোবাসতে জানে। (ছোটন)
– তোর কষ্ট হচ্ছে না? আনটি চলে গেলো এভাবে ছেঁড়ে? (অর্ন)
– হ্যা খুব হচ্ছে। তই কিছু কইতেছি না। আমি হাহাকার কইরা কাইন্দা দিতে পারিনা। পৃৃথিবীর সবচাইতে বড় সুখ হল মায়ের আঁচল। যার মা আছে, সে কখনো গরীব হয়না। যার মা আছে, তার সবকিছু আছে। মায়ের হাতের খাবার আর ঝাটার বাড়ি, দুটোই মজার। শুধু গ্রহনের জন্য মন থেকে আনন্দ প্রকাশের মুহুর্ত থাকতে হবে।
ছোটনের কথা শুনে অর্ন এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। ছোটন অর্নের কোলে মাথা গুজে শব্দ ছাড়া কাঁদতে থাকে। কল্পনা করতে থাকে সে ‘স্কুল যাওয়া নিয়ে প্রতিদিন মায়ের সাথে কত ঝাড়িটাই না সে প্রকাশ করতো। আজ থেকে সে এটা পারবে না। মায়ের ঘরের দিকে চোখ পড়লেও না সেই ঘর থেকে সন্তানের প্রিয় নাম ধরে কেউ ডাকবে না। বলবে না, এটা কর, ওটা কর। নিজের যত্ন নে।’ একটা মেয়ের থেকে ছেলের কাছে তার মা বাবা বিশাল হয়ে থাকে। কারন একটা মেয়েকে বিয়ে দিলে সে সম্পূর্ণভাবে তার স্বামীর উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। স্বামীই তার কাছে বিশাল হয়ে থাকে। কিন্তু একটা ছেলের কাছে মা বাবার পরে আর কিছুই নেই। তবে বর্তমান সমাজে দেখা যায়, মেয়েরাই শ্বশুর বাড়ি থেকে এসে মা বাবাকে দেখে শুনে যাচ্ছে। অথচ ছেলেটা বউ নিয়ে বুড়ো মা বাবাকে রেখে আলাদা থাকছে। কি খাচ্ছে না খাচ্ছে খোজও নেয়না। এরা সন্তান নয়, এরা পশু।
ছোটন পাঁচিলের উপর থেকে নামে। মায়ের কবরের পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। অর্ন পাঁচিলের উপর বসে আছে। ফোনটা বেজে উঠল। অবনির কল। অর্ন রিসিভ করে কানে ধরে। অবনি ওপাশ থেকে চুপ হয়ে বসে থাকে। অর্ন বলে..
– তুই জেগে আছিস?
– হুমম। আছি। তুই তো জেগে আছিস, ইরার সাথে রাত কাঁটালি। তোর জাগাটা তো স্বার্থক। (অবনি)
– হাহাহা.. হুমম অনেটাই স্বার্থক। দুজন দুজনার কাছে আসলাম। (অর্ন)
– আমি শুধু দেখতে খারাপ বলে আমার সাথে বারবার অন্যায় হয় কেনো? আমাকে তোর অপছন্দ তাই না অর্ন? প্রশ্ন কেনো করছি? আমি জানি তো আমিই তোর কাছে সবচাইতে অপছন্দের মানুষ। বেশ, আজকের পর প্রমিস করছি। তোকে ভালোবাসবো না। তোর জন্য অপেক্ষা করবো না। তোর জন্য রাত জাগবো না। তোর জন্য কিছু করবো না। করলেও সেটা কাগজে কলমে থাকা বৌয়ের ফরমালিটিজ মেনে করবো। তুই ইরাকে নিয়ে হ্যাপি থাকিস। (অবনি)
– আমাকে ছাড়া যদি তোর ভালো লাগে, যদি তোর বিরক্তবোধ না আসে। তাহলে আটকাবো কেনো? ভালোবাসা হারায় না। তবে ভালোবাসা পরিবর্তনশীল। ভালোবাসলে কারো ক্ষতি করতে হবে এমন কিছু উদ্দেশ্য থাকতে নেই। বরং থাকতে হবে সে যেন ভালো থাকে। অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকলেও যেন সে ভালোবাসে। (অর্ন)
– তোর কথা বুঝলাম না। কি বলতে চাচ্ছিস? তবে তুই আমার থেকে পুরোপুরিভাবে মুক্ত। যা ভালো থাক, আমি ডেয়ার হতে যেয়ে সো ফার হয়ে গেলাম। এভাবেই থাকি। ধন্যবাদ অর্ন। কালো বলে ভালোবাসাটা বুঝলি না।
অবনি ফোন কেঁটে দেয়। সে নিজেকে শক্ত করে নিল। অর্নকে অনেক কিছুই বলেছে আজ সে। এখন ওর মনে কোনো কথা জমে নেই। সে শান্তিতে ঘুমাতে পারবে। অর্ন ফোন কেঁটে দিয়ে মুচকি হাসলো। স্বপ্নের মানেটা এখন বুঝতে পেরেছে অর্ন। অবনি সামনে দাঁড়িয়ে। সে যতই অবনির কাছে যেতে চায় না কেনো, অবনির কাছে সে পৌছাতে পারবে না আর।
.
অর্ন বাড়ি এসেছে। আরিনা বেগম দরজা খুলে দিল। বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখে সবাই খেতে বসেছে। সিফাতের পাশে অবনি দাঁড়িয়ে আছে। সিফাতের প্লেটে খাবার বেঁড়ে দিচ্ছে। অর্ন নিচের দিকে তাকায়। সিফাতের পা অবনির পায়ের উপর রাখা। দুজনে একটু একটু করে মুচকি হাসছে। অর্ন এসেছে, অবনি ফিরেও তাকালো না। আরিনা বেগম অর্নকে বলে..
– সারারাত কোথায় ছিলি?
– বাহিরে। (অর্ন)
– কেনো? আর ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। (আরিনা বেগম)
– তোমরা খাও। আমার ইচ্ছে করছে না। (অর্ন)
– কেনো? অবনি অর্নকে নিয়ে আয় যা। (আরিনা বেগম)
– আচ্ছা। (অবনি)
অর্ন নিজের রুমে চলে যায়। ওয়াশ রুমে যেয়ে ঝরনার নিচে যেয়ে দাঁড়ালো। অর্নের মন খারাপ কেনো সে বুঝতে পারছে না। অবনির নিয়ে মন খারাপ? কেনো? অবনি তো ঠিক কাজ করেছে। অর্ন যেটাই চেয়েছিল সেটাই হয়েছে। অবনির থেকে নিজেকে দুরে রাখতে চেয়েছে, তাকে দুরে থাকতে বলেছে। অবনি তো এটাই করছে। তাহলে কেনো অর্নের মন খারাপ? কেনো সে অনুভব করছে চাপা রাগ, জেলাসি? কিসের এত জেলাস অর্ন? সিফাতের সাথে অবনির যা খুশি হোক। তাতে অর্নের কি? অর্ন তো তাকে ভালোবাসে না। তাহলে এত কিসের কষ্ট জমা হচ্ছে? আর কষ্টটা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ঐ অবনির দিকেই যাচ্ছে কেনো? অর্ন এমন অনেকগুলো প্রশ্ন নিজের মনে করে ফেললো। কিন্তু কোনো উত্তর নেয় তার কাছে।
অর্ন শাওয়ার শেষ করে শার্ট প্যান্ট পরে বাইরে বের হল। অবনি বিছানায় বসে আছে। অবনিকে দেখে অর্নেন মধ্যে হঠাৎ করে ভালোলাগা কাজ করছে। অবনির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। অবনি সাথে সাথেই দরজার কাছে চলে গেলো। সিফাতের হাত ধরে ভিতরে এনে বললো..
– তুমি বাহিরে কেনো? আর আমরা তো বন্ধুই। কোনো সমস্যা নেই। অর্ন, খালামনি তোকে খেতে ডেকেছে যা। সারারাত এখানে ওখানে ঘুরেছিস। এখন খেয়ে নে যা। (অবনি)
– সিফাত, উঠে আসছিস যে? খাবার খেয়েছিস? (অর্ন)
– হুমম। অবনি যা রান্না করে রে। উফ, সত্যিই না খেলে কখনো বুঝতামই না। একসাথে খেয়ে নিলাম। (সিফাত)
– কেমন বন্ধু তোরা, আমার জন্য অপেক্ষা করলি না। (অর্ন)
– অপেক্ষা তো তার জন্যই করতে হয়, যে অপেক্ষার মূল্য দিতে জানে। (অবনি)
– মানে? কি করলো সে আবার? (সিফাত)
– না মানে, এমনি বললাম। আজকে ঘুরতে যাবা না তুমি? (অবনি)
– হ্যা যাবো। তুমি যাবানা? (সিফাত)
– হুমম যাবো না কেনো? আগে ভয় হতো, লজ্জা পেতাম কালো চেহারার জন্য বাইরে বের হতে। কত বছর যে বাহিরে বের হইনি। কিন্তু তুমি আসার পর নিজেকে আর এমন মনে হয়না। আমিও প্রাণ খুলে হাসতে পারবো, ঘুরতে পারবো। কেউ আমাকে একটুও বোঝেনি। (অবনি)
– অর্ন, তুই না অবনির বন্ধু। তাহলে সবার আগে তোকে তো বোঝার দরকার ছিল এসব। আমি তো ভাবছিলাম তুই এতদিনে অবনির খুব কাছের বন্ধু হয়েছিস। কিন্তু না। কি বোকা কাজ করিস তুই। (সিফাত)
– আরে চলো তো.. এসব বাদ দাও। (অবনি)
– অর্ন তুই কিন্তু রেডি থাকবি। ঘুরতে যাবো। (সিফাত)
– নাহ, তোরা যাবি। আমার কাজ আছে।
কথাটা বলে অর্ন রুম থেকে বের হল। অবনি পাত্তাও দিল না অর্নকে। অর্নের খুব রাগ হচ্ছে। এত রাগ সে কখনো অনুভব করেনি। বাড়ির সবকিছু ভেঙে চুরে ফেলতে ইচ্ছে করছে অর্নের। তুর্জ বাইরে এসে দাঁড়ালো। বন্ধুরা এসে ওদের বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। শিহাব নেই সেখানে। বন্ধুদের দেখে অর্ন বাইরে আসলো। তুর্জ বের হয়ে বললো..
– আজকে আমার বিয়ের জন্য আংটি পরানোর অনুষ্ঠান চলে আসবি। অবনি কে সাথে আনিস। আম্মু আব্বু দেখবে। বুঝিস তো, তুই আমাদের পরিবারের কতটা চেনা। আর একা গেলে কেমন হবে বলতো। (তুর্জ)
– ডেকে অপমান করবি নাকি? (অর্ন)
– আরে কাম অন অর্ন। অবনিকে নিয়ে আসিস। তোর বউ বলে কথা। সুন্দরী বউ। একটু তুর্জের বউকে দেখিস, কেমন দেখতে হয়। (মিহি)
– আচ্ছা আসবো। বন্ধুর বিয়ে বলে কথা, আসতে তো হবেই। (অর্ন)
– গুড। তাহলে সন্ধ্যায় আসবি। (তুর্জ)
তুর্জরা চলে যায়। অর্ন রুমে চলে আসে। ওয়াশরুমের দরজা আটকানো। ভিতরে পানি পড়ার শব্দ শোনা যায়। বিছানায় এসে বসলো। কিছু সময় পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ শোনা যায়। অর্ন সেদিকে তাকায়। তোয়ালে জড়িয়ে অবনি রুম থেকে বের হচ্ছে। অবনি অর্নের দিকে তাকিয়ে দরজার থেকে সরে আসতেই দরজার হাতলে তোয়ালে বেধে গেলো। অবনি পা ফেলতেই তোয়ালে ওর গা থেকে খুলে নিচে পড়ে যাচ্ছে, তার আগেই অবনি এক হাত দিয়ে তোয়ালে পেঁচিয়ে ধরে। কিন্তু আরেকটা হাত তোয়ালেটাকে ধরার আগেই পিছন থেকে সবটাই খুলে গেলো। কোনোরকমে সামনের অংশটুকু অবনি দুইহাত দিয়ে ধরে রাখে। অর্নের দিকে তাকাতেই অর্ন হা করে অবনির দিকে চেয়ে আছে। অবনি বলে..
– এভাবে হা করে কি দেখছিস? তোয়ালে সামলাতে পারছিনা। আর তুই এই সময়ে রুমে কি করিস হুম?
অর্ন বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আস্তে আস্তে অবনির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। অবনিও পিছিয়ে যেতে থাকে। অর্নের আসতে দেখে অবনি বলে “ঐ.. তু.. তুই এদিকে আসছিস কেনো? বাইরে যা।” অর্ন কোনো বখা বললো না। সে অবনির দিকে আরো এগিয়ে যায়। অবনি যদি ঘুরে দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাহলে পিছনের অংশ অর্ন দেখে ফেলবে। দুই হাত দিয়ে তোয়ালে বুকের সামনে এমনভাবে ধরে রেখেছে অবনি, যদি এক হাত ছেঁড়ে দেয়, তাহলে সেখান থেকেও অনেকটা বিবৃতি কর অবস্থায় পড়বে অবনি। তাই সে আস্তে আস্তে পিছাতে থাকে। হঠাৎ করে দেয়ালের সাথে ধাক্কা লাগলো অবনির। বুঝে যায় আর পিছানোর মত জায়গা ওর জন্য নেই। অর্ন অবনির সামনে এসে দাঁড়ালো। অবনির মুখের দিকে তাকায়। অবনি মাথা নিচু করে নিয়েছে।
অর্ন দেয়ালে একটা হাত দিয়ে, এক পা নিচ থেকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে, অবনিকে আটকিয়ে ধরে। কিন্তু অবনিকে এখনো অর্ন স্পর্শ করেনি। অবনি বলে..
– তুই, বাহিরে যা।
– রুম আমার। (অর্ন)
– তাই কি? রুমটাও আমার। (অবনি)
– আমি তো এখন যেতে বলছিনা। (অর্ন)
– তু.. তুই বের হ। আমি ড্রেস পাল্টাবো। ওয়াশরুমেও ড্রেস নিয়ে যাইনি। (অবনি)
– আমি কি বাধা দিয়েছি নাকি? (অর্ন)
– তোর সামনে পাল্টাবো নাকি আমি? (অবনি)
– বারণ করেছি নাকি? (অর্ণ)
– উফ সর..
অর্ন ডান পা দিয়ে তোয়ালে চেপে ধরেছে। অবনি নিচু হয়ে তাকিয়ে থাকায় এটা সে লক্ষ্যও করেছে। এখন সে চাইলেও দৌড়ে কোথাও যেতে পারবে না। অর্ন ডান হাতের একটা আঙ্গুল অবনির কপালে রাখে, আলতো করে। অবনি একটু কেঁপে উঠলো। অর্ন একদম ধীর গতিতে অবনির নাক বরাবর আস্তে আস্তে আঙ্গুলটা নিচে নামানো শুরু করলো। অবনি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবনির ঠোঁটের কাছে এসে থামে অর্ন। হাতের আঙ্গুলটা ঠোঁটের উপর আলতো করে রাখতেই অবনি কেঁপে উঠলো। দুই ঠোঁটের মাঝে আংগুল দিয়ে একটু ঘোরাতেই অবনির দৃষ্টি অর্নের চোখের উপরে পড়ে। দুজনেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অর্ন আঙ্গুলের চঞ্চালতা অস্থির করে ঠোঁট থেকে দাঁড়িতে নিয়ে আসলো। এরপর আস্তে আস্তে গলায়, তারপর আরো ধীর গতিতে বুকের দিকে নামাতে থাকে। অর্নের আঙ্গুল তোয়ালের নাগাল পেতেই অবনি একটু শব্দ করে হিস করে উঠল। অর্ন বলে…
– কি হয়েছে?
– তু… তু.. তুই থেমে যা। (অবনি)
– যদি না থামি তো? (অর্ন)
– আমার বুকের উপর থেকে হাত সরিয়ে নে। (অবনি)
– শুধু আঙ্গুলটাই আছে। সম্পূর্ণ হাত রাখিনি। (অবনি)
– সরা বলছি… (অবনি)
– কেউ বাধা দিলে, বা বারণ করলে। সেই জিনিসটা আমার পেতে অনেক বেশি ইচ্ছে করে।
অর্ণ কথাটা বলেই এক হাত দিয়ে তোয়ালে চেপে ধরলো। অবনি সাথে সাথেই জোরে একটা ধাক্কা দিল অর্নকে। অর্ন কিছু বোঝার আগেই বেশ ক্ষীপ্র গতিতে অবনি ওয়াশ রুমে চলে যায়। দরজা আটকিয়ে অবনি জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিল। যেন হাফ ছেঁড়ে বেঁচেছে। তোয়ালেটা এবার ওর হাতে ভালো মতই আছে। নিজেকে ভালো করে পেঁচিয়ে নেওয়ার জন্য তোয়ালে টানতেই দেখে, অর্ধেক তোয়ালে দরজার বাহিরে। বাকি অর্ধেক অবনির কাছে। আর দরজার ওপাশে বাকি তোয়ালে ধরে রেখেছে অর্ন। অবনি বোকার মত তোয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর..
চলবে,,