#প্রণয়
#৭ম পর্ব
#Abir Hasan Niloy
…
অর্নের ঘুম ভাঙে। চোখ মেলে তাকায়। নিজের রুমেই আছে সে। পাশে তাকায়। কেউ নেই। সোফাতে চোখ যায় ওর। অবনি শুয়ে আছে। বালিশের পাশে অর্নের মোবাইল রাখা। মোবাইলে তখন পাঁচটা এ.এম। অর্ন একটা ঘুমেই রাত পার করে দিয়েছে। এখন বেশ হালকা লাগছে। জ্বর নেই বললেই চলে। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো অর্ন। অবনির মুখের দিকে তাকায়। ঘুমিয়ে আছে অবনি। অর্ন অজান্তেই কিছু সময় ধরে অবনির দিকে তাকিয়ে রইল। শীতের কারনে কাঁচুমাচু হয়ে আছে। ভোর রাতের দিকে শীত একটু লাগেই। অর্ন একবার ভাবলো, অবনির গায়ে একটা কাঁথা দিয়ে আসবে। পরক্ষণে ইরার কথা মনে পড়তেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
সাইকেল বের করলো ও। এই সাইকেলের সামনে ইরাকে নিয়ে এয়ারপোর্ট রোডে অনেক বার ঘুরেছে। সাইকেলের সামনে ইরা বসে থাকতো, হাতে থাকতো একগাদা ফুল। অর্ন সেগুলো কল্পনা করতে করতে ইরাদের বাড়ির সামনে চলে এসেছে। ফোন বের করে দেখে ৬ টা বেঁজেছে। অর্ন ফোন করলো ইরাকে। ইরা সারারাত ঘুমায়নি। অর্নের সাথে বিচ্ছেদ একদমই মেনে নিতে পারছে না ইরা। সে জন্য সারারাত চোখের পাতা একজায়গায় করতে পারেনি। হঠাৎ এত সকালে ফোন বাজছে দেখে কিছুটা বিরক্ত হয় ইরা। ফোন হাতে নিতেই দেখে অর্নের নাম্বার। ইরা অজানান্তেই রিসিভ করে ফেলেছে। অর্ন বলে…
– ইরা… আমি তোমার বাড়ির সামনে। একবার আসো। আমি তোমাকে দেখবো। খুব যে দেখতে ইচ্ছে করছে।
– তুই? কেনো এসেছিস? কালকের সকালের কথা তোর মনে নেই? জুতা এনে পিটিয়ে বের করবো তোকে? (ইরা)
– এভাবে বলছো কেনো ইরা? ভালোবাসি তোমাকে। (অর্ন)
– কিসের ভালোবাসা তোর? বেঈমান কোথাকার। এভাবে আমার ভালোবাসাটাকে নিয়ে খেলা করলি। এখনো খেলতে চাচ্ছিস। ধুর হো বাড়ির সামনে থেকে। (ইরা)
– ইরা যা খুশি আমাকে বলো। তবুও তুমি সামনে আসো। আমি তোমাকে দেখবো। (অর্ন)
– দেখ, তোকে খুব ভালোভাবেই বলছি। আমার বাড়ির সামনে থেকে তুই চলে যা। আমি তোর মুখ দেখতে চাইনা। অর্ন মরে গেছে। আমি তাকে মনেও করতে চাইনা। (ইরা)
ইরা ফোন কেঁটে দিল। অর্ন আর সেখানে দাঁড়ায় না। ক্লাবের দিকে যেতে থাকে। ইরাকে সে হারিয়ে ফেলেছে। যা কখনো অর্ন চায়নি। এমনটা হয়েছে কেবল অবনির জন্য। ক্লাবে আসতে আসতে আটটা বেজে গিয়েছে। অবনির ঘুম ভাঙে। রাতে সে না খেয়েই সোফাতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম থেকে উঠেই দেখে অর্ন নেই। অর্নকে কল দিল অবনি। একবার রিং হতেই, কেঁটে দিল অর্ন। অবনি আবারো ফোন দেয়। কিন্তু অর্ন এবার কাঁটে না, আবার রিসিভও করে না। অর্নকে ফোন দিতে শুরু করে। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স পায়না অবনি। বাইরে আসে সে। অর্নের মা দাঁড়িয়ে আছে। নতুন একটা মহিলাও দাঁড়িয়ে আছে। অবনি যেয়ে সামনে দাঁড়াতেই মহিলাটি প্রশ্ন করে..
– ভাবী.. এই কালো মেয়েটা কে?
– ওকে কালো মেয়ে কেনো বলছেন? জানেন ও কে? (অর্নের মা)
– কে ও? আর কালোই তো সে। আয়নাতে নিজেকে দেখলে সে নিজেই ভয় পাবে। (মহিলা)
– চুপ করেন। অর্ন শুনলে আপনাকে বকবে। (অর্নের মা)
– কেনো কেনো? অর্ন বকবে কেনো? (মহিলা)
– ও আমার বোনের মেয়ে, নাম অবনি। অর্নের বউ। (অর্নের মা)
– কিহ.. আমাদের অর্নের বউ অবনি? ছিহ ভাবী… অর্নের চয়েজ এত এত খারাপ? কমলা লেবুর মত দেখতে আপনার ছেলে। অথচ তার বউ দেখি কালো। অর্ন তাকে মেনে নিয়েছে ভাবী? আল্লাহ গো… হাসি পাচ্ছি। কোথায় আকাশের চাঁদ, আর কোথায় গবরের নাদ। কিভাবে সম্ভব? ঐ মেয়ে তোমার কি লজ্জা টজ্জা করেনা, অর্নের পাশে যখন দাঁড়াও তখন? (মহিলা)
অবনি মাথা নিচু করে নিল। কালো হলেই সমস্যা। সমাজের মানুষ আর কিছু পারুক বা না পারুক.. কোন বাড়ির মেয়ে বিয়ের বয়েসেও বিয়ে দিচ্ছে না কেনো তার পরিবার, এসব খবর রেখে, এমন এমন কথা শোনাবে। এসে বলবে ‘ও আপা, আপনাদের মেয়ে বিয়ে দিচ্ছেন না কেনো? কোথাও কি সম্পর্ক করেছে নাকি? বিয়ের বয়স পার হয়ে গেলে তো আর কোনো ছেলে বিয়ে করবে না। এত বড় মেয়েকে ঘরে রাইখা কি করছেন?’ আবার কালো মেয়ে হলে মা বাবাকে এসে কথা শুনিয়ে বলবে ‘ও ভাইসাব. এই কালো মেয়েকে কার কাছে বিয়ে দেবেন? নাকও ঠিকমত লম্বা না। পছন্দ করবে তো? ভালো করে ক্রিম ট্রিম মাখান।’ আবার সেই কালো মেয়ের বিয়ে হলে শ্বশুর শ্বাশুড়িকে সবাই বৌমাকে নিয়ে কথা শোনাবে।
তবে এদিকে ভূলেও কালো ছেলের বউ যদি সুন্দরী হয়েছে। সমাজের লোক তো আরো এক কাঠি উপরে কথা শোনানো শুরু করবে। ‘এইরাম একটা মেয়ের জামাই দেখো, একটুও মানায়নি। কি দেখে মেয়েটার সাথে এমন ছেলেকে বিয়ে দিয়েছে। কালো ছেলে তো না, যেন গান্জা খোর।’ সব বিবেচনা সমাজের মানুষই করে দেয়। আপনি কতজনকে থামাবেন? আপনি থামাতে গেলে হয় আপনি তাদের মত হয়ে যাবেন, না হয় আপনি খারাপ হয়ে যাবেন। সবাই শুধু চকচকা ছেলে মেয়েই খোজে। কিন্তু কখনো কয়লাতে যে সোনা থাকে, এটা বুঝতে পারেনা
.
– দেখুন, ভাবী.. আপনি আমার বুয়ার শ্বাশুড়ি। যতটুকু সম্মান দিয়ে আপনাকে এখানে আনছি। এটাও কিন্তু আর দেবো না। আমার অর্নের বউ কালো। কোনো সমস্যা আছে? আপনার ছেলের বউ তো সুন্দর। আপনি খুশি থাকুন। অসহ্য… (অর্নের মা)
– খালাআম্মু.. উনাকে কিছু বলবেন না। উনি তো ঠিকই বলেছে। অর্নের গায়ের রঙ, আর আমার গায়ের রঙ বিপরীত। অর্নকে আসলেই মানায় না আমার পাশে। (অবনি)
– চুপ থাক তুই। চলে আয়।
অর্নেন মা, অবনিকে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো। অবনির খুব কান্না পাচ্ছে। সমাজের মানুষ যে যা ইচ্ছে বলুক। কিন্তু অর্ন যদি সামান্য ভালোবাসতো। তাহলে সে সব কিছু চোখ বন্ধ করে সহ্য করতে পারতো। কিন্তু সমাজের মানুষসহ, নিজের স্বামী অর্নও তাকে সহ্য করতে পারেনা। অবনি যতই নিজেকে শক্ত করুক না কেনো, বারবার কোনো না কোনো কারনে তার মনে হয় কালো হয়ে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
– অবনি মন খারাপ করিস না। অর্ন কোথায়? ওকে ডাকতো। (অর্নের মা)
– ও তো রুমে নেই। জগিং এ গিয়েছে হয়ত। (অবনি)
– সিফাত আর শেফা আসবে। তোদেরকে দেখতে আসবে। (অর্নের মা)
– এরা দুজন কে? (অবনি)
– তোর খালুর খুব কাছের বন্ধু। বিদেশে থাকে। আমার প্রথম যখন বিয়ে হয়। তখন ওনাদের সাথেই বছর খানিক ছিলাম। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও তোর খালু মঈন ভাইকে নিজের ভাইয়ের মত দেখতো। মঈন ভাইয়ের ছেলে সিফাত। আর মেয়ে শেফা। অর্নের বন্ধু সিফাত। দুজনে বেশ ভালো বন্ধু। বিদেশ থেকে সোজা আমাদের বাড়িতেই আসছে। (অর্নের মা)
– খালাম্মু.. আমি কারো সামনে যাবো না আর। (অবনি)
– কেনো? (অর্নের মা)
– এমনি। ভালো লাগে না। (অবনি)
– চুপ কর। কালো বলে অপমান করবে? যারা সমাজে খাটো, লম্বা, কালো সুন্দর এসব নিয়ে বিচার করে বেঁড়ায়। তারা আসলে মানুষই না। তুই তো লক্ষী মেয়ে। যে তোকে একবার বুঝবে, সে তোকে কখনো ছাঁড়বে না। (অর্নের মা)
অবনি অর্নের মাকে জড়িয়ে ধরে। এই একটা মানুষের জন্যই অবনি পারেনা নিজেকে পুরোপুরিভাবে শেষ করতে। না হলে এতদিনে কবেই অপমান সহ্য করতে না পেরে নিজেকে মেরে ফেলতো।
.
অর্ন টেবিলের উপর পা দিয়ে বসে আছে। চা আর কেক এনে সামনে দাঁড়ালো ছোটন। অর্নের দিকে ছোটন কিছু সময় তাকিয়ে রইল। অর্ন প্রশ্ন করে..
– কিরে.. এভাবে তাকিয় আছিস কেনো? আজ স্কুল নেই?
– হো আছে তো ভাইজান। তই.. যামু না। (ছোটন)
– কেনো? রুস্তম আংকেল কি তোকে আবার বকাঝকা করেছে নাকি? (অর্ন)
– না ভাইজান। হেয় তো আমারে আর বকেই না। আপনে তো হেয়দিন বকা দিছিলেন, হের লেইগা আমারে আর কিছু কইতে পারে না। (ছোটন)
– তাহলে? স্কুল কেনো মিস করবি? (অর্ন)
– এমনিতে ভাইজান। পড়াশোনা কইরা কি হইব। বড় হইয়া কি হইবো? (ছোটন)
– মার খাবি তুই? বল কি হয়েছে?
ছোটন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। মাথাটা নিচু করেই নিল। রুস্তম চাচার ক্লাব এটা। রাতে ড্রিংকস চললেও দিনে চা বিস্কিট এসবই পাওয়া যায়। অর্ন ক্লাবে আসছিল একদিন। প্রথম যেদিন আসে, সেদিন রুস্তম দোকানদার ছোটনকে মারছিল। হাতে গরম চা ফেলে দিয়ে, ছোটনকে মারছিল। যা দেখে অর্ন থানা অবদি দৌড়ানি দিয়েছিল রুস্তমকে। ছোটন এখানেই কাজ করে। অর্ন তার সাথে আস্তে আস্তে সখ্যতা গড়ে নেয়। অর্ন আসলেই ছোটন দৌড়ে চলে আসে অর্নকে সব রকম সার্ভিস দিতে।
– ছোটু… যা বাবা ইসকুলে যা। মুরগীটা বাইচ্চা দিমুনে। ইসকুলের টেকা টা দিয়ে দিস।
ছোটনসহ অর্ন বাইরের দিকে তাকায়। একজন মহিলা এসে দাঁড়িয়েছে। ছোটু “মা..” বলে ডেকে দৌড়ে মহিলার দিকে চলে যায়। অর্ন সে দিকেই তাকিয়ে থাকে। ছোটন যেয়ে বলে..
– মা, তুমি উইঠা আইছো ক্যা? আর আইসা তুমি অর্ণ ভাইজানের সামনে কি কইলা? তুমি না কি যে করো। তুমি যাও, আমি বই নিয়া স্কুলে যামুনে। এখন যাও এহান থাইকা।
– অর্ন বাবা আইছে? আমার লগে দেখা করাস না ক্যা? আমি দেখা করুম।
ছোটনের মা কথাটা বলে। ক্লাবেল থেকে সামান্য দুরে ছোটনের বাড়ি। ওর মা অনেক অসুস্থ। বুকে একটা বিশাল টিউমার হয়েছে। অপারেশনের প্রয়োজন। কিন্তু ছোটনের বাবা নেই। তাই উনি অসুস্থতা নিয়েই পড়ে আছে। অর্নকে কোনোদিন ছোটন ওর মায়ের ব্যাপারে জানায়নি। অর্ন এসে পাশে দাঁড়ালো। বললো..
– ছোটন। আনটির সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিসনি কেনো? বেয়াদব কোথাকার..
– কেমন আছো বাবা? তোমার কথা ছোটু আমারে রোজ রোজ কয়। দেখো না,, ঐ আজকে কয় ইসকুলে যাইবো না। (কথাটা বলে তিনি কাঁশলেন)
– আচ্ছা আনটি আপনি বাসায় যান। আমি দেখছি। আর পরে আপনার সাথে দেখা করবো। আপরি যান। (অর্ন বুঝে যায় তিনি অসুস্থ)
– আইচ্চা…
উনি চলে যায় সেখান থেকে। অর্ন ছোটনের হাত ধরে ভিতরে নিয়ে আসলে। রুস্তম চাচাকে ডাক দেয় অর্ন। রুস্তম চাচা দৌড়ে আসলেন। কেননা, অর্নের কথা তিনিও শুনতে বাধ্য। কারন, অর্ন আছে বলেই অল্প করে ড্রিংকসের ব্যাবসা চালিয়ে যেতে পারছে। আর তাতে বেশ লাভও হচ্ছে অনেক। বড় কথা, অর্ন হল তার প্রধান কাস্টমার। ঢাকা শহরের মেইন জায়গাতে দোকানটা টিকে আছে অর্নের জন্যই। এ জন্য অর্ন যা বলে তিনি সব পালন করেন।
– জ্বি বাবা বলো।
– ছোটনের মায়ের কি হয়েছে? (অর্ন)
– জানো না তুমি? ওর মায়ের হার্টের সোজা একটা বিশাল টিউমার হয়েছে। অপারেশনের ডেট দিয়েছিল ডাক্তার। কিন্তু যেতে পারেনি। (রুস্তম চাচা)
– আচ্ছা আপনি যান। ছোটন.. এবার বল স্কুলে কেনো যাসনি? (অর্ন)
– পরশুদিন পরীক্ষা হইবো। পরীক্ষার ফিসের লাইগা চাচা টেকা দিছিল। ভাবছি হেয়ডা দিয়া ফিস দিমু। কিন্তু ঐ টেকা লিয়া আমি বাড়িত যাইয়া হুনি, মায়ের ঔষধ নাই। চাচার থাইকা কয়েকদিন আগেই টেকা লইছিলাম ঔষধের লাইগা। আবার চামু.. কেমনে? পরীক্ষার লাইগা এক হাজার টেকা লইছি। জানেন তো ঢাকার শহরে পরীক্ষার ফিস অনেক বেশি। ঐ টেকা দিয়া অল্প ঔষধ আইনা দিছি। এহন টেকা নাই। তাই স্কুলে যাইতেও ইচ্ছা করতাছে না। (ছোটন)
– তোর বয়েস কত রে? (অর্ন)
– বারো বছর। (ছোটন)
– কোন ক্লাসে পড়িস তুই? (অর্ন)
– কেলাস ফাইভে। (ছোটন)
– থাপ্পড়িয়ে তোর সবগুলো দাঁত ফেলে দেবো। এই বয়েসে খুব হিসেব শিখে গিয়েছিস? তোকে না বলেছিলাম, আমাকে সবকিছু এসে বলবি? বলেছিস? (ছোটন)
– তুমি তো সবকিছু করলা। ভর্তি কইরা দিলা। ব্যাগ কিনা দিছো, ড্রেস কিইনা দিছো। রুস্তম চাচারে বইলা দিছো যা লাগে দিয়া দিতে। খাতা কলম কিইনা দাও। স্কুলের বেতন দিয়া দাও। আর কি করবা? (ছোটন)
– অনেক কথা শিখেছিস দেখছি। যা স্কুলে যা। কালকে আনটির থেকে পরীক্ষার ফিস নিয়ে যাস। যা এখন সামনে থেকে যা। (অর্ন)
– আইচ্চা যাইতেছি। তই একটা কথা কয়.. শিহাব আছেনা আপনের বন্ধু। ওনার থাইকা দূরে থাইকেন। জানিনা কেনো বললাম। তয় মনে হইছে কইছি আমি। রাগ কইরেন না। যাচ্ছি স্কুলে।
– শোন। আমার সাইকেলটা নিয়ে যা। এখন থেকে এটা তোর। যার জন্য প্রয়োজন ছিল। তাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। তুই চালাবি এটা।
ছোটন চলে যায়। অর্ন চেয়ারে হেলান দিয়ে প্রায় শুয়ে পড়েছে। একটা গাড়ি এসে থামলো ক্লাবের সামনে। শিহাব নামলো। শিহাবের সাথে ইরাও নামলো। শুধু ওরা দুজন না। বাকি সব বন্ধুরা এসেছে ক্লাবে। মিহি দৌড়ে এসে অর্নের সামনের চেয়ারে বসলো।
– দোস্ত… তুর্জ তো বিয়ে করতে যাচ্ছে। তোকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য ছুটে বেড়াচ্ছে সে। (মিহি)
– হুম। অর্ন.. এই সপ্তাহে বিয়ে করছি। (তুর্জ)
– শিহাব দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ইরাকে নিয়ে বসে পড়। আরে এত প্যারা কেনো নিচ্ছিস তোরা বুঝলাম না। (সিমি)
– ইরা, কার সাথে এসেছো? (অর্ন)
– শিহাবের সাথে। শিহাব বললো বেচারারি মন খারাপ। ডেকে আনি। আড্ডা দিলে ভালো লাগবে। তাই ও যেয়ে নিয়ে আসছে। (মিহি)
– ওহ.. আমি ডাকলাম আসলে না। অথচ শিহাব ডাকার পর চলে আসলে। সত্যিই দারুন তো ব্যাপারটা। (অর্ন)
– আমি কারো বিয়ে করা বউ না যে, অন্য কেউ ডাকবে আর আমি আসবো। আমার ইচ্ছে আমি যার সাথে খুশি বেড়াবো, ঘুরবো, মিশবো। কেউ যদি এসব সহ্য করতে না পারে, বা দেখতে না পারে। সেটা তার সমস্যা। (ইরা)
– আরে বাদ দাও এসব। তুর্জ, মেয়েটা কেমন দেখতে? দেখিস তুই যেন আবার অর্নের মত কালো মেয়েকে বিয়ে করিস না। তাহলে কিন্তু আমরা আর তোর সাথে মিশবো না। পার্টিতেও আনতে পারবি না কোনোদিন বউকে। (সিমি)
– এহ.. আমি পাগল নাকি? কখনো ওমন বিশ্রি দেখতে কালো মেয়েকে আমি বিয়ে করবো? নো নেভার। আমার বউ দেখে তোদের জেলাস হবে। ছবি দেখেই তো আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি। কোথায় অবনি, আর কোথায় আমার ফিয়ন্সি। (তুর্জ)
– এটা ঠিক বলেছিস। কার সাথে কার তুলনা করিস তোরা? অবনি চলে না। ফালুত দেখতে। আমি বুঝিনা অর্ন কিভাবে তাকে ভালোবাসে। (শিহাব)
– ঐ আমি অবনিকে ভালোবাসি না। (অর্ন)
– হাহাহা… বিনোদন। বুকের উপর কে মাথা দিয়ে থাকে? কে জড়িয়ে রাখে? নিজের চোখে দেখা। সে বলে নাকি অবনিকে ভালোবাসে না। ব্লাডি চিটার। (ইরা)
– ইরা.. আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। (অর্ন)
– আমি চলে যাচ্ছি। এসব হাস্যকর কথা শোনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। (ইরা)
– ইরা কোথাও**** (অর্ন)
– ইরা.. এসব বাদ দাও। বসো চুপচাপ। কি খাবে বলো। কারো কথায় কান দিও না। (শিহাব)
– আচ্ছা। কফি খাবো। (ইরা)
শিহাব ইরাকে নিয়ে পাশের টেবিলে গেলো। অর্ন কেবল অবাক হয়েই তাকিয়ে দেখছে। অর্নের গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু ইরা সব শিহাবের কথা শুনছে। যা অর্ন মেনে নিতে পারছে না। অর্ন মিহিকে বলে..
– ইরা আমার গার্লফ্রেন্ড। কিন্তু সে শিহাবের কথা শুনছে।
– কি বলিস এগুলো? ইরা তোর গার্লফ্রেন্ড কবে থেকে হল আবার? আর লজ্জা শরম করে না? বউ আছে তোর বাড়িতে। ইরাকে কি তুই আবার বিয়ে করবি নাকি? তোর চয়েজ খারাপ হয়ে গেছে মানলাম। কিন্তু চিন্তা ভাবনাও এত খারাপ করলি কবে থেকে? (মিহি)
– আমি বাসায় যাচ্ছি। তোদেরকে সহ্য হচ্ছে না একদমই। (অর্ন)
– দোস্ত, আমার বিয়েতে আসিস প্লিজ। তবে একটা অনুরোধ। তোর কালো বউকে সাথে করে আনবি না। তাহলে পার্টিটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আমি চাইনা, তোর বউকে দেখে সবাই অনুষ্ঠান থেকে চলে যাক। আর যদি আনিস, তাহলে কিন্তু বলবো তুই আমার বন্ধুনা। সবাই জানে আমার বন্ধুদের চয়েজ এত খারাপ হবেনা। আমার বউকে দেখলে তোর বউকেও সবাই দেখতে চাইবে। হাস্যকর পার্টি হোক এটা চাইনা।
তুর্জের কথা শুনে অর্ন আর সেখানে দাঁড়ালো না। অসহ্য লাগছে ওর। বারবার কালো বউ, কালো বউ শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছে। অবনির উপর আরো রাগ বেঁড়ে গেছে। আর বন্ধুগুলোও সব কেমন যেন। অর্ন ক্লাব থেকে বের হয়ে ছোটনদের বাড়ির দিকে যায়। ছোটনের মায়ের অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হবে দ্রুত। তারপর…
চলবে,,