#প্রণয়
#৪র্থ পর্ব
#Abir Hasan Niloy
…
অর্ন গাড়ির সামনের ডিগির উপর বসে আছে। গাড়ির ভিতর থেকে মিউজিক যন্ত্র থেকে মোহাম্মদ ইরফানের গাওয়া, এক ভিলেন মুভি থেকে ‘বানজারা’ গানটি বাজছে। অর্নের হাতে ড্রিংকসের বোতল। সামনে ওর বন্ধুরা গাছের গুড়ির উপর গোল হয়ে বসে আছে। ক্লাবের পরে তুর্জদের বাগান বাড়ির পিছনের দিকে এসে ওরা বসে থাকে।
– অর্নকে নিয়ে এখন হাসাহাসি চলছে। অর্নের বিয়ে এমন একটা মেয়ের সাথে হয়েছে, যা আমাদের সামনে সে কোনোদিন প্রেজেন্ট করতে পারবে না। পরিচয় দিতে পারবে না, যে অবনি অর্নের বউ। (মিহি)
– আমি বিয়ে করবো তোরা দেখিস। বউকে দেখে তোরা হা হয়ে যাবি। কোথায় অবনি আর কোথায় আমার বউ হবে। (তুর্জ)
– আস্তে বল, অর্ন শুনবে। (খেয়া)
– আরে কিসের আস্তে, অর্নের বউ অবনি এটা ভাবলেই তো হাসি পাচ্ছে। (সিমি)
– বাদ দে, ইরা কি করলো? সাফিনের সাথে মিশছে কেনো? ইরা তো ভালো করেই জানে সাফিন কতটা খারাপ ছেলে। (শিহাব)
– তো কি করবে? অর্ন কি ভার্জিন আছে নাকি? একটা মেয়ের সাথে রাত কাঁটিয়েছে সে। কি ভাবছিস, এখনো সে আগের অর্ন আছে? ইরাও তাই করবে? হয়ত দু একদিন পর সাফিনের সাথে এক রুমে পড়ে আছে। (তুর্জ)
অর্ন বেশ কিছু সময় ধরে ওর বন্ধুদের কথাগুলো শুনছিল। শেষের কথাটা আর সহ্য করতে পারেনি। কাঁচের বোঁতলটা ডান হাতেই ছিল। ওটা হাতের যত শক্তি ছিল, তা দিয়ে জোরে চাপ দেয়। সাথে সাথে বোতলটা ভেঙে অর্নের হাতে কাঁচের টুকরো লেগে যায়। এবং অনেকখানি কেঁটে, রক্ত বের হতে থাকে। শিহাব অর্নের দিকে তাকায়। হাত থেকে রক্ত ঝরতেই দৌড়ে এগিয়ে আসে সেদিকে।
– কি ব্যাপার অর্ন, তুই কি পাগল হয়ে গিয়েছিস? পাগলামি থামা।
– হুম, আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। আর তোদের মত কিছু ভালো বন্ধু পেয়ে আরো পাগল হয়েছি। (অর্ন)
– আরে ওরা মজা করছিল। বাদ দে.. (শিহাব)
– হুম, বাদ তো দেবোই। থাক তোরা…
অর্ন আর কিছু বললো না। সে কারো দিকে না তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে সেখান থেকে চলে আসে। ইরাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। বাড়ির সামনে গাড়ি রেখে, গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে, উপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফোন বেজে ওঠে অর্নের। তাকিয়ে দেখে অবনি কল দিয়েছে। অর্ন ফোন কেঁটে দেয়। দুপুর ছাঁড়িয়ে বিকেল হয়েছে। অর্ন সকালে বের হয়ে আর ফেরেনি। অবনির অনেক চিন্তা হচ্ছে। জানে সে, অর্নকে কল দিলে অর্ন নিজেই তাকে ঝাড়ি দেবে। তবুও অর্ন দুপুরে খেতে আসেনি, এমনিতে সদ্ব্য বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরেরদিন অর্ন বাহিরে সময় কাটাচ্ছে। অবনি আরো চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ জন্য ফোন দিতে থাকে। অর্নের কোনো খোজ নেই।
অর্ন খাবার টেবিলেই বসে আছে দুপুর থেকে। কিন্তু অর্নের খোজ নেই। প্রথমবার ফোন কাঁটাতে অবনি আবারো অর্নকে ফোন দেয়। কিন্তু অর্ন আবারো কেঁটে দিল। অবনি এবার লাগাতার ফোন দিতে থাকে। অর্ন বিরক্ত হয়ে ফোন সাইলেন্ট করে দিতে যেয়ে থেমে যায়। দুইতলার ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়েছে ইরা। ইরার দিকে তাকিয়ে থাকে অর্ন। ফোনটাও বাজতে থাকে। ইরা নিচে তাকায়। অর্নকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। ইরা খুশিতে লাফ দিয়ে ওঠে। দৌড়ে অর্নের কাছে আসার জন্য পা বাড়ায়। পরক্ষনেই ইরা থেমে গেলো। মনে পড়ে তার অর্ন এখন অন্যের বর, সে আর তার নেই। সে অন্যের। আগে এমন হয়েছে,অর্ন বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতো। ইরা দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরতো অর্নকে। তারপর গাড়ি করে দুরে কোথাও ঘুরতে যেতো দুজন। কিন্তু এখন সেটা সম্ভব নয়। অর্ন ইরার নয়, অর্ন অবনির। ইরা বিরক্ত হয়, বিরক্ত হয়ে ফোন দেয় অর্নকে।
অর্নের ফোনে আগে থেকেই কল আসছিল। ইরাকে ফোন কানে ধরতেই অর্ন, নিজের ফোনের দিকে না তাকিয়ে কল রিসিভ করে। অর্ন বলে…
– ইরা, আমাকে কেনো ভুল বুঝছো? আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। অবনিকে আমি কখনো চাইনি। আর না কখনো চাইবো। আমার সবকিছুতে শুধু তুমিই আছো। আমি শুধু তোমাকেই চাই। চিন্তা করো না, আমি অবনিকে ছ মাসের মধ্যেই ডিভোর্স দিবো। প্লিজ ইরা আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করো। ইরা…
লাইনটা কেঁটে যায়। অর্ন ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। ইরার কল আসলো। অর্ন আবার রিসিভ করে। অর্ন কিছু বলতেই যাচ্ছিল, তার আগে ইরা বলে..
– এখানে কুকুরের মত দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলে যান। ওহ আপনি তো এভাবে বললে যাবেন না। কেনো যাবেন? রাস্তার কুকুর কে জোরে হেয় বললেও চলে যাবে, আপনি তো যাবেন না। আপনার জাতটা একটু উচ্চপর্যায়ের। কিন্তু আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না। চলে যান প্লিজ।
– ইরা আমার কথা তো শোনো। (অর্ন)
– কি শুনবো? বলতে চাইছেন অবনিকে টাচ অবদি করেন নি। তার সাথে বিছানায় রাত কাঁটান নি.. তাকে স্পর্শও করেন নি। এগুলোই তো বলবেন তাইনা? (ইরা)
– একদম ঠিক, অবনির থেকে দুরে ছিলাম আমি। (অর্ন)
– হাহাহা.. এসব কথা আগেই সাফিন আমাকে বুঝিয়েছে। এগুলোই তুমি বলবে সে আগে থেকেই আমাকে শুনিয়েছে। বোকা পেয়েছো আমাকে? আমি ভালোবাসতাম বোকার মত, আবার বোকার মত স্বপ্নও দেখতাম তোমাকে নিয়ে। অথচ আমাকে ঠকিয়ে তুমি অন্য কারো। চলে যাও আমার সামনে থেকে। (ইরা)
– ইরা প্লিজ.. সাফিনের কথা আমাকে বলবে না। (অর্ন)
– কেনো বলবো না? নিজে মাস্তি করতে পারো। আমি করলেই সেটা দোষ? (ইরা)
– চুপ.. একটা পুরুষ হাজারটা মেয়ের সাথে থাকতে পারে। কিন্তু একটা নারী সেটা পারবে না। (অর্ন)
– হাস্যকর, ভালোবাসা কখনো ভাগ হয়না অর্ন। প্লিজ, তোমার পায়ে পড়ি। আমাকে আমার মত করে থাকতে দাও। তোমার মত জঘন্য লোকের সাথে আমি কোনোভাবেই আর কথা বলতে চাইনা। (ইরা)
– বোঝার চেষ্টা করো, বিয়েটা আমি ইচ্ছে করে করতে চাইনি। (অর্ন)
– ইচ্ছে ছিল নাকি ছিলনা, সেটা দুরের ব্যাপার। বিয়ে করেছো মানে তুমি এখন অন্যের। আমি একা আছি, ভাবছো কষ্ট পাবো? না কষ্ট পাবো না। যে ছেলে ভালোবাসা নষ্ট করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে, সে ছেলের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। সামনে থেকে যান আপনি। গেট লস… (ইরা)
– ইরা, ইরা… দেখো না আমার হাত কাঁটছে। কতখানি কাঁটছে জানো? দেখবানা? মনে আছে, একটুৃখানি কাঁটলে তুমি কতটা হাহাকার করতা… দেখো না ইরা। (অবনি)
– কি দেখবো? যা তোর বউকে দেখা। মর তুই। দুর হো সামনে থেকে।
ইরা ফোন কেঁটে দেয়। ব্যালকণি থেকে দৌড়ে নিজের রুমে এসে কাঁদতে থাকে ইরা। অর্ন ফোন গাড়ির ভিতর রেখে স্থির হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। সে বিড়বিড় করে বলে.. “আমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো, তোমাকে না দেখা অবদি আমি যাচ্ছিনা।” অর্ন কষ্টের একটা হাসি দেয়। যে ইরা অর্নের জন্য কত কিছু ভাবছিল, সে ইরা অর্নের কাঁটা দেখলো না।
.
অবনি টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে। চোখ দিয়ে বারিধারা যেন বর্ষণের ন্যায় পতিত হচ্ছে নিচের দিকে। এ অশ্রুজল যেন শেষ হবার নয়। নিঃশেষ হবেই বা কি করে। এ যে ভালোবাসায় সিক্ত, সুপ্ত বিচরন। অর্ন ভূল করে যার কল রিসিভ করেছিল প্রথমে, সেই কলটি ছিল অবনির। অর্ন ভেবেছিল, ইরা ফোন করেছে। এ জন্য সে অনেক কিছু শোনায়। আর সেগুলো সবটাই শুনেছে অবনি। ছয় মাস পর অবনিকে অর্ন ডিভোর্স দেবে। এ প্রণয় যেন শুধু আহতি নয় বরং নিহতি করে তুলছে অবনির। নতুন বউ যেমন হোক না কেনো, সে যদি নিজেই জানতে পারে তার বর বিয়ের পর অন্য মেয়ের জন্য কাঁদে, আবার ডিভোর্সের কথাও জানতে পারে। সে কতটুকু ঠিক থাকবে? তবুও অবনি নিজেকে সামলায়। কাউকে কিছু বুঝতে দেবে না ভেবে নেয়। অর্নের মা এসে দাঁড়ায় পাশে। চেয়ারে বসে, অবনির মাথায় হাত রাখলো। অবনির মাথা টেবিলে রাখা ছিল, তাড়াতাড়ি ওড়না দিয়ে চোখ মুছে নিল অবনি। অর্নের মা আরিনা বেগম বলে…
– কিরে মা. তুই কি এখনো না খেয়ে বসে আছিস? খেয়ে নে, সে মনে হয় ব্যস্ত।
– না মা সমস্যা নেই। আমি পরে খাবো। (অবনি)
– তাকা আমার দিকে। খেয়ে নে। (আরিনা বেগম)
– পরে খাবো। তোমাকে কি আবারো খেতে দেবো? বসো তাহলে তোমাকে খাইতে দিই। (অবনি)
– এহ, আমি কয়বার খাবো। থাক তোদের কারো খেতে হবেনা। এখনকার যুগে এমন ভালোবাসা দেখা যায়না। কেউ কারো জন্য না খেয়ে থাকে নাকি? আর তুই অর্ন ছাড়া খাবিইনা। থাক খেতে হবেনা। আমার আবার কি? এক বছর পর নাতি নাতনি হবে ওদেরকে সব গল্প শোনাবো। (আরিনা বেগম)
– হাহাহা.. ঠিক আছে মা, শুনিও।
– ওহ তোকে তো বলা হয়নি। আমাদের কাজের খালা আছে তার মেয়ের বিয়ে আজ রাতে, সেখানে যাবো সন্ধ্যায়। ভাবছিলাম তোকে নিয়ে যাবো। অর্ন এসে ঝামেলা করবে, তুই থাক। সকালের দিকে ফিরতে পারি। (আরিনা বেগম)
– আচ্ছা, চিন্তা করবানা। সব সামলে নিবো।
আরিনা বেগম চলে যায় সেখান থেকে। অবনি আবারো চুপিসারে কাঁদতে থাকে। আরিনা বেগমের কথা মনে করেই অবনি কাঁন্না থামাতে পারেনা। এক বছর পর নাতি নাতনির মুখ। অবনির কাছে কথাটা এখন হাস্যকর লাগছে। আরিনা বেগম তো জানেনা, তার ছেলে ছ মাস পরেই অবনিকে ডিভোর্স দেবে। যেটা অবনি জেনে গেছে। তবুও অবনি কাউকেই কিছু বললো না। সে খাবার টেবিলে বসে অর্নকে কল দেওয়া শুরু করে। কিন্তু অর্নের কানে এখন মোবাইলের রিংটোন এসে পৌছাচ্ছে না। সে ইরার নেশায় আসক্ত। বাকি সব কিছুতে সে বিরক্ত।
.
বিকেল গড়িয়ে রাত হয়। অর্ন গাড়ির সামনের ডিগিতে এসে বসেছে ঘন্টাখানিক আগে। পাশ দিয়ে একটা ভ্যান গাড়ি যাচ্ছিল। ভ্যানের সাথে ছোট্ট মাইক লাগানো। সেখান থেকে ভ্যানচালক গান শুনতে থাকে। সেই গান অর্নের কানে আসে।
“ও আমি পারি না… আর পারিনা…
আমি কেনো মরিনা..
আজরাইল কি চিনে না…….আমারে রে…?
আমি পারি না… আর পারিনা….”
অর্ন গানটা শুনে মুচকি হাসলো। সে কি করবে বুঝতে পারছে না। অবনিকে কোনো ভাবেই ওর মন মেনে নিচ্ছে না। মানবেই বা কি করে? ওর বন্ধুরা সবাই স্মার্ট, দেখতে বেশ। অর্নও সবার থেকে বেষ্ট। আর তার বউ হয়েছে কালো? এটা কি মেনে নেওয়া যায়? সময় বয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা ছাঁড়িয়ে রাত। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে অর্ন। রাত এগারোটা বেজে গেছে। দুপুর থেকে সে এখানে ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। ইরা আসেনি। ইরা সত্যিই একবারের জন্য অর্নকে দেখতে আসেনি। ইরা ভেবেছিল অর্ন হয়ত চলে গেছে। তাই সে বিছানা ছেঁড়ে উঠল। বাইরে উঁকি দিতেই দেখে অর্ন গাড়ির সামনের উপর শুয়ে আছে। ইরা আবারো বিছানায় যেয়ে বসলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা। তবে এটা সে উপলব্ধি করতে পেরেছে, অর্ন অবনিকে বিয়ে করায় ইরা অর্নের প্রতি আগের মত টান অনুভব করছে না। হায়রে ভালোবাসা, একজন ভালোবাসার জন্য দুপুর থেকে লাগাতার ফোন দিয়ে যাচ্ছে, কখন অর্ন ফিরবে বলে অপেক্ষা করছে টেবিলের সামনে খাবার রেখে। আরেকজন দুপুর থেকে অন্যের জন্য গাড়ির উপর বসে আছে। কিন্তু ইরা… সেও তো ভালোবাসছিল। তাহলে এখন কি হল ওর? ভালোবাসা কি তাহলে শেষ? মুনিষীরা তো বলেছিলেন “প্রিয় মানুষ যদি পৃথিবীর সবচাইতে খারাপ হোক না কেনো, সে তোমার ভালোবাসা।”
অর্নের অনেক কষ্ট হতে থাকে। সারাদিন কিছু না খাওয়ার ফলে কেমন যেন ওর কাছে অন্ধকার লাগে। ইরার রুমের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত স্বরে বললো “ইরা ভেবোনা, আমি চলে যাবো তোমার থেকে। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমারই ছিলাম, এখনো আছি। আজ যাচ্ছি, তবে আবার আসবো, রোজ আসবো।”
অর্ন গাড়ি স্টার্ট করে। ফোন হাতে নেয় ও। সাতশ বত্রিশটা কল। সবগুলোই অবনির নাম্বার থেকে। অর্ন ফোন চেক করে ভালোমত। সেখানে শুধু অবনিরই কল দেখতে পায়। এতক্ষণ ধরে ওর কোনো বন্ধুই ফোন করে খোজ নেয়নি। অর্ন অবাক হয়। বন্ধুদের জন্য কতকিছুই না করেছে সে। অথচ কেউ আজকে অর্নকে কল দিল না। অর্ন একটু মুচকি হাসলো। এরপর বাড়ির দিকে যেতে থাকে। ঠিকভাবে গাড়ি চালাতে পারেনা অর্ন। হাত কেঁটে গিয়েছিল অনেকখানি মদের বোতলে। এতক্ষণ মনেই হয়নি ব্যাথা, যন্ত্রনার কথা। গাড়ির স্ট্রাইং ধরতেই সে যন্ত্রনা আর অনেকটাই ব্যাথা অনুভব করে। কিন্তু ওর মনে যে ব্যাথা আর যন্ত্রনা হচ্ছে সেটা কেউ অনুভব করতে পারবে না।
.
অবনি ঘুমিয়ে পড়েছিল। সকাল থেকে বেশ অনেকটাই কাজ করেছিল অবনি। স্বামীর রুম পরিষ্কার থেকে শুরু করে, অর্নের কাঁপড় পরিষ্কার, অর্নের প্রিয় খাবার রান্না করে, প্লেট সাজিয়ে সবকিছু রেডি করেই টেবিলে এসে বসেছিল। বাড়িতে আজ কেউ নেই। অবনি আর টেবিল খেকে ওঠেনি। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল অবনি খেয়াল করেনি। হঠাৎ কলিংবেল বেঁজে ওঠে। অবনি লাফ দিয়ে চেয়ার ছেঁড়ে উঠল। দৌড়ে দরকার কাছে যাবে এমন সময় পা চেয়ারের সাথে বেধে পড়ে বড় রকমের হোঁচট খায় অবনি। পায়ের নখ যেন প্রায় উঠে যাওয়ার উপক্রম। অবনি আহ শব্দটুকুও করেনি। নিজেকে সামলে দরজার কাছে যেয়ে দাঁড়ায়। দরজা খুলে দিতেই দেখে অর্ন ক্লান্ত শরীর নিয়ে ঢুলু ঢুলু চোখে অবনির দিকে তাকিয়ে আছে।
– দরজা খুলতে এত দেরি?
অর্ন ডান হাত দিয়ে ঠাস করে একটা চড় লাগিয়ে দেয় অবনির গালে। অবনি চিৎকার করেনি। কিন্তু অর্ন ঠিকিই চিৎকার করে ওঠে। হাতে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হয়। অবনির গালে এতটুকুও চড় লাগেনি। কিন্তু অর্ন কেনো চিৎকার করলো সেটা না বুঝেই অবনি মুচকি হাসলো। অর্ন রেগে প্রশ্ন করে..
– কি ব্যাপার.. তোর হাসি পাচ্ছে?
– তুমি চড় দিয়েছো, আমার লাগেনি। জোরে মারোনি কেনো? (অবনি)
– আমার সামনে থেকে যা, দুর হো তুই। (অর্ন)
– এক মিনিট.. তোমার হাতে কি হয়েছে? রক্ত বের হচ্ছে? বিশ্বাস করো আমি মুখে কিছু দিইনি, যেটা তোমার হাতে লেগে কেঁটে যাবে। বিশ্বাস না হলে বাম হাত দিয়ে চড় মারো গালে, জোরে মারবা। দাঁড়াও আমি মারিয়ে নিচ্ছি।
অবনি পাগলের মত যেন ছটফট করতে থাকে অর্নের হাতে রক্ত দেখে। অর্নের বাম হাত ধরে গালের কাছে টেনে এনে কষে একটা চড় দেয়। অবনি আবার অর্নের হাত মেলে দেখে, বাম হাতে রক্ত নেই। অর্নের ডান হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে অবনি। এরপর দুই হাত দিয়ে অর্নের হাত আলতো করে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে অবনি। অর্ন বোকার মত তাকিয়ে থাকে অবনির দিকে। মেয়েটার এমন পাগলামি দেখে অর্ন কিছু বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু এখন ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হয়না।
অবনি অর্নকে ধরে সোফাতে এনে বসায়। দৌড়ে রান্না করে যায় অবনি। স্যাভলন, তুলো মলম সবকিছু একসাথে নিয়ে আবারো দৌড়ে আসে অর্নের কাছে। অর্ন কেবল হা হয়েই অবনির ছোটাছুটি দেখছে। অবনি অর্নের পায়ের কাছে বসে। নিজের কোলে অর্নের হাত টেনে নিয়ে অনেক বেশি কেয়ার সহিত হাতে স্যাভলন লাগাতে থাকে। অর্ন যেন কেঁপে ওঠে। অবনি কাঁদতে কাঁদতে বলে..
– কিভাবে কাঁটছে তোমার হাতে? চারিদিকে কি করে কাঁটলো? একটু তো নিজের খেয়াল নিতে শেখো? ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি তুমি কেয়ারলেস। এমন করলে হবে? আজ যদি বড় কিছু হতো? তখন কে কষ্ট পেতো? বড়খালা মনি যে তোমাকে নিয়ে চিন্তা করে, দাদু যে তোমাকে নিয়ে ভাবে সেটা কি তুমি একটুও জানো?
অবনি কান্না থামায় না। অর্নকে কেয়ারের সাথে মিষ্টি বকা দিয়ে যাচ্ছে ও। আর অর্ন সোফাতে হেলান দিয়ে অবনির কান্ড হাবার মত হয়ে দেখতে থাকে। তারপর…
চলবে,,