প্রণয় আসক্তি পর্ব-১৭

0
1248

#প্রণয়_আসক্তি
#লেখিকাঃমাহযাবীন
পর্বঃ১৭

পেটিকোট ও ব্লাউজ পড়া অবস্থায় নিজ কক্ষের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিয়ামি।আজ তার হলুদের অনুষ্ঠান।বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত থাকায় নিজের শাড়ি তার নিজেকেই পরতে হবে।চোখ-মুখে বিরক্তি স্পষ্ট ফুটে আছে তার।একা একা শাড়ি পড়া টা প্রচন্ড বিরক্তির তার কাছে।আর নিজে নিজে শাড়ি পড়া টা যথেষ্ট কষ্টসাধ্যও বটে।
উপায়ন্তর না পেয়ে বিছানা হতে শাড়িটি হাতে নিয়ে আবারও আয়নার ঠিক সামনে বরাবর দাঁড়ায় মিয়ামি।এ সময়েই তার কক্ষের দরজাটি খোলার একটু শব্দ কানে এসে লাগে তার।চমকে উঠে বুকের উপর শাড়িটি জড়িয়ে ধরে দরজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতেই কিছু বলার জন্য মুখ খুলে সে।তবে দরজার কাছে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে চোখ পরতেই তার মুখ দিয়ে আর কোনো শব্দ উচ্চারিত হলো না।বরং বিস্ময়ে তার চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো।বিস্ফারিত চোখে সে তার সামনের মানবটির দিকে তাকিয়ে আছে।

মিয়ামির কক্ষের দরজাটা ভালো করে লাগিয়ে দিয়ে ঠোঁটে বাঁকা হাসি টেনে মিয়ামির দিকে ফিরে দাঁড়ায় আর্শ।ধীর কদম ফেলে মিয়ামির অনেকটা কাছে এসে দাঁড়ায় সে।তার ও মিয়ামির মাঝে এখন এক হাত পরিমাণ দূরত্বও অবশিষ্ট নেই।
আর্শ মিয়ামির এতোটা কাছে আসতেই বিস্মিত কন্ঠে মিয়ামি বলে ওঠে,
-তুমি এখানে কি করছো?
উত্তরে আর্শ নিরব চাহনি নিয়ে মিয়ামির ঠোঁটে আলতো করে নিজের শাহাদাত আঙুলটি ছুঁইয়ে ইশারায় কথা বলতে নিষেধ করে।ছেলেটির ঠোঁটে এখনো সেই বাঁকা হাসিটি লেগে আছে।মিয়ামির চোখে চোখ রেখে কয়েক সেকেন্ড অতিবাহিত করেই আর্শ হুট করে এক টানে মিয়ামির হাত থেকে শাড়িটি নিজ হাতে নিয়ে নেয়।সেটির ভাজ খুলে এক পাশ হাতে নিয়ে আলতো করে মিয়ামির কোমরে তা গুঁজে দেয় সে।ছেলেটির এমন আলতো স্পর্শে কেঁপে ওঠে মিয়ামি।আর্শ তার ও মিয়ামির মাঝের দূরত্ব আরও কমিয়ে নেয়। আঁচলের অংশ টুকু মেয়েটির কাঁধে রেখে নিজে হাঁটু গেরে তার সামনে বসে পরে।আর্শের মুখটি মিয়ামির পেটের কাছে থাকায় তার নিঃশ্বাস একটু একটু নিজের পেটের উপর এসে লাগাটা অনুভব করছে মিয়ামি।শিহরণে হৃৎস্পন্দনেরা বেড়ে চলছে তার।
মেয়েটির কুঁচির অংশ টুকু নিজের হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে কুঁচিটি করে নিজেই মিয়ামির পেটের মাঝ বরাবর কুঁচিটি গুঁজে দেয় আর্শ।পেটে ছেলেটির হাতের স্পর্শে আবারও কেঁপে ওঠে মিয়ামি।লজ্জা ও শিহরণে চোখজোড়া বুজে নেয় সে।

মিয়ামি পেটিকোটটি বেশ উপরে উঠিয়ে পড়ায় তার নাভী দৃশ্যমান নয়।অল্প যেটুকু পেট দৃশ্যমান তার মাঝ বরাবর অর্থাৎ কুঁচির উপরের দিকে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোঁয়ায় আর্শ।এবারের শিহরণে আরও একবার কেঁপে উঠে আর্শের কাঁধ দু’হাতে খামচে ধরে মিয়ামি।
মিয়ামির এমন প্রতিক্রিয়ায় ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে আর্শের।সে আরো একবার সেই একই জায়গায় ঠোঁট ছুঁইয়ে মিয়ামির পেটের কাছ থেকে সরে উঠে দাঁড়িয়ে পরে।আঁচল টি ঠিক করে সেথায় একটি সেফটি পিন লাগিয়ে দেয়।অতঃপর মেয়েটির পা হতে মাথা অব্দি চোখ বুলিয়ে নেয় সে।
মিয়ামি এখনো তার চোখ বুজেই রেখেছে।হৃৎস্পন্দন বেশ বেড়ে গিয়েছে মেয়েটির।নড়াচড়া করার মতো মানসিক শক্তিটি যেনো সে হারিয়ে ফেলেছে।তাই চুপটি করে স্থির দাঁড়িয়ে আছে সে।
মিয়ামিকে দেখে নিয়ে আর্শ ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে মেয়েটির কোমর দু’হাতে চেপে ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে।কপালের মাঝ বরাবর ঠোঁট ছুঁইয়ে নিম্ন স্বরেই বলে ওঠে,
-মাত্রাতিরিক্ত গরম!
আর্শের কথা টি কানে আসতেই চোখ মেলে তাকায় মিয়ামি।তার ও আর্শের মাঝে কেবল কয়েক ইঞ্চির দুরত্ব।আর্শের নিঃশ্বাস তার মুখের উপর আছড়ে পরছে।সেই সাথে ছেলেটির শরীর থেকে ভেসে আসা পারফিউমের সুঘ্রাণে মুগ্ধ হচ্ছে মিয়ামি।হৃৎস্পন্দনও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েই চলছে তার।এ মুহূর্তে আর্শের বুকে মাথা রেখে খুব খুব শান্তি কুড়াতে মন চাইছে তার।তবুও ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে আর্শের চোখে চোখ রেখে মিয়ামি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
-এতো গরম লাগছে কেন তোমার?আমার তো লাগছে না।এসি কি ছেড়ে দিবো?
মিয়ামির কথায় মেয়েটিকে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে আর্শ।আলতো করে নাকে নাক ঘষে মৃদু স্বরে বলে ওঠে,
-আগুনের দলাটা তো নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছি।তাই তো এতো গরম লাগছে।
আর্শ দুষ্টু চাহনি নিয়ে কথাটি বলায় মিয়ামির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে আর্শ আসলে কি বুঝাতে চাইছে।মনে লজ্জারা এসে ভীড় জমাতেই সে আর দেরি না করে আর্শের বুকে আশ্রয় খুঁজে নেয়।মৃদু হাসি ফুটিয়ে আর্শও মিয়ামিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়।
কয়েক সেকেন্ড এভাবে পাড় হতেই মিয়ামি বলে ওঠে,
-তুমি এ বাড়িতে কি করে এলে?
-হলুদ নিয়ে।
-মানে?
-মানে আর্শি সহ আমার সব কাজিন তাদের হবু ভাবীর জন্যে হলুদ নিয়ে এসেছে।পেছন পেছন আমি ও চলে এলাম।
অবাক কন্ঠে মিয়ামি বলে ওঠে,
-কেউ বাঁধা দেয়নি তোমায় আসতে?
-কেউ দেখেইনি।
-রাস্তায় নাহয় দেখেনি কিন্তু বাসায় ঢুকার সময়?
-কাজের ব্যস্ততায় দরজা যে খোলা তাতে কারো খেয়াল নেই।সেই সুযোগ টা নিয়েছি।
উত্তরে ঠোঁটে হাসি নিয়ে মিয়ামি বলে ওঠে,
-আর এতোসব করার কি দরকার ছিলো?
-বাহ রে! আমার বউকে আমি বিশেষভাবে হলুদ লাগাবো না?
আর্শের কথায় সাথে সাথে তার কাছ থেকে সরে আসে মিয়ামি।বিস্মিত চোখে আর্শের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-ভাইটু তুমি ঠিক আছো তো?
মিয়ামির হটাৎ এমন প্রতিক্রিয়ার কারণ বোধগম্য না হওয়ায় উত্তরে ব্রু কুঁচকে আর্শ বলে ওঠে,
-ক্যান?
-তোমার মতো নিরামিষ মানুষ এতো রোমান্টিক কথা বলছে?এ দিনও আমি দেখছি!!!
মিয়ামির কথার উত্তরে ঠোঁটে একটু দুষ্টু হাসি টেনে নেয় আর্শ।নিজের পকেট হতে পলিথিনে পেচিয়ে আনা হলুদটি বের করে নিজের হাতে নিয়ে সে মিয়ামির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
-আরও বহু কিছু দেখার আছে।
আর্শের চাহনি,ঠোঁটের হাসি ও উচ্চারিত উক্তি সবটাই কেমন যেনো রহস্যময় লাগছে মিয়ামির।সে আর্শের দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বুঝতে চাইছে যে, আসলে ছেলেটা কি করতে চাইছে!
নিজের কথাটি শেষ করে আর্শ মিয়ামির দিকে এক কদম অগ্রসর হয়।ওমনি সাথে সাথেই মিয়ামি দু’কদম পিছিয়ে গিয়ে বলে ওঠে,
-তুমি এখন হলুদ লাগালে তো বাইরে গেলে সবাই দেখে প্রশ্ন করবে।তখন কি বলবো?
উত্তরে আর্শ কোনো বাক্য ব্যয় না করে তার ঠোঁটের দুষ্টু হাসিটি ধরে রেখেই মিয়ামির কাছে এগিয়ে যায়।তাদের মাঝের দূরত্ব অনেকটা কমিয়ে মিয়ামির সামনে এক হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে পরে আর্শ।মিয়ামি এক নজরে আর্শের দিকে তাকিয়ে থেকে আর্শের মতলব টা বুঝার চেষ্টা করে চলছে।
আর্শের ডান হাতে হলুদ।বাম হাতটি দিয়ে মিয়ামির পেটের কাছ থেকে আলতো করে শাড়ি সরায় সে।সাথে সাথেই নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় মিয়ামি।তবে কিচ্ছুটি বলে না।
আর্শ পেটের কাছ থেকে আঁচলটি সরিয়ে নিজের ডান হাতে থাকা হলুদটি মিয়ামির পেটে লাগিয়ে দেয়।ছেলেটির হাতের স্পর্শে আবারও কেঁপে উঠে চোখ বুজে নেয় মিয়ামি।আর্শ ধীরে ধীরে মিয়ামির পেটের অনেকটা জায়গাতেই হলুদ লাগিয়ে দেয়।লাগানো শেষে মিয়ামির পেটে আলতো করে নিজের গাল ঘষে নিজের গালেও হলুদ লাগিয়ে নেয় সে।
আর্শের খোচাখোচা দাঁড়ি মিয়ামির পেট স্পর্শ করতেই মিয়ামির পুরো শরীরে যেনো এক তীব্র শিহরণ বয়ে গেলো।মেয়েটি সহ্য করতে না পেরে আর্শের চুল দু’হাতে মুঠোবন্দি করে নেয়।
আর্শ ধীরে ধীরে মিয়ামির সামনে হতে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।দু’হাতে মেয়েটির কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে মেয়েটির কপালে কপাল ঠেকিয়ে সে বলে ওঠে,
-সম্পন্ন হলো আমাদের “হলুদ”।

!!
দিনটি মোটামুটি ব্যস্ততায় পাড় করে রাতে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতেই মিয়ামির কিছু একটা মনে পরে।তড়িঘড়ি করে সে নিজের ফোনটি হাতে নিয়ে একটি নাম্বারে ডায়াল করে।দুবার রিং হলেই কলটি ওপাশ থেকে রিসিভ হয়।ওপাশের ব্যক্তিটি কিছু বলে উঠার আগেই মিয়ামি বলে ওঠে,
-আসসালামু আলাইকুম,ভাইয়া।আমি মিয়ামি বলছি, নিশির ফ্রেন্ড।একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই আপনাকে বিরক্ত করা।দুঃখিত এভাবে রাতে কল দেওয়ার জন্যে।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।সমস্যা নেই,তেমন রাতও হয়নি এখন।কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে চাইছিলা?
-আসলে ভাইয়া আগামী পরশু কি আপনি ফ্রী আছেন?যদি একটু দেখা করতে পারতেন?একটি বিষয়ে আপনার একটু পরামর্শ প্রয়োজন।
-কাল তোমার বিয়ে আর পরশুই দেখা করতে চাইছো।ব্যাপার টা অবশ্যই ছোটখাটো কিছু নয়।
চিন্তিত কন্ঠে কথাটি বলে ওঠে নিশির ভাই।উত্তরে মিয়ামি বলে ওঠে,
-জ্বি ভাইয়া।ব্যাপারটা আমার জন্যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।কিন্তু একটি অনুরোধ,প্লিজ আমার এ বিষয়টি আপনি কেউকে জানাবেন না,নিশিকেও না।
-ঠিক আছে,জানাবো না।
-ওয়াদা করছেন?
-করছি।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।তবে পরশু কোনো একটি রেস্টুরেন্টে দেখা হচ্ছে?
-ঠিক আছে।সময় আর লোকেশন জানিয়ে দিবো।
-অনেক ধন্যবাদ।বিয়েতে আমাদের দোয়া দিতে আসছেন তো?’না’ উত্তরটি কিন্তু কোনোভাবেই গৃহীত হবে না।
উত্তরে ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে নিশির ভাই বলে ওঠে,
-আসবো ইন শাহ আল্লাহ।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে