প্রণয়ে প্রলয়ের সুর পর্ব-২১+২২

0
800

#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর
.
পর্ব_২১
.
নির্জন অবাক হয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে বললো,

– ‘হঠাৎ চলে যাওয়ার কথা ভাবছো কেন?’

– ‘এমনিই, প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে না। গ্রামে গিয়ে ডিগ্রিতেই ভর্তি হয়ে যাব।’

– ‘পাগল না-কি, প্রস্তুতি ভালো না হলে নাই, এখানে থেকে যেকোনো ভার্সিটিতে অনার্স করবে..।’

– ‘আচ্ছা ঠিক আছে, ব্যস্ত হতে হবে না তোমার।’

নির্জন আবার তরুর কোলে মাথা রাখে। তরু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘চলে যেতে চাই, কিন্তু তোমার কথা ভাবলে তো যেতে ইচ্ছা করে না জনাব।’

নির্জন ওর এক হাত বুকে এনে ধরে বললো, ‘আরেকদিন চলে যেতে বললে আজীবনের জন্য রাখার ব্যবস্থা করে নিব।’

তরু মাথা নুইয়ে মুখে হাত দিয়ে ফিক করে হাসলো। একপাশের চুল গাল বেয়ে এসে পড়লো নির্জনের মুখে। তারপর উলটো দিক থেকে চোখে চোখ রেখে বললো, ‘কীভাবে রাখবে শুনি?’

– ‘সোজা কাজী অফিসে নিয়ে বিয়ে।’

– ‘ছি, আমার মতো পিচ্চি মেয়ের এখনই বিয়ে কীসের?’

– ‘তোমার বয়সি কত মেয়ে বাচ্চার মা আছে, নাই? একটু ভেবে-চিন্তে দেখো।’

– ‘হুম তা তো ঠিক। মেয়েদের একটু আগেই বিয়ে হয়ে যায়।’

নির্জন চা-ওয়ালা দেখে বললো, ‘চা খাবে?’

– ‘সবাই দেখবে, মেয়ে মানুষ যেখানে-সেখানে বসে বুঝি চা খেতে পারে?’

‘পারে, কেউ তেমন খেয়ালই করছে না। তুমিই অকারণ বেশি ভাবছো।’ নির্জন উঠে বসে হাত তুলে চাওয়ালাকে ডাকলো। দু’কাপ চা নিল তারা। নির্জন চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘ভালোই তো বানিয়েছে।’

তরু সহমত জানালো। নির্জন খানিক পর বললো, ‘রেস্তোরাঁয় না গিয়ে ভালোই করেছি। সবুজ ঘাস, গাছগাছালি, মুক্ত বাতাস আর একজন সুন্দরী নারী।’

তরু চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘কবি ভর করেছে না-কি।’

মুচকি হাসলো নির্জন। তরু ওর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তোমার চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে। ঘুমাও না ঠিকমতো আর দুশ্চিন্তা করো।’

নির্জন কোনো জবাব দিল না। তরু পুনরায় বললো, ‘ফুপার বয়স হচ্ছে। ধীরে ধীরে অসুখ-বিসুখ আসবে এটাই স্বাভাবিক। তোমার তো ভেঙে পড়লে হয় না।’

– ‘বয়স যে খুব হয়েছে তাও না। তাছাড়া উনি ছাড়া আমার আর কে আছে?’

– ‘আমি আছি।’

নির্জন চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, ‘এই আছো আরকি। একটু আগেই চলে যেতে বলেছিলে।’

– ‘আপনি বললে আজন্ম থেকে যাব জনাব। এইযে আপনি একটু আগে থাকতে বলেছেন। তাতেই তো থেকে গেলাম।’

– ‘ম্যাডাম ‘তুমি’ করে কয়দিন বলে এখন আবার ‘আপনি’ কেন?’

– ‘যখন যা ভেতর থেকে আসে তা আসতে দিন না। ‘তুমি’ এলে ‘তুমি’, ‘আপনি’ এলে ‘আপনি’।’

– ‘আচ্ছা তা মানলাম৷ কিন্তু দেইখো ভেতর থেকে আবার ‘তুই’ যেন না আসে।’

তরু ভ্রু-কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘এভাবে বলতে পারলেন? আপনাকে আমি কখনও ‘তুই’ বলবো?’

নির্জন চায়ে চুমুক দিয়ে কানে হাত নিয়ে বললো, ‘আর এমন ভুলভাল কথা বলবো না।’

তরু আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ‘আরে পাগল হয়েছেন না-কি, পার্কের ভেতরে কানে ধরে ফেলেছেন।’

– ‘তাহলে কি রুমে গিয়ে ধরতে হবে?’

– ‘কোথাও গিয়ে ধরতে হবে না, চুপ থাকুন।’

– ‘থাকলাম।’

নির্জন দীর্ঘ সময় কিছু একটা ভেবে ‘দারোয়ানকে একটা কল দিয়ে নিই’ বলে মোবাইল বের করে কল দিল। তরু বাদাম হাতে নিল। রিসিভ হতেই বললো, ‘সিকান্দার ভাই কেউ পাশে আছে?’

– ‘না ভাইজান।’

– ‘তোমাকে ভোরে কি বলেছিলাম। আম্মু কোথাও যেতে চাইলে জিজ্ঞেস করবে কোথায় যাবে। আমাকেও জানাবে।’

– ‘ম্যাডামকে কীভাবে এত জিজ্ঞেস করবো কন। তবুও বলছিলাম কোথায় যাইবেন। উনি ধমক দিয়া বলছে তা দিয়ে তুমি কি করবে।’

– ‘আচ্ছা, এরপর থেকে আমাকে কল দিবে, ঠিক আছে? মানে উনি বাইরে যেতে হলে আঁটকে রেখে আমাকে কল দেবে।’

সিকান্দার ইতস্তত করে বললো, ‘আইচ্ছা ভাইজান।’

নির্জন কল রাখার পর তরু ভ্রু-কুঁচকে বললো, ‘হঠাৎ কি হলো?’

– ‘ফুপু, ম্যানেজার এদের কথায় তো বুঝাই যাচ্ছে তোমার ফুপুর সঙ্গে কিছু হয়েছে। আব্বুও তাকে হসপিটাল যেতে না করছে। সব মিলিয়ে উনাকে একা বাইরে যেতে দেবো না আর। দারোয়ান কল দিলে হুস্না, তুমি অথবা আমি সঙ্গে যাব বাইরে।’

– ‘হসপিটাল না যাওয়ার জন্য?’

– ‘শুধু এটা না, আমার সন্দেহ আছে কিছু। এত ঘাটছি না, কেউ বলছেও না। তবুও একটু সচেতন থাকা আরকি।’

তরু মনে মনে অবাক হচ্ছে। নির্জনকে কেউ কিছু না বললেও সবকিছু কেমন বুঝে যাচ্ছে। শুরু থেকেই তন্ময়কে সন্দেহ করতো। কেয়া ফুপুর পূর্বের রিলেশনের জন্য সংসারের প্রতি অমনোযোগী কি-না ভাবতো। সেদিন সরাসরি কিছু না দেখলেও ঠিক আন্দাজ করে নিয়েছে ফুপা গায়ে হাত তুলেছেন ফুপুর। তন্ময়কে পুলিশ ধরলে ফুপা কীভাবে জানলেন সেটাও সে ভাবছে। কিছু স্পষ্ট জানে না, অথচ তার বাবাকে হসপিটাল রাখছে। যেন ভেতরে ভেতরে কোনো ঝামেলা চলে থাকলে এখন তার বাবার উপর ইফেক্ট না পড়ে। মানুষটা সবকিছু নিয়ে এত ভাবে? এত যত্ন করে সবকিছু করে। কিন্তু তরু নিজেই তো বুঝতে পারছে না, ম্যানেজার কেন খারাপ বললো ফুপুকে। ফুপাও বা কেন হসপিটালে যেতে না করলেন। নির্জনকে কি এমন জরুরি কথা বলবেন? দীর্ঘশ্বাস ফেলে তরু। সেটা লক্ষ্য করে নির্জনও। সে ওয়ানটাইম কাপটা পলিথিনের ব্যাগে রেখে বললো, ‘কি ভাবছো এত?’

তরু উঠে এসে নির্জনের হাতটা ধরে কাঁধে মাথা রেখে বললো, ‘আমার না খুব ভয় ভয় লাগছে।’

– ‘কেন?’

– ‘নিজেই জানি না।’

– ‘তুমি এত ভেবো না। নিজের মতো পড়ালেখা করো। একটা কিছু ঝামেলা হচ্ছে ঠিক হয়ে যাবে।’

তরু ওর আঙুলের ভেতরে আঙুল ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে বললো, ‘যদি কোনো কারণে আমার সঙ্গে আর কথা বলেন না, সম্পর্ক রাখেন না?’

নির্জন মুচকি হেসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘অকারণ এসব ভয় পেয়ো না।’

– ‘কত প্রেমের বিচ্ছেদ হয় নির্জন। ভয় না পাওয়ারও কিছু নেই। আমি কিন্তু একটুও সহ্য করতে পারবো না, মরে যাব একদম।’

শেষদিকে গলা ধরে এলো ওর। নির্জন গালে হাত রেখে আস্বস্ত করে বললো, ‘অন্যদের বিচ্ছেদ হওয়ারই কথা। সমবয়সি ছেলের সঙ্গে প্রেম করলো। মেয়েটি ইন্টার বা অনার্সে উঠলেই লাগে বিয়ের যোগ্য। ছেলেকে লাগে চ্যাংড়া। কিন্তু তুমি আর আমি অনেক তফাৎ। আমি চাইলেই এখন বিয়ে করতে পারি। মাস্টার্স শেষ হতে চললো। বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দিলেই হয়ে গেল। তাহলে তোমার চিন্তার কি আছে বোকা। তোমার পরিবার থেকে বিয়ের চাপ দিলে বলবে। ওইদিনই আমি আলাপ দিয়ে দেবো। একদম ভয় পাবে না। এত মিষ্টি একটি মেয়েকে আমি বিচ্ছেদের কষ্ট দিতে পারবো বুঝি?’

তরু চুপ হয়ে গেল। আসলেই তো এত ভয়ের কিছু নেই। অকারণ ভয় পায় সে। নির্জন হাত বাড়িয়ে বাদাম নিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে মুখে দিয়ে বললো, ‘আচ্ছা আমাদের ব্যাপারটা কেমন হাস্যকর না?’

– ‘কেন?’

– ‘এইযে কোনো প্রপোজ নেই। কেমন যেন হয়েই গেল। যেমন বৃষ্টি আসে, বাতাস বয়, সূর্য উঠে। সেভাবেই যেন প্রকৃতির নিয়মের মতো আমাদের প্রেম হয়ে গেল। আমরা যেন একজন আরেকজনকে না বলেই অনেক কথা বলে ফেলেছি, বুঝে নিয়েছি।’

তরুর মনটা ভালো হয়ে গেল। তাদের প্রেমটা সত্যিই যদি প্রকৃতির নিয়মে হয়। তাহলে সে নিয়মেই হয়তো মিলন হবে৷ সে নির্জনের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘একটা গান আছে না, ‘সব কথা বলে না হৃদয়, কিছু কথা বুঝে নিতে হয়’ সেরকম হয়েছে।’

– ‘কিন্তু আমি তো প্রপোজ করবো।’

– ‘কবে?’

– ‘যেদিন তোমার ভর্তি পরীক্ষা শেষ হবে সেদিন। এখন প্রপোজ ছাড়াই বোনাস প্রেম করে নিচ্ছি।’

– ‘বোনাস প্রেম আবার কি?’

– ‘তাহলে কি প্রেমের ট্রেনিং চলছে?’

তরু হাসলো। চোখ পড়লো নির্জনের বাইসেপে। বাদামের খোসা ছাড়াচ্ছে তাই ফরসা পেশি ডিমের মতো নড়ছে। তরু অস্ফুটে ‘কামড় দেবো’ বলে দুইহাতে মুখ ঢেকে নিল। নির্জন ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘কিছু কি বললে?’

– ‘কিছু না।’

– ‘কি যেন বলে নিজেই লজ্জা পাচ্ছ।’

তরু মুখ থেকে হাত সরিয়ে বললো, ‘যাক শোনোনি যেহেতু লজ্জা পেয়ে লাভ নেই।’

নির্জন ওর হাতে বাদাম দিয়ে বললো, ‘কামড় দেবে বলেছিলে।’

তরু লজ্জা পেয়ে ওর কাঁধে মুখ লুকোয়। নির্জন পুনরায় বললো, ‘কোথায় দেবে? খামচি দিয়ে আর হচ্ছে না বুঝি? এখন কামড় দিতে হবে?’

তরু খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো। নির্জন খানিক পর বললো, ‘তোমার ফুপুর বাইরে সম্ভাব্য কি কি দরকার থাকতে পারে বলো তো। আমরা নিয়ে চলে গেলাম।’

– ‘কি জানি, আর দরকার থাকলে তো হুস্না আছে, তুমি আছো তখন নেয়া যাবে।’

– ‘তা ঠিক।’

নির্জন খানিক পর বললো,

– ‘তোমাকে নিয়ে একদিন মুভি দেখতে যাব। আব্বা সুস্থ হয়ে যাক তখন। শুনেছি গ্রামের মানুষের এফডিসি নিয়েও খুব ফ্যান্টাসি থাকে। একদিন নিয়ে যাব তোমাকে।’

– ‘আসলে আগে সত্যিই ছিল। কিন্তু ইউটিউবে তো এখন শুটিং কীভাবে করে দেখেছি। নায়ক-নায়িকাদের ব্যক্তিগত সবকিছু জানা যায়। তাই এগুলো নিয়ে আর আগ্রহ নাই। তবে একদিন গেলে ভালো লাগবে।’

– ‘হুম যাব, যাইহোক এখন উঠি, বাসায় যাই। এরপর হসপিটালও যেতে হবে।’

– ‘আমিও ফুপাকে দেখতে যেতে চাইছিলাম।’

– ‘বাদ দাও, আমিও গেলে হ্যাঁ, না করে করে চলে আসি৷ যতদূর বুঝতে পারি বা ধারণা। উনি সিরিয়াস কিছু নিয়ে আলোচনা করতে চান। কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের পর ঝামেলা নিয়ে যত কম কথা বলবে তত ভালো। কিছুদিন যাক। তুমি গেলে আবার যদি কিছু বলে।’

– ‘কি বলবে?’

– ‘ধরো তোমার ফুপুকে নিয়ে কিছু। তাহলে তো কথা বাড়বে। একেবারে সুস্থ হয়ে ফিরুক৷ এরপর সে কি বলতে চায় জানা যাবে।’

– ‘হ্যাঁ তা ঠিক।’

– ‘আচ্ছা উঠি।’

দু’জন পলিথিনে মোড়ানো বাদামের খোসা ডাস্টবিনে ফেলে পার্ক থেকে বের হলো। একটা রিকশা নিল। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। আকাশে গোধূলির লালিমা। রিকশা নিয়ে তারা বাসায় আসে। তরু উপরে চলে যায়। নির্জন কিচেনে হুস্নাকে দেখে গিয়ে ঢুকলো, তাকে দেখে হুস্না বললো, ‘ভাইয়া চাচার শরীর কেমন এখন।’

– ‘ভালোই, কিন্তু হুস্না একটা কথা।’

– ‘বলুন ভাইয়া।’

– ‘আমার কাছে কিছু তো লোকাচ্ছ তোমরা আমি জানি। কিন্তু সেটা আমাকে বলার মতো হলে বলো। আমিও সচেতন হলাম।’

– ‘কিছু না ভাইয়া। কি লুকাবো।’

– ‘কিছু না শিওর?’

– ‘শিওর কিছু না, আর আমি একবার চাচাকে দেখতে যাব। আমাকে নিয়েন একবার।’

‘আচ্ছা’ বলে সে চলে গেল রুমে।
নির্জন কোথাও পড়েছিল, অতি অস্থিরতা, দুশ্চিন্তা দূর করতে আমেরিকান মানসিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা কাল্পনিক বই পড়তে বলেন। কোনপ্রকার জ্ঞানমূলক, একাডেমিক বই ছাড়া হতে হবে। ফলে মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য কোথাও হারিয়ে যায়। আনন্দ পায়। তাতে মানসিক প্রশান্তি আসে। তাই সেও সেল্ফ থেকে একটি উপন্যাস বের করলো। ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়ের “শাপমোচন” উপন্যাস। মৃদ নরম আলোয় পড়তে পড়তে সময় কীভাবে কেটে গেল টেরই পায়নি। দরজায় নক পেয়ে যেন বাস্তবে ফিরলো সে।

– ‘কে?’

– ‘ভাইয়া আমি, টিফিন বক্সে খাবার নিব না-কি এখন। হসপিটাল যাবেন না?’

– ‘ও হ্যাঁ, নাও গিয়ে, আমি আসছি।’

হুস্না চলে গেল। নির্জন উঠে টি-শার্ট পরে বের হয়ে গেল। থামলো এসে তরুর জানালার সামনে। ও বসে বসে মোবাইলে কিছু একটা দেখছে। দরজায় নক করলো।

– ‘কে আসো।’

নির্জন দরজা ঠেলে ভেতরে এলো। তরু মোবাইল রেখে বললো, ‘ও তুমি।’

– ‘পড়া রেখে মোবাইল টিপছো যে।’

– ‘পড়ার টেবিলে মন বসে না।’

নির্জন ওর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ‘কেন?’

– ‘কি জানি, এখন ফেইসবুকে ঢুকে একজনের ছবি দেখছিলাম।’

মুচকি হাসলো নির্জন। তারপর বললো, ‘একই বাসায় থাকতে মোবাইলে দেখতে হয় কেন! আমার রুমে যাওয়া কি নিষেধ?’

– ‘হুম নিষেধ।’

– ‘কেন?’

– ‘পারবো না এত জবাব দিতে।’

– ‘পড়া রেখে চুলগুলোও ঠেলতে ঠেলতে একপাশে নিয়েছো, সুন্দর লাগছে।’

– ‘তাই?’

– ‘হুম।’

– ‘হসপিটাল যাচ্ছেন।’

– ‘হ্যাঁ।’

– ‘যান তাহলে।’

নির্জন পিছু হটতে হটতে এসে দরজার ফাঁক দিয়ে বারান্দা দেখে নেয়। তারপর সুইচ বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো, ‘যাব না হসপিটাল।’

তরু ভ্রু-কুঁচকে বললো, ‘কেন?’

– ‘আমি একটু বেশি ভদ্র প্রেমিক, তাই না? আমার কোনো আবদার থাকতে পারে না?’

তরু ফিক করে হেসে বললো, ‘প্রপোজও করেননি। তাই এখনও এত অধিকার নেই।’

– ‘কি বললে? নিজেই না করেছিলে আবার ওই প্রসঙ্গ টানছো।’

– ‘তা আবদারটা কি শুনি?’

– ‘এদিকে আসো।’

তরু ভ্রু-কুঁচকে বললো, ‘কেউ আসবে কিন্তু।’

নির্জন আবার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে বললো, ‘কেউ নেই আসো। আর এসে দেখলেও কিছু যায় আসে না।’

তরু উঠে কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো, ‘পুরুষ মানুষের কিছু যায় আসে না। কিন্তু নারীর কলঙ্ক লাগে জনাব।’

নির্জন ওর গালে হাত রেখে বললো, ‘ভীষণ শক্ত করে একবার জড়িয়ে ধরবো, কলঙ্ক লাগলে লাগুক, কলঙ্কিনীটাকেই না হয় নিজের করে নিব।’

– ‘এভাবে বাসায় জড়িয়ে ধরবে? কখন কে আসবে ঠিক নাই।’

– ‘কেউ আসবে না।’

– ‘লজ্জা লাগে।’

– ‘ভয়-ডর, লজ্জা কিছুই মানবো না। জড়িয়ে ধরবোই আজ।’

তরু গাল থেকে হাত সরিয়ে চলে যাচ্ছিল। হাত ধরে টেনে কাছে আনলো নির্জন। তরু ক্ষীণ সময় তাকিয়ে নির্জনের কাঁধের দিকে হাত নিয়ে বাতির সুইচটা বন্ধ করে দিল। পলকেই চারপাশে অন্ধকার নেমে এলো।

নির্জন অবাক হয়ে বললো, ‘এটা কি করলে?’

তরু ওর একেবারে কানের কাছে ঠোঁট এনে বললো, ‘অন্ধকারই ভালো, আলোতে লজ্জা লাগে।’

নির্জন অন্ধকারেই ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তরুও জড়িয়ে ধরে মাথা রাখলো তার বুকে। কেউই যেন আর ছাড়তে চাইছে না কাউকে। তরু খানিক্ষণ পর ফিসফিস করে বললো, ‘সারারাত এভাবে বুকে মাথা রেখে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছা করছে নির্জন।’

নির্জন ওর মুখ ধরে অন্ধকারেই কপালে চুমু খেল। তরু আচমকা তার গলায় গালে কয়েকটি চুমু খেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে হঠাৎ চলে গেল। নির্জন বাতি জ্বালায়। আলোয় ভরে উঠলো কামরা। তরু বিছানায় গিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে বালিশেগুঁজে আছে। নির্জন আস্তে-আস্তে বের হয়ে এলো রুম থেকে। বারান্দায় এসে রেলিঙ ধরে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো সে। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। হুস্না আবার আসছে। সেও চলে গেল সেদিকে। তাকে দেখে বললো, ‘চাচার খাবার রেডি।’

– ‘হ্যাঁ, চলো।’

নির্জন টিফিন বক্স নিয়ে হসপিটাল এলো। এসে দেখে শফিক সাহেবও এসেছেন। দু’জন দিব্যি গল্প করছেন বসে। শফিক সাহেব তাদের খুবই বিশ্বস্ত মানুষ। পারিবারিক সবকিছুতে পরিবারের মতো থাকে। নির্জন ইশহাক সাহেবকে খাবার রেডি করে দিল। তিনি টেবিলে বসে বললেন, ‘তোমার সঙ্গে কথা আছে নির্জন, তুমি তো শুনছোই না।’

সে বিছানায় বসে বললো, ‘আব্বু সবই শুনবো, তুমি কোনো টেনশনই করো না। এখন তোমার চিন্তামুক্ত থাকা দরকার। বুঝতেই তো পারছো হার্টের প্রব্লেম। প্রেশারেরও সমস্যা আছে।’

– ‘এখন আমি ঠিক আছি। বাসায়ও তোমরা নিতে চাচ্ছ না কেন বুঝতে পারছি না। আমার কাজ আছে।’

শফিক সাহেব তাকে বাইরে যেতে ইশারা করলেন। নির্জন বললো, ‘আব্বু খাও তুমি। এখন কথা বললে বিষম উঠতে পারে।’

তারপর সে শফিক সাহেবের সঙ্গে বাইরে এলো। তারা বসলো এসে একটা বেঞ্চে। শফিক সাহেব ইতস্তত করে বললেন, ‘আপনাকে কিছু কথা না বললেই নয়। অনেক ভেবে দেখলাম, না বললে সমস্যাও হতে পারে।

– ‘বলুন তো কি হয়েছে?’

শফিক সাহেব ইতস্তত করে বললেন, ‘সিগারেট তো খান না, আমি খেলে প্রব্লেম নাই তো?’

– ‘আমার সঙ্গে এত ফর্মালিটিতে যাবেন না, খেতে ইচ্ছা করছে খান, তারপর বলুন।’

শফিক সাহেব সিগারেট ধরাচ্ছেন। নির্জনের তাকিয়ে থেকে মনে হচ্ছে অনেক লম্বা ভূমিকা টেনে এরপর বলবে।
____চলবে…..
লেখা: জবরুল ইসলাম

#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর
.
পর্ব_২২
.
শফিক সাহেব সিগারেটে টান দিয়ে বললেন,

– ‘পরকীয়া কত ডেঞ্জারাস জানেন তো? আমার এক ফ্রেন্ড, রিলেশন করে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিল। সে ব্যাংকে জব করে। দু’জন সংসার করলো দশ বছর প্রায়। বাচ্চাও একটা হলো। তখনই একদিন তার বউ পরকীয়ায় ধরা পড়লো। ছেলের টিউশন মাস্টার চ্যাংড়া একটা ছেলে, ওকে নিয়ে শুয়ে আছে। বন্ধুটা অসময়ে অফিস থেকে গেলে হাতেনাতে ধরে ফেলে। বউ তখন উলটো জামাইকে তুই-তোকারি করে। সে মামলা করবে হেনতেন। মানে লজ্জা তো পরের বিষয়। সে উলটো সবার সামনে যা-তা করলো। সন্তানও লাগবে না তার। পুলিশি ঝামেলা হলো। বউ বাপের বাড়ি গেল। সেখানে গিয়ে বরকে মেসেজ দেয় টাকা রেডি রাখিস। চিন্তা করেন কেমন? নিজে এত বড়ো অবিচার করলো। অথচ ছেলের সঙ্গে কেমন ব্যবহারটা করে। এবং খাটের নিচে ছুরি-টুরিও পাওয়া যায়। অনেকের ধারণা বরকে মেরে ফেলতেও চেয়েছিল। পরকীয়া এমন একটা বিষয়। যার ফলাফল কোনোদিনই ভালো হয় না..।’

নির্জন বিরক্ত হয়ে বললো,

– ‘এত ভূমিকায় না গিয়ে আপনি সোজা কথায় আসুন। কি বলতে চান?’

– ‘স্যারকে বাসায় নিয়েন না। উনি গিয়ে আপনার সৎ মায়ের সঙ্গে ঝামেলা করবেন। তখন আবার হার্টে প্রব্লেম হতে পারে। উনি এখানে থাকতেই সব শুনি এবার। কিছুটা তো সুস্থ হয়েছেন।’

– ‘ব্যাপারটা কি বলুন তো, কি হয়েছে?’

– ‘কি আর বলবো, এগুলো মুখে আনতেও লজ্জা লাগে। ওই তন্ময় ছেলেটার সঙ্গে ম্যাডামের সম্পর্ক ছিল।’

নির্জন বিস্মিত হয়ে বললো, ‘ছিল মানে বিয়ের আগে?’

‘না না, বিয়ের পরই’ তারপর খানিক থেমে একটানে বললো, ‘ওরা হোটেলেও গিয়ে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছে। সেসব ভিডিয়ো, ছবি তন্ময়ের ফোনে পেয়েছে পুলিশ।’

– ‘হোয়াট! ওরা বিয়ের পর একসঙ্গে থেকেছে। ভিডিয়ো পুলিশ পেয়েছে মানে!’

শফিক সাহেব সিগারেটে টান দিয়ে বললেন, ‘তন্ময়কে শায়েস্তা করার জন্য আমরাই ধরিয়েছিলাম। ওর ফোনে পুলিশ সবকিছু পেয়ে স্যারকে দিয়েছে। এগুলো দেখেই এই অবস্থা স্যারের’ তারপর থেমে বললো, ‘তন্ময় ছেলেটার থেকে পুলিশ সবকিছু বের করেছে। ওর সঙ্গে কেয়া ম্যাডামের রিলেশন ছিল। এগুলো প্রায় সবাইই জানে। কিন্তু এক সময় তন্ময়ের বাবা মারা যায়, পরিবারের একমাত্র ছেলে সে। দিশেহারা অবস্থা। পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকায় কাজে চলে আসে। এভাবে পরিবারকে টানবে না-কি পড়ালেখা করবে? গ্যাপ হয় পড়ালেখায়। তো কেয়া ম্যাডাম তখন ধীরে ধীরে সম্পর্ক থেকে যে সরে যাচ্ছে তন্ময় বুঝেনি। বিয়েও করে নিয়েছেন তাকে কিছু না জানিয়ে। আসলে ম্যাডাম ভাবছিল এই ছেলের কিছু নেই। এর চাইতে বড়লোকের বউ হওয়া ভালো। কিন্তু বিয়ে বসে আবার পুরাতন প্রেমিকের প্রতি প্রেম উথলে উঠলো আরকি। হয়তো তখন বুঝেছে টাকা-পয়সা সুখ দেয় না।’

নির্জন বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। কেয়াকে সে অপছন্দ করতো। তাই বলে বিয়ের পর এসব করলো? সেই ভিডিয়ো তার বাবা দেখেছেন? শফিক সাহেব হাত ধরে বললেন, ‘শান্ত হোন, আগে বলিনি কারণ অসুস্থ মানুষ রেখে ঝামেলা হোক চাইনি। আমার বউ আজ সবকিছু শুনে বকা-ঝকা করলো। এটা না-কি বোকামি। আপনার বাবার কিছু হয়ে গেলে আমাকে দুষবেন। তাই ভাবলাম আপনাকে জানাই।’

নির্জন পুনরায় বেঞ্চে বসলো। হাঁটুতে কনুই ঠেকিয়ে মুখ ঢেকে রইল খানিকক্ষণ। শফিক সাহেব পুনরায় বললেন, ‘স্যারকে এখন বাসায় নিলে উনি উত্তেজিত হবেন। ঝগড়াঝাটি হবে। এর চাইতে আমরা এখানে স্যারের সঙ্গে কথা বলি। দেখি কি চান। কি বলেন?’

নির্জন মাথা তুলে বললো, ‘ঠিকই বলেছেন। তবে আজ না, কাল সবকিছু শুনবো। আজ বাসায় যাব।’

– ‘কেন?’

– ‘দরকার আছে। ওই মহিলা এখন দেখবে নির্জন কেমন অশান্ত। আব্বু হসপিটাল থাকুক। শুধু কাল এসে জানবো সে কি চায়। বাকিসব আমি করবো। ওই মহিলা যাতে একটা কলও আব্বুকে দিতে না পারে এই ব্যবস্থা করবো। কোনো নষ্টা মহিলার জন্য আমার বাপ মরে যাবে এটা হতে দেবো না।’

শফিক সাহেব হাত ধরে বললো,

‘আরে শান্ত হোন’ নির্জন এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে উঠে গেল। করিডর পেরিয়ে এসে দেখে ইশহাক সাহেবের খাওয়া শেষ। সে টিফিন বক্স গুছিয়ে নিয়ে বললো, ‘আব্বু, কাল এসে শুনবো তুমি কি চাও। এখন রেস্ট নাও।’

– ‘শোন নির্জন, তোর ফুপুকেও খবর..।’

– ‘আমি বলছি তো আব্বু, যা চাইবে তাই হবে। তোমার শুধু এখন চিন্তামুক্ত থাকা দরকার। আজাইরা বিষয় নিয়ে হার্ট অ্যাটাক করার মানে হয় না। তুমি জাস্ট মাথায় রাখো যা চাও তাই হবে।’

নির্জন চলে যাওয়ার আগে আবার শফিক সাহেবের কাছে এসে বললো, ‘তন্ময় কি বিবাহিত?’

– ‘না।’

– ‘সন্তান আছে?’

– ‘তা আসবে কোত্থেকে বিয়েই করেনি।’

– ‘তাহলে তার পরকীয়া করতে টেনশন কি? তার পিছুটান কি? যে বিবাহিত, সে পুরুষ হোক বা নারী। তারই তো ভাবার কথা এই পথে গেলে কতজনের জীবন নষ্ট হবে। তাহলে আপনারা তন্ময়কে পুলিশ দিয়ে ধরাতে গেলেন কেন, নিজের ঘরে কালসাপ রেখে?’

– ‘স্যার বললেন ম্যাডাম এখন ভালো হয়ে যাবে। ওই ছেলেকে শায়েস্তা করে সরাতে হবে। সে না-কি ওইদিনের পরও বাসার সামনে গিয়ে উঁকিঝুকি মেরেছে।’

– ‘ওইদিনের ঘটনা মানে? আব্বু কীভাবে জেনেছিল প্রথম এসব? পুলিশে দেওয়ার আগে তো কিছু জেনেছিল?’

শফিক সাহেব ইতস্তত করে বললেন, ‘স্যার আমাকে পুরোপুরি বলেননি। তবে বাসায়ই ওদের হয়তো কোনোকিছুতে পেয়েছিলেন। এরপরও ওরা শুধরায়নি। এজন্যই স্যার..।’

নির্জন পুরো শোনার আগেই কিছু না বলে টিফিন বক্স নিয়ে নিচে চলে যাচ্ছিল। শফিক সাহেব পিছু পিছু এসে বললেন, ‘শান্ত হোন আপনি। ওইখানে গিয়ে এখন কোনো..।’

নির্জন ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো, ‘চুপ, আপনি আমাকে এগুলো প্রথমদিনই বলা উচিত ছিল। আমি যে কিছু জানি না, ওই মহিলা যদি আব্বু হসপিটাল থাকতেই পালিয়ে যেত? অথবা এখন আব্বু যদি ওকে কল দেন। তর্ক-বিতর্ক করে ঝামেলা করে আবার কোনো অঘটন ঘটে?’

শফিক সাহেব ইতস্তত করে বললেন, ‘আসলে আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত৷ আপনাকে বললে যদি স্যার আবার রাগ করেন এই ভয়ও ছিল।’

নির্জন কথা না বাড়িয়ে হসপিটাল থেকে চলে এলো নিচে৷ একটা রিকশা নিয়ে বাসায় এলো সে। কিচেনে গিয়ে হুস্নাকে দেখে বললো, ‘ওইদিন বাসায় কি হয়েছিল বল।’

হুস্না টিফিন বক্স হাতে নিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। নির্জন ধমকে উঠে বললো, ‘বল কি হয়েছিল।’

হুস্না আমতা-আমতা করে বললো, ‘তন্ময়কে ম্যাডাম তার রুমে নিয়ে গিয়েছিল। আমি স্যারকে জানাইছিলা। স্যার এসে পেয়েছে ওদের।’

নির্জন কিছু না বলে দোতলায় এলো। কেয়ার রুমের সামনে এসে দরজায় নক দিল সে। খুলে দিল কেয়া। নির্জন ভেতরে গিয়ে বাতি জ্বালিয়ে লাল টকটকে চোখে তাকিয়ে বললো, ‘মোবাইল দাও।’

– ‘কি হয়েছে?’

নির্জন গর্জে উঠে বললো, ‘মোবাইল দিতে বলেছি। কথা কানে যায় না?’

– ‘আমার মোবাইল দিয়ে তুমি কি করবে? আর এভাবে কথা বলছো কেন?’

– ‘এই মেয়ে এই, একদম চুপ বলছি। এই বাসাকে তুই অপবিত্র করেছিস। তোকে আমার বাপ জোর করে বিয়ে করে আনেনি। তোর লোভী বাপ ভাই সবাই বুঝে-শুনেই বিয়ে দিয়েছিল। আর তুই এখন যা ইচ্ছা শুরু করেছিস?’

– ‘মুখ সামলে কথা বলো নির্জন।’

নির্জন চারদিকে তাকাচ্ছে মোবাইল কোথায় দেখতে৷ কেয়া এগিয়ে গিয়ে বালিশের পাশ থেকে মোবাইল নিয়ে নিল। নির্জন আবার ধমকে উঠে বললো, ‘মোবাইল দে খা*নকির বাচ্চা, মুখ খারাপ করার আগে দে।’

কেয়া হাত পেছনে নিয়ে নিল। তরু আর হুস্না দৌড়ে এলো চিল্লাচিল্লি শুনে। নির্জন এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে ফেললো কেয়ার। ধস্তাধস্তি শুরু করলো দু’জন। তরু তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে নির্জনকে টেনে ধরে বললো, ‘এসব কি হচ্ছে নির্জন।’

নির্জন মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো, ‘কি হচ্ছে জানো না? নাটক করো এখানে? তন্ময়ের সঙ্গে তোমার ফুপুর বিয়ের আগে থেকে পুতুপুতু সম্পর্ক আছে জানতে না তুমি? জিজ্ঞেস করার পরও বলোনি কেন? আবার সবকিছু জেনেও এই খা*নকির কথায় কথায় আমাকে নিয়ে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলে কেন? সুযোগ করে দিতে? তুমি আগে আমাকে সব বললে আমার বাপ আজ হসপিটাল থাকতে হতো না। তন্ময় শু*য়োরের বাচ্চাকে এর আগেই লাত্থিয়ে ঢাকা ছাডা করতাম।’

তরু ওর ক্রোধ আর মুখের ভাষা শুনে পিছু হটলো। নির্জন কেয়ার গলা ধরে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে টেনে মোবাইল ছিনিয়ে আনলো। তারপর হুস্নার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এই রুমের দরজা-জানালা সব বন্ধ কর আর চাবি দেখ কোথায়।’

হুস্না ভয়ে ভয়ে সবকিছু লাগিয়ে চাবি বের করে বাড়িয়ে দিল। কেয়া বিছানায় বসে বসে ফুঁসছে। নির্জন এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘তন্ময় কোথায় থাকে? এখনও যোগাযোগ আছে?’

কেয়া কোনো জবাব দিল না। নির্জন দাঁত কটমট করে তাকিয়ে বললো, ‘মেজাজটা এত খারাপ হচ্ছে কি বলবো। তুই কি মানুষের বাচ্চা? কাল তুই কোথায় গিয়েছিলি? তুই এই বাড়িটাকে কি মনে করলি? বল।’

কেয়া কোনো জবাব দিল না। নির্জন ওর কপালে ধাক্কা দিয়ে বললো, ‘তুই কি সাইকো? তোর জন্য কাজের মেয়ে চলে যায়। আমি সহ্য করি। আমার ফুপু, যে আমাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করলো। তোর যন্ত্রণায় বাসা ছাড়লো। তাও সহ্য করলাম। আমার বাপ চাইলেই টাকা দিয়ে তোর বয়সি বহু মেয়ের সঙ্গে ফষ্টিনষ্টি করতে পারতো। কোনোদিন এসব করে নাই। বিয়ে করতে বলছে, দেখে ভালো লাগছে তাই। তোর বাপ-ভাইও রাজি, তুই নিজেও রাজি। তাই আমরা মত দিলাম। বিয়ের পরও যদি তোর না হয়। ডিভোর্স নিতি। কিন্তু তুই কাজটা কি করেছিস? এই বিছানায় টোকাই একটা নিয়ে শুয়ে গেলি? আমার বাপ হসপিটাল রেখেও কাল আবার দেখা করতে চলে গেছিলে না-কি কে জানে। বল তন্ময় কোথায় থাকে বল। বাসায় এসে অনেক পাকনামি করছে। তারে কয়েকটা চ*ড়-থা*প্পড় দেয়া দরকার, বল।’

‘তুই চড়-থাপ্পড় আর এত কথা বলার কে’ বলেই কেয়া উঠতে যাচ্ছিল। নির্জন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল বিছানায়। কেয়া পুনরায় গর্জে উঠে বললো, ‘আমি এখনই এই বাসা ছেড়ে চলে যাব সর।’

নির্জন কাছাকাছি গিয়ে ঠোঁটে আঙুল রেখে বললো, ‘চুপ, বেশি চিল্লাপাল্লা করলে বেঁধে রাখবো’ তারপর বের হতে হতে বললো,
– ‘আর ওই শু*য়োরের বাচ্চাকে বাসার আশেপাশে দেখলে জিন্দা ক*বর দিব।’

হতবাক তরুর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। ভয়ে-লজ্জায় রীতিমতো শরীর কাঁপছে। কান দিয়ে যেন গরম ভাপ বেরুচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি দরজার সামনে থেকে ছুটে চলে গেল।

নির্জন বাইরে এসে দরজা লাগিয়ে বললো, ‘হুস্না এই রুমে আমাকে ছাড়া খাবার দিবি না। আর ফুপুকে কাল আনতেছি। মোবাইল এটা তোর কাছে রাখবি৷ আর আব্বুকে কিছুই জানাবি না।’
হুস্না মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
__চলবে…
লেখা: জবরুল ইসলাম

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে