#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর
.
পর্ব_১৯
.
তরু সামান্য হলেও ঘটনাটা কি ঘটেছে আঁচ করতে পারছে। কিন্তু এখন কি করবে সেটা বুঝতে পারছে না। ইশহাক সাহেবই নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ‘তোমরা এসেছো?’
– ‘জি, এইমাত্র এলাম।’
– ‘যাও, গিয়ে রেস্ট নাও তাহলে।’
‘আচ্ছা’ বলে তরু চুপচাপ বের হয়ে গেল। ইশহাক সাহেব কপালে হাত দিয়ে আরও খানিকক্ষণ বসে রইলেন। খুবই লজ্জা লাগছে৷ এমন একটি দিন জীবনে আসবে কখনও ভাবেননি। মেয়েটি নিশ্চয় বুঝেছে ওর ফুপুর গায়ে তিনি হাত তুলেছেন। মেজাজটাও ধরে রাখতে পারেননি। নিচেই বসা ছিলেন। হুস্না চা নিয়ে এলো। তিনি বললেন রুমে নিয়ে যাও। কেয়াকেও দিয়ো। হুস্ন চা রেখে চলে গেছে। খানিক পর নিজেও উপরে এলেন। এসে শুনেন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কেয়া ফোনে কেঁদে-কেঁদে কথা বলছে।
কথাবার্তা থেকেই বুঝতে পারলেন কার সঙ্গে ফোনালাপ হচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে কান থেকে মোবাইল এনে কল কেটে দিলেন। তারপর কেয়াকে হাত ধরে ভেতরে এনে বললেন, ‘একটু আগে কি বলে গেলাম তোকে? আবার ওই ছেলেকে কল দিলি কেন?’
কেয়া চোখের পানি মুছে নিয়ে বললো,
– ‘সতর্ক করতে, আমি চাই না ওর কোনো ক্ষতি হোক..।’
তন্ময়ের প্রতি এত দূর্বলতা দেখে ক্রোধে নিজের অজান্তেই প্রচণ্ড জোরে ওর গালে চড় বসিয়ে দিলেন ইশহাক সাহেব। তীব্র আঘাতে কেয়া টাল সামলাতে না পেরে গিয়ে টি-টেবিলে পড়লো৷ কাপ ছিটকে পড়লো মেঝেতে। মোবাইল ছুড়ে ফেলে বললেন, ‘এত প্রেম ওই ছেলের জন্য? তাহলে আগে পা ধরেছিলি কেন? সংসারও করবি, আবার লুকিয়ে-চুপিয়ে প্রেমও করবি তাই না?’
এরপর থেকেই কেয়া কোনো কথা না বলে এভাবে বসে আছে। ইশহাক সাহেব খানিক শান্ত হয়ে বললেন, ‘মেঝে থেকে উঠে, কাপের ভাঙা টুকরো ট্রে-তে তুলে কিচেনের ডাস্টবিনে রেখে আসো। মোবাইল তুলো।’
কেয়া কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বসে রইল চুপচাপ। ইশহাক সাহেব পুনরায় বললেন, ‘এখনও ইজ্জতের চিন্তা করছি। এখন এসে আমার ছেলেও এসব দেখলে। ধীরে ধীরে ইজ্জতের ভয়ও চলে যাবে। তখন লাত্থি দিয়ে তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেবো। আর তোমার নাগরকে শায়েস্তা করে ঢাকা শহর ছাড়াতে আমার একদিনও সময় লাগবে না।’
কেয়ার তবুও কোনো হেলদোল নেই।
এবার শান্ত অথচ ভয়ানক গলায় বললেন,
– ‘আমি কিছু বলেছি। আশাকরি বারবার হাত তুলতে বাধ্য করবে না।’
কেয়া এবার চুপচাপ উঠে ট্রে-তে কাপের ভাঙা টুকরোগুলো তুলে নিল। মোবাইলটা রাখলো বিছানায়। ঠোঁটের কোণে জমে থাকা রক্ত মুছে ওড়না মাথায় দিয়ে গাল ঢেকে বাইরে গেল সে।
তরু রুমে এসে চুপচাপ বসে রইল। কি নিয়ে এমন হলো বুঝতে পারছে না সে। তন্ময় ভাইকে নিয়ে কিছু হলো না তো? হলে কতটুকু গুরুতর? বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে কি যে বিশ্রী লাগছে তরুর। সে পড়ার টেবিলে গেল৷ কয়দিন এমনিতেই পড়া হয়নি। বই বের করে পড়ছিল। মিনিট কয়েক পর বারান্দা দিয়ে দেখলো নির্জনকে। গেঞ্জি আর থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরনে। নিশ্চয় বাইরে যাচ্ছে না। বেশিদূর ভাবতে হলো না। দরজা ‘খ্যাক’ করে খুলে গেল। তরু তাকালো সেদিকে। পিছু ফিরে একবার তাকিয়ে নিয়ে নির্জন ওর টেবিলের সামনে এসে পলিথিনে মোড়ানো আচার, চকলেন, চুইংগাম বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘এগুলো তো তোমার, আমার ব্যাগে কেন।’
– ‘এগুলো দিতে এসেছেন?’
– ‘না, বাহানা মাত্র।’
তরু ফিক করে হেসে মুখ ঢেকে নিল। নির্জন ওকে চেয়ার সহ শূন্যে তুলে টেবিল থেকে দূরে আনলো। আঁতকে উঠলো তরু। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই নির্জন মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে ওর কোলে মাথা রাখলো। তরু ভয়ে বললো, ‘কি করছেন এসব? হঠাৎ কেউ চলে আসবে তো!’
– ‘অস্থির লাগছিল রুমে ম্যাডাম। সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখতে ইচ্ছা করে।’
– ‘পাগলামো করবেন না প্লিজ। একটু আগেই এসেছি আমরা। তাছাড়া একই বাড়িতে আছি। সব সময় দেখা হয়।’
নির্জন মাথা তুলে তাকিয়ে থেকে খানিক পর নিজেই হেসে বললো, ‘অনেক বাচ্চামো করছি তাই না?’
– ‘হ্যাঁ অনেক।’
– ‘কিন্তু ভালো লাগছে যে, কি করবো?’
তরু আবার হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমার পড়াও হবে না এমন করলে। যান প্লিজ।’
নির্জন উঠে আবার বারান্দা দেখে এসে ওর টেবিলে উঠে বসে মুচকি হেসে বললো, ‘চলে যাব। তবে একটা শর্ত।’
তরুর ভালো লাগছে আবার ভয়ও করছে। সে অসহায় গলায় বললো, ‘কি?’
– ‘তুমি সোজা এসে আমার সামনে দাঁড়াও।’
তরু শুকনো ঢোক গিললো। যেভাবে টেবিলে বসে আছে। কাছে গেলে চুমু-টুমু কিছু খেয়ে ফেলবে না তো? এমন করলে লজ্জায় মরে যাবে সে। ইতস্তত করে বললো, ‘কেন?’
– ‘আসো না আগে। কেউ চলে আসবে। তাড়াতাড়ি আসো।’
তরু চেয়ার থেকে উঠে কিছুটা শঙ্কা আর কিছুটা ভালো লাগার অনুভূতি নিয়ে নির্জনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নির্জন প্রথমে তার ঝুলে থাকা পা দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরলো। তরু চোখে চোখে তাকাতে পারছে না। গা কাঁটা দিচ্ছে বারবার। নির্জন আঁজলা করে আলগোছে ওর মুখটা ধরে। কেঁপে উঠে তরু। নির্জন দুই হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ওর গাল ঘষছে আর নেশাতুর চোখে তাকিয়ে আছে। তরুর ঠোঁট কাঁপতে শুরু করেছে। পা যেন অবশ হয়ে আসছে৷ নির্জন ফিসফিস করে বললো, ‘তোমার গাল শিমুল তুলোর মতো নরম। মোমের মতো মসৃণ।’
তরু আস্তে-আস্তে এক হাতে নির্জনের গেঞ্জি মুঠোয় নিয়ে ধরে ওর চোখের দিকে পিটপিট করে তাকায়। ক্ষীণ সময় পর আরেক নির্জনের গালেও হাত রাখলো সে। তারপর অস্ফুটে বললো, ‘আপনি এরকম থাকবেন তো সব সময়? এত যে পাগল করছেন আমায়? এত যে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। পরে কষ্ট দেবেন না তো? আমি কিন্তু এত মর্ডান মেয়ে না। আমার কাছে সম্পর্ক মানে ভিন্ন কিছু। মন-প্রাণ উজাড় করে দিব।’
নির্জনের বুকটায় কি যে হচ্ছে। ইচ্ছা করছে এখনই জডিয়ে ধরতে তরুকে। তবুও নিজেকে সামলে, তরুর গাল বেয়ে আসা চুলগুলো কানে গুঁজে দিয়ে বললো, ‘আজ থেকে একটা কথা মনে রেখো ম্যাডাম, তোমাকে যতই কষ্ট দেবো, সমান কষ্ট আমিও পাব।’
তরু নিজের মনকে ধরে-বেঁধে বললো, ‘ছাড়ুন প্লিজ, যান এখন। হঠাৎ কেউ চলে আসবে।’
নির্জন দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওকে ছেড়ে দিল। তরু পিছু হটে এসে বসলো বিছানায়। নির্জন ওর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বের হয়ে চলে গেল।
পরদিন তরু কোচিং-এ। নির্জন চলে গেল ভার্সিটিতে। কোচিং শেষে তরু বের হয়েই দেখে নির্জন রাস্তার অপর পাশে রিকশা থেকে হাত তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে বলছে। ওর কাছে হাওয়াই মিঠাই। রিকশা নিয়ে সামনে এসে থামিয়ে বললো, ‘আসো।’
তরু উঠতে যাচ্ছিল, নির্জন হাত বাড়িয়ে দিল। মুচকি হেসে হাতটা ধরে এসে পাশে বসলো সে। নির্জন হাওয়াই মিঠাই বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘সেদিন এক্সিডেন্টের পর ওইটা জানালার বাইরে পড়ে গিয়েছিল হয়তো। আজ দেখে ভাবলাম ম্যাডামের জন্য নিয়ে যাই।’
তরু হাতে নিয়ে মুচকি হেসে বললো, ‘থ্যাঙ্কিউ।’
নির্জন ফিসফিস করে বললো, ‘থ্যাঙ্কিউ লাগবে না, হাতটা দাও, ধরে বসি। তাতেই হবে।’
তরু হাত বাড়িয়ে দিল। নির্জন ধরতে যেতেই খামচি দিয়ে ফিক করে হেসে ফেললো ও। নিজের হাতের হাতের দিকে তাকিয়ে খানিক পর চুমু খেল সে। তরু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, ‘ব্যথা পান না?’
নির্জন কানের কাছে ঠোঁট এনে ফিসফিস করে বললো, ‘কামড় দাও প্লিজ।’
তরু চোখ পাকিয়ে তাকায়। ক্ষীণ সময় পর নির্জন অন্য প্রসঙ্গে গিয়ে বললো, ‘বাসায় কি কোনো সমস্যা হয়েছে?’
– ‘কি?’
– ‘রাতে খাবার টেবিলে আম্মুকে কেমন যেন লাগলো। আব্বুও স্বাভাবিক মনে হলো না।’
তরু খানিক ভেবে বললো,
– ‘কি জানি, আমার কাছে তো স্বাভাবিকই মনে হলো।’
নির্জন আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। বেশ কয়েকদিন এভাবে কেটে গেল তাদের। পরের শুক্রবার বিকালে তরুকে নিয়ে নির্জন গেল নদী ভ্রমণে। মাঝি আস্তে-আস্তে নৌকা টানছে। তারা ছইয়া নৌকার ভেতরে বসে আছে। নির্জনের পরনে পাঞ্জাবি। তরুর পরনে সাদা একটা কামিজ। দু’জন আসন পেতে মুখোমুখি বসে আছে। নির্জন পকেট থেকে লাল টকটকে একটি গোলাপ বের করতেই তরু হাত দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে বললো, ‘প্লিজ তুমি এসব কিছুই বলবে। আমি ফুল নিচ্ছি ঠিক আছে।’
নির্জন অবাক হয়ে ওর হাত সরিয়ে বললো, ‘কেন? আমরা মুখে কিছু না বললেও অনেকদূর এগিয়ে গেছি।’
– ‘প্লিজ এখন না৷ এমনিতেই পড়ার টেবিলে মন বসে না৷ তার উপর এরকম একেবারে ঘোষণা-টোষনা দিয়ে শুরু করলে তো আমি শেষ।’
নির্জন মুচকি হেসে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, কিছুই বলছি না, তোমার কোচিং শেষ হোক, ভর্তি পরীক্ষা দাও, এরপর বলবো, এবার খুশি?’
তরু মুচকি হেসে চোখে চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। নির্জন আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ‘ভালো লাগছে এসে?’
তরু তাকিয়ে থেকে আবারও মাথা নাড়লো।
– ‘এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার রোগে পেয়েছে?’
তরু আবারও মিটমিটে হেসে মাথা নাড়লো।
– ‘লজ্জা আগে থেকে অনেক কমে গেছে তাই না?’
তরু এবার মাঝির দিকে চোরা চাহনিতে তাকিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বললো, ‘ছইয়ার মাথায় গিয়ে মাঝির দিকে পিঠ দিয়ে বসুন।’
– ‘কেন?’
– ‘বসুন না।’
নির্জন মাঝখান থেকে উঠে ছইয়ার মাথায় এসে বসে। তরু আস্তে-আস্তে এসে তার সামনে বসলো বুকে পিঠ ঠেকিয়ে। তারপর ফিসফিস করে বললো, ‘জনাব আমার পেটের দিকে হাত নিয়ে জড়িয়ে ধরে বসুন।’
নির্জন ওর কোমরের দিকে হাত নিয়ে পেটে হাত রাখে। তারপর বাঁধন খানিকটা শক্ত করে কোলের দিকে টেনে আনে। তরু বাইরে তাকায়। খোলা নীল আকাশ। ছোপ ছোপ শুভ্র মেঘ। নিচে টলটলে স্বচ্ছ পানি নাওয়ে এসে ধাক্কা খেয়ে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ করছে। নৌকা সামনের দিকে যাচ্ছে আর ফুরফুরে মিহি হাওয়া এসে লাগছে তরুর গায়ে। উড়ছে তরুর চুলও। নির্জনের চোখে-মুখে লাগছে। সে চোখবুজে আছে।
ওর চুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পাচ্ছে। তরু নিজের অজান্তেই তুমি করে বলতে শুরু করলো, ‘নদী থেকে আকাশ দেখতে কি ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখো।’
– ‘আমি কিছুই দেখছি না ম্যাডাম।’
– ‘কেন?’
– ‘চুলের জন্য।’
তরু ফিক করে হেসে বললো, ‘খোঁপা বেঁধে নিলেই হয়, পারো না বুঝি?’
– ‘পারি, কিন্তু চুলের নি*র্যাতন তো ভালো লাগছে।’
– ‘উহু, বাঁধো, আমার সঙ্গে নদী আর আকাশ দেখতে হবে।’
নির্জন বেঁধে দিল চুল। কিন্তু তাতে নগ্ন হয়ে গেল তরুর ফরসা ঘাড়। সেদিকে তাকিয়ে রইল সে।
– ‘হয়েছে?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘এবার আমার কাঁধে থুতনি রাখো।’
নির্জন ওর কাঁধে থুতনি রেখে মুচকি হাসলো।
– ‘এবার দেখতে পাচ্ছ তো?’
– ‘হ্যাঁ।’
– ‘এখন গান গাও।’
– ‘কি!’
– ‘তুমি না গান প্র্যাকটিস করো। আমাকে শুনাবে না?’
– ‘তাইতো, ম্যাডামকে না শোনালে আমি গাইব কার জন্য?’
তরু ফিক করে হেসে বললো, ‘শুরু করুন তাহলে, তবে অবশ্যই রবীন্দ্র সংগীত।’
নির্জন গুন-গুন করে গাইতে শুরু করলো,
“সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে
ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে
ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা
সেই স্মৃতিটুকু কভু ক্ষণে ক্ষণে
যেন জাগে মনে, ভুলো না
ভুলো না, ভুলো না
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে
ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা….।”
তরু উলটো হাতে ওর গাল চেপে ধরে বললো, ‘আপনার গানের গলা অনেক সুন্দর তো, পাতলা। আমি ভেবেছিলাম ভারী হবে।’
– ‘থ্যাঙ্কিউ ম্যাডাম।’
তারা সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে এলো। রাতে খাবার টেবিলে বসে নির্জন তার বাবাকে বলেই ফেললো, ‘আব্বু, শ্রীমঙ্গল থেকে আসার পর একদিনও দেখলাম না তন্ময় মামাকে। তোমরা জিম ছেড়ে দিলে না-কি।’
ইশহাক সাহেব গ্লাসে পানি ঢেলে বললেন, ‘ও কি নিয়ে যেন ব্যস্ত ছিল। আসতে পারিনি। কিন্তু আজ সন্ধ্যার দিকে পুলিশ ধরেছে।’
কেয়া বিস্ময়ে সবার আগেই প্রশ্ন করলো, ‘পুলিশ? পুলিশ ওকে ধরবে কেন?’
– ‘শুনলাম গাঁজা পেয়েছে। তাই ধরে নিয়ে গেছে।’
নির্জন আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল। ইশহাক সাহেব থামিয়ে দিলেন। দিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক, বাইরের ছেলেকে এত বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি। গাঁজা খায় বা বিক্রি করে এরকম ছেলে তো আগে বুঝিনি। ভালো ভেবে বেডরুমে পর্যন্ত নিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। যাইহোক, একে নিয়ে আর কথা বলে লাভ নেই। পুলিশ থেকে ছাড়া পেলেও আর যোগাযোগ রাখবো না।’
____চলবে____
লেখা: জবরুল ইসলাম
#প্রণয়ে_প্রলয়ের_সুর
.
পর্ব_২০
.
রাতের খাবারটা সবাই চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেল। ইশহাক সাহেব রুমে আসতেই কেয়া আমতা-আমতা করে বললো, ‘তন্ময়কে পুলিশ ধরেছে তুমি জানলে কি করে?’
ইশহাক সাহেব বিছানায় বসে বললেন, ‘তোমার মায়া খুব উথলে পড়ছে মনে হচ্ছে?’
– ‘দেখো, আমি কিন্তু ওর সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখিনি। তাহলে কেন এরকম করছো?’
– ‘যোগাযোগ রাখোনি? না রাখলে পরশু এবং গতকাল সে আমাদের বাসার সামনে কেন এলো? দারোয়ানকে আমি বলে রেখেছিলাম ঢুকতে না দিতে।’
– ‘ও কি ঢুকতে চেয়েছে?’
– ‘না, কিন্তু বাসার সামনে তো এসেছে? দারোয়ান দেখে চিনেছে। আমাকেও জানিয়েছে।’
– ‘তাই তুমি এরকম করলে?’
– ‘আমি কিছু করেছি বলেছি তোমাকে? এ বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। ঘুমাও’ বলে তিনি বালিশে মাথা পেতে দিলেন। কেয়াও চুপচাপ ঘুমিয়ে গেল।
পরেরদিন ইশহাক সাহেব অফিসে। ম্যানেজার এসে বললো, ‘স্যার, ওই ছেলের মোবাইল চেক করে কিছু ছবি আর ভিডিয়ো পাওয়া গেছে।’
ইশহাক সাহেব অবাক হয়ে বললেন, ‘কি?’
– ‘আপনি ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে নিন।’
ইশহাক সাহেব কথা বললেন। কথা বলতে বলতে উনার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে লাগলো। ফোন রাখার পর তিনি দাঁড়িয়েই হোয়াটসঅ্যাপ চেক করলেন। তন্ময়ের মোবাইল ঘেটে কিছু ভিডিয়ো পাওয়া গেছে। সেখানে কেয়া আর তন্ময়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিয়ো, ছবি। পুলিশ উনাকে সেগুলো পাঠিয়েছে। তিনি ওপেন করে দেখলেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছেন না। এতদূর ঘটনাটা গড়িয়ে গেছে ভাবতেও পারেননি তিনি। ইশহাক সাহেব মোবাইল সহ বুকে হাত দিয়ে পেছনের দিকে ঢলে পড়লেন। ম্যানেজার শফিক তাড়াতাড়ি গিয়ে উনাকে ধরলো।
*
নির্জন ভার্সিটিতেই ছিল। কল পেয়ে ছুটে গেল সে হসপিটালে। ইশহাক সাহেব হার্ট অ্যাট্যাক করেছেন। চিকিৎসা চলছে। ম্যানেজার শফিককে জিজ্ঞেস করে সে পুরোপুরি কিছুই জানতে পারলো না। শফিক সাহেব শুধু জানালেন হুট করে পড়ে গিয়েছিলেন। তারপর আমরা হসপিটাল ধরে নিয়ে এসেছি। সবকিছু দেখছি আমি, আপনি চিন্তা করবেন না।
খবর পেয়ে কেয়াও ছুটে আসে হসপিটাল। কিন্তু স্যার চাচ্ছেন না বলে ফিরিয়ে দিল ম্যানেজার শফিক। বিষয়টি জেনে নির্জনও অবাক হলো। কিন্তু এই বিষয়ে অসুস্থ অবস্থায় কেউই কথা বাড়াতে গেল না।
এরপর শুধু নির্জন আসা-যাওয়া করে। তরু নিজের পড়াশোনায় ব্যস্ত। কেয়া সারাদিন দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে
থাকে। এর ভেতরে একদিন দুপুরে তন্ময় কেয়াকে কল দিল। নাম্বার দেখে কেয়া রিসিভ করলো,
– ‘হ্যালো তন্ময়, কি অবস্থা তোমার? তুমি ছাড়া পেলে কখন?’
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘গতকালই ছাড়িয়েছে আমার এক ফুপাতো ভাই। আর আমাকে তোমার বুইড়া জামাই ধরিয়ে দিয়েছিল।’
– ‘কিন্তু কীভাবে?’
– ‘পুলিশ নিজেই আমার পকেটে গাঁ*জা ভরে দিয়ে ধরে নিয়ে গেছে। তারপর নানান ভয়-ভীতি দেখিয়েছে।’
– ‘এখন ঠিক আছো তুমি?’
– ‘ঠিক আছি বলতে, ভাবছি শহর ছেড়ে চলে যাব। গিয়ে ব্যবসা করবো। কিন্তু টাকা-পয়সা নাই। সে যাইহোক, আমি আজ কল দিয়েছি স্পষ্ট একটা বিষয় জানতে।’
– ‘কি?’
– ‘তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?’
– ‘তা কীভাবে সম্ভব?’
– ‘তুমি ওই বুড়োর সংসার করবে? ওর সঙ্গে সুখী হলে তুমি অন্য কাউকে চাইতে না কেয়া।’
– ‘তন্ময় এসব এখন রাখো, সে হসপিটাল। তাছাড়া কেন যেন আমাকে হসপিটাল যেতে নিষেধ করেছে।’
– ‘হসপিটাল কেন?’
– ‘ইশহাক হার্ট অ্যাটাক করেছে।’
তন্ময় হেসে বললো, ‘এবার ভাবো, এই লোক দু-দিন পর মরে যাবে। তুমি এখনও ইয়াং। তাছাড়া তোমাকে তো ফ্যামিলি জোর করেই বিয়ে দিয়েছিল, তাই না? তাহলে আমাকে এখন টাকা দাও, আমি ব্যবসা শুরু করি। তুমি এর ভেতরে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসো। বিয়ে করে নিব আমরা।’
– ‘এগুলো কি বলো তন্ময়!’
– ‘তুমি ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখো ভুল বলেছি না-কি ঠিক।’
কেয়া ইতস্তত করে বললো, ‘সে যাইহোক, তোমাকে আমি টাকা দেবো, ব্যবসা করো। কিন্তু আমি ডিভোর্স বা তোমাকে বিয়ে নিয়ে এখনও ভাবছি না।’
– ‘ভেবে-চিন্তে নাও সিদ্ধান্ত।’
– ‘তুমি কীসের ব্যবসা করতে চাচ্ছ?’
– ‘গ্রামে গিয়ে ইট-বালির ব্যবসা শুরু করবো। এরপর বাকিটা দেখা যাবে। বাজারেও ব্যবসা দিতে চাচ্ছি।’
কেয়া শুকনো ঢোক গিলে খানিক ভেবে বললো, ‘আচ্ছা শোনো, আমি একটা ঠিকানা দেবো এসে নিয়ে যাবে টাকা। এরপর প্লিজ আমাকে কল দেবে না। নিজের ব্যবসায় মনযোগ দাও। কাজ করো। এরপর ডিভোর্স দেই বা যা করি জানাবো। এখন পাগলামি করলে তোমারই বিপদ হবে। আমিও ঝামেলায় পড়বো।’
তন্ময় রাজি হয়ে গেল। কেয়াও কল কেটে দিল। বিকালে তাদের দেখা হলো একটি রেস্তোরাঁয়। কেয়া পলিথিনের ব্যাগে মোড়ানো টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘তুমি প্লিজ এখন থেকে পাগলামি কম করবে।’
তন্ময় আশেপাশে তাকিয়ে নিয়ে বললো, ‘তোমার জন্য পাগলামি মরার আগপর্যন্ত করবো কেয়া।’
– ‘এসবের জন্যই পুলিশ ধরেছে। বারবার নিষেধ করার পরও তুমি আমার বাসার সামনে এসে কল দিয়েছিলে। ছাদে যে আমি গিয়েছি ভ্যাগিস কেউ দেখেনি। তোমাকে শুধু দারোয়ান দেখেছিল।’
– ‘তাই না-কি?’
– ‘হ্যাঁ, দুইদিনই দেখেছে। সেটা ইশহাককে জানিয়েছে। এই কারণেই হয়তো পুলিশ দিয়ে ধরিয়েছে। তাই প্লিজ, টাকা নিয়ে গিয়ে ভালো কিছু করো।’
– ‘তাহলে কথা দাও ডিভোর্স দেবে বুড়োকে।’
– ‘তোমার কি ধারণা এই টাকা কোথায় গেল সে এসে খুঁজবে না? নিশ্চয় খুঁজবে। তবুও আমি দিলাম কেন? ওর সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না, তন্ময়। কিন্তু তুমিও বেকার। প্লিজ একটা কিছু করো। যাতে আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে চলে আসতে পারি।’
তন্ময় ওর হাত ধরে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, ‘এবার অবশ্যই কিছু একটা হবে। চিন্তা করো না। কিন্তু তুমি যে বললে হসপিটাল যেতে নিষেধ করেছে, তা কেন?’
– ‘জানি না কেন, কিন্তু নির্জনও বারবার বলছে নিষেধ করছে না যেতে। কিছু তো একটা আছে। এজন্যই বলেছি। টাকা নিয়ে ভালো কিছু করো। এদিকে দেখি কি হয়।’
– ‘আচ্ছা চিন্তা করো না। বুড়ো মরলেও আমি আছি, বাঁচলেও আমি আছি।’
– ‘ওকে এখন উঠি, তন্ময়। আর হ্যাঁ, আমার মোবাইল কিন্তু ইশহাক চেক করছে অসুস্থ হওয়ার আগে কয়েকদিন। এসে আবার করবে নিশ্চয়। আমি আপাতত যোগাযোগ করবো না তোমার সঙ্গে। তুমিও না, ওকে?’
তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ‘আচ্ছা ঠিক আছে।’
– ‘আর আরেকটা কথা। ডিভোর্সি মেয়ে নিয়ে যদি তোমার পরিবারের আপত্তি থাকে?’
– ‘তা আমি বুঝে নিব ম্যাডাম।’
– ‘ওকে যাও, ভালো থেকো, আর প্লিজ টাকা নিয়ে কাজে লাগাও।’
‘আচ্ছা’ বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল তন্ময়।
হুস্না টেবিলে খাবার দিয়েছে। নির্জন এসে বসেছে খেতে। তখন তরুও এলো। ঠিক তখনই বাইরে থেকে এলো কেয়া। ওকে দেখে নির্জন অবাক হয়ে বললো, ‘তুমি আবার কোথায় গিয়েছিলে আম্মু?’
কেয়া ওপরে যেতে যেতে বললো,
– ‘একটু কাজে বাইরে গিয়েছিলাম।’
– ‘আব্বু না করেছেন যেহেতু হসপিটাল যেও না প্লিজ। এই অবস্থায় গিয়ে যদি জিজ্ঞেস করো কেন যেতে নিষেধ করছে। তাহলে কথা বাড়বে। অসুস্থ অবস্থায় তাতে প্রব্লেম হবে।’
কেয়া হেসে বললো,
‘আরে না, এই অবস্থায় গিয়ে এসব বললে আরও ক্ষতি হবে ওর’ বলে চলে গেল কেয়া। তরু খেতে বসলো। দু’জন চুপচাপ খেল। কোনো কথা বললো না। তরু আগে খেয়ে চলে এলো রুমে। এ বাড়িতে তার অশান্তি লাগছে। কি যে চলছে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেয়া ফুপু পরশু তাকে বললো, ‘তুই কোচিং বাদ দিয়ে চলে যা। খান পুর ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে যাবি।’
তখন অনেক যুক্তি-তর্ক করেছে তরু। কিন্তু এবার সত্যিই পড়া রেখে চলে যেতে ইচ্ছা করছে গ্রামে। কয়দিন থেকে নির্জনও একেবারে চুপচাপ। ওর ফুপু এসেছিলেন। হুস্না কি যেন বললো উনাকে। বুঝতে পারেনি তরু। সে কিচেনে যাওয়ার সময় শুধু শুনলো উনি বলছেন, ‘এই খানকির কারণেই তাহলে আমার ভাইয়ের এই অবস্থা।’
আজ আবার শুনছে কেয়া ফুপুকে হসপিটাল যেতে ফুপা নিষেধ করেছেন। সেও একদিন গিয়েছিল। তাকানওনি। কি হচ্ছে এসব? মাঝে মাঝে ভাবে তার এসব নিয়ে ভাবার কিছু নেই। তবুও কেন যেন দুশ্চিন্তা হচ্ছে। তরু আস্তে-আস্তে রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গেল। নির্জনের সঙ্গে কথা হচ্ছে না আজকাল। সে দরজায় গিয়ে নক দিল।
– ‘কে?’
– ‘আমি।’
– ‘আসো।’
নির্জন শুয়ে মোবাইল টিপছিল। সে ভেতরে যেতেই উঠে বসলো। তরু বিছানায় বসে বললো, ‘কি করছো?’
– ‘কিছু না, চলো বাইরে যাই, যাবে?’
– ‘কোথায়?’
– ‘এমনিই যাই, কোথাও বসলাম। রেস্তোরাঁয় বা পার্কে।’
– ‘ওকে।’
– ‘যাও রেডি হয়ে বের হও।’
তরু চলে গেল। গিয়ে কাপড় পালটে, একটু চুল ঠিকঠাক করে বের হলো। নির্জনও বের হলো একটি সাদা টি-শার্ট পরে। ওর চোখের নিচে অল্প কালি পড়ে গেছে। দৃষ্টি কেমন উদাস, শুন্য। দু’জন বাইরে এলো। রিকশায় উঠে বসার পর নির্জন বললো, ‘কোথায় যাওয়া যায়।’
তরু ওর হাত ধরে কোলে এনে বললো, ‘কোনো পার্কেই যাই, খোলা জায়গায় তোমার ভালো লাগবে।’
নির্জন পার্কের নাম বলে যেতে বললো চালককে। বিকাল হয়ে এসেছে। ছেলে-বুড়োরা শরীর চর্চার জন্য পার্কে হাঁটাহাঁটি করছে। কেউ কেউ বেঞ্চে বসে আছে। নির্জন আর তরু সবুজ ঘাস দেখে বসলো। বাদামওয়ালাকে দেখে তরু ডাকলো আসতে। এক প্যাকেট বাদাম নিল সে। নির্জন মানিব্যাগ বের করতে গেলে তরুই দিয়ে দিল টাকা। নির্জন খোসা ছাড়ানোর জন্য বললো, ‘দাও আমার কাছে।’
– ‘না, আজ আমিই খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছি তোমাকে।’
‘ওকে, ঠিক আছে’ বলে নির্জন ঘাসে শুয়ে তরুর কোলে মাথা রাখলো। তরু আশেপাশে তাকিয়ে বললো, ‘মানুষ দেখবে তো।’
– ‘দেখুক।’
– ‘আমি খোসা ছাড়াবো কীভাবে?’
নির্জন পলিথিনের প্যাকেট ছিঁড়ে ঘাসে বাদাম ফেলে বললো, ‘এই প্যাকেট এবার আমার বুকের ওপরে রাখো। খোসা এখানে রাখবে, আর বাদাম রাখবে আমার মুখে।’
তরু ফিক করে হেসে বললো, ‘আচ্ছা।’
তারপর বাদামের খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বললো, ‘আঙ্কেলের কি অবস্থা এখন?’
– ‘ভালোই, ডাক্তার বলেছে বাসায় নিয়ে আসতে। কিন্তু ইচ্ছা করেই হসপিটাল রেখেছি।’
– ‘তা কেন?’
– ‘ওইখানে তো কোনো অসুবিধা হচ্ছে না। ডেইটিতে যেসব মেয়ে আছে। ওদেরও টাকা দিয়ে বলেছি খেয়াল রাখতে৷ অফিসেরও অসুবিধা নেই।’
– ‘তাই বলে হসপিটাল ফেলে রাখবে?’
– ‘ম্যানেজার শফিক বললো এটা। আজ আবার ফুপুও বললো। একেবারে সুস্থ হলে বাসায় আনলে না-কি ভালো। আমিও ভেবে দেখলাম থাকুক হসপিটাল।’
– ‘কেন?’
– ‘কোনো প্রব্লেম আছে মনে হচ্ছে। তোমার ফুপুকেও হসপিটালে যেতে নিষেধ করেছে আব্বু। আমিও যতবার যাই, বলে জরুরি কথা আছে৷’
– ‘কি কথা?’
– ‘এখন এসব শুনলে আরও প্রব্লেম হবে। বলেছি কোনো চিন্তা করো না। আগে পুরোপুরি সুস্থ হও। সব শুনবো।’
তরু ওর হাতে বাদাম দিয়ে বললো,
– ‘ভালো করেছো, আমারও ধারণা এখন বাসায় আনলে যদি ফুপুর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয় প্রব্লেম হবে।’
– ‘হ্যাঁ, তাছাড়া অল্প কয়দিনে আব্বু কেমন বুড়ো হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। ম্যানেজার শফিকও কি যেন বলতে চায় আবার বলে না।’
– ‘কিছু বলেছে অল্প হলেও?’
– ‘একদিন বললো আপনাদের পারিবারিক বিষয়ে বলা ঠিক না। তবুও বলতে হচ্ছে। আপনার সৎমা ভালো না। স্যার না করছেন উনি যেন হসপিটাল না আসে। আমিও চাই না উনি আসুক হসপিটালে। স্যারের প্রব্লেম হতে পারে।
শফিক সাহেব আর কিছু বলেনি। বুঝাই যাচ্ছে কিছু একটা হয়েছে। তুমি মনে করে দেখো হার্ট অ্যাটাকের আগেরদিন আব্বু বলেছিল তন্ময়কে পুলিশ ধরেছে। তখন আম্মু অবাক হলো। তা তন্ময়কে পুলিশ ধরলে, আব্বু জানলো কী করে? তাছাড়া আমরা শ্রীমঙ্গল থেকে আসার পর আম্মুকে চেঞ্জ লাগছে। আমি ওইদিন রাতে তাকে ভাঙা কাপের টুকরো ফেলতেও দেখলাম ডাস্টবিনে। তখন দেখি তার মুখে কেমন কান্না কান্না ভাব। ওড়না দিয়ে একেবারে নববধূর মতো মুখ ঢেকে রেখেছে। পরে খাওয়ার টেবিলে খেয়াল করে দেখেছি গাল লাল। আজ আবার ফুপু আমাকে কি বলে গেছে জানো?’
– ‘কি?’
– ‘জমিদারের মাইয়ার জন্য আজ আমার ভাইয়ের এই অবস্থা৷ তুই বাসায় থেকে কি করিস? কতকিছু হয়ে যায় কিছুই জানিস না।’
– ‘আমি বললাম, কি হয়েছে? এরপর কিছুই সোজাসুজি বললো না। মানে সবকিছু কেমন ঘোলাটে লাগছে৷ ফুপু এরপর বললো ভাইয়াকে হসপিটাল রাখ। পুরোপুরি সুস্থ হোক। এর আগে বাড়িতে আনলে সমস্যা হবে। আর জমিদারের মাইয়ার ব্যবস্থা তোর বাপ সুস্থ হয়ে যা করার করুক।’
তরুর হঠাৎ বিষম উঠলো। নির্জন মাথা তুলে বললো, ‘তোমার আবার কি হলো? জল আনবো?’
– ‘কিছু না ঠিক আছি, হ্যাঁ, তোমার ফুপুর কথাই ঠিক। ফুপা হসপিটাল থেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়েই আসুক। কিন্তু হসপিটাল রাখে এভাবে?’
– ‘না, কিন্তু শফিক সাহেব হয়তো কথা বলে বা টাকা দিয়ে রাখাচ্ছে।’
– ‘ও আচ্ছা।’
তরু খানিক ভেবে নির্জনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমার না কোচিং-টোচিং করে আর হবে না মনে হচ্ছে। বাড়িতে চলে যাব ঠিক করেছি।’
নির্জন অবাক হয়ে কোল থেকে মাথা তুলে বসে ওর দিকে তাকায়।
___চলবে….
লেখা: জবরুল ইসলাম