প্রণয়ের রংধনু পর্ব-১০+১১

0
663

#প্রণয়ের_রংধনু🖤
#পর্ব-১০ +১১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘তুমি এখনো তোমার প্রাক্তনকে ভুলতে পারছো না অভি। অথচ কিছুদিন পর তোমার এবং জুঁইয়ের বিয়ে। ‘

অভির রুমের আলমারিতে পাওয়া একটি ফ্রেমে অনন্যার বাঁধানো হাঁসিমাখা মুখস্রী দেখে ক্ষিপ্ত সুরে প্রশ্ন করলেন অভির মা।

‘ একজনকে ভুলে না গিয়ে, অন্যজনকে বুঝি বিয়ে করা যায় না? ‘

‘ ওয়াট? কি বলছো তুমি এইসব? তার মানে তুমি ওই চরিত্রহীন মেয়েটাকে ভুলতে চাইছো। ‘

অভি কোনরুপ কথা বলে, গাঁয়ের থেকে কোট ফেলে দেয়। বিছানায় স্টান হয়ে শুয়ে, ঘুড়ন্ত ফ্যানের দিকে তাঁকিয়ে থাকে। ছেলের থেকে কোনরুপ উত্তর না পেয়ে বুশরা বেগম রাগে ফুশতে থাকে। স্বামী মা/রা
যাওয়ার পরে, একাই বড় করে গিয়েছেন ছেলেকে। ছেলে তার দিনের পর দিন কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে অথচ মা হয়ে, তিনি দেখে যাচ্ছেন, না তাকে যথাসম্ভব কথা বলতে হবে, বিয়ের তারিখ এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। জুঁইয়ের বাবা নিজেও বিয়ের ব্যাপার নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বুশরা বেগম চলে গেলেন। অভির অস্হির অস্হির লাগছে প্রচন্ড। এসির রিমোর্ট হাতে নিয়ে পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো, তবুও বেশ ঘামছে সে।
তার দৃষ্টি জানালার দিকে। আকাশে উঁকি দিচ্ছে এক ফালি চাঁদ! সেই চাঁদের মতো স্নিগ্ধ সুন্দর ছিলো তার প্রেমিকা অনন্যা। তাই বোধহয় চাঁদের ন্যায় অনন্যা নামক রমনীর গাঁয়েও আজ চরিত্রহীনার কলঙ্ক! তবুও মন মানতে চাইছে না অভির। আখিজোড়া ঝাপ্সা হয়ে যাচ্ছে তার। শুধু মনে হচ্ছে না,না! একদম নয়! তার স্নিগ্ধ সুন্দর অনন্যার গাঁয়ে নেই কোন কলঙ্ক, সে পবিত্র! বড্ড পবিত্র! কিন্তু তার ভাবনারকে বারংবার ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছে বিয়ের দিনে দেখানো সেই ভিডিওটি। মন- মস্তিষ্ক ভয়ংকের যুদ্ধে পি/ষে যাচ্ছে অভি। অভি না চাইতেও অনন্যাকে ফোন করলো। অনন্যা রান্নাঘরে ছিলো, অচেনা নাম্বার দেখেও কি মনে করে, যেন ফোনটা ধরলো। অপাশ থেকে নিজের নি:শ্বাস টুকু অব্দি যথাসম্ভব দমিয়ে রাখার প্রয়াস করলো অভি,যেন এইবার অন্তত তাকে চিনতে ব্যার্থ কিন্তু মানুষ কী আর নি:শ্বাস দমিয়ে রাখতে পারে? সে বেশ বড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই মুহুর্ত তাকে বড় এক চোর মনে হচ্ছে অপরপ্রান্তের টেলিফোনে রয়েছে বড় এক দারোগা। যার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বললেই, সে তৎক্ষনাৎ হাজতে দিয়ে আসবে। দুজনের মধ্যেই পিনপিন নিরবতা। নিরবতা ভেঙ্গে অনন্যা কঠোর গলায় শুধায়, ‘ ফোন করেছেন কেন? অভি শিকদারের এতো খারাপ দিন চলে আসলো? আমার মতো একজন দুশ্চরিত্র নষ্টা মেয়েকে, ফোন করার প্রয়োজন বোধ করলেন, হঠাৎ। ‘
অভি উত্তর দিলো না। করিমা একটা ট্রে হাতে নিয়ে,অনন্যার দিকে এগিয়ে বললো, ‘ স্যার আপনারে ডাকতাছে আফা। হের নাকি কিসব ক্লাইন্ট ফ্লাইন্ট আইছে। খাবার দেওয়ান লাগবো।’
অনন্যা মাথা নাড়িয়ে, ফোনটা হাতে নিয়ে বললো,

‘ নিশ্চই খবর শুনেছো, আমি ফারিশ খানের বাড়িতে আছি। কেন ফোন করে বিরক্ত করছো?’

অভির আখিজোড়া বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো, সে থমথমে গলায় উত্তর দিলো,

‘ তুমি সত্যিই ফারিশ খানের বাড়িতে আছো? ‘

‘ মিথ্যে মিথ্যে কেউ কারো বাড়িতে থাকতে বুঝি?’

‘ হেয়ালি করো না অনন্যা। সেখানে কি কারণে রয়েছো? ‘

অধরের কোণে হাল্কা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠে অনন্যায়। সে কঠোর গলায় জবাব দেয়,

‘ এমন প্রশ্ন যুক্তিহীন! তোমাদের ভাষ্যমতে আমার মতো নষ্টা মেয়েরা ফারিশ খানদের যেসব সার্ভিস দেওয়ার জন্যে তাদের বাড়িতে থাকে, আমিও ঠিক সেইসব সার্ভিস দেওয়ার জন্যেই, আজ ফারিশ খানের বাড়িতে আছি। ধরে নিতে পারো, এক কথায় রক্ষিতা হিসেবে রয়েছি। ‘

কথাটি বলেই কট করে ফোন কেটে দেয় অনন্যা। অভি বিছানায় পুনরায় বসে পরে।
‘রক্ষিতা’ শব্দটি একদম বুকে গিয়ে লাগলো অভির।সে নিজেও এমন বাজে বাজে শব্দগুলো অনন্যার জন্যে ব্যাবহার করছে কিন্তু আজ অনন্যা নিজে আজ নিজেকে ‘রক্ষিতা’ বলে সম্মোধন করায়, যন্ত্রনা আজ বেশ অনুভব করছে অভি! আচ্ছা সে যখন অনন্যাকে এতো বাজে ভাবে অপমান করেছিলো তখন কেমন মনের অবস্হা ছিলো অনন্যার? একবারও কি অনুভব করতে চেয়েছিলো সে? আজ নিজেকেই প্রশ্নগুলো বিড়বিড়িয়ে করছে অভি। উত্তর আসে, না! অর্থাৎ সে কখনোই অনুভব করার চেষ্টা করে নি। মেনে নিতে আজ তার কষ্ট হচ্ছে আদোও কী অনন্যা ফারিশের রক্ষিতা হয়ে, তার বাড়িতে রয়েছে? সত্যিটা কে বলবে তাকে? পরক্ষনেই অভির মস্তিকে শেফা বেগমের নামটি আসে।

_______________

হাতে থেকে ফোনটা রান্নাঘরের এক পাশে রেখে পিলারে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে, ফুপিঁয়ে উঠে অনন্যা। মুখে হাত রেখে নিচু গলায় শুধায় সে, ‘ কেন ফোন করছো অভি? কেন দূর্বল করতে চাইছো আমায়? তুমি কী বুঝতে পারো না? আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে। ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে কলিজা। আমায় দূর্বল করো না, তুমি। ‘

করিমা পাশেই দাঁড়িয়ে ট্রে তে খাবার সাঁজিয়ে চলে যাচ্ছিলো, হঠাৎ অনন্যাকে ফুপিঁয়ে উঠতে দেখে প্রশ্ন করে, ‘ আফামনি আপনে কী কানতাছেন? কেল্লেইগা? আইজক্যা স্যার অনেক কাম করাচ্ছে তার লেইগা? বুঝি আফা, আপনে হলেন বড়লোকের মাইয়া, এতো কাজ করার কী অভ্যাস আছে?’

অনন্যা নাক টেনে, হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে, নিজের অশ্রুটুকু মুছে তড়িৎগতিতে বলে,

‘ তেমন কিছুই না। তুমি বরং আমার সাথে চলো। আমরা একসাথে খাবার পরিবেশন করি। টেবিলে উনার ক্লাইন্টরা অপেক্ষা করছে। ‘

করিমা সঙ্গে সঙ্গে বলে, ‘ আফা আপনে আজ মেলা কাম করছেন। আপনের আর যাইয়া লাভ নাই। আমি বরং বাকি কামের আফা গো লইয়া, খাবার পরিবেশন করমু নে। কামের লোকের কী অভাব আছে এই বাড়িতে? সব কাজ আপনে করবেন কেন?’

‘ কিন্তু আমায় যখন ডেকেছেন তোমার স্যার, তার মানে আমাকেই যেতে হবে। নাহলে পরে দেখবে ঝামেলা শুরু করে দিবে। ‘

করিমা অনন্যার কথা শুনে মাথা ঝুঁকিয়ে সম্মতি জানালো, অর্থাৎ ফারিশ ঝামেলা নয় বিরাট ঝামেলা করলেও করতে পারে।

___________________
ড্রাইনিং টেবিলে ফারিশের বেশ কয়েকজন ক্লাইন্ট বসে আছেন। তাদের সাথে বসে আছেন রুমা খান, ফারিশ এবং ফারিশের ছোট কাকা খালেদ খান। করিমা এবং অনন্যা হাতে হাতে সমস্ত পদের খাবার টেবিলে পরিবেশন করে যাচ্ছে। ফারিশ ভ্রুজোড়া আপনআপনি কুচকে যায়। সে কল্পনা করে, তার দেওয়া এতো বড় লিস্টে থাকা প্রতিটি পদ রান্না করে ফেলবে অনন্যা! সে অফিসের মধ্যেই সিসিটিভ দিয়ে রান্নাঘরের কর্মকান্ডে নজর রেখেছে, মেয়েটা কোন ভাবেই সাহায্য নেয়নি, ইউটিউব দেখেই এতো রান্না করে ফেললো। অনন্যার পিছন পিছনে মিষ্টিও দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে যেন দেহরক্ষীর মতো তার মাকে র‍ক্ষা করে চলেছে, যেন কোন অচিনপুরের রক্ষিস এসে তার মাকে কেড়ে নিতে চাইবে তখন সে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে তার মাকে রক্ষা করবে। মেয়ের কান্ডে হতাশ হয়ে ফারিশও কিছু বললো না। কারণ সে জানে সে যতই বলুক, বাবা হিসেবে দিনশেষে সে তার মেয়ের জেদের কাছে হারতে বাধ্য! অনন্যা ক্লাইন্টদের, রুমা খান, খালেদ খানকে পরিবেশন করে। ফারিশকে পরিবারণ করতে চাইলে, ফারিশ হাত উচিয়ে বলে, ‘ আমাকে এইসব খাবার দিবেন না। আই জাস্ট ডোন্ট লাইক দিজ টাইপ অফ অয়েলি ফুডস! গিভ মাই স্যালাড।’

অনন্যা ছোট্ট ‘ ওহ! আমি এখুনি নিয়ে আসছি।’ বলেই আবারো রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেলো। রুমা খান হতাশ নয়নে তাঁকালেন সেদিকে। মেয়েটা সকাল থেকে কত খাটুনি করে যাচ্ছে। অনন্যা রান্নাঘরে গিয়ে,সালাদ বানিয়ে আবারোও ফিরে আসে। ততক্ষনে সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছিলো। একজন ক্লাইন্ট খাবার খেতে খেতেই উৎফল্লিত হয়ে বললেন, ‘ খাবার টা যথেষ্ট সুস্বাদু হয়েছে। কে রান্না করেছে? ‘

করিমা সঙ্গে সঙ্গে অনন্যার দিকে ইশারা করে, ‘ এইযে অনন্যা আপামনি ইস্পিশেলি আপনাগো লেইগা হেই সকাল থেইকা রান্না করছে। ‘

আরেকজন ক্লাইন্টও বলেন, ‘ খুবই টেইস্টি! জাস্ট ওয়ান্ডারফুল। ‘

রুমা খান তার পাশে দাঁড়ানো অনন্যার মাথায় হাত রেখে হাসিমুখে বললেন,’ এতো মজা হবে খেতে কল্পনা করে নি। তুমি কী আগে থেকেই রান্না করতে পারতে?’

‘ আঙ্গে না, টুকটাক রান্না পারি। তবে বেশিরভাগই ইউটিউব দেখে আজই শিখে নিলাম। ‘

অনন্যার কথা শুনে ফারিশ বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ সত্যিই মেয়েটার দম আছে। ‘

অপরপাশে দাঁড়িয়ে থাকা রেশমি খান সবকিছু শুনে বিরক্তবোধ করছেন। সে নিজেও তো অনেকবার নিজ হাতে রান্না করে, ক্লাইন্টদের খায়িয়েছেন, তখন তো তার এমনভাবে প্রশংসা করা হয়নি।যত্তসব আদিক্ষেতা!

সকলের প্রশংসা শুনে অনন্যার আজ তার বাবার কথা বড্ড মনে পরছে। সে একবার বাবা – মায়ের অনুমতি ব্যাতীত রান্নাঘরে লুকিয়ে গিয়ে, নিজ হাতে বাবার জন্যে বিরিয়ানি রান্না করেছিলো, তখন তার বাবার সে কী রাগ! তার রাজকন্যা কেন আগুনের সামনে যাবে? তার ভাষ্যমতে অনন্যা বিরাট বড অন্যায় করেছে! সেই অন্যায়ের জন্যে জেলে পাঠানোর ব্যাবস্হা থাকলে, তিনি বোধহয় অনন্যাকে জেলে পাঠিয়ে দিতেন, কিন্তু অনন্যার রান্না করা সেই
বিরিয়ানী খেয়ে, তার সমস্ত রাগ নিমিষেই উধাও হয়ে গিয়েছিলো। তিনি বলেছেন, ‘ শুনো মা, তুমি বিরাট বড় অন্যায় করেছো, ভেবেছিলাম তোমায় জেলে পাঠাবো কিন্তু বিরিয়ানি নামক ঘুষ খেয়ে, তোমায় ছেড়ে দিলাম, কিন্ত বারংবার ঘুষ দিয়ে তুমি বেঁচে যাবে না। পরবর্তীতে কঠিন স্টেপ নিবো তোমার বিরুদ্ধে। পারলে হাইকোর্টে যাবো। নতুন আইন পাশ করিয়ে, তোমায় জেলে পাঠাবো।’

অনন্যার বাবার সেই কথাগুলো ভেবে সকলের আড়ালে ফিক করে হেসে উঠে অনন্যা। মিষ্টি তখন কোমড়ে হাত দিয়ে সকলের দিকে তাঁকিয়ে বলে,

‘ মিষ্টির মায়ের রান্না ভালো না হয়ে যাবে কোথায়? মিষ্টির মা সবার থেকে আলাদা। একদম আলাদা।’

মিষ্টির কথায়, একজন ক্লাইন্ট ফারিশকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ ওহো! উনি তবে হচ্ছেন মিসেস খান। আপনার মিসেসের রান্নার হাত বেশ ভালো। মিসেস খান, আপনার রান্না খেতে কিন্তু আমরা প্রায় প্রায় চলে আসবে। ‘

ক্লাইন্টের কথা শুনে সকলেরই বিষম খাওয়ার মতো অবস্হা হলেও,রুমা খান কথাটি শুনে মুচকি হাসতে থাকেন। রেশমি খান দ্রুত এগিয়ে এসে বললেন, ‘ আরে না, না! আপনারা…….

রেশমি খানের কথা শেষ হওয়ার পূর্বে, ফারিশ গম্ভীর গলায় শুধায়, ‘ ডোন্ট বি সিরিয়াস ফর মাই ডটার অপিনিয়ন! সি ইজ জাস্ট আ সার্ভেন্ট। বাকি কাজের লোকদের মতো সে ও একজন কাজের লোক, আর কিছুই নয়। ‘

‘ ওহ, সরি মি: ফারিশ। ‘

রুমা খানের চোখমুখে অন্ধকার ঘনিয়ে আসলো ফারিশের কথা শুনে। ফারিশের উত্তরে তেমন কোন প্রভাব পরলো না অনন্যার। সে যথেষ্ট শক্ত হয়েই দাঁড়িয়ে আছে। ফারিশের থেকে এমন উত্তরই আশা করেছিলো সে।

_________________

ফারিশ খাবার হাতে নিয়ে, মিষ্টির রুমে এসে দেখে মিষ্টি তার ময়না পাখির সাথে আনমনে কথা বলছে, মুখস্রী দেখেই মনে হচ্ছে তার মনের অবস্হা তেমন একটা ভালো নেই। ফারিশ হাক ছেড়ে ডাকলো,

‘ মা, চলো এসো। খাবার খেয়ে নিবে। ‘

মিষ্টি বারান্দা থেকেই জবাব দিলো, ‘ বাপি আজ আমি তোমার কাছে খাবো না। সকালে মতো মায়ের কাছেই খাবো। তুমি মাকে ডেকে দাও। ‘

অনন্যার কথা শুনে সজোড়ে প্লেট টা বেশ আওয়াজ করে টেবিলে রাখে ফারিশ।অনন্যা রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো, ভিতর থেকে পাওয়া শব্দ শুনে থেমে যায়। ফারিশ রেগেই ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে, অনন্যার সামনাসামনি চলে এসে বলে, ‘ মিষ্টি আপনার হাতে খাবে বলছে, মিষ্টিকে খায়িয়ে, ছাদে আসবেন। কাজ আছে। ‘

ফারিশ কথাটি বলেই গটগট পায়ে ছাদের দিকে যেতে থাকে। অনন্যা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, অনন্যার রুমে প্রবেশ করে। অনন্যাকে দেখেই, মিষ্টি খুশি হয়ে বারান্দা থেকে বেড়িয়ে, অনন্যাকে জাপটে ধরে। অনন্যাও মুচকি হেসে, মিষ্টিকে বিছানায় বসায়। অত:পর প্লেট টা হাতে নিয়ে, ভাত মাখতে মাখতে বলে, ‘ তুমি কিন্তু একটা কাজ খারাপ করেছো মা। তোমার বাবা এতো ব্যাস্ততার মাঝেও, তোমাকে খায়িয়ে দিতে এসেছিলো কিন্তু তুমি তাকে কেন ফিরিয়ে দিলে কেন? এইটা কী ঠিক হয়েছে বলো?’

মিষ্টি সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘ বাপি কী তার মিষ্টির সাথে রাগ করেছে? ‘

অনন্যা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, ‘ বাপি, তো তার প্রিন্সেসকে এত্তোগুলো ভালোবাসে, সে কি তার মিষ্টির সাথে রাগ করে থাকতে পারবে বলো?’

‘ উহু’ বলে মিষ্টি ঠোট উল্টে ফেলে। অনন্যা পুনরায় হেসে , মিষ্টিকে বুকের সাথে মিশিয়ে বলে,

‘ তুমি তোমার বাপিকে৷ অনেক ভালোবাসো তাইনা?’

‘ অনেক অনেক, একদম তোমার মতো। ‘

বলেই মিষ্টি অনন্যাকে গালে চুমু দিয়ে দেয়।

________________

মিষ্টিকে খায়িয়ে , ঘুম পারিয়ে দিয়েছে অনন্যা। অত:পর সে ছাদের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। বিশাল এড়িয়ে জুড়ে রুফ টপ। বিভিন্ন ছোট বড় দেশি বিদেশি গাছের সম্মোময়ে ছাদটিকে সাঁজানো হয়েছে। যেন আরো একটি বাগান। ছাদেও সুইমিংপুল। গোলাপ ফুলগাছের মধ্যে ছোট্র একটি দোলনা রয়েছে। অদ্ভুদ ভাবে গোলাপ গাছের ফুলগুলো কালো, অর্থাৎ ব্ল্যাক রোজ। সেই ব্ল্যাক রোজের মাঝখানে থাকা দোলনায় পা ঝুলিয়ে, টি- শার্ট পরিহীত এবং কালো ট্রাউজার পরিহীত ফারিশ বসে আছে। হাতে তার সিগারেট! সে সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে শীতলভাবে অনন্যার দিকে তাঁকালো। অনন্যা সেই চাহনী দেখে শিউরে উঠলো। ফারিশ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে শীতল গলায় বললো,

‘ আপনাকে রান্নার যেই টাস্ক দেওয়া হয়েছিলো, তার বিরাট একটা রুল ব্রেক করেছেন। ‘

ফারিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায় অনন্যা। তার জানামতে, সে তো কারো সাহায্য নেয়নি তবে কোন নিয়ম ভঙ্গ করেছে সে? অনন্যা কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়, ‘ মি: ফারিশ খান, আপনার ইনফরমেশনের জন্যে বলে দেই, আমি কারো থেকে কোন প্রকার সাহায্য নেই। তা আপনি নিজেও জানেন, বিকজ রান্নাঘরে আপনার গোপন ক্যামেরা ফিট করা আছে। আপনি সবকিছুই অফিসে বসে দেখছেন। ‘

অনন্যার কথা শুনে চমকে উঠে ফারিশ। তার ধারণামতে কারো পক্ষে তো জানা কথা নয়, রান্নাঘরে তার গোপন ক্যামেরা আছে।

‘ চমকে উঠলেন বুঝি? এইসব গোপন ক্যামেরা ট্যামেরা বেশিক্ষন অনন্যা হাওলাদারের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে না। আমার নজর অতি সুক্ষ্ম!’

ফারিশ বিরক্ত হয়ে বলে, ‘ এইবার কাজের কথায় আসা যাক? আমি একবারও বলেনি, রান্নার টাস্কে আপনি কোনভাবে ইন্টারনেটের সাহায্য নিতে পারবেন, কিংবা একবারও আমার অনুমতি আপনি নেন নি। সেই হিসেবে আপনি রুলস ব্রেক করেছেন। শাস্তি তো পেতেই হবে। ‘

ফারিশের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় অনন্যা। লোকটা তাকে কৌশলে জব্দ করে, শাস্তি দিতে চাইছে এইভাবে, কিন্তু কী শাস্তি দিবে তাকে?

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে