#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মাঝরাতে হঠাৎ করে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসায় চমকে উঠলো অনন্যা। হাত বাড়িয়ে ফোন রিসিভ করতেই, ‘ হ্যালো,কে বলছেন?’ বলে উঠলো অনন্যা। ফোনের অপাশ থেকে কোনরুপ উত্তর এলো না। ফোনের অপাশে থাকা ব্যাক্তি তীব্রভাবে নি:শ্বাস ফেলতে লাগলো। তীব্র নি:শ্বাসের শব্দে অনন্যার বুকখানা আনচান, আনচান করতে লাগলো। অনন্যা কোনরকম অধর নাড়িয়ে, প্রশ্ন করলো,
‘ অভি! তুমি? ‘
ফোনের অপাশে থাকা অভি চমকে উঠলো। সে বোধহয় কল্পনা করেনি, কোনপ্রকার উত্তর না দিলেও, যথেষ্ট নিঁখুতভাবে তাকে ধরে ফেলবে অনন্যা। মেয়েদের আশ্চর্য এক ক্ষমতা রয়েছে তাই বোধহয় অনন্যা তাকে ধরে ফেলেছে, কিন্তু সব মেয়েদের সেই ক্ষমতা থাকে না। কিছু কিছু মেয়ের সেই অসমান্য ক্ষমতা থাকে। অনন্যা তাদের মধ্যে সেই একজন, তাইতো কত নিঁখুতভাবে তাকে ঠকিয়ে ফেলেছিলো। অভি তড়িৎ গতিতে ফোন কেটে দিয়ে জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেললো। তার মাঝরাতে কি যেন হয়েছিলো, সে সঠিকভাবে বুঝতে পারছে না। অনন্যার কন্ঠ বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছিলো তার। কি মিষ্টি কন্ঠস্বর মেয়েটার গলা! সে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে তার অন্য একটা নাম্বার দিয়ে, কিছু না ভেবেই অনন্যাকে ফোন করে বসে, কিন্তু অনন্যা তাকে এইভাবে ধরে ফেলবে তা ঠাওড় করতে পারে নি সে। অনন্যা তার হাতের ফোনটি রেখে দিয়ে, জানালার কাছে দাঁড়ায়। অভি হয়তো ভাবছে অনন্যার কোন এক বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু সে আদোও বুঝলো না, অভির প্রতিটা নি:শ্বাসের শব্দ অনন্যার কাছে ঠিক কতটা পরিচিত! প্রায় অফিসের ফাঁকে অভি, অনন্যার ভার্সিটি পৌঁছে, তার ক্যাম্পাসের পাশের পার্কে অনন্যাকে নিয়ে যেতো। সেখানে তাদের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চ ছিলো। অনন্যাকে সেখানে বসিয়ে, অভি অনন্যার কোলে মাথা রেখে স্টান হয়ে শুয়ে পরতো। অত:পর গম্ভীর গলায় শুধাতো, ‘ অনন্যা! আমায় বিরক্ত করবে না। আমার বড্ড ঘুম প্রয়োজন। তোমার কোলে মাথা রাখলেই সে ঘুম আসবে, অন্যথায় আসবে না। ঘড়ি ধরে, টানা ৪৫মিনিট পর আমায় জাগিয়ে দিবে। সময়ের হের -ফের করবে না।
আমায় অফিস পৌঁছাতে হবে, তাছাড়া তোমারও ক্লাস আছে। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে প্রেম করা অন্যায়, বুঝলে? ‘
‘ হ্যা বুঝলাম। ‘
‘ আচ্ছা তুমি বিরক্ত হচ্ছো না তো? ‘
‘ না, হচ্ছি না। তুমি ঘুমাও। ‘
অভি তখন পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পরতো। অনন্যা তখন ঘুমন্ত অভির দিকে পরম মায়া নিয়ে তাঁকিয়ে থাকতো। ছেলে মানুষরাও ঘুমালে বুঝি তাদের এতোটা নিষ্পাপ লাগে, কই সেই কথা তো সে আগে জানতো না। অভির ভাষ্যমতে সেদিন অনন্যা ইচ্ছেকৃত অন্যায় করেছিলো। ৪৫ মিনিট নয় বরং টানা ১ ঘন্টা পর অভিকে জাগিয়ে দিয়েছিলো।
________________
পুরনো সেই দিনের কথা মনে পরতেই, অনন্যার আখিজোড়া বেয়ে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পরে। জুঁই বড্ড ভাগ্যমতী মেয়ে, অভির সেই ঘুমন্ত মুখস্রী রোজ রোজ দেখবে, সেই মুখস্রী দেখে তার সারাদিনের ক্লান্তি মুহুর্তেই দূরে চলে যাবে। আচ্ছা জুঁই কি তবে এর জন্যেই এইভাবে তাকে ঠকালো? তার সাথে প্রতারণা করলো। জুঁইও অভিকে ভালোবাসতো, তা কখনো টের পায়নি অনন্যা। আচ্ছা জুঁই কোনভাবে ফারিশ খানের সাথে জড়িত নয় তো? বেশ অনেকগুলো কথা মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছে। অনন্যার বেশ ভালো করে মনে আছে, সেদিন তাদের বন্ধু রাহেলের বার্থডে পার্টিতে,ড্রিংক করে সে প্রায় অজ্ঞান হয়ে পরেছিলো। পরেরদিন সকালে সে নিজেকে তাদের আরেক বন্ধু শিফালির বাড়িতে আবিষ্কার করেছিলো, কিন্তু অবাক করার বিষয় পার্টিতে কিংবা শিফালির বাড়িতে কোথাও জুঁইয়ের উপস্হিতি ছিলো না। তবে জুঁই কীকরে সবকিছুর মধ্যে জড়িত থাকবে? শিফালির কথা মস্তিষ্কে আসতেই, তড়িৎ গতিতে উঠে বসে অনন্যা। সেদিন রাতে আসলে কি হয়েছে, তা সঠিকভাবে কেবল তাকে শেফালি বলতে পারবে। অনন্যা তার ফোন হাতে নিয়ে শেফালিকে কল করে।
____________________
অপরদিকে, ফারিশ সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই, তার দাদী রুমা খানের মুখোমুখি হয়। দাদিকে দেখে ভ্রু কুচকে, ফারিশ জিজ্ঞাসা করে, ‘ এতো রাত অব্দি জেগে আছো কেন দাদী? তোমার যে প্রেশার হাই! ভুলে গেলে? ‘
রুমা খান গম্ভীর মুখে উত্তর দেয়, ‘ আমার কথা বাদ দাও দাদুভাই। এই বুড়ির কথা কী, তোমার আদোও মনে থাকে? সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ। সেই সকালে যাও, আর ফিরে আসো সেই রাতে।বাড়িতে যে তোমার নিজেদের লোকেরা আছে, সেইটাই ভুলে যাও। ‘
ফারিশ তার ব্লেজার খুলতে খুলতে, ঝুঁকে তার দাদির হাত ধরে বলে, ‘ আমার জীবনে তুমি আর মিষ্টি ছাড়া আর কে আছে বলো? তোমাদের জন্যেই আমি এতোকিছুর পরেও খান বাড়িতে রয়েছি। নাহলে সেই কবেই সকলের আড়ালে দূরে সরে যেতাম। ‘
ফারিশ কথাটি বলে মিষ্টির রুমের দিকে পা বাড়াতে নিলে, পিছন থেকে রুমা খান প্রশ্ন করেন,
‘ কালকে কে এমন আসছে দাদুভাই? নতুন কোন কাজের লোক রেখেছো? ‘
‘ হ্যা দাদি! বিশেষ এক কাজের লোক। যাকে দেখে তোমার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। ‘
‘ মানে! কি বলতে চাইছো দাদুভাই? ‘
‘ অনেক পুরনো হিসাব জমা হয়ে আছে দাদি। সবকিছুর হিসাব নিবে ফারিশ খান। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি! ‘
বেশ গম্ভীরভাবে কথাটি বলেই, ফারিশ মিষ্টির রুমে চলে গেলো ফারিশ। অপরদিকে রুমা খান বেশ ঘাবড়ে গেলেন। তার মন বলছে,ফারিশ এক ভয়ংকর খেলায় মেতে উঠেছে!
ফারিশ খুব সাবধানে পা ফেলে মিষ্টির রুমে প্রবেশ করে, যেন মিষ্টির ঘুম ভেঙ্গে না যায়। ফারিশ গিয়ে তার মেয়ের পাশে বসে, মাথায় হাত বুলাতে থাকে। তার ছোট্ট নিষ্পাপ মেয়েটির মুখস্রীখানা দেখলেই, তার সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই পালিয়ে যায়। তার মনে হয়, আজ মিষ্টি আছে বলেই, ফারিশ তার বেঁচে থাকার কারণ খুঁজে পেয়েছে। নতুনভাবে বাঁচতে শিখেছে। তখনি সে শুনতে পায়,মিষ্টি আদো আদো গলায় ঘুমের মাঝে শুধাচ্ছে, ‘ মা, মা! কোথায় তুমি? আই নিড ইউ মা। ‘
মিষ্টির কথা শুনে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠে ফারিশের। ফারিশ নরম গলায়, মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘ মিষ্টি মা? তোমার কষ্ট হচ্ছে? দেখো তোমার বাপি এসেছে। আমিই তোমার বাবা, আমিই তোমার মা, সোনা। ‘
মিষ্টি কোনরুপ জবাব না দিয়ে, ফের গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরলো। ফারিশ ঝুঁকে মিষ্টির ললাটে ভালোবেসে চুমু দিয়ে দেয়। সে ঠিক করলো,আজ সে তার মেয়ের কাছেই ঘুমাবে।
________________
অন্যদিকে বেশ কিছুক্ষন যাবৎ অনন্যা শেফালিকে কল করে যাচ্ছে কিন্তু রিং হয়েই যাচ্ছে, ধরছে না। হয়তো ঘুমে আছন্ন তাই ফোন ধরছে না, হয়তো এমনও হতো পারে, অনন্যার নাম্বারটাই সে ব্লক লিষ্টে ফেলে রেখেছে। কিন্তু শেফালি এমন কেন করবে?কিচ্ছু ভাবতে পারছে অনন্যা। সে ঠিক করলো খুব সকালেই, সে শেফালির বাড়ির পৌঁছে যাবে। রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটলো। অনন্যার মা মাঝরাতেই, হসপিটালে চলে গিয়েছিলো, কিন্তু যাওয়ার আগে সে আরো একবার বেশ অনেকক্ষন যাবৎ অনন্যাকে বুঝিয়েছিলো সে যেন অভিমান না করে, নিজের এতো বড় ক্ষতি না করে, কিন্তু অনন্যা এক কথার মানুষ, সে শেফা বেগমের সমস্ত কথাকে অগ্রাহ্য করে, নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে বসে ছিলো। ঘড়িতে সকাল ৮টা বাজে। অনন্যা ঠিক করে, খান বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার আগে, সে একবার শেফালির সাথে কথা বলবে, কিন্তু সে উপায়ও নেই। ফারিশের দেহরক্ষী সর্বক্ষন যাবৎ গেটের বাইরে পাহাড়া দিচ্ছে। তাদের ভাষ্যমতে ফারিশের ধারণা শেষ মুহূর্তে হয়তো পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে পারে অনন্যা। তাই সে কোনপ্রকার ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। যথাসময় ঠিক ১০টা ৩০ মিনিটে বাড়ির গেটে, অনন্যার জন্যে গাড়ি এসে উপস্হিত হয়। অনন্যা তার রুমকে ভালো করে দেখে নিয়ে, দ্রুত বেড়িয়ে যায়। অত:পর গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি চলেছে আপনমনে। অনন্যা জানে তার জন্যে পদে পদে বিপদ অপেক্ষা করছে, কিন্তু নিজেকে নির্দোশ প্রমাণ করে, সে ঠিকই ফারিশের থেকে নিজেকে মুক্ত করে বেড়িয়ে আসবে।
অনন্যার ভাবনার মাঝেই, তাদের গাড়ি খান বাড়ির গেটের সামনে এসে থামে। অনন্যা গাড়ি থেকে বেড়োতেই অবাক হয়ে যায়। বেশ বড় জায়গা জুড়ে বিশাল গার্ডেনের এড়িয়া। আশে পাশে নানা গাছ-পালার ছড়াছড়ি। বাগানের ঠিক মধ্যখানে বিশাল এক সুইমিং পুল। তার ঠিক সামনে ডুপ্লেক্স বিশিষ্ট বেশ বড় এক বাড়ি! হয়তো শহরের সবথেকে বড় নামি দামি বাড়ি। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আরবাজের খানের বাড়ি বলে কথা। বাড়ির সামনের দেয়ালটুকু বেশ সুন্দর করে পাথর দিয়ে সাঁজানো। ফারিশ তার ছাদে দাঁড়িয়ে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছিলো, ঘড়ির দিকে তাঁকিয়ে, সে শান্ত দৃষ্টিতে বাগানে থাকা রমনীর দিকে তাঁকায়। অত:পর রহস্যময় হাঁসি, হেসে বলে,
‘ ফারিশ খানের ডেভিল রাজ্যে আপনাকে সুস্বাতম মিস অনন্যা হাওলাদার। ‘
অনন্যার ভাবনার বিঘ্ন ঘটিয়ে, একটি ছোট্ট মেয়ে দৌড়ে এসে, তাকে হুট করকঝাপ্টে ধরে বলে, মা! তুমি এসেছো? ‘
চলবে কি?
নোট: আপনাদের এইসব নেগেটিভ কমেন্ট বন্ধ করুন প্লিয! ইচ্ছে না হলে পড়িয়েন না। আপনাদের কমেন্ট দেখে আমি বিরক্ত ছাড়া আর কিছুই হয়না। মানে অদ্ভুদ লাগে, ফ্রি তে লিখবো তাও কথা শুনতে হবে? আপনাদের কমেন্টে আমি আমার প্লট চেঞ্জ করবো না বা করছি না। পারলে কোন এক গল্পের সাথে আমার গল্পেের লাইন টু লাইন বা প্লট টু প্লট ভালো করে মিলিয়ে দেখান। তারপর এইসব কমেন্ট করবেন। যথেষ্ট হয়েছে!