প্রণয়ের রংধনু পর্ব-০৫

0
713

#প্রণয়ের_রংধনু
#পর্ব- ৫
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
‘ আমি আপনার কনট্রার্ক পেপারে সাইন করতে রাজি, মি: ফারিশ খান। ‘
ফারিশ কথাটি শুনে তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার সামনে থাকা সেলোয়ার কামিজ পরিহিত রমনীর দিকে তাঁকিয়ে আছে। মুখশ্রীতে তার যথেষ্ট অস্হিরতা ফুটে উঠেছে। ফারিশের ধারণা মানুষ চরম উত্তেজনায় জীবনের সবথেকে বড় ভুল সিধান্ত নেয়,কারণ এই সিদ্ধান্ত এর পরিমানে পরবর্তীতে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর হয়। কিছুক্ষন পূর্বেই অনন্যা হুট করে, ফারিশের কেবিনে এসে,শান্ত গলায় জানায় সে ফারিশের শর্তে রাজি।ফারিশ কোনরুপ প্রশ্ন না করে, কন্ট্রাক্ট পেপারটি অনন্যার দিকে একপ্রকার ছুড়ে দিতেই, অনন্যা সাথে সাথে পেপারটি খপ করে ধরে ফেলে, তা দেখে বাঁকা হাসি দিয়ে, ফারিশ বলে, ‘ভালো করে কন্ট্রাক্ট পেপারটি পড়ুন মিস অনন্যা। আমি আপনাদের কম্পানি ফিরিয়ে দিলে, আপনাকে আজীবনের জন্যে এই ফারিশ খানের সার্ভেন্ট হয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। ‘
ফারিশের কথা শুনে অনন্যা ভালো করে পেপারটির দিকে তাঁকিয়ে, চটজলদি কলমটি হাতে নিয়ে, ফারিশের দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ তবে আমারোও শর্ত আছে, ফারিশ খান।’

‘ কি শর্ত? ‘

‘ আমাকে আজ রাতটা সময় দিতে হবে। আপনি কাল ঠিক সকাল সাড়ে ১০টার দিকে, গাড়ি পাঠিয়ে দিবেন। আমি আপানার বাড়িতে চলে যাবো। ‘

ফারিশ ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করে, ‘ সকাল সাড়ে ১০টা কেন? ‘

অনন্যা ফারিশের সামনে থাকা চেয়ারে বসে বলে,’ সকাল ১০টার আগে আমার ঘুম ভাঙ্গবে না। কম স্ট্রেস যায়নি দুইদিন। আই নিড সাম রেস্ট! ঘুম ভালো না হলে, আপনার বাড়িতে গিয়ে, কি কাজ করবো? আচ্ছা বলুন, আমার শর্তে কি আপনি রাজি?’

ফারিশের মুখশ্রীতে কাঠিন্যভাব বিরাজমান! মেয়েটা কি তার সাথে মশকরা করছে? রাগ হলেও, নিজেকে যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রন করে সে। এখন তাকে শান্ত থাকতে হবে, রাগ মানুষের সবথেকে বড় শত্রু! যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রন থেকে, বিপরীতের শত্রুকে প্রতিহত করতে হবে। ফারিশকে নিষ্চুপ থাকতে দেখে,অনন্যা নিজ থেকেই বলে, ‘ চুপ আছেন, তার মানে আপনি আমার শর্তে রাজি। আমি তাহলে সাইন করে দিচ্ছি।’

ফারিশের জবাবের অপেক্ষা না করে,সঙ্গে সঙ্গে পেপারে সাইন করে দেয় অনন্যা।অত:পর তড়িৎ গতিতে, উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘ আপনি এখন আমাদের কম্পানি আমাদের ফেরত দিয়ে দিবেন তো? আমার বাপির চিকিৎসা আটকে যাবে, আজকে রাতের মধ্যে ক্যাশ জমা না দিলে। ‘

ফারিশ গম্ভীর গলায় বলে, ‘ সব ব্যাবস্হা হয়ে গিয়েছে। ফারিশ খানের কাজ টাইম টু টাইম হয়। ‘
‘ মানে? ‘

অনন্যার প্রশ্নের সাথে সাথেই, অনন্যার বাবার ম্যানেজার সেখানে এসে বললেন, ‘ ম্যাম! আপনি অফিসে ঢুকার সাথে সাথেই, স্যার তার লোকদের বলে, আমাদের কম্পানির এক্সেস, আমাদের ফেরত দিয়ে দিয়েছে। আমি ইতিমধ্যে,হসপিটালে কাউন্টারে ক্যাশ পাঠানোর ব্যাব্সহাও করে দিয়েছি। ‘

ম্যানেজারের কথা শুনে, অনন্যা ফারিশের দিকে তাঁকিয়ে দেখতে পায়, ফারিশের কোন প্রতিক্রিয়া নেই, সে আপনমনে ল্যাপটপে টাইপিং করে যাচ্ছে। টাইপিং করার মাঝে, সে অনন্যার দিকে তাঁকিয়ে, গম্ভীর গলায় শুধায়, ‘ ইউ কেন গো নাও, মিস অনন্যা। কাল দেখা হচ্ছে। ঠিক সাড়ে ১০টা ৩০ মিনিটে, আপনার বাড়ির সামনে গাড়ি থাকবে। ‘

ফারিশের কথা শুনে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বেড়িয়ে যায় অনন্যা এবং মেনেজার। অনন্যা বেড়িয়ে যেতেই, ফারিশ ল্যাপটপ বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। সে যথেষ্ট ভালো করে লক্ষ্য করেছিলো, সাইন করার সময় কতটা ঘৃণা ছিলো অনন্যার আখিজোড়ায়। সে যেন তার ভিতরের রাগটুকু দমিয়ে রেখেছিলো। অন্য এক প্ল্যান, অনন্যার মাথায় ঘুড়ছে। তা খুব ভালোভাবে টের পেয়েছে ফারিশ। আজকে তার কার্যক্রম দেখে, ফারিশ খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে, অনন্যা যথেষ্ট বুদ্ধিমতী, তবুও তাচ্ছিল্য করে ফারিশ বলে উঠে, ‘গেমের ব্যাপারে আপনি বড্ড কাঁচা মিস অনন্যা। যেই স্ট্রাটাজি নিয়ে, আপনি খান বাড়িতে আসছেন, তা সম্পূর্ন ফ্লপ হয়ে যাবে। ‘
ফারিশ একটা সিগারেট ধরিয়ে, হঠাৎ খুব জোড়ে জোড়ে ঘড় কাঁপিয়ে হেসে উঠে। হাঁসতে হাঁসতে হঠাৎই সে প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে, পাশের কাচের ফুলদানিগুলো সজোড়ে টেবিলের সাথে আঘাত করে টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ফেলে। ফারিশের কেবিন থেকে শব্দ শুনে, সমস্ত স্টাফ রা কেঁপে উঠে। ফারিশ বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে, ‘ মি: লতিফ হাওলাদার। আপনার সবথেকে কাছের মানুষকে তিলে তিলে কষ্ট দিয়ে, আপনাকে বুঝিয়ে দিবো, নিজের আপন মানুষকে হারানোর বেদনা,কতটা তীব্র! ‘

________________________

অপরদিকে, অনন্যা ব্যাগ গুছাতে গুছাতে ভাবছে, তার পক্ষে সাইন করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না।তাছাডাও নিজেকে সকলের সামনে প্রমাণ করার জন্যে এবং কেন ফারিশ খান তাদের ক্ষতি করে চলেছে, তার কারনসহ, সবকিছু জানতে হলেও, তাকে খান বাড়িতে যেতে হবে। অনন্যা বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘ একবার শুধু নিজেকে প্রমাণ করি,তারপর আমি সেই খান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসবো, ফারিশ খান কেন? কারো সাধ্য নেই, অনন্যা হাওলাদারকে আটকে রাখার। ‘
তখনি অনন্যার দরজায় কেউ কড়া নাড়ে। অনন্যা দরজা খুলতই, মিসেস শেফা বেগম হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে, প্রশ্ন করেন, ‘ এইসব আমি শুনছি অনন্যা? তুই নাকি ওই ফারিশ খানের কাজের লোক হওয়ার শর্তে
রাজি হয়েছিস। ‘

‘ তো কী করতাম?তোমার ভাষ্যমতে ম/রে গেলি বুঝি বেশি খুশি হতে?’

অনন্যার এমন প্রশ্নে হচকিয়ে যায় মিসেস শেফা বেগম। অনন্যা ব্যাগ গুছাতে গুছাতে বলে,

‘ আমি কি করবো না করবো! তা নিয়ে, তোমায় ভাবতে হবেনা। তোমাদের টাকার ব্যাব্সহা করে দিয়েছি, এইবার আমাকে রেহাই দাও। তাছাড়া তোমার ভাষ্যমতে আমার মতো চরিত্রহীন মেয়ের জন্যে আজ তোমাদের এই অবস্হা! আমার মতো মেয়ের জন্মের সময় ম/রে গেলেই বেশ হতো। তাইতো তোমাদের একেবারে মুক্তি দিয়ে চলে যাচ্ছি। কোন কথা বলবে না বিপরীতে। তোমার কথা আমি শুনছি না, মা। সো প্লিয লিভ মাই রুম! ‘

মিস শেফা বেগম আহত নয়নে মেয়ের দিকে তাঁকালেন, মেয়ে তার বড্ড অভিমানী! অভিমান করে বড় এক সর্বনাশের দিকে পা বাড়াচ্ছে, তিনি মা হয়ে তা সইবে কীকরে? তিনি জানেন তার কথার আপাতত কোন মূল্য নেই অনন্যার। সে যা ঠিক করেছে, তাই করবে। তিনি আচঁলে মুখ গুজে বেড়িয়ল যান। অনন্যা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ব্যাগ গুছিয়ে ড্রয়ার থেকে তার আমেরিকা যাওয়ার পার্সপোর্টটা বের করে। সে অনেকদিন আগে স্কলারশিপ পেয়েছিলো আমেরিকা যাওয়ার কিন্তু অভির সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ায় সে যায়নি। তবে এইবার সে যাবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সমস্ত মায়ার বন্ধন ছিন্ন করে,সে চলে যাবে। আচ্ছা তখন কি অভির কষ্ট হবে? তীব্র অপরাধবোধ কি তার ভিতরটাকে জ্বলিয়ে দিবে?

__________________________

অপরদিকে অভি চিন্তিত মুখে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করছে, তার শুধু মনে হচ্ছে কিছু তো একটা ভুল হচ্ছে কিন্তু কি ভুল হচ্ছে? সে যথেষ্ট ভালো করে ভিডিওটি দেখেছে। ভিডিওটি কিছুতেই মিথ্যে হতে পারে না। ভিডিও এর কথা ফের মাথায় আসতেই, তীব্র যন্ত্রনা হতে থাকে মাথায়। পরক্ষনেই অভি ভাবে, সে কোন ভুল করছে না। সে যা যা করেছে একদম ঠিক করেছে। অনন্যার মতো ঠকবাজ মেয়েরা অপমানেরই যোগ্য! অভি কোনরকমে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করতেই, অভির মা ছেলেকে দেখে এগিয়ে হাঁসিমুখে প্রশ্ন করেন, ‘ জুঁইয়ের বাবা ফোন করেছিলেন। তুই নাকি জুঁইকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিস? ‘

অভি কোনরুপ জবাব দিলো না। অভির মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন, ‘ এইবার একটা কাজের মতো কাজ করেছিস বাবা। জুঁই মেয়েটা অসম্ভব ভালো। আমার তো শুরু থেকেই জুঁইকে পছন্দ ছিলো, তোর জোড়াজুড়িতে ওই চরিত্রহীন মেয়েকে, ঘরের বউ করতে চেয়েছিলাম। যাক বাবা!
আল্লাহ আমাদের সঠিক সময়ে, চোখে আঙ্গুল দিয়ে সবটা দেখিয়েছেন। ‘

‘ মা, দয়া করে থামবে? এক কথা আমার বার বার শুনতে ইচ্ছে করছে না। ‘

‘ ওমা! সত্যিই তো বলছি। এইভাবে চটে যাচ্ছিস কেন? আমি চাইছি, যথা দ্রুত সম্ভব তোর সাথে জুঁইয়ের এন্গেজম্যান্টের ব্যাব্সহা করতে। তোর কোন আপত্তি নেই তো বাবা? ‘

অভি নিচু হয়ে, ক্লান্ত গলায় বললো, ‘ তোমার যা ইচ্ছে করো কিন্তু আপাতত এইসব বিষয়ে আমাকে ঢুকিও না। আম টু মাচ টায়ার্ড নাও। আমি নিড সাম রেস্ট। ‘

ছেলের অনুমতি পেয়ে,খুশিতে আখিকোড়া চকচক করে উঠলো অভির মায়ের। অভি শুকনো হাসি দিয়ে উপরের সিড়ি বেয়ে চলে গেলো। সেই হাসির মাঝে তীব্র কষ্ট কি উপলব্ধি করতে পারলো অভির মা? হয়তো না। সেই কষ্ট একান্ত অভির।

________________________
ফারিশ বেশ গভীর রাতে বাড়ির ভিতর ঢুকতেই বুঝতে পারে, সকলে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে একজন স্টাফকে প্রশ্ন করে,

‘ মিষ্টি মা, কোথায়? ঘুমাচ্ছে?’

ফারিশকে দিকে এগিয়ে, সেই স্টাফ মাথা নিচু করে বলে,

‘ ছোট স্যার! মিষ্টি ম্যাডাম না খেয়েই ঘুমিয়ে পরেছে। সে বলেছে, আপনি না খায়িয়ে দিলে সে খাবে না। ‘

‘ ওয়াট! মিষ্টি এতোক্ষন যাবৎ না খেয়ে আছে? তোমরা একটা ছোট্ট মেয়েকে বুঝিয়ে – শুনিয়ে খাওয়াতে পারলে না? ‘

বেশ চেঁচিয়েই প্রশ্ন করে ফারিশ। স্টাফ মাথা নিচু করে ফেলে। ফারিশ জোড়ে জোড়ে নি:শ্বাস ফেলে, পরক্ষনে বলে, ‘ আচ্ছা শুনে নাও, তোমাদের পাশের ঘরটা পরিষ্কার করে রেখো। কালকে একজন আসছে। ‘

স্টাফটি মাথা নিচু করে ‘ আচ্ছা ‘ বলে চলে যায়। ফারিশের দাদি রুমা খান উপর থেকে ফারিশের কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাঁকায়। কালকে কে আসবে? যার জন্যে রুম পরিষ্কার করাচ্ছে ফারিশ।

____________________
অপরদিকে মাঝরাতে অনন্যার ফোনে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসে…….
চলবে কি?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে