#প্রণয়িনী
#মেহরীমা_তাসমীম
||পর্ব ০৪||
বাসায় এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে মুগ্ধতা।শীত শীত আমেজ চারিদিকে।বাসায় এসে বেশ ঠান্ডা লাগছিলো তার।ডিনার না করেই চট করে শুয়ে পরেছে।এ নিয়ে তার মা বার কয়েক ডেকে গাল মন্দ করে চলে গেছেন। ওতে বিশেষ পাওা দেয় নি।সে তো ঘুমের ভান ধরে পড়ে রয়েছে।রাস্তায় আদ্র তাকে বেশ কথা শুনিয়েছে ইভেন নামিয়ে দেওয়ার পরও যখন সৌজন্যতার খাতিরে ওকে বাসায় আসার কথা বলেনি তখন নিজে নিজে বলেছিলো,
‘ম্যানার্সলেস গার্ল!পারিবারিক কোনো শিক্ষাই রপ্ত করতে পারে নি দেখ।না চেনে সৌজন্যেতা আর না চেনে অনুতপ্ত হতে।পারে খালি ভুলকে ঠিক ভেবে বসে থাকতে’।পেছন ফিরে তাকাতে তাকাতে সে গাড়ি নিয়ে হাওয়া।তাই কিছু বলতেও পারেনি।সেদিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চাওয়াটা উচিৎ ছিলো কিন্তু তার ত্যাঁড়াবাকা কথাগুলো ক্ষমা চাওয়ার মন মানসিকতা বদলাতে বাধ্য করেছে।কিন্তু এখন পস্তাচ্ছে মুগ্ধতা আসলে তখন একবার সরি বললেই পারতো সে।দোষ কম বড় নয় তাছাড়া তখন বলতেও পারতো বাসায় আসেন তাও বলেনি নিজের জেদের কারণে।অনেক্ক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম ধরাতে পারলো না সে।এতটা ক্লান্ত তবুও ঘুম নেই একদিকে আদ্রের চিন্তা অন্যদিকে তখনকার ঘটনা কোনোটাই ভুলতে পারছে না।
বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে একটা ঝুমকা হাতে নিয়ে বসে আছে আদ্র।দুলটা মুগ্ধতার কানে দেখেছিলো সে।যখন হাসছিলো তখন নড়েচড়ে হেলছিলো। হয়তো বেখেয়ালে পড়ে গেছে মেয়েটি টের পায় নি।অবশ্য টের পাওয়ার কথাও না।সেদিন এতটা অপমান সহ্য সীমার বাহিরে।তা একবারও সরি বলেনি নি না হয়েছে অনুতপ্ত।বন্ধুরা সরি বললেও বার বার চুপ সে।তাকে কোনোভাবেই সরি বলানো যায় নি এতটা অসভ্য নির্লজ্জ।আসলেই কিছু কিছু মেয়েরা এমনই তারমধ্যে তানিশাও একজন।ওর ভাবনার মাঝেই আদ্রিতা ঘরে ঢুকলো ভাইয়ের দুল দেখে চট করে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে বললো,
‘কার দুল এইটা ভাই।স্পেশাল কেউ’?আদ্র হকচকিয়ে উঠলো হাত থেকে থাবা মেরে আবারও দুলটা নিজের আয়েও নিয়ে পকেটে রেখে দিলো।আদ্রিতাও দমে যাওয়ার পাএী নয়।এর কেচ্ছা কাহিনী সব বার করে তবে যাবে সে।হাসতে হাসতে দুই ভ্রু নাচিয়ে বললো,
‘হাহা!কার এইটা?তানিশা তো নয় তাহলে কে’?
‘কেউ না!বের হ রুম থেকে।আমার পারমিশন ছাড়া কখনও রুমে ঢুকবি না’।
‘কেন ঢুকলে কি হবে তোমার এই দেবদাস পাগলপারা রূপ দেখে ফেলবো সেজন্য’।ওর কথায় বেজায় বিরক্তবোধ করলো সে।কপাল চাপড়ে বললো,
‘আদ্রিতা নো ফাইজলামি।ভালো লাগছে না।যা এখান থেকে’।আদ্রিতা শুনলো ভাইয়ের কথা।তারপর সবকিছু ভুলে বললো,
‘মা খাবার নিয়ে ডাকছে চলো খেতে চলো’।আদ্র হঠাৎ ওর ঠান্ডা আওয়াজে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো ওর বোন তো এমন নয়।কখনও হার মানার পাএী ন য় অথচ আজ এত সহজে হার মেনে নিলো।অবাক না হয়ে পারলো না।তবে এটাও ঠিক আদ্রিতা যখন বুঝতে পারে কেউ তাকে এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে বা কারো কথায় সে কষ্ট পায় তখন সে ওই টপিক নিয়ে কখনও কথা বলে না টপিক ঘুরিয়ে চলে যায়।এখনও কি কষ্ট পেয়েছে। নরম গলায় বললো,
‘রাদিফের ভাইয়ের বান্ধুবী বন্ধুদের ড্রপ করে দিয়েছি এদের থেকে কোনো এক মেয়ের দুল এটি আমি গাড়িতে পেয়েছি তাই মনে করার চেষ্টা করছি এটা কার?’এবার আদ্রিতা চমৎকার হাসলো।তাপর বললো,
‘এজন্যই গোমড়ামুখে হয়ে কথা বলছিলাম সেজন্য আসল কাহিনী বের হলো।ঠিক আছে সমস্যা নাই চলো খেতে চলো’!
‘তবে রে’।হাসতে হাসতে দৌড়ে চলে গেলো মেয়েটি আদ্র হাসলো এই পিচ্চির টার হাসিমুখই ওর প্রশান্তি।সারাদিন লাফিয়ে ঝাপিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় করে ঘুরে বেড়ায়।ওকে নীরব মলিন নয় চঞ্চলতায় মানায়।
————
“ওগো এলোকেশী তোমার নব নব রূপে বিমোহিত হচ্ছি বারবার আমি”।ম্যাসেজটা দেখে কপাল কুঁচকে ফেললো মুগ্ধতা।আজ ভার্সিটি ছুটির পর চারজন মিলে বার্গার খেতে এসেছে রেস্টুরেন্টে।যার বিল বহন করবে রিফাত কারণ নব্য প্রেমে পরেছে সে।সে উপলক্ষ্য সব-কয়টা চেপে ধরে ট্রিট হিসেবে বার্গার খাচ্ছে।খাওয়ার মধ্যেখানে এমন ম্যাসেজ পেয়ে বিরক্ত সে।বিগত কয়েকদিন ধরে সে এটা ফেইস করছে আর ভালো লাগছে না।যেখানে যায় সেখানের খবর পেয়ে যায়।এই যে এখন চুলগুলো পিঠের উপরে পড়ে আছে।যা দেখে লোকটা ইঙ্গিত করে বার্তা পাঠিয়েছে।তবে এই দুই চার লাইন উক্তি ওর ভিতরটা নাড়িয়ে দিচ্ছে হয়তো কোথাও লোকটার প্রতি ভালোলাগা উঁকি দিচ্ছে কিন্তু সেগুলো সে পাওা দিতে নারাজ তবুও মনকে বুঝাতে পারছে না।ওকে এমন নাক মুখ কুঁচকাতে দেখে প্রিয়া বললো,
‘ফোনে চাইয়া কি দেখস? বিএফ টিএফ জুটাইছস নাকি’?মুগ্ধতা কথা না বলে ডিরেক্ট কল দিয়ে বসলো সেই নম্বরে এবং সবাইকে সাইলেন্ট থাকতে ইশারা করলো।ওপাশে কল তুললো না কেউ কিন্তু কল কাটতে ম্যাসেজ আসলো,
‘বন্ধুদের মাঝে আমাকে মিস করছেন বুঝি তাই কল দিচ্ছেন।আপনি জানেন এই প্রথম আপনি আমায় কল দিলেন নিশ্চয়ই আপনার মনে জায়গা পেয়েছি’।কথাগুলো বিরবির করে হা হয়ে গেলো সে।তারমানে লোকটা আশেপাশে রয়েছে।এদিক ওদিক দেখলো কিন্তু কোথাও সন্দেহভাজন কাউকে দেখলো না।ওর খোঁজাখুঁজির মধ্যে আবারও ম্যাসেজ পাঠালো সে,
‘অত খুঁজে লাভ নেই বালিকা।আমি ধরা না দিলে আপনি জীবনেও আমায় ধরতে পারবেন না।তাই এসব বাদ দিয়ে খাওয়ায় মনযোগী হন’।এবার সকলে মিলে বুদ্ধি এঁটে প্রিয়া বললো ওকে মিট করার কথা বলতে তাই ও ফিরতি ম্যাসেজ পাঠালো
‘আমি এক্ষুণি দেখা করতে চাই আপনার সাথে’।’প্রিয়া রিয়া চুমকি চামেলীর কথায় আমি আসব না যেদিন নিজ থেকে ডাকবে অনুভব করবে সেদিন কাছে পাবে সামনে পাবে আজ নয়’।তিনজনেই পুরো হতবাক। লোকটা সবটা দেখছে কিন্তু কোথা থেকে দেখছে কিছুই বুঝা যাচ্ছে না আর চায়ই বা কি।রিফাত বললো,
‘কথাবার্তায় মনে হয় তোকে ভালোবাসে’!প্রিয়াও ওর সাথে তাল মিলালো।আফিফ বললো,
‘এটা কোন ধরণের ভালোবাসা সামনে আসে না পরিচয় দেয় না ভাই বুঝি না’।মুগ্ধতাও ভেবে কোনো কূল কিনারা পায় না।তাই আপাতত এসব মাথা থেকে করে খাওয়ায় মনযোগী হয়।
————–
রেস্টুরেন্টে আবারও আদ্রের সাথে দেখা।সেও একই রেস্টুরেন্টে ঢুকছে।সাথে কেউ নেই একাই ফরমাল গেট আপ।এতক্ষণে সকলেই চলে গেছে শুধু প্রিয়া আর ও বসে আছে এক্ষুনি বেরুবে দুজনে তারপর শপিংয়ে যাবে কিন্তু রিফাত আফিফ যাবে না দুজনকে চলে গেছে।আদ্রকে দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে রইলো।তারপর দুজনে সেখান থেকে একরকম পালিয়ে গেলো।কারণ সেদিনের পর আজকেই দেখা হয়েছে এখন যদি আবার কয়েকটা কথা শুনিয়ে দেয়। দরকার নেই আজ তাড়াহুড়োয় আছে অন্য ক্ষমা টাও চেয়ে নেবে সে।
_________
আদ্রকে নিয়ে বসার ঘরে সকলে কথা বলছে।তানিশার অভিযোগ গুলো ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।সেদিনের পর এখনও কোনো যোগাযোগ হয়নি তানিশার সাথে না তানিশা কল দিয়েছে দেখা করেছে আর না আদ্র।এবার এসবে সে বেশ বিরক্ত তানিশা।সেদিনের মেয়ে ঘটিত ব্যাপাটা তার মাথায় গেঁথে গেছে।হয়তো সেই মেয়েতেই মাতোয়ারা সে তাইতো ওকে বিশেষ পাওা দেয় না।এসব কথাও জানিয়েছে তাদেরকে।এবার এই বিষয়ে সকলে আলোচনা করে বিয়ের তারিখ এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।কারণ এভাবে আর ছেলেটাকে ছাড় দেওয়া উচিৎ হবে না তাদের।এভাবে মেয়েটাকে হেলাফেলা করার অধিকার নেই তার।
———-
শপিং শেষে বাড়ির পথ ধরলো দুই বান্ধবী।তখন কয়েকটা ছেলে ওদের উদ্দেশ্য করে টিটকারি করে।সেটা বুঝতে পেরেও তারা সামনে এগিয়ে যায় কারণ এদের মতো লোকদের সাথে কথা বলা আরও না বলা সমান।এরা কখন কি বলে ঠিক নেই পরে নিজেদের সম্মান যাবে। তাই কোনো প্রকার কথা না বলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয় না।ওদের পেছন নেয় চারজনে।কয়েক কদম এগিয়ে যাওয়ার পর পেছন ফিরে দুজনে তাকায়।ওরাও চারজন দাঁড়িয়ে পড়ে।মুগ্ধতা দুহাত ভাজ করে বেশ সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
‘কি চাও পেছন পেছন আসছো কেন’?
ওখান থেকে শ্যামলা রোগা পাতলা ছেলেটি বিশ্রী হাসি দিয়ে খানিকটা এগিয়ে বলে,
‘সুন্দরী ললনা দের পেছনে ছেলেরা যে কারণে ঘোরে সে কারণে’।ছেলেটি সহ বাকি ছেলেগুলো হেসে উঠলো।মুগ্ধতার রাগটা তিরতির করে বেড়ে গেলো।ইতিমধ্যে প্রিয়ার ঠোঁট মুখ শুকিয়ে গেছে।মেয়েটা এসবে বেশিই ভয় পায়।প্রিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ভয় পাচ্ছিস’!প্রিয়া অসহায়ের মতো মুখ করে না বোধক মাথা নাড়ালো।মুগ্ধতা এবার ওদের উদ্দেশ্য বললো,
‘ভালোয় ভালোয় চলে যাও।নইলে এর ফল ভালো হবে না’!ছেলেগুলোর হুহা করে হেসে উঠলো।একজন আস্তে আস্তে এগিয়ে আসলো।এসে যেই মুগ্ধতার হাত ধরতে যাবে অমনি লাথি দিলো ছেলেটার গোপনাঙ্গ বরাবর।ছেলেটা ব্যাথায় কয়েক পা পিছিয়ে গেলো।পেছনের তিনটি ছেলে ওকে ঘিরে ধরলো।একজন দুহাত মুঠো করে ধরে বললো,
‘শা*লি এখন কোথায় যাবি।এই দুটোকে গাড়িতে উঠা।সারারাত ফুর্তি করবো।আমাদের উপর হাত তোলার শাস্তি বুঝিয়ে দিচ্ছি ওকে’।প্রিয়া ভয়ে কাঁপতে লাগলো হাত পা কাঁপছে ওর।মুগ্ধতা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছে।কিন্তু তিনজন ছেলের সাথে পেরে উঠা সম্ভব নয়।প্রিয়া মুখে হাত দিয়ে হাঁপাচ্ছে একটু পর হুশ ফিরতেই চারদিক তাকালো না এখানে লোকজন নেই একদম ফাঁকা যেটা এতক্ষণ খেয়াল করেনি।তবুও চিৎকার করে ডাকলো মুগ্ধতা!প্লিজ সামওয়ান হেল্প মি।ওর আওয়াজ শুনে ওরা ঘাবড়ালো।যদি লোক জড়ো করে ফেলে তখন।একটা ছেলে মুগ্ধতা কে ছেড়ে ওকে ধরলো।।দুজনকে গাড়িতে তুলে চলে গেলো।
চলবে